রিক্ত শহরে আমার তুমি পর্ব-১৫

0
101

#রিক্ত_শহরে_আমার_তুমি
ফাহমিদা তানিশা
পর্ব ১৫

আয়ান অবাক চোখে অরুনিমার দিকে তাকালো আর তার খালামনি জল্লাদের মতো করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।তার খালামনির বসা থেকে ওঠে যাওয়া দেখেই আয়ান বুঝতে পারলো তিনি আজ অরুনিমাকে ছাড়বেন না।তাই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলেন। অরুনিমা আয়ানের অবস্থা দেখে বেশ অবাক হলো। একটু আগেই তো সে নিজে এসে হেঁসে হেঁসে কথা বললো আর এখন ভাব দেখিয়ে চলে গেল কেন?সেও একবার আয়ানের খালার দিকে তাকিয়ে ধীর গতিতে হাঁটা দিলো।খালা তো আয়ানের আচরণে বেশ খুশি হলো।সে এই মেয়েকে উপেক্ষা করে চলেছে তাতে তিনি মহা খুশি।

এদিকে আয়ান তার খালামনির খুশিতে জল ঢেলে দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে অরুনিমা আসার জন্য।আর অরুনিমা আয়ানের কাণ্ড ভেবে ভেবে আস্তে আস্তে আসছে।এমনেও সে তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারছে না পা ব্যথার জন্য। কতটুকু আসার পর হঠাৎ কারো ডাক পড়লো।”অরুনিমা,এই অরুনিমা” শোনার সাথে সাথে অরুনিমা ফিরলো। আয়ান এক পাশে দাঁড়িয়ে ওকে ডাকছে যেন কেউ দেখতে না পায় এভাবে। অরুনিমা বেশ অবাক হয়ে দ্রুত গেলো। শান্ত গলায় বললো:ওখানে এভাবে চলে আসলেন তাই আমি ভাবছি আপনি কথা বলতে চাচ্ছেন না।
_আরে তোমার সাথে কথা না বলার সাধ্য কি আমার আছে? মনে মনে বললো:আমি তো চায় সারাদিন তোমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু কিভাবে বলি।
_সরি,বুঝি নাই।কি বললেন?
_বলছি খালামনি একটু রেগে আছেন তাই এক প্রকার পালিয়ে আসলাম।
অরুনিমা আয়ানের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো: আপনিও কাউকে ভয় পান? আমি তো এতো দিন ভাবতাম সবাই আপনাকে ভয় পায়।
_আসলে ভয় পাওয়ার বিষয় নয়।কথা হচ্ছে তারা আমার সিনিয়র। তাদেরকে সম্মান করা উচিত।তাই কেউ কিছু বললে শুনে থাকতে হয়।আর কথা শোনার আগে পালিয়ে যাওয়া তো ভালো।
অরুনিমা আয়ানের কথায় হাসলো। তারপর বললো: আসলে আমার এভাবে ডাকাটা ঠিক হয়নি।সরি।আসলে আমার বান্ধবী রিশা আপনি পুলিশ জেনে আপনার সাথে কিছু ইমপরট্যান্ট কথা বলতে চাইলো।আর ওর একটু পর চলে যেতে হবে তাই আপনাকে তাড়াতাড়ি ডাকলাম।
_ওকে, ডাকো রিশাকে।
_আচ্ছা আপনি দাঁড়ান।

