রিটেক পর্ব-৩০

0
170

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৩০

বেশ কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে নিজ শহরে ফিরেছে আসমা। কলেজে আসতেই কেয়া, অর্পি তাকে জাপটে ধরলো। আসমার লজ্জা মাখানো হাসি দেখে রূপার কষ্টমাখা আনন্দ হয়। এই দিনটা তার জীবনে কখনও আসবে না। রূপার দিকে খেয়াল করতেই অর্পি গতদিনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গড়গড় করে বলতে শুরু করে। গম্ভীর হয়ে যায় আসমা। রূপাকে বলে,
– কি সমস্যা তোর? এমন করছিস কেনো?
রূপা অবাক হয়।
– কি করছি?
– বুঝতে পারছিস না কি করছিস?
– না।
নিজেকে সামলে নিলো আসমা। রূপাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হবে।
– আকাশ ভাইকে ফিরিয়ে দিয়েছিস কেনিং?
– অদ্ভুত! ফিরিয়ে দিলাম কখন? আর ফেরানোর প্রশ্নই বা আসছে কেন?
– আকাশ ভাই তোকে পছন্দ করে তুই কি তাকে একটা সুযোগ দিতে পারিস না?
– তোর কথাবার্তা শুনে আমি অবাক হচ্ছি আসমা। এসব কথা তুই কিভাবে বলছিস?
– এভাবেই বলছি। সারাজীবন কি এমন দেবদাসী হয়ে ঘুরবি? বিয়ে শাদী করার ইচ্ছে নেই?
এই পর্যায়ে রূপা চুপ করলো। কিছুক্ষণ পর শান্ত কণ্ঠে বলল,
– আমার অতীত শুনে কেউ আমাকে তার জীবনে জড়াতে চাইবে বলে তোর মনে হয়?
ক্লান্ত কণ্ঠে আসমা বলল,
– তোর..তোর এসব বলার দরকার কি?
– অবশ্যই দরকার আছে। কোনোদিন যদি কথাগুলো সামনে আছে তাহলে তারা মনে করবে না যে আমি ঠকবাজ? জেনেশুনে ওদের ঠকিয়েছি? আর এসব জেনে শুনে কেউ আমাকে নেবে না এটা তুইও ভালোভাবেই জানিস।
আসমা থেমে গেলো। তার বুক চিড়ে কান্না আসছে। যোহরের আযান শোনা গেলো। চারজনই চুপ করে আযান শুনলো। আবরণের আড়ালে বিড়বিড় করে ঠোঁট নাড়লো আসমা। আযানের শেষে দুআ কবুল হয়। কোনোভাবেই এটা মিস করা যাবে না।
– আল্লাহ তুমি রূপার জন্য একজন উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দাও, যে ওর জন্য কল্যাণকর হবে। ওর ভুল কাজগুলোকে তুমি মাটিচাপা দিয়ে দাও। ওকে মাফ করে দাও আল্লাহ।
আকাশের দিকে তাকালো রূপা। তার আজন্ম লালিত মেয়েলী স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে। দৃশ্যপটে হিমেলের মুখ বসিয়ে স্বপ্নকে সত্যি করতে চেয়েছিল সে। হিমেল সন্তর্পনে সরে গেছে। তাকে ফেলে গেছে এক খাদের মাঝে। যেখানে থাকা যায় না, যেখান থেকে বের হয়ে নতুন জীবন শুরু করা যায় না।

ফাহিমাদের বাড়িতে এসেছে নীরব দম্পতি। আসমাকে রেখেই বন্ধু ফাহাদের সাথে বেরিয়ে গেছে নীরব। ফারিসের সাথে খেলছে আসমা আর ফাহিমা রূপার গুণগান করে চলেছে। রূপা যে এতকিছু করেছে শুনে আসমা বেশ অবাকই হয়েছিল। তার অবুঝ বান্ধবী এতো বুঝদার হয়ে গেলো কবে? উত্তর স্পষ্ট। কিছু ভুল মানুষকে ভাঙতে আসে, নতুন আকৃতি দেয়ার উদ্দেশ্যে। রূপার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটা ভুল মেয়েটার চোখ খুলে দিয়েছে। আসমা সেই রবের শুকরিয়া জানায় যাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছে রূপা নিজেও।

