#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৫
আমি ওনাকে খাটে ফেলে পেটের উপর বসে পড়লাম। হাত দুটো বিছানায় চেপে বললাম,,
___” বজ্জাত লোক!খাটাশ,শয়তান। ওগুলা কি ছিলো?”
উনি হাসতে হাসতে বললেন,
___” কোনগুলো জান?”
___” কোনগুলো তাই না?”
বলেই ওনার গলায় কামড় বসিয়ে দিলাম আমি। এখন দেখ কেমন লাগে। উনি আমার থেকে হাত ছাড়িয়ে গলায় চেপে ধরে বললেন,
___” উফ!রাক্ষসপানা করছিস কেন?”
আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম,
___” আমাকে লজ্জা দিয়েছিলেন কেন?”
___” এটার জন্য এসব করবি তুই?”(ভ্রু কুঁচকে)
আমি মুখ ফুলিয়ে ওনার ওপর থেকে উঠে গেলাম। বিছানায় বসে বললাম,
___” পাজি।”
উনি মনে হয় হাসলেন। বিছানায় শুয়ে গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___” ইশ আমার বউটা।”
আমি আঁড়চোখে একবার তাকালাম। আরেকটু ঘুরে বসলাম। উনি কোলে মাথা রেখে বললেন,
___” মাথায় হাত রাখ তাড়াতাড়ি। ”
___” পারবো না।”
উনি চোখ বড় করে তাকালেন। আমি ঢোক গিলে চুল টানতে লাগলাম। উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,
___” আহা!চুল টানার যে কি সুখ।”
আমি ইচ্ছে করেই জোরে টানলাম।উনি তবুও কিছু বললেন না। দেখতে দেখতে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উনি ঘুমিয়ে গেলেন। আমিও এবার আপন মনে চুল হাতাচ্ছি। হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। ওমা! এটা আবার কে? আমি ফোনটা কানে নিতেই এক পরিচিত কন্ঠ ভেসে এলো। এ যে অয়ন..
___” অনু,কল কাটিস না প্লিজ।”
আমি শান্ত গলায় বললাম,
___” কি চাই? আমার নতুন নাম্বারও জোগাড় করে ফেলেছেন?”
___” অনু,আমার তোকে কিছু বলার আছে।”
___” কি বলতে চান?”
___” এভাবে কলে কিভাবে বলি। তোকে তো আলাদা পাওয়াও যাচ্ছে না যে বলবো।”
___” আমি একজন বিবাহিত নারী। আমাকে একা পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক। আপনি আবার আমাকে একা খুঁজছেনই কেন?”
___” ভিষণ দরকারি কথা অনু।”
আমি চুপ করে রইলাম। ও কি বলতে চায় আবার? ওর সাথে তো কথা বলতেই মন চায় না। ও আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারো ডাকলো,
___” অনু..”
___” কি?”(বিরক্ত গলায়)
___” একটু নিচে আয়।”
___” এখন পারব না দুঃখিত। আমার হাসবেন্ড ঘুমাচ্ছে। ”
___” কেন পারবি না? তোর হাসবেন্ড ঘুমাচ্ছে এতে তোর কি?”
___” একে তো আমি ওনার পারমিশন ছাড়া কোনো আলাদা ছেলেদের সাথে কথা বলি না। আর সেকেন্ডলি..”
এতটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলাম। এই লোক যে আমার কোলে শুয়ে আছে এটা আমি কিভাবে বলি?আমি তো আর ওদের মত ভালোবাসা দেখিয়ে বেড়াতে পারবো না।ও আবার বললো,
___” সেকেন্ডলি কি?”
___” সেকেন্ডলি উনি আমার কাছে ঘুমাচ্ছেন।সো,ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। ”
বলেই কলটা কেটে দিলাম আমি। ওর সাথে কথা বলতেই এখন কেমন ঘৃণা হয় আমার। অসহ্যকর ছেলে একটা! তখন সমুদ্রেও কিভাবে আমার হাত ধরতে চাইলো।এত অসভ্য ও?
.
.
