রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-১৩+১৪

0
1

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

১৩
আসিফ বলতে বলতে থেমে যায় রিদের নিশ্চিল অবস্থা দেখে। কারণ ততক্ষণে রিদ ল্যাপটপের কিবোর্ডের উপর কপালে ঠেকিয়ে গা ছেড়ে পরে রইল প্রশ্ন করার থেকে। অস্থির আসিফ দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসল রিদের দিকে। আতঙ্কিত হাতের ভাই, ভাই, করে ডাকতে লাগলো রিদের কাঁধ চেপে। রিদকে স্পর্শ করে আসিফ বুঝতে পারলো রিদের বেগতিক শরীর তীব্র কম্পন হওয়ার বিষয়টা। হতভম্ব আসিফ মূহুর্তেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রিদের সাড়াশব্দ পাচ্ছে না বলে। আতঙ্কিত মুখ তুলে চাইল রিদের দিকে। নিশ্চিল রিদকে দেখে আসিফ তখনো ঠাহর করতে পারছে না আসলে হয়েছে কি? রিদ কি মায়া ভাবির মৃত্যুতে বেহুশ হয়ে গেল নাকি অতিরিক্ত উত্তেজনায় হার্ট অ্যাটাক করলো? কোনটা? আচ্ছা রিদ ভাই কি সত্যিই মেয়েটাকে পছন্দ করতো? হয়তো করতো! নয়তো কেউ যদি কাউকে পছন্দই না করে তাহলে মানুষ তো এমনই আর এতোটা দূর্বল হয় না তাই না? তাহলে বলা যায় রিদ ভাই ভাবিকে পছন্দের থেকেও বেশি কিছু করতো? হয়তো ভালোবাসতো! নিজের চিন্তা ভাবনায় নিজেই চমকে উঠা নেয় আতঙ্কিত চোখে রিদের দিকে তাকাল আসিফ। হায় সর্বনাশ হয়ে যাবে! যদি রিদ মায়াকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে থাকে তো। তাহলে রিদ ভাইকে একা আসিফের পক্ষে সামলানো মুশকিল হয়ে উঠবে। কারণ রিদ খান কারও কথা শুনার মানুষ নয়। আসিফ মনের সংকীর্ণ ভয়ে চিন্তা করলো রিদের মাকে ফোন করবে কিনা? তিনি তো বাংলাদেশেই আছেন মনে হয়। আসিফ কি একবার কথা বলে দেখবে? জানাবে রিদ ভাইয়ের বর্তমান অবস্থার বিষয়টা। নাকি রিদ ভাই রাগারাগি করবে উনার মাকে এই বিষয়ে কিছু জানালে। আসিফ তীব্র দ্বিধায় পরে একটু অপেক্ষা করার চিন্তা করলো? রিদকে হসপিটালের নিয়ে যাবে বলে ভয়ার্ত মুখে রিদের দিকে চাইল। রিদের কাঁধে হাতটা নাড়িয়ে তখনই আস্তে আস্তে করে রিদকে ডাকতে লাগলো ভয়ে ভয়ে। জড়সড় আসিফের অবস্থা কাহিল বিষন্ন চিন্তায়। এসির মধ্যেও কপালের কার্নিশ বেয়ে ঘাম ধরধর। বিষন্ন আসিফের চিন্তা আরও বেড়ে গেল যখন অনেকটা ডাকার পরও রিদের কোনো রেসপন্স পেল না। ভয়ার্ত আসিফ তখনই শিওর হলো যে আসলেই কোনো কিছু ঠিক নেই, দ্রুত রিদকে হসপিটালের শিফট করার দরকার। উত্তেজিত আসিফ যখন দ্রুততা সঙ্গে নিজের পকেট থেকে ফোন নিয়ে অস্থিরতায় কল দিতে চাইল বডিগার্ডদের কিন্তু তখনই মাঝে কল আসলো আরিফের। তাড়াহুড়ো কোনো কিছু না ভেবেই উত্তেজিত আসিফ তৎক্ষনাৎ ফোন রিসিভ করল আরিফের। মায়ার খবরটা একফাকে আরিফ থেকে নিতে চাইল কিন্তু তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে আরিফ সালাম দিয়ে আসিফের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো…

‘ সরি ভাই! আপনি তখন আমায় কল দিয়েছিলেন আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম হসপিটালের কাজে এজন্য ফোনটা সাইলেন্ট ছিল, আপনার কলটাও রিসিভ করতে পারেনি। আপনি কিছু বলবেন ভাই?

অস্থির আসিফ তৎপর মুখ খুলে বলল…

‘ হ্যা! হ্যা! ভাবির লাশ কি তোমরা দাফন করে ফেলেছ নাকি করবে?

ফোনের ওপাশে শান্ত থাকা আরিফ হঠাৎ চমকে উঠল আসিফের মুখে ভাবির লাশের কথাটা শুনে। এক মূহুর্তে জন্য আরিফও বোকা বনে গেল কোন ভাবির লাশ দাফন করার কথা ছিল তার? আর কার কথাই বা জিগ্যেসা করছে আরিফকে? কে বা মরল? তাছাড়া আরিফের জানা মতে আসিফের সম্পর্কে ভাবি হয় এমন কোনো নারীকেই তো সে চিনে না। তাহলে কার কথা আসিফ এতোটা অস্থিরতায় জিগ্যেসা করছে? হতবাক আরিফ আসিফের কথা বুঝতে না পেরে অবুঝ গলায় প্রশ্ন করলো….

