#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#পর্বসংখ্যা_২০
খাবার টেবিলে নিরব হয়ে বসে আছে স্পর্শী। পেটে ভীষণ ক্ষুধা তার।অথচ তাকে খেতে দিচ্ছে না পরশের নানী।এটা নাকি নিয়ম।নতুন বউ বরের আগে খেতে পারবে না।চারদিকে সবাই কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছে আর স্পর্শী নিচের দিকে তাকিয়ে পেটের সাথে যুদ্ধ চালাচ্ছে।কিছুক্ষণ আগেই কাজি তাদের বিয়ে পড়িয়েছে।এখন সবাই মিলে খাওয়ায় মেতে আছে।
বড় এক স্টিলের থালা।তার মাঝখানে দু-চামচ পোলাও। পোলাও কে ঘিরে একে একে রাখা আছে আস্ত চিকেন,বড় রুই মাছের মাথা,রোস্ট,চিংড়ি,ডিম,ভাপা ইলিশের টুকরো,গরুর মাংস,খাসির মাংস,সালাদ এবং তারপরে দুটো রসগোল্লা। এটা জামাইয়ের থালা।বিপাশা থালাটা নিজ হাতে সাজিয়ে পরশের সামনে রাখলো।সামান্য সময়ের জন্য নিজের খাবার দেখে হকচকিয়ে গেল পরশ।তার নানি পাশেই বসে আছে। পাভেল কনুই দিয়ে গুতো মেরে পরশ কে বললো-
ভাই,এমন এক খানা থালা পাওয়ার জন্য হলেও বিয়েটা তাড়াতাড়ি করা উচিত।
স্পর্শীর খিদেয় পেটে মোচড় দেওয়া শুরু করে দিয়েছে।বিপাশার দিকে করুন চোখে তাকাতেই ইশারা দিয়ে শান্ত হতে বললো। দ্রুতপায়ে পরশের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো-
বাবা,তুমি খাওয়া শুরু কর।স্পর্শীটার খিদে পেয়েছে।তুমি যতক্ষণে খাওয়া শেষ না করবে ততক্ষণে ও খেতে পারবে না।
চমকে তাকালো পরশ।কিছু বলার আগেই বিপাশা পুনরায় বললো-
এটাই নিয়ম।
পরশ আর কিচ্ছু বললো না।হাত ধুয়ে চিকেন টার একপাশ ছিড়ে মুখে দিল।সামান্য একটু পোলাও মুখে দিয়েই বললো –
আমার খাওয়া হয়ে গেছে।আর খাব না।
আতকে উঠলেন রেহানা বেগম।হায়হায় করতে করতে বললেন-
এইডা কি কও নানুভাই।এরম হইলে তো হইবো না।এই সব পদ দিয়াই একটু একটু খাইতে হইবো।নাইলে তো বউ খাইতে পারবো না।
নিভে গেল পরশ।দ্রুত সব পদ থেকে সামান্য একটু করে মুখে দিয়ে তারপর হাত ধুতে গেলেই পুনরায় আতকে উঠেন রেহানা।বলেন-
আরে আরে,অন্য থালায় হাত ধোও।বউরে কি না খাওয়াইয়া রাখবা নাকি এই থালায় হাত ধুইয়া।
থেমে,
ও বিপাশা,নাও এইডা নিয়া তোমার মাইয়ারে খাইতে দাও।
পরশ অবাক হয়ে বললো-
এটা নিয়ে মানে।এই মাখা খাবার খাবে ও।
রেহানা সামান্য লজ্জা পাওয়ার ভংগিতে বলল-
হ,স্বামীর ঝুডা ভাত খাইলে ভালোবাসা বাড়ে।আমিও খাইছিলাম।
হতাশ হলো পরশ।এটা মহিলাদের নিয়ম কানুন।তার কিছু করার নেই। আর করতে গেলেও নানি বাড়ি মাথায় তুলবে।পরশ মাঝেমধ্যে ভাবে এই মহিলার পেটে তার শান্তশিষ্ট মা কি করে হলো।এ তো একদম পাভেলের কার্বন কপি।
খাবারের থালা স্পর্শীর সামনে দিতেই সে আতকে উঠলো।বললো-
এটা তো কারো খাওয়া খাবার। আমি এ খাবার খাবো কেন?
