রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-২২+২৩

0
2

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

২২
রাস্তার পাশ ঘেঁষে ছোটখাটো একটা কফিশপ। রিদ সেই কফিশপে ভিতরে না বসে বাহিরের একটা টেবিলে বসল। আসিফ তার পাশেই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। একবার গুরুগম্ভীর রিদের দিকে তাকাল তো অন্যবার কাচুমাচু করে বসে থাকা মায়ার দিকে তাকাচ্ছে আড়েআড়ে। আসলে পরিস্থিতিটায় এমন যে ফ্যাসাদে পরে আসিফ সরাসরি কারও মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। পাঁচে যদি রিদ রেগে যায় বা মায়া আসিফের সরকারি তাকানোতে বিব্রতবোধ করে সেজন্য আসিফ সরাসরি মায়ার দিকে তাকাল না। ছোট টেবিলের চারটে চেয়ারে মধ্যে রিদের মুখোমুখি বসে মায়া। শ্রেয়া, নাদিয়া দুজনই রিদের দু’পাশের চেয়ার দুটোতে বসে। মায়া ভয়, লজ্জা, জড়তায় চুপ থাকলেও শ্রেয়া, নাদিয়া দুজনে মিলে অসংখ্য বার রিদকে বলে ফেলেছে মায়ার নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে সন্ধান দেওয়ার বিষয়টি। রিদ ভিতরকার বিস্ফোরণ ভাব চেপে শ্রেয়ার মুখে সবটাই শুনলো গম্ভীর মুখে। আসলে এই মূহুর্তে রিদের কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত সেটা তক্ষুনি বুঝল না সে। রিদের মতোন একজন বিচক্ষণ মানুষ কেবল বেকুব বনে বসে রইল। মূলত রিদের কালকম্বিও ধারণাতে ছিল না তাঁর খোঁজে, তার বউ, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইতে চলে আসবে। এই গোটা বিষয়টা রিদকে বেশ বড়সড় আকারের চমকিয়েছে। রিদতো তীব্র শকটে এক মূহুর্তের জন্য রিয়াকশন বিহীন কেমন বেকুব বনে চুপ ছিল। আসলে অতিরিক্ত শকট হলে রিদ তৎক্ষনাৎ মুখ খুলে কথা বলতে পারে না। কেমন চুপ করে যায়। যেমনটা হয়েছিল প্রথম যেদিন রিদ আসিফের মুখে মায়া পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেয়েছিল, সেদিন সাথে শুনেছিল মায়া এক্সিডেন্ট করে রিদকে খুঁজতে গিয়ে মারা গিয়েছিল? তখন রিদ এক মূহুর্তে জন্য ঠিক আজকের মতোন করেই চুপ করে গিয়েছিল। মূলত রিদের গলা চেপে গিয়েছিল অতিরিক্ত শকটে। তবে সেদিন বউয়ের মৃত্যুর সংবাদে রিদ অতিরিক্ত টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করলেও আজকে ব্যাপারটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ তার টেনশন হচ্ছে না বরং বউয়ের চোখে মুখে তাকে খোঁজে পাওয়ার জন্য যে বেকুলতার ছটফট দেখছে সেটা রিদকে পৈশাচিক শান্তি দিচ্ছে। রিদ একটু সময় নিয় সুস্হিরে ফিরতে চাইল। হলোও তাই। অনেকটা সময় নিয়ে রিদ গম্ভীর মুখে বসে থেকে শুধু শ্রেয়ার কথায় শুনলো। কিন্তু অনড় দৃষ্টি তীর শুরু থেকেই তাক করা ছিল মায়ার উপর। মূলত রিদ মায়ার ভয়ার্ত কাচুমাচু মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে শুরু থেকে সবটা শুনলো শ্রেয়ার মুখে। পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হতে রিদ কেমন গা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসল চেয়ারে। বউয়ের টানে রাতে এসেছিল সে চট্টগ্রামে। সকালের দিকে ঘুমিয়ে ছিল বলে বউয়ের সাথে দেখা করতে পারেনি। এখন কাটকাট দুপুর। মায়ার পরীক্ষা শেষ। তার ভাবনা ছিল এখন মায়ার সাথে দেখা করার কিন্তু তার আগেই মায়া আগ বাড়িয়ে দেখা করতে আসে রিদের সাথে তাও নিখোঁজ স্বামীর সন্ধানে। গোটা বিষয়টায় অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল রিদের জন্য। তাছাড়া তাদের দুজনের হুট করে বিয়েটা নিয়েও রিদের মনে কিছু প্রশ্ন ছিল। কিন্তু রিদ কখনো সরাসরি প্রশ্ন গুলো মায়াকে করতে পারছিল না, কারণ রিদের পরিচয়টা মায়ার কাছে ছিল না বলে। কিন্তু আজ মুখ্যম সুযোগ বুঝেই রিদ মায়াকে মনের জমানো প্রশ্ন গুলো করতে চায়। জানতে চায় কেন সেদিন রাতে রিদকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে সে পালিয়ে গেল। কেন সেদিন রাতের পর মায়া আর রিদের খোঁজ করেনি? কেন রিদের পরিচয়টা মায়া এখনো জানে না? না জেনে বা কিভাবে মায়া অপরিচিত রিদকে বিয়েটা করে নিল সেদিন? তাছাড়া সেদিন রাতে রিদ অসুস্থ থাকলেও মায়া সুস্থ ছিল তাহলে সেদিন রাতে মায়া সরাসরি রিদকে দেখার পরও এখন কেন চিনতে পারছে না তাঁকে? কেন? যদি সেদিন রাতে স্বামীকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ছিল তাহলে এখন কেন হুলুস্থুল পাকিয়ে
এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে রিদের তথ্য জন্য। রিদকে তো প্রথম দেখায় চিনে যাওয়ার কথা? যদিও রিদের সেদিন রাতে হুশ ছিল না তারপরও সে সেদিন রাতে মায়াকে যতোটুকু দেখেছিল পরে তাদের দুজনের প্রথম দেখায় মায়াকে পুরোপুরি চিনতে না পারলেও সন্দেহ তালিকায় রেখেছিল মায়াকে এই ভেবে যে, এই মেয়েটায় হবে হয়তো সেদিন রাতের সেই মেয়েটি যার সাথে তার অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটা হয়েছিল। রিদ সন্দেহে বশে আজ এই পযন্ত আসল। জানতে পারলো তার ধারণায় ঠিক ছিল। অথচ তার বউ সরাসরি তাঁকে দেখেও চিনতে পারছে না এই বিষয়টিকে কেমন অদ্ভুত ঠেকল রিদের কাছে। সেজন্য মূলত রিদ সুযোগ বুঝে এখন সকল প্রশ্ন গুলো মায়াকে করতে চায়। কিন্তু তারপরও মায়াকে তাঁর আসল পরিচয় আপাতত দিবে না সে, অন্তত বউ তার যতদিন না পযন্ত নিজ থেকে রিদকে খুঁজে পাবে ততদিন। কপাল কুঁচকে রিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্নটা করে বলল…

‘ কি এমন পরিস্থিতি ছিল যে স্বামীর মুখ দর্শন না করেই সোজা বিয়ে করে ফেললেন।

রিদের স্বাভাবিক কন্ঠের প্রশ্নে চট করে মুখ তুলে তাকাল মায়া। সবগুলো উৎসুক দৃষ্টি মায়ার দিকেই তাক করা। সবাই প্রশ্নটার উত্তর চায় এমন। মায়া জড়তায় ইতস্তত বোধ করলো উত্তরটা দিতে। রিদ তখনো মায়ার দিকে প্রহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে। শ্রেয়া মায়ার ইতস্ততা বুঝে রিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়ে বলতে চাইল….

‘ আসলে ভাই ওদের….

টেবিলে উপরের রিদের হাতটা ইশারায় শ্রেয়াকে দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে রিদ শক্ত গলায় ধমকে বলল…

‘ তুই উত্তর দিচ্ছিস কেন? প্রশ্নটা কি তোকে করেছি? তুই ছিলি সেদিন রাতে ওর সাথে?

রিদের শক্ত গলায় দমে যায় শ্রেয়া। আগ বাড়িয়ে আর মুখ খুললো না সে। রিদ যে শক্ত ধাঁচের মানুষ দেখা গেল শ্রেয়া যদি আবার আগ বাড়িয়ে মায়ার হয়ে উত্তর দিতে চাই তাহলে থাপ্পড় একটা আজ কপালে জুটবে নিশ্চিত। রিদের ধমকে শ্রেয়া চুপ করে যেতেই মায়া খানিকটা ভয়ার্ত হলো। কাচুমাচু করে রিনরিনিয়ে রিদের প্রশ্নের উত্তরে বলল…

‘ আসলে সেদিন রাতে ঐ লোকটাকে আমার ঐভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। নিজের পরিবারের লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আধার রাতে আমি পথ হারিয়ে দিশেহারা ছিলাম। লোকটাও এক্সিডেন্ট করে সেদিন রাস্তায় পরে ছিল। কপাল ফেটে উনার মুখ ঢেকে ছিল রক্তে, রাতে অন্ধকারে ঝড়ঝাপটায় যতটুকু দেখেছিলাম তাকে সেটা আমার এখন আর অতোটা মনে নেই। তাছাড়া পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমার ভাবনাতেও ছিল না লোকটাকে মনোযোগ দিয়ে দেখব বলে। আমি ছোট মানুষ ছিলাম। তারপর পথ হারিয়ে একটা এক্সিডেন্টের মানুষকে নিয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম। ঐ লোকটার হয়তো সুগারের সমস্যা ছিল সেজন্য ঠিকঠাক দাঁড়াতে পযন্ত পারছিলনা। ঐ পরিস্থিতিতে লোকটার মুখ আমি কতটুকু দেখেছিলাম সেটা এই মূহুর্তে আমার মনে নেই। বিগত দুই বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের। অনেকটা সময় চলে যাওয়ায় ঐ লোকটার মুখ আমি ভুলে গেছি। এখন আমার আর মনে নেই। তবে যতোটা মনে আছে, লোকটা বেশ লম্বাটে আর বলিষ্ঠবান টাইপের ছিল। তাঁকে সামলাতে আমার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল।

মায়া কথা গুলো শেষ করতে রিদের দ্বিতীয় প্রশ্নটা করল….