– এই আসমা।
– জি আপু।
ফাহিমা ইতস্তত করছে। আসমা বলল,
– কিছু বলবেন আপু?
– বলতে তো চাচ্ছি তুমি যদি কিছু মনে না করো তো।
– কি মনে করবো? আপনি নির্দ্বিধায় বলুন।
আনোয়ারা বেগম এলেন। হাতে তিন কাপ চা, কিছু বিস্কুট। সেগুলো রেখে আসমার হাত ধরলেন। আসমা বেশ অবাকই হলো। কি এমন বলতে চায় এরা?
– মা ফাহাদের কথা তো জানোই। বউটা ম-রে যাওয়ার পর থেকে ছেলেটা আমার কেমন যেন হয়ে গেছে। এভাবে আর কতদিন চলবে বলো? একটা বিয়ে থা করতে হবে না? তোমার বান্ধবী রূপা। মেয়েটা এত ভদ্র! মাশাআল্লাহ।
এতক্ষণে কথার গতি ধরতে পারল আসমা। একটা বিট মিস করলো সে। আগের রূপা হলে হয়তো ফাহাদকে ওর মা ভাই রিজেক্ট করে দিত। বিপত্নীক ছেলের কাছে কেনো নিজের কুমারী মেয়ে বিয়ে দেবে? কিন্তু এখন! এখন আর কি। ওদের কাছে তো রূপা আগের মতই আছে। কিন্তু রূপা কি মানবে? তার চেয়েও বড় কথা রূপার কথা শুনে ফাহাদ নিশ্চয়ই মানবে না। আসমার মাথায় চিন্তার ঝড় উঠলো। বলল,
– আন্টি এই বিষয়ে রূপার মা, ভাইয়ের সাথে কথা বললে ভালো হয়।
– ওর বাবা নেই?
– না।
– আচ্ছা সে তো বলবই। তুমি বান্ধবী মানুষ। তুমি ওকে একটু ভালো করে বোঝাতে পারবে। আমার ফাহাদ কি খারাপ ছেলে? বউ মা-রা গেছে তাই কি হয়েছে বলো তো? ওর তো ছেলেমেয়েও নেই। রূপাকে ওরা দেবে না বলো?
আনোয়ারা বেগমের কণ্ঠে আকুতি। আসমা সেটা তের পেলেও আশ্বাস দিতে পারল না। বলল,
– আমি কিভাবে বলি বলুন আন্টি?
আসমার জড়তা বুঝে ফাহিমা বলল,
– আহা মা! কি শুরু করলে বল তো! এটা রূপার ব্যক্তিগত বিষয়। আসমা কি চাইলেই জোর করতে পারে? তার চেয়ে তুমি রূপার মায়ের নাম্বার নাও। তাদের সাথে কথাবার্তা বলি।
আসমা আল্লাহর নাম নিয়ে নাম্বার দিলো। সাথে কল্যাণের দুয়া করতেও ভুললো না।

ফাহাদ রাজশাহী থেকে ফিরেছে। পুরোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে মেডিকেল কলেজে। দুপুরের খাবার খেতে খেতে বেশ সময় কাটলো বন্ধুর সাথে। বন্ধুকে বিদায় দিতে গেলেই একজন এলো।
– কাল সকালে আমার ফ্লাইট। দোয়া রাখিস।
ছেলেটি হাসিমুখে বলল। ফাহাদের বন্ধু পরিচয় করিয়ে দিলো। তার ঘনিষ্ট এক বন্ধু। উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিদেশ যাচ্ছে। ফাহাদ শুভকামনা জানালো। ছেলেটি চলে যেতেই ফাহাদের বন্ধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
– জীবনটা একেকজন মানুষের জন্য একেকরকম। কিন্তু তাই বলে এতো আনফেয়ার হবে?
– কেনো? কি হয়েছে?
ফাহাদের বন্ধু বলতে শুরু করলো। দিনের চেহারার সাথে সাথে ফাহাদের চেহারার রঙও পাল্টাতে লাগলো। বিস্মিত বাকরুদ্ধ হলো সে।

ভাগ্নেকে দেখতে গেলে আনোয়ারা বেগম ছেলেকে চেপে ধরলেন।
– শোন! আমার একটা মেয়েকে ভারী পছন্দ। তোর জন্য ভেবে রেখেছি। তুই বললেই ওর বাবা মায়ের কাছে যাবো।
মায়ের মুখের দিকে তাকালো ফাহাদ। বলল,
– আমি না বললেও শুনবে বলে তো মনে হচ্ছে না। মেয়েটা কি ডিভোর্সী? অথবা বিধবা?
– হ্যাঁ শুনবো না। আর চুপ কর তো তুই! এক কথা শুরু করেছে। আসমার বান্ধবী রূপাকে দেখেছিস না? মেয়েটাকে আমার খুব মনে ধরেছে বুঝলি।
রূপার কথা শুনতেই ফাহাদের কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেলো। চেহারার রং পাল্টালো দুপুরের কথা মনে হতেই। আনোয়ারা বেগম সেটা খেয়াল করলেন। ফাহাদের মুখভঙ্গি পাল্টানোকে মনে করলেন প্রচ্ছন্ন পছন্দের অব্যক্ত বহিঃপ্রকাশ। মনটা তার আনন্দে নেচে উঠলো। চট করে উঠে বললেন,
– রূপার মায়ের নাম্বার নিয়েছি। এখুনি ফোন দিয়ে কথা বলি।
আনোয়ারা বেগম ছুটে চলে গেলেন। ফাহাদ কিছু বলার সময়ই পেলো না।

– আশ্চর্য! এভাবে হুট করে বললেই হলো নাকি? তুমিও কেমন রাজি হয়ে গেলে?
রিমনের মেজাজ সপ্তমে। ফাহাদের মায়ের কথা শুনে বেশ ক্ষেপেছে সে। কামরুন্নাহার ছেলেকে সামলাতে বললেন,
– মহিলাকে আমি দেখেছি। মন মানসিকতা ভালোই মনে হলো। আবার ছেলেটাও দেখতে শুনতে ভালো।
– ওর আগে একটা বিয়ে হয়েছিল মা!
– সেই বউ আছে না বাচ্চাকাচ্চা আছে? তোরাও এমন করিস না! দেখতে এলেই কি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে নাকি? আসুক ওরা।
– তুমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছো আবার কি?

রূপা ফিরলে তাকে জানানো হলো। সে শান্ত কণ্ঠে শুধু একটা কথাই বলল,
– আমাকে তার সাথে আলাদা করে কথা বলতে দিতে হবে।
কামরুন্নাহার সানন্দে রাজি হলেন।

চলমান।