রিক্ত শহরে আমার তুমি পর্ব-০৩

0
92

#রিক্ত_শহরে_আমার_তুমি
ফাহমিদা তানিশা
পর্ব ০৩

আমার কাছে যথেষ্ট এভিডেন্স আছে উনার
বিরুদ্ধে। আমি এসব দেখেই খোঁজ নিবো উনি
ভালো নাকি খারাপ।
এএসপি আয়ান কথা শুনে রাফিদ চুপসে গেল। অরুনিমা চুপচাপ কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো। কিছুদূর এসে একটা রিকশা পেল। বাসায় আসতে আসতে আধ ঘন্টার মতো লেগে যায় তার। দ্রুত সব ডকুমেন্ট নিয়ে আবার থানার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল তখনি একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলো।সে রিসিভ করে সালাম দিলো
_আস্সালামু আলাইকুম।
_ম্যাম আমি থানা থেকে এএসপি স্যারের সোর্স ইমন বলছি।আপনাকে দ্রুত কলেজে যেতে বলেছে স্যার।
_আচ্ছা আমি আসছি।

অনেকটা শান্ত গলায় জবাব দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো অরুনিমা।সে বুঝতে পারছে না কি হতে যাচ্ছে। অনেকটা ভয় কাজ করছে। বাড়িতে কথাটা শেয়ার করা যাবে না।যদি বাড়িতে জানতে পারে সবাই চিন্তায় পড়ে যাবে। এমনেও তার মা তাকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে সে একটু বোকা টাইপের বলে। কিন্তু সে জানে না তার কোন বোকামিটা এভাবে জীবনটা দূর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এক সপ্তাহ পর তার বড় বোনের বিয়ে। বোনসহ সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে অনেক ব্যস্ত।তাই বড় আপুকেও কিছু বলতে পারছে না।এসব ভেবে ভেবে সে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হচ্ছে‌।

বাসা থেকে ক্যাম্পাস বেশি দূরে নয়।তাই পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী আনাচে কানাচে দাঁড়িয়ে আছে। ‌সবাই তার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।অনেকে কানাকানি করছে।সে চুপচাপ মাথা নিচু করে হেঁটে অধ্যক্ষ স্যারের রুমের দিকে যাচ্ছিল।তার ভাবনা হয়তো এএসপি আয়ান অধ্যক্ষ স্যারের রুমে আছেন। সেদিকে যেতেই একজন পিয়নের সাথে দেখা।বয়স হয়েছে তার।নাম রশিদ।অরুনিমাকে দেখে হেঁসে বললো: ম্যাডাম এসেছেন? আপনাকে তো পুলিশরা খুঁজছে। ঘাবড়াবেন না একদম।সৎ থাকলে আল্লাহ বিপদ থেকে উদ্ধার করে ফেলবেন।
_তাই যেন হয় আংকেল।
_এখন কোথায় যাচ্ছেন?
_অধ্যক্ষ স্যারের রুমে।
_স্যার রুমে নেই।ছাত্রী হোস্টেলে গিয়েছিলেন। এখনো আসেননি।
_এএসপি স্যার কোথায় জানেন?
_তারা সবাই ওখানে ম্যাডাম।
_আচ্ছা আমি তাহলে সেদিকে যায়।
_ঠিক আছে ম্যাডাম।

অরুনিমা অধ্যক্ষের রুমে না গিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের দিকে গেল।সে কখনো এই ভবনের ভেতরে গিয়েছে কিনা মনে নেই তার। পা টিপে টিপে দ্বিতীয় তলায় গেলো। সেখানে একটি রুমে মানুষের আনাগোনা শুনতে পেয়ে খানিকটা উঁকি দিতে যাবে তখনি এএসপি আরদিদ আয়ানের সাথে চোখাচোখি হলো। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। বুকে সাহস নিয়ে দোয়া দরুদ পড়ে রুমে প্রবেশের অনুমতি নিলো।
_আসতে পারি স্যার?
_জি আসুন।

