রিটেক পর্ব-৬+৭

0
167

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৬

মানুষ বলে সংসারের ছাপ নাকি পুরুষ মানুষের চোখেমুখে থাকে। ফাহাদকে দেখলে সে কথা সত্য বলে মেনে নিতে হয়। সংসারে যে শান্তি নেই এ কথা তাকে দেখে বলতে হলেও কাউকে পি এইচ ডি করতে হবে না। সেজন্যই বোধহয় তার এক সহকর্মী বিষয়টা নিয়ে খোঁচাতে ছাড়লো না। শুরুটা করলো খুব সুন্দর করে।

– কি ব্যাপার ফাহাদ ভাই? খবর কি? ভালো তো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভাই ভালো আছি। আপনার কি অবস্থা?
– বিন্দাস আছি। বুঝলেন ফাহাদ ভাই! পুরুষ মানুষের জীবনের বউ ঠিক তো সব ঠিক। আমার বউটা একেবারে খাপে খাপ হয়েছে তাই জীবনও সেট। এই আপনাকেই দেখুন! মুখ দেখলেই বোঝা যায় যে সংসারে শান্তি নেই।

ফাহাদের চেহারা থমথম করছিলো। ঠোঁটের সৌজন্য মাখানো হাসি গায়েব হয়েছে আগেই। লোকটা আশপাশ দেখে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
– সমস্যা কি নিয়ে ভাই? আমার পরিচিত ভালো ডাক্তার আছে। বললে..

হঠাৎ লোকটার ঘাড়ে হাত রেখে পিছিয়ে দিলো ফাহাদ। বেশ শক্ত করেই ধরেছিলো সেখানে। লোকটা থতমত খেয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে ফাহাদ বললো,
– বউ আমার, চিন্তাও আমাকেই করতে দেন ভাই। মানুষের সংসার নিয়ে এতো চিন্তা করে পরে দেখা যাচ্ছে নিজের সংসার উড়ে গেলো। তখন কি হবে? তাই নিজের সংসারের যত্ন নিন।

নিজের কেবিনে ফিরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসলো ফাহাদ। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে তার। নিজের স্ত্রী নিয়ে এমন মন্তব্য শুনতে কারই বা ভালো লাগে। মন চাইছিলো লোকটাকে এক ঘা বসিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে ভেবে সরে ছিলো ফাহাদ। তবে এই ক্ষণে এসে দীপ্তির চিন্তা মাথায় হানা দিলো। মেয়েটা যেয়ে একটা ফোন অবধি করেনি। তার কি উচিত হবে ফোন করে একট খোঁজ নেওয়া? উচিতই তো! সে যদি ছেলেমানুষী করে ভুল করে তাহলে তার সাথে গো ধরে থাকলে কি করে চলবে? দাম্ভিকতা এবং অহংকারের যু-দ্ধ একপাশে সরিয়ে রেখে দীপ্তিকে ফোন দিলো ফাহাদ। তাকে দেখালো একজন দায়িত্ববান স্বামীর ন্যায়।

ফোন বাজতেই ধরলো দীপ্তি। তার উচ্ছল কণ্ঠ শোনা গেলো।
– হ্যালো ফাহাদ! কেমন আছো?
ফাহাদ বলতে চাইলো,”যেমন রেখেছো” পরক্ষণেই কি মনে হতে হেসে বললো,
– এতক্ষন খারাপ লাগছিলো। তোমার কণ্ঠ শুনে ভালো লাগছে।
– যাহ! একজনের কণ্ঠ শুনে আবার কারো ভালো লাগে নাকি।
– লাগে। মনে করো তোমার খুব কাছের কেউ যার সাথে তোমার যুগ যুগের দূরত্ব তার কন্ঠ হঠাৎ শুনলে তো ভালো লাগবেই।
দীপ্তি কি বুঝলো কে জানে! চুপ করে রইলো। নরম কণ্ঠে বললো,
– আমি কি তোমাকে খুব বিরক্ত করি ফাহাদ?
– এমন কেনো মনে হলো তোমার?
– আমার মনে হয় আমি তোমাকে সুখী রাখতে পারছি না।
– সুখী রাখা তো তোমার কাজ না দীপ্তি। ঐটা আল্লাহর কাজ। তুমি শুধু আমার সুখের সঙ্গী হও তাতেই হবে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীপ্তি বললো,
– ফাহাদ একটা কথা বলি। কিছু মনে করো না। তুমি আসলে অনেক ভালো ছেলে। স্ত্রী হিসেবে এটা বলতে আমি দুইবার ভাববো না। কিন্তু কেনো যেনো আমাদের মেলে না। তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছো বিয়ের ছয় মাসেও তোমার আমার মধুর কোনো স্মৃতি নেই। যেটা ভেবে সুখ পাওয়া যায়। একান্ত আনন্দের কোনো মুহূর্ত আমাদের নেই।