‘ কার কথা জিগ্যেসা করছেন ভাই?? কে মারা গেছে? আমিতো কাউকে চিন্তে পারছি না। আমার কাছে তো কারও মৃত্যু সংবাদ আসেনি ভাই।

আরিফের কথায় খানিকটা চমকিত নেয় আসিফ শুধালো..
‘ মানে? তুমি না বললে তুমি হসপিটালের আছো। আর আমার কাছে খবর আসলো তোমার পরিবারের কে জানি মারা গেল আজ। এজন্য মূলত তোমার খোঁজ খবর নিতে কল দিয়েছিলাম আরকি।

‘ না ভাই৷ আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন কোথাও থেকে। আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবারের সবাই ভালো আছে, সুস্থ আছে! কারও কিছু হয়নি। তবে আমি হসপিটালের আছি কারণ আমার বোনের হবু শশুর শাশুড়ী দুইদিন আগে এক্সিডেন্ট করেছিল তাই ওদের নিয়ে আপাতত হসপিটালের আছি। এখন অবশ্য উনারাও ঠিক আছে। তবে আপনাকে যে বা যারা আমার পরিবারের সম্পর্কে বলেছে তাঁরা হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে।

আরিফের কথায় আশার আলো জেগে উঠলো আসিফের মনে। মায়ার কথা উল্লেখ করে শিওর হতে বলল…

‘ তুমি শিওর তোমার পরিবারের সবাই ভালো আছে? না মানে আমি শুনেছিলাম তোমার ছোট বোন মায়া নাকি এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে আজ সকালে?

হতবাক আরিফ খানিকটা বিরক্তবোধ করলো মায়াকে নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর সংবাদ শুনে। সে মাত্র কিছুক্ষণ আগেই মায়া ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। মায়া, জুই দুজনই চট্টগ্রামে চলে যাবে আজ রাতের ট্রেনে। এজন্য সবকিছু বুঝিয়ে বাঝিয়ে দিচ্ছিল আরিফ কিভাবে কি করবে? অথচ তার জীবিত বোনের মৃত্যুর সংবাদ দিচ্ছেন অন্য কেউ। তাও রাজনৈতিক দলে কেউ! এমন ফাউল সংবাদ গুলা কে ছড়া কে জানে? তারপর আবার আরিফের বোনকে নিয়ে কিন্তু কেন? আরিফ তো রাজনৈতি করে না। সে একজন সাধারণ মানুষ তাহলে তার পরিবারের সম্পর্কে কার এতো মাতামাতি থাকতে পারে? তাও তার ছোট অবুঝ বোনকে নিয়ে? আরিফ অনেকটা নাখুশ গলায় আসিফকে শুধিয়ে বলল..

‘ না ভাই আমার পরিবারের সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আমার ছোটও জীবিত আছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগে কথা বললাম। আপনি ভুল শুনেছেন। আমা…

আরিফের কল কেটে গেল ততক্ষণে। কারণ তাড়াহুড়ো কল কেটে দিল আসিফ নিজেই। মায়ার জীবিত থাকার খবরটা রিদকে দিতে উত্তেজিত ভঙ্গিতে রিদের কাঁধ চাপলো আসিফ। তাড়াহুড়ো বলতে লাগল…

‘ ভাই! ভাবির কিছু হয়নি উনি বেঁচে আছেন। আরিফের সাথে মাত্রই আমার কথা হলো ভাবি নাকি ঠিক আছে। নিজের বাড়িতে আছেন। ভাই আমাদের লোক ভাবির সঠিক তথ্য যোগাড় করতে পারেনি। কোথাও ভুল করেছে ওরা। ভাই আপনি শুনছেন? ভাই? ভাই?