‘ ফেইস মনে নেই। তাহলে পরিচয়টা কেন নিলেন না?

‘ বললাম তো পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমার অতো কিছু মাথায় আসেনি। মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়তাম। বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু করার মতো পরিস্থিততে ছিলাম না। আমি ভিষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। একটা অপরিচিত অসুস্থ মানুষকে নিয়ে আবারও কতো গুলো অপরিচিত লোকদের মাঝে পরলাম। তারপর আবার সেই অপরিচিত মানুষ গুলো আমাদের সাহায্যে আগে, প্রথমে আমার চরিত্রে দিকে আঙ্গুল তুলে কেমন হুমকি ধামকি দিয়ে একপ্রকার ভয় দেখিয়ে আমাদের বিয়েটা দিল। এতে আমি ভিষণ আতঙ্কিত হয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাছাড়া আমার সাথে লোকটার মানে যার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিল তিনিও তেমন সেন্স ছিল না। মানে উনি অর্ধ জ্ঞানহারা ছিল। সেজন্য সবাই সহজে আমাকে দোষারোপ করে দ্বায় দিচ্ছিল। আমি তাদের বলার সুযোগ পায়নি, যে অসুস্থ লোকটাকে আমি চিনি না পযন্ত। সবাই একই ভাবে আমার চরিত্রের দিকে আঙুল চলছিল সহজভাবে কারণ অসুস্থ লোকটা আমার কাঁধ জড়িয়ে তার শরীর ভর আমার উপর দিয়ে রেখেছিল তাই। কাজি সাহেব আমাদের থানা পুলিশের দিবে এমনকি তখন বিয়েটা না করলে আমাকে সকালে সমাজের লোকদের সামনে অপদস্ত করবে এমনটা বলেছিল। এমন বাজে পরিস্থিতিতে আমি কখনো পরিনি। এসব পরিস্থিতিতে পরলে মানুষকে কি করতে হয় বা কিভাবে সামাল দেওয়া লাগে সেটাও জানতাম না। শুধু মনে মনে দোয়া করছিলাম কেউ আমার হয়ে আসুক আর আমাকে ঐ খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাক। আর নয়তো অসুস্থ লোকটা আমার হয়ে কিছু বলুন। কিন্তু সেদিনের মতোন আমার কোনো দোয়াই কবুল হয়নি। তাই জানের ভয়ে শুধু চুপ থেকে গেলাম আর যে যেটা বলছিল সেটা করছিলাম। তাছাড়া আমাকে বিয়ে করতে অসুস্থ লোকটাও কোনো আপত্তি জানাচ্ছিল না। সে অজ্ঞান না হলেও কিছুটা হুশে ছিল। আমি ভেবেছিলাম লোকটা হয়তো কিছু বলবে বিয়ের আগ মূহুর্তে তাদের কিন্তু তিনি কিছুই বলেনি। সেজন্য আমারও কিছু করার ছিল না। হাফেজ সাহেবের পরিবার ভাবছিল আমি আমার স্বামীর গার্লফ্রেন্ড হবো। তাকে নিয়ে রাতে কোথাও ধরা খেয়ে হাফেজ সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নিতে চাইছিলাম। সেজন্য আমাদের বিয়ে পরিয়ে দেয়। আর আমি চাপা রাগে, ভয়ে হঠাৎ স্বামী হওয়ায় লোকটার পরিচয় পযন্ত জানতে চাইনি কারও কাছে। এমনকি হাফেজ সাহেবের পরিবারের কাছেও চায়নি। বিয়ের সময় অতিরিক্ত কান্নাকাটি আর ভয়ে স্বামী নামটা কাজি সাহেবের মুখে শুনতে মনে নেই। কিন্তু কাবিননামায় ঠিকই দেখেছিলাম স্বামী নাম। কিন্তু ইনিসিয়াল সিগনেচার হওয়ায় ঘুরপ্যাঁচের নামটা আমি বুঝতে পারেনি কি ছিল। সেজন্য তার নামটাও আমার জানা ছিল না।

মায়ার দীর্ঘ কথা অতলে রিদের তৃতীয় প্রশ্নটা আসল সাথে সাথেই…

‘ তাহলে আপনার স্বামীর কাছ থেকে কেন জানতে চাইলেন না তার পরিচয় সম্পর্কে?

‘ ঐ লোকটাকে সাহায্য করতে যেয়ে আমি এতো বড় বিপদে পড়লাম। তারপর সে আমাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বিয়ে করে নিল বলে রাগে আর ভয়ে স্বামীর পাশ ঘেঁষেনি সেরাতে। দূরে দূরে ছিলাম। সেরাতে হাফেজ সাহেবের বউয়ের ফোন থেকে আরিফ ভাইয়াকে কল করে শেষ রাতের দিকে আমি পালিয়ে এসেছিলাম সেখান থেকে যেন লোকটা সকালে হুশে ফিরে আমাকে আর খোঁজে না পায় সেজন্য।

চতুর্থ প্রশ্ন করে বলল রিদ…
‘তখন স্বামী থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলে এখন কেন তাঁকে খোঁজ করতে চাইছেন?

‘ তখন আমি ভিষণ ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছিলাম। আমার চারপাশে সবাই অপরিচিত ছিল বলে আমার মনে হচ্ছিল সেখানে আমি সেইফ না। নিজের জীবনের তাগিদে পালিয়ে গেছিলাম। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে লোকটাকে আমার খোঁজা দরকার সেজন্য বেশ কয়েকবার নরসিংদী গিয়ে হাফেজ সাহেবের বাড়ির লোকেশন অনেক কষ্টে খোঁজে বের করি। কিন্তু এতোকিছু পরও আজ পযন্ত লোকটার সম্পর্কে তেমন তথ্য বের করতে পারলাম না। শুধু নাম আর নাম্বারটা ছাড়া। হাফেজ সাহেব কিছুতেই আমাকে ঐ লোকটার নামটা বলেননি। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম উনাকে তারপরও তিনি বলেনি আমাকে। শুধু বলেছে কোনো এক প্রভাবশালী লোক নাকি আমার স্বামী। আমার মনে হচ্ছে ঐ লোকটা কোনো গুন্ডা বা খারাপ টাইপের মানুষ হবেন সেজন্য হাফেজ সাহেব উনার নামটা বলতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আমি হাফেজ সাহেবকে এটা বুঝাতে অক্ষম হলাম যে, আসলে আমার স্বামী যদি খারাপও হয়, তারপরও আমার তার সন্ধান চায়। চাই মানে চাই। স্বামী নামক লোকটা খারাপ হতে পারে এমনটা জেনে-বুঝেই আমি তাঁকে খুঁজছি এতোদিন ধরে। এবার আপনার সাধ্যে থাকলে আমাকে একটু সাহায্য করে, ঐ লোকটার তথ্য যোগাড় করে দিতে পারবেন? বেশি কিছু জানতে চাই না শুধু ঐলোকটা কে সেটা বললেও চলবে।

‘ স্বামীর সন্ধান নিয়ে কি করবেন? শুনলাম আপনার স্বামী নাকি আরও দুটো বিয়ে করেছে। কথা কি সত্য? তার তৃতীয় বউ হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?

