#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
২০
ঢাকা রাতের শহরটা চমৎকার হয়। ভালো লাগা কাজ করে। আধার রাতের কালোয় মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোন সাংঘাতিক ব্যাপার থাকে জড়িয়ে নিস্ক্রিয় প্রহরে। তবে সেটা যদি গভীর রাতের নিস্তব্ধ কোনো মূহুর্ত হয় তখন। কিন্তু সন্ধ্যা নাগাদ সময়টা তেমন চমৎকার হয় না। বরং ভিষণ ব্যস্ততা আর কোলাহলময় যানজটে আছন্ন থাকে পরিবেশ। এই সময়ে মানুষ নানা কাজে বের হয় রাস্তায়। নৃত্য দিনের কেনাকাটা আর বাজারজাতের তালিকা থাকে হাতে। এমনই এক সন্ধ্যায় রিদের জন্য চমৎকার একটা মূহুর্তে সৃষ্টি হয় তাও অল্প সময়ের জন্য। খনিকের জন্য রিদের ভিতরকার মনটাকে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোন অশান্ত করল কেউ। রিদ সবেমাত্র রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়েছিল মিটিং শেষ করে। রোজকার মতো আসিফ সঙ্গে ছিল তবে বডিগার্ড ছিল না। তাদের সঙ্গে ছিল আরও দুজন অফিস সহকারী। রিদ গাড়িতে চড়ে বসতে বসতে আসিফ বাকি দুজন স্টাফগুলোকে বিদায় জানাল ততক্ষণে। হাতের ফাইল গুলো নিয়ে ডাইভারের পাশের সিটে বসতে গাড়ি চলতে শুরু করল। রিদ আসিফকে গাড়ির এসি পাওয়ার বাড়াতে বলে গায়ের কোট খুলে পাশে ফেলল। গলার ট্রাই খুলে কোটের উপরের রেখে গলার শার্টের দুটো বোতাম খুলে দিল গরমে। শার্টের হাতের কব্জির বোতাম গুলো ছাড়িয়ে কুইন পযন্ত টেনে শার্ট ভাজ করার মধ্যে হঠাৎ রিদের ফোনে কল আসল। খুব স্বাভাবিক নেয় আসিফ সেই ফোন রিদের দিকে বাড়িয়ে দিতে গিয়ে বেখেয়ালি চোখ ফোনের স্ক্রিনে পরতেই খানিকটা চমকে উঠলো। কৌতূহল দমাল তারপরও রিদকে কিছু বলতে না পেরে ফোনটা এগিয়ে দিতে দিতে কলটা ততক্ষণে কেটেও গেল। এতো ছোট কলের রিংটোনে রিদ, আসিফ দুজনই বুঝতে পারল এটি সম্পূর্ণ কল দিল না বরং অর্ধ মিস কল ছিল সেটা। রিদ অপ্রয়োজনীয় কল ভেবে আসিফ থেকে ফোন নিয়ে সেইভাবেই কোটের উপর রেখে দিল। কিন্তু আসিফ নিজের কৌতহল দমাতে না পেরে সেদিকে চেয়ে হাসফাস করে রিদকে বলল…
‘ ভাই কলটা মনে হয় জরুরি ছিল।
রিদ প্রতিক্রিয়া দেখাল না তেমন। ভিষণ ক্লান্ত সে। তাছাড়া মিস কলের কলব্যাক করার মতোন সময় নেই। আপাতত তার একটু রেস্ট চায়। তাই শার্টের হাত দুটো গুটিয়ে ভাজ করতে করতে সেভাবে গম্ভীর স্বরে বলল…
‘আমি ক্লান্ত এখন! পরে চেক করে নিব।
রিদের শেষ বাক্য শেষ করার সাথে সাথে আরও একটি মিস করল আসল একই নাম্বার থেকে। পরপর আরও দুটো। এবার রিদ বেশ বিরক্ত হলো। এমনিতে সে ক্লান্ত তারপর আবার মিস? অদ্ভুত! রিদের পারসোনাল ফোনে কল করার মতোন তার পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কেউ নেই। রিদ তার পার্সোনাল নাম্বার পরিবারের বাহিরের যেখানে কাউকে দেয়নি সেখানে আননোন নাম্বারে তার ফোনে কল আসার প্রশ্ন উঠে না। তাছাড়া রিদের বাবা-মা, ভাই, দাদা-দাদি সবাই রিদকে সরাসরি কল দেয় মিসকল নয়, তাও রাত দশ-টার পর। এই অসময়ের ভরসন্ধ্যায় রিদকে আর যায় হোক তার পরিবারের কেউ অন্তত কল করবে না, এই বিষয়ে সে নিশ্চিত। তাহলে এই দয়াবান মানুষটা কে হতে পারে? যে তাঁকে কল নয় সোজা মিস কল দিচ্ছে একের পর এক অভদ্রের মতোন। রিদ ভাবল সে ফোনটা উল্টে দেখবে না মিসকল দাতাকে। কিন্তু ফোনের অপাশের ব্যক্তিটা এবার যেন মিসকল নয় সত্যি সত্যি রিদকে একটা সম্পূর্ণ কল করল। রিদ খানিকটা অভূক্ত নিয়ে ফোনটা উল্টে হাতে নিতেই খানিকটা চমকাল। সূচক চোখে তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল আসিফের দিকে। আসিফ আপাতত রিদের দিকেই চেয়ে ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে রিদ তাকানোতে তৎক্ষনাৎ সামনে ঘুরে গেল চোরের মতোন। রিদ স্থির চিত্তে ফোন চেপে স্ক্রিনের নামটার দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড। গুটিগুটি অক্ষরে ভাসমান লেখা ‘বেয়াদব বউ’। যার অর্থ কলটা তাঁকে তার বেয়াদব বউ করেছে। কিন্তু রিদের পারসোনাল নাম্বারটা পেল কোথায়? রিদতো দেয়নি। তাহলে কার কাছ থেকে নিল? আর রিদকে বা কি মনে করে কল দিতে পারে? রিদের যতোটুকু মনে আছে সে এখনো পযন্ত তার বেয়াদব বউয়ের অপছন্দের লিস্টে শত্রুর হয়েই পরে আছে। তাদের লুকোচুরি সম্পর্কটা এখনো প্রকাশ পায়নি বউয়ের কাছে। তাহলে হঠাৎ করে রিদকে কেন ফোন দিবে? রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে ফোনটা রিসিভ করে কানে তুলল। আপাতত কথা বলা যাক। কি কারণে ফোন দিয়েছে এই মহিলা নিজেই বলবে রিদকে। রিদ ফোনটা রিসিভ করে স্বভাবসুলভ গম্ভীর গলায় ‘ হ্যালো’ বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে মায়া হতিতম্বি করে রিদকে সালাম দিল…
‘ আসসালামু আলাইকুম।
‘ ওয়াইকুম সালাম। কে বলছেন?
