রিক্ত শহরে আমার তুমি পর্ব-১৪

0
93

#রিক্ত_শহরে_আমার_তুমি
ফাহমিদা তানিশা
পর্ব ১৪

আয়ান তার মায়ের কথা শুনে মনে মনে হাসলো।সে একপ্রকার তার মায়ের কাছ থেকে লাইসেন্স পেয়ে
গেছে।এবার অরুনিমার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।

রাত গড়িয়ে সকাল হলো।আজ আদনানের বিয়ে।সে তো মহা খুশি।শত বাঁধা পেরিয়ে তামিমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়ে যাবে আজ।তার চেয়েও বেশি খুশি আয়ান। প্রথমবারের মতো কাউকে খুব ভালো লেগেছে তার।নতুন নতুন প্রেমে পড়ার মজাই আলাদা।আর তা যদি বুড়ো বয়সে হয় তাহলে তো মজা আরো বেড়ে গিয়ে দ্বিগুণ হয়। আয়ানের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি।তার বন্ধুরা অনেকে বাবা হয়ে গেছে আর সে সবে প্রেমে পড়লো। তাহলে তো তাকে বুড়ো বয়সে প্রেমে পড়া বলা ছাড়া উপায় নেই। মনে মনে ভাবছে আদনান ভাইকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ায় যায়।তার কারণেই তো সে অরুনিমার সান্নিধ্য পেলো। গুটি গুটি পায়ে আদনানের রুমে গিয়ে দেখলো সে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি দেখছে আর মুচকি মুচকি হাঁসছে। আয়ান এসে কাঁধে হাত রাখতেই সে চমকে গিয়ে পেছনে তাকালো। তার চমকানো দেখে আয়ান‌ও হেঁসে দিলো।
_ভাইয়া হেঁসে হেঁসে কি ভাবছো?
আদনান একটু লজ্জা পেয়ে জবাব দিলো: কিছু না।
_আমাকে বলতেই পারো। অবশ্য তুমি না বললেও আমি তোমার মনের কথাগুলো পড়তে পারি।
_বেশ ভালো হয়েছে আমার মনের পড়া বুঝতে পারিস।কি জন্য এসেছিস?
_তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছি।
আদনান আয়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো: ধন্যবাদ কেন?
_কারণ তো বলা যাবে না তোমাকে।
আদনান এবার হাঁসি প্রশস্ত করে বললো:আমিও আপনার মনের কথাগুলো পড়তে পারি জনাব।তাও আবার আপনার চেয়ে বেশি। আপনি আমার শালিকার সাথে প্রেম করতে চাইছেন।আমি জানি তো সব জানি।

আয়ান আদনানের কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কিভাবে বুঝলে?
_তুই তো মেয়েদের নিয়ে খুব একটা ভাবিস না। কিন্তু আমার শালিকাকে দেখার পর থেকে ওর সম্পর্কে জানতে তোর কতো ইনভেস্টিগেশন।
_তুমি তো বেশ খারাপ মানুষ।
_এই আমি খারাপ মানুষ হবো কেন?
_খারাপ মানুষ না হলে তো তোমার ছোট ভাইটার কথা ভেবে তাকে একটু লাইন করে দিতে। এখন তো আমার তামাশা দেখছো আর মজা করছো।
আদনান আয়ানের কথায় হাঁসলো।
তারপর বললো: প্রেম করতে চাইছিস?
_আরে না। ডিরেক্ট বিয়ে। আমাকে দিয়ে প্রেম-টেম হবে না।
_ডিরেক্ট বিয়ে হতে তো সময় লাগবে। আপাতত বন্ধুত্ব করতে পারিস। তারপর আস্তে আস্তে সব হবে।আমি আছি তো ।ভরসা রাখ আমার উপর।
_দেখা যাক তুমি কি করতে পারো।
_আপাতত আমার বিয়েটা সুন্দর মতো হতে দে।কাল তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা মিষ্টি ঝাল করে দিলো।
_আজ এমন কিছু হতেই দেবো না। বিশ্বাস রাখতে পারো।
_ওকে চল রেডি হয়ে নে।সময় প্রায় শেষের দিকে।
আদনান এই বলে রেডি হতে চলে গেল।