রিদের সহজ কথাটা মায়া সহজ ভাবে নিতে পারলো না। গুমরে ভিতরকার কষ্ট গুলো যেন মায়ার গলা চেপে ধরল। মায়ার ভিষণ কষ্টে কান্না পেল। কিন্তু রিদের সামনে কেঁদে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইল না। রিদ ওর আত্মীয় হয় এখন। তারপর আবার মায়ার সাথে রিদের বনাবনিও হয়না কখনো। এমন একটা লোককের সামনে কেঁদে মায়া নিজের ভিতরকার অবস্থা জানাতে চাই না। মায়ার যতটুকু সম্ভব রিদের সামনে নিজের ভিতরকার পরিস্থিতি না জানিয়ে উপর থেকে শুধু সাহায্য চাইবে। মায়ার স্বামীকে ঘিরে ওর মনের অনূভুতি গুলো প্রকাশ করবে না রিদকে। যথা সম্ভব মায়ার স্বামীকে ঘিরে ভালোবাসাটা রিদকে না বলে এরিয়ে যাবে। কারণ মায়ার ভালোবাসাটা শুধু মায়ার অবধি থাকবে। সেটা আর যায় হোক না কেন মায়া অন্তত কোনো বাহিরের লোকের সাথে প্রকাশ করার করতে চায় না।

‘ লোকটা যদি বিয়ে করে তো করুক। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার স্বামী চাই না। আর না তার বউ হতে চায়। সংসার তো দূরে থাক। কিন্তু তারপরও লোকটাকে আমার চিনা লাগবে। অন্তত ডিভোর্সের জন্য হলেও আমার লোকটাকে লাগবে। ডিভোর্স না হলে আমি অন্য কোথায় বিয়ে বসতে পারবো না। আমাদের ধর্মে নেই বিবাহিত মেয়েদের স্বামী থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করা। এখন আমার ডিভোর্সের জন্য হলেও ঐ লোকটাকে প্রয়োজন পরবে। তাছাড়া আমিতো আর লোকটার জন্য সারাজীবন বসে থাকতে পারবো না। আমারও একটা জীবন আছে। কাউকে ভালোবাসার রাইট আমারও আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের যে কখনো বিয়েটা হয়েছিল সেটাও ঐ লোকটা প্রমাণ করতে পারবে না কখনো আমি জানি। কারণ বিগত তিনমাসের ধরে লোকটাকে খুঁজে খুঁজেও তার তথ্য বের করতে আমি হিমশিম খাচ্ছি সেখানে উনার আমাকে খোঁজা আরও মুশকিল হয়ে যাবে। আমাদের বিয়েটা হয়েছিল এটা প্রমাণ করার জন্য কাজী থেকে শুরু করে কাবিননামা পযন্ত নেই আমাদের। সবকিছু আগুন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আরও বছর খানিক আগেই। সেই সুবাদে আমাকে ঐলোকটা কখনো চাইলেও নিজের স্ত্রী বলে প্রমাণ করতে পারবে না। আর প্রমাণ ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না যে কখনো আমাদের বিয়েটা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে আমরা বিবাহিত হয়েও সমাজে চোখে অবিবাহিত বলে প্রথমে ঘোষিত হবো। সমাজ হোক বা আইন বিয়ের হয়েছিল এটার শক্তপোক্ত প্রমাণ না থাকলে এমনই বিয়েটা বাতিল বলে ঘোষিত হবে। সেক্ষেত্রে বলা যায় আমি কোনো ঝামেলা ছাড়ায় এই সম্পর্কে থেকে সহজে বের হতে পারবো। বিয়েটাকেও অস্বীকার করতে পারবো। কিন্তু সবকিছু শেষ করার আগে আমি অন্তত একটাবার ঐ লোকটার খোঁজ পেতে চায় তার অগোচরে। তাঁর সামনে যাব না। কিন্তু জানতে চায় সে কে। তারপর না-হয় আরিফ ভাইকে বলে সবকিছু মিটমাট করে নিবো। আমাদের ডিভোর্সের বিষয়টাও আরিফ ভাই-ই দেখবে। কিন্তু তা….

মায়ার দীর্ঘ কথা শেষ হবার আগেই গম্ভীর গলায় আওড়াজ তুলল রিদ। চাপা রাগে দাঁত পিষে বলল…

‘ আউট!

হুট করে রিদের চাপা ধমকে উৎসুক জনতার মনোযোগ ভাঙ্গল তক্ষুনি। সবাই থমথমে মুখে মায়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাইল রিদের দিকে। রিদের হঠাৎ শক্ত হয়ে উঠা মুখটা, মায়া, নাদিয়া, শ্রেয়া না বুঝলেও আসিফ বেশ ঠাহর করতে পারল। মায়া মুখে ডিভোর্সের কথাটা হয়তো রিদের ভালো লাগেনি। না লাগার কথায়। কতো কিছু করলো বউকে খুঁজতে রিদ। এমন কি বউ টানে হুটহাট পাগলামি করে সকল কাজ ছেড়েছুঁড়ে চট্টগ্রামে চলে আসল। অথচ আজ রিদের জরুরি ভিত্তিতে নিজের ফ্যাক্টরীর প্রজেক্টে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। সব ছেড়েছুড়ে শুধু মায়াকে এক পলক দেখতে চলে আসল। আজ রাতেই তাদের আবার ঢাকা ব্যাক করার কথা ছিল, অথচ সেই বউ এখন বলছে রিদকে ডিভোর্স দিবে। কৌশলে কিভাবে এই বিয়েটা অস্বীকার করে এর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে সেই বুদ্ধিটাও শেয়ার করছে রিদকে। এতো সব শুনলে কারও মাথা ঠিক থাকবে? আসিফের নিজের মাথায় তো ঘুরছে মায়ার কৌশল শুনে। এবার রিদ ভাই রাগে বশে মায়াকে থাপ্পড় না মারলেই হয়। পাবলিক প্লেসে আছে তাঁরা! তারপর আবার দলের ছেলেরাও আশেপাশে দাঁড়িয়ে। বদনাম রটে যাবে মূহুর্তে রিদ ও রিদের বাবা নাহিদ খানের নামে। জেলা মন্ত্রীর ছেলে বলে কথা। বদলাম এমনই রটে যাবে রকেটের গতিতে। মন্ত্রীর ছেলে রিদ খান এক কলেজের মেয়েকে রাস্তায় থাপ্পড় মেরেছে। এবার কেউ জানতে চাইবে না তাদের মধ্যকার স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা। সবাই শুধু জানবে আর্দশ নাহিদ খানের ছেলে রিদ খান এক নারীর গায়ের হাত তুলেছে। আসিফ ভয়ে কাচুমাচু করে রিদের হাতের দিকে তাকাল। টেবিলে উপর রাখা হাতটার শক্ত মুঠোয় একটা কলম চেপে ধরা। হয়তো নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চেয়ে সেই কলমটির উপর ছুট যাচ্ছে। বৃদ্ধা আঙ্গুলে অনবরত কলমের অটোক্যাপ চেপে চেপে শব্দ করে নিপ ভিতর বাহির করে। মায়া চট করে বুঝল না হঠাৎ রিদের মনোভাব পরিবর্তনের কারণটা। কেমন অবুঝ গলায় শুধালো।

‘ জ্বি?

রিদ ফের একই ভঙ্গিতে দাঁত পিষল…

‘ আউট।

মায়া থমথমে খেয়ে তখনো বসে রইল। রিদের শক্ত হয়ে উঠা মুখটার দিকে তাকাল। চোখ গুলো কেমন লালচে দেখাচ্ছে। হয়তো রাগে। কিন্তু কেন? হঠাৎ রাগের কি হলো এমন? মায়া বুঝল না। রিদ তখনো অনবরত কলমের ক্যাপ চেপে শব্দ করছিল। মায়া সেদিকে এক পলক তাকাল। তারপর আবারও চোখ তুলে রিদের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হলো রিদের ক্রোধিত চোখ দুটোর সাথে। যেগুলো শুরু থেকেই মায়ার দিকে তাক করা ছিল। মায়া অপমানিত বোধ করে উঠে দাঁড়াল। ওহ জানতো এই রিদ খান মায়াকে আবারও অপমানিত করবে। শুধু শুধু শ্রেয়ার কথায় মজে মায়ার এখানে সাহায্য চাইতে আসাটায় ভুল হয়েছে। এই ঘাড়ত্যাড়া লোক রিদ খানের মুড কখন কোন রুপ নেই বলা মুশকিল। এই ভালো তো এই সাপের মতোন ফুশ করে উঠে। অসভ্য লোক। ক্ষমতা দাপটে অহংকারী হয়ে গেছে। মানুষকে অপমান করতে আর গায়ে বাজে না। মায়ার এখানে আসাটায় ঠিক হয়নি। মায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খপ করে শ্রেয়ার হাত চেপে টেনে তুলতে তুলতে বলল…

‘ আমাদের এখানে আসাটায় ভুল হয়েছে শ্রেয়া। এই লোকের শরীর শুধু ক্ষমতার দাপটের অহংকার ভরা। এই লোকের সাহায্য আমার লাগবে না। আমার সমস্যা আমি নিজেই সমাধান করবো। চল এখান থেকে।

বলতে বলতে মায়া শ্রেয়াকে টেনে নিয়ে গেল নিজের সাথে। নাদিয়াও ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওদের সঙ্গে চলল। রিদ তখনো মায়ার যাওয়ার দিকে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে তাকিয়ে রইল। একই ভাবে হাতে কলমটাও চেপে যাচ্ছে। আসিফ সেদিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করল। একটু সময় নিয়ে ভয়ার্ত গলায় ডাকল…

‘ ভাই ভাবিকে কি আবার ডাকব??

রিদ দাঁতে দাঁত পিষে রাগে রি রি করে বলল…

‘ তোর ভাবিকে না উকিলকে ডাক আসিফ। এই বেয়াদব মহিলাকে সোজা করা দরকার। কতো বড় সাহস আমাকে বিচ্ছেদের কৌশল শেখায়।

‘ জ্বি ভাই।

আসিফের সম্মতিতে রিদ খেক করে উঠে….

‘ এই জ্বি কি হ্যাঁ?