রিদকে ধাক্কিয়েও যখন কোনো সাড়াশব্দ পেল না আসিফ। তখন তৎক্ষনাৎ আতঙ্কের নেয় কল লাগালো বডিগার্ডদের। মূহুর্তের মাঝে রিদকে বেহুশ অবস্থায় অফিস থেকে হসপিটালের শিফট করানো হলো ইমারজেন্সিতে। দীর্ঘ সময় নিয়ে রিদের চেকআপ করে রিপোর্ট দেখে, ডক্টর আসিফকে জানাল, ”অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর টেনশনের কারণে কয়েক সেকেন্ড জন্য রিদের হার্ট ব্লক হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে জায়গায়। যার জন্য বিগত কয়েক ঘন্টা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে যাবে রিদের রেস্ট টাইম। তবে রিদকে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়ার জন্য কর্ড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা জাড়ি করলেন ডক্টরা। এতে করে নেক্সট টাইম রিদের প্রাণঘাতীও হতে পারে বলে জানালেন ডক্টরা। অস্থির, হতবুদ্ধি আসিফ শিথিল হয়ে গেল ডক্টরের কথায়। কি পরিমাণ মানসিক চাপে পরলে রিদ খানের মতোন একটা শক্তপোক্ত মানুষের হার্ট ব্লক হয়ে জ্ঞান হারিয়ে সোজা হসপিটালে বেডে পরে থাকে সেটা সত্যি আসিফের ধারণা বাইরে। সে এখনো ধারণা করতে পারছে না রিদের ভিতরকার অস্থিরতাটা। তবে আসিফ অন্তত এতোটা বুঝতে পারছে যে রিদ খানের জীবনে মায়া নামক মেয়েটির প্রভাব অনেক জুড়েই রয়েছে। হয়তো আসিফের ধারণাও নেই এতোটা জুড়ে আছে। চিন্তিত আসিফ রিদের কেবিনের সোফায় বসে থাকল মাথা ঝুকে। বাহিরে বডিগার্ড পাহারায়। পরিবারের কেউ আসেনি। কারণ আসিফ এখনো রিদের পরিবারের কাউকে জানায়নি। জানাবেও না কিছু কারণ বশত। তাছাড়া ডক্টর বলেছে রাতের মধ্যেই রিদের জ্ঞান ফিরবে। রিদের জ্ঞান ফিরলে আসিফ কি জবাব দিবে সেটা নিয়েও আপাতত সে চিন্তিত। মানছে আসিফের একটা ভুলের জন্য তার রিদ ভাই আজ হসপিটালের। কিন্তু এতে তো আসিফেরও কোনো হাত ছিল না। আসিফ তো সত্যি জানতো না সবটা বিষয় গুলো এমন বাজে ভাবে ঘটে যাবে। ওদের লোক যে এতোটা ভুল তথ্য নিয়ে আসবে কে জানতো? এখন আসিফের জন্য সবচেয়ে ভয়ে বিষয় হলো রিদের জ্ঞান ফিরার পর যদি রিদ শুনতে পায় আসিফের দেওয়া সংবাদটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, আসলে এমন কিছুই হয়নি, মায়াও সুস্থ এবং জীবিত আছে, তাহলে নিশ্চিত তান্ডবের ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে আসিফের উপর দিয়ে রিদকে এমন ভুলবাল তথ্য দেওয়ার জন্য। আল্লাহ মালুম তখন আসিফের কি হয়? চিন্তিত আসিফের বিষন্নতা ঘোরে মাঝে কাটল বিগত আট ঘন্টা। রিদের হুশ ফিরল প্রায় আট ঘন্টা পর। তখন রাত একটার কাঁটায়। রিদের জ্ঞান ফিরতে দেখে আসিফ সুস্থির হতে গিয়েও হতে পারলো না তীব্র চিন্তায়। ডক্টর রিদের নরমাল চেকআপ করে যেতেই আসিফ ভয়ে জড়সড় অবস্থা রিদের দিকে তাকায় সত্যিটা বলার জন্য। কিন্তু তখন রিদের হার্ট ব্লক হওয়ার জন্য শ্বাসকষ্ট হয়ে উঠেছিল একটা সময় যার জন্য অক্সিজেন মাস্ক লাগাতে হয়েছে রিদকে। দূর্বলতায় এখনো অক্সিজেন মাস্ক দিয়েই শ্বাস টানছে রিদ। তবে এর মধ্যে হাত পা নাড়িয়ে রিদকে উঠে বসার চেষ্টা করতে দেখে তৎক্ষনাৎ আসিফ এগিয়ে আসল সাহায্য করতে চেয়ে কিন্তু পথেই রিদ নিজের দূর্বল হাতে ইশারায় থামিয়ে দেয় আসিফকে। এবং নিজে নিজেই উঠে বসে বেডে পিঠ ঠেকিয়ে, তৎপর মুখ থেকে মাক্স খুলে গলায় ঝুলায়। বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ঘাড় বেঁকে আসিফের দিকে শূন্য নিশ্চল দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ছোট শব্দে বললো…

‘ গাড়ি বের কর আসিফ! আমি বের হবো!
চমকিত নেয় আসিফ শুধালো…
‘ কেন ভাই? আপনার শরীর তো এখনো দূর্বল!
‘ তোরে বাড়তি কথা বলতে বলি নাই আমি। দ্রুত গাড়ি বের করতে বলছি! আশুগঞ্জ যাব আমি!

রিদের গাড়ি বের করার কারণটা বুঝতে পেরে মূহুর্তে ভয়ে চুপসে যায় আসিফ। মায়া খোঁজে রিদ যে আশুগঞ্জ অবধি যেতে চায় সেটা ঠিক বুঝল আসিফ। কিন্তু রিদ তো আর জানে না মায়া আসলেই জীবিত আছে, মরে নাই। ভয়ার্ত আসিফ ভয়ে ভয়ে রিদকে
মায়ার জীবিত হওয়ার সত্যিটা জালানো। এবং আতঙ্কের নেয় রিদের গম্ভীর মুখের দিকে সময় নিয়ে তাকিয়েও আসিফ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারলো না রিদের ভিতরকার অবস্থা। মায়ার জীবিত হওয়ার বিষয়টা শুনেও রিদকে কোনো রিয়েক্ট করতে না দেখে আসিফ আরও বেশি ভয় করলো রিদের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টা নিয়ে। নিশ্চয়ই আসিফের কপালে দুঃখ আছে এজন্য রিদ হঠাৎ করে এমন গুমরে চুপ হয়ে আছে।

শান্ত থাকা রিদ আরও শান্ত হয়ে গেল। হঠাৎ গা ছেড়ে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করে পরে রইল বেশ কিছুক্ষণ। যেন কোথাও স্বস্তিরের সন্ধান খোঁজে পাচ্ছে রিদ। জড়সড় আসিফ খানিকটা দ্বিধায় পরে গেল হঠাৎ রিদকে শান্তি মতো শুয়ে পরতে দেখে। আসিফ ধারণায় আসলো হয়তো রিদ ওর কথা শুনতে পায়নি এজন্য কিছু বলেনি। তাই আসিফের দায়িত্ব রিদকে পুনরায় একিই কথা গুলো আবারও বলা। আসিফ অনেকটা রয়েসয়ে দ্বিধা কাটিয়ে জড়সড় হয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থেকে আবারও রিদকে ডাকতে লাগলো পুনরায়। এবার খানিকটা উচু স্বরেই ডাকল। কারণ আসিফের ধারণা রিদ হয়তো ওর কথা ঠিকঠাক শুনতে পারছে না হার্ট ব্লকের জন্য, কানে সমস্যা হচ্ছে রিদের তাই। কিন্তু আসিফ ভুল প্রমাণিত হলো তখন যখন রিদের দক্ষ হাতে থাপ্পড় পরলো ডান গালে। স্তব্ধ আসিফ গালে হাত দিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে থাকল বোকার মতোন। জীবনে এই প্রথম মারলো রিদ ভাই ওকে, তাও এতো বছরের সঙ্গী হয়ে কাজ করার পর। আসিফকে ঘোরের মাঝে ফেলেই রিদ কেবিন থেকে বের হয়ে গেল ততক্ষণে খালি পায়ে অক্সিজেন মাস্ক, স্যালাইনের নল টেনে খুলে ফেলে। রিদ এমন ক্ষোভে কোথায় গেল আসিফ জানি না। তবে সেও তৎক্ষনাৎ রিদের পিছন পিছন ছুটলো রিদের চলে যাওয়া দেখে গালে হাত দিয়ে। আর রিদকে পিছন ডেকে বলতে লাগলো ‘ ভাই কোথায় যাচ্ছেন আপনি এই অসুস্থ শরীরে? ডাক্তারা বলেছে আপনাকে রেস্ট নিতে। ভাই প্লিজ যাবেন না আপনি। ভাই!