তড়িঘড়ি করে সামলে নিলেন বিপাশা।স্পর্শীর কানের কাছে গিয়ে ছোট্ট আওয়াযে বললেন-
একদম কোনো কথা বলিস না মা।চুপচাপ খেয়ে নে।এটা পরশের খাওয়া খাবার।তোকে খেতে হবে।এটাই নিয়ম।আমরাও খেয়েছি বিয়ের সময়।তুই কোনো হাঙ্গামা করিস না মা। বিয়ে বাড়ি,অনেক লোকজন।খেয়ে নে।
স্পর্শী করুন চোখে খালামনির দিকে তাকালো।তারপর কিছু না বলেই চুপচাপ একপাশ থেকে সামান্য কিছু খেল।পেট উগড়ে আসছে তার।
*********
বিকেল পাচটা।সবাই পরশের রুমে বাসর খাট সাজাচ্ছে।স্পর্শী বেনারসি চেঞ্জ করে একটা কুর্তি পড়লো।তারপর সোজা হয়ে পেটের উপর হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো।ভীষণ খিদে পেয়েছে তার।এখন খুব আফসোস হচ্ছে।মনে মনে নিজেকেই ঝারছে সে।
কি হতো তখন ভালো করে খেলে?নেতামশাই য়েরই তো খাওয়া খাবার।ছি:স্পর্শী, সামান্য জামাইয়ের খাওয়া খাবার হজম করতে পারিস না, চুমু কি করে হজম করবি?বেয়াদপ মেয়ে।
এরইমধ্যে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো পরশ।হাতে খাবারের প্লেট।দেখামাত্রই উঠে ছুটে গেল স্পর্শী। হাত দিয়ে খাবারের প্লেট টেনে এনে বিছানায় বসলো।বললো-
উফফ,আপনি কত্ত কিউট নেতামশাই।কি করে জানলেন, আমার খিদে পেয়েছে।থাংকিউ।এভাবেই আমাকে বুজতে থাকবেন আর আমি একটু একটু করে পটতে থাকবো।এই দেখুন, এই মাত্র দু কেজি পটে গেলাম।
পরশ শান্ত দৃষ্টিতে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর চুপচাপ খাট থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে যেতে লাগলো।পরশকে বাইরে যেতে দেখে মুখে খাবার নেওয়া অবস্থাতেই অস্পষ্ট গলায় বললো-
একি নেতামশাই,একটু বসবেন না?
পরশ থমকে দাড়ালো।পিছু চাইলো।কিন্তু ওই চোখের দিকে আর তাকালো না।কেন যেন স্পর্শীর চোখের দিকে তাকালেই ওর দম বন্ধ হয়ে যায়।ভীষণ অসভ্য হতে ইচ্ছে করে। নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।মুখে বললো-
হ্যা,এখন তোমার কাছে আমি বসে থাকি।আর পাভেল সারাবাড়িতে মাইকিং করুক।এমনিতেই বাড়ি ভর্তি মেহমান।তুমি খেয়ে প্লেট গুলো ওখানেই রেখে দিও।বাইরে বের হওয়ার দরকার নাই।
*******
সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই পরশ তার এক বডিগার্ডের সাথে ধাক্কা খায়।মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে সুজন বললো-
ভাই,দেখি নাই সরি।
পরশ হেসে দিল।সুজনের কাধ চাপড়ে বললো-
খেয়েছিস?