‘ না ভাই আপনি যা বলছেন সেজন্য জ্বি আরকি।

‘ কি বলছি তোরে?

‘ উকিলের কথা আরকি।

‘ তো এখনো আমার মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার রুপ বের হয়ছে?

আসিফ তাড়াহুড়ো বলল…

‘ না ভাই, এইতো যাচ্ছি।

রিদের মেজাজ যেন আজ হুট করেই খিটখিটে হয়ে গেল। আসিফকে আবারও থামিয়ে বলল….

‘ কই যাবি?

‘ ভাই! উকিল ডাকতে।

‘ তোরে কইছি শুধু উকিল ডাকতে? অর্ধেক কথা শুনে যাস কেন?

আসিফ এবার সত্যি সত্যি ফ্যাসাদে পরে কাচুমাচু করে বলল…

‘ সরি ভাই। ভুল হয়ে গেছে।

রিদ পুনরায় খিটখিটে মেজাজে বলল…

‘ যা সামনে থেকে সর। বেয়াদব মহিলা মাথাটা গরম করে গেছে। আজ আর ঢাকা ফিরবো না। উকিল আর কাজি দু’টো যেন কাল বিকালের মধ্যে রেডি থাকে। এই ধান্ধাবাজ মহিলার প্রমাণ দরকার। কতো বড় সাহস আমাকে অস্বীকার করবে বলে। কাল প্রমাণ নিয়েই ঢাকা ফিরব এর আগে নয়।

‘ জ্বি ভাই।

রিদ বিরক্তির চোখ তুলে বলে…

‘ এই যাবি তুই এখান থেকে?

‘ জ্বি ভাই!

#চলিত…..

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

২৩
উতলা মনে সুস্হিরতা নয় অস্থিরতার প্রকাশ মিলে। মায়ার ক্ষেত্রেও তাই। তীব্র অস্থিরতায় কোচিং ক্লাসে মন ঠেকাতে পারছে না। কেমন নিশ্চল চোখে তাকিয়ে আছে হুয়াট বোর্ডের কালো লেখা গুলোর দিকে। একের পর এক লেসন বুঝাচ্ছে টিচার আর মায়া শুধু সেদিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে। পাশেই জুই, শ্রেয়া নাদিয়া বসে। সবার মনোযোগ হুয়াট বোর্ডের লেখার উপর। থমথমে পরিবেশে উপস্থিত টিচারের লেসন বাক্যের শব্দ ছাড়া ক্লাসে কোথায় টুঁশব্দ পযন্ত নেই। এমন নিরবতা মাঝে হুট করেই উঠে দাঁড়াল মায়া। অধ্যায়নরত শিক্ষকে উদ্দেশ্যে বলল…

‘ স্যার আমার অসুস্থ লাগছে। আমি বাসায় যাব।

মায়ার হঠাৎ কথায় ক্লাসে উপস্থিত সকল স্টুডেন্টে নজর পরল মায়ার উপর। ততক্ষণ হুয়াট বোর্ডের লেসন বুঝানো অধ্যায়নরত রহমান সাহেবও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মায়ার দিকে। মায়া তখন অসুস্থ মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে। জুই, শ্রেয়া মায়ার দু-পাশে বসায় ওকে খোঁচাল। কি হয়েছে আকারে-ইঙ্গিতে জানতে চাইল। মায়া তেমন কিছুই বলল না আর না তাকাল ওদের দিকে। একরোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রহমান সাহেবের দিকে বেড়িয়ে যাওয়ার সম্মতি পাওয়ার আশায়। হালকা ভ্রুর কুঁচকে মায়াকে দেখল রহমান সাহেব। মায়াকে অসুস্থ মনে হওয়ায় তিনি প্রশ্ন তুলে জানতে চাইল…

‘ কি সমস্যা?
মায়ার তৎক্ষনাৎ উত্তর আসল ক্লান্তিতে…
‘ স্যার আমার খারাপ লাগছে। বেশ অসুস্থ ফিল করছি। ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছি না। দূর্বলতা কাজ করছে শরীরে।

মায়ার অসুস্থতা নিয়ে আর ঘাটাল না রহমান সাহেব। সহজ গলায় সম্মতি দিল মায়াকে যাওয়ার..

‘ আচ্ছা যাও।

স্যারের পারমিশন পেতেই মায়া বই খাতা গুছিয়ে কাঁধে ব্যাগ চড়িয়ে বেড়িয়ে এলো স্যারকে সালাম দিয়ে। জুঁই তখনো ক্লাসে বসে সন্দিহান দৃষ্টিতে মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। হুট করে মায়ার কি হলো বুঝতে পারল না সে। মায়া অসুস্থ হলে জুইকে কেন বললো না এতক্ষণ? কেন বা মায়া অসুস্থ অবস্থায় জুইকে সঙ্গে না নিয়ে একা চলে গেল? কিন্তু মায়াকে দেখে জুইয়ের মনে হচ্ছে না সে অসুস্থ। দিব্বি হেঁটে চলে যাচ্ছে। এমনকি যাওয়ার পূর্বে জুইকে একটু বলে পযন্ত গেল না। কিন্তু কেন? জুই বুঝল না মায়ার মন খারাপে বিষয়টি। শুধু মায়াকে ক্লাস হতে বেড়িয়ে যেতে দেখল। কোচিং ক্লাস শেষ হতে আরও এক ঘন্টা বাকি। আপাতত এই এক ঘন্টা জুই বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে নিক তারপর না-হয় বাসায় গিয়ে জেনে নিবে মায়া আজ ক্লাস না করার কারণটি। এমনিতেও মায়ার হাবভাব ভালো না। বড় কিছু হওয়ার আগে বাসায় গিয়ে যেভাবে হোক আরিফের কানে তুলতে হবে বিষয়টি। ক্লাস পুনরায় কন্টিনিউ হতে জুই সেদিকে তাকিয়ে মনোযোগী হলো। মায়া ততক্ষণে কোচিং সেন্টারের বিল্ডিং হতে বেড়িয়ে রাস্তায় নামল। এদিক সেদিক তাকিয়ে হাঁটা ধরল বাসার রাস্তার দিকে। আজ আর অটো- রিকশা কিছু নিল না। কারণ সামনে ওর বিশেষ একটা কাজ আছে। আর এই কাজের জন্যই তো মায়া স্যারকে মিথ্যা বলে ক্লাস মিস দিলো। উহু! আসলে মিথ্যা নয় সত্যি মায়া অসুস্থ, তবে শারীরিক ভাবে নয় মানসিক ভাবে। সেই মানসিক যন্ত্রণার জন্য মায়ার কোনো কিছুতেই মন ঠিকছে না। মায়া ফুটপাত ধরে হেঁটে হেঁটে রাস্তার মুরে আসল। অনুসন্ধান চোখে এদিক সেদিক তাকাল। আজ দুপুরের তো রিদের সঙ্গে মায়ার এদিকটায় দেখা হয়েছিল। এখন আসিফদেরও এদিকটায় কোথায় পাওয়া যাওয়ার কথা। মায়া হেঁটে আরও একটু সামনে এগোল। আশেপাশে রিদ বা আসিফ কাউকে দেখল না। যে রেস্টুরেন্টে মায়া দুপুরে বসে রিদের সঙ্গে কথা বলেছিল সেখানটাও রিদ বা তাদের লোকদের দেখা গেল না। মায়ার হতাশায় বুক ভারি হলো। মনে মনে আরও একবার মায়া নিজেকে শুধালো, এই ভেবে যে, তখন মায়ার ঐভাবে রিদের কথায় রেগে গিয়ে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি। মায়াতো শুরু থেকেই জানতো রিদ খান যে ত্যাড়া স্বভাবের। মায়াকেও অপছন্দ করে। এমন অপছন্দের মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে যে রিদ খান মায়াকে একটু আধটু অপমান করবে সেটা মায়ার মাথায় আগেই রাখার দরকার ছিল। তাছাড়া প্রয়োজনটা মায়ার ছিল, রিদের নয়। তাই ব্যবহারে নমনীয়তা মায়ার মাঝে রাখা দরকার ছিল রিদ খানের কথায় রেগে না গিয়ে। ভুল মায়ার হয়েছে। সাহায্য মায়ার দরকার রিদ খান থেকে। এখন মায়া রিদ খানকে সরি বলে আবারও সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে মায়ার নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজা কতোটা দরকার। এজন্য তো ক্লাস মিস করে রিদের সঙ্গে দেখা করতে বের হলো সে। মায়া আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকাল অনুসন্ধান চোখে। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে আরও একটু সামনে এগোল। দৃষ্টি তখনো মায়া এলোমেলো রিদকে খুজতে। কিন্তু হঠাৎই
দেখা হলো সিনিয়র ভাই রাকিবের সঙ্গে। মূলত রাকিব রাস্তা পার হয়ে এদিকটায় আসছিল কোচিংয়ে সেন্টারে উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে মায়াকে দেখায় সে মত বদলিয়ে কোচিং সেন্টারের না গিয়ে মায়ার পথে এসে দাঁড়াল। এগিয়ে আসতে আসতে মায়াকে কুশলাদি বিনিময় করে জানতে চাইল…

‘ ভালো আছো মায়া?

