#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪৫
‘ আরিফ ভাই আসল না কেন তোদের সাথে জুই?
হাতে ট্রে বিছানার কোণায় রেখে তার পাশে বসতে বসতে আক্ষেপ গলায় প্রশ্নটা করলো জুইকে মুক্তা। মায়া ওয়াশরুমে। জুই ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে রাখছিল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মুক্তা কথায় জুই দ্বিধাহীন গলায় বলল…
‘ ভাইয়ার নাকি কি জরুরি কাজ আছে সেজন্য আসেনি। আমাদের দুজনকে একা পাঠাল।
জুইয়ের কথায় খানিকটা অসন্তুষ্ট হলো মুক্তা। মন খারাপ করে বলল…
‘ ভাইয়ার কি এমন জরুরি কাজ পড়লো যার জন্য বোনের শশুর বাড়িতে আসতে পারছে না।
‘ আরিফ ভাইয়া নতুন ব্যবসা শুরু করেছে আপু। এজন্য আজকাল ভাইয়া অনেক ব্যস্ত থাকে। এমনকি কাজের চাপে ভাইয়া ঠিকঠাক সময়ে বাসায়ও ফিরত না। অনেকদিন তো আরিফ ভাই ভোর রাত্রেও বাসায় ফিরে।
যদিও জুইয়ের কথা গুলো সত্য তারপরও আরিফের খান বাড়ির অনুষ্ঠানে না আসার যথাযথ কারণটা ছিল মায়ার প্রতি মন কষাকষি নিয়ে। যেটা আরিফের ব্যস্ততা অযুহাতে গোপন করে গেল জুই। মন খারাপে মুক্তা থেমে নেই। আজ তিনমাস পর বোনদের কাছে পেয়েছে সে। যদিও এই তিনমাসে মুক্তা দুই-একবার গিয়েছিল ফাহাদকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়িতে বেড়াতে তবে সেখানে ভাই-বোনদের কারও দেখা পাইনি ওহ। হুট করেই আবার মায়ার ফিক্সড হয়ে যাওয়া বিয়েটাও আরিফ ক্যান্সেল করে দিল। এই নিয়ে বাসায় কতো ঝামেলা হলো। চেয়ারম্যান পরিবার ওদের বাবাকে কতো কথা শুনাল। মানহানির মামলা দিতে চেয়ে হুমকি ধামকি দিয়েছিল কিন্তু নাদিম ছেলেটা সেদিন শফিকুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে শান্ত রাখল। আবার শফিকুল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছি আরিফের সঙ্গে কথা বলবে বলে। হুট করে কেন আরিফ বিয়েটা ক্যান্সেল করতে চাইছে? এতে দুই পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে। অলরেডি পুরো এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে চেয়ারম্যানের ছেলের সঙ্গে শফিকুল ইসলামের ছোট মেয়ের বিয়ে ফিক্সড হয়ে আছে এই ব্যাপারটা। এখন এই মূহুর্তে যদি কোনো কারণ ছাড়া আরিফ বিয়েটা না করে দেয় তাহলে স্বাভাবিক নেয় সবার সম্মানে আঘাত লাগবে। এলাকার মানুষ সমালোচনা করবে। নিন্দা জানাবে। সেজন্য শফিকুল ইসলাম চেয়েছিল মায়া, জুইকে নিয়ে আরিফ আশুগঞ্জ ফিরতে। উনাদের ধারণা ছিল আরিফ একবার মায়াকে নিয়ে আশুগঞ্জ ফিরলে যেভাবে হোক মায়াকে নাদিমের সঙ্গে রাতারাতি বিয়েটা দিয়ে দিবে আরিফকে বুঝিয়ে শুনিয়ে। যদি আরিফ এতে রাজি না হতো তারপরও বিয়েটা সম্পূর্ণ করতো মায়ার পরিবার। অন্তত নিজেদের দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করার জন্য হলেও মায়াকে চেয়ারম্যান পরিবারের বিয়ে দিতো। তাছাড়া এখানে বিয়ের জন্য মায়াতো আর অমত করেনি সেহেতু বিয়েটা সবাই সম্পূর্ণ করতে চাই যেভাবেই হোক। কিন্তু আরিফ এসবের কিছুই তোয়াক্কা করলো না। হুট করে মায়ার বিয়েটা ক্যান্সেল করে মায়াকে নিয়ে আর ফিরলো না আশুগঞ্জ। ফোনে নাদিমের সঙ্গে আরিফের কি কথা হয়েছিল মুক্তা জানে না কিন্তু এরপর থেকে চেয়ারম্যান পরিবারের সবার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে মুক্তাদের পরিবারের সঙ্গে। তবে মায়ার বিয়েটা একেবারে ভেঙ্গে যায়নি। বরং এখনো আগের নেয় আছে। শফিকুল ইসলাম কিছু সময় চেয়েছেন চেয়ারম্যানের থেকে। নিজের ছেলেমেয়ে বাড়িতে ফিরলেই এই নিয়ে কথা বলবেন সবার সাথে ততদিন যেন অন্তত সময় দেন শফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান সাহেব। সেদিন শফিকুল ইসলামের কথা রেখেছিল চেয়ারম্যান সাহেব। তারপর থেকে মায়ার বিয়ের বিষয়টা আপাতত স্থগিত আছে। পুনরায় আলোচনায় বসবে যখন মায়াকে নিয়ে আরিফ আশুগঞ্জ যাবে তখন কিন্তু এতোকিছু মাঝে আরিফের মতামত শূন্য। না নিজে বাড়িতে যাচ্ছে আর না মায়াকে যেতে দিচ্ছে। বিগত তিনমাস ধরে চট্টগ্রামেই আছে মায়ারা। মুক্তা অনেকটা দিনপর বোনদের নানাশশুর বাড়িতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। মায়ারা এখানে এসেছে পর থেকেই বোনদের সাথে আছে সে। সন্ধ্যায় মায়াদের জন্য ট্রে-তে করে রাস্তা নিয়ে এসেই উক্ত কথা বলেছিল মুক্তা। মন খারাপে একই ভাবে বলল মুক্তা…
‘ নতুন ব্যবসা দিয়েছে বলে বোনদের এক নজর দেখা যাবেনা ভাইয়ের? আরিফ ভাই বাড়িতে যায়না, আমার শশুর বাড়িতেও যায়না, আবার এখানে আসলো না। আমি নোটিশ করেছি জুই, আরিফ ভাই সপ্তাহে সপ্তাহে ঢাকা গেলেও আমার শশুর বাড়িতে যায় না আমাকে দেখতে। বাপ-চাচা মিলিয়ে একটা মাত্র ভাই আমাদের, সেও আমার খোঁজ করে না। আমার তো মনে হয় ভাইয়া কোনো কারণে রেগে আছে আমার শশুর বাড়ির মানুষের উপর
এজন্য যেতে চাই না।
জুই ব্যাগ থেকে কাপড় নামাচ্ছিল। মুক্তার মন খারাপের কথা গুলো শুনে মনে ভয় সংশয় সৃষ্টি হলো। ওরা তিন বোনদের মাঝে মুক্তা বেশ চতুর। অল্প সময়ে সবকিছু চট করে ধরে ফেলতে পারে সে। হয়তো আরিফকে নিয়ে মনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে সেটার খোঁজ করতেই জুইকে এখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করছে। জুই হাতে তোয়ালেটা বিছানায় রেখে এগিয়ে মুক্তার মুখোমুখি বসে বলল…
‘ তেমন কিছু না আপু, তুমি ভুল বুঝছো। ভাইয়া আসলে প্যারার মধ্যে আছে। তাছাড়া আরিফ ভাই তো রোজ তোমার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখছে।
‘ ভাইয়ের সাথে কি আমার শুধু ফোনে যোগাযোগ রাখার সম্পর্ক জুই? একটা বার আমার শশুর বাড়িতে গিয়ে আমাকে দেখে আসলে কি হয়? এখনতো ভাইয়া চট্টগ্রামে আছে আমিও এখানে আছি। কতক্ষণ লাগবে আমার শশুর বাড়িতে আসতে? এখানেও আসলো না। আমার কি মনে হয় জুই জানিস? আরিফ ভাইয়া হয়তো কোনো কারণে আমার শশুর বাড়িতে আসতে চাইছে না। আচ্ছা জুই তুই কিছু জানিস এই ব্যাপারে?
