#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:১০
দীপ্তির শরীরটা ভালো লাগছে না। একবার ভাবলো ফাহাদকে ডেকে কথাটা বলবে। কিন্তু ফাহাদের প্রতি জমে থাকা বিরক্তিবোধ তাকে দমিয়ে রাখলো। নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে থাকলো। ফাহাদ এসে তাকে দেখলো বটে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বলা যায় না, দীপ্তি কি আবার বলে বসবে তাতে তার খারাপ লাগবে। তার থেকে থাকুক যে যার মতো। ঘুরতে যাবার ইচ্ছে হলে নিজেই উঠবে। দীপ্তি চোখ বন্ধ করেও বুঝলো ফাহাদ এসেছে। তাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখেও কিছু জিজ্ঞেস না করায় তার রাগের পারদ এক ডিগ্রি বাড়লো। ফোন বাজতেই উঠে গেলো ফাহাদ। ঘুমন্ত দীপ্তিকে বিরক্ত করার ইচ্ছে তার নেই।
অনেক দিন পর বন্ধুর ফোন পেয়ে যারপরনাই খুশি হলো ফাহাদ। কল রিসিভ করতেই নীরবের কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।
– আসসালামু আলাইকুম দোস্ত।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কিরে তোর কি খবর?
– ওয়ালাইকুম সালাম না। ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কতদিন বলবো?
নীরবের কণ্ঠে বিরক্তি প্রকাশ পেলো। জিভে কামড় দিল ফাহাদ। লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,
– মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এতদিনে আমার কথা তোর মনে পড়ল?
– মনে পড়লেই ফোন দিয়ে দেব নাকি! তুই গেছিস বউ নিয়ে হানিমুন করতে সেখানে আমি ফোন দিয়ে কাবাবমে হাড্ডি হব কোন দুঃখে?
– আর আমার হানিমুন!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ফাহাদ। নীরব থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে? আমাকে বলা যায়?
– নতুন কিছু না দোস্ত। ওর সাথে আমার মেলে না। একটা কদমও মেলে না। আমি কিভাবে সারাজীবন ওর সাথে কাটাবো ভাবতে গেলেই আমার মাথা ব্ল্যাঙ্ক লাগে।
– ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পাগল হচ্ছিস কেনো? বর্তমানের কথা ভাব।
– ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমি যতটা ঠিক আছি বর্তমান চিন্তা করতে গেলে পাগল হওয়ার যা বাকি আছে সেটাই হবো।
– তুই এত ডেসপারেট হয়ে গেছিস কেনো?
– নীরব তুই বুঝতে পারছিস আমরা এক ঘণ্টাও একসাথে থাকতে পারছি না! শুধুমাত্র কথা বলা বন্ধ রাখলেই আমরা থাকতে পারব নাহলে আমাদের পক্ষে একসাথে থাকা সম্ভব না।
– তাহলে তুই কি করতে চাইছিস?
নীরবের কণ্ঠস্বর শীতল শোনা গেলো। কপালের কাছের চুল মুঠো করে ধরলো ফাহাদ। ক্লান্তি মেশানো কণ্ঠে বলল,
– আমি জানিনা নীরব। তুই বল। কি করবো আমি?
– যেহেতু তুই শিওর তোরা একসাথে থাকতে পারবি না তাহলে আলাদা হয়ে যা।
– কি বলছিস তুই!
চমকে উঠলো ফাহাদ। নীরব কখনও এমন পরামর্শ দেয়নি। কখনও না।
– দেখ ফাহাদ তোর কাছে দুইটা অপশন আছে। হয় সম্পর্ক কন্টিনিউ করবি নাহয় করবি না। এর মাঝে অন্য কিছু নেই। কিন্তু তোর কাছে যদি সম্পর্কটা শান্তির কারণ না হয়ে বোঝা হয় তাহলে কন্টিনিউ না করাই বেটার।
– তুই বলছিস এসব!
