রাজনীতির রংমহল পর্ব-২১

0
809

#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#পর্বসংখ্যা_২১

কেটে গেছে প্রায় দুদিন।এ সময়টাতে পরশ আর স্পর্শীর মধ্যে দূরত্ব নয় বরং খুনশুটি বেড়েছে।দুজন দুজনকে আরো গভীরভাবে চিনেছে, উপলব্ধি করেছে।স্পর্শীর সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এখন আর লক্ষ করা যায় না বরং বেশ শান্তশিষ্ট হয়ে শাশুড়ীর সাথে পুরো সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।তবে বাধ সেধেছে পরশ।নিত্যনতুন প্রতি মুহুর্তে নানাভাবে জ্বালাচ্ছে সে স্পর্শীকে।যার কারনে বারবার সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হয় স্পর্শীকে।

সকাল আটটা।রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে প্লেট গোছাচ্ছে স্পর্শী।পাশেই পিয়াশা আলুর খোসা ছাড়াচ্ছে।প্রেমার ডাক শুনতেই পিয়াশা চলে গেলেন বাইরে।সিড়ি দিয়ে হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে পরশ নামলো।রান্নাঘরের সামনে এসে আশে-পাশে বারকয়েক চাইলো।কেউ নেই।গলার আওয়াজ তুঙ্গে তুলে হাক ছাড়লো-

স্পর্শীয়া, তুমি কি ফ্রি আছো?

চকিতে তাকালো স্পর্শী।গলা আওয়াজ খাদে নামিয়ে তড়িৎ বেগে বললো-

হ্যা নেতামশাই,কিছু লাগবে?

ত্রস্ত পায়ে রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে পরশ বললো-

হ্যা,আপাতত চুমু লাগবে।পার্টি অফিসে যাচ্ছি,আসতে দেরি হবে।তাড়াতাড়ি এদিকে ঘোরো,চারটা চুমু দিব।ঘড়ি ধরা চার মিনিট লাগবে।পাচ মিনিটের সময় আমাকে গাড়িতে থাকতে হবে।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্পর্শী।মুহুর্তেই আশে-পাশে তাকালো।কাউকে না দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর চোখ গরম করে বললো-

এই আপনাকে এমপি কে বানিয়েছে হ্যা?অসভ্য পুরুষ। সরুন,কাজ করছি আমি।

পরশ শুনলো না।এক হাত দিয়ে স্পর্শীকে টেনে নিজের কাছে আনলো। তারপর পরপর চার টা চুমু দিয়ে ঠোট কেলিয়ে হেসে দিয়ে বললো-

মিশন সাকসেসফুল। আসছি আমি।

বলেই আবার ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।স্পর্শী ঠোট মুছতে মুছতে কিছু ভয়ংকর গালি দিল পরশকে।তারপর আবারো কাজে মনযোগ দিল।

সারাদিনে পরশ বা পাভেল কেউই বাড়িতে আসেনি।স্পর্শী শাশুড়ীর সাথে রান্না-বান্না শেষ করে ঘরে আসলো।গোসল করে জানলার সামনে বসে ফোন হাতে নিলো।দেড়টা বাজে।অথচ লোকটা এখনো আসে নি।সেতো তার নেতামশাইকে খুব মিস করছে।পরশের নাম্বার টাতে কল করতেই ওপাশ থেকে কেটে দিল।আশ্চর্য হয়ে গেল স্পর্শী।ওনার এত্তো বড় সাহস স্পর্শীর ফোন কেটে দেয়।ভীষণ ক্ষেপে গেল স্পর্শী।আবারো দিল ফোন।কেটে দিল পরশ।স্পর্শী আবারো দিল।বাধ্য হয়ে ফোন টা রিসিভড করে দাতে দাত চেপে পরশ বললো-

মাথা পুরোটাই বিগড়ে গেছে তোমার?স্পর্শীয়া,আমি বিজি আছি।মিটিং এ আছি এখন।

বলেই কেটে দিল।মনে হলো যেন স্পর্শীর মুখের উপর কোনো দরজা বন্ধ করলো পরশ।একে তো ছাড়বে না সে।বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ ছুকছুক ছুকছুক করতে থাকে,অথচ বাইরে গেলে তাকে চেনেই না।মিটিং করছে,ওর মিটিং য়ের বারোটা বাজিয়ে দেবে স্পর্শী।গুটিগুটি হাতে মেসেজ লিখলো-

নেতামশাই,আপনি আমার কথা না শুনেই ফোন কাটলেন কেন?প্রয়োজনীয় কোনো কথা না থাকলে আমি কি আপনাকে ফোন করতাম?

লিখেই পরশের নাম্বারে সেন্ড করল।মেসেজটা পড়ার সাথে সাথে কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো পরশের।বাড়িতে কি কিছু হয়েছে নাকি?ভাবতেই মিটিং ফেলে দ্রুত স্পর্শীকে ফোন দেয়।ওপাশ থেকে বাকা হেসে স্পর্শী ফোন তোলে।কানে নিয়ে ধীর কন্ঠে শুধায়-

নেতামশাই,ভালো করেছেন ফোন দিয়ে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে।

পরশ উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-

কি হয়েছে স্পর্শীয়া।

–আসলে ঘটনাটা হচ্ছে,আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি নেতামশাই। এইমাত্র উপলব্ধি করলাম,তাই ভাবলাম এতো গুরুত্বপূর্ণ কথাটা এক্ষুনি আপনাকে বলা দরকার।

থেমে,
আপনি খুশী হয়েছেন তো শুনে?

