রিটেক পর্ব-২৮+২৯

0
144

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:২৮

ফারিসকে কোলে নিয়ে বসে আছে ফাহাদ। একটু পর পরই ভাগ্নের দিকে তাকাচ্ছে। মুখের তুলনায় গাল দুটো বেশি ফোলা। শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে একটু পর পরই সেখানে চাপ দিচ্ছে ফাহাদ। ফলে সে জায়গার র-ক্তটুকু আশপাশের ছড়িয়ে আরো লাল দেখাচ্ছে। বেশ কয়েকবার এমন করার পর ফারিস চোখ পিটপিট করে তাকালো। আবার ঘুমিয়ে গেলো। ফাহাদ বলল,
– আপা! এতটুকু চোখ দিয়ে ও দেখে কিভাবে? আমার মুখই তো পুরোটা ওখানে আটে না।
ফাহিমা এতক্ষন ভাইয়ের ছেলেখেলা দেখছিল। শিশুরা নিষ্পাপ ফুল। সেই ফুলের সংস্পর্শে এলে যেকোনো মানুষী যেনো আরেকটা নিষ্পাপ ফুলে পরিণত হয়। ফাহিমা হেসে বলল,
– আমি জানি না। তোর ভাগ্নের কাছেই শোন।
– বলতে পারলে তো শুনতামই। আপা ও কার মত দেখতে হয়েছে?
– আমি এসব বুঝি না। মার কাছে শোন।
– চোখটা আরেকটু বড় হলে মনে হয় আমার মত দেখা যাবে বল? এই আপা! ফারিস মানে কি?
– বুদ্ধিমান, ঘোর সওয়ার।
– ওকে কি তুই ঘোড়ার রাখাল বানাবি নাকি?
মুখ বেঁকিয়ে বলল ফাহাদ।
– তুই এত হিংসুটে কেনো রে? নিজে তো এতদিন ধরেও একটা নাম ঠিক করতে পারলি না। মেয়েটা কি সুন্দর একটা নাম ঠিক করে দিলো তাও সহ্য করতে পারছিস না।
– কি সুন্দর একটা নাম ঠিক করে দিলো!
মুখে মুখে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও ফাহাদ মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো নামটা আসলেই সুন্দর। ফারিসকে হালকা ঝাঁকি দিলো সে,
– এই ব্যাটা ওঠ!
ফারিস হকচকিয়ে উঠলো। তারপরই গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলো। ফাহিমা চোখ রাঙিয়ে তাকালো ভাইয়ের দিকে। ছেলেকে কোলে নিয়ে শান্ত করতে ব্যস্ত হলো। ফাহাদ চোরের মত মুখ লুকিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো।
– মা আসি?
– আয় বাবা।
– মা তুমি তো আমার নতুন বাড়ি যেয়ে থাকলেই না। কবে যাবে?
– যাবো বাবা। ফাহিমা এখন কি বাচ্চা নিয়ে একা পারে? ওর কাছে একটু থাকা দরকার না?
ফাহাদ কিছু বলল না। আনোয়ারা বেগম সন্তানের একাকিত্ব না বোঝার মত অবুঝ নন। ছেলেটা তার সঙ্গিহীনতায় ভুগছে এটা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। ফাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– বাবা একটা বিয়ে করে নে এবার। আর কতদিন একা একা থাকবি?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফাহাদ। বলল,
– বিয়ে তো একটা করা দরকার মা। কিন্তু কেনো জানি মনে হয় তার সাথেও আমার মনের মিল হবে না।
– তার সাথেও মানে?
ভুরু কুঁচকে তাকালেন আনোয়ারা বেগম। মৃ-ত স্ত্রী সম্পর্কে কোনো খারাপ ধারণা মাকে দিতে চাইলো না ফাহাদ। বলল,
– বিয়ে করলাম কিন্তু তার সাথে যদি আমার চিন্তা ভাবনার মিল না হয় তাহলে জীবনে চলবো কিভাবে? আমি বলব একটা সে বলবে আরেকটা। দ্বন্দ আর মিটবে না।
– এমন ভাবছিস কেনো? মিলতেও তো পারে।
– বুঝবো কিভাবে?
– যখন দেখাদেখি হবে তখন মেয়েটার সাথে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করবি তার মানসিকতা কেমন।
– দেখাদেখির সময় মানুষ নিজের আসল রূপটা দেখাতে চায় না। আচ্ছা যাই হোক। মেয়ে যদি দেখতেই চাও তাহলে বিধবা বা ডিভোর্সী এমন মেয়ে দেখবে।
– কেনো?
আনোয়ারা বেগমের কপালে ভাঁজ তৈরি হলো।
– আমি নিজে বিপত্নীক মানুষ। অবিবাহিত কেউ আমাকে বিয়ে করবে কেনো? আর আমি ওদিকে যেতেই চাচ্ছি না। তুমি এমন মেয়েই দেখো।
আনোয়ারা বেগম কিছু বললেন না। প্রস্তাবটা তার মনে ধরেছে বলে মনে হলো না। কিছু মনে পড়তেই ফাহাদ বলল,
– ও মা! অফিসের একটা কাজে আমাকে একটু রাজশাহী যেতে হবে। কাল অথবা পরশু রাতে যেতে হতে পারে।
– কবে আসবি?
– শিওর বলতে পারছি না। তিন চারদিন লাগতে পারে।
– আচ্ছা সাবধানে যাস।
– আমি তাহলে উঠি।
– খেয়ে যা।
– না। খিদে নেই।
ফাহাদ চলে গেলো। সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ হবে। আজ সম্ভবত জোৎস্না। রাতের আকাশ চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। একটু ভুল হলো, চাঁদের তো নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের থেকে ধার করা আলো দিয়েই চাঁদ একজীবন পার করে দিলো।