– বলছি। কারণ আমি জানি তুই এই সম্পর্কের পেছনে এফোর্ট দিয়েছিস, টাইম দিয়েছিস। চেষ্টা করেছিস। এরপরও কাজ না করলে ইটস বেটার টু গেট আ ডিভোর্স।
– ডিভোর্স!
– ফাহাদ। একটা জিনিস তুই শুরুতেই ভুল করেছিস। পার্টনার চুজ করার সময় যাচাই করিসনি তার সাথে তোর মেন্টালিটি মেলে নাকি। এক ছাদের নিচে থাকতে গেলে এটা অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট। যেটা তুই একেবারে ইগনোর করে গেছিস। যাক যা গেছে গেছে। আন্টির সাথে কথা বল, আপুর পরামর্শ নে। তাড়াহুড়া করে কিছু করার দরকার নেই।
ফোন কেঁটে দিলো নীরব। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ফাহাদ। সে বুঝল না এই অকূল পাথারে তীর সে কোথায় পাবে, কে তার ভেলা হবে। চিন্তার সাগরে ডুবন্ত ফাহাদ জানতেও পারলো না ওদিকে দীপ্তির শরীর আরো খারাপ হয়ে চলেছে।
• • • • • •
পরদিন সকালে সকল মেয়েরা শাড়ি এবং ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ার পরিকল্পনা করলো। রূপা আকাশি রঙের একটা শাড়ি বেছে নিলো। শাড়ির সাদা পাড়ের সাথে মিলিয়ে সাদা হিজাব মাথায় জড়ালো। প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করলো কাজল এবং লিপস্টিক। তাকে দেখে রীতিমত হা হয়ে গেলো অর্পি।
– সর্বনাশ! কি সেজেছিস তুই!
– তেমন কিছুই তো করিনি। বাকিদের দেখবি কিভাবে যায়।
নিজের দিকে তাকিয়ে বলল রূপা। সেই ক্ষণে কেয়াকে আসতে দেখা গেলো।
– কি রে কেয়া? তুই শাড়ি পড়বি না?
অর্পি প্রশ্নের উত্তরে কেয়া বলল,
– না।
– কেনো?
– শাড়ি সামলানো খুব কঠিন বিষয়। উনিশ থেকে বিশ হলে মান সম্মান সাগরে ভেসে যাবে। এই রিস্ক আমি এতো ছেলের মাঝখানে নিতে পারবো না।
রূপাকে এক নজর দেখে কেয়া বলল,
– মাথায় ওটা পেঁচিয়ে রেখেছিস কেনো? খুলে ফেল। নিজের না দেখা সৌন্দর্য দেখিয়ে দে।
কেয়ার কথায় বিজ্ঞাপনের সুর। অর্পি খিলখিল করে হেসে ফেললো।
– এসব কি কথা কেয়া? কি পেঁচিয়েছিস মানে? হিজাব পড়বো না আমি! সবসময় পড়ি।
– ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন দিস ইজ নট হিজাব। দিস ইজ আ পিস অফ ক্লোথ।
হাত তালি দিলো অর্পি। রাগী চোখে তার দিকে তাকালো রূপা। বিরক্তি নিয়ে কেয়াকে বলল,
– দুটো কি আলাদা হলো?