ফাহাদ কোনো কথা বললো না। কখন ফোন কেঁটে গেছে সে ঠিকই পেলো না। এক সময় খোলা জানালায় তাকিয়ে ভাবলো একই পৃথিবীর দুটো মানুষ কেমন করে এক সুতোয় বেঁধে গেলো! কিন্তু তাদের মনের মিল হলো না। এমন কেনো হলো? তাদের মনের মিল কি কোনোদিনই হবে না?

• • • • • •

ক্লাসের মাঝেও কলেজে ভ্রমণের আবহ বিরাজ করছে। সিনিয়ররা নিজ উদ্যোগে ভ্রমণে যাচ্ছে এই খবর চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। ভ্রমণ পিয়াসী ছেলেমেয়ের দল উৎসাহী হয়ে ছুটে আসছে। কেউ কেউ সিনিয়রদের সাথে আরেকটু গাঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোর কথা চিন্তা করলো। ক্রমেই একটা বড়ো দল তৈরি হয়ে গেলো। হিমেলদের পাঁচ জনের একটা গ্রুপ এখানে আছে যাদের প্রত্যেকেই ইন্টার্ন ডক্টর। দলে তাদের বিশেষ খাতির আছে। ফলে তাদের আয়োজনের কোনো কাজ করতে হলো না। সিনিয়র শিক্ষার্থীরাই সব আয়োজন করে তাদের দাওয়াত দিলো। যদিও রূপা জানতো হিমেলদের দল তাদের সাথে যাচ্ছে তবুও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সে অংশ নিলো। বন্ধুদের সাথে যোগ দিতে গেলে আসমাকে আরো একবার বললো,
– ভেবে দেখ আসমা! এমন এক্সকার্শন কিন্তু আগামী দুই বছরে আর পাবি না।
আসমার উদ্বেগহীন জবাব,
– না পেলে আরো ভালো।
– তুই এমন কেনো রে? রসকষহীন!
– যেই রস নিয়ে বিপদের পড়তে হয় সেই রসের আমার দরকার নেই। আল্লাহ সহায় হোক। তোকে যেনো কোনো ধরণের বিপদে না পড়তে হয়।
আসমা চলে গেলেও রূপা ভাবনার জগৎ থেকে বের হতে পারলো না। তাকে টেনে নিয়ে গেলো আরেক বান্ধবী।
সামনের সারির কথপোকথনের মাঝেই হিমেল এবং রূপার এক দফা দৃষ্টি চালাচালি হয়ে গেলো। রূপার মিটিমিটি হাসি তার মনের অবস্থা বোঝালো।


খুব উৎসাহ নিয়ে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো রূপা। তমা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কয়দিনের সফরে যাচ্ছো রূপা?
– তিন দিনের।
– তাতেই এতো বড় ব্যাগ হয়েছে! শাড়িই তো নিলে তিনটা। কখন পড়বে এতো?
– সকাল বিকেলে পড়ে ফেলবো। তোমার জন্য কি আনবো ভাবি?
– আমার জন্য কিছু আনতে হবে না। তুমি নিরাপদে ফিরে এসো। আমার এমন একা এতো দূরের জার্নি খুব ভয় লাগে।
নিজের ভয়টা লুকাতে পারলো না তমা। চাইলোও না বোধহয়। রূপা হেসে বললো,
– চিন্তা করো না ভাবি। ওখানে আমার পরিচিত অনেকে আছে। অনেক বিশ্বস্ত।
বলতে বলতেই হিমেলের মুখটা চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো। রূপা নিশ্চিন্তে যেতে পারে।
– বিশ্বস্ত হলে তো হলোই। এই তোমরা যাচ্ছো কোথায়? তাই তো শুনলাম না!
– সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি।