এদিকে অরুনিমার হাত-পায়ের ব্যথায় গায়ে জ্বর এসেছে।বেচারি বোনের বিয়েতে কতো মজা করবে বলে আশা করেছিল কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।তামিমাসহ কাজিনরা সবাই পার্লারে যাওয়ার সময় তাকে জোর করে নিয়ে সাথে গেলো।তার‌ও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু শরীরটা খারাপ থাকায় বেশ কষ্ট লাগছে।

আদনানের বন্ধুরা তাকে সাজিয়ে দিলো। সবাই রেডি হয়ে যাত্রা শুরু করলো ক্লাবের উদ্দেশ্যে।

অরুনিমা ক্লাবে এসে একটা চেয়ারে বসে আছে।রিশা তার পাশে বসে হাতটা ধরে আছে। সবাই ছোটাছুটি করছে আর অরুনিমা আর রিশা বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।এক প্রকার ভালোয় হলো অরুনিমার জন্য। অসুস্থ থাকায় তাকে কেউ কোনো কাজ করতে বলছে না আর সে দিব্বি বসে গল্প করতে পারছে।মহিমা এসে বললো:”আপু, বর এসেছে।চলো যায়।”

অরুনিমা আস্তে আস্তে দাঁড়ালো।রিশাসহ দুজনে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।তারা সেখানে দাঁড়ালে নিচের সবকিছু ভালোভাবে দেখতে পাবে।তাই মূলত সেখানে যাওয়া।

সবাই বরকে বরণ করতে নিচে গেল। আয়ান সামনের সিটে বসে আছে।সে গাড়ি থেকে নেমে আসলো।একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে সে। হাতে একটা কালো রঙের ঘড়ি। চোখে কালো চশমা। গায়ের রঙের সাথে কালো রঙটা বেশ মানিয়েছে তাকে। অরুনিমা এক পলক তাকালো তার দিকে।আজ তার চেহারায় আগের মতো রক্তিম বর্ণ নেই। সেই গম্ভীর রাগী রাগী ভাবটাও নেই।বেশ সাদাসিধে সে। অরুনিমা তাকে দেখছে আর ভাবছে:”সবসময় এমন ভদ্র-নম্র সাদাসিধে থাকতে কি এমন অসুবিধা!আজ কতো সুন্দর লাগছে কিন্তু অাগে যতোবার দেখা হয়েছে রক্তিম চোখ দুটো দেখেই সে ভয়ে শিহরিত হয়ে গিয়েছিল। আজকের এএসপি আয়ানকে দেখে সে দিগন্ত ভুলে যেতে পারে।”এই ভেবে মুচকি হাসলো।

এদিকে আয়ান গাড়ি থেকে নেমেই অরুনিমাকে খুঁজছে মনে মনে। নিচে আদনানকে বরণ করতে সবাই গেলো কিন্তু অরুনিমা আসলো না।সে মনে মনে ভাবছে:”তাহলে কি অরুনিমা আজ আসেনি? কাকে জিজ্ঞেস করা যায় এই কথা।”অরুনিমার কাছের কারো কাছ থেকে খবর নিলে সে সঠিক খবরটা পাবে আর কেউ জানতেও পারবে না। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দিলো মহিমার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করা যায়। কিন্তু সে কখনো মহিমার সাথে কথা বলেনি আগে।তাই কথা বলতে একটু আনকম্পরট্যাবল লাগছে তার।

মহিমার দিকে কয়েকবার তাকালো সে।মহিমা তার পাশে থাকা মেয়েটার সাথে কথা বলছে। তাদের কথা বলা শেষ হলে সে একবার মহিমার সাথে কথা বলবে।একটু পর মেয়েটি চলে গেলে আয়ান তার দিকে একবার গেল। আবার ফিরে আসলো। কেমন জানি লাগছে। আবার ভাবলো “অরুনিমার ছোট বোন মানে তো তারও ছোট বোন।যাই ভাবুক জিজ্ঞেস করে ফেলবে সে।

