রিক্ত শহরে আমার তুমি পর্ব-১০

0
102

#রিক্ত_শহরে_আমার_তুমি
ফাহমিদা তানিশা
পর্ব ১০

স্যার আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
__দেখো, অরুনিমা এখানে।
ইমন অনেকটা অবাক হয়ে বললো:কি বলছেন স্যার? অরুনিমা ম্যাম এখানে আসবে কি করে?উনি উনার বাড়ি গেছেন। আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো: তুমি কি আমাকে অন্ধ বলছো?আমি ভুল কেন দেখবো?আমি স্পষ্ট দেখেছি। এখানে অরুনিমা দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন চারপাশে একবার দেখলো। তারপর এএসপি আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো: কোথায় এখানে অরুনিমা? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।
আয়ান অনেকটা রেগে গিয়ে বললো: তুমি তো মাথামোটা। দেখবে কি করে?বামে দেখো।
ইমন আয়ানের কথামতো বামে তাকিয়ে অবাক হলো। তারপর বললো:স্যার সত্যি তো। উনি এখানে কি করছেন?

তারা দুজনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সামনে থেকে শ্রেয়া ডাক দিলো।”এই আয়ান তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আমরা উপরে উঠে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আয়।”

শ্রেয়ার কথায় আয়ান আর ইমন তাড়াতাড়ি লিফটে গেলো।ছয় তলায় এসে তারা নেমে ভাবিদের ফ্ল্যাটে গিয়ে বসলো। আয়ানের একপাশে শ্রেয়া আর অন্যপাশে মিষ্টি বসে আছে।সবাই গল্প করছে কিন্তু আয়ানের সেদিকে মন নেই।সে চুপচাপ ভাবছে অরুনিমা এখানে কি করছে? মিষ্টি একটু পরপর তাকে এটা-ওটা বলে বিরক্ত করছে। তবু তার সাড়া-শব্দ নেই।সে এমন ভাবে বসে আছে যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। তবু মিষ্টি কথা বলতেই আছে।মিষ্টির অবস্থা দেখে শ্রেয়া একটু পর আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে। একটু পর দুজন মেয়ে আয়ানের ভাবিকে নিয়ে আসলো।তারা হয়তো ভাবির বান্ধবী।সবাই নতুন ভাবিকে নিয়ে মজা করছে। কিন্তু তখনো আয়ান চুপচাপ।শ্রেয়া তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে আড়চোখে। একটু পর আয়ানের কানে কানে এসে বললো:কিরে কি হয়েছে তোর?ভাবি কি পছন্দ হয়নি?
শ্রেয়ার কথায় আয়ানের ধ্যান ভাঙলো। একবার ভাবির দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকালো সে। তারপর ফিসফিসিয়ে বললো: সুন্দর আছে। পাশের মেয়েগুলো কারা?
_ভাবি আর ভাইয়ার বান্ধবী। আমাদের বাসায় গিয়েছিল একবার।
মিষ্টি তাদের কথা শুনে অনেকটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো:”ভাবির পাশের মেয়েটা একটু বেশি সুন্দর আর স্মার্ট। ভাইয়া কোন চোখে এই মেয়েকে বাদ দিয়ে ভাবিকে পছন্দ করলো আমার জানা নেই।আমি তো এর চেয়েও সুন্দর।তাই না আয়ান ভাই?”
আয়ান আর শ্রেয়া তার কথার জবাব দেয়নি।এই মেয়ের একটা ভাব শুধু।সে খুব সুন্দরী আর কেউ তার মতো নয়।

একটু পর দুজন মেয়ে আসলো।তার ভাবির কাজিন হয় তারা। শ্রেয়ার সাথে কথা বলছে পাশপাশি আড়চোখে মিষ্টি আর আয়ানের কাণ্ড দেখছে। মিষ্টি বারবার হেলেদুলে আয়ানের গায়ে গিয়ে পড়ছে। একবার মাথা রাখছে তো আবার কাঁধে হাত রাখছে। তার ভাবিও দেখছে তাদের কান্ড তা আয়ান বুঝতে পারছে। কিন্তু তার মিষ্টিকে থামানোর সাধ্য নেই।তাই বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই সে জানে। খুব লজ্জা লাগছে তার। ভাবি মানে গুরুজনের মতো।তার মধ্যে নতুন মানুষ। রুমের সবাই নতুন আত্মীয়।সবাই তাদের সন্দেহ করছে তা চোখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে কারণ সবার দৃষ্টি তাদের দিকে।

