#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪২
তপ্ত রোদে অতিষ্ঠ জন-নগরী । কাঠফাটা রোদের হিটে গা জ্বলা ভাব। মাথার উপর সূর্যটা যেন দাঁড়িয়ে। সময় ঠিক তখন দুপুরের ঘরে। ঘড়ির কাঁটায় ১ঃ১৩। মাত্র ক্লাস শেষ করে কলেজে মাঠে নামল পঞ্চম বান্ধবী। রোদের প্রহরতায় মুখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করছে একেক জন। ইতিমধ্যে দরদর ঘামে ভিজে উঠেছে জামাসহ সবার গায়ের এপ্রোনটাও। কিন্তু এরমাঝে দল ছেড়ে রাফাকে কোথাও দৌড়ে চলে যেতে দেখে আচানক চমকে উঠলো সবাই। মূহুর্তে হাঁটা থামিয়ে পিছন ফিরে রাফাকে উঁচু গলায় ডাকল মায়া…
‘ রাফা কই যাচ্ছিস তুই?
মায়ার কথায় তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো রাফা…
‘ জানু দুই মিনিট অপেক্ষা করো, আমি পাঁচ মিনিটে আসতেছি।
রাফাকে দৌড়াতে দেখে পাশ থেকে বিরক্তিতে চেঁচাল শ্রেয়া। রাফাকে উদ্দেশ্য করে বলল….
‘ তোকে রেখে চলে যাব কিন্তু আমরা।
‘ তোকে দাঁড়াতে কে বলছে? তুই চলা যা। আমার জানু থাকলেই হবে।
এরমাঝে মায়াকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় চেঁচাল রাফা, ভুলবাল ইংলিশ বলে বলল…
‘ জানু ইউ ওয়েটিং। আই এম কামিং দুই মিনিট।
চঞ্চল রাফা চঞ্চলতা নিয়ে সবার ধারণা বিগত দিনে ভালো করেই হয়েছে সবার। সবার থেকে মায়ার ধারণাটা বেশি হয়েছে রাফাকে নিয়ে। সেদিন মায়ার রাফার জীবন বাঁচানোর পর থেকে যেন রাফার জন্য মায়া আরেকটা বিশ্বাসযোগ্য স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাফার জন্য সবাই একদিকে কিন্তু মায়া অন্য দিকে। মায়া এই কাঠফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলল রাফাকে দৌড়ে ক্যান্টিনের দিকে চলে যেতে দেখে। শ্রেয়া রাফাকে চলে যেতে দেখে সেও এই রোদেই দাঁড়াল। রাফার অতিরিক্ত চঞ্চলতা তাদের সবাইকে দারুণ আনন্দ দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত রোদের জন্য সবাই ক্যাম্পাসের করিডোরে দাঁড়াতেই মিনিট খানিকের ভিতর রাফাকে দেখা গেল দুহাতে কোণ আইসক্রিম নিয়ে দৌড়ে আসতে। মায়ার বরাবর থেমে হাঁপাতে হাঁপাতে মায়ার দিকে একটা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিতেই, মায়া সেটা হাতে নিতে নিতে কপাল কুঁচকে রাফার দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ তুই আইসক্রিমের জন্য তখন এইভাবে দৌড়াচ্ছিলি?
‘ তো কি করবো? আমার জানুর গরম লাগছে তাই ওকে একটা আইসক্রিম খাওয়াব না?
‘ তাই বলে এতো মানুষের সামনে দৌড়াতে গিলি কেন? হেঁটে যেতি।
‘ আরে চিল। আইসক্রিম খাও তো জানু।
রাফা হাতের অপর একটা আইসক্রিমটা জুই দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে অবশিষ্ট আইসক্রিমটা নিজে খেতে লাগল। শ্রেয়া, নাদিয়া কারও জন্য আইসক্রিম আনতে না দেখে চেতে উঠে শ্রেয়া।
‘ তুই আমাদের জন্য আইসক্রিম আনলি না কেন? আমাদের গরম লাগছে না?
রাফার দায়সারা উত্তরে বলল…
‘ গরম লাগলে কিনে খা। আমি কেন তোকে নিজের টাকায় আইসক্রিম খাওয়াতে যাব? আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড লাগি আজব।
‘ তাহলে মায়া, জুইকে যে খাওয়ালি?
‘ দেখ শ্রেয়া! জানু(মায়া) আমার জানু লাগে। আর জানুর বোন(জুই) আমার বোন হয়। সেজন্য দু’জনকে খাওয়ালাম। এখন তোরা আমার কি লাগুস? যে খাওয়াব?
পাশ থেকে নাদিয়া অবাক সুরে বলল…
‘ মানে আমরা তোর বান্ধবী না?
আইসক্রিমের কাগজটা ছাড়াতে ছাড়াতে নাদিয়া কথার উত্তরের বলল রাফা..
‘ সেটা আবার কখন হলাম? জীবনে কখনো স্বীকার করেছিস বা কাউকে বলেছিস যে তোরা আমার বান্ধবী হোস সেটা?
নাদিয়া খানিকটা দমে গিয়ে বলল…
‘ বলতে হবে কেন? দু’মাস ধরে আমরা একত্রে আছি তাহলে হলাম না বান্ধবী?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাদিয়া দিকে রাফা তাকিয়ে বলল….
‘ দু’মাস ধরে কি তোরা আমার সাথে আছিস নাকি আমি জানুর সাথে আছি বলে তোদের সাথে দেখা হচ্ছে কোনটা? দেখ! আমার থেকে আইসক্রিম খেতে হলে আগে আমার বান্ধবী হতে হবে নয়তো আমি কাউকে ফ্রীতে সুতার দেওয়ারও মানুষ না।
নাদিয়ার কিছু বলার আগেই শ্রেয়া রাফাকে জড়িয়ে ধরে বন্ধুত্ব করার আবদার জানাতেই রাফা সেটা বেশ ভাব নিয়ে এক্সেপ্ট করে। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে নাদিয়াও তাই করলো। মূহুর্তের মাঝে তিনজনের মধ্যেই বেশ বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব একটা ভাব তৈরি হতেই শ্রেয়া রাফাকে আইসক্রিম খাওয়ানোর আবদার করগেই সেটা পুনরায় না করে বসলো রাফা। বলল…
‘ আমি কেন খাওয়াব?
‘ মানে এখন আমরা বন্ধু না?
‘ তাহলে তুই আমাকে খাওয়া আগে।
‘ আমি না সকালে তোকে দশ টাকা আমড়া খাওয়ালাম। ভুলে গেছিস?