গম্ভীর গলায় সুন্দর ভাবে সালামের উত্তর দিয়ে রিদ অপরিচিত সাজল মায়ার কাছে। কে ফোন করেছে তা জানতে চাইল। কিন্তু ফোনের অপাশের মায়া রিদকে সালাম দিয়েই যেন চুপ মেরে গেল। তার ঘনঘন অস্থিরতার নিশ্বাস যেন রিদের কানেও ভারি খাচ্ছে। রিদ ফোনের ওপাশের মায়াকে চিনতে পেয়েও সে অপরিচিত সাজল। কারণ মায়া এখনো রিদকে নিজের পরিচয় দেয়নি বলে সেও সেধে আগ বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল না যে, সে মায়াকে চিনতে পেরেছে।
তাছাড়া আজ প্রথম দুজনের ফোনালাপ করা। এর আগে কখনো এমনটা হয়নি। রিদের কাছে প্রথম থেকে মায়ার পারিবারিক নাম্বার গুলো সেইভ ছিল যবে থেকে রিদ দুজনের বিয়েটা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল তখন থেকে। কিন্তু সেটা তো আর মায়া জানে না তাই না। তাই রিদ আগ বাড়িয়ে নিজের পরিচয় না দিয়ে বরং অপেক্ষা করল মায়া পরিচয় দেওয়ার। কিন্তু মায়াকে কথা বলতে না দেখে রিদ গাড়ির সিটে গা ছেড়ে দিতে দিতে পুনরায় একই প্রশ্ন করলো…
‘ হ্যালো কে বলছেন? শুনতে পারছেন আমাকে? হ্যালো?
তক্ষুনি শুনা গেল মায়া অস্থির চিত্তের এলোমেলো এক প্রশ্ন। বলল…
‘ আপনি আবার বিয়ে করেছেন???
‘ আবার বিয়ে করেছি মানে??
টুটু করে কল কেটে দিল তক্ষুনি। কৌতূহল রিদ এবার বিরক্ত হলো। কথা নেই বার্তা নেই। হুট করে কল দিয়ে জানতে চাইল সে ‘ আবার বিয়ে করেছে কিনা? কি আজব প্রশ্ন। তাঁকে কি দেখে ভবঘুরে মনে হয়? যে হাঁটতে হাঁটতে বিয়ে করে বেড়াবে? রিদ কি ভেবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে নিজেই কল মিলাল মায়াকে। বিগত বিশটা দিন ধরে দেখাসাক্ষাৎ বা কথা হয়নি দুজনের। ফাহাদের বিয়ের পর মায়া সেই যে নিজ বাড়িতে ফিরে গেল সেই নিয়ে আজ বিশটা দিন পার হলো। রিদ খবর নিয়ে জেনেছে মায়া এখন চট্টগ্রামে আছে, এবং কলেজে পরীক্ষা চলছে। হয়তো আর কিছুদিন গেলে শেষ হবে। রিদ এতোদিনে ব্যস্ততায় একদমই চট্টগ্রামে যেতে পারিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এবার না গেলেই নয়। রিদ মায়াকে কল দিতে দিতে আসিফের উদ্দেশ্য বলল…
‘ আসিফ গাড়ি ঘুরা। মহাসড়ক ধর! চট্টগ্রামে ফিরব।
আসিফ আপত্তি করে বলতে চাইল…
‘ কিন্তু ভাই কালতো আমাদের অফিসে…
রিদ চেতে উঠে বলল…
‘ তোরে বলছি জ্ঞান দিতে? যা বলছি তাই কর।
‘ জ্বি ভাই।
~~
তাড়াহুড়ো মায়া রিদের কল কাটতে না কাটতেই ঠাস করে বালিশের কুশন দিয়ে মাথায় ভারি মারল জুই। তপ্ত মেজাজে দেখিয়ে বলল জুই…
‘ বলদির বাচ্চা, তোরে কি শিখাইলাম আর তুই কি প্রশ্ন করলি? তোরে কইছিলাম ছেলেটার নাম-ঠিকানা প্রশ্ন করতে, তা-না করে উল্টো পিরীতির প্রশ্ন করলি, ‘আপনি আবার বিয়ে করেছেন? ব্যাঙ্গ করে) এই তুই, ঐ ব্যাটার আবার বিয়ে দিয়ে কি করবি? সংসার পাতবি জামাই সঙ্গে অসভ্য মাইয়া।
জুইয়ের বালিশের ভারি খেয়ে অসহায় মুখ তুলে চাইল মায়া। অতিরিক্ত উত্তেজনা আর অস্থিরতার কারণে মায়া জুইয়ের দীর্ঘ সময়ের শিখানো পড়ানো কথা গুলোও সব ভুলে গিয়েছিল। তাই অচেনা স্বামী নামক মানুষটাকে বারবার কল করতে গিয়ে অস্থিরতায় পরপর কল গুলো কেটে কেটে দিচ্ছিল যার জন্য হয়তো দুই একবার মিসকলও গিয়েছে ঐ লোকটার ফোনে। কিন্তু মায়া যখন অতি সাহস যুগিয়ে অবশেষে বড় একটা কল করলো অচেনা স্বামী নামক মানুষটাকে তখন আর জুইয়ের দীর্ঘ সময়ের শিখিয়ে দেওয়া কোনো কথায় আর মায়ার মাথায় থাকল না। বরং অতিরিক্ত উত্তেজনায় মায়া তব্দা খেয়ে বসেছিল খানিকের জন্য। যার দারুণ ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি বারবার ‘হ্যালো বলার পরও মায়া নিজের কথা গুলো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তীব্র অস্তিত্বে সিটিয়ে চুপ মেরে গেল। কিন্তু মায়া যখনই নিজের অস্থিরতা খানিকটা কাটিয়ে উঠল তক্ষুনি মায়ার মনে যা ছিল দীর্ঘদিন ধরে অচেনা স্বামীকে নিয়ে সেই প্রশ্নটায় চট করে ফেলল। আর করবে বা নাই কেন? মায়ার স্বামী হয় লোকটা। মায়ার জানার অধিকার আছে ওর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছে কিনা? যদিও মায়া এটা জানা না যে, মায়া ঐ লোকটার প্রথম বউ নাকি দ্বিতীয় বউ। নাকি আজও বিয়ে করেনি লোকটা। সবচেয়ে বড় কথা হলো
মায়ার সাথে বিয়েটা আজও ঐ লোকটার মনে আছে কিনা তাও বিশাল বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়? এতো এতো সব প্রশ্নের উত্তর জানার অবশ্যই মায়ার জন্য প্রয়োজন। তাছাড়া মায়া টানা তিনটা মাস এতো কষ্ট করে, এতো যুদ্ধ করে অবশেষে আজ সফল ভাবে সুমন থেকে অচেনা স্বামীর নাম্বার সংগ্রহ করতে সক্ষম হলো। মুক্তার শশুর বাড়ি থেকে আসার পর বিগত বিশদিন ধরে হাফেজ সাহেবের ছেলে সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না মায়া। ছেলেটা নাকি ঢাকায় ছিল পড়াশোনা জন্য। আর হাফেজ সাহেব ছিল রাজশাহী। আজই নাকি সুমন বাড়ি ফিরে বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ার স্বামী নাম্বারটা যোগাড় করে দিল। তবে সুমন থেকে মায়ার স্বামীর তেমন কোনো তথ্য বা নাম-ঠিকানা কিছু পাওয়ার যায়নি। মায়া বারবার সুমনকে অনুরোধ করেছিল শুধু মায়ার অচেনা স্বামীর নামটা বলতে। কিন্তু সুমন তা বলতে পারেনি। কারণ সুমন নিজেও মায়ার স্বামীর নাম-পরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না তাই। মায়ার অতো অনুরোধের জন্য সুমন শেষ অনুতপ্ত হয়ে হতাশ গলায় জানায়’ সুমনের বাবা হাফেজ সাহেব নাকি শুধু সুমনকে মায়ার স্বামীর নাম্বারটা ছাড়া আর কিছুই বলেনি। সুমন প্রশ্ন করেছিল লোকটা কে? তার সম্পর্কে জানতে কিন্তু এই বিষয়ে হাফেজ সাহেব নাকি ফোন নাম্বারটা ছাড়া আর কিছু বলেনি। এতে মায়া ভিষণ দুঃখ পেয়েছিল। বউ হয়ে স্বামী