আয়ানের এক মামাতো ভাই হৃদয় বললো: ভাবি আপনার বোনদের ডাকুন। সবাই মিলে একটু মজা করি।
ভাবি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো: আচ্ছা ডাকছি। ওরা সবাই নিচে মেহেদী দিতে গেছে তাই এদিকে আসছে না।
এই বলে তার ভাবি কাউকে ফোন দিয়ে আসতে বললো। ফোন হাত থেকে রাখার আগে রাখার আগেই কেউ ঝড়ের গতিতে হাজির। একপ্রকার দৌড়ে এসেছে সে।তার হয়তো জানা ছিল না বাসায় মেহমান এসেছে।তাও তার আপুর শ্বশুর বাড়ি থেকে।তাই অনেকটা দ্রুত গতিতে রুমে এসে বললো:”আপু ডেকেছিস কেন? মেহেদী দিচ্ছি তো আমি।”
গলার আওয়াজটা আয়ানের পূর্ব পরিচিত।সে দ্রুত চোখ তুলে তাকালো। মেয়েটা আর কেউ নয়, অরুনিমা। খোলা চুলে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আয়ান আগে প্রতিবার তাকে হিজাব পড়া অবস্থায় দেখেছিল। হিজাবের ভেতর যে তার চুলগুলো এতো সুন্দর তা আয়ানের কাছে অজানা ছিল।এক হাতের অর্ধেক অংশে মেহেদী দেওয়া।বোঝা যাচ্ছে ফোন পেয়ে সে দৌড়ে চলে এসেছে। মেহেদী শেষ করা হয়নি তাই।তাকে দেখে আয়ানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। কিন্তু অরুনিমা এখনো তাকে দেখতে পায়নি।

আয়ানের ভাবি সবাইকে দেখিয়ে বললো: আমার মেঝো বোন অরুনিমা। একটা কলেজের লেকচারার হিসেবে আছে।
অরুনিমা ছোট করে সালাম দিলো। শ্রেয়া হেসে বললো:নাইস টু মিট ইউ।
শ্রেয়ার দিকে তাকাতে গিয়ে অরুনিমা আয়ানকে আবিস্কার করলো।সে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। হয়তো বুঝতে পারছে না এএসপি আরদিদ আয়ান তার বাসায় কি করছে? মিষ্টির কথায় তার ধ্যান ফিরলো: “তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ওর দিকে? ”
অরুনিমা কথাটা শুনে বেশ অবাক হলো। বোবার মতো সে তাকিয়ে আছে।কোনো জবাব দেয়নি সে। মিষ্টির কথায় আয়ানের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।শ্রেয়াকে ফিসফিসিয়ে বললো:এই মেয়েরে থামা ব‌ইন। লিমিট ক্রস করে ফেলছে সে।
শ্রেয়া আয়ানের কথামতো বললো:বেয়াই বলে একটু দেখছে আরকি।দেখতেই পারে। আরে অরুনিমা কিছু মনে করো না। মিষ্টি তোমার সাথে মজা করছে।

অরুনিমা তার বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একপাশে ইমন বসে আছে। তাকে দেখে অরুনিমা আরো অবাক হলো। আয়ানের সাথে ইমন‌ও এসেছে তাহলে। তাকে এভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ানের মামাতো ভাই রাতুল বললো: “আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন বেয়াইন? আসুন আমাদের সাথে বসুন, আড্ডা দিন।”

তার কথামতো অরুনিমা তার আপুর পাশে গিয়ে বসলো। আড়চোখে কয়েকবার আয়ানকে দেখলো।সে এখনো গম্ভীর হয়ে বসে আছে।মুখটা শক্ত হয়ে আছে তার। অরুনিমা ভাবছে এতো ভাব নিয়ে বসে থাকলে তার আসার কি দরকার ছিল?সবাই হেসে মেতে আছে আর সে চুপচাপ ভাব নিয়ে আছে। হয়তো সে ভাব দেখাতেই এসেছে এখানে।এই ভেবে অরুনিমা হাসলো মনে মনে। একটু পর তার আপুকে ফিসফিসিয়ে সে কিছু বলেছে কিন্তু অন্যরা তা শুনতে পায়নি।বলেই সে চলে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে।তার চলে যাওয়া দেখে রাতুল আবার বলে বসে:”বেয়াইন চলে যাচ্ছেন কেন?”
রাতুলের কথায় তার বোন জবাব দিলো:ওর হাতে মেহেদি দেওয়া শেষ হয়নি।তাই নিচে যাচ্ছে মেহেদী দিতে।
সাথে সাথে আয়ানের আরেক কাজিন সায়ান মশকরা করে বললো:”আরে ভাবি বলেন কি? আমরা থাকতে নিচে গিয়ে কেন মেহেদী দিতে হবে? আমরা খুব ভালো মেহেদি লাগাতে পারি।”
সবাই তার কথায় হাসলো। শুধু আয়ান ছাড়া। অরুনিমা সবার হাসি দেখে দ্রুত আয়ানের দিকে তাকালো।তার হাসি দেখবে বলে। কিন্তু বেচারির শখ মিটলো না।সে এখনো গম্ভীর হয়ে আছে। আয়ানের চেহারার গম্ভীর ছাপ দেখে অজান্তে অরুনিমা মুখে ভেংচি কাটলো। কিন্তু সে জানে না আয়ান তার অপমানের কথা ভেবে এভাবে বসে আছে।