শ্রেয়ার কথায় রাফা মনে পরলো সত্যি সত্যিই শ্রেয়া সকালে সবাইকে আমড়া খাইয়েছিল। সেখানে রাফাও ছিল। তাই এখন রাফারও উচিত শ্রেয়ার সাথে নিজের আইসক্রিম শেয়ার করার। রাফা আইসক্রিমের প্যাকেট ছাড়াতে ছাড়াতে শ্রেয়ার দিকে নিজের আইসক্রিমটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললে….
‘ ঠিক আছে তাহলে তুই আমার আইসক্রিম থেকে পাঁচ টাকার, পাঁচ টাকার করে দশ টাকার কামড় দিবি ছোট করে কেমন?
‘ আচ্ছা দে!
শ্রেয়া মাথা কাত করে সম্মতি দিয়ে হা করতেই রাফা নিজের আইসক্রিমটা এগিয়ে দিল। চোখে পলকে রাফার অধেক আইসক্রিমটা চলে গেল শ্রেয়ার মুখে। শ্রেয়ার হঠাৎ কান্ডে রাফা বোকার মতো তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার মুখের দিকে । মায়া, জুই, নাদিয়া উচ্চ স্বরে হেসে উঠতে রাফা রেগেমেগে নাদিয়া হাতে নিজের বাকি অধেক আইসক্রিম ধরিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ নাদিয়া তুই আমার আইসক্রিমটা ধর। আজকে ওর পেট থেকে বের করবই আমার আইসক্রিম। নে ধর।
শেয়ালের কাছে মুরগী জমা দেওয়ার মতোন নাদিয়া কাছে রাফা আইসক্রিমটা জমা দেওয়ার কাজটা হলো। রাফা যখন শ্রেয়ার মুখ খোলার চেষ্টা করছিল সেই ফাঁকে নাদিয়া রাফার বাকি অধেকটা আইসক্রিম মুখে ফুরে গাল ফুলিয়ে চিবুতে লাগলে মায়া, জুই মধ্যে পুনরায় হাসির রোল পরলো একই কান্ড নিয়ে। মায়া হেঁসে রাফাকে নিজের কাছে টেনে হাতের আইসক্রিমটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ আয় এটা আমরা দুজন ভাগ করে খাই।
মায়ার কথায় রাফা নাদিয়া দিকে তাকাতে দেখল সে মুখ ভরে ওর আইসক্রিম চিবুচ্ছে। রাফার নিজের বোকামি বুঝতে পেরে গাল ফুলিয়ে মায়ার আইসক্রিম ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ খাব না আমি।
‘ আরে আয় তো জানু। ভাগাভাগি করে কিছু খেলে ভালোবাসা বাড়ে বুঝলি।
মন খারাপের রাফা মায়ার পাশাপাশি হেঁটে মায়ার আইসক্রিমে কামড় বসাতে চাইলে শ্রেয়া দৌড়ে এসে রাফার গলা জড়িয়ে ধরতেই একই ভাবে নাদিয়াও এসে রাফাকে জড়িত ধরলো সরি বলল। দুষ্টমীতে মেতে থাকা পঞ্চ বান্ধবীর বেনি সুতার সম্পর্কটা যেন চোখে লাগার মতোন শক্ত হলো। শ্রেয়া নাদিয়াকে বিদায় জানিয়ে বাকি তিনজন রাস্তার পাশে দাঁড়াল রিক্সার জন্য। যদিও রাফা উল্টো পথে যাবে রিক্সা নিয়ে তারপরও সে রিক্সার জন্য একই মোড়ে মায়াদের সাথে দাঁড়াল। মিনিট দুইয়ের ব্যবধানে কোথা থেকে রাহাত দৌড়ে এসে দাঁড়াল মায়ার সম্মুখে। রাহাতের হঠাৎ উপস্থিতিতে চমকে উঠার মতোন তিনজনই তাকাল সেদিকে। রাহাত হাঁপাতে হাঁপাতে খুবই বিনয়ের সঙ্গে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল…
‘ ভাবি আমার সাথে চলুন। রিদ ভাইয়ের আব্বা আসছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে। চলুন ভাবি!
রিদ আব্বা মানে মায়ার শশুর। আর তিনি রিদের সঙ্গে মায়ার বৈবাহিক সম্পর্কটা সম্পর্কে অবগত আছেন এতোদিনে মায়া যতটুকু জেনেছে। এখন হঠাৎ সবার অগোচরে উনার আগমন আর মায়াকে ডেকে পাঠানো উনার সঙ্গে দেখা করতে। সবকিছু মায়ার মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করলো। মায়ার মনে হলো তিনি নিশ্চয়ই মায়াকে বলবে যেন সে রিদের জীবন থেকে দূরে চলে যায়। তারা বড়োলোক আর মায়ারা গরীব এজন্য রিদের সঙ্গে মায়াকে মানাবে না এমন কিছু বলবে। হয়তো তিনি এটাও বলতে পারে মায়া যেন রিদের সঙ্গে সব সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। এলোমেলো চিন্তা ভাবনায় মায়ার মন অস্থির হলো অজানা ভয়ে। সত্যি রিদের বাবা এসেছে কিনা সেটা শিওর হতে মায়া পুনরায় বলল…
‘ সত্যি আপনার ভাইয়ের আব্বু এসেছেন? মানে আমার শশুর?
আতঙ্কে মায়া তাড়াহুড়ো কি থেকে বলে ফেলল। কিন্তু রাহাত তাতে বিন্দুমাত্র মাইন্ড করলো না। বরং আগের নেয় নম্রতায় সম্মতি দিয়ে বলল…
‘ জ্বি ভাবি, চলুন।
মায়া ভয়ে আমতাআমতা করলো। হুট করে রিদের বাবার সঙ্গে দেখা করাটা মায়ার মনে ভীতিকর লাগল। এমনিতে রিদ মায়ার সঙ্গে কথা বলছে না তারপর আবার রিদের বাবা? ভয়ার্ত মায়া মাথা নাড়িয়ে হাঁটল রাহাতের পিছন পিছন। ধীর পায়ের গতি আর মায়ার হাসফাস ভঙ্গি বলছে মায়া এই মূহুর্তে কতোটা সিটিয়ে আছে রিদের বাবার উপস্থিতি নিয়ে। রাস্তা অপর পাশে একটা সাদা মার্সিডিস দেখা গেল দাঁড়িয়ে। রাহাত মায়াকে নিয়ে সেখানে যেতেই পিছনে দরজা খোলে বেড়িয়ে আসলো মধ্যে বয়স্ক নিহাল খান। রোজকার মতোই গায়ে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা জড়িয়ে। মুখে ওয়ানটাইম মাক্স। হয়তো বর্তমান মন্ত্রী হওয়ায় জনমুখী হতে বাঁচতে মুখে মাক্স পড়া। মায়া উনার সামনে যেতেই মাথা তুলে তাকাল উপরের দিকে। লম্বা চওড়া এক বলিষ্ঠবান পুরুষ নিহাল খান। দেখেই বুঝায় যায় রিদ তার বাবার হাইট পেয়েছে। গায়ের রঙটাও দুধ সাদা। রোদের তাপের চামড়া লাল হয়ে আছে। মায়ার এক মূহুর্তে জন্য মনে হলো সকল সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট আল্লাহ তাআলা ওর শশুর বাড়িতে টান্সফার করে দিয়েছে। বাকি ওরাতো প্লাস্টিকের। সবাই বলে মায়া সুন্দর। অথচ এই শশুর বাড়ির পাবলিকের সামনে দাঁড়ালে মায়ার মনে হয় ওহ বড়সড় ডিম পেয়ে ফেল করে প্রতিবার। এদের সামনে নিজেকে সুন্দর দাবি করে পাস করাই যাবে না ইহজীবনে। মায়া সুন্দর সুদর্শন শশুর দিকে তাকিয়ে নম্রতায় মিহি স্বরে সালাম দিল….