রিদ শুনলো না আসিফের বাড়ং। বরং দূর্বল শরীরের বের হয়ে গেল তখনই হসপিটাল থেকে। চিন্তিত আসিফ সেও রিদের পিছন পিছন দৌড়াল গাল হাত দিয়ে। আর যায় হোক রিদ ভাইকে তো আর একা ছাড়া যাবে না এই অবস্থায় তাই না? তাহলে বিপদ তো আরও বাড়বে। তাছাড়া দোষটা তো আসিফের ছিল বেশি। তারই আরও ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়া উচিত ছিল মায়া ভাবির সম্পর্কে। তবে আসিফের সাথে সাথে অপরাধী তো আরও একজন ছিল যে আসিফকে এমন ভুলবাল তথ্য যোগাড় করে দিল সে?এবার তাঁকেও ছাড়বে না আসিফ। রিদের পিছন পিছন যেতে যেতে আসিফও নিজের এসিস্ট্যান্ট মাহফুজকে তার পাওনা থাপ্পড়টা ঠাস করে মেরে গেল। আর হুমকি ধামকিও স্বরূপ এক ছুট বুঝিয়ে গেল, আসিফকে এমন ভুলভাল তথ্য দেওয়ার জন্য এই থাপ্পড়টার উপযোগী ছিল সে। হতবুদ্ধি মাহফুজ সেও গালে হাত দিয়ে হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকল আসিফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। মূলত মাহফুজ আসিফের পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট হয়। আসিফ যাহ বলে তাই করতে হশ তাকে। আর এজন্যই বিগত কয়েক আগে তাঁকে বলেছিল যে কোনো মায়া মেয়ের সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করতে এবং সে সেটাই করে। লোকাল লোক লাগিয়ে মায়া মেয়েটির সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করেছিল মাহফুজ। কিন্তু ফাজিল ছেলে গুলো যে উনাকে মেয়ে সম্পর্কে এমন ভুল তথ্য দিবে কে জানে? আজ মাহফুজের গালের আসিফের দেওয়া থাপ্পড়টা তাহলে ঐ ছেলে গুলোও পাওনা হয়ে গেল। কারণ ওদের ভুল তথ্যের জন্যই তো মাহফুজ আসিফের হাতের শক্ত থাপ্পড় খেল। তাই মাহফুজও ধ্রীর মনে ঠিক করে নিল কাল সকালেই সব কয়েকটাকে একটা করে থাপ্পড় লাগাবে শুধু আজকের থাপ্পড়টার জন্য হুহহ।
~~
সকাল ছয়টা পনেরো! সারারাত ভর ট্রেন জার্নির করে মাত্রই চট্টগ্রামের ভাড়া বাসায় ফিরল মায়া আর জুঁই। সঙ্গে রয়েছে মায়ার মায়া সেলিম সাহেব। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে মুরাদপুরে মায়াদের বাসা মাত্র বিশ মিনিটের রাস্তা। মায়া আর জুঁই যখন স্টেশনে পৌছায় তখন সেখানে পূর্ব থেকেই উপস্থিত ছিল মায়ার মামা সেলিম সাহেব। মূলত উনিই মায়া আর জুঁইকে সেইফলি বাসায় পৌছে দিয়ে যাবেন জেএসসি মোর উনার নিজের ফ্যাক্টরিতে। ব্যবসায়িক মানুষ তিনি। তাই সময়ের পাক্কা হিসাব উনার কাছে আছে। সকাল সকাল মায়াদের বাসার গেইটের সামনে রিকশা থামতেই একে একে নিজেদের ব্যাকিংপত্র নিয়ে নেমে আসল মায়া আর জুঁই। অপর রিকশা থেকে সেলিম সাহেব ভাড়া মিটিয়ে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে আসল দুই ভাগ্নীর দিকে। কাপড়-চুপড় ব্যাগ ছাড়াও এক্সট্রা খাবারের ব্যাগ ছিল অনেক। আশুগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা এসব। সেলিম সাহেব মায়াদের রিকশার ভাড়া মিঠিয়ে দিয়ে কিছু ভারি ব্যাগ নিয়ে হাটা ধরলো বাসা পথে। পিছন পিছন জুইও হাটলো কিছু ব্যাগ গুছিয়ে। বাকি পিছনে রয়ে গেল মায়া। যার জন্য মায়া নিজের ভাগের ছোট ছোট কাপড়ের ব্যাগগুলো একত্রে গুছিয়ে নিচ্ছিল নেওয়ার সুবিধার্থের জন্য। এজন্য মূলত মায়া কোমর ঝুঁকে ব্যাগ গুলো একত্রে করার সময় হঠাৎই কোথায় থেকে কেউ একজন মায়ার ডানহাতের বাহু হ্যাচকা টানে মায়াকে সোজা করতে করতে মায়া মুখে অস্পষ্ট স্বরে আওড়াতে লাগল,, আরেহহ! আরেহহ কে! বলার মাঝেই কষে থাপ্পড় বসাল মায়ার ডানগালে। হতভম্ব মায়া এক মূহুর্তের জন্য কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না আসলে মায়ার সাথে কিছু হয়েছে। বরং তব্দা খেয়ে যাওয়ার নেয় মায়া ডানে ঝুঁকে পরে বাম গালে হাত ছুঁয়াতে যাবে তখনই অপর বাহু টেনে মায়াকে তৎক্ষনাৎ সোজা করতে করতে অপর গালে থাপ্পড় বসাল মায়ার। পরপর দুই দুইটা থাপ্পড়ের দাপটে মূহুর্তের মাঝে তব্দা খেয়ে গেল মায়া। শরীর টলিয়ে উঠে চোখে অন্ধকার দেখা দৃষ্টি তুলে কোনো রকম সামনে তাকাতে চাইল। তখনই মায়ার হাল্কা আবছা দৃষ্টিতে ভিড়লো কারও রাগান্বিত লাল ক্ষুদ্ধ মুখদ্বয়। মায়া ভালো করে চোখ টেনে লোকটার দিকে তাকাতে চাইলে পুনরায় দাবাং হাতের থাপ্পড় পরলো মায়ার টনটন করা ব্যথার গালে তাও একই ব্যক্তি থেকে। পরপর তিনবারের থাপ্পড়ে গালে চাপাসহ নড়ে উঠে মায়ার। ব্যথা কাতরে উঠে সহ্য করতে না পেরে তখনই হু হু শব্দ করে কেঁদে উঠে রাস্তায়। কে বা কারা এমন নির্দয় ভাবে মায়াকে মারছে তাও জানে না মায়া। তবে লোকটার থাপ্পড়ের দাপটে মায়া ঠিকঠাক চোখেও দেখছে না। শুধু কানে একটু করে আসছে কারও রাগারাগি ফুস ফুস নিশ্বাসের শব্দ। মায়া ধরে নিল সামনের মানুষটারই হয়তো এমন রাগান্বিত ফুসফুস নিশ্বাসের শব্দটা হবে। ক্রন্দনরত মায়া দু’হাতে নিজের দুগাল আঁকড়ে ধরে হু হু শব্দ করে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে মায়া কয়েক সেকেন্ড মধ্যে নিজের চোখ তুলে সামনে তাকাতেই মায়ার চোখের দৃষ্টিতে ভিড়লো রিদের রাগান্বিত হিংস্র মুখটা।