নামটা কেন হাফেজ সাহেব মায়াকে বলল না। কেন ইচ্ছাকৃত ভাবে হাফেজ সাহেব মায়ার স্বামীর নামটা লুকাতে চাইছে? কি এমন থাকতে পারে মায়ার স্বামী নামক লোকটার নামের পিছনে? গুন্ডা টাইপের খারাপ লোকও যদি হয় মায়ার স্বামী তাহলেও মায়ার কোনো সমস্যা নেই। কারণ মায়াদের বিয়েটা যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল তাতে লোকটা কেমন বা তার সম্পর্কে যাচাই করার মতোন পরিস্থিতি তখন ছিল না। তাই মায়া ধরে নিল মায়ার সাথে একটা দুনিয়ার খারাপ লোকেরই বিয়েটা হয়েছিল সেদিন। সেভাবে মায়া মনে মনে স্বামী নামক লোকটাকে খারাপ লোক ভেবেই গ্রহণও করে এসেছে এতোদিন। তাই এখন স্বামীনামক লোকটাকে যদি কেউ খারাপ বা উগ্রবাদী লোক বলে সম্মোধন করে তাহলেও বিষয়টা মায়ার কাছে স্বাভাবিকই লাগবে। কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে মায়ার অচেনা স্বামী নামক লোকটা পরিচয় হাফেজ সাহেবকে লুকাতে দেখে। হাফেজ সাহেব কেন করল এমনটা জানা নেই মায়ার। তবে সুমন ফোন রাখার আগে মায়াকে খুব সাবধান করে বলেছিল’ ‘আপু আমার মনে হয় আপনার স্বামী প্রভাবশালীদের মধ্যে কেউ একজন হবেন। বিশাল বড় কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের থেকে কেউ হবেন। আপনার স্বামীকে নিয়ে আমি আব্বাকে প্রশ্ন করাতে উনাকে দেখলাম ভিষণ নার্ভাস হচ্ছে। নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনো কারণ আছে। তিনি আপনার স্বামী নামটা পযন্ত আমাকে বলতে নারাজ। আপনি একটু সাবধানে থাকবেন আপু।
সুমনের সতক বার্তায় ভয় মায়াও পেয়েছিল। তারপরও সুমন থেকে অচেনা স্বামীর নাম্বারটা নিয়েছিল আজ দুপুরে কিন্তু কল দিল এই সন্ধ্যায় সাতটার দিকে। মাঝে ছয় ঘন্টা শুধু মায়ার নিজের নার্ভাসনেস কাটাতে আর সাহস যোগাতে লাগল। জুই শুরু থেকেই মায়ার পাশে ছিল। সুমন থেকে নাম্বার নিয়ে রিদকে কল করা পযন্ত জুই-ই মায়ার পাশে ছিল। মায়াকে গুছিয়ে কথা শিখিয়ে দিয়েছিল কিভাবে রিদের পরিচিত সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করবে। কিন্তু অতি নার্ভাসনেস মায়া জুইয়ের শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া সবকিছু গুলিয়ে ফেলল। যার দারুণ হতিতম্বি করে শুধু জানতে চাইল, মায়ার অচেনা স্বামী মায়াকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছে কিনা। মায়া অতিরিক্ত টেনশন থেকে এমনটা করল কিনা জানে নেই। তবে মায়ার খুব করে জানতে ইচ্ছা করছে আদৌও মায়ার স্বামীর তার হঠাৎ বিয়ে করা বউকে মনে রেখেছে কিনা? নাকি মায়াকে ভুলে বিয়ে করে ফেলেছে এতোদিনে! মন্ত মায়ার ধ্যান ভাঙলো ফের জুইয়ের হাতে বালিশের ভারি খেয়ে। জুই চেঁচাতেই মায়া অসহায় মুখ করে বলল…
‘ তো কি করবো? লোকটা আবার বিয়ে করেছে কিনা সেটা জানতে চাইব না আমি?
‘ কেন জানতে চাইবি সেটাই তো প্রশ্ন?
‘ আজব! জানতে চাইব না কেন?
মায়া কথায় চেতে উঠল জুই….
‘ অসভ্য মাইয়া আগে তো জানতে চাইবি লোকটা কে হয়? সুমন যে আমাদের নাম্বারটা দিল সেটা আদৌও তোর নিখোঁজ স্বামীর নাম্বারটা কিনা সেটা শিওর না হয়ে সরাসরি বিয়ের প্রশ্ন করতে কেন গেলি? সুমনের দেওয়া নাম্বারটা যে তোর স্বামীরই হবে এই বিষয়ে তুই এতো শিওর হুস কিভাবে? আগে লোকটার নাম-পরিচয় জেনে, তারপর তোর পরিচয়টা দিয়ে এই প্রশ্নটা করতি, সে তোদের দুই বছর আগে হওয়া হঠাৎ বিয়েটা এখনো মনে রেখেছে কিনা? তা-না করে তুই এখন বলদ মার্কা প্রশ্ন করতে গেলি কেন?
জুইয়ের কথায় যুক্তি খুঁজে পেল মায়া। সত্যি মায়ার প্রশ্নটা করা ভুল হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত নার্ভাসনেস মায়া এতোসব ভাবতে পারিনি। মনে যা ছিল চট করে মুখে বলে ফেলেছে, অতো গভীরে ভেবে দেখেনি সে। কিন্তু জুইয়ের কথাও ফেলার নয়। কলদাতা আসলে মায়ার নিখোঁজ স্বামী কিনা সেটা শিওর না হয়ে এভাবে প্রশ্ন করাটা ঠিক হয়নি বলেই ধরে দিল মায়া। অপরাধী নেয় রিনরিনে বলল মায়া…
‘ অতো কিছু মাথায় আসেনি। কেমন কেমন করে যেন মুখ ফুসকে প্রশ্নটা করে ফেলেছি লোকটাকে।
মায়ার কথায় মনে ধরল না জুইয়ের। এতো বুঝানোর পরও মায়াকে দিয়ে কিছুই বলাতে পারল না সে। তাছাড়া জুই বেশ করে লক্ষ করেছে মায়া ওর নিখোঁজ স্বামীকে নিয়ে বেশ অ্যাক্টিভ । অচেনা স্বামীকে নিয়ে কেউ কিছু বললেও সেটা পছন্দ করে না মায়া। উল্টো কেমন গুম মেরে বসে থাকে। এই যে জুই এখনো মায়াকে নিয়ে টেনশনে আছে কিন্তু মায়ার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে নিখোঁজ স্বামী নাম্বার যোগাড় করতে পেরে ভিষণ খুশি। জুইয়ের কথা সে এক কান দিয়ে শুনছে তো অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে এমন। স্বামী সম্পর্কে কিছু না জেনে মন দিয়ে বসে আছে মায়া সেটা বেশ বুঝতে পারে জুই। আর সেখানেই জুইয়ের টেনশনটা বেশি। আল্লাহ না করুক মায়া নিখোঁজ স্বামী যদি খারাপ প্রকৃতির কোনো লোক হয় তাহলে এর জন্য শুধু মায়া নয় ওদের গোটা পরিবারের ভুক্তভোগী হবে। বাড়ান্ত রাগে জুই মায়া সাথে আর তর্ক করতে মন চাইল না। জুই রাগে ফুসফুস করতে করতে হনহনিয়ে কক্ষ ছেড়ে বের হয়ে যেতেই মায়া ঠোঁট উল্টালো। জুইয়ের গমন পথে দিকে তাকিয়ে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে আবারও ফোনটা খুঁজলো। তখন জুইয়ের হাতে হঠাৎ বালিশের ভারি খেয়ে ফোনটা কোথাও হাত থেকে বিছানায় পরে গিয়েছিল। আর নেওয়া হয়নি। এখন জুই চলে যেতেই মায়া পুনরায় ফোনটা খোঁজ করতে তৎক্ষনাৎ কানে আসল ফোনের ককর্শ রিংটোন শব্দ। মায়া চমকে ফোনটা হাতে তুলতেই দেখল মায়ার তখনকার করা নাম্বার থেকে আপকামিং কল এসেছে। তাড়াহুড়ো মায়া তৎক্ষনাৎ কলটা রিসিভ করে কানে তুলে সালাম দিল…
‘ আসসালামু আলাইকুম!