‘ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
মাক্সের ভিতর থেকেই নিহাল খানের অল্প হাসির শব্দ কানে আসলো মায়ার। তিনি মায়া মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বলল…
‘ ওয়ালাইকুম সালাম আম্মু। কেমন আছেন আপনি?
মায়া চমকানো মতো আবাক চোখে তাকাল নিহাল খানের দিকে। মায়া ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি ওর শশুর এতোটা ভালো ব্যবহার করবে ওর সাথে। মায়ার সাথে আজ প্রথমবার নিহাল খানের কথা হচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েক দুজনের দেখাদেখি হলেও কখনো কথা হয়নি কারও। কিন্তু আজ সরাসরি মায়াকে আম্মু বলে সম্মোধন করাতে মায়া জড়তা কমে আসলো কিছুটা। মায়া জানতো নেতারা খুবই ভয়ংকর আর চতুর্মুখী মানুষ হয়। ক্ষমতার গরমে মানুষকে মানুষ মনে করে না নেতারা অথচ মায়ার সঙ্গে কি নম্রতা ব্যবহার করছে ওর শশুর। নিহাল খানকে নিয়ে মায়ার এতক্ষণ পাওয়া অজানা ভয়গুলো যেন হঠাৎই কমে আসলো ভিতরে। খানিকটা সহজ হয়ে জড়তার মিহি গলায় উত্তর করলো মায়া।
‘ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল?
খুব গোছানো আর আন্তরিকতা সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলল নিহাল খান।
‘ বাবাকে আঙ্কেল বললে হবে আম্মু? বাবাকে বাবাই ডাকতে হয় বোকা মেয়ে। এরপর থেকে বাবা ডাকবে কেমন? রিদ আমার ছেলে হলে তুমি আমার ছেলের বউ। আমার একটা মেয়ে। আর মেয়ের মুখে আঙ্কেল ডাক শুনতে ভালো দেখায় না। বাবা, বাবাই হয়। মনে থাকবে?
মাথা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতে দিতে বলল…
‘ জ্বি আব্বু!
‘ দ্যাটস এ গুড গার্ল! কলেজ শেষ আম্মু?
মায়া আবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে ধীর গলায় বলল…
‘ জ্বি!
‘ তাড়াহুড়ো আছে আপনার?
‘ না আব্বু।
‘ দুপুরে খেয়েছেন কিছু?
‘ না কলেজ মাত্র ছুটি হলো। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাব। আপনি খেয়েছেন?
‘ না আম্মু আপনার মতোই বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাব। তার আগে একটা মিটিংয়ে যেতে হবে। আসলে সামনে নিবার্চন তাই এখন একটু ব্যস্ততা বেশি, নয়তো বাবা-মেয়ে মিলে লাঞ্চটা শেষ করে যেতাম। আচ্ছা যাই হোক! আপনি এটা নিন আম্মু, আমি খুশি হবো।
নিহাল খানের হাতে একটা মোটাসোটা চিঠির খাম ছিল। এতক্ষণ মায়া লক্ষ করেনি সেটা। মনে করেছিল হয়তো নিহাল খানের জরুরি কিছু হবে এই খামটাতে। কিন্তু মায়ার দিকে খাম এগিয়ে দিতেই মায়া আমতাআমতা করলো খামটি নিতে। মায়াকে দ্বিধাবোধ করতে দেখে তিনি পুনরায় মায়াকে বললো খামটা নিতে। মায়া জড়তার হাতে খামটি নিতেই বুঝতে পারলো বেশ ভারি এই খামটি। এতে কি আছে মায়া জানে না। জানার চেষ্টা করতে হলেও না তার আগেই নিহাল খান নিজেই বলতে লাগল…
‘ সরি আম্মু আপনাকে উপহারের বদলে টাকা দিচ্ছি বলে। আসলে আপনার এই বুড়ো বাবার মেয়েলি কেনাকাটা সম্পর্কে বুঝে না। বলতে পারেন আমার পূর্বে যতটুকু অভিজ্ঞতা ছিল এখন সেটা ভুলে গেছি অনেক বছর হলো। এই টাকা গুলো দিয়ে আপনি আপনার পছন্দ মতো কিছু কিনে নিবেন তাহলে আমি খুশি হবে। আসলে আপনাদের বিয়ের খবরটা আমি আরও আগে পেয়েছিলাম কিন্তু তারপরও এতোদিন ব্যস্ততার জন্য আপনার সাথে দেখা করতে আসতে পারিনি। সামনে নিবার্চন! তারপর রিদটা কেন জানি এখনো চট্টগ্রামে আসছে না আমাকে হেল্প করতে। আসলে রিদ নেই বলে আমাকেই সকল কাজের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। আচ্ছা যায় হোক! পরশু বাড়িতে মেজবান রাখা হয়েছে। আপনাকে দাওয়াত করতে আসলাম আম্মু।
আপনি অবশ্যই আপনার শশুর বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন সপরিবারে। আমি আরিফকে বলে রাখবো আপনাদের নিয়ে যেতে কেমন।
মায়া মাথা কাত করে আবারও সম্মতি দিয়ে বলল..
‘ জ্বি আচ্ছা!
‘ আচ্ছা আম্মু তাহলে আজ আসি। আপনি একটু রিদকে বলে দিবেন যেন কালকের মধ্যে চট্টগ্রামে চলে আসে। আসলে রিদ নেই তাই একা হাতে আমি সবটা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। আপনি বললে হয়তো ওহ চলে আসবে।
মায়া বলতে পারলো না রিদ মায়ার সঙ্গে রাগ করে চট্টগ্রামে আসে না। কিন্তু নিহাল খানের ব্যস্ততা দেখে মায়ার সত্যি খারাপ হলো। অপরাধ বোধে জড়িয়ে মায়া সত্যিটা গোপন করে বলল…
‘ জ্বি আচ্ছা! আমি উনাকে বলবো আব্বু।
মায়ার কথার সাথে সাথে নিহাল খানের আদুরের হাত উঠে যায় মায়ার মাথার উপর। স্নেহময় হাতে হিজাবের উপর দিয়ে বুলিয়ে বলল….
