#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৭
অয়নের মূল সমস্যা টা কি সেটা আমি জানি না। ও চায়টা কি?বারবার আমার সাথে দেখা করতে চাইছে কেন?বাসায় ফিরেছি আজ তিনদিন হলো। এর মধ্যে অয়ন আমাকে ফোনও করেছে।এক দুবার ছাড়া রিসিভ করিনি।যেচে বিপদ ডেকে আনবো নাকি? তাছাড়া আমি আর অতীত ঘাটতে চাই না। ওমা!ভাবতে ভাবতে আবারো অয়ন কল করলো। আমি বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালাম। কলটা পিক করতেই ওপাশ থেকে ও বলতে লাগলো,
___” অনু?”
___” জ্বী বলুন।”
___” অনু আমার তোকে কিছু বলার আছে।”
___” এই কথাটা বহুবার বলেছেন।কি বলার আছে সেটা বলুন।”
___” অনু..”
___” জ্বী। ”
___” অনু আমি তোমাকে আবার ফেরত পেতে চাই। ”
চোখ মুখ কুঁচকে গেলো আমার। সাথে অবাকও হলাম। এসব কি বলছে ও? যেটা সম্ভব নয় সেটাই চাইছে কেন।আমি উঁচু স্বরে বললাম,
___” মানেহ?”
অয়ন ভাঙা গলায় বললাো,
___” অনু,আমি ভুল করেছি।মানছি আমি সেটা। এমন ভুল আর কখনো হবে না। প্লিজ ফিরে এসো। #রাঙিয়ে দিয়ে যাও আমায়।তোমার ভালোবাসায়।”
___” আমি পাগল না বা মাথা খারাপ না যে তোর ফাঁদে আবারো পা দিবো অয়ন। একজন বিবাহিত মেয়েকে এসব বলার রাইট আছে তোর?”
অয়ন কিছুক্ষণ চুপ রইলো।হঠাৎ শান্ত গলায় বললো,
___” আচ্ছা আমি কিছু চাই না। আমি শুধু চাই যেন তুই আমার সাথে একবার দেখা করিস।”
___” অসম্ভব। ”
___” প্লিজ অনু৷ আমার শেষ ইচ্ছে ধরে নে। এরপর আর কখনো তোর কাছে কিছু চাইবো না।জাস্ট ১ ঘন্টা?”
আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম। আমারো তো কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার আছে। ১ঘন্টারই তো ব্যাপার।।গিয়ে দেখি কি বলতে চায় ও।
___” আচ্ছা।কিন্তু শুধু এক ঘন্টা।”
___”থ্যাংক ইউ অনুপাখি। থ্যাংকস আ লট।”
আমি কিছু না বলে কলটা কেটে দিলাম। আমারো জানতে হবে অয়ন চায়টা কি।এতদিন পর হঠাৎ এত পরিবর্তন কিসের জন্য।কাঁধে কারোর গরম নিশ্বাস আর পেটে কারোর ঠান্ডা হাতের স্পর্শে নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে এলাম আমি। স্পর্শটা বেশ চেনা। এটা আমার সাদি ছাড়া আর কে? মুচকি হেসে তার হাতের উপর হাত রেখে বললাম,
___” আজ বিকালেই এসে পড়লেন সাহেব?”
___” ডিউটি ওভার।”
___” ফ্রেশ হয়ে নিন। খাবার দিচ্ছি।”
বলেই যেতে নিচ্ছিলাম। উনি আরেকটু চেপে ধরে আবারো কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললেন,
___” খেয়ে এসেছি। ”
আমি আর কিছু বললাম না। মুহুর্তটা অনুভব করতে লাগলাম। এগুলোর মধ্যে অয়নের কথাটা কখন মাথা থেকে বের হয়ে গেছে টেরও পেলাম না। সাদি নিজেই ধীর গলায় বললো,
___” আই মিসড ইউ মাই ধানিলংকা।আই মিসড ইউ সো মাচ। ”
বলেই আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। আমি ওনার হাতটা চেপে ধরে বললাম,