নিচে সবাই মেহেদি দিয়ে শেষ করে দিচ্ছে এই ভাবনা মাথায় আসতেই সে কারো কথা না শুনে নিচে চলে গেল।আর আয়ান অরুনিমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

অরুনিমা নিচে আসার পর ভাবছে আয়ান তার বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে। মানে তার দুলাভাইয়ের কাছের কেউ। আয়ানের সাথে দুলাভাইয়ের কি সম্পর্ক তা তো তাকে জানতে হবে। কিন্তু কার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করবে সেটা ভাবছে। একটু পর তার আপুর এক বান্ধবী নিচে আসলো মেহেদী দিতে। অরুনিমা ইনিয়ে বিনিয়ে জানতে চাইছে সেই আপুর কাছ থেকে কারণ উনি ভালো করে জানবেন। একটু ভেবে প্রশ্ন করলো:”আপু ভাইয়ার বাসা থেকে কে কে এসেছে?”
আপুটা জবাব দিলো: “আদনানের ভাই আয়ান,চাচাতো বোন শ্রেয়া , খালাতো বোন ..”
এতটুকু বলতেই অরুনিমা থামিয়ে দিলো।তার আয়ানের সম্পর্কে জানতে হচ্ছে তা সে জেনে গেছে। বাকিগুলো আর লাগছে না।
_আপু থাক হয়েছে।আর বলতে হবে না।বাদ দিন। শুধু শুধু আপনার কষ্ট।
সেও আর কথা বাড়ালো না।

অরুনিমা মনে মনে ভাবছে আদনান ভাই মানে তার আপুর হাসবেন্ড আর এএসপি আয়ান ভাই। তাহলে নিশ্চয় এএসপি আয়ানের মতো আদনানও রাগী আর বদমাইশের হাড্ডি হবে।তার আপু তা বুঝতে পারছে না প্রেমে পড়ে গেছে তাই।এই বাসায় যদি বিয়ে হয় তাহলে তার আপুর জীবন শেষ।এই বিয়ে তাকে আটকাতে হবে যেকোনো ভাবেই।

বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ান ও তার কাজিনরা চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।আরুনিমাকে সে আর দেখতে পায়নি।কারণ তারা এক জায়গায় বসে ছিল আর অরুনিমা নিচে ছুটাছুটি করছে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে তারা গাড়িতে গিয়ে বসলো। তখনি অরুনিমা আসলো। এসে তার আপুকে কিছু বলছে। তার আপু তার কথাগুলো শুনে রেগে যাচ্ছে তা আয়ান গাড়িতে বসে দূর থেকে দেখছে।তার মনে হচ্ছে তাদের বিষয়ে কোনো কথা বলছে অরুনিমা। তাকে দেখতে দেখতে সায়ান গাড়ি ছেড়ে দিলো আর তারা চলে আসলো।

অরুনিমা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল আয়ানরা চলে যাওয়ার জন্য।এতে তার আপুর সাথে কথা বলা তার জন্য সহজ হয়। আগামী কাল গায়ে হলুদ আর তার পরের দিন বিয়ে।এখনো মাঝে একদিন আছে। একদিন মানে অনেক কিছু করা যাবে।তার আগেই তাকে বিয়েটা ভেঙে দিতে হবে ।সে সোজা তার আপুকে গিয়ে বললো:”দেখ আপু, তুই এই বিয়ে করিস না।আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।”
তার আপু তার কথায় রেগে গিয়ে বললো:”বিয়ের সব আয়োজন শেষ। তাহলে কেন বিয়েটা করবো না?তার চেয়েও বড়ো কথা আমি আদনানকে ভালোবাসি।সেও আমাকে ভালোবাসে।”
অরুনিমার তার আপুর কথায় রাগ হলো।সে রেগে গিয়ে বললো:”আমি তোমাকে কখনো এই বিয়ে করতে দিবো না।”

চলবে….