রিক্ত শহরে আমার তুমি পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
122

#রিক্ত_শহরে_আমার_তুমি
ফাহমিদা তানিশা
পর্ব ১৮+অন্তিম পর্ব

আদনান আয়ানের কথায় হাসলো। তারপর বললো:এতো ছটপট করছিস কেন?সবে তো দেখতে আসছে।দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায়?
আয়ান এবার আদনানের কথায় রেগে গেলো।তার প্রিয় মানুষটাকে অন্যজন বিয়ের জন্য দেখতে আসবে তা কি মেনে নেওয়া যায়?কখনো‌ সম্ভব নয়।কড়া গলায় বললো:তামিমা ভাবিকে কেউ দেখতে আসলে তোমার কেমন লাগতো? আমারো এমন লাগছে। ছটপট না করে কি করবো।
_তাহলে মশাই, বলুন আমি এখন কি করতে পারি?
_তুমি এখন আম্মু আব্বু আর তোমার শ্বশুর শাশুড়িকে ম্যানেজ করবা। তারপর আমাদের বিয়ে দিবা।
_বললেই কি বিয়ে দেওয়া যায়?বিয়ে অনেক ঝামেলার কথা। তাদের এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছে এখনো এক বছর হয়নি।
_তো কি হয়েছে?একদিনে দুই মেয়ের বিয়ে দেয় এমন‌ও আছে।
_দেখ বিয়ে বললে মাত্র করা যায় না।একটা সুন্দর মতো ফাংশন করতে অনেক প্ল্যানের প্রয়োজন পড়ে। তুই ছোট মানুষ বলে বুঝছিস না।
_তাহলে এনগেজমেন্ট তো এখন হতেই পারে।
_এটা তুই বললে তো হবে না।অরুনিমার বাবা-মায়ের আর তোর বাবা-মায়ের তো বলতে হবে।
_এটাই তো বলছি আমি।ওদের রাজি করাও তাহলে।
_আচ্ছা দেখা যাক কি করা যায়।
আয়ান “থ্যাংকস ভাইয়া ” বলে ফোনটা রেখে দিলো।

আদনান এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। হুট করে তার ভাইয়ের মাথায় বিয়ের ভূত চাপলো। এতো দিন বলতো আমি বিয়েই করবো না আর এখন বলছে এক্ষুনি বিয়ে করবো। আসলেই প্রেমের ভূত মাথায় চাপলে মানুষ পাগল হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।কি আর করার?এমনেও তো দুজনের বিয়ের বয়স হয়েছে।তো কথা বলাই যায়।
আদনান গুটি গুটি পায়ে তার মায়ের রুমে গেলো।তার মা ল্যাপটপে কিছু একটা করছেন। তাকে দেখে মাথা তুলে তাকালেন উনি। আদনান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। তারপর বললো: একটা কথা বলতে আসছিলাম।
_হুম বলো কি কথা।
_আসলে আয়ান বলেছিল আমাকে বলার জন্য। বলবো?
_বলতেই তো বললাম।
আদনান একটু দম নিলো। তারপর এক নিঃশ্বাসে বললো: আয়ান তামিমার বোন অরুনিমাকে ভালোবাসে।কাল অরুনিমাকে কেউ দেখতে আসছে।তাই আয়ান পাগল হয়ে গেছে আর আমাকে ফোন দিয়ে বলছে সে আরুনিমাকে বিয়ে করবে। আমরা যেন সব ব্যবস্থা করি।
আদনানের কথায় তার মায়ের মধ্যে কোনো রিয়্যাকশন নাই। তিনি দিব্ব্যি ল্যাপটপে কাজ করছেন। একটু অবাক হলেনও না। আদনান তার কোনো রিয়্যাকশন না পেয়ে প্রশ্ন করলো: আপনি অবাক হননি?
আয়ানের মা এবার হাসলেন। তারপর ছেলেকে বললেন:আমি আগে থেকেই জানি সব।
_কিভাবে?
_আরে আমি আমার ছেলের মতিগতি বুঝবো না তা কি করে হয়?আমি তোদের বিয়ের দিন বুঝতে পেরেছি সব।ও মুখ ফুটে বলার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
_তাহলে দেরি করার কি আছে?
_দেখি তোর বাবা আসুক।সে কি বলে তা তো দেখতে হবে। তারপর তামিমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো ।বললেই তো সাথে সাথে হয় না। সিদ্ধান্তের একটা বিষয় আছে।
_হুম তাও ঠিক। তবে অরুনিমা বেশ ভালো মেয়ে। তাছাড়া শিক্ষিত একজন মেয়ে।
_তার চেয়েও বড়ো কথা আমার গাঁধাটা ওকে পছন্দ করেছে।
আদনানের মায়ের কথায় সে হেঁসে উঠলো। দুজনেই একটু গল্প করে আদনান রুমে চলে আসলো‌