___” এতটা ভালোবাসেন আমায়?”
___” তোর থেকেও বেশি।”
চুপ হয়ে গেলাম আমি।কি কঠিন জবাব! ওনার দিকে ফিরে মিষ্টি হেসে বললাম,
___” যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। এপ্রোনও ছাড়েননি।”
উনি আমার কোমড় টেনে নিজের সাথো মিশিয়ে নিয়ে বললেন,
___” যাবো না।কি করবি?”
আমি কিছু না বলে মুখটা বেলুনের মত ফুলিয়ে ফেললাম। উনি হেসে উঠলেন। দুই হাত দিয়ে ফোলা গালে গুঁতা মেরে বললেন,
___” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি। এত নাটক যে কিভাবে পারিস।”
আমি হেসে ওনার গাল টেনে বললাম,
___” আমার লক্ষ্মী বর।”
উনি মুচকি হাসলেন। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলেন। থেমে গেলেন।পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকালেন।আমি ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম,
___” কি?”
উনি এগিয়ে এসে আচমকা আমায় কোলে তুলে নিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
___” যখন তখন কি স্বভাব এটা? নামান বলছি।”
উনি দুষ্টু হেসে বললেন,
___” নামাবো। তবে বাথটাবে।”
___” ইইইইই! কি অসভ্য!”
বলেই ওনার কাঁধে এলোপাতাড়ি চড় মারতে লাগলাম।কিন্তু উনি তো উনিই।যা বলবেন তাই করবেন।এখানে আমার আর কিছু বলবার নাই।
.
সাদি মেডিকেলে গেছে প্রায় ২ ঘন্টা হলো। আমি আজ যাইনি।অয়নের সাথে দেখা করব তাই।ঘড়ির কাটায় তখন বাজে ১১ টা। আমি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। ফুপিকে বলেছি প্রান্তির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। নয়ত চিন্তা করবে।আপাতত অয়নের মুখোমুখি একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি।অয়নের মুখে কেমন বড় একটা হাসি। যেন সে ভীষণ খুশি। আমাকে দেখে খুশিতে বললো,
___” কি খাবি বল?অর্ডার করি।”
আমি বেশ বিরক্ত হলাম। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
___” আমি এখানে খেতে আসিনি অয়ন।”
অয়নের হাসিটা মিলিয়ে গেলো।মুখ ভার করে বললো,
___” এভাবে কথা বলছিস কেন?”
___” তো কিভাবে বলার আশা করিস তুই?”( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
অয়ন এবার শান্ত হয়ে বসলো। মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,
___” আমি জানি যে আমি যা করেছি সবটা অন্যায়। অতীতে তোকে আমি ভীষণ কষ্ট দিয়েছি। আমার…. ”
ওকে থামিয়ে দিলাম আমি।শান্ত কন্ঠে বললাম,
___” কেন ডেকেছিস সেটা বল। দরকারি কোনো কথা থাকলে বল নয়ত আমি উঠছি।”
অয়ন আমায় থামিয়ে দিলো। আমার হাতটা চেপে ধরে বললো,
___” অনু আমি সরি। আমাকে মাফ করে দে অনু। এসব যা কিছু হয়েছে সবকিছুর জন্য আমি মাফ চাইছি।”
আমি রেগে ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। রেস্টুরেন্টের বাকি সবাই কেমন করে তাকিয়ে ছিলো। আমি ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে এলাম। মনে মনে ভাবছি, কতটা অসভ্য হলে একটা মানুষ এমন কাজ করতে পারে ডেকে নিয়ে? আজ সাদিকে গিয়ে সব বলবো আমি। এমনিতেও বলতাম। টেনশন করবেন বলে বলিনি। অয়নের এসব ছুটাচ্ছি আমি। অতিরিক্ত করে ফেলছে ও। ভাবতে ভাতে রাগে গজগজ করতে করতে হাঁটছিলাম আমি। এই ফাঁকা রাস্তাটা শেষও হচ্ছে না। দূর-দূরান্ত অবধি কোনো রিকশা নাই। সাদিকে ফোন করতে যাব এমন সময় পিছন থেকে কে যেন মুখটা চেপে ধরলো আমার। ধস্তাধস্তি করেও লাভ হলো না। চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো।আস্তে আস্তে পিছনে থাকা লোকটার গায়ে পড়ে গেলাম আমি।
.