#চলিত….

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

১৪
পরপর তিনটা থাপ্পড়ে গালের মাড়িসহ নড়ে উঠল মায়ার। ব্যথা কাতরে উঠে সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষনাৎ কেঁদে উঠল হু হু শব্দে। কে বা কারা মায়াকে এমন নির্দয় ভাবে মারলো তাও জানে না মায়া। লোকটার পরপর থাপ্পড়ের মায়া ঠিকঠাক দেখার সুযোগটাই পায়নি মানুষটাকে। তবে যেটা মায়ার কানে এসেছে সেটা হলো কারও রাগান্বিত ফুস ফুস নিশ্বাসে শব্দ। ক্রন্দনরত মায়া দু’হাতে দুগাল চেপে ধরেই হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে ভেজা দৃষ্টি তুলে তাকাতে চাইল সামনের মানুষটার দিকে। তাকালও! কিন্তু তৎক্ষনাৎ মায়ার সেই ভেজা দৃষ্টিতে ভিড়লো পরিচিত রিদের রাগান্বিত হিংস্র মুখটা। রিদকে দেখেই মায়া কান্নাটা আরও বাড়লো ঘোর অপমানে। লজ্জিত মায়া মাথা নত হয়ে আসতেই রিদ দক্ষ হাত চালান করলো মায়ার বাহু টেনে কাছে টানায়। মূহুর্তে মাঝেই মায়ার বাহু হেঁচকা টানে মুখোমুখি করে, দাঁতে দাঁত পিষলো রিদ। তপ্ত গলায় শুধালো মায়াকে…

‘ মিথ্যাবাদী নারী! একটার পর একটা মিথ্যা, কন্টিনিউসলি এতো মিথ্যা আসে কোত্থেকে তোর? জবান খুললেই মিথ্যা বলিস। এতো মিথ্যা বলতে বলতে ক্লান্ত হুসনা? নাকি শরীরের রক্ত মাংস পযন্ত মিথ্যা দিয়ে গড়ে ফেলেছিস বেয়াদব।

রিদের কথায় ঘোর অপমান বোধ করলো মায়া। প্রথমমত সে কিছুই করেনি। আর না কিছু বুঝতে পারছে কিসের জন্য এতোগুলা থাপ্পড় খেল সে? কি থেকে কি হলো তাও বুঝতে পারছে না। সকাল বেলা স্টেশন থেকে মামার সাথে বাসায় আসলো। রিকশা থেকে নেমে মালপত্র নিয়ে জুইও মায়ার মামা বাসার ভিতরে গেল। এখন মায়াও তাদের পিছনে বাসায় ভিতরে যেতো কিন্তু হঠাৎ ঝড়ের মতোন রিদ কোথায় থেকে এসে, কেন মায়াকে এতোগুলো থাপ্পড় মারলো তাও জানে না মায়া। আর না রিদের এখনকার কথা গুলোর মানে বুঝতে পারছে সে। মায়া যতটুকু মনে পরে সে রিদের সাথে বিগত মাস ধরে দেখা-সাক্ষাৎ বা কোনো রকম কথা হয়নি তাহলে মায়া মিথ্যাটা বললো কখন রিদকে তাও মনে পরছে না। ক্রন্দনরত মায়া ঘোর অপমানে চেতে উঠল, মোচড়ামুচড়ি করে রিদের হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিতে চাইল। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে রিদের উদ্দেশ্য জোড় গলায় বলল…