• • •

মায়ের কাছে দুইদিন ছিলো দীপ্তি। এর মাঝেই কি হলো কে জানে! হুট করে একদিন ফাহাদকে ফোন দিয়ে বললো,
– ফাহাদ! টিকিট দুটো কি তোমার কাছে আছে নাকি ফেরত দিয়ে দিয়েছো?
– কোন টিকিট?
মনে করতে পারলো না ফাহাদ।
– আর ঐ সেন্ট মার্টিনের।
ইতঃস্তত করে বলল দীপ্তি।
– না আছে তো। কেনো?
– ইয়ে.. আমি ভাবছি সুযোগ যখন আছে আমরা নাহয় ঘুরেই আসি। কি বলো?
অবাক হলো ফাহাদ। সাথে খুশিও।
– হঠাৎ কি মনে হলো?
– বিশেষ কিছু না। তোমার সাথে যখন থাকবো তখন তোমার কিছু ইচ্ছা পূরণ করা উচিত। তাই। আচ্ছা রাখি।

হঠাৎ বহু আকাঙ্খিত জিনিস পেলে নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। ফোন রেখে ফাহাদের মনে হলো জীবনটা আসলে সুন্দর। অনেক সুন্দর!

চলমান।

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৭

মিউজিক বক্সকে সমীহ করতে হয়। জিনিসটার অসামান্য প্রভাব আছে। তার ভেতর থেকে উচ্চস্বরে ভেসে আসা বাদ্যযন্ত্রের শব্দ প্রত্যেকের নিউরনকে আঘাত করছে। ফলস্বরূপ মানুষগুলো স্থির থাকতে পারছে না। প্রথমে হাত তার সাথে মাথা। একটু পরে যুক্ত হলো পা। বেশ কিছুক্ষণ পর স্থির থাকতে না পেরে উঠে যায় কিছু ছেলে মেয়ে। চলন্ত বাসেr মাঝেই গানের তালে নিজেদের দোলাতে শুরু করে। এগুলো তাদের আনন্দ উদযাপনের প্রকাশভঙ্গি। সেটাও আরেক কাহিনী। এই জেরিন মেয়েটার কথাই ধরা যাক। ক্লাসে সেদিন কোনো এক কারণে সবুজ তার হাত ধরেছিলো। পুরো ক্লাসের সামনে সবুজকে সে কি ঝাড়িটাই না দিলো। আজ কি সুন্দর তার সাথে নেচে চলেছে। সবুজ ক্ষণে ক্ষণে জেরিনের হাত, ঘাড়, কোমড় ছুঁয়ে চলেছে। অঘোষিতভাবে তৈরি হওয়া জুটির নাচের দৃশ্য সবাইকেই আনন্দ দিচ্ছিলো। জেরিনও আজ কিছু মনে করলো না। সেদিন তো না শুনে ধরেছিলো। আজ জেরিনের সম্মতি আছে। সম্মতিতেই দৃশ্যের ছক পাল্টে গেছে। সবুজে মনোভাব জানা গেলো না। সম্ভবত সে খুশি। একটু বেশীই খুশি।

রূপার যতোটা খুশি হওয়ার কথা ছিলো সে ততোটা খুশি হতে পারছে না। পাশের সিটে অর্পি বসেছে। বাসে ওঠার এক ঘণ্টার মাঝেই সে কাহিল হয়ে পড়েছে। বলে কয়ে রূপার সাথে জায়গা বদল করে জানালার পাশে গিয়েছে। আশপাশ খুঁজে একটা পলিথিনও জোগাড় করে রেখেছে। রূপা ভেবে পায় না এই মেয়ে মেডিকেলে পড়ে কিভাবে। ভ্রমণ সঙ্গী হিমেলকে ভাবলেও জার্নির লম্বা সময়টা ওকে অর্পির সাথেই কাটাতে হবে। কিন্তু মেয়েটা কথাই বলতে পারছে না। মাঝে মাঝে তার গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। রূপা অন্যদিকে মাথা ঘোরালো। এই মেয়ে কখন তার উপর কিছু করে দেয় বলা যায় না। মাথা ঘোরাতেই সামনের দৃশ্যটা মেজাজটা রূপার বিগড়ে দিলো। হিমেলদের পাঁচ জনের একটা দল এখানে আছে, যাদের প্রত্যেকে ইন্টার্ন ডক্টর। এদের তিনজন ছেলে এবং দুইজন মেয়ে। হিমেলের পাশের সিটে বসেছে তুলি নামের একটা মেয়ে। রূপার মেজাজটা খিঁচড়ে এলো। হিমেল চাইলেই কোনো ছেলের পাশে বসতে পারতো। সেটা সে করলো না। কেনো? উত্তরটা ভাবতে চায় না রূপা। একটু পরপর হাসির ছলে তুলি হিমেলের গায়ে ঢলে পড়ছে। হিমেল একটা ধমক দিলেই মেয়েটা আর সাহস পেত না।কিন্তু হিমেল কিছু বলছে না। ও কি মজা পাচ্ছে?