‘ আজ আসি তাহলে আম্মু! আপনি ভালো থাকবেন কেমন।
‘ জ্বি আচ্ছা! আসসালামু আলাইকুম।
‘ ওয়ালাইকুম সালাম।
গাড়িতে উঠতে উঠতে মায়ার সালামের উত্তর করলো নিহাল খান। রাহাতও গিয়ে বসল গাড়ির সামনের সিটে ডাইভারের সঙ্গে। কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে গাড়িটিকে চলে যেতে দেখে রাস্তা অপর পাশ থেকে তাড়াহুড়ো এগিয়ে আসলো জুই আর রাফা। দুজন মায়াকে ঘিরে নানান কথা জানতে চাইল। জুই মায়াকে প্রশ্ন করে বলল…
‘ কেন এসেছিল আঙ্কেল?
‘আমার সাথে দেখা করতে।
‘ কেন?
‘ উনারদের বাসায় নাকি মেজবান রাখা হয়েছে সেজন্য আমাকে ছেলের বউ হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে বললো।
পাশ থেকে জুইয়ের কথার ফোঁড়ন কেটে রাফা বলল…
‘ জানু তোর হাতে ঐটা কি?
রাফার কথায় মায়া, জুই সকলের দৃষ্টি মায়ার হাতের খামটার উপর পড়লো। মায়া ঠোঁট উল্টে খামটা ঘুরিয়ে এপিঠ-ওপিঠ দেখে বলল…
‘ মনে হয় টাকা আছে। উনার(রিদ) আব্বু খামটা দিয়ে বলল আমার পছন্দে মতে কিছু কিনে নিতে। উনি নাকি মেয়েলি উপহার বুঝে না। তাই আমাকে টাকা দিতে বাধ্য হলো।
রাফা হাত বাড়িয়ে বলল…
‘ প্যাকেটটা দে তো আমাকে! দেখি কতো আছে?
মায়া রাফার দিকে প্যাকেটটি এগিয়ে দিতে রাফা সেটা হাতে নিয়ে প্যাকেট ছিঁড়তে বেড়িয়ে আসলো পাঁচশ টাকা একটা মোটা বান্ডিল। টাকার উপর ব্যাংকিং সিলসহ টাকার পিন আটকানো। রাফা মোটা টাকার বান্ডিল হাতে নিতেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল সবার। মায়া নিজেও ভাবিনি এতো টাকার বান্ডিল ওর শশুর ওকে ধরিয়ে দিবে তাহলে সে কখনোই এটা গ্রহণ করতো না। রাফা টাকার বান্ডিলটা হাতে নিয়ে বলল…
‘ বাপরে বড়োলোক শশুর হলে এমনই হয়। প্রথমবার ছেলের বউয়ের মুখ দেখেই ডিরেক্ট পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিল? আহা কি ভালো মানুষ তারা! আচ্ছা জানু! রিদ জিজু আসবে পরশু?
এতক্ষণ মুখে আবাকতা থাকলেও হুট করেই যেন অন্ধকার ছেয়ে যায় মায়ার মুখে রাফার শেষ কথাটা শুনে। রিদ আসবে কিনা মায়া নিজেও জানে না। বরং মায়া অপেক্ষা আছে রিদের। সে কখন আসবে আর কখন মায়া রিদের অভিমান ভাঙ্গাবে। অনেক তো হলো এই মান অভিমান পাল্লা। আজ তিনমাসের উপর হয়েছে রিদের সঙ্গে মায়ার দেখা নেই। ঠিকঠাক কথা হয়না। এই তিনমাসে লাস্ট দুইমাস মায়া কতো চেষ্টা করছে রিদকে বুঝাতে কিন্তু রিদতো মায়ার কোনো কথার পাত্তায় দিচ্ছে না। মায়ার এখন মনে হচ্ছে মায়া ব্যর্থ হয়ে পরছে রিদের অভিমান ভাঙ্গাতে গিয়ে। কোনো ছেলে মানুষকে এতো রাগ করতে দেখেনি মায়া। মায়াকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না সে। এর মধ্যে মায়ার শশুর ওকে দায়িত্ব দিয়ে গেল ওর অভদ্র জামাইকে চট্টগ্রামে ফেরাতে। মায়া কিভাবে এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব করবে সেটাই চিন্তার বিষয়। মায়াতো এখন কোনো রাস্তায় দেখছে না।
মায়া মন খারাপ করতে দেখে রাফা বুঝল রিদ আসবে না পরশু। সেজন্য জুইয়ের কাছে ওদের ফোন চেয়ে রাফা বলল…
‘ জুই তোদের ফোনটা দে তো একটু।
‘ কেন?
‘ আরে এতো প্রশ্ন করছিস কেন? ফোনটা দিলেই তো দেখতে পারবি কেন চাইছি। দে না বোন।
জুই কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রাফার হাতে তুলে দিতেই রাফা মেসেজ বক্সে গিয়ে উচ্চ স্বরে বলে বলে লেখতে লাগল….
‘ জান আই এম ভেরি লংলি লংলি। ইফ ইউ কাম টু মি, আই উইল গিভিং ইউ টেস্টি টেস্টি হানি।
রাফার মুখে ভুলবাল ইংলিশ আর অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে নাক মুখ ছিটকালো মায়া। রাফার হাতের ফোনটা টানাটানি করে বলল…
‘ ছিঃ কিসব বাজে মেসেজ করছিস তুই? উনি এসব দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে। ফোন দে তুই।
রাফাও ফোনটা নিজের কাছে টেনে বলল…
‘ আরে জানু চিল! প্যারা নিস না। বেডা মানুষ এসব মেসেজেই আটকায়। তোকে মারবে না বরং টান খেয়ে চলে আসবে।
মায়া আগের নেয় নাক মুখ ছিটকিয়ে বলল…
‘ ছিঃ কি নোংরা মাইন্ড তোর রাফা। দে আমার ফোন দে! তোর আর মেসেজ করা লাগবে না। ফোন ছাড়!
‘ আরে জান প্রমিজ করছি। আর দুষ্টু কিছু লেখব না। শুধু ভাইয়াকে বলবো কাল চলে আসতে। সত্যি!
মায়া থামল। সন্দেহ নিয়েও হাত ছেড়ে দিল। মনে করলো সত্যি বুঝি এবার রাফা ভালো কিছু মেসেজ করবে রিদকে। কিন্তু মায়ার আশায় রাফা পানি ঢালল বালতি ভরে ভরে। বেশ সময় নিয়ে কিছু টাইপিং করল ফোনে, রিদকে মেসেজ পাঠিয়ে দুষ্টু হাসল রাফা। জুই, মায়া রাফার মুখের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তখনো। রাফা ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে রিদকে মেসেজ সেন্ট করে সেটা আবার ডিলিট করে দিল যাতে মায়া সেটা পড়তে না পারে। রাফাকে দুষ্টু হাসতে দেখে পাশ থেকে সন্দেহ পোষণ করে জুই বলল…
‘ তুই হাসছিস কেন এইভাবে?