জুই খানিকটা থতমত খেয়ে বলল…
‘ না আপু।
‘ আচ্ছা তোরা কেন বাড়িতে যাচ্ছিস না?
‘ আমাদের পড়ার চাপ বেশি পড়েছে আপু।
নিজের প্রশ্নের ধারা জারি রেখে ফের বলল মুক্তা…
‘ আচ্ছা মায়া কি কারও সাথে রিলেশন আছে? আপুকে সত্যি করে বলবি জুই।
একই ভাবে জুই উত্তর দিয়ে বলল…
‘ না আপু নেই।
জুইকে সন্দেহ করে মুক্তা বলল…
‘ তুই মিথ্যা বলছিস জুই। আমার মনে হয় মায়া কারো সাথে রিলেশনে আছে নয়তো আরিফ ভাইয়া হুট করে কেন নাদিমের সঙ্গে বিয়েটা ভেঙ্গে দিল ওর? ওহ নিশ্চয়ই আরিফ ভাইকে বলেছে বিয়েটা ভাঙতে? যেখানে এই বিয়ের জন্য আরিফ ভাই নিজেই প্রথমে রাজি ছিল? সত্যি করে বলতো জুই কি হয়েছে আসলে?
মুক্তা একের পর এক ধারালো প্রশ্নের বানে এবার যথাযথ ভাবে জুই ঘাবড়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে ভুলেও মায়ার সম্পর্কে মুক্তা কানে কিছু যায় তাহলে সেটা ওদের পরিবারের সবার কানে পৌঁছে যাবে মূহুর্তে। জুই নিজেকে ধাতস্থ করে আবারও মিথ্যা বলে বলল…
‘না আপু তুমি বেশি চিন্তা করছো এমন কিছুই হয়নি। মায়া কারও সাথে রিলেশন করলে সেটা তোমাদের চোখে পড়তো না? ওহ যে গবেট সবার আগে তোমার কাছেই ধরা পড়তো এটা।
জুইয়ের কথাটা মুক্তার যুক্তিসঙ্গত মনে হলো। ওরা তিন বোনের মধ্যে মায়া একটু বোকা টাইপের। কোনো কাজ করলে সেটা সহজে হজম করে রাখতে পারে না। কারও না কারও কাছে ধরা পরবেই। যদিও মায়ার কোনো রিলেশন থাকতো তাহলে অন্তত জুইয়ের কাছে হলেও সেটা এতদিনে ধরা পড়ে যেতো। জুইতো আর মুক্তাকে মিথ্যা বলবে না। কিন্তু এতো ভালো বিয়েটা আরিফ কেন হঠাৎ করে না করছে সেটাই বুঝতে পারছে না মুক্তা। মুক্তা ভেবে রেখেছে আজ রাতেই একবার ফাহাদকে নিয়ে যাবে আরিফের সঙ্গে দেখা করতে। আরিফ আসেনি তো কি হয়েছে? ছোট বোন হিসাবে ওহ যাবে আরিফের কাছে। আবার আরিফকে সঙ্গে করে নিয়েও আসবে। এসবের ফাঁকে সুযোগ করে জেনে নিবে কেন মায়ার বিয়েটা না করছে আরিফ। মুক্তা জুইকে বলল..
‘ আচ্ছা তুই নাস্তা কর। আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে আমি নিজেই কথা বলে নিব এই বিষয়ে।
কথাটা বলতে বলতে জুইয়ের দিকে শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে দিল মুক্তা। সেটা হাতে নিতে নিতে ছোট করে সম্মতি দিয়ে জুই বলল….
‘ আচ্ছা আপু।
রুমের মধ্যে মায়ার সন্ধান করে মুক্তা বলল…
‘ মায়া কইরে জুই?
জুই শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলতে চাইল…
‘ মায়া ওয়াশরু….
‘ এইতো আমি আপু।
জুইয়ের কথা শেষ করার আগেই মায়া ওয়াশরুম থেকে বের হলো ফ্রেশ হয়ে এরমাঝেই মুক্তার কথাটা শুনে উত্তর করলো সে। মায়াকে ডেকে মুক্তা বলল…
‘ এদিকে আয়। নাস্তা করে যাহ।
মায়া এগিয়ে এসে জুইয়ের বিছানার উপর রাখা তোয়ালেটা তুলল, হাত মুখ মুছতে মুছতে বসলো জুইয়ের পাশাপাশি। মুক্তার এগিয়ে দেওয়া শরবতে গ্লাসে চুমুক শেষ করতে করতে তিনবোনের মধ্যে গল্পের আসর জমাল। সেই আড্ডার মাঝেই উপস্থিত হলো সেঁজুতি, শশী। শশীকে দেখে জুই তাকাল মায়ার দিকে। মায়াও খানিকটা অস্বস্তিতে তাকাল জুইয়ের দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই জুই চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো মায়াকে। মায়া খানিকটা স্বাভাবিক নেয় তাকাল শশীর দিকে। শশী হাস্যোজ্জ্বল মুখে মায়ার পাশ ঘেঁষেই বসল। মায়াকে শশীর ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ। ছোটখাটো কিউট মেয়ে মায়া। দেখতেও নাদুস নুদুস। মায়াদের সঙ্গে শশীর কৌশলাদি বিনিময়ে মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলো ফাহাদ আর রাদিফ। মূলত ফাহাদ এসেছে নিজের বউয়ের খোঁজে। রাদিফ আর ফাহাদকে একটু বের হতে হবে কাজে। মুক্তা বলেছিল সে আরিফের সঙ্গে দেখা করতে মুরাদপুর যাবে। যেহেতু ওরা দুজন সেই দিকেই যাবে এজন্য ভাবলো মুক্তাকেও সঙ্গে নিয়ে নিবে। কিন্তু মুক্তার খোঁজে ফাহাদ গেস্ট রুমে পৌছাতে সেখানে মায়াদের সঙ্গে সেঁজুতি ও শশীকে দেখে পেল। হাতের স্পিড ক্যানে তখন চুমুক দিচ্ছিল ফাহাদ, বউয়ের পাশে বসতে বসতে অর্ধ খাওয়া ক্যানটি মুক্তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে মায়াদের উদ্দেশ্য বলল…
‘ কি ব্যাপার সবাই আমার শালীদের কক্ষে শালিশ বসিয়েছে কেন? কার গসিপ চলছে এখানে?