বাসের পরিবেশ আরো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই আরো অনেক ছেলেমেয়ে নিজেদের আসন ছেড়ে গানের তালে নাচতে শুরু করেছে। একেকজন একেক ভঙ্গি করে সকলের চোখের সামনে নিজের আনন্দের প্রকাশ ঘটাতে শুরু করেছে। একটা মেয়ের বিশেষ একটা অঙ্গভঙ্গি দেখে বাসের সকলে “হোওওও” করে উঠলো। রূপার কাছে মনে হলো সেটা নাচ কোনোভাবেই হতে পারে না। জামাকাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা অঙ্গের অস্তিত্বের জানান দিলো মেয়েটা। সবাই সেটা দেখে মজা পেলো। হিমেলের দিকে চোখ যেতেই দেখলো মেয়েটার দিকে সে তাকিয়ে আছে। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে রূপার দিকে তাকিয়ে সে মিষ্টি করে হাসলো। তবে আজ রূপার মন এতে গলল না। রূপা ভাবলো নাচটা আসলে কি। অঙ্গের খেলা। জাঁকজমক পোশাকের আড়ালে নাচের ব্যাপারে এমন নগ্ন বাস্তবতা তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। অজান্তেই মুখে এলো, ছিঃ!

– রূপা! ও রূপা!
– বল।
পাশ ফিরে অর্পির দিকে তাকালো রূপা। অর্পি চোখ বন্ধ করেই তাকে ডাকছে।
– আমি নাচতে পারলাম না রে!
– ভালো হয়েছে।
– কি বলছিস! আমি পিকনিকে এসেছি কেনো? কিছুই করতে পারলাম না। ম-রা-র মতো পড়ে আছি।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল অর্পি। রূপা বিড়বিড় করে বলল,
– নিজের বডি দেখানোর এতো শখ হলে অন্য জায়গায় যেয়ে দেখাবি।
– তুই কি হিমুর সাথে কথা বলছিস?
– হিমু কে?
রূপার ভ্রু কুঁচকে এলো।
– রূপা তুই হিমুকে চিনিস না? হিমু হলো হিমালয়। তার বাবার আদর্শ পুরুষ পাঠশালার একমাত্র ছাত্র। ওর মাকে ওর বাবা মে-রে ফেলেছিলো। ওর টিয়া পাখিকেও মে-রে ফেলেছে ব্যাটা। ওর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে রাস্তায় রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটে আর তার প্রেমিকা তুই।
– আমি!
– তুই রূপা না?
– হ্যাঁ।
– তার মানে হিমু তোর প্রেমিক। রূপা হিমুর সাথে আমাকে একবার দেখা করিয়ে দিস। আমি ওকে এক জোড়া জুতা আর একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি কিনে দিবো। হলুদ তাই হিমু। সবুজ হলে কি হবে? সমু?
– অর্পি তুই প্লিজ চুপ থাক। তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। উল্টাপাল্টা বকা শুরু করে দিছিস।
– রূপা! হিমুর কি একটা শক্তি যেনো থাকে? ঐ যে গেস করে বলে। বল তো।
– আমি জানিনা।
– তোর প্রেমিক তুই জানিস না! রূপা তোর প্রেমিককে তুই আমাকে দিয়ে দে।
হিমেলের দিকে তাকালো রূপা। সে তুলির সাথে গল্প ব্যস্ত। কি এতো গল্প করছে কে জানে।
– অর্পি আয় তোর মাথা টিপে দিই। কিছুক্ষণ ঘুমা তারপর আমি ডেকে দিবো। আয়।