রাতের দ্বিপ্রহর। একটু পর পর পাহারাদারের বাঁশির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেটা থামলেই একটা কুকুর ডেকে উঠছে তার সারাদিন জমানো শক্তি দিয়ে। কুকুরটার পর একটা শেয়াল। মনে হবে যেনো ওরা দায়িত্ব নিয়েছে এক মুহুর্তও জায়গাটাকে শব্দমুক্ত না রাখার। তবে কুকুরটা সম্ভবত শেয়ালের ডাক মাত্রই শুনলো। চারপাশে তাকিয়ে শেয়ালের খোঁজে নামলো। তার এলাকায় নতুন কোন প্রাণী আমদানি হয়েছে একটু দেখতে হবে না?

তবে বাইরের এই ডাকাডাকি রূপার কক্ষে ঢুকতে পারছে না। জানালা, দরজা সবই আটকানো। যদিও বারান্দার দরজাটা খোলাই থাকে সবসময়। তবে রূপা একটু আগেই সেটা লাগিয়ে দিয়েছে। গভীর গোপন কথাগুলো বলার সময় নিশ্ছিদ্র নীরবতা জরুরী। আজকাল আর মুখে কিছু বলতে পারে না রূপা। মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দিলেই অশ্রুরা তার পথ খুঁজে নেয় নিজ দায়িত্বে। মনে জমা পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে বার্তাবাহকের কাজ করে। ছোট্ট ছোট্ট চিঠিগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায় সাত আসমানের ওপারে। এমন ডাকপিয়ন কোথায় পাওয়া যাবে? যার সাইকেল চলে জমিন থেকে আসমানে?

হালকা আওয়াজ হতেই মুখ বন্ধ করে ফেলল রূপা। গভীর রাতে নিশ্বাসের শব্দই যেখানে পরিষ্কার শোনা যায় সেখানে এমন গোঙানি শুনে মা, ভাইয়ের ছুটে আসা অবান্তর হবে না। সে কাউকে জানাতে চায় না এই আর্তনাদ। কাউকে দেখাতে চায় না মনের দগদগে ঘা।