অন্যমনা হয়ে হাঁটছিল মায়া। রাকিবের কন্ঠস্বর পেয়েই চোখ তুলে তাকাতে দেখল রাকিবের হাসিহাসি মুখখানা। মায়া অস্তিত্ব হলো। তারপরও সৌজন্য বজায় রেখে অল্প হেঁসে বলল…

‘ জ্বি ভাইয়া ভালো! আপনি?
‘ এইতো ভালো। তোমাকে পেয়ে আরও ভালো হয়ে গেলাম। তা এই সময়ের কোচিংয়ে বাহিরে কি করছো? তোমার তো ক্লাস চলছে মনে হয়?

রাকিবের কথায় হাসফাস করল মায়া। লোকটা সরাসরি মায়াকে আজকাল প্রেমনিবেদন করে বেড়ায়। মুখের ভাষায় অন্তত তাই প্রকাশ হয়। মায়া ইতস্ততায় মিইয়ে কাঁধে ব্যাগটা টেনে বলল…

‘ জ্বি ভাইয়া ক্লাস চলছে। আসলে আমি একটু অসুস্থ ফিল করছিলাম সেজন্য স্যারকে বলে বাসায় চলে যাচ্ছি।

মায়ার কথা শেষ হতেই উদ্বিগ্নতার দেখা গেল রাকিবের মাঝে। আগ বাড়িয়ে মায়া কপালে হাত রেখে অসুস্থতা প্ররখ করতে গেলে মায়া দ্রুততায় পিছু হাঁটে। রাকিব সেদিকে তাকিয়ে একই উদ্বিগ্নতায় বলল…

‘ কি হলো মায়া পিছিয়ে যাচ্ছে কেন? তুমি কি বেশি অসুস্থ? চলো ডাক্তারের কাছে যায়।

রাকিবের অযথা কেয়া দেখানোটা পছন্দ হলো না মায়া। মায়াকে কেউ অকারণে অযাচিত ভাবে সামান্য ছুঁয়ে দিবে সেটা মোটেও পছন্দ না। তারপরও মুখ বাড়িয়ে রাকিবকে কঠিন বাক্য বলল না। এই এলাকার ছেলে। তারপর আরিফের সহপাঠী বন্ধু। আবার মায়ার সিনিয়র। তাই মায়া কিছু বললে এখন ঝামেলা হতে পারে সেইভেবে কথা বাড়াল না। শুধু বিরক্তি চেপে রাকিবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল। কিন্তু অধৈর্য্যের রাকিব ফের মায়ার পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে একই উদ্বিগ্নতা দেখিয়ে বলল…

‘ কি হলো কোথায় যাচ্ছে তুমি? চলো আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে। ভয় পেয়ো না, আমি আরিফকে ফোন করে বলে দেব তুমি আমার সাথে আছো।

বিরুক্তির জেদ্দি গলায় বলল মায়া…

‘ ভাইয়া প্লিজ পথ ছাড়ুন। আমার কিছু হয়নি! ভালো আছি আমি।

মায়ার কুঁচকানো চোখ মুখ দেখে রাকিব জানতে চাইল…

‘ তুমি কি আমার সাথে অস্তিত্ববোধ করছো মায়া?
মায়ার তৎক্ষনাৎ উত্তর…
‘ জ্বি!

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি! কোনো সমস্যা?

রাকিব কিছু বলার আগেই গমগমে গলার স্বর কানে আসল দুজনের। মায়া, রাকিব দুজনেরই হাল্কা চমকে পিছনে তাকাল। দেখল সুন্দর দেখতে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে। ছেলেটির নাম রাহাত। রাকিব চিনে। রিদ খানের ছেলেপেলে হলো রাহাত। মায়াও চিনে রাহাতকে তবে নাম জানে না। মায়ার সাথে রোজ সকাল বিকাল করে দেখা হয় রাস্তায়। তখন মায়াকে ভাবি ভাবি ডেকে কুশলাদি জিগ্যেস করে। প্রথম প্রথম মায়া ভয় পেলেও একটা সময় বিরক্তি হতো আগ বাড়িয়ে ভাবি ডাকা নিয়ে। কিন্তু এখন আর বিরক্তি হয়না। বরং ভালোই লাগে এতো বড় দামড়া দাামড়া ছেলেদের কাছে সম্মান পেতে। শুধু এরা নয়, দেখা যায় রাস্তা ঘাটে, কলেজে, ক্যান্টিনে সবখানে ছোট -বড় সবাই মায়াকে ভাবি ডেকে সম্মোধন করে এজন্য এখন আর মায়া ঐভাবে রিয়েক্ট করে না। বরং মায়া নিজেকে সেইফ ফিল করে। মায়ার মনহয় এই ছেলে গুলোর জন্যই মায়ার আশেপাশটা সবর্দা নিরাপদ থাকে। কেউ মায়াকে অহেতুক বিরক্ত করতে পারে না। যদিও বা কেউ মায়াকে ডিস্টার্ব করতে আসে তাহলে দেখা যায় তার কিছুক্ষণে মধ্যে রাহাতের মতোন একটা না একটা ছেলে হাজির হবে সেখানে আর মায়াকে ভাবি ভাবি ডেকে সম্মান দিয়ে ঐছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাবে তক্ষুনি। এতে মায়ার সুবিধা হয়। এখন আর বাজে কোনো পরিস্থিতির মুখে পরতে হয় না মায়াকে এদের জন্য। সেজন্য মায়াও নিজেকে সবার জাতির ভাবি বলেই মনে করে। যে জাতির ভাইয়ের জন্য মায়াকে ভাবি ডাকা হোকনা কেন? সেই জাতির ভাইতো আর মায়াকে ডিস্টার্ব করছে না, সেজন্য মায়াকে এই দামড়া দামড়া ছেলেপেলেদের ভাবি ডাকা নিয়ে আপত্তি নেই। বরং ডাকুক। এতে লাভ মায়ারই। এই যেমন এখন মায়াকে সিনিয়র ভাই রাকিবের হাত থেকে বাঁচাতে হাজির হলো এই ছেলে। এতে মায়ার সেই জাতির ভাইকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। যদি কখনো জাতির ভাইকে সামনে থেকে মায়া পাই তাহলে অবশ্যই ধন্যবাদ একটা দিবে। মায়া রাহাত ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বেশ সৌজন্যতা দেখিয়ে বলল…

‘ ওয়ালাইকুম সালাম ভাইয়া। আপাতত একটু সমস্যায় আছি বলতে পারেন।

মায়ার কথায় রাহাত এগিয়ে আসল। রাকিব চোখ ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। রাহাত ভাবি ডাকছে মায়া সেই ডাকে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে জবাব দিচ্ছে। আবার নিজের সমস্যা কথাও বলতে চাচ্ছে বলে ব্যাপারটা রাকিবের ভালো লাগল না। সে অসন্তুষ্ট চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে। রাহাত ততক্ষণে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে রাকিবকে সরাসরি দেখে মায়ার দিকে তাকাল। ব্যবহারে নমনীয়তা দেখে সম্মানে দিয়ে বলল…

‘ জ্বি ভাবি আমাকে বলুন কি সমস্যা? আমি আপনাকে হেল্প করছি।

রাকিবকে আঁড়চোখে এক পলক দেখে মায়া রাহাতের কাছে সরাসরি বলল…

‘ আসলে তেমন কিছু না। আমি আসিফ ভাইদের খোঁজ করছিলাম। আশেপাশে কোথাও দেখছিনা তাই আপনাকে জিগ্যেসা করলাম। আসলে আমার রিদ ভাইয়ার সাথে একটা জরুরি কাজ ছিল। এখন উনাকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?

সন্দিহার৷ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাকিব মায়ার কথার পিষ্ট প্রশ্ন করে জানতে চাইল…

‘ তোমার রিদ ভাইয়ের সাথে কি কাজ?

রাকিবের কথায় মায়া বিরক্তি নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই ঝটপট উত্তর করল রাহাত বলল…

‘ ভাবি! ভাইতো আমাদের সামনেই আছে। ঐযে, কালো থাই গ্লাসটা দেখছেন এটা পিছনে ভাই বসে আছে। এটা রিদ ভাইয়ের বাবার অফিস। এখন ভাই এখানেই আছে। কালো গ্লাস হওয়ায় আপনি দেখতে পারছে না তবে আমাদেরকে ভাই সরাসরি দেখতে পারছে গ্লাসের ওপাশ থেকে। আপনি ভিতরে যান। ভাইকে সেখানে পাবেন।

বিষন্নয়ে মায়া ঘাড় ঘুরে তাকাল কয়েক কদম দূরে রাস্তা পাশে বড়ো থাই গ্লাসের উপর। সূর্যের আলোয় ভিতরকার মানুষজন দেখা যাচ্ছে না তবে ভিতরে বসে থাকা মানুষ গুলো যে অনাহেষে মায়াদের দেখা যাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো মায়া। হঠাৎ মায়ার ধ্যান ভাঙলো রাহাতের পরবর্তী কথায়। রাহাত এগিয়ে এসে রাকিবের একবাহু ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল…

‘ আরে রাকিব ভাই তোমার সাথে আমার অনেক দিন ধরে গল্প করা হয়না। তুমি আমার সাথে চলো। আজ আড্ডা দিব। এখানে দাঁড়িয়ে কি করবে? চলো! চলো!