মায়ার তাড়াহুড়োয় সালামের উত্তর রিদ খুবই রয়েসয়ে গম্ভীর গলায় দিল…
‘ ওয়ালাইকুম সালাম। কে বলছেন?
দূরদূর বুক চেপে বসল মায়া। ভয়ংকর লজ্জা সিঁটিয়ে আড়ষ্ট হলো। স্বামী নামক মানুষটার গলাটাও বেশ দারুণ লাগল। হঠাৎ মায়ার ভালো লাগা আকাশ চুম্বক হলো। কিন্তু মুখের কথা গুলো যেন গলায় আটকাল। ওপাশে মানুষটাও চুপ। হয়তো মায়ার কথা বলার অপেক্ষায় আছে। লজ্জা সিঁটিয়ে কোনো রকমের আওড়াজ বের করল গলা দিয়ে। রিনরিনে বলল মায়া…
‘ আপনি আমাকে চিনবেন না মনে হয়। তবে আমি যে আপনাকে খুব করে চিনি এমনটাও নয়। আসলে আমরা কেউ পূর্ব পরিচিত নয়। তারপরও আপনাকে অনেক খোঁজাখুজি করার পর, আজকে আপনার নাম্বারটা যোগাড় করতে পেরে কল দিলাম।
রিদ মনে করেছিল মায়া তাঁকে পরিচিত ভেবেই কোনো কারণে ফোনটা করেছিল। তাই সে আগ বাড়িয়ে পরিচয়টা না দিয়ে মায়ার পরিচয় পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু মায়া এখন রিদকে অপরিচিত ঘোষণা করায় খানিকটা সন্দেহ হলো। যদি বোনের ভাসুর বা পরিচিত রিদ খান ভেবে মায়া রিদকে কল না দেয় তাহলে এর বাহিরে কিসের পরিচয়ের ভিত্তিতে কলটা করলো?
‘ আমরা পূর্ব পরিচিত না হলে এতো তলব লাগিয়ে আমাকে খোঁজ করার কারণ কি মিস?
‘ আসলে আমার কথা ছিল আপনার সাথে।
‘ আপনার কথা থাকতেই পারে তবে সেটা যে আমাকে শুনতে হবে এমনটা তো নয় মিস? ব্যস্ত আমি রাখ…
রিদের কথা শেষ করার আগেই মায়ার জিদ্দি সুর শুনা গেল তক্ষুনি…
‘ বললাম তো কথা আছে আমার। ফোন রাখা যাবে এখন।
‘ কেন রাখব না?
‘ আমি কথা বলছি তাই।
‘ আপনার কথা শুনতে কি আমি বাধ্য?
‘ হ্যাঁ।
‘ অধিকার দেখাচ্ছে?
‘ হ্যাঁ!
‘ কিসের?
মায়া হাসফাস করে এদিক সেদিক তাকাল। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মিনমিন করে রিদের নাম জানতে চেয়ে বলল…
‘ আপনার নাম কি?
রিদ অল্প চুপ থেকে মুখটা গম্ভীর করে গাড়ির সিটে হেলান দিল। সে বেশ বুঝতে পারছে মায়া তাঁকে সম্পূর্ণ চিনতে পারেনি। হয়তো পরিচিত হতে চাচ্ছে রিদের সাথে। কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছে না রিদ। তাছাড়া রিদের নামটাও তো মায়ার মুখস্থ থাকার কথা। সেখানে রিদের কাছে তার নাম জানতে চাওয়াটাও রিদের বেশ কৌতূহল বাড়াল। রিদ গম্ভীর গলায় বলল..
‘ আব্রাহাম।
ফোনের ওপাশ থেকে নিজের নাম বলে ঝটপট উত্তর দিল মায়া…
‘ আমি রিক্তা ইসলাম মায়া। আমাকে চিনতে পারছেন??
রিদ অল্প হাসলো। তার বউ সে চিনবে না? তারপরও গম্ভীর গলায় অপরিচিত নেয় বলল…
‘ আপনাকে কি আমার চিনার কথা ছিল মিস? কই আমিতো চিনতে পারছি না আপনাকে।
রিদের কথায় ভিষণ কষ্ট পেল মায়া। হতাশায় বুক ভারি হয়ে উঠল তক্ষুনি। এতো সহজে লোকটা মায়াকে অপরিচিত বলে ঘোষণা করে দিল অথচ মায়া কি না কি করেছে বিগত তিনটা মাস ধরে এই লোকটাকে খুঁজে পেতে। নরসিংদী হাফেজ সাহেবের বাড়িতে দৌড়াদৌড়ি করে যেতে গিয়ে ওরা একবার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিল শেষ পযন্ত। আর এই লোকটা নাকি মায়াকে মনেই রাখেনি। হতশার মায়া ভারি আওড়াজে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল…
‘ আপনার সাথে আমার বছর দুয়েক আগে দেখা হয়েছিল একবার। সেটাই শেষ দেখা ছিল আমাদের। সেদিন রাতে আপনি এক্সিডেন্ট করেছিলেন আর আমি পথ হারিয়ে আপনাকে রাস্তায় পেয়েছিলাম। সাহায্যও করতে চেয়েছিলাম আপনার। কিন্তু সেদিন রাতে স্বরণীয় ঘটনা ছিল। আমাদের জীবনের অনাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনাটাকে কেন্দ্র করে আজ আমার আপনাকে আবারও খোঁজে বের করা। হাফেজ সাহেবের বাবা কাজি মোল্লাকে মনে আছে আপনার? সেদিন রাতে যারা আমাদের আশ্রয় দিয়ে ছিল উনাদের বাড়িতে? মনে আছে আপনার?
মায়ার গুছানো কথার অর্থ এবার সবই পরিষ্কার হলো রিদের কাছে। মায়া যে তাঁকে পরিচিত রিদ খান ভেবে নয় বরং নিজের অপরিচিত স্বামীর খোঁজ করে কলটা করেছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো রিদ। প্রশান্তিতে মন শীতল হয়ে উঠল তক্ষুনি। রিদের দীর্ঘ অপেক্ষা প্রহর শেষ হলো বলে ঠোঁট প্রশস্ত করে নিঃশব্দ হাসলো। অবশেষে তার বউ তাঁকে খোঁজে পেল। আজ বউ যেহেতু তার কাছে নিজ থেকে ধরা দিতে চাইছে এবার সেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ভারি হতশায় গলায় বলল রিদ…
‘ আশ্রয় কোথায় দিয়েছিল মিস? তারা তো আমাদের বিয়ে পরিয়ে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল সরাসরি। আমি অসুস্থ ছিলাম বলে বউটা সে-রাতেই পালাল। নয়তো রাতে বাসর করে সকালে বউ- বাচ্চা নিয়ে একেবারে বাড়িতে ফিরতাম। শিট মিস হয়ে গেল। আচ্ছা আপনি কি কোনো ভাবে আমার পালাতক বউ বলছেন?