আজ টিউশনি করে ফিরতে একটু দেরি হয়েছিলো রূপার। বিল্ডিংয়ের সামনে আসতেই কয়েকজনের ফিসফিসানি শুনতে পেয়েছে সে।
– দেখছেন এখন তো আর বাড়িতেই থাকে না।
– দেখতেসি। আবার বোরখা ধরছে দেখেন না। নতুন ঢং!
– বোরখা ধরলেই কি না ধরলেই কি? নষ্ট তো নষ্টই। সেইটারে যতোই প্যাকেট করা হোক না কেন।
– এই মেয়ের কপালে বিয়ে নাই। সেদিন এক ভাবি প্রস্তাব নিয়ে গেছিলো তা ওর ভাই নাকি দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। হুহ! দেখবো কোন রাজপুত্তুর ওরে বিয়ে করে।
– রাজপুত্তুর বিয়ে করলেও ও কি রানী হবে নাকি? হবে তো..

পরেরটুকু শুনতে পারেনি রূপা। বলা ভালো শুনতে চায়নি। চোখমুখ খিচে চলে এসেছে। সামনের ফ্ল্যাটে একটা ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখেই দোর দিয়েছে। রূপা জানে কেনো সে এমন করেছে। মেয়েটার মা তাকে শুনিয়ে শুনিয়েই সেদিন বলেছে।
– শোনো মা! ঐ মেয়েটা পচা হয়ে গিয়েছ। ওর কাছে গেলে তুমিও পচা হয়ে যাবে। একদম বিশ্রী পচা।
এরা কেউ তার বিয়ের খবর জানে না। ধারণা করা ধর্ষনের খবরেই তারা এমন করছে। বিয়ের বিষয়ে জানলে কি করতো? রূপা জানে না। কান্নার দমকে তার পিঠ কেঁপে কেঁপে উঠছে। তার জড়ানো কথাগুলো বুঝতে কষ্ট হয়।
– আমার মান সম্মান তোমার কাছে সপে দিলাম আল্লাহ। আমার কারণে আমার মা, ভাইয়ের মনে তুমি কষ্ট দিও না।
বাকি কথাগুলো দুর্বোধ্য ঠেকে। তবে অবশ্যই মনুষ্য কর্নে। যার কাছে রূপার এই আকুল আবেদন তাঁর কাছে না।

চলমান।

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:২৯

কলেজে যাওয়ার পথে এক জোড়া কপোত কপোতীকে দেখেছে রূপা। মেয়েটাকে সে চেনে। পাশের বিল্ডিংয়েই থাকে। তার চেয়ে এক বছরের ছোটো। ছেলেটার সাথে অনেক দিনের সম্পর্ক। একদিন রূপার সামনে পড়ে যাওয়ায় মেয়েটা ইতঃস্তত হেসে স্বীকার করেছিলো। ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সেদিনও এই রেস্টুরেন্টেই দেখা হয়েছিল। আজও তাদের ওখানেই দেখা যাচ্ছে। ওরা কি জানে কাঁচের দেয়ালের এপাশ থেকে ওদের অবৈধ সম্পর্কের নগ্ন রূপ সকলের সামনে দৃশ্যমান?
নিজ ভাবনায় নিজেই চমকে গেলো রূপা। অবৈধ সম্পর্ক? কোনো সন্দেহ নেই যে এটা অবৈধ সম্পর্ক। তার অবচেতন মনে এটা গেঁথে গেছে। আত্মন্নয়নের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। দৃষ্টি সরিয়ে স্মিত হাসলো রূপা। আসমার কাছে ফোন দেয়ার কথা ভাবলো। পরক্ষণেই মত বদলে ফেলল। মেয়েটা ঘুরতে গেছে। বিরক্ত করার কি দরকার?