রিসোর্ট থেকে খানিকটা দূরে একটা জঙ্গলের মত এলাকা রয়েছে। আমরা ঠিক করেছি আজ রাতে সবাই মিলে ওখানে আগুন জ্বেলে তাঁবু বানিয়ে থাকবো। অবশ্য অনেক ফ্রেন্ড সার্কেল নাকি এ জায়গাটায় আসে। তাই এতটাও জনমানবশূন্য নয়,বিপদজনকও না। সাদিই মূলত সব ব্যবস্থা করেছে। বউয়ের আবদার বলে কথা।
রাত আটটা।সমুদ্রের কিনারা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো ভাবছিলাম আমি।এদিকটায় এত মানুষ নাই। সব অন্ধকার। হালকা ঝাপসা আলো। শুধু মুখমন্ডল দেখা যাবে। আমার বন্ধুরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে প্ল্যান করছে সবকিছুর। আমি অনেকটাই দূরে এসে পড়েছি।হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শে পিছনে ফিরলাম আমি। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। ওকে এতটা কাছে দেখে ভ্রু কুঁচকে কিছুটা দূরে সরে এলাম আমি। ঠান্ডা গলায় বলে উঠলাম,
___” কি চাই?”
___” অনু শোন…”
___” অনন্যা হবে..”
___” অনু তুই।আমার খুশি থাকার কারণ।”
___” প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন। কি ধরণের কথা বলছেন এসব?”
___” অনু তোকে আমার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবার আছে।”
___” আমার তো কিছু শোনবার নাই। আপনি কি বলতে পারেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”
বলেই রাগে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম আমি। ও আমার হাতটা আচমকা চেপে ধরলো। তারপর অসহায় গলায় বললো,
___” অনু প্লিজ…. ”
ও কথাটা শেষ করার আগেই সাদি হঠাৎ ওখানে চলে এলো। অয়নের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
___” এখানে কি হচ্ছে? অয়ন আপনি আমার ওয়াইফের হাত ধরে আছেন কেন?”
আমি অয়নের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে সাদির গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। অয়ন মনে হয় রেগে গেলো। গম্ভীর গলায় বললো,
___” ও আমার বান্ধবী।”
___” ছিলো,এখন নাই।”
অয়ন কিছু বলতে গিয়েও বললো না। আমার দিকে একনজর তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। এদিকে ওর এমন বিহেভিয়ারের মানেই বুঝতে পারছি না আমি। হঠাৎ এমন পরিবর্তন কেন?আবার অপমান করতে চায় নাকি? সাদি আমার গালে হাত রেখে বললো,
___” ঠিক আছিস ধানিলংকা?”
___” আমার আবার কি হবে।”
___” আমি ভাবলাম ও তোকে আবারো অপমান করছে।”
___” এত সহজ না মিঃ হাসবেন্ড।”(মুচকি হেসে)
উনি আমার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালেন। হালকা হেসে বললেন,
___” আই লাভ ইউ।”
আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,
___” আই লাভ ইউ ঠু।”
উনি বেশ খুশিই হলেন। আমার কোমড় ধরে উপরে তুলে ঘুরতে ঘুরতে বললেন,
___” আজ আমি ভীষণ খুশি। আমার অনুজান আমায় লাভ ইউ বলেছে। আমি এত খুশি বোঝাতে পারব না।”
আমিও হেসে ফেলেছি। উফ ঘুরতে ভালোই লাগছে। আমি দুই দাত দুদিকে ছড়িয়ে জোরেই চিৎকার করলাম,
___” আই লাভ ইউ সাদি। আই লাভ ইউ আ লট। খুব বেশি ভালোবাসি আমার রাক্ষসটাকে।”
সাদিও খুশি হয়ে ঘোরাতে লাগলেন। ইশ!সময়টা এখানেই থেমে যেত যদি। উনি এবার আমাকে নামিয়ে দিলেন।আমি সমুদ্রের কিনারে বসে পড়লাম। উনিও হাঁপিয়ে গেছেন। এই অন্ধকারেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বললেন,
___” সবসময় তোকেই চেয়েছি। তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। আজ সেটা সম্পূর্নরুপে পূরণ হলো।”
আমি কিছু না বলে ঠোঁট কামড়ে হাসছি। এই লোকটা পারেও।
.