‘ ছাড়ুন আমাকে অসভ্য নেতা! আমি যতো খুশি ততো মিথ্যা বললো তাতে আপনার কি? আপনি শুনতে আসেন কেন? আপনি কে আমাকে মারার? নেতার ছেলে হয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? যা খুশি তাই করবেন আর আমরা কিছু বলতে পারবো না? এমন বালের এলাকায় না থাকলে কি হবে আমার? আমি আবার চলে যা…

মায়া আতঙ্কের নেয় উহুম! উহুম! শব্দ করে উঠল তৎক্ষনাৎ। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আসলো মূহুর্তেই। ছটফট করার নেয় দুহাতে আঁকড়ে ধরলো রিদের একহাত গাল থেকে ছাড়াতে চেয়ে। কিন্তু মায়ার ছটফটে রিদের হাত আরও শক্ত হয়ে আসলো মায়ার গালের মাড়ি চেপে ধরায়। মায়া গোঙ্গাল। ছটফট করার নেয় রিদের হাত থেকে গাল ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদ আরও তেতে উঠল। রাগে রি রি করে শুধালো…

‘ আমি কে তাই না? আমি তোর জম! তোকে মারার জন্য আমার বাপের ক্ষমতার দরকার নাই। সোজা তোর ঘরে গিয়ে মেরে আসবো। তোর কি মনে হয়? তুই পালিয়ে বাঁচবি? এই বালের এলাকা ছেড়ে কই পালাবি তুই? কোন দেশে শুনি? তুই তো এই দুনিয়া ছাড়লেও আমি তোকে রেখায় দিব না। পরকালেও আমার দাবি থাকবে প্রথমে। তোর তো সব পথই বন্ধ!

ছটফট করার নেয় মায়া হঠাৎই রিদের হাতে কামড়ে ধরলে রিদ আহ! শব্দে তৎক্ষনাৎ হাত ঝাড়া দিয়ে মায়া গাল ছেড়ে দিতে মায়া চেতন গলায় শুধালো…

‘ আমি মরলেও যখন রেখায় পাব না তখন আপনি মরে যান আর আমাকে রেখায় দেন। তারপরও রেখান দেন। আমি আর পারছি না। আল্লাহ ওয়াস্তে আমাকে রোজ রোজ অপমান করা ছাড়ুন প্লিজ।

মায়ার কথায় রিদ পুনরায় মায়ার বাহু শক্ত হাতে কাছে টেনে রাগে কটমট করে বললো…

‘ তুই তো প্রথম থেকেই চাইতি আমি যেন মরে যায়। সেজন্য আহত অবস্থায় সেদিন রাতে একা ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলিস। আজও তোর জন্য মরতে মরতে বাঁচলাম। তোর কি মনে হয় আমি মরলে তোকে দুনিয়াতে একা রেখে যাব তোর নাগরের সাথেনসংসার করতে? আমাকে তোর দয়ালু মনে হয়? আমি মরলেও তোর সলিড বিহীত করে মরতাম যাতে দ্বিতীয় কোনো পুরুষের সঙ্গ তুই নিতে না পারিস। আরেকটা কথা! এতদিন শুধু সন্দেহ ছিল, এখন শিওর হয়ে বলছি, আমার সাথে ত্যাড়ামি করবি তো সোজা প্রাণে মরবি। মিথ্যা বলবি না। পালানোর চেষ্টা তো মোটেও করবি না। কারণ লাভ নেই। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্ম কুন্ডলি পযন্ত আছে আমার কাছে। তাই বারবার পালানোর সুযোগ পাবি না।

রিদের সব কথা গুলোই কেমন মাথা উপর দিয়ে গেল মায়ার। সবকিছু ধোঁয়াশার নেয় ঠেকল। মায়ার যতটুকু মাথায় আটলো সেটা হলো রিদ সাংঘাতিক বাজে আর অসভ্য প্রকৃতির মানুষ। রিদের কাউকে অপমান করতে কারণ লাগে না। ক্ষমতা দাপটে এমনি চড়িয়ে বেড়ায়। মানুষকে মানুষ মনে করে না যেমনটা মায়াকে মনে করে না সে। মায়াকে অকারণে অহেতুক অপমানিত করে রিদ শান্তি পায়। যেন মায়া রিদের চিরশত্রু হয়।

‘ কিসের শত্রুতামি আপনার আমার সাথে? কেন বারবার আমাকে অপমান করতে চলে আসেন?

রিদের পরিচয় সম্পর্কে মায়াকে কিছু বললো না। বরং রিদ আগের নেয় কটমট করে শুধালো…

‘ তোর সাথে আমার সারাজীবনের শত্রুতামি। চিরশত্রু হুস তুই আমার। হইছে এবার? যা বাসায়।