রাফা হেয়ালি করে উত্তর দিয়ে বলল…
‘ মাশাল্লাহ আমার মুখটাই হাসি হাসি তো। সেজন্য তোর মনে হচ্ছে আমি হাসছি। আসলে আমি কিন্তু হাসছি না বুঝলি?
‘ তুই আমার ফোন দে!
পুনরায় থাবা মেরে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো রাফার থেকে ফোন নিল মায়া। মেসেজ বক্স চেক করতে সেখানে তেমন কিছু পেল না শুধু মায়ার পূর্বের করা মেসেজ গুলো ছাড়া। মায়া কপাট রাগ দেখিয়ে রাফাকে বলল..
‘ সবকিছু ডিলিট করলি কেন? উনাকে(রিদ) কি মেসেজ করেছিস তুই?
রাফা এগিয়ে এসে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ধরতে শতঃস্ফুতার সঙ্গে বলল।
‘ করেছি কিছু একটা। তবে তুই শিওর থাকল জানু, ভাইয়া মেসেজটা দেখা মাত্রই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরবে। আসলে বেডা মানুষ নরীতেই আটকায় বুঝলি।
রাফার কথায় মায়া যেন খুশি হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য গলায় বলল….
‘ সত্যিই আসবেন উনি?
‘ দুই কোটি % শিওর থাকো। ভাইয়া অবশ্যই আসবেন। এখন তুমি আমাদের লাঞ্চ করাও তো জানু। তারপর তোমার জন্য স্পেশাল শপিংয়ে যাব আমরা।
রাফার কথায় মায়া কিছু বলবে তার আগেই জুই প্রশ্ন করে বলল…
‘ শপিংয়ে কেন?
‘ আরে শাড়ী কিনতে হবে না?
‘ হঠাৎ শাড়ি কেন?
‘ আরে পরশু জানু ওর শশুর বাড়িতে যাবে না? তখন কি সাধারণ ড্রেস পরে যেতে পারবে? বউ বলে কথা অবশ্যই শাড়ী পড়তে হবে জানুর। নয়তো জানুর শশুর বাড়ির মানুষ কি ভাববে বল?
রাফা কথা আপত্তি জানিয়ে জুই বলল…
‘ তাই বলে এখন কেন শাড়ি কিনতে যেতে হবে? প্রোগ্রাম তো পরশু। কাল শপিংয়ে গেলেও তো হয়।
রাফা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল…
‘ কাল জানু জিজুকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকবে। কাল সময় পাবে না। তাই আজই চল।
জুই এবার সন্দেহ করে বলল…
‘ তুই কিভাবে এতো শিওর হচ্ছিস রিদ ভাইয়া কালই চলে আসবে? তিনমাস ধরে ভাইয়াকে মানাতে পারছে না মায়া আর তোর একটা মেসেজে ভাইয়া কাল চলে আসবে?
রাফা ভাব নিয়ে বলল…
‘ আসলে এতোদিন ঔষধ জায়গা মতো পরেনি সেজন্য ব্যথা ভালো হচ্ছিল না। এখন ঠিক জায়গায় মলম লাগিয়েছি, ব্যথা ভালো না হওয়ার চান্সই নাই বুঝলি।
‘ মানে?
রাফা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল…
‘ আরে চলতো। মানেটা কালই ঠের পাবি। এখন চল!
রাফা রিদকে কি মেসেজ করলো যার জন্য রিদ সবকিছু ভুলে চট্টগ্রামে চলে আসবে মায়ার জন্য তা মায়া জানে না। আর না জানতে চাই। রাফা যায়ই মেসেজে লেখুক তাতে মায়ার কোনো আপত্তি থাকবে না যদি রিদ সত্যি সত্যি চট্টগ্রামে চলে আসে তাহলে। মায়া শুধু এই মূহুর্তে রিদকে চাই। সেটা যেভাবেই হোক। এতো অপেক্ষা এবার মায়াও বিষাক্ত লাগছে।
#চলিত….
#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪৩
একটা পরন্ত বিকেল। সময় ৫ঃ৪০ ঘরে। মাত্র কোচিং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছে জুই, মায়া, রাফা। ইতিমধ্যে শ্রেয়া,নাদিয়া অটো নিয়ে উল্টো পথে চলেও গেল। কোচিং থেকে রাফার বাড়ি কাছেই সেজন্য সে আপাতত এই অল্প রাস্তাটা মায়াদের সঙ্গেই হেঁটে যাবে। সারাদিন ক্লাস শেষ করে দেড়টা কি দুইটার দিকে বাসায় ফিরে এক ঘন্টা মতো রেস্ট নিয়েই আবার ফিরতে হয় কোচিং ক্লাসে। রোজকার মতোই আজও সবাই কোচিং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিল। স্বাভাবিক নেয় তিনজনের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তাও হচ্ছিল। এর মাঝে হঠাৎ রাফা মায়াকে প্রশ্ন করে বলল…
‘ জানু, জিজু আসেনি এখনো?
মায়া স্বাভাবিক নেয় মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিয়ে বলল…
‘ না।
মায়ার কথা শেষ হতে হতে এরমাঝে কথা বাড়াল জুই, রাফাকে খোঁচা মেরে জুই বলল…
‘ তুই না কাল বললি রিদ ভাই আজকে ফিরবেন? কই ভাইয়া তো আসল না। শুধু চাপা মারলি!
জুইয়ের খোঁচা মারা কথাটা রাফা হাওয়ায় উড়িয়ে দিল যেন। রাফা কাল মায়াকে আশ্বস্ত করেছিল রিদ আজকে চট্টগ্রামে ফিরবে কিন্তু রিদকে ফিরতে না দেখে যদিও রাফার চিন্তিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার কিছুই দেখা গেল না রাফার মাঝে। বরং রাফা কালকের নেয় আজও বেশ কনফিডেন্সের সাথে মায়াকে আশ্বস্ত করে বলল…
‘ জানু রিলাক্স! জিজু মনে হয় আমার মেসেজটা দেখতে পাইনি। দেখতে পেলে এতক্ষণে তোমার টান খেয়ে অবশ্যই চট্টগ্রামে উপস্থিত থাকতো।
রাফার কথায় মায়া তেমন কিছুই বলল না। এতক্ষণ মায়ার মুড ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ রিদের প্রসঙ্গ আসতেই মায়া মন খারাপে ছেয়ে গেল অন্ধকারে। রাফা, জুই দুজন সেটা বুঝতে পেরে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না রিদকে নিয়ে কিন্তু জুই ঠিকই রাফাকে প্রশ্ন করে বলল…
‘আচ্ছা রাফা তুই ভাইয়াকে কাল কি এমন মেসেজ করেছিলি? যেটার টান খেয়ে ভাই চলে আসবে মায়ার কাছে? কি ছিল মেসেজে?