এতকিছু দূর থেকে পর্যবেক্ষন করছে অয়ন। অজান্তেই চোখে জল এসে গেছে তার। তার অনু আজ অন্যকারোর। অন্য কাউকে ভালোবাসি বলছে?জড়িয়ে ধরছে?এগুলো তো তার করার কথা ছিলো।অয়ন সেদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
___” নিজের দোষে নিজের ভালোবাসাকে হারালাম।”
.
তাবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে বসে আছি সবাই। আমার পাশে সাদি বসে আছেন। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। উনি একটু পর পর আমার চুল ঠিক করে দিচ্ছেন।আর চোখাচোখি হচ্ছে। ঠিক সামনে অয়ন-মিশমি। আমার আরেক পাশে প্রান্তি-আয়ান।রুশের হাতে গিটার। শুভ সানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে৷ তা দেখে আমরা সবাই বেশ এনজয় করছি।দমকা হাওয়া!রুশ হঠাৎ সাদিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
___” জিজু,আপনি নাকি অনেক ভালো গান গাইতে পারেন?”
আসলেই তাই!ওনার গানের গলা ভালো।প্রান্তি এক্সাইটেড হয়ে বললো,
___” জিজু প্লিজ, অনুকে ডেডিকেট করে একটা রোমান্টিক গান।”
সাদি আমার দিকে তাকালো। আমি সায় দিলাম। উনি সচরাচর গান গাইতে চান না। তবে আজ রাজি হয়ে গেলেন। রোমান্টিক মুডে আছেন মনে হয়। ভেবেই হাসলাম আমি। উনি গিটারটা নিয়ে টুং টাং শব্দ তুলতে লাগলেন। আমি খেয়াল করলাম,অয়ন আমার দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে৷ আমি নড়েচড়ে বসে সাদির দিকে তাকালাম। উনি দুষ্টু হেসে বলছেন,
___” গানটা কিন্তু আমার অনুজানকে ডেডিকেট করে।সো গানের পর কিছু চেয়ে বসলে সেটা কিন্তু ওনাকে দিতে হবে।”
সবাই রাজি হয়ে গেলো।মানে উনি যা চাইবেন তাই আমাকে দিতে হবে।আমি আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছি। মানে আমার অনুমতি না নিয়েই এরা গান শোনার জন্য আমাকেই বাজি রাখলো। গাধাগুলা।আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই প্রান্তি আমার মুখ চেপে বললো,
___” দোস্ত প্লিজ রাজি হয়ে যা।”
উনি আমাকে চোখ টিপে গান ধরলেন,
এই ভালো, এই খারাপ
ও প্রেম মানে মিষ্টি পাপ
চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব
তুমি-আমি মিলে
দু’জনেই মনটাকে
ও বেঁধে ফেলি সাতপাকে
চলো ছোটোখাটো করি ভুলচুক
তুমি-আমি মিলে
সাজিয়েছি ছোট্ট একফালি সুখ
রাজি আছি, আজকে বৃষ্টি নামুক
তুমি আমি ভিজব দু’জনে খুব
ভরসা দিলে
এই ভালো, এই খারাপ
ও প্রেম মানে মিষ্টি পাপ
চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব
তুমি-আমি মিলে
এতটুকু গেয়েই উনি থামলেন। সবাই হাততালি দিতে লাগলো। সানিয়া হেসে বললো,
___” বাহ!জিজু তো সেই রোমান্টিক। ”
সাদি এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
___” এবার তোমাদের বান্ধবীর পালা।”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। রুশ হেসে বললো,
___” জিজু দিন আপনার ডেয়ার।”
সাদি আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে বললো,
___” আমাকে কিস করতে হবে।”
আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সবাই হেসে উঠলো।সবগুলা তো লাফিয়ে লাফিয়ে সম্মতি দিচ্ছে।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)