ফাহাদের কথায় জুই মজা ছলেই উত্তর করলো…
‘ দুলাভাই আপনার।
ফাহাদ জুইয়ের কথার তাল মিলিয়ে একই ভাবে বলল…
‘ বাপরে তাহলে আজকের ভিলেন মনে হয় আমি।
জুই হেঁসে বলল…
‘ বলতে পারেন।
হাতের একটা ক্যানে চুমুক রাদিফও বসাচ্ছিল। কিন্তু অপর হাতের ইনটেক ক্যান্টি সবার সামনে মায়ার দিকে বাড়িয়ে দিতেই মায়াও কোনো রকম দ্বিধা ছাড়া সেটি রাদিফের হাত থেকে নিল। ট্রে-তে নাস্তা রেখে রাদিফের দেওয়া ক্যানটি খোলে মায়া তাতে চুমুক বসালে রাদিফ পাশ থেকে ঢোল এনে মায়ার মুখোমুখি বসল। মুক্তা তখনো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে মায়ার দিকে। সেঁজুতি রাদিফকে বলল…
‘ আমার ক্যান কই রাদিফ ভাই?
রাদিফ ঠান্ডার ক্যানে চুমুক দিতে দিতে বলল…
‘ তোরটা ফ্রিজে আছে গিয়ে নিয়ে আয় যাহ!
রাদিফের সঙ্গে মায়ার সাচ্ছন্দ্য আচারণ করার বিষয়টি ফাহাদের চোখেও লাগল। এখানে আসার সময় গরমের জন্য ওরা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডার ক্যান গুলো নেওয়ার সময় রাদিফ নিজের জন্য দুটো ক্যানের বোতল উঠালে তখন ফাহাদের মনে হয়েছিল রাদিফ হয়তো নিজের জন্য দু’টো নিয়েছে। কিন্তু এখানে এসে একটা মায়াকে ধরিয়ে দিতেই বুঝতে পারলো তখন রাফিদ দুটো নিজের জন্য নয় বরং একটা মায়ার জন্য নিয়েছিল। সেঁজুতি কথার রেশ টেনে ফাহাদ রাদিফের সঙ্গে মজা করতে চাইল মায়াকে নিয়ে। মসকার ছলে বলতে চাইল….
‘ আমার মায়া রাদিফের বিয়াইন বলে কথা। বিয়াইনের জন্য শুধু ক্যান কেন? আরও স্পেশাল…
ফাহাদের কথা শেষ করার আগেই ইতি টানল রাদিফ। মায়াকে নিজের বোন দ্বাবি করে সম্মান দিয়ে বলল…
‘ মায়া বিয়াইন নয় ছোট বোন হয় আমার। এরপর এসব মজা করবে না ফাহাদ ভাই।
মায়া- রাদিফের সঙ্গে সাচ্ছন্দ্যবোধ দেখে প্রথমে সন্দেহ মুক্তাও করেছিল। হয়তো রাদিফের সঙ্গে মায়ার কিছু চলবে ভেবে ধারণা করে নিয়েছিল মনে মনে কিন্তু রাদিফ যেন মূহুর্তে ফাহাদকে নয় বরং মুক্তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে মায়াকে নিজে ছোট বোন বলে দাবি করলো। রাদিফকে নিয়ে মুক্তার মনের সন্দেহ কেটে যেতেই ফাহাদ জুইকে জড়িয়ে আর কিছু বলতে চাইল না। পরে দেখা গেল রাদিফ মায়ার মতো জুইকেও নিজের বোন বলে দাবি করল তখন বিষয়টা ফাহাদের জন্য লজ্জাজনক হতে পারে ভেবে সে শশীকে নিয়ে রাদিফকে বলল…
‘ আচ্ছা মানলাম মায়া নাহয় তোর ছোট বোন হয় কিন্তু তোর সুন্দরী ভাবি জন্য অন্তত একটা ক্যানের বোতল আনা প্রয়োজন ছিল তোর।
রাদিফ স্বাভাবিক নেয় নিজের ভাবি বলতে মুক্তা ধরে নিল। কারণ মায়ার বিষয়টা যেহেতু এখনো পরিবারের কেউ অবগত নয় সেজন্য রাদিফ মুক্তাকে ভাবি মনে করে বলল…
‘ ভাবির জন্য তো তুমি আছো আমি আনবো কেন? তোমার বউয়ের ভাগ আমাকে দিবা যে আমি খাওয়াব?
ফাহাদ পাশ থেকে বালিশের কুশন উঠিয়ে রাদিফের দিকে ছুড়ে মারতে মারতে বলল…
‘ শালা আমি আমার বউয়ের কথা বলছি তোকে? আমি তোর ভাইয়ের বউয়ের কথা বললাম। শশী তো রিদের হাফ বউ হয়। তাহলে ওকে কেন খাওয়ালি না?
ফাহাদের কথায় চমকে উঠার মতোন চারজোড়া চোখ তৎক্ষনাৎ তাকাল মায়ার দিকে। রাদিফ, জুই মায়াকে লক্ষ করতেই দেখল ফাহাদের কথায় চোখ মুখ অন্ধকার করে মাথা ঝুঁকে বসে আছে মায়া। হয়তো নিজের ইমোশন গুলো আটকাতে চাচ্ছে। অথচ শশী তখন লজ্জা মিশ্রত মুখে বসে। রাদিফ মায়াকে আশ্বস্ত করতে চেয়ে ফাহাদের কথা শুধিয়ে বলল…
‘ রিদ ভাইয়ের পছন্দ আছে।
রাদিফের কথা কেটে ফাহাদ আবারও বলল…
‘ আরে রিদের পছন্দই তো আমাদের শশী। ওদের দুজনের প্রেম তো একদিন দু’দিনের নয়, গুটা পাঁচ বছরের প্রেম কাহিনি ওদের। খোঁজ নিয়ে দেখ দুজনের প্রেমের গল্প আকাশের বাতাসে হাওয়ায় হাওয়ায়ও পাওয়া যাবে তাই না শশী?