কথা গুলো বলতে বলতে রিদ মায়াকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে উল্টো পায়ে হেটে গাড়ি দিকে চলে যায়। ঠিক যেই তেজে এসেছিল একই তেজে আবারও গিয়ে বসলো গাড়ির পিছনের সিটে। আসিফ রিদকে গাড়ির পিছনে বসতে দেখে লাফ দিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল স্টিয়ারিং চেপে। মূলত সে এতক্ষণ যাবত গাড়িতে বসে নিরব দশক হয়ে ছিল রিদের রাগ মায়ার প্রতি দেখে। আসিফ বুঝতে পারছে রিদের এতো রাগের কারণ। হয়তো এই মূহুর্তে মায়ারও জানা নেই রিদ কেন এতো রাগ করলো তবে একটা সময় ঠিকই বুঝতে পারবে মায়া, তখন আজকে দিনটার কথা খুব মনে পরবে হয়তো। আসিফ প্রথমে রিদের পিছন পিছন গাড়ি থেকে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু পথি মধ্যে রিদ মায়াকে থাপ্পড় লাগাতে দেখে আর সাহস করে বের হয়নি। বরং আধখোলা গাড়ির দরজা চাপিয়ে লাগিয়ে চুপচাপ গাড়িতে বসে পরে নিরব দশক হয়ে। কারণ সে জানতো আপাতত তার ঐখানে কোনো কাজ ছিল না। তাছাড়া সে যদি রিদের পিছন পিছন যেতো তাহলে মায়ার থাপ্পড় গুলোর সাথে সাথে আসিফও কয়েকটা থাপ্পড়ের ভাগ পেত রিদ থেকে। আসিফ অলরেডি একটা থাপ্পড় খেয়েছে রিদের হাতে রাতে। তাই এখন আর পাকামো করে রিদের পিছন পিছন গেল না। চুপচাপ আসিফ রিদের ভয়ে মুখ বন্ধ রেখে গাড়ি স্টাট করলো। ডাইভিং স্টিয়ারিং গোরাতে গোরাতে মিরর দিয়ে এক পলক দেখে নিল পিছনে বসা রিদকে। রিদ সিটে পিঠ ঠেকিয়ে চোখে উপর হাত ভাজ করে রেখে শুয়া। সারারাত জার্নি করে ক্লান্ত বুঝায় যাচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মুরাদপুর পযন্ত টানা দশ ঘন্টা রাস্তা আট ঘন্ট গাড়ি চালিয়ে দ্রুত এসেছে পৌঁছিয়েছে রিদ শুধু মায়াকে ধরতে। প্রথমে ওরা আশুগঞ্জ গিয়েছিল মায়ার খোঁজে কিন্তু পথি মধ্যে কৌশল করে আসিফ আরিফকে ফোন করে জেনে নেয় মায়া বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। মায়া চট্টগ্রামে আসছে জেনে তারপর রিদও গাড়ি স্পিড বাড়িয়ে দ্রুত এখানে এসে পৌছাল।
~~
সকাল সকাল রিদের গাড়ি দেখে দারোয়ান দ্রুত গেইট টেনে খুলে দিতেই আসিফ গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। বাড়ির সামনেই মালি সাথে দাঁড়িয়ে আরাফ খান পাইপ লাগিয়ে গাছে পানি দিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই চমকে উঠে সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো রিদের কালো মার্সিডিজ গাড়িটি। চমকিত আরাফ খান কপাল কুঁচকে হাতে ঘড়িটা দেখতে চাইল কয়টা বাজে। কিন্তু খালি হাত দেখে উনার মনে পরলো ঘড়ি এখনো পড়া হয়নি হাতে। রাতে খুলে রেখেছি আর ফরজের নামজ পর পড়া হয়নি। কিছুক্ষণ আগেই মাত্রই ফজরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে আসল উনি। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি সাথে সাথে এখনো মাথায় টুপি রয়েছে। উনি বিষন্নে একফাকে উজ্জ্বল পরিষ্কার আকাশটাও দেখে নিল বুঝতে পারলো এখনো সূর্য উঠেনি। এতো ভোর সকাল সকাল রিদের গাড়ি তাও খান বাড়িতে? বিষয়টা চরম আশ্চর্য জনক। যে ছেলেকে ফোনের পর ফোন করেও পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামেও আসতে চায় না বাবার কাজে। সেই ছেলে আপোষই আজ এতো সকালে দাদার বাড়ির চৌকাঠ মাড়ল? বিষন্নে আরাফ খান পাশের মালিকে প্রশ্ন করে বলল…

‘ এই আব্দুল! বাজে কয়টারে বলতে পারিস?

তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো আব্দুলের…
‘ না বড় স্যার! জানি নাতো।

আরাফ খান বিরক্ত চোখে এক পলক আব্দুলকে দেখে নিল। ঘাড় ঘুরিয়ে পুনরায় রিদের গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখল রিদ খালি পায়ে গাড়ি পিছনের দরজা খুলে নামছে। রিদকে বিধস্ত আর এলোমেলো অবস্থায় খালি পায়ে গাড়ি থেকে নামতে দেখে মূহুর্তে বিষন্নে হতবাক, হতবুদ্ধি হয়ে গেল আরাফ খান। অবাক করা চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো রিদের পায়ে দিকে? এতো সকাল সকাল রিদ খালি পায়ে কোথায় থেকে আসলো তাও বুঝতে পারছে না উনি। আরাফ খান রিদকে কিছু জিগ্যেসা করবে তাও সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ রিদ গাড়ি থেকে নেমে সোজা হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। আরাফ খান জোর গলায় হাঁক ছেড়ে রিদকে আটকাতে চাইলো ডেকে। কিন্তু রিদ থামলো না। শুনেও না শুনার মতো করে হনহনে চলে যাচ্ছে বাড়ির ভিতরের দিকে। আপাতত তার ফ্রেশ হয়ে ঘুম দরকার। রিদকে থামতে না দেখে আরাফ খান পুনরায় ডেকে রিদের উদ্দেশ্যে বললো…