সুজন আমতাআমতা করে বললো-
হু হ্যা খেয়েছি।
ভ্রু কুচকে ফেললো পরশ।অবাক হয়ে বললো-
পাচটা বেজে গেছে আর তুই এখনো খাস নি।
সামান্য লজ্জা পেল সুজন।আমতাআমতা করে বললো-
আসলে ভাই,সবাইকে খাওয়ানোর পরে একটু ইমপর্ট্যান্ট কল আসছিলো। তাই বাইরে গেছিলাম।আর খাওয়া হয় নি।
অবাক হয়ে গেল পরশ।বললো-
তুই কি পাগল।তুই নিজে নিয়ে খেতে পারতিস না।এখনো এতো অসস্তি কেন তোর আমি বুজলাম না।তোকে কি আমি কখনো বডিগার্ডের মতো দেখেছি।পাভেল আর তোকে কখনো আলাদা চোখেও দেখিনি আমি।কোথায় নিজের বাড়ির মতো মনে করে নিয়ে খাবি,আয়োজন করবি সেই জন্য খাওয়ানোর দায়িত্ব দিয়েছি।আর তুই?এখনো লজ্জা পাচ্ছিস।
থেমে
এই পাভেল(হাক ছেড়ে ডাকলো)
দ্রুত বেগে উপর থেকে নিচে নামলো পাভেল।পরশ পাভেলের কান ধরে টেনে বললো-
নিজে পেট গাদালেই চলবে?কে কে না খেয়ে আছে সেদিকে খেয়াল রাখবি না।এক্ষুনি ওকে তোর রুমে নিয়ে খেতে দে।নিচে অনেক মানুষ।
পাভেল ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।তারপর যেতে যেতে সুজনকে বললো-
দেখেছিস, ভাই তোকে আমার থেকেও বেশী ভালোবাসে। ইশ যদি জানতাম ওইদিন গুলি থেকে ভাইকে বাচালে এতটা ভালোবাসা পাবো।তাহলে শালা তোকে তো ভাইয়ের আশে-পাশেই আসতে দিতাম না।আমি নিজে বাচাতাম।
বিনিময়ে সুজন আলতো হেসে দিল।সত্যিই পরশ ভাই তাকে ভীষণ ভালোবাসে।একদম অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।
**********
রাত এগারোটা।সারা রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। ফুলের সুঘ্রানে চারদিক মো মো করছে।বিছানার মাঝখানে খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে স্পর্শী।প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ বসে আছে সে।ঘাড়-পিঠ এবার সত্যিই ব্যাথা করছে।বসা থেকে উঠে এবার সারা রুম পায়েচারি করলো সে।এরইমধ্যে খুট করে দরজা খোলার শব্দ আসলো। দ্রুতবেগে ছুটে গিয়ে ঘোমটা দিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসলো স্পর্শী।পরশ কে ভেতরে আসতে দেখেই অদ্ভুত ভাবে হাত পা কাপাকাপি শুরু করলো তার।হৃদ স্পন্দন অলরেডি বেড়ে গেছে।বুকের মধ্যে ধুড়ুম ধুড়ুম শব্দে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
পরশ ধীর পায়ে স্পর্শীর পাশে বসলো।দুহাত দিয়ে ঘোমটা সরাতেই ছিটকে দুরে গেল স্পর্শী।
এই একদম না, আমাকে ছোয়ার চেষ্টা ও করবেন না।দুপুর বেলা জিজ্ঞেস করেছিলাম-আমায় কেমন লাগছে?বলেছিলেন আপনি?নিজের ইগো দেখিয়ে চুপচাপ চলে গেছিলেন। এখন এসছেন কেন লুচুগিরি করতে।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল পরশ।সারাদিন তো ঠিক ঠাকই ছিলো।যত রাগ সব বাসর করার সময়ই বের হতে হলো।নিজেকে সংযত করে ধীর কন্ঠে বললো-
আমি তো আমার বউকে একাকি, নিরবে,এক রুমে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।তাই বলি নি,আর আসল কথা হচ্ছে-আমি নিজেকে সামলাতে পারতাম না স্পর্শীয়া।তাই,,
ইশ হয়ে গেল।লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো স্পর্শী।তারপর বিছানার এক পাশে গিয়ে গুটি শুটি পাকিয়ে শুয়ে পড়লো।হতভম্ব হয়ে গেল পরশ।আদোও কি রাগ কমেছে স্পর্শীর।হাতের গিফট টা টেবিলের উপর রেখে ঘড়ি খুললো।তারপর লাইট নিভিয়ে জানালা খুলে দিল।ঘরে অলরেডি একটা মোমবাতি জ্বলছে। ধীর পায়ে বিছানায় উঠে নিজেও স্পর্শীর পাশে শুলো।ডান হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শীর গা ছুতেই ছিটকে দূরে সরিয়ে দিল হাত।বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার মতো চমকে উঠলো পরশ।
ধুর,এই মেয়ের যত রাগ সব বাসর রাতেই হতে হলো।নিজেকে ধাতস্থ করে কয়েকমিনিটি চুপ রইলো পরশ। তারপর আরেকটু কাছে এগিয়ে গেল।হুট করে স্পর্শীর হাত টেনে সোজা করে শুইয়ে নিজেও ভর দিল তার উপর।চমকে উঠলো স্পর্শী।গলা শুকিয়ে গেছে তার।আবছা আলোয় অনেকক্ষণ স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ। তারপর হুট করে বললো-
ভীষণ গরম লাগছে তাই না।চলো লেহেঙ্গা টা খুলে দেই।
চলবে?