অরুনিমা পায়ে ব্যথা থাকা সত্ত্বেও দ্রুত পায়ে গেলো রিশাকে ডাকতে আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসলো।এসেই আয়ানকে বললো: এবার কথা বলতে পারেন।
রিশা সাথে সাথে বলে বসলো: ভাইয়া আমাকে আপনার সাহায্য করতে হবে।
আয়ান রিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো: বলুন, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
রিশা হয়তো কথাগুলো আয়ানকে বলতে একটু আনকম্পরট্যাবল ফিল করছে তাই অরুনিমা আয়নকে বললো :আমি বলি।
_সিউর
_ও ওর হাসবেন্ডের‌ বিষয়ে কথা বলতে চাইছে।ওর হাসবেন্ড পেশায় বিজনেসম্যান।অনেক টাকা-পয়সা আছে।আর সেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা।সে নিয়মিত মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এসে রিশাকে মারধর করে।প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। এখন ওর সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই সে চাইছে কোনো একটি সমাধান।
আয়ান রিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো: সমাধান বলতে আপনি এখন কি চাইছেন?
রিশা ছোট গলায় বললো:আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
আয়ান একটু ভাবলো। তারপর বললো:আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে অরুনিমাকে জানাবেন। আমি আছি। আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনি যা চাইবেন তাই হবে।আমি আপনাকে সবসময় সাপোর্ট করতে প্রস্তুত। তবে যেহেতু এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তাই আমরা আজ আর সময় নষ্ট না করি।
অরুনিমা আর রিশা “আচ্ছা ঠিক আছে।” বলে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে আয়ান আবার দাঁড় করালো।
_আপনার হাসবেন্ডের পরিচয় আর অফিসের ঠিকানাটা আমাকে দিয়েন।অরুনিমাকে দিলে ও আমাকে পাঠিয়ে দিতে পারবে।
_আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে আয়ান চলে গেল।রিশা আর অরুনিমা ভাবছে তারা কি করতে পারে।

বিয়ের আয়োজন শেষ পথে।এবার বিদায় দেওয়ার পালা। অরুনিমা আর মহিমা এখন থেকে শুরু করে দিয়েছে কান্না।তারা একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আয়ানের কাজিন সায়ান তা দেখতে পেয়ে ছুটে গেল তাদের কাছে। হেঁসে বললো:”আরে বেয়াইন, কাঁদছেন কেন?”
সায়ানকে দেখে অরুনিমা আর মহিমা লজ্জা পেল। দুজনেই চুপ গেল। তাদের চুপসে যাওয়া দেখে সায়ান বললো:আমি জানতাম আজকে তামিমা ভাবির বিয়ে। তিনি তো আমার ভাইকে পেয়ে খুব হাসছেন,মজা করছেন।আর তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছো কেন? তোমাদের তো আজ বিয়ে না।
অরুনিমা চুপ করে আছে কিন্তু মহিমা একটু চঞ্চল।সে বেশ পরিপাটি হয়ে উত্তর দিলো:বোনের বিয়েতে অন্য বোনেরা কান্না করে।তা আপনি জানবেন না।আর আপনার ভাইকে পেয়ে কি আমার আপু আমাদের ভুলে যাবে নাকি?সেও কান্না করবে। একটু অপেক্ষা করেন।
সায়ান একবার তামিমার দিকে তাকালো।তামিমা দিব্যি হেলেদুলে আছে।ছবি তুলছে,আড্ডা দিচ্ছে,হাসছে। তাকে দেখে সায়ানের মনে হচ্ছে সে কান্না করবে না।মহিমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললো:আরে বেয়াইন, আমার ভাবি আপনাদের মতো নয়।সে কখনো কান্না করবে না।ইটস মাই চ্যালেঞ্জ।
মহিমাও চ্যালেঞ্জ করে বললো: আমিও চ্যালেঞ্জ করে বলছি আপু কান্না করবে।যদি চ্যালেঞ্জে জিতে যায় কি দিবেন?
সায়ান উদার মনের মানুষ। মহিমার কথায় সে তার উদারতা ফুটিয়ে তুলার জন্য বললো:যা চাইবেন তাই দিবো।
_ওকে দেখা যাক।