– অবশ্যই আলাদা। হিজাব মনে বুঝিস তুই? মাথায় এক টুকরা কাপড় পেচালেই সেটা হিজাব হয়ে যায় না। হিজাব পরে সৌন্দর্য ঢাকার জন্য। তুই পড়েছিস তোর সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়া। একটু তাকিয়ে দেখ ঐ কাপড়টুকু তোর কোন সৌন্দর্য ঢেকে রেখেছে।
– আমি যেটুকু পড়ি সেটুকুও তুই পড়িস না কেয়া।
রূপার শক্ত কণ্ঠ শোনা গেলো। বিপরীতে ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলো কেয়া।
– পয়েন্ট। তুই গায়ের সাথে এঁটে শাড়ি পড়েছিস। আমার থ্রি পিসে আমি আরেকবার ঢুকতে পারবো। তোর ব্লাউজ তোর হাতের আকার ফুটিয়ে তুলেছে। আমার জামার হাতা আমি এতটা ঢিলা রাখি যেনো তাকিয়েই কেউ আমার হাতের আকৃতি আন্দাজ করতে না পারে। আর বাকি রইলো তোর এক টুকরো কাপড়ের কথা? আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি। যখন পড়বো একদম ভালোভাবেই পড়বো। আশা করছি দিনটা বেশি দূরে নেই।
প্রস্থান নিতে চাইলো কেয়া। যাওয়ার আগে পিছু ফিরে রূপার দিকে তাকিয়ে বলল,
– এক্ষেত্রে আমি আসমাকে দেখে ইনস্পায়ার্ড হয়েছি। আর একটা কথা। লিপস্টিক পড়েছিস কেনো? ছেলেদের মাঝখানে যেয়ে দেখানোর জন্য যে তোর ঠোঁট কতো সুন্দর?
কেয়া চলে গেলো। রাগে, দুঃখে কান্না পেলো রূপার। আবহাওয়া ভালো না বুঝতে পেরে অর্পি মিনমিন করে বলল,
– আমিও কেয়ার মত ঢুলঢুলা একটা থ্রি পিস পড়ি ভাই। অত সুন্দর সেজে কাজ নাই।
উঠে দৌড় দিলো অর্পি। হাতের মুঠোয় থাকা টিস্যু দিয়ে এক টানে ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে ফেলল রূপা।
সকলের মাঝে রূপাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না হিমেলের। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পরোখ করলো তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত। গত দিনের অদম্য ইচ্ছেটা বুকের ভেতর মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। রূপার কাছাকাছি যেতেই প্রশ্ন করল,
– তোমাকে এত সুন্দর লাগছে কেনো রূপা!
লজ্জার লালিমা মুখে মেখে হিমেলের দিকে তাকালো রূপা। হিমেল চারদিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– রূপা! চলো বিয়ে করে ফেলি!
চলমান।
#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:১১
প্রকৃতি ভাঙ্গা গড়ার মাঝেই সমহিমায় টিকে আছে। একদিকে নদীর তীর ভাঙ্গে তো অপর দিকে পাহাড় বাড়ে উচ্চতায়। এক দিকে বাজে ভাঙনের সুর অপর দিকে উল্লাস হয় নতুন বন্ধনের।
•• •• •• ••
সব কথা মোবাইলে বলা যায় না। এই অজুহাত দেখিয়েও ছাড়া পেলো না ফাহাদ। মা বোন তাকে চেপে ধরেছে। অবশেষে নিজের জীবনের শন্তিহীনতার আংশিক প্রতিচ্ছবি তাদের সামনে তুলে ধরলো সে। আনোয়ারা বেগম যারপরনাই অবাক হলেন। রেগে গেলেন। তার বকা দেওয়া শুরু হওয়ার আগেই ফাহাদ অনুরোধের সুরে বলল,
– মা! দীপ্তি এখনও আমার স্ত্রী। ওর অসম্মান মানে আমার অসম্মান। প্লিজ এমন কথা বলো না যাতে তোমার ছেলের অসম্মান হয়।
আনোয়ারা বেগম চুপ করলেও ক্ষান্ত হলেন না। মেয়েটাকে তিনি ভালো ভেবেছিলেন। পাশ থেকে ফাহিমা কথা বলল।
– ফাহাদ!
– বল আপা।
– তুই কি ওর সাথে থাকতে চাস? হ্যাঁ কিংবা না বল।
– আপা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
– বুঝতে হবে। জীবনটা তোর। তুই বুঝবি না তো কে বুঝবে?