একটু পর আদনানের বাবা বাসায় আসলেন। এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলেন। তারপর তার মা আয়ানের কথাগুলো তার বাবাকে বললো। বাসায় আসার সাথে সাথে তো বলা যায় না। একটু রেস্ট নিলে মন-মেজাজ শান্তি হয়।তার আগে সবকিছু বেশ রাগ লাগে। আয়ানের বাবা বেশ সোজাসাপ্টা মানুষ।তার চেয়েও বড় কথা ব‌উয়ের কথা তিনি কখনো ফেলেন না।বলা চলে সবকিছু আয়ানের মায়ের সিদ্ধান্তের উপর। তবু তিনি তার স্বামীর মতামত নেওয়ার আগে কাউকে কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলেন না। এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। দুজন দুজনকে সম্মান করলে, বিশ্বাস করলে সব সমস্যার সমাধান সহজেই হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রেও তাই।বলা যায় ঝামেলামুক্ত এক সুখী পরিবার। আদনানের বাবাও এই প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন।

স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন অরুনিমার বাবা-মাকে বলতে হবে। কালকের আগে তো সব ঠিক করতে হবে।তা না হলে কালকে অরুনিমাকে দেখতে আসবে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে অরুনিমার বাবাকে ফোন দিলেন আয়ানের বাবা।অরুনিমার বাবা বেশ সহজ-সরল মানুষ।তিনি আবার তার স্ত্রীর চেয়ে মায়ের কথা মেনে চলেন। একপ্রকার বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান। ফোন রিসিভ করে দুজনেই সালাম দিলেন। একটু গল্পগুজব করলেন। তারপর আয়ানের বাবা বললেন:ভাই একটা প্রস্তাব দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।
_জি ভাই বলুন।
_আসলে আমার ছোট ছেলে আরদিদ আয়ান। পুলিশে জব করে। আপনি হয়তো আদনানের বিয়েতে দেখেছেন।
_জি আমি আগে দেখেছি।
_আপনার মেঝো মেয়েটা যদি আমার ছেলের জন্য দিতেন,আমি তাকে আমার মেয়ের মতো করে রাখতাম।
আয়ানের বাবার কথায় অরুনিমার বাবা চুপ হয়ে গেলেন। তিনি আয়ানকে বেশ ভালো করে চিনেন। কিভাবে তাকে মেয়ে দিবেন?এতো রাগী একটা ছেলে। একটু ভেবে বললেন:ভাই আমাকে একটু সময় দিন। যেহেতু এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত আমাকে একটু ভাবতে হবে। বাসায় আলোচনা করতে হবে।
_আচ্ছা আচ্ছা। সমস্যা নাই। আপনি ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন।
_আচ্ছা ভাই। আমি ভেবে বলবো আপনাকে।
এই বলে অরুনিমার বাবা ফোন রেখে দিলেন। ফোন কাটার পর থেকে তিনি ভাবনায় মশগুল হয়ে আছেন।অরুনিমার মা বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকে লক্ষ্য করছেন। একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন:কি হয়েছে? টেনশন করছো মনে হচ্ছে?
_একটা ঝামেলায় পড়েছি। আদনানের বাবা ফোন দিয়েছিল। আদনানের ছোট ভাইয়ের জন্য অরুনিমার কথা বলছে। আমার ছেলেটাকে খুব একটা ভালো মনে হয়নি।
_চেহারা দেখে মানুষ চেনা যায়?
_তা তো যায় না। তবে অরুনিমার কলেজে ঝামেলা হয়েছিল তখন ওকে দেখেছিলাম।বেশ রাগী টাইপের ছেলে।
_দেখো এক মেয়ে ওদের বাসায় আছে। এখন এই ছেলে রাগী হলেও তাকে মেয়েটা দিয়ে দিতে হবে ‌।তা না হলে তামিমা বিপদে পড়বে। ওকে সবাই ঝামেলায় ফেলতে চাইবে।তাই না করার উপায় নেই।
_হুম আমিও তাই ভাবছি। রিজেক্ট করলে তো আমরা বিপদে পড়বো।এক মেয়ে তাদের বাসায় আছে যখন।তবু একবার অরুনিমা থেকে জিজ্ঞেস করি।কি বলো?
_আরে ও আর কি বলবে ‌। আমাদের সিদ্ধান্ত মানে সবকিছু।
_হুম তাও ঠিক। আমার মেয়েটা বেশ শান্ত-শিষ্ট। আচ্ছা আমি একবার মায়ের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে আসি। তারপর জানাবো ওদের।
_আচ্ছা যাও।
অরুনিমার বাবা নিচে গেলেন তার মায়ের কাছে।এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত মায়ের সম্মতি তো তার লাগবেই। সেখানে গিয়ে সব খুলে বললেন তিনি।সবাই বেশ ভাবলো। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো আয়ানের সাথে অরুনিমার বিয়েটা দিতেই হবে।যদি তারা রাজি না হয় তাহলে তামিমার সমস্যা হবে।আর আয়ান মানুষ হিসেবে রাগী হলেও সৎ, সাহসী, দায়িত্ববান ও যোগ্য একজন ছেলে। এমন ছেলে পাওয়া দুষ্কর।