জুইয়ের কথায় রাফা পাত্তা না দিয়ে বলল…
‘ ছিল কিছু একটা।
জুই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাফার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বলল…
‘ কি ছিল?
‘ তোকে কেন বলবো?
‘ আমি শুনব তাই।
হুট করেই রাফা দুষ্টু হেঁসে বলল…
‘ যাহ দুষ্টু! খালি ন’টি চিন্তা ভাবনা তোর!
রাফার ভাব ভঙ্গিমা দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেল মায়া আর জুই। এইখানে ন’টি চিন্তা ভাবনার কি আছে সেটা বুঝতে না পেরে জুই হতবাক গলায় বলল…
‘ কি এমন বললাম যে ন’টি চিন্তা ভাবনা হয়ে গেল? তুই মেসেজ লিখতে পারবি আর আমি সেটা জানতে পারব না? সত্যি করে বলতো কি পাঠিয়েছিস মেসেজে?
রাফা আগের নেয় দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল…
‘ টপ সিক্রেট দোস্ত! বলা যাবে না! এর জন্য বিবাহিত মহিলা প্রয়োজন! তুই তো সিঙ্গেল! সিঙ্গেল পাবলিক শুনা নিষেধ।
রাফা কথায় জুই ১০০% শিওর হলো রাফা নিশ্চিত উল্টাপাল্টা কিছু একটা ঝামেলা করেছে রিদের সঙ্গে। সন্দেহের বশিতা হয়ে মায়াও কিছু বলতে চাইল রাফাকে কিন্তু তাঁর আগেই জুই সন্দিহা গলায় আবারও বলল….
‘ আমি সিঙ্গেল হলে তুই কি? তুইও তো সিঙ্গেল, অবিবাহিত মহিলা। তাহলে তুই যেভাবে মেসেজ লিখলি সেভাবে না-হয় আমাকেও বল শনি!
জুইয়ের কথায় রাফা বেশ হেয়ালি করে বলল…
‘ মেসেজটা আমি করেছি সেটা তুই জানিস! জানু জানে! রিদ জিজুতো আর জানে না। বরং তিনি জানেন, উনার বিবাহিত বউ উনাকে বার্তা পাঠিয়েছেন কিছু লিখে। তাহলে আমি এখানে দোষী হলাম কি করে? সবথেকে নিষ্পাপ মানুষ তো আমিই, তাই না বল?
এতক্ষণ চুপ করে রাফা কথা শুনলেও অবশেষে মায়াও খানিকটা রেগে গিয়ে বলল…
‘ তুই কি বলবি না রাফা?
রাফার আগের নেয় হেয়ালি করেই বলল…
‘ আরে জানু তুমি কষ্ট করছো কেন? ভাইতো এমনিতেই তোমাকে মেসেজের ব্যাখা দিবে। একটু অপেক্ষা করো জানু! প্রাক্টিক্যালি বুঝে যাবা।
রাফার কথায় হতাশ হলো মায়া। বুঝতে পারলো সহজে রাফাকে দিয়ে বলানো যাবে না কোনো কিছু। সেজন্য হতাশ মায়া খানিকটা নরম সুরেই রাফাকে ইমোশনাল করতে চেয়ে আকুতি স্বরে বলল….
‘ রাফা বল না দোস্ত। এমন করিস কেন? তোকে আমি ভালোবাসি না বল?
মায়ার কথায় গলল না রাফা। বরং পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত পালাতে চেয়ে বলল…
‘ ওকে, আই লাভ ইউ টু জানু। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তবে এখন টাটা বাই বাই জানু। আমার বাড়িতে যেতে হবে দ্রুত। কাল দেখা হবে জানু। আজ আসি, বাইইই।
বলতে বলতে রাফা দৌড়ে রাস্তা অপর পাশে যেতে লাগল। রাস্তার মাঝে রাফার দৌড়ে দেখে ভয়ে জুই মায়া দুজনই চিৎকার করে উঠলো রাফাকে সাবধানে যেতে বলে। চঞ্চল রাফা দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে আবারও চেঁচিয়ে বিদায় নিল মায়া আর জুই থেকে। মায়া রাফাকে সহিসালামত চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তারপর আর কেউ রাফার পাঠানো মেসেজটা নিয়ে আলোচনা করলো না। যেখানে রিদ আসেনি সেখানে রাফা কি মেসেজ পাঠিয়েছে সেটা জেনেও বা কি হবে। কাল রিদের বাবা মায়াকে দাওয়াত করে যাওয়ার পরপরই রাফার জোড়াজুড়িতে মায়া বেশ কিছু কেনাকাটা করে শশুর বাড়ির অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আজ সকালে দিকে জুইকে দিয়ে আরিফ জানায় মায়া আর জুইকে খান বাড়িতে রেখে আসবে আগামীকাল। এর মানে মায়াকে কাল ওর শশুর বাড়িতে যেতে হবে। আর ভাগ্যক্রমে যদি কাল রিদ খান বাড়িতে আসে তাহলে যেভাবেই হোক মায়া রিদের সঙ্গে কথা বলবে। মায়ার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা ভাবনার মাঝেই জুই রিক্সার ডাকল। দুবোন পাশাপাশি বসতেই রিক্সার চলল জুইয়ের বলা এড্রেসে। অন্যমনস্ক মায়ার কোলের উপর ব্যাগটা রেখে দু’হাতে ব্যাগটা চেপে রাখল। দৃষ্টি ব্যস্ত নগরীর অসমাপ্ত রাস্তার দিকে। কিছু পথ আসতেই চোখে পড়লো পরিচিত মানুষদের দলবেঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। মানুষ গুলোকে মায়া চিনে। ছেলেগুলো সবাই রিদের লোক। মায়াকে তাঁরা সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। সেজন্য এদের কাউকে না কাউকে মায়ার আশেপাশেই সবসময় দেখা যায়, এজন্য মায়া চিনে এদের। তাছাড়া রিদ যখনই চট্টগ্রামে আসে তখন তাদের বেশি দেখা যায় এই রাস্তা ঘাটে। বিশেষ করে রিদের আশেপাশে দেখা যায় বেশি। কিন্তু আজকে এই অসময়ে সবাইকে রাস্তায় একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া মনে করলো হয়তো ওর শশুরের নির্বাচনের কোনো কাজে তাঁরা একত্রে দাঁড়িয়েছে। অন্যমনস্ক মায়া চোখ ঘুরিয়ে একটু সামনে তাকাতেই চমকে উঠার মতোন লাফিয়ে উঠলো রিদের সেই বিল্ডিংয়ের নিচে আসিফকে দাঁড়িয়ে কারও সাথে কথা বলতে দেখে। খুশিতে আত্মহারা মায়া তৎক্ষনাৎ জুইয়ের হাত চেপে খানিকটা উত্তেজিত গলায় বলল…
‘ জুই! জুই! এটা আসিফ ভাই না?