অর্পি আর কথা বাড়ালো না। সুবোধ বালিকার মতো রূপার ঘাড়ে মাথা রেখে দিলো। রূপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কার ঘাড়ে মাথা রেখে যাত্রার স্বপ্ন দেখেছে আর কার মাথা ঘাড়ে নিয়ে যাচ্ছে! জীবন বড়ই রহস্যময়।

• • • • • •

আগামীকাল ফাহাদ এবং দীপ্তি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। আজ রাতেই সব ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে। দীপ্তি এসব ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে। নিজের কোনো জামাকাপড় সে ফাহাদের ব্যাগে রাখলো না। দুজনের আলাদা দুটো সুটকেস হলো। অন্যের সাথে ব্যাগ শেয়ার করতে দীপ্তি অপছন্দ করে। ব্যাপারটা ব্যাগ শেয়ার করা পর্যন্ত হলেও হয়তো ফাহাদের খারাপ লাগত না। কিন্তু দীপ্তি তার সাথে কোনো কিছুই শেয়ার করে না। ফাহাদ যে গ্লাসে পানি খায় দীপ্তি সেটায় ভুল করেও পানি খায় না। ফাহাদ কষ্ট পায়। ধরাছোঁয়ার জিনিসই দীপ্তি তার সাথে ভাগাভাগি করে না। সেখানে মনের খবর চাওয়া বিলাসিতা।

যাওয়ার আগে আনোয়ারা বেগম ফোন করতে বলেছিলেন। ফাহাদ দীপ্তিকে বলল,
– একটু মাকে ফোন দাও তো।
– কেনো?
– বলো আমরা কালকে যাচ্ছি।
– তুমি বলনি?
– বলেছি।
– আবার বলতে হবে কেনো?
– সেদিন তো বলেছিলাম যাবো ভাবছি। আজ যখন তৈরি হচ্ছি একটা ফোন দেওয়া উচিত না? একটু দোয়া চাইলে।
– তুমি ফোন দাও। আমি এসব দোয়া টোয়া চাইতে পারি না।

দীপ্তির এমন কথায় ফাহাদ কষ্ট পায়। কতো অবলীলায় বলে ফেলে সে। নিজেই মাকে ফোন দেয়, দোয়া চায়। আনোয়ারা বেগম দীপ্তির সাথে কথা বলতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যায়।

সারারাত চাপা উত্তেজনা নিয়ে কাটায় ফাহাদ। যথা সময়ে বাস কাউন্টারে পৌঁছায়। কিন্তু ছোটখাটো বিষয়ে যেনো ফাহাদকে ছোটো করতে ছাড়ে না দীপ্তি।

– বাস এমন কেনো? এতো দূরের জার্নি একটা ভালো বাস নিতে পারলে না?
– আমি তো টিকিট কাটিনি। এটা তো..
– ওহ হ্যাঁ! এটা তো আবার তোমার প্রাণের বন্ধু গিফট করেছে। তা সে একটা ভালো বাস দেখলো না কেনো? এখন এই ফালতু বাসে যেতে হবে যত্তোসব।

হতাশ শ্বাস ছাড়লো ফাহাদ। মনে মনে ভেবেছে কোনোভাবেই এই ভ্রমণে দীপ্তির সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়াবে না। বুঝতে পারছে না ভাবনাটা ঠিক কতক্ষণ টিকে থাকবে।

বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই আরেক দফা ঝামেলা সৃষ্টি হলো। সকলের মাঝে চিৎকার করে ফাহাদকে বকতে থাকলো দীপ্তি। লজ্জায় ফাহাদ মাথা নিচু করে বসে রইলো। ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে বাস ভর্তি লোকের সামনে নিজের অপমান ফাহাদের চোখ ভিজিয়ে দিতে চাইলো।

• • • • • •

সন্ধ্যা নাগাদ সকলে পৌঁছে গেলে বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলো রূপা। বুক করা হোটেলের রুমে যেয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সকলে। কিন্তু ঘণ্টা না পেরোতেই কিছু মেয়ে রুমে প্রবেশ করে। তারা একেক রুমে তিন জন করে থাকছে। পাশের রুম থেকে জেরিনের সাথে আর কিছু মেয়ে এসেছে। রূপা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। অর্পি ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু জেরিনের কান্নার শব্দে তারা দুজনেই উঠে বসতে বাধ্য হলো।

চলমান।