রাহাত কথা গুলো বলতে বলতে রাকিবের হাত টেনেটুনে জোর পূর্বক নিয়ে গেল নিজের সাথে। রাকিব তখনো মায়ার দিকে তাকিয়ে বলছে নিজের খেয়াল রাখতে। মায়া রাহাত চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। চাপা শ্বাস ছেড়ে কাঁধের ব্যাগটা আরও একটু টেনে ফুটপাত ছেড়ে কয়েক কদম এগিয়ে দাঁড়াল থাই গ্লাসের দরজার সামনে। মায়া ঢুকা দেওয়ার আগেই ভিতর থেকে আসিফ দরজা খুলে বত্রিশ পাটিদাঁত দেখিয়ে হাসলো। মায়া আসিফের হাসিহাসি মুখখানার দিকে তাকিয়ে বলল…

‘ ভাইয়া আপনাদের সাথে কথা ছিল। রিদ ভাইয়া কি ভিতরে আছেন?

‘ জ্বি আপু আসুন।

আসিফ দরজা ছেড়ে দাঁড়াতে মায়া পাশ কাটিয়ে ভিতর ঢুকতে মুখোমুখি হলো রিদের তীক্ষ্ণ প্রখর রোদে দৃষ্টির সঙ্গে। কেমন একঘোয়ামী কটমট চোখে তাকিয়ে মায়া দিকে। মায়া রিদের শক্ত দৃষ্টিতে থতমত খেয়ে বসল। ভাবল অসময়ে চলে আসায় হয়তো রিদ রেগে গেছে। কিন্তু মায়ার কথা বলাটা জরুরি ভেবে নিজেকে সাহস দিল। কয়েক কদম হেঁটে রিদের টেবিলের সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে সালাম দিয়ে বলল…

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

রিদ উত্তর করলো না। বরং দৃষ্টিতে আরও তীক্ষ্ণতা তেজ বাড়লো মায়ার। মুখটাও কেমন শক্ত চোয়ালে দেখাল রিদের। মায়া বুঝল রিদ হুটহাট রেগে যাচ্ছে কেন? মায়া অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতে? নাকি অন্য কোনো কারণ? হয়তো মায়ার অসময়ে উপস্থিতর জন্য বিরক্ত। দুপুরে দিকে তো রিদ মায়াকে অপমান করেছিল আর তাতে মায়া রেগেমেগে পাল্টা জবাব দিয়েছিল। আর রিদ খানের সাহায্য চাইবে না বলে কর্ড়া কথাও শুনিয়েছিল। এখন আবার মায়াকে রিদ খানের দোয়ারে আসতে দেখে হয়তো মায়ার উপর রেগে যাচ্ছে। মায়া রিদের রাগ শান্ত করতে চাই বলে হাসফাস করে মিনমিন গলায় বলল…

‘ আই এমন সরি ভাইয়া। আসলে আমার তখন আপনার সাথে ঐভাবে রেগে কথা বলা উচিত হয়নি। আমার ভুল হয়েছে এজন্য আমি আবারও সরি। আমাকে ক্ষমা করে দিন ভাইয়া। আম…

মায়ার কথার মাঝেই শুনা গেল রিদের শক্ত তেজি গলার স্বর…
‘ আসিফ বাইরে যা।
‘ জ্বি ভাই!

মায়া চমকে পিছনে তাকাতে দেখল আসিফ ততক্ষণে দরজা বাহিরে চলে গেছে। এবং থাই গ্লাসটা টেনে বাহির থেকে বন্ধ করে দিচ্ছে। মায়া ঘাবড়ে সামনে রিদের দিকে তাকাল। রিদ তখনো মায়ার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে। মায়া তাকানোতে চোখাচোখি হলো দুজনের। মায়া দৃষ্টি নত করলো। ভয়ার্ত মুখে আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। বিশাল অসিফ কক্ষ জুড়ে মায়া আর রিদ ছাড়া অন্য কেউ নেই। মায়া হঠাৎ অজানা ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। একা একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলে সঙ্গে এভাবে দেখা করতে চলে আসাটা মায়ার ঠিক হয়নি ভেবে আরও ভয়ার্ত হলো। এখন চলে যাওয়াটা মায়ার ঠিক হবে কিনা তাও ভাবল। যদি রিদের মতিগতি মায়ার নিকট ভালো না ঠেকে তাহলে টেবিলের উপর কাঁচের গ্লাস দিয়ে রিদের মাথা ফাটাবে বলে মনে মনে ঠিক করেও নিল। ভয়ার্ত ভাবুক মায়ার ধ্যান ভেঙে শুনা গেল রিদের স্বর…

‘ আমার রুচিতে পঁচা ধরেনি, যে আপনার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখাব। অহেতুক ভয় পাওয়া বন্ধ করেন। রিদ খানের টেস্ট এতো নিচু নয় যে আপনার মতোন মেয়ের প্রতি রুচি দেখাবে। যার স্বামী থাকা শর্তেও রাস্তায় বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এমন একাধিক পুরুষে আসক্ত নারীরা আর যায় হোক রিদ খানের রুচিতে অন্তত পরে না তাঁরা।

রিদের কথার অপমানে মায়ার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রাগে। মায়া একাধিক পুরুষের আসক্ত নারী? এমন অপমানজনক কথা মায়াকে ওর জীবনেও কেউ বলেনি। ঘৃণায় মায়ার শরীর জ্বলে উঠল। এত সময় ধরে রিদ খানকে নিয়ে মনের ভিতরকার অজানা ভয়টা যেন মূহুর্তে কেটে গিয়ে তীব্র রাগ ভর করলো মায়ার শরীরে। কিন্তু তারপরও বোকামি করলো না। আর না দুপুরে মতোন রেগেমেগে আগুন হয়ে রিদকে অযাচিত কিছু বলতে চাইল না, যেটা মায়ার জন্য এই মূহুর্তে ভালো হবে না বলে মনে করল। কারণ মায়ার রিদের থেকে সাহায্য চাই। তাই ব্যবহারে নমনীয়তা মায়ার দরকার। রিদ খান তো তার ত্যাড়া স্বভাব দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মায়াকে আপাতত নিজের আত্মসম্মান সাইডে রেখে রিদের সঙ্গে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে হবে। তবে একবার যদি মায়ার নিজের নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ পেলে যায় রিদ থেকে তাহলে এই জীবনেও আর সে রিদ খানে দার সে দারবে না। তখন রিদ খান তার রাস্তায় আর মায়া ওর নিজের রাস্তায়। মায়া নিজের রাগ চেপে স্বাভাবিক ভাবেই রিদের শক্ত হয়ে থাকা মুখটা দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে ধুপ করে রিদের মুখোমুখি টেবিলের চেয়ারটা টেনে বসল। কাঁধের ব্যাগটা টেবিলে উপর রাখতে রাখতে রিদের কথার পিষ্টে সৌজন্যে হাসি বজায় রেখে বলল…

‘ কিযে বলেন না নেতা সাহেব? কোথায় আপনি আর কোথায় আমি। আপনি হলেন একজন অসাধারণ টাকাপয়সা ওয়া বড়লোক মানুষ আর আমি হলাম অতি সাধারণ একজন দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আপনার রুচিতে আমাকে পরলে হবে বলুন? আপনার সাথে আমার যায়? আমাকে সাথে যায় আমার লেভেলের কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ কোনো যুবককে। আমার ধরার হলে সেই টাইপেরই কাউকে ধরবো। তারপরও আপনার ইন্টারেস্টে আসার মতোন স্পর্ধা দেখাব না। আচ্ছা যায় হোক! আপনাকে একটু ঝালাতে চলে আসলাম। যদিও আমার উপস্থিতিতে আপনি বিরক্ত বোধ করছেন। তারপরও এই মূহুর্তে আপনাকে ছাড়া আমি দ্বিতীয় কোনো অপশন খোঁজে পাচ্ছি না বলেই বাধ্য হয়ে চলে আসলাম। আসলে আপনার কাছে আমার গোপনীয়তার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়ে গেছে, যেটা আপনি ছাড়া আমার পরিবারের বড়োরা আর কেউ জানে না। সেজন্য আপনাকে ছাড়া এই মূহুর্তে আমি দ্বিতীয় কোনো পথ দেখছিনা, যে আমাকে আমার নিখোঁজ স্বামী খোঁজ দিতে পারবে। আপনার তো অনেক ক্ষমতা, অনেক দাপট, আপনি চাইলেই আমার সমস্যাটি সহজেই সমাধান করে দিতে পারবেন। আসলে আমার এতো তাড়ার কারণ হলো ঐ যে তখন আপনি এই থাই (আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে) গ্লাসটা দিয়ে রাস্তায় আমার সাথে একটা ছেলেকে দেখেছিলেন না? উনার নাম রাকিব। আমার বয়ফ্রেন্ড। লোকটা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। বিয়েও করতে চাই। কিন্তু আমি করতে পারছি না। আসলে আমি আঁটকে আছি আমার অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটার জন্য। স্বামীকে চিনে না। তাই তাঁকে ডিভোর্সটাও দিতে পারছি না। আর মেয়েদের তালাক না হলে যে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায় না সেটাতো আপনি জানেনই ভাইয়া। তাই প্লিজ আমার দুপুর কথা গুলো আপনি মনে রাখবেন না। ছোটবোন বা বিয়াইন হিসাবে মাফ করে দিয়ে আমাকে একটু সাহায্য করুন প্লিজ। আমার ঐ লোকটাকে মানে আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাঁকে খোঁজে পাওয়া খুব দরকার। প্লিজ ভাইয়া আপনি আমার প্রয়োজনটা বুঝে লোকটাকে খোঁজে দিননা।