এবার সাহস করে মহিমার কাছে গেলো।”হাই আমি আয়ান। আদনান ভাইয়ের ছোট ভাই”
মহিমা একটু হেঁসে বললো:জি আমি চিনি আপনাকে। কেমন আছেন?
_ভালো। তুমি কেমন আছো? তুমি যেহেতু আমার ছোট তাই তুমি করে বললাম। ডোন্ট মাইন্ড।
_ভালো আছি। সমস্যা নেই।
_তোমার আপু কোথায়?
_তামিমা আপু?
_না,অরুনিমা ।
_মেঝো আপু উপরে আছে।
_ওকে থ্যাংকস।

আয়ান অরুনিমাকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে গেল।একটু পর অরুনিমাকে খুঁজে পেলো। তাকে দেখেই আয়ান হেঁসে দিলো। আয়ানের হাঁসিটা দেখে অরুনিমা বেশ অবাক হলো।ফাইনালি সে আয়ানের হাসিটা আবিষ্কার করতে সক্ষম হলো। আয়ান হেঁসে বললো: কেমন আছো?কি অবস্থা এখন?
_জি ভালো আছি। আপনি?
_হুম আমিও ভালো আছি।
রিশা তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান তাকে উদ্দেশ্য করে বললো: উনি কি তোমার ফ্রেন্ড?
অরুনিমা হেঁসে জবাব দিলো: হ্যাঁ। আমার স্কুল লাইফের বান্ধবী।
আয়ান রিশার দিকে তাকিয়ে বললো:হাই
রিশাও মুচকি হেসে “হ্যালো” বললো।
তখনি শ্রেয়া এসে আয়ানকে ডাক দিলো আর অরুনিমার সাথে একটু কথা বললো। তারপর দুজনে চলে গেল।

আয়ান শ্রেয়াকে বললো:ডাকলি কেন?
_তোর খালামনি তোকে ডাকছে।
_কেন?
_সেটা তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়।আমি কিভাবে জানবো?
_এভাবে বলছিস কেন?
_ডোন্ড মাইন্ড আয়ান।তোর খালা নিজেকে কি মনে করে?সবার সামনে আমার সাথে কিভাবে বিহেভ করলো তুই জানিস?যেমন মা তেমন তার মেয়ে।
আয়ান শ্রেয়ার কথায় একটুও অবাক হলো না। সবসময় তার খালা শ্রেয়ার সাথে খারাপ আচরণ করে।সেটা নতুন কিছু নয়।কারণ তার খালার ছেলে মিরাবের সাথে মানে মিষ্টির ভাইয়ের সাথে তার বহুদিনের সম্পর্ক যা তার খালামনি মেনে নিতে পারছে না।তাই তাকে সবসময় ছোট কে কথা বলে।
আয়ান শ্রেয়াকে কিছু না বলে তার খালার কাছে গেলো।

তার খালামনি ক্লাবের অন্য এক পাশে বসে আছে।খালামনির চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি বেশ রেগে আছেন।সে গিয়ে বললো:”কি হয়েছে খালামনি?”
_আয়ান তোমার সমস্যা কি? তুমি আদনানের শালীদের পেছনে পড়ে আছো কেন? প্রথমে দেখলাম নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছোট বোনের সাথে কথা বলছো আর এখন মেঝো বোনের সাথে কথা বলছো।আমরা কি খেতে না পেরে এসেছি। আমাদের সাথে তো কোনো কথা বললে না। তোমার নানুমনি মাত্র আসলো। তাকে সালাম করবে তা না। তুমি দিব্বি ওদের সাথে ঘুরছো?
আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো হজম করলো। তারপর শান্ত গলায় বললো:নানুমনি এসেছে?আমি খেয়াল করিনি।
_খেয়াল করবেই বা কি করে?

এমন সময় গরম তেলে পানির ছিটা পড়ার মতো করে অরুনিমা গিয়ে পড়লো তাদের মাঝে।সে তো জানে না তাকে নিয়েই সব সমস্যা। আয়ানকে সোজা গিয়ে বললো: একটু আসুন। আপনার সাথে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।
আয়ান অবাক চোখে অরুনিমার দিকে তাকালো আর তার খালামনি জল্লাদের মতো করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।

চলবে…