মায়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে জুই সামনে থাকাতেই দেখল আসিফ মধ্যে বয়স্ক একটা লোকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রিদের ছেলেপেলে গুলো। কিন্তু আশেপাশে কোথাও রিদকে দেখা গেল না। আসিফ দেখে জুইও খানিকটা চমকিত গলায় বলল…
‘ হ্যাঁ এটাতো আসিফ ভাই-ই।
জুইয়ের কথা শেষ হতে দেরি কিন্তু মায়ার পুনরায় উত্তেজনায় চেঁচাতে দেরি হলো না রিক্সাওয়ালার উদ্দেশ্য। অস্থির ভঙ্গিতে মায়া রিক্সার থামাতে চেয়ে বলল…
‘ চাচা রিক্সার থামান প্লিজ! রিক্সার থামান!
বলতে বলতে রিক্সার গতি কমে আসলো ধীরেই। কিন্তু অধৈয্যের মায়ার সইলো না। রিক্সার গতি তখনো পুরোপুরি থামেনি এরমাঝেই অধৈর্য্যের মায়া চলন্ত রিক্সা থেকে লাফিয়ে পরলো ফুটপাতে। শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পারাই ব্যথা পেল হাতের কুইনে। কিন্তু তারপরও অস্থির মায়ার দৌড় কমলো না৷ বরং মূহুর্তের মাঝে আবারও ফুটপাত থেকে ব্যাগ উঠিয়ে দৌড়াল সেদিকে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে মায়ার কান্ডে দেখে আতঙ্কিত হলো জুই। রিক্সায় বসে থেকেই মায়াকে সাবধান করে অস্থির গলায় চেঁচিয়ে বলল…
‘ মায়া আস্তে যাহ!
কে শুনে কার কথা, চোখের পলকে মায়াকে আসিফদের উদ্দেশ্য দৌড়াতে দেখে জুই তাড়াহুড়োয় রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মেটাল দ্রুত। মায়ার পিছন পিছন সেও ছুটল। আসিফ তখন নিহাল খানের সহকারী মুজাহিদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলছিল নির্বাচনের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। রিদকে নিয়ে আসিফ রাতেই চট্টগ্রামে ফিরেছিল। হঠাৎ করে রিদের চট্টগ্রামে আসার কারণটা আসিফ জানে না। সাহস করে রিদ থেকে জানতেও চাইনি। আসিফের প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো রিদ সব মনমালিন্যতা ভুলে বাবার নির্বাচনের কাজে হাত লাগাতে চট্টগ্রামে এসেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম আসার পরও নিজের বাবার বাড়িতে না গিয়ে বরং মুরাদপুদ থেকে যাওয়ার কারণে বুঝতে পারলো রিদ খান আসলে বউয়ের টানে চট্টগ্রামে মাঝরাতে উপস্থিত হয়েছে। যদিও বউয়ের সাথে তার এখনো দেখা হয়নি। তবে যেকোনো সময় দেখা করতে পারে সেটাও বুঝতে পারছে আসিফ। তবে এই মূহুর্তে সবাইকে নিয়ে খান বাড়িতে যেতে বলেছে রিদ। কালকের ফাংশনের জন্য সবার সেখানে উপস্থিত থাকা জরুরি। এজন্য রিদের ছেলেপেলে গুলো সবাই উপস্থিত হয়েছে রিদকে খান বাড়িতে নিতে এসে। অবশ্য রিদের ছেলেপেলে গুলো সবাই বিগত একসপ্তাহ ধরে খান বাড়িতেই আছে নিহাল খানের সঙ্গে দিয়ে। রিদ পূর্ব আদেশ ছিল সবাইকে তাঁর বাবার সঙ্গে দিয়ে খান বাড়িতে থাকতে। আজ হঠাৎ রিদকে এতোদিন পর চট্টগ্রামে ফিরতে দেখে সবাই উপস্থিত হয়েছে তাদের ভাইকে নিতে। ইতিমধ্যে তাঁরা সবাই বেড়িয়েও পরতো কিন্তু হঠাৎ রিদের ফোন আসায় রিদ বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি নিচে গিয়ে দাঁড়াল। প্রয়োজনীয় ফোনালাপ শেষ করছিল বলে আসিফসহ বাকিরা রিদের অপেক্ষায় বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। এরমাঝে হঠাৎ মায়াকে খুবই কাছাকাছি দৌড়ে আসতে দেখে চমকাল আসিফ। ঘাড় ঘুরিয়ে রিদকে ডাকল মায়ার খবর দিতে….
‘ ভাই ভাবি এসে…
আসিফের কথা কানে যেতেই রিদ ফোন কানে নিয়েই ঘুরতে চাইল কিন্তু তার আগেই মায়া আসিফকে ক্রস করে গিয়ে পা ফেরে লাফিয়ে উঠলো রিদের কোলে। ভালোবাসায় উচ্চাসনে বলল…
‘ আপনি এসেছেন! আই মিস ইউ।
অপ্রস্তুত রিদ ঠিক করে মায়াকে দেখার সুযোগটা পযন্ত পেলনা তার আগেই হাত থেকে ফোন পরে শরীরে খৈ হারাল। মায়াকে নিয়ে পিছুপা হয়ে ধপাস করে বসল সিঁড়িতে। বামহাতে সিঁড়ি রেলিং চেপে দুজনের শরীর তাল ধরে রাখতেই রিদের ডানহাতটা চলে গেল মায়ার পিঠে। মায়া দুহাতে রিদের গলা জড়িয়ে মুখ উঠিয়ে পরপর চুমু খেল রিদের এগাল থেকে, ঐগাল। আবারও গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখতে রাখতে বলল…
‘ আই লাভ ইউ! এত্তো গুলা মিস করেছি আপনাকে।
মায়ার কথায় রিদ শক্ত হয়ে বসে রইল। মূহুর্তের মাঝে কি থেকে কি হলো বুঝতে যেন কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। কিন্তু বুঝতে পেরেই যেন বুকের ভিতরটা ধপাস ধপাস করে লাফাতে লাগল।
মনে হচ্ছে বুক ছিঁড়ে হৃদপিণ্ডটা বেড়িয়ে আসবে বউয়ের টানে। শরীর তাজা রক্ত যেন টগবগ করছে এতোদিন পর বউয়ের সানিধ্য পেয়ে। রিদ ঐ অবস্থায় তাকাল সামনে, দেখল আসিফ হতবুদ্ধি হয়ে বড় বড় চোখ করে এই দিকটায় তাকিয়ে। রিদের দৃষ্টি সঙ্গে মিলে যেতেই আসিফ চোরের মতোন পালাল জায়গায় ছেড়ে। সঙ্গে বয়স্ক লোকটাকে নিয়ে গেল। রাস্তা পাশাপাশি বিল্ডিং হলেই সামনের গেইটের জন্য রাস্তা বা আশেপাশের মানুষজন দেখা গেল না। আসিফ বয়স্ক লোকটাকে নিয়ে চলে যেতে যেতে আস্তে করে গেইটটাকে টেনে গেল। রিদের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও মায়া শক্ত করে রিদকে জড়িয়ে বসে থেকে আবারও বলল….