মায়া কথা গুলো শেষ করতে করতে টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাসটার হাতে নিয়ে এক চুমুকে সবটা শেষ করে আওয়াজ তুলে টেবিলে রেখে ফের তাকাল রিদের দিকে। মূহুর্তে চোখাচোখি হলো রিদের শীতল দৃষ্টিজোড়ার সাথে। এতক্ষণের শক্ত রাগী চোয়ালটা আর নেই রিদের। কেমন ঠান্ডা আর শীতল দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে মায়ার দিকে। মায়া রিদের হুটহাট মুড পরিবর্তন হওয়া কারণটা বুঝল না। লোকটা এই রেগে যায়, তো এই শীতল। রিদ হঠাৎ রেগে গেলে যাও বুঝা যায় এখন তান্ডব হবে কিন্তু একদম শীতল হয়ে গেলে আরও ভয় লাগে। তখন মায়ার মনে হয়, ঠান্ডা মাথায় রিদ খান আরও ভয়ানক। এবার আল্লাহ জানে এই লোক মায়ার সাথে আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে। ভালো ভালো মায়ার ঝামেলাটা মিটে গেলেই কেটে পরবে সে। এই রিদ খানকে চিনে বলে জীবনে দাবিও করবে না। মুখোমুখি হওয়ায় তো দূর। এমনই স্বামী খোঁজে দিশেহারা হয়ে মায়া কতোগুলো মিথ্যা কথা বললো রাকিব ভাইকে জড়িয়ে। এবার যদি রিদ খান মায়ার মিথ্যা তাড়া দেওয়াটা বুঝে অন্তত ওর নিখোঁজ স্বামীর খোঁজটা এনে দেয় তাহলে মায়া আর সামনে পরতে চাইবে না এই রিদের। প্রতিবারই রিদ খানের অপমান ভিষণ গায়ে লাগে মায়ার। তাছাড়া মায়া এতো দিনে এতোটাও বুঝতে পারে না রিদ খানের মতো লোক কেন শুধু শুধু মায়ার পিছনে পরে মায়াকে অকারণে অপমান করে বেড়ায়। কি এমন শত্রুতা রিদ খানের সাথে মায়ার যার জন্য এমন করে? কই জুই, শ্রেয়া বা অন্য কোনো মেয়েদের সাথে তো মায়া রিদ খানকে কথা বলতেও দেখে না। এমনকি মায়ার বোন জুই! পাশাপাশি রিদের আত্মীয় ও হয়। কই জুইয়ের সাথে আজ পযন্ত রিদ খানকে দেখল না মুখ খুলে একটা কথা বলতে। সেখানে শুধু মায়ার সাথে কথাও বলে আবার অপমানিত করে। আজব!

‘ জানে মারা পরবে মনে হয়!
ভাবুক মায়া ধ্যান ভাঙলো রিদের নিটোল খাপছাড়া কথায়। চমকে উঠে তড়াক করে তাকাল রিদ শান্ত মুখটার দিকে। ‘কে জানে মারা পরবে? বিষয়টি বোধগম্য না হওয়া মায়া রিদকে প্রশ্ন করলো তক্ষুনি…

‘ কে মারা পরবে?
‘ আপনার বয়ফ্রেন্ড।
‘ মানে? কেন?

রিদ মায়ার উত্তেজনার বাক্যে উত্তর করলো না। অযাচিত কথা বলে মাথাটা আর গরম বানাতে চাচ্ছে না রিদ। তার যা করার সে এমনই করে নিবে। এই মহিলাকে বলে আর লাভ নেই। বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রেম করাটাও না-হয় সে পরে দেখে নিবে। আপাতত এই মহিলাকে একা পেয়ে এই মূহুর্তে হাত ছাড়া করবে না রিদ। সুযোগের সদয় ব্যবহার সেও করবে। কাল রাত অবধি রিদের মনে হয়েছিল বউ তার প্রেমে দিশেহারা হয়ে তাঁকে খোঁজচ্ছে। কিন্তু আজ দুপুর থেকে রিদের মনে হচ্ছে বিষয়টা উল্টো। তার ধারণা হয়তো ভুল ছিল। বউ তাকে ভালোবাসে খোঁজছে না বরং ডিভোর্সের আশায় তাঁকে চায়। আবার বলছে বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে। এই বিষয়টা যে রিদের কোথায় গিয়ে আঘাত করছে সেটা কাকে বুঝাবে রিদ? রিদ মায়ার মতিগতি বুঝতে চেয়ে আর শক্ত হলো না। বরং শান্ত আর গম্ভীর থাকল। হুট করে বসা চেয়ারে গা এলিয়ে টেবিলে উপর থাকা ছোট কিউব বলটা হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মায়ার উদ্দেশ্য বলল…

‘ আপনার স্বামীর খোঁজ দিলে আমার লাভ? আমি কি পাব??

রিদের নিরদ্বিধায় আবদারে থমথমে খেয়ে গেল মায়া। খানিকটা লজ্জাও পেল। আসলেই তো রিদ খান কি আর মায়াকে এমনই এমনই ফ্রীতে কাজ করে দিবে? অবশ্যই কাজের বিনিময় লাগবে। তাহলে মায়া কেন এতক্ষণ যাবত টাকাপয়সা কথা ভাবিনি? কেন মায়ার মাথায় আসেনি দুনিয়াতে ফ্রীতে কোনো কিছু হয়না টাকা ছাড়া। ভাবলেও বা কি মায়ার কাছে তো টাকাপয়সা নেই। রিদ যদি মায়াকে সাহায্য করতে চেয়ে মোটা অংকের টাকা চায় তাহলে মায়া কি করে দিবে? কিভাবে যোগাড় করবে এতো গুলো টাকা?

‘ আমার কাছে তো এই মূহুর্তে টাকা নেই। তবে আপনি আমাকে বলুন কতো দিতে হবে আপনাকে?? আমি টাকা যোগাড় করে দিয়ে দিব দ্রুত।

‘ বাকি কাজ ফাঁকি। বাকি শব্দটা আমার ডিকশনারিতে নেই। যা দেওয়ার নগদে দিবেন তারপর কাজ হবে।

মায়া বেশ অসহায় বোধ করল টাকা না থাকায় সাথে বের অপমান হলো। কতো টাকা চাই রিদের সেটাও মায়া বুঝতে পারছে না। তবে রিদের মতিগতি বলছে সে অনেক টাকা চাইবে মায়ার কাছে থেকে। মায়া এতো টাকা যোগাড় করবে কোথায় থেকে?

‘ কতো চাই আপনার?

‘ আমার তো অনেক কিছুই চাই। আপনি কতো দিতে পারবেন সেটা বলেন?

‘ আপনি বলুন!
‘ দু লাখ

মায়া চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে রিদের দিকে তাকায়। এতো টাকা মায়াকে বিক্রি করলেও পাওয়া যাবে না। সামান্য একটা লোকের তথ্য জন্য দু লাখ টাকা চাইছে এই লোক? আল্লাহ! মায়া এতক্ষণ বুঝতে পারছে এসব নেতাফেতারা শুধু মায়ার মতোন অসহায় মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা উশুল করে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। আর কিছু না।

‘সামান্য একটা মানুষের তথ্যর জন্য কেউ এতো টাকা চাই? এতো টাকা আমাকে বিক্রি করলেও পাওয়া যাবে না।
‘ আমি কিনব আপনায় হবেন বিক্রি আমার কাছে?

রিদের আপত্তিকর কথায় মায়া থমথমে খেয়ে বসে। রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে হাসফাস করে মায়া ফের আপত্তি জানিয়ে মিনমিনিয়ে বলল…

‘ আমার কাছে এতো টাকা নেই। আপনি কমিয়ে বলুন।

‘ উহুম কমানো যাবে না। দু লাখই লাগবে আমার। তবে আপনাকে একটা পরামর্শ দেয়। দুইটা কিডনি দিয়ে কি করবেন? স্বামীর জন্য একটা কিডনি আমাকে দিয়ে দেন। আমি সেটা বিক্রি করে দেয়। আমার দু লাখ টাকাও আসবে, সাথে আপনি আপনার নিখোঁজ স্বামীর তথ্যও পেয়ে যাবেন। কি বিক্রি করবেন স্বামীর জন্য নিজের একটা কিডনি?

রিদের কথায় ভাবুক হলো মায়া। কথা গুলোও বেশ যুক্তিসংগত মনে হলো মায়ার কাছে। মায়া আসলেই দুইটা কিডনি দিয়ে কি করবে? একটা কিডনি বিক্রি করে দিলেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাছাড়া একটা কিডনি দিয়ে ও তো মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে। সেক্ষেত্রে মায়াও বাঁচবে। কিন্তু কথা হলো একটা কিডনি দিয়ে মানুষ বাঁচে কতোদিন? সেটাও তো মায়া জানে না। মায়ার আগে সেটা জানতে হবে তারপর বাকি সবকিছু। মায়া বেশ ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করলো রিদকে…

‘ আচ্ছা একটা কিডনি দিয়ে মানুষ বাঁচে কতোদিন?