আজ রাত হয়ে যাওয়ায় আর আয়ানের বাবাকে ফোন দেওয়া হয়নি।কাল জানাবেন তিনি। পরের দিন সকালে আয়ানের বাবা নিজ থেকে ফোন দিলেন অরুনিমার বাবাকে। জিজ্ঞেস করলেন:ভাই কি সিদ্ধান্ত নিলেন?
_আমরা রাজি আছি।
_আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে দ্রুত আয়োজনটা শুরু করে ফেলি। শুভ কাজে দেরি কিসের?
_হুম ঠিক বলেছেন।
দুজনেই কথা বলে ঠিক করলেন আগামী সপ্তাহে এনগেজমেন্ট হবে ছোটখাটো পরিসরে।আর এক মাস পর বিয়েটা ধুমধামে হবে।

আয়ান সকাল থেকে আদনানকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছে খবর জানার জন্য। এদিকে আদনান বেচারাও খবর পাচ্ছে না।তাই আয়ানকে কিছু বলতেও পারছে না।বহু কষ্টে সে খবর নিয়ে ফাইনালি আয়ানকে জানালো।আয়ান তো সবাই রাজি শুনে মহা খুশি। দ্রুত ফোন কেটে অরুনিমাকে ফোন দিলো সে।অরুনিমা জানতো না তাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তাছাড়া উভয় পক্ষের সবাই রাজি সেটাও অরুনিমা জানতো না।আয়ান থেকে কথাগুলো শুনে সে বেশ অবাক হলো।সে ভেবেছিল আয়ান মজা করছে। কিন্তু সিরিয়াসলি হুট করে এতো কিছু হয়ে যাবে তা তার কল্পনার বাইরে ছিল। এখন আয়ানের সাথে কথা বলতে তার লজ্জা আর সংকোচ লাগছে। বলা চলে সে এখন অনেকটা এড়িয়ে চলছে আয়ানকে।

মাঝে দিন তিনেক গত হয়েছে। আয়ান প্রতিদিন অরুনিমাকে ফোন দেয়। কিন্তু এখন আর আগের মতো আড্ডা হয় না। এমনে একজন অপরজনের খবর নেই। এভাবেই চলছে প্রতিদিন।