#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#বোনাস_পর্ব
রাতের নিকশ অন্ধকারকে ভেদ করে পৃথিবীতে ধীরে ধীরে শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে আলো ছড়িয়ে পড়ছে।সূর্য এখনো ওঠেনি।পূর্ব দিকের আকাশ সামান্য লাল আভা ছড়িয়েছে মাত্র।জানালা দিয়ে রুমের মধ্যে আলোর রেশ পড়তেই আড়মোড়া ভাঙলো স্পর্শী।উপুড় হয়ে উঠতেই পরশের ঘুমন্ত মুখটা দৃষ্টিগোচর হলো।এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো শ্যামলা,তামাটে মুখ খানির উপর।পরক্ষণেই রাতের কথা মনে হতেই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হেসে দিলো।বিছানায় শুয়ে পরশের বুকের উপর ভর দিয়ে পুনরায় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।আঙুল দিয়ে লোমওয়ালা প্রশস্ত বুকে আকিঝুকি করতে গিয়েই নজরে এলো হাতের লাল দাগ।পরক্ষণেই মনে পড়লো রাতের কথা।
নেতামশাই কে বাধা দিতে গেলে একপর্যায়ে কামড় মেরেছিলো হাতের উপর।মুহুর্তেই মুখ দিয়ে বিরবির করে বললো-
অসভ্য এমপি।
নড়েচড়ে উঠলো পরশ।সে তো গভীর ঘুমে নয়।চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো মাত্র।দপ করে চোখ খুলতেই হকচকিয়ে যায় স্পর্শী।তাড়াহুড়ো করে পরশের গায়ের উপর থেকে সরে আসে।এরইমধ্যে কোমড় ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে ঠেস খাওয়ায় পরশ। কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো-
সভ্য হয়েই তো ঘুমিয়েছিলাম।সহ্য হয় নি তোমার।দুর্নাম রটালে।এবারে যখন অভিযোগ তুলেই ফেলেছো তখন একটু আধটু অসভ্য হতে ক্ষতি কি বল?
হেসে দিল স্পর্শী।পরশ আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তাকে।চুলে নাক ডোবাতেই পরশ নাক কুচকে ফেললো।বলল-
উমমম!চুল টাও মুছতে শেখো নি এখনো।ওঠো আমি মুছে দিচ্ছি।নয়তো পড়ে চুল পড়ে যাবে।
স্পর্শী উঠলো না।ওভাবেই শুয়ে রইলো।পরশ টাওয়াল আনলো।তারপর আলতো করে চুলগুলো মুছতে লাগলো।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই দ্রুত উঠে গেল সেখান থেকে।স্পর্শী ওভাবেই পড়ে রইলো।সারা শরীর ভীষণ ব্যাথা করছে। মাথা টাও ধরেছে।এরইমধ্যে পরশ বললো-
হয়ে গেছে।
বলেই পাচ ইঞ্চি কালার করা চুল স্পর্শীর সামনে ধরল। আতকে উঠলো স্পর্শী। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ছলছল চোখে চুলের দিকে তাকিয়ে রইল।রাগে দুঃখে এক প্রকার কেদেই ফেললো সে।বললো-
এটা আপনি কি করলেন?আমার এত্তোগুলা চুল কোন সাহসে কাটলেন আপনি?আমার চুল!