– আমাকে কিছুদিন ভাবার সময় দে আপা।
– ভাব। এমন কারো কাছে পরামর্শ চা যার পরামর্শ কখনো ভুল হয় না।
– সে আবার কে?
ফাহাদের মুখে প্রশ্নের ছাপ।
•
দীপ্তি আজও রুমে। নিজের ব্যাপারে কোনকিছুই সে ফাহাদের সাথে শেয়ার করছে না। ফাহাদ কিছু শুনতে গেলে উল্টো কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। রাতের এই সময়টায় ফাহাদ ঘুরতে ভালোবাসে। ভ্রমণের এমন সুযোগ পেয়ে সে এটা হাতছাড়া করেনি। দীপ্তি না এলেও সে একাই ঘুরছে। দূরে একটা দলের দিকে তার চোখ পড়ল। সেদিন রাতেও এদের দেখেছে। তার মনোযোগ টেনে নিলো এক ছোট্ট বালিকা,
– ভাইয়া ফুল নিবেন?
মেয়েটার দিকে তাকাতেই ফাহাদের চিন্তা মাখা চেহারার রং বদলে গেলো। সেথায় কোমল হাসি ফুটিয়ে সে বলল,
– কি ফুল?
– এই যে! গোলাপ। নেন না?
মেয়েটার কন্ঠে অনুরোধ। মায়া লাগলো ফাহাদের।
– আমার তো ফুল দেয়ার মতো কেউ নেই।
– ক্যান? আপনার বউ নাই?
– আছে।
– সে কই?
– ও অসুস্থ।
– আয় হায়! কি হইসে? অনেক বড় অসুখ?
– হ্যাঁ! অনেক বড় অসুখ। ও খুব অসুস্থ। কি যে করি আমি!
বাচ্চাটার মুখে চিন্তার ছায়া দেখতে ভালো লাগছিল ফাহাদের
– এই যে শুনছেন!
মেয়েলি গলার ডাকে ঘুরে তাকালো ফাহাদ। শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। এই মেয়েটাকে ঐ দলের সাথে দেখেছিলো সে। সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আমি?
– জি।
– বলুন।
– আপনার স্ত্রী কি বেশি অসুস্থ? আসলে আমাদের সাথে ডক্টরদের একটা রিক এসেছে। ইমারজেন্সি কিছু হলে বলতে পারেন।
– ধন্যবাদ। তেমন কিছু না। ও আসলে জার্নি করে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।
হাসিমুখে বলল ফাহাদ। ছোট মেয়েটাকে চিন্তায় ফেলার কথা জন্যই এভাবে বলা। কে জানত এতো বড় একটা মেয়েও চিন্তায় পড়ে যাবে!
– ওহ আচ্ছা। ঠিকাছে তাহলে আসি।
প্রস্থান নিলো রূপা। ফাহাদ জানলো না মেয়েটা কে।
•
প্রকৃতির মাঝে এসে কেয়ার ভালো লাগছিল। মননের শান্তি শরীরে প্রশান্তি এনে দিচ্ছিলো নিমেষেই। অর্পির সাথে বেশ সময় কাটাচ্ছিল সে। কিন্তু সহপাঠী মেয়েদের আচার আচরণ তার শান্ত মস্তিষ্কের আরাম নষ্ট করে দিলো। লুকিয়ে থাকা মাথা ব্যথাটা হঠাৎ নিজের অস্তিত্বের জানান দিলো। সমবয়সীদের বেহায়াপনা দেখার চেয়ে ঘরে যেয়ে শুয়ে থাকাকে কেয়ার কাছে স্বস্তির মনে হলো।
– অর্পি! আমি রুমে যাই। ভালো লাগছে না।
উত্তরের অপেক্ষা করল না কেয়া। নিজের মতো চলে গেলো সে। এদিকে অর্পি একা পড়ে গেলো। চারদিকে তাকিয়ে রূপাকে খুঁজলো। মিনিট পাঁচেক পর উল্লাসের উৎস খুঁজতে যেয়ে যে অবস্থায় রূপাকে পেলো সেখানে সে রূপাকে কল্পনা করেনি কস্মিনকালেও।
সকলের মত অবাক হয়েছে রূপা নিজেও। মায়ের সাথে কথা বলে সকলের মাঝে এলো মাত্রই। কামরুন্নাহার কল দিয়েছিলেন হিমেলের সাথে থাকাবস্থায়। চারপাশের আওয়াজ থেকে বাঁচতে একটু দূরে গিয়েছিলো রূপা। ফিরে আসার পথে ফাহাদের কথা শুনে থেমেছিল সে। তবে তেমন সমস্যার আভাস না পেয়ে চলে এসেছে। হঠাৎ ঘটনায় তার অবাকের মাত্রাটা একটু বেশিই। হৃদপিন্ড স্পন্দন করছে দ্রুতগতিতে। মিনিটে কতো হবে? একশ ছুঁয়েছে বোধহয়। শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও বেড়েছে বেশ। চারদিক থেকে সবাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে।
– রূপা! সে ইয়েস! সে ইয়েস!