একথা বলে এএসপি আয়ান উঠে দাঁড়ালেন।একটু সামনে গিয়ে টেবিলে রাখা একটা ঘড়ি হাতে নিলেন তিনি।অরুনিমাকে দেখিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন:এটা কি আপনার ঘড়ি?
অরুনিমা বেশ অবাক হলো।এটি তার ঘড়ি। কিন্তু এখানে আসলো কি করে! বুঝতে পারছে না সে।
তার উত্তর না পেয়ে এএসপি আয়ান আবার প্রশ্ন করলেন: আপনার ঘড়ি কিনা বলুন।
_জি স্যার।এটা আমার ঘড়ি।
_আপনার ঘড়ি এখানে এলো কি করে?
_সেটা তো আমারও প্রশ্ন স্যার। আমার ঘড়ি এখানে আসবে কি করে!আমি তো কখনো এই ভবনে আসিনি।আজ প্রথম এলাম।
_আপনার ঘড়ির পা আছে।সে দুই পায়ে ভর করে রিস্তার রুমে এসেছিল তার সাথে একটু গল্প করতে।

এএসপি আয়ানের কথা শুনে রুমে থাকা সবাই অট্টহাসি দিলো। তাদের হাঁসি দেখে অরুনিমা বেশ অপমানিত হলো। অনায়াসে চোখ থেকে গড়িয়ে জল পড়লো। দ্রুত সে টিস্যু দিয়ে মুছে নিলো।কোনো জবাব দিলো না সে। এএসপি আয়ান আবার বললেন:রিস্তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দ্রুত আমাদের হাতে আসবে।আমরা কিছু স্যাম্পল পেয়েছি। এগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। দ্রুত আমরা আসামি শনাক্ত করতে সক্ষম হবো।তাই সত্যি করে বলুন।এতে আপনার জন্য ভালো হবে।আর আমরাও ঝামেলামুক্ত হবো।

অরুনিমা বুঝতে পারছে না কি সত্যি বলবে।মাথাটা ঘুরছে। সকাল থেকে বেচারি টেনশন আর দৌড়াদৌড়িতে আছে। একটুও রেস্ট পেলো না সে। সামনে একটু রেস্ট পাবে কিনা তাও তার জানা নেই। কিন্তু সে তো কিছুই করে নাই। অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে এএসপি আরদিদ আয়ানের দিকে।আর এদিকে এএসপি আয়ান তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
_স্যার আমি আপনাকে কি বলবো?
_আপনি আমার সাথে থানায় আসুন।
_আবার থানায় যেতে হবে?
_ইয়েস। ইটস্ মাই অর্ডার।
_বাট আই ডোন্ট নো এনিথিং।
_সেটা থানায় গেলে বুঝতে পারবেন।আপাতত আমরা আপনাকে একা ছাড়ছি না।কখন কি করবেন এই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। চলুন আমার সাথে না হয় সত্যিটা বলুন।
_স্যার আমি সত্যি বলছি।ঘড়িটা আমার কিন্তু আমার জানা নেই ঘড়িটা এখানে আসলো কি করে?
তাদের কথার মাঝে তরী বলে বসলো: তুমি গতকাল রিস্তার মৃত্যুর সময় এখানে এসেছিলে আর হাতাহাতিতে তোমার ঘড়ি ভেঙে গেলে তুমি এটা এখানে রেখে চলে যাও।