খানিকটা লজ্জা মাথা নাড়িয়ে হাসলো শশী। মায়া হাতের বোতলটা দু’হাতে চেপে বসল শক্ত করে। ফাহাদের কথা গুলো যেন হৃদয়ে কাঁটার মতোন বিঁধছে। রিদের প্রেম ছিল কারও সাথে সেটা ভাবতেও যেন মনে অদৃশ্য জখমে খন্ডিত হচ্ছে অসংখ্য। মায়া এই মূহুর্তে সবার সামনে কাঁদতে চাইনা। বরং নিজেকে শক্ত রাখতে দাঁত কামড়িয়ে মাথা ঝুঁকে বসে। জুই মায়ার অবস্থা বুঝতে পেরে একহাতে মায়ার হাতটা চেপে বসল সবার অগোচরে। রাদিফ মায়ার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ফাহাদের উপর বিরক্ত হলো। খানিকটা রাগ হয়ে সরাসরি বলল…
‘ ভুল জানো তুমি ফাহাদ ভাই। রাস্তার মুড় অনেক আগেই ঘুরে গেছে। আমি জানি না আদৌও শশীর সাথে রিদ ভাইয়ের কিছু ছিল কি-না। তবে এতটুকু বলতে পারি রিদ ভাইয়ের পছন্দের মানুষ শশী নয় বরং অন্য কেউ। আর সেই খবর আমি, বাবা-মা আমরা তিনজনই জানি। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে রিদ ভাইকে জিগ্যেসা করে নিও।
কথাটা বলেই রাদিফ উঠে গেল। রাদিফের কথায় ফাহাদ, মুক্তা সেঁজুতি বিভ্রান্ত হয়ে তাকাল শশীর দিকে। রাদিফের কথা গুলো যে শশীর বিশ্বাস হয়নি সেটা শশীর ফেইস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তবে শশী রাদিফের কথায় কষ্ট পেয়েছে বলে সেও তৎক্ষনাৎ রুম ত্যাগ করলো কাউকে কিছু না বলে। মায়া তখনো মাথা ঝুঁকে বসে। ফাহাদ মুক্তাকে বের হতে বলে সেও চলে গেল। এই মূহুর্তে কেউ কথাটা আর বাড়াতে চাইল না। তবে রাদিফের এই কথা গুলো যে এখানে শেষ হবে না সেটা ফাহাদ, সেঁজুতি মুক্তা তিনজনই জানে। এই কথাটা এখন পরিবারের বড়দের কানে দিবে শশী। হয়তো এখন কেউ কিছু বলবে না কিন্তু কাল ফাংশন শেষ হতে হতে কিছু একটা হবে বলে আশা করা যায়। মুক্তা -মায়া, জুইকে সেঁজুতির সাথে থাকতে বলে সেও বের হয়ে যায়। মায়া রাদিফের কথায় আশ্বস্ত হলেও রিদের প্রথম ভালোবাসা শশীকে ভেবে একবুক কষ্ট সারারাত পার করলো রিদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়। কিন্তু কোথাও রিদের বা অন্য কারও দেখা নেই। মধ্যেরাতে দিকে ফাহাদকে দেখা যায় মুক্তাকে নিয়ে খান বাড়িতে ফিরতে। আরিফের সঙ্গে দেখা করেছিল ওরা। আরিফ কাল খান বাড়ির মেজবানে আসবে বলে আশ্বস্ত করলো মুক্তাকে। কিন্তু রিদ সেই দুপুরে নিহাল খানের সঙ্গে বের হয়েছিল, সারারাত চলে গেল অথচ সে ফিরতে পারেনি কাজের চাপে। রাত পার হয়ে
সকাল হলো। মায়া সকালে মানুষের হৈচৈয়ে ঘুম থেকে উঠে রিদের খোঁজ করলো। শুনা গেল রিদ তখনো বাসায় ফিরেনি। একবুক কষ্টে মায়ার তখনই কেঁদে ফেলল। ডাগর ডাগ আঁখিদয় চিকচিক করলো নুনা জ্বলে। মায়াকে বারবার চোখ মুছতে দেখে ক্ষেপে যায় জুই। এই মূহুর্তে মায়াকে কান্না করতে দেখলে মুক্তা সন্দেহ করতে পারে যেটা মোটেও ঠিক হবে না কারও জন্য। হৈচৈয়ের মধ্যে সকলে রেডি হলো। মায়াও সাধারণ থ্রি পিস পড়ে সবার সাথে বসে। শশীকে, দেখা গেল শাড়ি পড়ে ঘুরতে। সকাল দশটার মধ্যে বাবুর্চির রান্না বান্নার বিশাল আয়োজন শেষ শেষ। এগারোটার ভিতরে খাওয়া-দাওয়া কাজ শুরু করবে। খান পরিবারের সকল আত্নীয় স্বজনরাও সকাল থেকে আসতে শুরু করেছে। চারপাশে কলরব আয়োজন। অথচ রিদ বা নিহাল খানসহ বাড়ির ছেলেগুলোর দেখা নেই। আশায় আশায় মায়া মন বিষিয়ে উঠছে তিক্ততায়। দশটার দিকে শুনা গেল রিদের গাড়ি খান বাড়িতে ঢুকেছে। মায়া তখন সবার সাথে দুতলা গেস্ট রুমে বসে। রিদকে বাড়িতে ফিরতে শুনে দৌড়ে দোতলা করিডোরের দাঁড়াল রেলিং ধরে। নিচে তাকিয়ে দেখল সারিবদ্ধ ভাবে অনেক গুলো গাড়ি পাকিং এরিয়াতে আছে অথচ রিদের দেখা কোথাও নেই। ক্ষুন্ন মন আরও ক্ষুন্ন হলো। চোখ মুখ অন্ধকার করে নিচের তাকিয়ে তাকার মধ্যেই পাশ থেকে হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো মায়াকে….
‘ এখানে কি করছেন আম্মু?
মায়া চমকে উঠার মতোন তাড়াহুড়োয় সোজা হয়ে দাঁড়াল। মাথা কাপড় টেনে থতমত খেয়ে বলল…
‘ আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
‘ ওয়ালাইকুম সালাম। ভালো আছেন আম্মু?
‘ জ্বি আপনি?