টুটু করে কলটা কেটে গেল তক্ষুনি। রিদের বাকি কথা গুলো আর শুনা হলো না মায়ার। অতি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তৎক্ষনাৎ মুখ লুকাল বালিশে ঝাপিয়ে পরে। ঘনঘন নিশ্বাসে লজ্জা কমাতে চেয়ে দু’হাতে মুঠোয় পিষল বালিশের দুই টুকরো অংশ। মায়া বুঝতে পারল সুমনের নাম্বারটা ভুল নয়। সঠিক মানুষটায় ছিল। কিন্তু তাই বলে লোকটা প্রথমবারেই এমন নিমজ্জিত কথা গুলো বলবে ভাবতে পারিনি মায়া। ছিঃ কেমন গা শিরশির করা কথা বলে লোকটা। মায়া এই লোকের সাথে আর কথা বলবে কিভাবে?
মায়ার কল কেটে দিতেই উচ্চ স্বরে ঝরঝর করে হেঁসে উঠে রিদ। কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ক্রিনে দিকে তাকাতেই সেই হাসি আরও দৃঢ় হয়। বউ তার লজ্জা পেয়েছে বলেই হঠাৎ কল কেটেছে। রিদ ফোনের স্ক্রিনের নাম্বারটা চেপে আবারও কল মিলাতেই বেখেয়ালি চোখে পরলো আসিফ ও ডাইভারের বিস্মিত চেহারার দিকে। দুজন রিদের উচ্চ হাসিতে চমকে তাকিয়ে আছে এদিকটায়। হয়তো রিদকে এর আগে কখনো এভাবে হাসতে দেখে তাই। হঠাৎ রিদের চোখে দুজনই ধরা পরে যাওয়ায় থমথমে মুখে সামনে ঘুরে গেল তৎক্ষনাৎ। রিদের প্রসারিত হাসিটাও ক্ষণে গম্ভীর মুখে পরিণত হলো। বাকিটা পথ আসিফ আঁড়চোখে রিদকে দেখল। সরাসরি তাকানোর আর সাহস পেল না। রিদ ফের মায়ার নাম্বারে কল মিলাতে চেয়ে ফোন দিল কিন্তু অতি লজ্জায় আড়ষ্ট মায়া সেই কল রিসিভ করল না। রিদ মিটমিট হেঁসে ছোট একটা মেসেজ করে লিখল ‘ পালাতক বউয়ের সন্ধানে আছি মিস। যদি আপনার লজ্জা কমে আসে তাহলে অবশ্যই আমায় স্বরণ করবেন কেমন। আমি অপেক্ষায় রইলাম।
মেসেজ পাঠিয়ে রিদ গা ছেড়ে দিল সিটে। চোখের উপর হাত বেঁধে চোখ বন্ধ করতেই রিদের ঠোঁটের মিটমিট হাসির রেখা ফের চোখে বিঁধল আসিফের। ব্যস্ত শহরের গাড়ি ছুটলো মহাসড়ক ধরে চট্টগ্রামের দিকে। আর বাতাসের থুড়ে ভেসে আসলো এক নতুন প্রেমের গন্ধ।
সেদিন সন্ধ্যায় মায়ার আর কল আসেনি রিদের কাছে। লজ্জা, ভয়, অস্থিরতা কাটিয়ে মায়া রিদকে কল দিল সেদিন রাতের দিকে। রাত তখন প্রায় বারোটার ঘরে। জুই তখন ঘুমিয়ে। মায়া লুকিয়ে চুকিয়ে বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে রিদকে কল মিলাল। রিদ তখনো গাড়িতে। কুমিল্লা পার হয়ে ফেনীতে ঢুকেছে সবে, সেই সময়ে রিদ ফোন ভেজে উঠতেই আসিফ সামনের মিররে দিয়ে রিদের দিকে তাকাল এক পলক। রিদকে দেখল ফোন হাতে অল্প হাসতে। রিদ মায়ার কল কেটে নিজে কল মিলাবে তার আগেই মায়া অধৈর্যের নেয় আবারও কল দিল রিদকে। রিদ এবারও ঠোঁট চেপে হেঁসে কল কেটে দিল। কিন্তু মায়া যেন ফোন হাতে নিয়েই বসে। রিদের কল কাটতে না কাটতে সেকেন্ডের ভিতর তৃতীয়বার মতোন কল দিল রিদকে। মায়ার অস্থিরতা বুঝে রিদ হাসলো, বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করে কানে তুলে বলল…
‘ আপনার স্বামীকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না ম্যাডাম। একটু ধৈর্য্য ধরুন আমাকে অন্তত কলব্যাকটা করতে দিন।
#চলিত….
#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
২১
রিদের কল কাটতে না কাটতে সেকেন্ডের ভিতর তৃতীয়বার মতোন কল দিল রিদকে। মায়ার অস্থিরতা বুঝে রিদ হাসলো, বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করে কানে তুলে বলল…
‘ আপনার স্বামীকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না ম্যাডাম। একটু ধৈর্য্য ধরুন আমাকে অন্তত কলব্যাকটা করতে দিন।
টুটু করে কল কেটে যেতেই রিদ আবারও হাসল। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক পল। সময় নিয়ে আস্তে ধীরে কল দিল মায়াকে। ওপাশ থেকে মায়াও বেশ সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করল। বুঝায় যাচ্ছে তখনকার রিদের কথায় লজ্জায় পেয়েছে বেশ। সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করে মায়া প্রথমে সুন্দর করে সালাম দিল রিদকে।
‘ আসসালামু আলাইকুম।
রিদ সালামের উত্তর দিয়ে বলল…
‘ ওয়ালাইকুম সালাম।
‘ ভালো আছেন?
‘ জ্বি আছি! আপনি?
‘ জ্বি ভালো।
তারপর? তারপর দুজনই চুপ। রিদ ইচ্ছাকৃত ভাবেই চুপ। মায়া কি বলে সেটা শুনতে চায়। জড়তার মায়া নিজের কথা গুলো গুলিয়ে ফেলে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকল শুধু। কোথায় থেকে শুরু করবে বুঝতে পারল না এক মূহুর্তের জন্য। অন্ধকার বারান্দায় বসে কোলের উপর খালি হাতটা কচলাল মায়া। কি বলবে সেটা ভাবতেই রিদের গলা শুনা গেল তক্ষুনি। রিদ বলল…
‘ কি ম্যাডাম? কথা শেষ আপনার?
জড়তা মায়া আমতাআমতা করে কানের পিছনে চুল গুজে দিতে দিতে লাজুক কন্ঠে বলল…
‘ না আসলে, আমার না কেমন কেমন জানি লাগছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে…
‘ উফফ তাহলে তো কঠিন সমস্যা ম্যাডামের? আমি কি ফোন রেখে দিব?
তাড়াহুড়ো মুখ খুললো তক্ষুনি মায়া। না করে বলল…
‘ এই না না! ফোন রাখবেন না প্লিজ। আমার কথা আছে।
তাড়াহুড়ো রিদের সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেই লজ্জায় পরে গেল মায়া। ফোনের ওপাশে মায়া স্বামী নামক মানুষটা নিশ্চয়ই মায়াকে বেহায়া ভাবছে সেটা ভেবেই মায়ার মন খারাপ হলো। এতো কষ্ট করে স্বামী সামনে নিজের একটা ভালো ভদ্র পার্সোনালিটি প্রকাশ করতে চেয়েছিল মায়া। অথচ নিজের বোকামির জন্য মায়া ধরা না পরে যায় আবার। মায়া নিজের বোকামিকে চাপিয়ে আবারও ভদ্রতা দেখিয়ে ‘সরি বলল…
‘ সরি!