দুটো ক্লাসের মাঝে আধ ঘণ্টার একটা গ্যাপ। অর্পি, কেয়াদের সাথে বসে আছে রূপা। সে সময় আকাশকে আসতে দেখা গেলো। অর্পি খোঁচা দিলেও গুরুত্ব দিলো না রূপা। তবে আকাশকে তার সামনে এসেই থামতে দেখা গেলো।
– রূপা! কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আকাশ ভাই। আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
আকাশ উশখুশ করছে। রূপা সেটা খেয়াল করলো।
– কিছু বলবেন?
– ইয়ে..হিমেল ভাই চলে যাচ্ছেন। সবাই একটা ফেয়ার ওয়েল আয়োজন করার কথা ভাবছে।
– ভালো তো! করুন।
রূপার মুখভঙ্গি পরোখ করলো আকাশ। এক টুকরো কালো মেঘের আশা করছিলো সে। তার আশায় জল ঢেলে রূপাকে দেখালো সাদা মেঘের মত স্বচ্ছ।
– কত টাকা করে দিতে হবে? কিছু ঠিক করেছেন?
– হুঁ? না। এখন ঠিক করা হয়নি।
– করলে জানিয়ে দিয়েন।
– আচ্ছা।
আকাশ চলে যেতেই কেয়া বলল
– ব্যাটা তোর খোঁচা মারতে আসছে বুঝলি? একটু বাজায় গেলো।
– বুঝেছি।
– কিন্তু ওর তো খুশি হওয়ার কথা ছিল। হিমেলরে নিয়ে তুই আর চিন্তা করছিস না এটা তো ওর জন্যে পজেটিভ দিক।
অর্পির কথা হাসলো রূপা। বলল,
– ভালো লাগতে যেয়েও আকাশের কাছে সেটা ভালো লাগেনি। কেন বল তো?
কেয়া ভাবতে বসলো। অর্পি কেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতে গেলে তার অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তার থেকে কেয়াই কিছু একটা বলে দিক। কেয়া বলল,
– বুঝতে পারতেছি না দোস্ত। হিমেলের সাথে যখন সম্পর্ক তখন তো এই ব্যাটা হোমিওপ্যাথি ওষুধের মতো সকাল বিকাল পিছে লাগতো। এখন তাইলে মটকা মা-র-লো ক্যান?
– হিমেলের সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক। সেটা ভেঙে যাওয়াতে আমাকে একটু আপসেট দেখতে চেয়েছিল আকাশ। হতে পারে ক্ষতে মলম দিয়ে নিজের জন্য একটা জায়গা বানানোর চেষ্টা। কিন্তু যখন দেখলো দীর্ঘদিনের এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টা আমার উপর তেমন ইফেক্ট ফেলতে পারেনি তখন ওর মন ঘুরে গেলো। হয়তো ভেবেছে যেই মেয়ে দুই বছরের সম্পর্ক ভাঙার পরও হেসে খেলে বেড়াতে পারে সেই মেয়ের কাছে সম্পর্কের মূল্য নেই। সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে না, সম্পর্কের প্রতি মায়া নেই এমন মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর কথা চিন্তা করা যায় না।
কেয়া বাস্তবিকই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। রূপার দিকে অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে বলল,
– তুই এত কথা ভাবলি কি করে? মাই গড! রূপা তুই দেখি জিনিয়াস হয়ে গেছিস!
– রূপা পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে গেসে।
অর্পি উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল। রূপাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে কেয়া বলল,
– তোর ভেতরটা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেসে রূপা। মানুষের ভেতরটাই আসল। বাইরের সাজসজ্জা একদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু ভেতরটা আজীবন এমনই থাকবে। কংগ্র্যাচুলেশন্স মাই ফ্রেন্ড! জীবনে অনেক বড় হ।
রূপা হাসলো। কিছুই বলল না। একই কলেজে হিমেলের মুখোমুখি হয়ে হয়েছে তাকে অসংখ্যবার। প্রথম প্রথম কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো সে। একটু ভালবাসা মাখানো দৃষ্টি ফেরত পাওয়ার আশায়। তেমন কিছুই হয়নি। হিমেল কঠোরভাবে তাকে এড়িয়ে গেছে। এক সময় রূপা নিজের জায়গা বুঝতে পেরেছে। হিমেলের কাছে, এই পৃথিবীর কাছে। নিজের কাছে নিজেকে আর ছোটো করতে পারেনি সে। আত্মমর্যাদার সীমায় যেয়ে আটকে গেছে। তখন থেকে দুনিয়ার প্রতি নিক্ষেপিত দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে এনেছে। নিজের ভেতরে জমা ধুলোবালি গুলোকে ঝার দিয়ে তলিয়ে যাওয়া রূপাকে টেনে বের করেছে। সে জানেনা সেই পথে ঠিক কতোটুকু সফল হয়েছে। তবে চোখ বন্ধ করে এটুকু বলতে পারে, হিমেলের প্রস্থানে সে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।