‘ আলহামদুলিল্লাহ আম্মু আছি আল্লাহ রহমতে। তা আপনি রেডি না হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন? ভিতরে যান রেডি হোন গিয়ে।
মায়া অস্বস্তিতে আছড়ে মাথা কাপড়টা আরও একটু টেনে বলল…
‘ ভালো লাগছিল না সেজন্য এখানে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।
মায়ার কথায় নিহাল খান ক্লান্তিতে হেঁসে বলল…
‘ আপনার শশুর বাড়ির এটা, আপনি যেখানে খুশি সেখানে দাঁড়াবেন সমস্যা নেই। আগে রেডি হয়ে নিন। এই বাড়ির বড়ো বউ আপনি। সবাই আপনাকে দেখবে। খান বাড়ির বউ হিসাবে চিনবে। আপনি বরং একটা মার্জিত শাড়ি পরে নিন আম্মু।
মায়ার আর সাহস হলো না নিহাল খানের মুখে মুখে আর কিছু বলতে কেমন রোবটের মতোন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল শুধু। নিহাল খান অল্প হেসে স্থান ত্যাগ করলে মায়াও নিজের রুমে গেল। ব্যাগ খোলে গাঢ় নীল মসলিন তাতের জামদানী শাড়ি খোলে সেটা পড়লো জুইয়ের সাহায্যে। এই শাড়ীটা সেদিন রাফা পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল মায়াকে আজকের দিনে পরার জন্য। কিন্তু অস্বস্তিতে মায়া ভেবেছিলাম শাড়ি-টাড়ি পড়বে না আজ। যদি কেউ জিজ্ঞেসা করে মায়া কেন আজ শাড়ি পড়েছে তাহলে কি উত্তর দিবে সে? সেই চিন্তায় মায়া প্রথমে শাড়ী পরতে চাইনি কিন্তু এখন নিহাল খানে বলাতে মায়ার শাড়ি পড়াটা বাধ্যতা মূলক হয়ে গেল। নয়তো নিহাল খানের আদেশ করার পরও যদি মায়া শাড়ি না পড়ে তাহলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু আর বেয়াদবি দেখাবে। যেটা মায়া করতে চাইনা বলে দ্বিধামনা করে শাড়িটা পড়ে নিল কিন্তু কেউ জিগ্যেসা করলে কি বলবে সেই চিন্তায় ভয়েও থাকলো। মায়ার শাড়ি পড়া শেষ হতেই রুমে ঢুকলো মুক্তা হাতে নিজের দুটো শাড়ি নিয়ে। মায়াকে গাঢ় টকটকা নীল শাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেইদিকে কয়েক সেকেন্ড মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে বলল…
‘ মাশাল্লাহ! তোকে তো বেশ সুন্দর লাগে শাড়িতে মায়া? এই শাড়িটা কোথায় পেয়েছিস তুই?
জুই তখন মায়ার সামনে বসে কুঁচি গুলো গোছাচ্ছিল। মায়া মুক্তা দেখে ভয়ে ভয়ে বলল…
‘ আরিফ ভাই কিনে দিয়েছিল এটা।
‘ বাহ সুন্দর হয়েছে। তোকে অনেক মানিয়েছে।
কথাটা বলেই মুক্তা হাতের শাড়ি গুলো বিছানার উপর রাখতে রাখতে আবারও বলল…
‘ আমি আরও তোদের দুজনের জন্য দুটো শাড়ি এনেছিলাম। রাদিফ বললো নিহাল আঙ্কেল নাকি মেয়েদের সবাইকে আজ শাড়ি পড়তে বলেছে। উনি হঠাৎ এই কথাটা কেন বললো জানি না। তারপরও গুরুজন যেহেতু আদেশ করেছে জুই তুইও একটা শাড়ি পরে নে। কিছু লাগলে আমাকে ডাকিস। রিদ ভাইয়া নিচে এসেছেন উনার সাথে দেখা করে আসি কেমন?
অস্থিরতায় মায়া কোনো রকম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই মুক্তা চলে গেল। মায়া রিদকে দেখা আশায় জুইকে রেখে চলে গেল আবারও করিডোরে। পিলার ঘেঁষে রেলিং এর নিচে তাকাল ঝুঁকে। অস্থিরতায় আশেপাশে তাকিয়ে আবারও রিদকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চোখ চিকচিক করলো নুনা জ্বলে। ভঙ্গ হৃদয়ে জেদ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। রিদ তখন সবে নিচ থেকে উপরে উঠছিল ক্লান্তিতে। সারারাতের ঠহলে শরীর রু রু করছে ক্লান্তিতে। লম্বা শাওয়ার না নিলেই নয়। এরিই মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে করিডোর পা রাখতে চোখে পরলো নিজের বউকে নীল শাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে। থমকে যাওয়ার মতো সেখানেই দাঁড়াল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মায়ার দ্বিগুণ চুল গুলো এলোমেলো হাত খোপা করে সাজুগুজু বিহীন রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে হয়তো নিচে তাকিয়ে কারও সন্ধান করছে। মায়ার সৌন্দর্য্যতা যেন
মূহুর্তে স্নিগ্ধতা ছড়াল রিদের মনে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেল শীতলতা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। মায়াকে দেখা গেল বামহাতে চোখ মুছতে। রেলিং ধরে নিচে ঝুঁকে আবারও কোনো কিছুর সন্ধান করতেই রিদ কপাল কুঁচকায়। কিছু একটা ভেবে এগিয়ে এসে হঠাৎই মায়ার বাহু টেনে পিঠ ঠেকাল পিলারে। মূহুর্তে মাঝে কোনো কিছু ঠাহর করতে না পেরে ব্যথায় পিঠ বাকাল মায়া। রিদকে লক্ষ না করে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে রিদ মায়ার বাহু পেঁচিয়ে বলল…
‘ শরীরে তেজ বেড়ে গেছে? শক্তি দেখান? হাড় ভেঙ্গে হাতে ধরায় দিব।
রিদের কন্ঠে মায়া চমকে উঠার মতোন চুপসে গেল। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রিদকে এই মূহুর্তে আশা করেনি মায়া। রিদের সান্বিধ্য পেতেই মায়া চুপ করে গেল। অভিমানী গলায় মিনমিন করে বলল…
‘ আপনি আমাকে ছুঁবেন না যান!
‘ তাহলে কে ছুঁবে?
‘ আপনি রাতে আসেন নাই কেন? আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
‘ আপনি ডেকেছেন যে আসবো?
মায়া গাল ফুলিয়ে অভিমানী গলায় ফের বলল…
‘ আপনিতো আমার কল রিসিভ করেন না।
‘ কল রিসিভ করার মতোন কাজ করেছেন যে রিসিভ করবো?