‘ আমি অনেক গুলা সরি। আর জীবনেও আপনার কথার অবাধ্য হবো না। প্রমিস! তারপরও আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না। আমার অনেক কষ্ট হয়।
বলতে বলতে মায়া চোখের পানি গড়াল রিদের কাঁধে। এতোদিন পর রিদের সানিধ্য পেয়ে কিভাবে রিদকে বুঝাবে সেই দিশেহারা অশ্রু জড়াল গাল বেয়ে। দিশেহারা মায়া রিদকে জড়িয়ে পুনরায় চুমু খেল রিদের গালে। দীর্ঘদিনের মান অভিমানে মায়া কান্নায় ফুপিয়ে রিদের গালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলে রিদ খানিকটা নরম হয়ে আসল। রেলিং ছেড়ে বামহাতটা ক্রমশ নেমে আসে মায়ার কোমরে। চোখের পলকে যেন রিদের দু’হাতের অবস্থান হয়ে গেল মায়ার জামা বেধ করে উম্মত কোমরে। শক্তপোক্ত উষ্ণহাতে ছুঁয়া পেতেই মায়া সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো শিহরণে। রিদের গাল থেকে কপাল উঠিয়ে বসতে চাইলে রিদের হেঁচকা টান পরল মায়ার কোমরে। মূহুর্তে মিশে গেল দুজন। মায়ার ঠোঁট ভাজল রিদের গালে। তখনই শুনা গেল রিদের মোহাচ্ছন্ন কন্ঠ। মায়াকে আদেশ স্বরুপ বলল…
‘ ওয়ান্স মোর!
মায়া কেঁপে উঠলো। শিহরিত হলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে। রিদের কথায় মায়ার লজ্জা পাওয়ার কথা ছিল অথচ তেমন কিছুই হলো না। বরং দুজনের মান অভিমান ইতি ঘটাতে চেয়ে রিদের কথায় তাল মেলাল। রিদের গলা জড়িয়ে পুনরায় শব্দ করে চুমু খেল রিদের এগাল ঐগাল, দুগালে। মায়া থেমে যেতে চাইলে রিদ পুনরায় একই ভাবে বলল…
‘ এগেইন।
রিদের কথায় অনুযায়ী মায়ার একই কাজ পুনরায় করলো। আবারও থেমে যেতে চাইলে একই ভাবে রিদ আবারও আদেশ করলো…
‘ এগেইন।
বারবার রিদকে এগিইন, এন্ড এগিইন বলতে দেখে এবার আর মায়া থামল না বরং নিজের ইচ্ছেতে রিদের পুরো মুখে ঠোঁট বুলাল পরপর। মায়ার সানিধ্য পেয়ে রিদ নিজেও খৈ হারাল। মায়া কোমর টেনে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে মস্তিষ্ক তড়াক করে জ্বলে উঠলো আশেপাশে অবস্থান দেখে। এই মূহুর্তে দুজন সিঁড়িতে বসে। যেকোনো সময় উপর হতে কেউ নিচে নামতে পারে আবার বাহির থেকেও কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। এমন না দুজন অবৈধ বা লোকসমাজে ভয় রিদের আছে। কারও ভয় রিদের নেই। কিন্তু বউ তাঁর টু পারসোনাল অংশ। আর রিদ তাঁর পারসোনাল কোনো কিছু পাবলিক করতে চাই না। তাঁর ঘনিষ্ঠ মোমেন্ট গুলোও তাঁর বেডরুমে বাহিরে যাবে না কখনো। রিদ আশপাশটা লক্ষ করেই মায়াকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। মায়াকে কোল থেকে নামাতে নামাতে বলল…
‘ নরমাল মানুষের মতো জড়িয়ে ধরা মনে হয় তোমার ডিকশনারিতে নাই না? যখন তখন বানরের মতোন লাফিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে মন চাই শুধু।
মায়া গায়ের জামাটা টেনে ঠিক রিদের দিকে তাকাল। রিদের কথায় কিছু বলল না। রিদকে কিভাবে বুঝাবে মায়া এই মূহুর্তে কতোটা খুশি তাকে দেখে। এমন লাফিয়ে ঝাপিয়ে না পড়লে কি শান্তি লাগে? রিদ ঝুঁকে ফ্লোর থেকে তাঁর ফোন আর মায়ার ব্যাগ উঠিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে দিতেই মায়া সেটা হাতে নিতে নিতে মিনমিন গলায় বলল…
‘ আমি আপনাকে অনেক মিস করছিলাম।
মায়ার কথায় রিদ মায়ার আদলে মুখশ্রীর দিকে তাকাল। এক দৃষ্টিতে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প সময় নিয়ে বলল…
‘ বাসায় যাও!
রিদের কথায় মায়া অস্থির ভঙ্গিতে নাহুচ করে তৎক্ষনাৎ বলল…
‘ না আমি কোথায় যাব না। আপনার সাথে থাকবো।
মায়ার কথায় রিদ ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল…
‘ আপনার সাথে থাকার জন্যই তো আসলাম।
তবে এখন বাসায় যান। রেডি হোন! সন্ধ্যায় আমি গাড়ি পাঠাবো আপনার শশুর বাড়িতে চলে আসবেন।
রিদের কথায় মায়া খানিকটা সন্তুষ্ট হলো। তবে রিদের মনোভাব বুঝতে না পেরে বলল….
‘ আপনি আমার উপর রাগ করে নেই তো?
‘ সেটা রাতেই বুঝবেন।
‘ আমি থাকি না আপনার সাথে। আমাকে সঙ্গে নিলে কি হয়?
রিদ গম্ভীর মুখে বলল…
‘ বাসায় যান। রাহাত দিয়ে আসবে আপনাকে।
মায়া রিদের সঙ্গে থাকতে চেয়ে মিনমিন করে পুনরায় বলতে চাইল…
‘ আমি থাকি …
মায়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে রিদ গম্ভীর গলায় বলল….
‘ আউট!
#চলিত…..