মায়াকে নিজের কথা জালে ফাঁসাতে পেয়ে রিদ বাঁকা হাসলো। তীক্ষ্ণ চোখ ঘুরাল মায়ার ভাবুক চেহারার দিকে। দীর্ঘ সময়ে নিয়ে হাতের মুঠোয় চেপে রাখা কিউব বলটা এবার টেবিলের রাখল। আর তাতে ছোট শব্দ হলো। কিউবটা টেবিলের উপর রাউন্ড তুলে রিদ মায়াকে বলল…

‘ এই ধরেন, অর্ধাঅর্ধি বছর বাঁচবেন! যেখানে ষাট বছর বাঁচতেন সেখানে এক কিডনি দিয়ে ত্রিশ বছর বাঁচবেন। তবে ত্রিশ বছরও কিন্তু কম না হ্যা? অনেক দিন কিন্তু! তাই স্বামী জন্য একটা কিডনি বিক্রি করায় যায়। কি বলেন?

রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ মত বদলাল মায়া। আপত্তি করে বলল…

‘ উহুম! তাহলে কিডনি দেওয়া যাবে না! কিডনি প্ল্যানিং ক্যান্সেল। অন্য কিছু বলেন থাকলে।

‘ কেন? মত বদল করলেন নাকি? এখন আর স্বামীর লাগবে না?

‘ উহুম! স্বামীকে অবশ্যই চায়। তবে নিজের জীবনের বিনিময়ে নয়। আমার সংসারে পর নারী চায় না। দেখা গেল তাঁকে খোঁজতে গিয়ে একটা কিডনি আমার চলে গেল। বাকি এক কিডনি নিয়ে স্বামীর সাথে ত্রিশ বছর সংসার করার পর, আমি মারা গেলে, সে বাকি ত্রিশ বছর পার করার জন্য ধেই ধেই করে আরেকটা বিয়ে করে নিবে। আমি যে তারজন্য জীবন দিলাম সেটা দেখবে না। সব পুরুষ মানুষ একিই হয়। এদের বুড়ো বয়সেও কুড়ার ডাক দেয়। তাঁর জন্য স্বামীদের বিশ্বাস করতে নেই। আমিও করবো না। সেজন্য অল্পতে আমাকে মরলে চলবে না। আমি মরলে, আমার জায়গায় তার জীবনের ঠিক আরেক জনের জায়গায় হবে। আমি যে তাঁকে খোঁজতে গিয়ে নিজের আয়ু কমালাম সেটা আর সে দেখবে না। বরং সে দেখবে তার নতুন বউ। এবং আমাকে ভুলে দিব্যি সে সুখের সংসার করবে। আর সমাজ দেখানো অযুত দিবে আমাদের ইসলামের শরীয়তে চারটা বিয়ের বিধান আছে বলে, সেজন্য তার বউ নেই বলে সে আরেকটা বিয়ে করছে। আমি জীবিত থাকার অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করেনি এমনটা বলে আলগা পিরীতিও দেখাতে পারে। এজন্য কিডনির প্ল্যানিং ক্যান্সেল। এর চেয়ে ভালো আমি বরং দুই কিডনি নিয়ে জীবিত থেকে স্বামীর উপর নজর রাখি। মরে গেলে তো সবশেষ।

মায়া লম্বা চওড়া কথা রিদ হতভম্ব হয়ে গেল। সে কখনো ভাবিনি মায়া এতোটা গভীরে ভাবে। দুজনের পরিচয় এখনো হয়নি অথচ না দেখেই রিদকে সন্দেহ তালিকা ফেলে দিল তার বউ। তাছাড়া এই মেয়ের কথায় স্পষ্ট সে স্বামীর সংসার করতে চায়। রিদ বাজিয়ে দেখবে একটু?

‘ সংসার করতে চাও?
অন্যমনস্ক হওয়া রিদের কথা প্রথমবারের বুঝল না মায়া…
‘ জ্বি?
‘ সংসার করতে চান স্বামীর সাথে?
মায়া হাসফাস করে দৃষ্টি করলো রিদের থেকে। রিদ মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বুঝল মায়া রিদকে উত্তরটা দিতে সংকোচ বোধ করছে। সেজন্য রিদ মায়াকে উভয় দিয়ে বলল…

‘ নির্ভয়ে বলেন। আমি কাউকে বলবো না।
‘ হুম!
মায়া ছোট সম্মতিতে রিদের ভিতর কাঁপলো। সেই কম্পন শক্তপোক্ত হাতেও দেখা গেল। যার তুপে হাতের মুঠোয় থাকা বলটা বেখেয়ালি ছুটে ফ্লোরে পরল শব্দ করে। হঠাৎ শব্দে কেঁপে উঠল মায়া। বলটা ঘুরাতে ঘুরাতে কক্ষে একপাশে গিয়ে ঠেকল। মায়া সেদিকে এক পলক তাকিয়ে রিদের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হলো রিদের ঘোলাটে অদ্ভুত দৃষ্টির সাথে। মায়ার শরীর কাটা দিল রিদের অদ্ভুত দৃষ্টিতে চোখাচোখি হতে। মায়া দৃষ্টি নত করলো। রিদ সেইভাবে জিগ্যেসা করল…

‘ আপনি যে বললেন, আপনার স্বামী পূর্ব বিবাহিত?
‘ উনি মিথ্যা বলেছেন আমায়। উনার কোনো বউ নেই।
‘ কি করে বুঝলেন?
‘ আমার বিশ্বাস সে বিবাহিত না।
‘ আপনার বিশ্বাস মিথ্যাও তো হতে পারে।
‘ হবে না।
‘ এতোটা কনফিডেন্স?
‘ না আত্মবিশ্বাস!
‘ যদি লোকটা খারাপ হয় তো?
‘ খারাপ হবে ভেবেই গ্রহণ করেছি তাঁকে।

রিদ আর কিছু বলতে পারলো না। তার বুক কাঁপছে। প্রচন্ড কাঁপছে। হয়তো না চাইতেও অনেক কিছু জেনে গেছে তাই। মায়া উপর অনেকক্ষণ দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকল একই ভাবে। তারপর হুট করে বলল…

‘ তাহলে এক কাজ করেন, আপনার জায়গায় আপনার স্বামীর একটা কিডনি দিয়ে ঢিল ডান করি। কি বলেন? তাঁকে খোঁজে পেলে, তাঁর একটা কিডনি না-হয় আমি রেখে দিব। এবং সে ত্রিশ বছর পর মারা গেলে তখন না-হয় আপনি আমাকে বিয়ে করে নিলেন কি বলেন?

এতক্ষণ যাবত রিদের সহজ ভাষায় মায়াও নরম হয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ রিদকে আগের ভঙ্গিতে ফেরতে দেখে মায়া হতাশ হয়। সেই সাথে বিরক্তও। আশ্চর্য মায়ার স্বামী মরলে এই লোককে কেন বিয়ে করতে যাবে? এই লোক আসল কোথায় থেকে আবার।

‘ আপনাকে কেন বিয়ে করবো?

‘ তো কি করবেন পরকীয়া চালাবেন আমার সাথে?

‘ বাজে কথা কেন বলছেন পরকীয়া কেন করবো?

‘ আপনার স্বামীর প্রতি দরদ দেখে আমার আপনার প্রতি একটু একটু ইন্টারেস্ট জাগছে। আপনাকে বিয়ে করা তো সম্ভব না। তবে পরকীয়া চালাতে সমস্যা নেই। ঘরে আপনার জামাই থাকবে, সেই ঘরে আমারও বউ থাকবে। রাতে জামাইকে সময় দিবেন আর দিনে আমাকে। পরকীয়া সম্পর্ক গুলা তো এমনই হয় নাকি? তারপর আপনার স্বামী যখন মারা যাবে তখন একেবারে না-হয় আমাকে বিয়ে করে নিলেন। কি করবেন বিয়ে আমাকে?

‘ অসম্ভব!

মায়ার নাক মুখ ছিটকে বলা কথাটাতে রিদ হাসলো। মায়াকে উদ্দেশ্য করে ফুরফুরে মেজাজে বলল…

‘ কি জানি অসম্ভব কিনা? তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার ইজ্জত, আমার ইজ্জত, আমার ইজ্জত আপনার ইজ্জত টাইপ সম্পর্ক আছে। তাই আমাকে বেশি ভাই ভাই না ডেকে পরকীয়া স্বামীও ডাকতে পারেন আমি মাইন্ড করব না।

রিদের অসভ্য কথায় মায়া আর বসে থাকতে পারলো না। ঠাস করে উঠে কিছু না বলে চলে যেতে নিয়ে পিছনে ডেকে রিদ ফের বলল…

‘ রাগ দেখালে তো হবে না ম্যাডাম? কাল সকালে আপনাকে আবারও হাজিরা দিতে হবে এখানে, যদি স্বামী খোঁজ চান তো? তবে একা আসবেন অবশ্যই।

#চলিত….