অরুনিমার তরীর কথা শুনে রাগ হলো। ইচ্ছে করছে চুলের মুঠি ধরে দিতে কিন্তু সে নিরুপায়।এই তরী তার পেছনে লেগে আছে তখন থেকেই।কি করতে চাইছে সে, কেন তার অরুনিমার উপর এতো সন্দেহ এটা সে বুঝতে পারছে না। তবু শান্ত গলায় বললো: আমি এখানে এসেছি, আমার সাথে রিস্তার হাতাহাতি হয়েছে তারপর আমার ঘড়ি ভেঙে যাওয়ায় আমি খুলে রেখে দিয়েছি এখানে এসব তুমি কি করে জানলে তরী? তুমিও কি আমার সাথে এসেছিলে নাকি তুমি জানতে আমি রিস্তাকে মারতে আসবো তাই ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছিলে?
অরুনিমার কথায় তরী অনেকটা ঘাবড়ে গেল। তারপর এলোমেলো কন্ঠে জবাব দিলো:আমি অনুমান করছি আরকি।
_অনুমান করার জন্য তদন্ত কমিটি আছেন, এএসপি স্যার আছেন। তারা অনুমান করতে পারেন কিন্তু তুমিও আমার মতো একজন সামান্য লেকচারার।আমি যদি সন্দেহের লিস্টে থাকি তাহলে তুমিও তো সেই লিস্টে থাকার কথা।তাই নয় কি?

এএসপি আয়ান দুজনের কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিল তখন থেকেই। হঠাৎ অরুনিমার শেষ কথাটা তার মস্তিষ্কে গেঁথে গেল। আসলেই এই কথায় যুক্তি আছে। দুজনেই এক‌ই কলেজের লেকচারার আর তার চেয়েও বড় কথা তারা দুজনেই সহকর্মী।এক বাসায় থাকে দুজনেই। তাহলে অরুনিমার বিরুদ্ধে তরীর এতো অভিযোগ কেন? এতোক্ষণ তার সন্দেহ অরুনিমার দিকে থাকলেও এখন তার সন্দেহ তরীকে নিয়েও।সে ভাবলো দুজনের সাথেই আলাদা কথা বলতে হবে বা দুজনের সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে। তবে প্রথমে যেহেতু অরুনিমাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে তাই প্রথমে অরুনিমাকে নিয়ে যাবে আর আবার জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
_মিস অরুনিমা , আপনি আমাদের সাথে আরেকবার থানায় আসুন।প্লিজ কো-অপারেট।

এএসপি আয়ান এইবারের কথাটা খুব সুন্দর করে ভদ্রভাবে বললেন। হয়তো তার অরুনিমার কথাগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে।অরুনিমাও তার এতো সাবলীল ভাষার উপদেশটা ফেলতে পারলো না।আর না ফেলেও উপায় নেই।
_ওকে স্যার চলুন।

এএসপি আরদিদ আয়ান তার টিমকে একপাশে নিয়ে গিয়ে কি যেন বললো।আর তার সোর্সকে বললো:মিস অরুনিমাকে নিয়ে আসুন আপনার সাথে।
এমন সময় তার ফোন আসে আর তিনি হাঁটা দেন। অরুনিমা এএসপি আয়ানের সোর্স ইমনের সাথে থানায় যাওয়ার সময় তরী অরুনিমার দিকে তাকিয়ে একটা শিশ বাজালো আর তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসলো। অরুনিমা চুপচাপ হজম করে চলে আসলো।

থানায় এসে অনেকক্ষন ধরে বসে আছে অরুনিমা। কিন্তু এএসপি আয়ান এখনো আসেনি। হাতে ফোনটা নিয়ে দেখলো বিকাল পাঁচটা বাজে। দুপুরের খাবারটা খাওয়া হয়নি তার।খুব ক্ষিধা লেগেছে। এদিকে বাসায়ও ফোন দেওয়া হয়নি।তারাও ব্যস্ততার জন্য ফোন দিচ্ছে না।তাই সে ফোন দিতে যাবে তখনি এএসপি আয়ান এসে হাজির। _ফোনে কথা বলছেন? শেষ বারের মতো বলে নিন। আপনার এগেইনস্টে যা এভিডেন্স এসেছে তাতে মনে হয় না আর বাইরের মুখ দেখতে পারবেন বা ফোনে কথা বলতে পারবেন।সো বলে নিন কথা।

চলবে….