‘ কেন?
‘ আসলে তাড়াহুড়ো ঐভাবে বলতে চায়নি…
‘ কিন্তু আমিতো ঐভাবেই শুনতে চেয়েছিলাম।
রিদের কথা পিষ্টে কথা খুঁজে পেল না মায়া। জড়তায় মায়া এদিকে সেদিক লাজুক দৃষ্টি ঘুরাল। দুজনের বিয়েটা সম্পর্কে কথা বলতে চায় মায়া। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে সেটা বুঝতে না পেরে খানিকটা চুপ রইল মায়া। ফোনের ওপাশ থেকে গাড়ির শব্দ পাওয়ায় চট করে মায়ার ঘোর ভাঙলো। এখন রাত প্রায় বারোটা ঊর্ধ্বে। এতোরাতে লোকটা কোথাও যাচ্ছি কি? কৌতূহলে মায়া জানতে প্রশ্ন করল. রিদকে বলল..
‘ গাড়ি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আপনি কি এতোরাতে কোথাও যাচ্ছেন?
রিদ তার সুন্দর চুল গুলোতে হাত চালাতে চালাতে বাহিরে অন্ধকারময় রাস্তায় চোখ ঘুরিয়ে বলল…
‘ বউ টানে তার শহরে যাচ্ছি দেখা করতে।
রিদের সহজ সরল উত্তরটা যেন মায়ার মাথায় বিস্ফোরণ ঘটল। মায়ার স্বামী বিবাহিত কথাটা যেন আকাশ ভেঙে পরার নেয় চমকে উঠলো মায়া। স্তব্ধতা নেয় মৃদু চেচিয়ে বলল…
‘ কিহ? আপনি বিবাহিত?
‘ হ্যাঁ।
‘ মানে কি?
‘ কি মানে কি? বিয়ে করবো না? পুরুষ মানুষ বিয়ে না করে থাকা যায় নাকি? বিয়ের বয়স হয়েছে আমার তাই বিয়ে করেছি।
মায়া অতি ভদ্র সাজার কৌটা তক্ষুনি শেষ হলো। রাগে হিসহিসিয়ে গালি দিয়ে বসল রিদকে। কটমট করে বলল…
‘ অসভ্য লোক বউ রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করিস। তুই জানতিস না তোর বউ আছে? দ্বিতীয় বিয়ে কেন করতে গেলি?
মায়ার হুট করে রেগেমেগে আগুন হয়ে যাওয়াটা রিদের কাছে স্বাভাবিক লাগল। যেখানে তীব্র অধিকার জম্ম নেয় সেখানে রাগে দু-চারটে গালি শুনায় যায়। তাছাড়া রিদ মায়ার কাছে পরিচিত রিদ খান বলে নয় বরং মায়ার স্বামী হিসাবে সে গালি শুনেছে। তাই হুজম করে নিল স্বামী হয়ে। মায়ার রাগকে উস্কে দিয়ে খেয়ালি করে বলল রিদ…
‘ বউ রেখে কোথায় বিয়ে করলাম ম্যাডাম। আমার বউতো নাই। বউ পালাতক। বউ নেই বলেই তো দ্বিতীয় আর তৃতীয় বিয়েটা করতে হয়েছে আমায়। দরকার হলে আরও একটা করবো। ইসলামে চারটে বিয়ের সম্মতি দেয় আমিতো মাত্র তিনটা করছি। আপনাকে পেলে আর একটা করবো। তারপরই শেষ। আর করবো না।
রাগে দুঃখের কেঁদে ফেলল মায়া। এতো কষ্ট করে নিখোঁজ স্বামী খোঁজ করাটায় বোকামি হয়েছে মায়া।সেই দুঃখে মায়া কেঁদে উঠে রিদকে গালি দিতে দিতে বলল…
‘ অসভ্য, ইতর, লচ্চা লোক, এতোগুলা বিয়ে করিস। তোর মতোন জামাই আমার দরকার নাই। আমি তোরে তালাক দিবো। খবরদার যদি কখনো আমার সামনে পরিস তাহলে তোর পা ভেঙে হাতে ধরায় দিবো।
‘ বউয়ের হাতে মার খাওয়ার জন্য হলেও এই বান্দা অবশ্যই হাজির হবে ম্যাডাম…
টুটু! রিদের কথা শুনলো না মায়া রাগে দুঃখের ঝরঝরে করে কেঁদে উঠল বারান্দার ফ্লোরে আঁচড়ে পরে। মায়া সত্যি বিশ্বাস করতে পারেনি ওর স্বামী আবার বিয়ে করে নিবে। মায়ার স্বামীকে ঘিরে ভালোবাসাটা ঝড়া পাতার মতোন খসে গেল মনে। ভালোবাসাটা ভুল মানুষের প্রতি হওয়ায় কান্না বাঁধ ভাঙলো মায়ার। গুমরে উঠা কষ্টে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল বাকিটা রাত। রিদ বেশ ফুরফুরে মেজাজ ফোনটা পাশে রাখল। সে জানে এখন তার বউ কাঁদবে স্বামীর বিরহে। কাঁদুক! এতে সে মোটেও কষ্ট পাচ্ছে না বরং ভিষণ শান্তি অনুভব করছে। যাক আজকের রাতটা তার শান্তি কাটবে। সামান্য বিয়ে হওয়ার মিথ্যা সংবাদ নিয়ে বউ তার কতোটা ক্ষেপল রিদ উপর। শেষ পযন্ত গালি দিল। ভবিষ্যতে পা ভেঙ্গে ফেলে হুমকি পযন্ত দিল। যদি কখনো এই মেয়ে জানতে পারে রিদ তার স্বামী আল্লাহ জানে তখন কি করে। রিদের হুট করেই খুব ইচ্ছা হলো জানতে বউ তার পরিচয় পেলে কি করবে? এখনকার মতো এতো অস্থির হবে স্বামী জন্য? নাকি পরিচিত রিদ খান ভেবে ভয়ে পিছিয়ে যাবে রিদ থেকে?
~~
চোখ মুখ অন্ধকার করে কলেজ ক্যানটিনে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে মায়া। সঙ্গে জুই, শ্রেয়া, নাদিয়া বসে। মায়ার মন খারাপের কারণ এতক্ষণে সবার জানা। জুই অবশ্যই এতে বিরক্ত। ওহ আগে থেকেই মায়াকে সাবধান করেছিল যাতে অচেনা স্বামীর চক্রে না ফাঁসে তারপরও ফাঁসলো। এখন লোকটা পূর্ব বিবাহিত হতেই পারে সেটাও অস্বাভাবিক কিছু না। বরং স্বাভাবিক। হয়তো মায়া লোকটার জীবনে পরে এসেছিল। তাছাড়া প্রত্যেকের একটা আলাদা পারসোনাল লাইফ থাকতে পারে। কিন্তু মায়া এতে অস্বাভাবিক ভাবে রিয়েক্ট করায় জুই খানিকটা ক্ষুব্ধ। কোনো ভাবে আরিফের কানে মায়ার কর্মকাণ্ড গুলো পৌঁছালে ওদের দুজনকেই মার খেতে হবে। তাছাড়া মন মরা মায়া আজ ঠিকঠাক পরীক্ষাটাও দিয়েছে কিনা কে জানে। রেজাল্ট খারাপ হলে পরিবারের সবার কানে চলে যাবে বিষয়টা তখন আর রক্ষা নেই দুজনের। কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষা শেষ করে ওরা সবাই কলেজ ক্যানটিনে এসে বসেছিল। মায়া তখন থেকে নিশ্চুপ হয়ে বসে। রাতে যে অনেকটা সময় ধরে কেঁদেছিল সেটাও চোখ মুখ ফুলে আছে। শ্রেয়া মায়াকে দেখে বেশ আফসোস করে বলল…
‘ মায়ু থাক আর কষ্ট পাস না বোন। লোকটা তোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না। তুই আরও ভালো কিছু ডিজাভ করিস। আসলে ঐ বদ লোকটার কপাল খারাপ এতো সুন্দরী বউকে না দেখেই রিজেক্ট করল। আহারে আমার তো লোকটার জন্য কষ্ট লাগছে। এতো সুন্দরী বউ ও তার ভালোবাসা কিভাবে পায়ে ঠেলল। আচ্ছা এখন কি করবি? লোকটা তো বিবাহিত। সংসার করার তো আর চান্স নাই তাহলে..