পরশ হতভম্ব হয়ে গেলো।পরক্ষণেই রাগে নাকের পাটাতন ফুলে উঠলো। দাতে দাত চেপে নিচু কন্ঠে বললো-

একবার বাড়িতে আসতে দাও।এসেই দাড়িপাল্লা নিয়ে মাপতে শুরু করবো তোমার ভালোবাসার ওজন।আমিও দেখতে চাই কতটা ভালোবাসে যার ভার নিতে পারছিলে না।মিটিং য়ের সময়েই আমায় ডিস্টার্ব করতে হলো।

-আরে,ডিস্টার্ব বলছেন কেন নেতামশাই।আমি তো….

পরশ পুনরায় দাতে দাত চেপে বললো-

আর একবার যদি ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করেছো তো থাপড়ে গাল লাল করে দিব বেয়াদপ মেয়ে।মশকরা হচ্ছে কাজের সময়।

বলেই ফোন কেটে দিল।স্পর্শী তব্দা খেয়ে কতক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে বললো-

আশ্চর্য! এমন ভাবে বকলো যেন আমি ওনার সাথে বখাটে দের মতো প্রেম করার জন্য পিছু নিয়েছি।আরে বাপ,ঘরের বউ হই আমি তোর।ধুর!আজকে বাড়িতে আসুক তারপর দেখাবো মজা।

*******
রাত আটটা।পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে আর্শি।কিন্তু বইয়ের ভাজে ফোন।স্ক্রিনে জ্বলজল করে ভাসছে পাভেলের ছবি।পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছে একবার ছবি দেখছে তো আরেকবার চুমু খাচ্ছে ফোনের উপর।এই মুহুর্তে তার পড়তে ইচ্ছে করছে না।পাভেলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।অনেক ভেবে চিনতে নিজেকে দমাতে না পেরে ফোন দিয়েই বসলো পাভেলকে।সাথে সাথেই রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে পাভেল শান্ত কন্ঠে বললো –

বলো।

অবাক হয়ে গেল আর্শি। সে ভেবেছিলো হয়তো বড়সড় কোনো ধমক দিবে পাভেল।খুশিতে আটখানা হয়ে আদুরে কন্ঠে বললো-

পড়ছিলাম,কিন্তু মন টিকছিলো না।আপনার সাথে বারবার কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো।তাই টুপ করে ফোন দিয়ে বসলাম।

ঠোট টিপে হাসলো পাভেল।নিজেও আদুরে কন্ঠে বললো-

আচ্ছা,কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো ভালো কথা।আগামী পনেরো মিনিট তোমার।কিন্তু তারপর কিন্তু মন দিয়ে পড়তে বসতে হবে।রাজী।

খুশিতে চেয়ারসহ লাফিয়ে উঠলো আর্শি।উত্তেজিত কন্ঠে বললো-

রাজি,রাজি। এক পায়ে রাজি আমি।

পরশ হাসতে হাসতে বললো-

আস্তে লাফাও,পড়ে যাবা।আর্শি।

দুজন মানব-মানবী কথা বলতে লাগলো।বাস্তবিক ভাবে কথা নয় প্রেমালাপ করতে লাগলো।দুজন নিজেদের মনের কথাগুলো উজার করে দিতে লাগলো একে অপরকে । অষ্টাদশী তার ভালোবাসাকে নিংড়ে দিতে ব্যাস্ত।এমন সময়েই পেছন থেকে দানবীয় হাতটা কান থেকে ফোন টেনে নিয়ে গেল।হকচকিয়ে গেল আর্শি।সামনে তাকাতেই দেখলো জমরুপি বড় ভাই সোভাম শিকদার।গলা শুকিয়ে গেল আর্শির।হাত-পা অনবরত কাপতে লাগলো।সারা শরীর ভয়ের চোটে তরতর করে কাপতে লাগলো।

ফোন হাতে নিয়ে সোভাম লাউডস্পিকারে দিল।ওপাশ থেকে পাভেলের হাসির সাথে কথাগুলো ভেসে আসছে।

তোমার ওই ভাই না মানলে পরশ ভাই যেমন স্পর্শীকে তুলে এনেছে।আমিও তোমায় তুলে আনবো।তুমি আসবে তো আমার সাথে।

সোভামের বুজতে বাকি রইলো না এটা কে।আস্তে করে ফোন কেটে দিল।তারপর হুট করেই ঠাস করে থাপ্পড় বসালো আর্শির গালে।মুহুর্তেই হাউমাউ করে কেদে উঠলো আর্শি।সোভাম চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডাকতে আরম্ভ করলো।আর্শিকে টেনে হিচড়ে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসা শামসুল সরদারের সামনে ফেললো।তারপর চিৎকার করে বললো-

দু-দিনের মধ্যে ওর বিয়ে দেব আমি।লেখাপড়ার কোনো দরকার নাই।সরদার বাড়ির মান সম্মান সব ওরা দুবোন মিলে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল।ছিঃছিঃ ছিঃ!!

চলবে?