রিদের কথায় মায়া আবারও চুপ করে গেল। চোখের পানি সমান তালে টলমলিয়ে নামল গাল বেয়ে। রিদ মায়ার চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলো না বরং মায়ার থুঁতি চেপে মুখটা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে বলল…
‘ দিন দিন এতো গ্লো করছেন কেন? জামাই আশেপাশে না থাকলে সৌন্দর্য বাড়ে কেন?
মায়া রিদকে অল্প ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়াতে চেয়ে বলল…
‘ জানি না।
‘ আপনি সব জানেন ম্যাডাম। জেনে বুঝে আমাকে আমাকে পাগল বানাচ্ছেন। মেসেজে কি লিখেছিলেন আমার সিস্টেমে সমস্যা আছে? চলে না, অচল? আর কি কি যেন ছিল?
রিদের কথাটা মায়ার বোধগম্য হলো না। কিসের সিস্টেম কিসের কি? মায়া অবুঝ গলায় জানতে চেয়ে বলল…
‘ মানে?
মায়ার অবুঝতার প্রশ্নে শক্ত হাতে মায়ার গাল চেপে পুনরায় পিলারে সাথে ঠেসে ধরে রিদ বলল…
‘ মানে আজকে আপনি শেষ ম্যাডাম! শুধু রাতটা হতে দেন। নিজেকে কিভাবে বাঁচান আমি দেখবো।
এবারও রিদের কথার যথাযথ অর্থ বুঝল না মায়া। বরং মায়া মনে করলো সে আবারও কোনো ভুল করেছে যার জন্য রিদ রেগে যাচ্ছে। মায়া উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল…
‘ আপনি ভুল ভাবছেন! আমি কিছু করেনি সত্যি বলছি।
‘ আপনার কিছু করতে হবে না ম্যাডাম আমি আছি! আমি করবো। আপনার রাত আজকে কিভাবে শেষ হয় সেটা আমিও দেখবো।
মায়া অসহায় চোখে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….
‘ সত্যিই আমি কিছু করেনি। বিশ্বাস করুন।
রিদ মূহুর্তে মায়ার মুখোমুখি হয়ে ঝুঁকে বলল…
‘ ওকে ডান! কিস মি।
‘ এ্যাঁ?
‘ কিস মি!
রিদের সোজাসাপ্টা কথায় মায়া লজ্জায় থতমত খেয়ে গেল। মূহুর্তে চোখে ভেসে উঠলো রিদকে চুমু খাওয়ার কালকের দৃশ্য গুলো। মায়া লজ্জায় নত মস্তিষ্ক হতে চাইলে রিদের হাত ওর গালে চেপে থাকার কারণে হতে পারলো না। তারপরও মায়া রিদের চোখে চোখ রাখতে না পেরে লজ্জায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে বলল….
‘ আমি পারব না। সরুন! আমি যাব!
রিদ মায়াকে লজ্জা পেতে দেখে হঠাৎ নরম হয়ে আসলো। মায়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চেয়ে শাড়ি বেধ করে মায়ার উন্মুকত কোমরে দু’হাত ভিড়াল। মাথা ঝুঁকে কপাল ঠেকাল মায়ার খোলা কাঁধে। আলতো ঠোঁট ছুয়াতেই মায়া কেঁপে উঠে রিদের বাহুতে শরীর ছেড়ে দিল ভয়ে। রিদ শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরলো মায়াকে। নিজের সাথে মিশে মায়ার কাঁধে পরপর ঠোঁট ছুয়ে উঠলো গলায়, তারপর গলা থেকে একই ভাবে কানে স্পর্শ করেই রিদ ফিসফিসিয়ে বলল….
‘ আমার পারমিশন ছাড়া শাড়ি চেঞ্জ করবে না।
মায়া ভয়ে কোনো রকমে কম্পিত গলায় অল্প আওয়াজে বলল…
‘ হুম।
‘ রাতে আমার রুমে আসবে।
‘ হুম।
মায়ার উত্তরের সাথে সাথে রিদ শব্দ করে চুমু খেল মায়ার গালে তার পরপরই এগাল ঐগাল দুগাল একই শব্দ হলো। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে রিদ মায়াকে ছেড়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…
‘ আমার রুমে আসো!
বলতে বলতে রিদ সামনে এগোল। মায়া কম্পিত শরীরে বেশ অনেক সময় নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল স্বাভাবিক হতে। যখন নিজেকে ধাতস্থ করলো মায়া কি হয়েছে ওর সাথে? তখনই লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে নিল মূহুর্তে। রিদের পিছন পিছন রুমে না গিয়ে বরং উল্টো দৌড়াল নিজে রুমে। এই মূহুর্তে রিদের সামনে দাঁড়ানোর মতোন সাহস হলো না আর।
#চলিত…
#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪৬
‘ আমার রুমে আসো!
বলতে বলতে রিদ সামনে এগোল। মায়া কম্পিত শরীরে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল স্বাভাবিক হতে। যখন নিজেকে ধাতস্থ করলো কি হয়েছে ওর সাথে? লজ্জায় তৎক্ষনাৎ দু’হাত চলে গেল মুখে। মূহুর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা পুনরায় মনে করতেই রিদের পিছনে না গিয়ে উল্টো দৌড়াল নিজে রুমে। এই মূহুর্তে রিদের সামনে দাঁড়ানোর মতোন সাহস মায়ার নেই। কিন্তু নিজের রুমের দরজায় গিয়েও আঁটকে গেল মায়া। এতোদিন পর মায়ার স্বামী ওকে ডেকেছে, এখন না গেলে নিশ্চয়ই আবার রেগে যাবে? বলবে মায়া বেয়াদব বউ উনার! নিজের চিন্তা ভাবনায় মায়া রিদের রুমে যেতে গিয়েও আবার বেঁকে গেল। বরং নিজের দিকে তাকিয়ে পরখ করলো অগোছালো চুল আর তেল-চিটচিটে মুখটা। মায়া তৎক্ষনাৎ দৌড়ে এগোল ওয়াশরুমের দিকে। হাত-মুখ ধুয়ে নিজেকে পরিপাটি করে তারপর যাবে স্বামী রুমে নয়তো কেমন দেখাবে? যে ওহ অগোছালো আর ময়লা ময়লা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বামী সামনে। মোটেও বিষয়টা ভালো দেখাবে না বলেই মায়া ওয়াশরুম হতে হাত-মুখ ধুয়ে গেল ড্রেসিংটেবিলের সামনে। সেখানে পূর্ব থেকে জুই দাঁড়িয়ে। মাথায় চিরুনি চালাচ্ছিল। গায়ে তাঁরও কালো রঙের জামদানী শাড়ি জড়ানো। ফর্সা শরীরে যেন চকচক করছে সেটা। মায়া আগ বাড়িয়ে
এসেই জুইয়ের হাত থেকে চিরুনি টেনে নিজে ড্রেসিংটেবিলের সামনে টুলে বসে পরলো। খোপা করা এলোমেলো চুল গুলো খোলে দিতেই সেগুলো পিঠ ছড়িয়ে পরলো ফ্লোরে। মায়া চিরুনিটা পুনরায় জুঁইয়ের হাতে দিতে দিতে বলল…
‘ চুল গুলো ঠিক করে দে-তো জুঁই।
জুঁই মায়ার হাত থেকে চিরনি নিতে নিতে বলল….