চোখ খুলতেই নিজেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রুমে বন্ধি অবস্থায় পেলাম আমি। চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছি। হাতদুটো বাঁধা। শুধু মুখটা খোলা। আমি নিম্নস্বরে বললাম,
___” কেউ আছেন? এনিবাডি ইস দেয়ার?”
নাহ কেউ নেই। আরো কিছুক্ষণ আওয়াজ দিতেই আস্তে আস্তে একজোড়া পা আমার দিকে অগ্রসর হতে লাগল।আমি লোকটার পা ই দেখতে পারছি শুধু। লোকটা আমার সামনে বসতেই ওর মুখটা আমার সামনে দৃশ্যমান হলো। অবাকের চরম পর্যায়ে আমি। অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,
___” অয়ন..”
সাথে সাথে অয়ন হাসতে লাগল। হাসতে হাসতেই বললো,
___” ইয়েস বেবি আমি। অবাক হলে বুঝি?”
আমি না’বোধক মাথা বাড়ালাম। না! অবাক হইনি।কিন্তু আমার এি কাজে অয়ন অবাক হলো বেশ। ভ্রু কুঁচকে বললো,
___” মানে?”
আমি হেসে জবাব দিলাম,
___” তুই আগের অয়ন হলে হয়তো তোর সাথে এটা যেতো না৷ আমি কল্পনায়ও কথাটা চিন্তা করতে পারতাম না। কিন্তু তুই তো পাল্টে গেছিস। তাই আমার চিন্তাটাও পাল্টালো।”
অয়ন রেগে গেলো। চোখ লাল করে আমার কাছে মুখ এনে বললো,
___” কে বলেছে তোকে আমি পাল্টে গেছি? আমি তোর আগের অয়নই আছি অনুপাখি।”
আমি ঘৃণায় মুখটা সরিয়ে নিলাম। ও আমার ঘাড়ের পাশের জায়গাটা নোখ দিয়ে চেপে ধরলো। আমি আর্তনাদ করে উঠলাম,
___” আহ অয়ন..”
অয়ন রেগে খামচে ধরে বললো,
___” এটা কিসের দাগ? তোর সাদির ভালোবাসার দাগ?”
তখনই আমার মনে পড়লো গতকাল তো আমি আর সাদি একসাথপ ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। এটা তখনেরই দাগ। আমি কিছু বললাম না। শুধু বললাম,
___” হাতটা সরা। ”
অয়ন হাতটা সরিয়ে নিলো।গর্জে উঠে বললো,
___” ওর সাহস কি করে হলো তোকে এভাবে ছুঁয়ার? আর সেদিন! সেদিন বিচে তোকে কোলে নিয়েছিল। তুই ওর ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিচ্ছিলি।কেন অনু? কেন!”
___” কারণ উনি আমার হাসবেন্ড। আমার ভালোবাসা।”(চেঁচিয়ে)
___” ভালোবাসা? না অনু। ও তোর ভালোবাসা না। তোর ভালোবাসা আমি অনু। তুই না আমাকে কত ভালোবাসিস?”
আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,
___” আগে বাসতাম। এখন বাসি না। তোর জন্যে আমার মনে শুধু ঘৃণা।”
___” অভিমান করে বলছিস তাই না?”
___” ভালো না বাসলে আবার অভিমান আসবে কিভাবে?”
___” কি বললি তুই?”(দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,
___” যা সত্যি তাই বলেছি। এখন কই তোমার মিশমি? আদরের মিশমি?”
অয়ন চুপ হয়ে গেলো।চাপা রাগী গলায় বললো,
___” এই মেয়েটা আমার লাইফটাকে জাস্ট হেল করে দিয়েছে।”
___”মানে?”
অয়ন কেঁদে ফেললো। আমারর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
___” ওর জন্য আমি তোকে ভুল বুঝেছি অনু।”
___” ওমা তাই নাকি? ও না এসব বলতেই পারে না? আমি নাকি ওকে গালি দিয়েছি? ”
___” না অনু। প্লিজ আর এসব মনে করাস না। টাকার লোভে অন্ধ হয়ে আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। ”
___” কি বলতে চাইছিা তুই?”(ভ্রু কুঁচকে)
চলবে……
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)