–তো কি করবো?বাদরের লেজের মতো নিচের চুলগুলো রঙ করে রেখেছো কেন?।বিচ্ছিরি দেখাচ্ছিলো।তাই কেটে দিয়েছি।কান্নাকাটির কিচ্ছু নেই। ক দিনের মধ্যে আবার বড় হয়ে যাবে।
রেগে চেচিয়ে উঠলো স্পর্শী। বললো-
বড় হবে সেটা আমিও জানি।কত্ত শখ করে কালার করেছি আমি।আর আপনি সেটা কেটে ফেললেন।আমি আবার কালার করবো।এবার শুধু নিচের টুকু না।পুরো চুলে করবো কালার।
কোনোরকম সময় ব্যয় না করেই পরশ বললো-
তাহলে তোমাকে পুরোটাই ন্যাড়া করে দিব।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল স্পর্শী।পরশ স্পর্শীকে ওভাবে তাকাতে দেখে বললো-
কি ভেবেছো,বিয়ের আগে তোমার সব বাদরামি সহ্য করেছি বলে বিয়ের পরেও করবো।নো মিসেস শিকদার,এটা তোমার ভুল ধারনা।সব বাদরামি ছুটিয়ে দিব আমি।আমায় চিনতে ভুল করেছো।একদম ভদ্র,নরম বউদের মতো থাকবা।
বলে পরশ বাথ্রুমে চলে গেল।আর স্পর্শী তব্দা খেয়ে পরশের কথাগুলো ভাবছে।
**********
মা,চাচিরা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।এইফাকে মোবাইল নিয়ে ছাদে চলে গেল আর্শি।এতো এতো ঝামেলায় পাভেল ভাইকে একদম ফোন দিতে পারেনি।আজ প্রায় দুইদিন পর সে পাভেলের সাথে কথা বলবে।টানা তিনবার ফোন দেওয়ার পরেও ওপাশ থেকে রিসিভড হলো না।বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে আবারো ফোন দিল আর্শি।রিসিভড হতেই ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে ধমকে পাভেল বললো-
এই মেয়ে,সমস্যা কি তোমার?ফোন ধরছি না সেটা নজরে আসছে না তোমার।এতোবার ফোন দিচ্ছো কেন?ঘুমোচ্ছি আমি।
আর্শী পাভেলের ধমক শুনে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো-
পাভেল ভাই,আবার পড়ে গেলাম।
চমকে উঠলো পাভেল।বিছানায় বালিশ ঠেস দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো-
কোথায় পড়েছো?
ঠোট টিপে হেসে দিল আর্শি।মুখে বললো-
আপনার প্রেমে।এই যে আপনি ধমক গুলা দিচ্ছেন আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর পাভেল ভাই।এটা যদি রেকর্ডিং করে আপনাকে শোনানো যেতো তাহলে আপনি নিজেই প্রেমে পড়ে যেতেন।আমার কি দোষ বলুন?
পাভেল নিঃশব্দে হাসলো।মনে মনে বললো-
এই মেয়ে,আমিতো অলরেডি পটে আছি,এইসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আর পটাতে হবে না।
পরক্ষণেই ভাবলো সেটা বললেও বা ক্ষতি কি?ভাই নিজেই তো ও বাড়ির মেয়ে এনে বাসর করে নিয়েছে।সে প্রেম করলেই বা কি ক্ষতি।
শান্ত কন্ঠে বললো-আর্শিয়া।
–হুম,
–ভালোবাসো আমায়?
–খুউউউব!ভীষন!অনেএএএক!
পাভেল হাসলো।শান্ত কন্ঠে বললো-
বিয়ে করবে আমায়?
আর্শি হোচট খেলো।বার কয়েক নাম্বারের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখল এটা রঙ নাম্বার কি না।আজ এতো মধুর কন্ঠ যে হজম হচ্ছে না তার।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-
হ্যা হ্যা চাই।
পাভেল হাসলো।বললো-
তাহলে মন দিয়ে পরিক্ষা টা দাও।আরতো মাত্র পচিশ দিন বাকি।এএক্সাম দেওয়ার পরপরই নিয়ে আসবো আমার কাছে।
নুইয়ে গেল আর্শি।করুন কন্ঠে বললো-
কিন্তু আব্বু আর ভাইয়ারা যে..