‘ কোথাও যাবি নাকি?
‘ হুম! উনার রুমে যাব!
জুই মায়ার কথাটা পুনরায় শুধিয়ে বলল..
‘ উনি মানে রিদ ভাইয়ার রুমে?
‘ হুম! উনি ডেকেছেন যেতে।
জুই আগ বাড়িয়ে আর কিছু জিজ্ঞেসা করলো না মায়াকে। বরং সে নিজের অগোছালো চুল রেখে মায়ার চুলগুলো চিরনি করে বেঁধে দিল গুছিয়ে। এরমাঝেই মায়া তাড়াহুড়োয় অল্পসল্প সাজুগুজু করে উঠে দাঁড়াল। নিজেকে পরিপাটি করেই পুনরায় দৌড় লাগাল রিদের রুমে। জুঁই চিরুনি হাতেই মায়ার চলে যাওয়া উচ্ছ্বাস পথের দিকে তাকিয়ে রইল। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর, যদি সঠিক মানুষের সাথে হয়। নয়তো একটা ভুল মানুষ জীবন ধ্বংস করার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখে। আচ্ছা জুঁই কি আয়নের জন্য ভুল মানুষ ছিল? জুঁইয়ের মন থেকে তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো, অবশ্যই জুঁই আয়নের জন্য একটা ভুল মানুষ ছিল। নয়তো সামান্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে কিভাবে পারলো জুঁই সুন্দর একটা সম্পর্ক শেষ করে দিতে? এটা কি প্রমাণ করে না,জুঁই একটা ভুল মানুষ ছিল আয়নের জীবনে? আদৌও এখানে আয়নের কোনো দোষ ছিল? এই সম্পর্কের মাঝে জুঁই টেনেছিল আয়নকে। আবেগ, ভালোবাসা সবকিছু জুঁই আয়নের প্রতি দেখিয়েছিল তাহলে জুঁই কিসের অপরাধে আয়নকে অবজ্ঞা করলো? আসলে কি জুঁই রাদিফকে পছন্দ করতো? নাকি ফোনের ওপাশের থাকা মানুষটাকে পছন্দ করতো জুঁই, যে জুঁইয়ের সাথে সারাক্ষণ কথা বলতো, ওর খেয়াল রাখতো, যত্ন করে ভালোবাসতো। যার সাথে জুঁইয়ের মনের লেনদেন হয়েছিল। ভালোলাগা, আবেগ, পছন্দ অপছন্দ সবকিছু জড়িয়ে ছিল। আর সেই মানুষটাই তো আয়ন ছিল তাহলে তাঁকে কেন জুঁই কোন অপরাধে দূরে সরালো। কিসের জন্য? চিরুনি হাতে নিয়ে জুঁই ধুপ করে ঢোলে উপর বসে পরলো। হাঁটুতে দু’হাত ঠেকিয়ে মুখ ঢেকে বসলো মাথা ঝুঁকে। তীব্র অপরাধ বোধে জুঁই শরীর কাপিয়ে ফুপিয়ে উঠলো শব্দবিহীন কান্নায়। এরমাঝে কেউ বেশ কয়েকবার নক করে রুমে ঢুকলো। কিন্তু কান্দনরত জুঁই নিজের বেখেয়ালির কারণে সেটা ঠাহর করতে পারলো না। কেউ একজন কক্ষে প্রবেশ করেই ভিতর থেকে দরজা আটকিয়ে দিল। পিছনে ঘুরে নিজের বুক পাশের শার্টে বোতামে হাত দিতেই থমথমে খেয়ে বসলো রুমে জুঁইয়ের উপস্থিত দেখে। দরজার আওয়াজে সবেমাত্র জুঁই মাথা তুলে তাকিয়েছিল, মনে করেছিল মায়া পুনরায় রুমে এসেছে বুঝি। কিন্তু একই রুমে মায়ার জায়গায় আয়নকে দেখে থমথমে খেয়ে বসলো জুঁইও। মূহুর্তে মাঝে জুঁই ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়াল আয়নকে দেখে। দু’হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে পিঠ বেঁকে দাঁড়াল তৎক্ষনাৎ।
আয়ন তখনো জুঁইয়ের কান্দনরত মুখের দিকে তাকিয়ে।
‘ আপনি কাঁদছেন কেন জুঁই?
আয়নের অল্প কথায় যেন জুঁই আরও আবেগি হলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো তীব্র অপরাধ বোধে। জুঁইয়ের কান্নায় আয়ন ভিতর থেকে বিচলিত হলেও বাহির থেকে শক্ত দেখাল। আয়ন এই মূহুর্তে চলে যেতে গিয়েও পারলো না জুঁইয়ের ফুপিয়ে কেঁদে উঠা দেখে। কিন্তু বন্ধ দরজার ভিতরে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে থাকাটা দৃষ্টিকটুর বলে সে সামনে এগোল না। তবে আয়ন স্থিরও থাকতে পারলো না।
কারণ সে কখনো জুঁইকে কাঁদতে দেখেনি এই প্রথম। অধৈর্য্যের আয়ন পুনরায় প্রশ্ন করলো জুঁইকে…
‘ আপনি ঠিক আছেন জুঁই? কাঁদছেন কেন? কেউ কিছু বলেছে আপনাকে? রাদিফের সঙ্গে আপনার ঝামেলা হয়েছে? আমি কি কথা বলবো রাদি…
আয়নের কথা গুলো বলতে বলতে দুই এক কদম এগোল সবে। দুজনের মাঝে তারপরও কয়েক কদমের দূরত্ব ছিল। সেটা মূহুর্তে শেষ করলো জুই। আয়নের বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই জুঁই ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আয়নকে। পরিস্থিতি এমন হবে আয়ন আশা করেনি। কেমন বোকার মতোন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে সে। তক্ষুনি জুঁইকে ভাঙ্গা গলায় বলতে শুনা গেল…
‘ আমি ভুল করেছি ডাক্তার সাহেব। বিশাল বড়ো ভুল করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাকে রাদিফ ভাইয়া মনে করে কথা বললেও আমি সবসময় ফোনের ওপাশের মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম। যেটা আপনি ছিলেন। আমার কখনো কারও সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। তীব্র অপরাধ বোধে আমি রোজ পুড়ছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। প্লিজ! প্লিজ!