শ্রেয়ার কথার পিষ্ট জুই বলল..
‘ সংসার কি করবে? আমি তো প্রথম থেকেই বলছি লোকটা খারাপ হতে পারে শুনলো না আমার কথা। মন দিয়ে বসলো। এখন স্বামী বিয়ের কথা শুনে দেবদাসী হচ্ছে। কোথাকার কোন লোক এখনো ঠিকঠাক পরিচয় জানে না অথচ বন্ড স্বামীর জন্য সারারাত কেঁদেকুটে সকালে পরীক্ষা খারাপ দিল। আমার তো ইচ্ছা করছে আরিফ ভাইয়ের কাছে ওর মানে বিচার দিতে।
পাশ থেকে নাদিয়া বলল…
‘ আচ্ছা জুই থাকনা। বেচারি এমনই কষ্টে আছে তুই আর কষ্ট বাড়িয়ে দিসনা। আচ্ছা জুই, শুননা লোকটা যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করে নেই তাহলে তোদের অবশ্যই বিষয়টা টেনে বড় না করে উল্টো পরিবারের বড়দের জানিয়ে বিষয়টা মিটমাট করে নেওয়া উচিত। বিয়ে ব্যাপার স্যাপার হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। বিয়েটা এক্সিডেন্টেলি হয়ে গেলেও ডিভোর্স কিন্তু এক্সিডেন্টলি হয়না। অনেক আইন কানুন মেনে করতে হয়। ঝামেলা আছে বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা সহজ হবে না।
জুই কিছু বলবে তার আগেই মায়া ধারাম করে উঠে বসল। এতক্ষণের দুঃখ গুছানো মুখটা হুট করেই শক্ত করে বলল…
‘ আমি এতো কিছু জানি না। বুঝি না। বুঝতে চাইও না। আমি ঐ লোকটাকে বিয়ে করেছি সে ভালো হোক কিংবা খারাপ, এতো সহজে আমি তাঁকে ছেড়ে দিব না। অন্তত তার সাথে একবার হলেও মুখোমুখি হতে চায় আমি। তারপর কি হবে তখনেটা তখন দেখা যাবে। আমি প্রেম করে ব্যাকআপ করতে বসিনি। বিয়ে করেছি। এতো গুলাদিন লোকটাকে না দেখে, না জেনে ভালোবেসে এসেছি। আমার ভালোবাসা আমার দায়িত্ব। এতো সহজে হাড় মেনে তাঁকে ছেড়ে দিব না অন্তত। শেষ চেষ্টা অবশ্যই করবো। তাছাড়া আমার মন বলছে লোকটা আমাকে মিথ্যা বলেছে, সে বিবাহিত নয়। হয়তো আমার মন পরীক্ষা করতে এমনটা বলেছে। আমি তাঁকে খুঁজে বের করবো।
মায়ার কথায় হতভম্ব জুই, শ্রেয়া, নাদিয়া। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে স্বামীকে না দেখে কিভাবে অন্ধ বিশ্বাস করা যায় সেটা মায়াকে না দেখতে হয়তো কেউ বিশ্বাস করতো না। মায়া জেদে শ্রেয়া, নাদিয়া হতভম্ব হলেও জুই বেশ রাগে তিল মিলিয়ে উঠে। মায়া নিজের জীবন এমন অচেনা একটা মানুষের পিছনে ছুটে খারাপ করবে সেটা জুই কোনো ভাবে মানতে নারাজ। তাই জুই সিদ্ধান্ত নিলো এবার সেভাবে হোক মায়ার আরও পাগলামো বাড়ার আগে আজকের মধ্যে আরিফের সঙ্গে ওহ এই বিষয়ে কথা বলবে। পরে যা হবার হবে। অন্তত মায়া পাগলামোকে আর শ্রায় দেওয়া ঠিক হবে না বলেই মনে করলো জুই। জুইয়ের ভাবনা চিত্রে মধ্যে শ্রেয়া আহাজারি করতে করতে বলে উঠলো…
‘ মায়ারে আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি তুই জামাই পাগল মাইয়া হবি। বাপরে জামাইকে না দেখে এতো ভালোবাসা যায় তোরে না দেখলে আমিতো বিশ্বাসই করতে পারতাম না বইন। তাই তো বলি জুই কেন তোরে নিইয়া এতো টেনশন করে সবসময়। ভাইরে ভাই টেনশন তো এবার আমারও হচ্ছে। তুই আবার ছেঁকা না খাইয়া বাকা হয়ে যাস জামাইর বিরহে।
জুইয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে মায়া উঠে দাঁড়াল। পরীক্ষার ফাইলপত্র গুছিয়ে কলেজ ব্যাগটা কাঁধে নিল। কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না মায়ার। কেউ হয়তো মায়ার কষ্টটা বুঝতে পারবে না। তাই আর কাউকে বুঝানোর চেষ্টা করলো না ওহ। সোজা গেইট ধরে বাসায় চলে যাবে। আজ কোচিং করতে মন চাচ্ছে না। যদি মন ভালো হয় তাহলে বিকালে কোচিংয়ে যাবে নয়তো না। মায়াকে ব্যাগ নিয়ে উঠতে দেখে শ্রেয়া নাদিয়া দুজনই তাড়াহুড়ো মায়ার পিছন পিছন ছুটলো। কিন্তু জুই গেল না। কারণ ওর ভিষণ মন খারাপ হচ্ছে মায়ার জন্য। মায়ার জেদ কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায় ওদের আল্লাহ জানে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মায়া জেনেশুনে কেন নিজের ক্ষতি করতে চাইছে সেটাও জুই বুঝতে পারছে না। মায়ার চিন্তায় চিন্তায় জুই বেশ কিছুক্ষণ সেইভাবে টেবিলের উপর কপাল ঠেকিয়ে বসে রইল। হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেটর শব্দের ঘোর কাটল। ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল পরিচিত একটা নাম্বার। মন খারাপ গুলো যেন তক্ষুনি কোথায় ছুটে পালাল জুইয়ের। লাজুক হেঁসে ফোন কানে তুলে সুন্দর করে সালাম দিল…
‘ আসসালামু আলাইকুম।
‘ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি কোথায় জুই? পরীক্ষা শেষ আপনার?
‘ জ্বী শেষ। আমি কলেজেই আছি!
‘ রাতে কল দিয়েছিলাম জুই। আপনার নাম্বারটা ব্যস্ত ছিল অনেকক্ষণ যাবত! আপনি কি রাতে কারও সাথে কথা বলছিলেন জুই?
রাতে ফোনআলাপে মায়া ছিল সেটা বুঝতে সময় লাগল না জুইয়ের। কিন্তু ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটির কাছে মায়াকে ছোট করতে চাইল না বলে মিথ্যা বলল….