‘ এই রিদ কই যাচ্ছিস এদিকে আয়। আমার তোর সাথে সিরিয়াস কথা আছে। এতো সকাল সকাল খালি পায়ে কোত্থেকে উদয় হয়েছিস তুই? তোকে দেখে মনে হচ্ছে ছেঁকে খেয়ে বাঁকা হয়ে আছিস। সত্যি করে বল কয়টা মেয়ের ধোঁকা খেয়ে জুতা ফেলে এসেছিস রাস্তায়। সত্যি না বললে কিন্তু আমি তোর বাপ আর দাদীর কাছে বলে দিব তোর ছেঁকা খাওয়া কথা মনে রাখিস।

রিদ আরাফ খানের কথা কানে না তুলার মতোন করে সোজা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। সে জানে আরাফ খানের ডাকে সারা দিলে নানান উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবে অহেতুক যুক্তি দেখিয়ে। আসিফ গাড়ি পাক করে রিদের পিছন পিছনই যাচ্ছিল। আরাফ খান রিদকে না পেয়ে আসিফকে ডাকল। আসিফ আরাফ খানের ডাকে আমতা আমতা করলো। ইতস্তত বোধ করলো কাছে যেতে। আরাফ খান আসিফকে আমতাআমতা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমক স্বরে বলল…

‘ এই রিদ ভাইয়ের বলদ এদিকে আয়। ডাকছি না আমি। আয় বলছি।

আসিফ দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেল আরাফ খানের কাছে। সে জানে তাকে এখন আরাফ খান নিজের কথায় ফাঁসাবে। সঠিক উত্তর না দিলে একছুট বোকাও খেতে হবে তাঁকে। আবার সত্যি বললেও ঝামেলা, রিদ ভাই আস্ত রাখবে না ওকে। আজতো শুধু একটা থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু এইবার সত্যি বললে রিদ ভাই সোজা গুলি করে উপরে টিকেট ধরিয়ে দিবে আসিফকে। আসিফ মনে মনে ভিষণ ভয় পেল ফ্যাসাদের পরিস্থিতিতে পরে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না বরং আরাফ খানের সামনে এসেই বোকার মতোন হাসলো। আসিফের বোকা হাসি দেখে আরাফ খানের সন্দেহ আরও ঘাড় হলো। আসিফকে শাসিয়ে বলল…

‘ বলদের মতোন হাসছিস কেন? আমি কি তোরে কমেডি দেখাইতে ডাকছি হ্যাঁ?

আসিফ তৎক্ষনাৎ মুখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে ‘না বুঝালো। আরাফ খান আসিফের মাথা নাড়ানো দেখে ফের বললো…

‘ মুখে কি তালাও মারছোত?

আসিফ তাড়াহুড়ো বললো…

‘ না দাদাভাই!

‘ ওহ আচ্ছা তালা নাই তাই তো? শিওর তুই?

‘ জ্বি দাদাভাই!

‘ গুড! এবার তলাবিহীন জবানে সুন্দর করে ফটাফট বলতো দেখি তোরা দুই বলদ এতো সকালে কোত্থেকে এসেছিস?

যেটার ভয়ে ছিল সেটাই হলো। আরাফ খান আসিফকে এমন প্রশ্ন করবে সে প্রথম থেকেই জানতো এজন্য তো সে আসতে চায়নি। রিদের পিছন পিছন পালিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আরাফ খানে ঈগলের চোখে ঠিকই ধরা পরে গেল। আসিফ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বোকার মতোন হেঁসে বললো…

‘ কোথাও থেকে আসিনি দাদীভাই। এমনই এমনই আরকি।

‘ এমনই এমনই কি? আকাশ থেকে পরেছিস মাটিতে?

আমতাআমতা করে বললো আসিফ…
‘ না আসলে দাদীভাই আমরা…

আসিফের কথা শেষ করতে না দিয়ে ফের আরাফ খান বললো…

‘ আমরা আমরা কি? নিশ্চিত মারামারি করে এসেছিস তোরা। রিদের অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তোদের সাথের গুরু বডিগার্ড গুলা কই?? আনিস নি সাথে?

আরাফ খানের কথা মনে মনে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল আসিফ সত্যি লুকাতে পেরে। আরাফ খানের কথার রেশ টেনে বললো…

‘ আমাদের বডিগার্ড গুলো সবাই রাস্তায় আছে দাদাভাই। ঘন্টা দুয়েকের ভিতরে চলে আসবে হয়তো। আসলে আমাদের কোম্পানির কাজ ছিল চট্টগ্রামে, এজন্য আমি আর ভাই আগে আগে চলে এসেছিলাম রাতে আরকি।

‘ তাহলে তোর আর তোর ভাইয়ের এমন চোরের দশা কেন? কোম্পানির কাজে আসলে তো মানুষ বাবু হয়ে আসে। কিন্তু তোদের দেখে মনে হচ্ছে চুরি করে ধরা খেয়ে কোথাও জুতা ফেলে এসেছিস।

‘ না দাদাভাই! আসলে রিদ ভাইয়ের জুতা হঠাৎ ছিড়ে যাওয়াতে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম। মধ্যে রাত ছিল বলে নতুন জুতা আর নেওয়ার হয়নি।

‘ আমার কাছে আলু বেচত? রিদকে জীবনে নতুন জুতা ছাড়া পুরাতন জুতা পরতে দেখি নাই। তাহলে রিদের জুতা ছিড়বো কিভাবে? সত্যি বল যে মারামারি করতে গিয়ে জুতা কোথায় ফেলেছিস বলতে পারিস না।

আরাফ খানের কথা হাসালো আসিফ। মাথা চুলকিয়ে বললো..

‘ এতো জুতা জুতা করছেন কেন দাদাভাই?
আপনি রিদ ভাইয়ের জুতা দিয়ে কি করবেন?

‘ তোরে পিঠাইয়া বলদ থেকে মানুষ বানাব রিদ ভাইয়ের চামচা। যা ভাগ! রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ, নাস্তা কর।

#চলিত….