আজ সকাল সকাল আয়ান ফোন দিলো। এনগেজমেন্টের আর দুদিন বাকি।তাই তাদের দুজনকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়েছে। দুজনেই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে কাল।আজ তারা চলে যাবে। আয়ান ভাবছে অরুনিমাকে সাথে নিয়ে যাবে। অরুনিমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপর সে চলে যাবে।তখন আর অরুনিমার একা একা কষ্ট হবে না।আয়ান‌ও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে।তাই সকাল সকাল ফোন দিয়ে অরুনিমাকে জানিয়ে দিতে হলো।অরুনিমা‌ও আয়ানের কথায় খুশি হলো বেশ।একা যেতে অনেক আন‌ইজি লাগে। সাথে একজন মানুষ থাকলে এটলিস্ট ব্যাগ টানতে হবে না।তাই সেও রাজি হলো।

সন্ধ্যায় আয়ান অরুনিমার বাসার নিচে আসলো তাকে ড্রপ করতে।সেও আগে থেকেই রেডি ছিল। আয়ানের ফোন পেয়ে সে নিচে নামলো।অরুনিমা তরীকে দাওয়াত দিয়েছে।সেও সাথে যাবে। আয়ানের ইমনকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ইমনের মা অসুস্থ হ‌ওয়ায় সে বাড়ি চলে গেছে।তরী আয়ানকে দেখে “দুলাভাই” বলে ডাক দিলো।তরীর ডাক পেয়ে আয়ান একবার অরুনিমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো। কিন্তু অরুনিমা তরীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তরী অরুনিমাকে একপলক দেখে আয়ানকে বললো: আপনাকে দুলাভাই ডাকলে কি কোনো আপত্তি আছে আপনার?
_দুলাভাইকে তো দুলাভাই ডাকবেন। আপত্তি থাকবে কেন?
_হুম সেটাই তো‌। দেখুন না অরুনিমা কিভাবে চোখ রাঙাচ্ছে।
আয়ান এবার হেসে দিলো। তারপর বললো: আপনার বান্ধবী বেশ লাজুক তো।তাই এমন এক্সপ্রেশন দিচ্ছে।
আয়ানের কথায় তরীও হাসলো। আয়ান ভেবেছিল তাদের বিয়ের কথা শুনলে তরী অরুনিমার সাথে কাহিনী করবে। কিন্তু এখন তরীকে দেখে আর এমন মনে হচ্ছে না।

অরুনিমা আর তরী গাড়িতে উঠে বসতেই আয়ান গাড়ি ছেড়ে দিলো। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার পথ।তরী থাকায় বেশ মজা হচ্ছে।সে না থাকলে হয়তো অরুনিমা লজ্জায় আয়ানের সাথে কোনো কথা বলতো না। দুজনেই বোবার মতো বসে থাকতো। এখন তরী এটা-ওটা বলছে তাই তিনজনে মিলে আড্ডা দিতে পারছে।

গল্প করতে করতে কখন তাদের পথ শেষ হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না।গাড়ি অরুনিমাদের গেইটে এসে থামলো। আয়ান ভেতরে যেতে চাইনি কিন্তু অরুনিমা আর তরী জোর করে তাকে নিয়ে গেল। এভাবে কি আর নতুন জামাই গেইট থেকে চলে যেতে পারে?তাই সেও ভেতরে গেলো। ঘন্টাখানেক রেস্ট নিয়ে তারপর চলে আসলো সে।

আজ আয়ান &অরুনিমার এনগেজমেন্ট। আয়োজন বড় পরিসরে না হলেও দুজনের বাড়ি বেশ পরিপাটি করে সাজিয়েছে। বাড়িতেই আয়োজনটা করেছে তারা যেহেতু তেমন কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।শুধু কাছের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।তাই বেশ ঝামেলা হয়নি উভয় পক্ষের।

সন্ধ্যার দিকে আয়ানদের বাড়ি থেকে চারটি গাড়ি আসলো শুধু।প্রথম গাড়িতে আয়ান, শ্রেয়া, আদনান,তামিমা আর সায়ান আছে। আয়ানকে বরের সাজে বেশ সুন্দর লাগছে।অরুনিমার কাজিনরা তাকে বরণ করে নিলো। তারপর একটা রুমে নিয়ে বসালো।তার সাথে আদনান আর সায়ান বসে আছে।