আজ টিউশনি বন্ধ। বাচ্চাটা পরিবারসহ ঘুরতে গেছে। একটু আগেই বাড়ি ফিরল রূপা। রাস্তাটায় খুব গোলমাল। লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। তবে বাতাসে কেমন বিপদের গন্ধ। মানুষ জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ফিসফিস করছে। এখানে সেখানে টুকরো টুকরো জটলা। হঠাৎ বাড়ির ভেতর থেকে এক নারীর চিৎকার ভেসে এলো। ভয় পেলো রূপা। কার কি হলো? নিজেদের বাড়ির দিকে ছুটলো সে। কামরুন্নাহার নিশ্চয়ই ঘটনা জানবে?

কলিং বেল চাপতে হলো না। দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকেই রূপা মাকে ডাক দিলো।
– মা! ও মা!
– কি হয়েছে?
এগিয়ে এলেন কামরুন্নাহার। তিনি সম্ভবত কোথাও যাচ্ছেন।
– কোথাও যাচ্ছো নাকি? আচ্ছা কি হয়েছে বল তো? এতো মানুষ আবার কে যেনো কান্নাকাটি করছে।
– আরে ওবাড়ির মিথিলা ছিল না? ও গলায় দড়ি দিয়েছে।
ফিসফিস করে বললেন কামরুন্নাহার।
– কিহ!
চমকে উঠলো রূপা। আজ সকালেই তো মিথিলাকে সে দেখলো। সাথে সেই ছেলেটা। এর মাঝে কি হয়ে গেলো?
– আরে কতো কিছু হয়েছে জানিস না তো। মিথিলার কার সাথে যেনো সম্পর্ক ছিল। তার সাথে লুকিয়ে বিয়েও করেছে। এখন পেটে বাচ্চা এসে গেছে। কিন্তু সেই ছেলে নাকি আরেক জায়গায় বিয়ে করে নিয়েছে। ওকে নেবে না। এই নিয়েই সে কি হুলুস্থুল!
রূপার হৃদস্পন্দন একশ ছাড়ালো। গলা শুকিয়ে যেনো কাঠ। কোনো রকমে সে বলল,
– মিথিলার কি অবস্থা?
– ম-রে গেছে রে। ওর মা-ই তো এভাবে চিৎকার করে কাঁদছে। আমি যাই একটু দেখে আসি কি অবস্থা। তুই দরজাটা আটকে দে।
রূপা যেনো একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো। মিথিলার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করলো। তার সাথেও তো এমন কিছুই হতে পারত। সেও তো কনসিভ করতে পারত। হিমেলের প্রত্যাখানের পর কি অ্যাবর্শন করতে পারত সে? কক্ষনো পারত না। বাচ্চাটা কি পরিচয় বড় হতো? তার চাইতেও বড়ো কথা তার এবং তার পরিবারের মান সম্মান আর কিছুই বাকি থাকতো না। তার মানে আজ সকালে যেই মেয়েটাকে মিথিলা ভেবেছে সে আসলে ছেলেটার স্ত্রী ছিল। আর মিথিলা? চোখের সামনে একটা মানুষ নাই হয়ে গেলো। সব চিন্তা ভাবনা তালগোল পাকিয়ে গেলে রূপার মাথা তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি হলো। আল্লাহ তাকে সেই পরীক্ষার মাঝে ফেলেনি। নিজেকে মিথিলা ভাবতে গেলেই আঁতকে উঠছি রূপা। তেমন হলে রূপাও নিশ্চই আত্মহননের পথ বেছে নিতো? রূপা জানে না। কিচ্ছু জানে না সে। শুধু জানে বিশাল এক খাদের কিনারা থেকে তার রব নিজ অনুগ্রহে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। দিয়েছে আসমা নামের এক বন্ধু। যে প্রতিনিয়ত শিখিয়েছে কিভাবে নতুন করে বাঁচতে হয়।

চলমান।