ঘটনা এরকম। রূপাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে হিমেল বসে থাকেনি। রীতিমত আয়োজন করে ফেলেছে। হঠাৎ সকলের সামনে নিজের হাতে থাকা আংটি খুলেই রুপাকে প্রপোজ করেছে। তাও যেনতেন প্রস্তাব নয়। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব। এমন অবস্থায় রূপা তো বটেই, সকলেই চমকে গেছে। এক্কেবারে বিয়ের প্রস্তাব! আহা! কি ভালোবাসা!
হিমেলের, “উইল ইউ ম্যারি মি রূপা?” এই প্রশ্নের বিপরীতে রূপা নিজ মনে শতবার হ্যাঁ বলে ফেলেছে। তবে সকলের সামনে লজ্জায়, কুণ্ঠায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছে না। তার মুখের লজ্জা লজ্জা ভাব সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকলে আরো জোরে চিৎকার করে,
– রূপা! চুপ করে আছিস কেনো? হ্যাঁ বল! হাত বাড়িয়ে দে!
ছেলেমেয়েরা বিস্মিত। ভবিষ্যত ডাক্তার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। দেখতেও একবারে রাজপুত্র। রূপা দেরি করছে কেনো? মেয়েটা কি বোকা!
হিমেলের বাড়িয়ে রাখা হাতের দিকে নিজের কম্পনরত হাত বাড়িয়ে দেয় রূপা। সকলে আরো একবার উল্লাসে ফেঁটে পড়ে। অবাধ মেলামেশার সামাজিক পরিণতি। বিজয় তো বটেই!
রূপার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসে হিমেল। হাসিটা বড় মনোরম লাগে রূপার কাছে। সে যে না পেয়ে পেয়েছে। হিমেলের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেতে সে কতটা চেষ্টা করেছে ওরা কি জানে? উহু! জানে না। কিন্তু ছেলেটার হলোটা কি? আজ হঠাৎ এসময়ে এই প্রস্তাব? বেশি ভাবে না রূপা। এবার তো মা-ভাইয়ের কাছে হিমেল তাকে চাইতে যাবে। সে হবে হিমেলের ঘরণী! আহা! রূপার কতদিনের স্বপ্নে দেখা দৃশ্য!
তবে হিমেল সেখানেই থেমে থাকলো না। সেন্ট মার্টিনের বালিয়াড়ি বিচে সে যেনো এক খন্ড গল্প লেখার মনোবাসনা নিয়ে নেমেছে। সকলের মনোযোগ যখন তাদের থেকে ফিরে গেলো তখন সে নিজের দল নিয়ে রূপাকে ঘিরে ধরলো। তার সামনে তুলে ধরলো আরো একটা প্রস্তাব। রূপা যেনো দিশেহারা হয়ে গেলো। এখন তার কি বলা উচিত?
চলমান।