বলার আগেই পাভেল বললো-
তোমার বড় বোনের মতো বাড়ি গিয়ে তুলে আনবো।
আর্শি খুশীতে উৎফুল্ল হয়ে নেচে উঠলো।তার পাভেল ভাই তাকে বিয়ে করবে।ভাবতেই ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে তো আবার উপরে উঠতে করছে।ইশশ।ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো পাভেল ফোন কেটে দিয়েছে।ফোন টাকে বুকের সাথে কিছুক্ষন চেপে ধরে নিচে চলে গেল।
*********
শিকদার বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সরদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন বিপাশা।আসার সময় স্পর্শী খুব কেদেছে।বিপাশার ও ভীষণ কষ্ট হয়েছে স্পর্শীকে ছেড়ে আসতে।মনে হচ্ছিলো কলিজা টা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে।বাড়ি ফিরে কি করে ছেলের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে সে?ছেলেটার প্রাণভোমরা টাকে নিজ হাতে অন্য ছেলের হাতে সপে দিয়ে গিয়েছে।যদিও রাহুল অনেকবার বলেছে সে সামলে নিয়েছে নিজেকে।কিন্তু বিপাশা তো জানে ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ঢুকরে মরছে।টাকা জমিয়ে স্পর্শীর জন্য আংটি কিনেছিলো রাহুল। সব সময় আংটিটা নিজের পকেটেই রাখে।
এই তো এখানে আসার আগে আংটিটা তার হাতে দিয়ে বলেছিলো, স্পর্শীর স্বামীকে উপহার দিতে।প্রথমে আনে চেয়েছিলো না বিপাশা।বাধ্য হয়ে এনেছে।ইশশ,ছেলেটা মনে করে না দিলে আত্নীয় স্বজনের সামনে মাথা কাটা যেত।হুট করে আসাতে তো কোনো উপহার’ই আনা হয় নি।
খুব শীঘ্রই ভালো একটা মেয়ে দেখে রাহুলের বিয়ে দিতে হবে। নইলে ছেলেটা তার মরেই যাবে স্পর্শীর শোকে।
**********
ফ্লোরের উপর একটা পাটি বিছিয়ে, মাথার নিচে এক হাত দিয়ে অন্যহাত কপালে ঠেকিয়ে শুয়ে আছে পরশ। ভীষণ মাথা যন্ত্রনা করছে।পাশের সেল থেকে ভীষণ চেচামেচির আওয়াজ আসছে।আর শুতে পারলো না পরশ। থালাবাসন ফেলার শব্দ,মারামারি,গালাগালির শব্দে মাথা যন্ত্রনা বাড়ছে।উঠে বসে পাশের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করলো-
ওখানে কি হয়েছে?
–আর বইলেন না এমপি সাহেব। নতুন একটা খুনের আসামী আইছে।সারাদিন মারামারি করতেই থাকে।শুনছি,এই ব্যাটা নিজের বউয়ের গলা কাইট্টা খুন করছে তারপর জেলে আইছে।
থেমে,
এইসব খুনীগুলারে ফাসি না দিয়া সরকার জেলে পাঠাইছে আমাগো ভোগানোর লাইগা।
পরশ হাসলো।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-
সব খুনীরা খারাপ হয় না।এর স্ত্রীর মতো সমাজে কিছু বিষাক্ত মানুষের জন্য এরা খুন করতে বাধ্য হয়।এইসব বিষধর সাপ গুলোকে ইচ্ছে করে বারবার খুন করি।একাধিকবার জ্যান্ত করি আবার খুন করি।কিন্তু আফসোস!এদের একবার’ই খুন করা যায়।
ঘাবড়ে গেলেন হাবিলদার।আমতাআমতা করে বললেন-
আপনে যেন কয়টা খুন করছেন?
পরশ আবারো হাসলো।যেন খুনের কথাগুলো বলতে তার ভীষণ ভালো লাগছে আনন্দ হচ্ছে।স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো-
তিনটা মার্ডার,আর দুটো পঙ্গু করে জেলে এসেছি।এক দুজন খুন করে পরশ শিকদার জেলে আসবে না।
চলবে?