মিষ্টিদের বাসার কেউ এনগেজমেন্টে আসেনি। মিষ্টির মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল আয়ানের সাথে মিষ্টির বিয়ে দিবেন তিনি। কিন্তু তা আর হলো না। তাই আর রাগ করে বিয়েতে আসেনি তারা। আয়ানের মায়ের অবশ্য এসবে কোনো মাথাব্যথা নেই। মিষ্টির মতো মেয়েকে ঘরের ব‌উ করার চেয়ে ছেলেকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া ভালো।তার চেয়েও বড় কথা আয়ান মিষ্টিকে পছন্দ করে না।সব মিলিয়ে বোন এনগেজমেন্টে না আসলেও তার কিছুই করার নেই।

একটু পর কাজি আসলেন। আয়ানকে যেই রুমে বসানো হয়েছে সেখানে বড়রা সবাই গেলো।অরুনিমাকেও এনেছে সেখানে। আয়ান আড়চোখে কয়েকবার তাকালো তার দিকে কিন্তু ভালো করে দেখতে পারছে না সে। শ্রেয়া তার অবস্থা দেখে কানের কাছে গিয়ে বললো:কাজি বিয়েটা পড়ানোর পর তোকে আর অরুনিমাকে আলাদা করে দিবো। তারপর মনের মতো করে দেখিস। এখন আর কষ্ট করতে হবে না।
শ্রেয়ার কথায় আয়ান মুচকি হাসি দিলো। তারপর ছোট করে আচ্ছা বললো।

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। তিনি আয়ানকে বললেন:বাবা কবুল বলো।
আয়ানের গলা ধরে আসছে।ভয় ভয় লাগছে তার। সম্পর্কের শুরুতে রঙিন হ‌ওয়ার চেয়ে শেষটা রঙিন হলে তবেই তো পূর্ণতা। আজকের দিনটা সবার চোখে পূর্ণতা হলেও আসল পূর্ণতা তো আজ নয়‌।দুজনেই সারাজীবন একসাথে কাটিয়ে দিতে পারলেই পূর্ণতার খাতায় নাম লেখানো যায়। একটু সময় নিয়ে সে মনে সাহস নিয়ে সে “কবুল” বলে ফেললো। তারপর অরুনিমাকে বললেন কবুল বলতে।সে তো পুরো কান্না করে দিলো।তার অবস্থা দেখে আয়ান ভাবছে তার চেয়েও অরুনিমার অবস্থা খারাপ তাহলে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেও কবুল বললো। তারপর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মুনাজাত করলো।

অবশেষে বিয়েটা শেষ হলো।শ্রেয়া আয়ানকে কথা দিয়েছিল সবাই চলে গেলে তাদের আলাদা করে কথা বলতে দিবে।তাই সে তামিমাকে একপাশে নিয়ে গেলো। তারপর তাকে বললো দুজনকে একটু স্পেস করে দিতে।তামিমাও তার কথামতো অরুনিমাকে রুমে পাঠিয়ে দিলো। তারপর সুযোগ বুঝে আয়ানকেও সেই রুমে নিয়ে গেল।

দুজনকেই সামনাসামনি বসিয়ে দিয়ে তারা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আয়ান চোখ তুলে অরুনিমার দিকে তাকালো।সে মাথা নিচু করে আছে। কনের সাজে আর শাড়িতে তাকে খুব সুন্দর লাগছে যেন চোখের পলক পড়ছেই না। আয়ান কিছুক্ষণ অরুনিমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হেসে বললো: এখনো মাথা নিচু করে থাকবে?আরে আমরা আমরাই তো।
অরুনিমা আয়ানের কথায় মাথাটা একটু তুললো। দুজনেই দুজনের দিকে তাকালো।আজ তাদের দুজনের চোখেমুখে এক পৃথিবী পরিমাণ আনন্দ। চারটি চোখে জমে আছে অনেক কথা, অনেক স্বপ্ন। তাদের স্বপ্নগুলো সত্যি হোক। নতুন এক পৃথিবী হোক। এভাবেই অটুট থাকুক তাদের ভালোবাসা।

সমাপ্ত….