তামিমাকে বিদায় দিতে গিয়ে তার বাবা-মা কান্না করে দিলো।সে তো আর কান্না থামানোর মেয়ে নয়। আজকের দিনের জন্য কিসের আবার লজ্জা।মনের মধ্যে কষ্ট চেপে রেখে উপরে কান্না না করাটা আরো বেশি লজ্জার। মেকআপ আর লোকলজ্জার ভয়ে কান্না না করে তো সে শান্ত হতে পারবে না।তাই সেও চোখের জল ছেড়ে দিলো। আদনান তাকে কান্না থামাতে বলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অরুনিমাকে আর মহিমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো সে।তারাও কাঁদছে। একপর্যায়ে সবাই টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে দিলো তামিমাকে।গাড়ি ছেড়ে দিলে তামিমার কান্না আরো বেড়ে গেল। আয়ান সামনের সিটে আর তামিমা, আদনান, শ্রেয়া পেছনে বসেছে।সবাই তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু সে ডুকরে কাঁদছে। আদনান কি করবে বুঝতে পারছে না।সে একবার তামিমাকে কান্না থামাতে বলছে আর একবার সবার দিকে তাকাচ্ছে।কেউ তাকে কোনো বুদ্ধি দিচ্ছে না এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার। প্রায় এক ঘন্টার পথ।তামিমা পুরো পথ কান্না করে কাটিয়ে দিলো।

ঘন্টাখানেক পর তারা পৌঁছালো বাড়িতে।সবাই তামিমাকে বরণ করে নিলো।তার কান্না একটু কমেছে। অনেকটা ক্লান্ত হয়ে আছে সে।তার উপর ভারি গহনা আর শাড়িতে নাজেহাল অবস্থা। তবুও তো কিছুই করার নেই। আজকের দিনের জন্য তো সব মেনে নিতে হবে।

আদনানদের বাসায় আসার পর থেকে একটু ভালোই লাগছে। শ্রেয়া সবসময় তার সাথে সাথে আছে।গল্প করছে। বেশ ভালো মেয়েটা। খুব মিশুক আর শান্ত প্রকৃতির মেয়ে সে।তামিমার তাকে বেশ ভালো লাগলো। নিজের বাড়ি থেকে অন্যের বাড়িতে গিয়ে এমন একজন সঙ্গী পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।

এদিকে অরুনিমা,মহিমা বাড়িতে এসে একটা ঘুম দিলো। বিয়ে বাড়ির এতো বিশাল ঝামেলা পোহাতে গিয়ে তাদের বাবা-মায়ের অবস্থা খারাপ। দুজনেই খুব ক্লান্ত।সব গুছিয়ে তারা ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে গেল। অনেক রাত হয়ে গেছে তাদের ঘুমাতে ঘুমাতে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে অরুনিমা তার আপুকে ফোন দিলো।সেও সাথে সাথে রিসিভ করলো। দুজনেই কথা বললো কিছুক্ষণ। মনটা বেশ হালকা লাগছে কথা বলে। তবে আজ তারা সবাই যাবে আয়ানদের বাসায়। তখন তামিমার সাথে দেখা হবে।এই বলে অরুনিমা বেশ উৎফুল্ল হয়ে আছে সকাল থেকে।

সময় গড়িয়ে দশটার দিকে ছুঁই ছুঁই।সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে রেডি হচ্ছে তামিমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য।তারা কেউ কখনো যায়নি সেখানে।সব কাজিন মিলে যাবে আজ।

এদিকে আয়ানদের বাসায় তামিমাদের বাসা থেকে মেহমান আসবে শুনে সবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মিষ্টি মা রাতেই চলে গেছে।গায়ে হলুদের রাতের সব কথা আয়ান মিষ্টির মাকে বলায় সে রাগ করেছে।তাই আর বিয়েতে আসেনি সে।মাও এসে রাতেই চলে গেছে।তাই আয়ানের মা আ আয়ানের উপর ভীষণ রেগে আছেন।শত হোক তার ছেলের বিয়েতে বোনটা মন খারাপ করে গেছে তা তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না।তার একমাত্র ভাগ্নি বিয়েতে আসেনি তা নিয়ে আরো রাগ আয়ানের মায়ের মনে।

আয়ান ঘুম থেকে উঠে শুনলো অরুনিমারা আসছে। শ্রেয়া তাকে বলেছে।সে তো মহা খুশি। কিন্তু তার খুশিকে দুঃখে রুপান্তরিত করতে তার মা হাজির।তিনি এসে সোজা বাংলায় ছেলেকে আদেশ দিলেন:তোর‌ খালামনির বাসায় গিয়ে মিষ্টিকে আর তোর খালামনিকে নিয়ে আয়।

চলবে….