‘ বাসা থেকে ফোন ছিল। কথা বলাছিলাম আমরা।
ফোনের ওপাশের লোকটার হয়তো বিশ্বাস হলো না জুইয়ের কথা। অনেকটা অবিশ্বাস্য নিয়ে ফের প্রশ্ন করে বলল…
‘ এতো রাতে বসা থেকে ফোন?
‘ হুমম।
মায়ার পিছন পিছন শ্রেয়া, নাদিয়া দুজন দৌড়ে পাশপাশি হেঁটে যোগ হলো। শ্রেয়া বেশ উত্তেজনা নিয়েই বলল…
‘ আরে মায়া শুননা। তুই লোকটাকে কিভাবে খুঁজবি? কিছু ভেবেছিস? তোদের তো ফোনে কথা হয়। লোকটাকে সরাসরি বলবি তোর সাথে দেখা করতে?
মায়া হাঁটতে হাঁটতে হতাশায় উত্তর করল…
‘ না।
অধৈর্য্যের নেয় আওড়াল শ্রেয়া….
‘ কেন?
‘ কারণ আমি চাইনা লোকটা আমাকে কোনো ভাবে চিনুক। যদি সে সত্যি বিয়ে করে ফেলে তাহলে আমি এই জীবন তাঁকে আমার মুখ দেখতে দিব না। তাছাড়া স্বামী খোঁজ আমি একা করছি সে আমার খোঁজ করেনি। উনার হয়তো আমার কথা মনেও ছিল না এতোদিন। আমার ফোন করাতে হয়েছে। তাই আমি সেচ্ছায় তার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আর ছোট করতে চায় না। আমি অন্য কোনো ভাবে লোকটাকে খোঁজ নিব লুকিয়ে। তার পরিচয় আমি অন্যভাবে সংগ্রহ করবো।
মায়ার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথায় অধৈর্য হলো শ্রেয়া। আগে নেয় বলল…
‘ কিন্তু কিভাবে? তুই তো কিছুই জানিস না লোকটার সম্পর্কে তাহলে খুঁজবি কিভাবে?
মায়া হাঁটতে হাঁটতে আড়চোখে শ্রেয়া আর নাদিয়া কৌতূহল ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ লোকটার নাম আব্রাহাম। ঢাকা থাকেন। তার ফোন নাম্বারটাও আছে আমার কাছে। তাছাড়া হাফেজ সাহেবের ছেলে সুমন বলেছিল লোকটা নাকি অনেক প্রভাবশালী মধ্যে কেউ। নিশ্চয়ই এই ফোন নাম্বারটা দিয়ে উনার তথ্য যোগাড় করতে পারবো আমি।
মায়ার কথার পিষ্টে শ্রেয়া আর কিছু বলার মতোন পেল না। নিরব ভাবুক হয়ে হাঁটতে লাগল মায়ার সঙ্গে। কিছুদূর হেঁটে রাস্তার মাথায় আসতেই দেখল পেল আসিফকে এলাকার একদল ছেলেদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে। হয়তো রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিচ্ছে আসিফ তাদের। ভাবুক শ্রেয়া হুট করেই যেন দারুণ একটা বুদ্ধি পেল। মায়ার সমস্যার সমাধান করে চেয়ে উৎফুল্লতায় বলল…
‘ এইই মায়া! শুন! শুন! আমার মনে হয় তোর আসিফ ভাই থেকে সাহায্য নেওয়া উচিত। উনিও তো ঢাকা থাকেন রিদ ভাইয়ের সঙ্গে। সবকিছু চিনেনও। তোর স্বামীর নাম আর নাম্বারটা আসিফ ভাইকে দিলে উনি, নিশ্চয়ই তোর স্বামীকে খোঁজে বের করতে পারবে। আমার কি মনে হয় জানিস তোর স্বামী তো প্রভাবশলীদের মধ্যে কেউ একজন তাই না, এমনটাও তো হতে পারে আসিফ ভাইয়াদের সাথে তোর স্বামীর পূর্ব পরিচয় আছে? তোর স্বামীর নাম বলাতে আসিফ ভাই চিনে ফেলল?
শ্রেয়ার কথায় মায়ার কাছে যুক্তিসংগত মনে হলো। মানুষ বলে না, বিপদে পরলে বাঘ মহিষ একঘাটে পানি খায়, মায়ার দশাও তেমন হলো। অসহায় মায়া স্বামী খোঁজে খোঁজে দিশেহারা হয়ে আসিফকে উত্তম মনে হলো সাহায্য জন্য। কিন্তু রিদের ভয়ে আমতা আমতা করে বলল…
‘ আসিফ ভাইকে বললে যদি রিস্কে পরে যায়? রিদ খান লোকটা এমনিতেই আমাকে অপছন্দ করে, তারপর আবার এখন উনারা আমাদের নতুন আত্মীয় হয়। যদি কোনো ভাবে আমার বিয়ের খবরটা আপুর কানে ফাঁস করে দেয় তাহলে বিপদে পরে যাবো।
শ্রেয়া অসম্মতি জানিয়ে বলল…
‘ আরেহ বিষয়টা উল্টো ভাবে দেখ। তুই এমনই রিস্কে আছিস। চাইলেও তোকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারবে এমন কেউ নেই। তাছাড়া আমি রিদ ভাইকে চিনি, উনি রাগী গম্ভীর মানুষ হতে পারে, কিন্তু কারও পারসোনাল বিষয়ে উনাকে আমি এন্টারফেয়ার করতে দেখিনি আজ পযন্ত। রিদ ভাই আমার রিলেটিভ হয় সেই সুবাদে আমি ভালো করে চিনি ভাইকে। রিদ ভাই তোর পারসোনাল লাইফে এন্টারফেয়ার করবে না দেখিস। তাছাড়া আমরা শুধু ভাইয়ের কাছে হেল্প চাইব ব্যাস। তারপরও যদি তুই রিস্ক মনে করিস তাহলে আমরা সবাই মিলে রিদ ভাইকে বুঝিয়ে বললো তোর সমস্যার কথাটা। রিদ ভাই অবশ্যই বুঝবে, সাথে তোকে হেল্প করবে দেখিস। চল এবার! আসিফ ভাইকে সামনে দেখা যাচ্ছে। আগে দেখা করি তারপর সাহায্য চাইব। চল! চল!
মায়া যান্ত্রিক ভাবেই মাথা দুলাল। শ্রেয়ার সঙ্গ নিয়ে রাস্তা মাথায় পযন্ত যেতে যেতে বেশ কিছু দামড়া ছেলেপেলে মায়াকে ভাবি ভাবি বলে সালাম ঠুকলো। বিষন্ন মায়া কোনো রকম মাথা দুলিয়ে সালামের উত্তর করে পৌঁছাল আসিফ অবধি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় সেখানে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা হয়ে গেল হুট করেই। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা হয়ে যাওয়ায়, মায়া চাচ্ছিল না নিজের সমস্যার কথাটা আসিফকে আর বলতে। যেহেতু সামনে রিদ আছে তাই। মায়া চলে যেতে চেয়ে শ্রেয়াকে ইঙ্গিত করে খোঁচাল। কিন্তু শ্রেয়া মায়া ইঙ্গিতটাকে ভুল বুঝল। মনে করলো মায়া ওকে সবটা দ্রুত বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে খুঁচিয়ে। তাই শ্রেয়া আসিফসহ রিদের কাছে ফরফর করে মায়ার নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজার জন্য সাহায্য চাইল।
#চলিত….