তড়াক করে মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো আয়নের। বন্ধ দরজার ভিতরে দুজন নারী-পুরুষের আলিঙ্গন করার পাপ। তাছাড়া খান বাড়ি ভরপুর মেহমানে। যদি কেউ ওদের এই পরিস্থিতি দেখে তাহলে দুজনের কলঙ্কের সীমা থাকবে না। আয়ন মূহুর্তে মাঝে জুইকে টেনে নিজের থেকে দূরে সরাল। রাগে বলল…
‘ আপনি নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন জুঁই।
রাগে কথা গুলো বলেই আয়ন ত্যাগ করলো।
জুঁইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে নিজে রুম থেকে বের হয়ে গেল দ্রুত। আয়নকে চলে যেতে দেখে জুঁই পুনরায় কেঁদে উঠলো। ভাবলো আয়ন হয়তো জুঁইকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না৷ অথচ আয়ন রুমে এসেছিল নিজের ট্রলি ব্যাগের জন্য। চট্টগ্রামে এই খান বাড়িতে আসলে সে এই রুমেই অবস্থান করে। কাল রাতে মায়া আর জুঁইকে আয়নের রুমেটা দেওয়াতে আয়ন আর এই রুমে আসেনি। রাদিফের সঙ্গে ছিল। কিন্তু নিজের ট্রলি ব্যাগটা এই রুমে থেকে যাওয়ার কারণে সেটা নিতে এসেছিল এখন। আয়ন প্রথমে মনে করেছিল রুমে হয়তো কেউ না কেউ থাকবে। কাউকে বললে রুম থেকে আয়নের ট্রলিটা বের করে দিবে কিন্তু আয়নের পরপর কয়েকবার নক করার পরও যখন রুমের ভিতর থেকে শব্দ আসলো না তখন আয়ন মনে করেছিল রুমে হয়তো কেউ নেই। সবাই নিচে! সেজন্য সে ভেবেছিল যখন এসেছে তখন না-হয় একেবারে গোসল করে রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাবে। আর এজন্য আয়ন রুমে ঢুকেই প্রথমে দরজা আঁটকে দিয়েছিল খালি রুম ভেবে। কিন্তু রুমে হঠাৎ জুঁইয়ের উপস্থিতে দেখে সে থমমত খেয়ে বসল। আয়ন চেয়েছিল বেড়িয়ে যাবে তৎক্ষনাৎ কিন্তু জুঁইকে কান্না করতে দেখে না চাইতেও দাঁড়াতে হয় আয়নকে। মন বিচলিত হয়ে উঠে জুঁই কেন কান্না করছে সেটা জানতে কিন্তু জুঁইয়ের হঠাৎ জড়িয়ে ধরাটা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকিছু হবে আয়ন স্বপ্নেও ভাবেনি। মন খচখচে আয়ন বেড়িয়ে যেতেই জুঁইয়ের গাল বেয়ে অশ্রু জড়াল ভিতরকার তোলপাড়ে।
~~
দরজা খোলা থাকায় মায়া নক না করেই ঢুকলো রিদের রুমে। স্বামীর কক্ষে প্রবেশ করতে অবশ্যই কারও অনুমতি প্রয়োজন নেই মায়ার? মায়ার সেই অধিকার আছে। উৎফুল্লর মায়া হাসিমুখে ভিতরে প্রবেশ করতেই থমথমে খেয়ে বসলো রিদ শশীকে একত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। হঠাৎ রুমে মায়ার উপস্থিতি পেয়ে রিদ শশী দুজনই পিছনে তাকাল। রিদের হাতে তখন শশীর দেওয়া লেবু পানির গ্লাসটা। যেটা সে পান করছিল। মায়াকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদকে আগের নেয় স্বাভাবিকই দেখাল কিন্তু শশী মায়ার নক না করে রিদের রুমে প্রবেশ করাটা ভালো চোখে দেখলো না। কিন্তু তারপরও সেটা রিদের সামনে মায়াকে কিছু না বলে বরং মায়ার উপস্থিতিট কারণ জানতে চেয়ে বলল…
‘ তুমি এখানে? কিছু বলবে মায়া?
শশীর প্রশ্ন মায়ার চোখে পানি দেখা গেল। রিদকে স্বাভাবিক দেখে মায়ার কষ্ট আরও বাড়ল। কিন্তু রাগে জিদ্দে মায়া সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। রিদ- শশীর দুজনকে একত্রে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক আচরণ দেখে মায়ার মনে হলো সত্যিই শশীর সাথে রিদের পূর্বে কোনো সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে। মায়া হাসিমুখ খানা মূহুর্তে নুইয়ে গেল তীব্র জেদ্দে। চোখের কোণে জমলো ক্ষোভের জল। শশীর কথায় মায়া কিছু বলবে তার আগেই রিদ লেবু পানি সবটা শেষ করে শশীর হাতে খালি গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ আমি ওকে ডেকেছিলাম।
রিদের কথাটা স্বাভাবিক ভাবেই নিল শশী। মায়ার উপর সন্দেহা ভাব সরে গিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল শশী…
‘ কেন? কোনো কাজ ছিল তোমার? আমাকে বলো আমি করে দিচ্ছি তোমাকে। মায়া এই বাড়ির মেহমান, ওহ কি কাজ করে দিবে তোমাকে? মায়া পারবে না। আমাকে বলো কি করতে হবে।
শশীর কথায় স্পষ্ট সে রিদের সামান্য কাজের ভারও অন্য নারীর হাতে দিতে রাজী নয়। বিষয়টা মায়ার কাছে স্পষ্ট হলেও রিদ যেন অদেখা করে শশীকে বলল…
‘ আমারটা আমি বুঝে নিব। তুই যাহ!
বলতে বলতে রিদ ঘুরে ড্রেসিংটেবিল সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়িটা খোলে পাশে রাখলে চাইলে শশী পুনরায় বলল…
‘ তুমি কি এখন ফ্রেশ হবে?
রিদের ছোট উত্তর…
‘ হুম।
শশী আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে যেতে চাইলে দরজা সামনে মায়ার মুখোমুখি হয়ে বলল….
‘ আমার সাথে চলো মায়া!
শশীর কথায় স্পষ্ট জানান দিচ্ছে সে মায়াকে একা রিদের রুমে রেখে যেতে চাই না। শশীকে বাঁধা দিয়ে রিদ মিরর দিয়ে মায়ার নত মস্তিষ্কের দিকে তাকিয়ে শশীকে শুধিয়ে বলল…
‘ তুই যাহ শশী! ওহ থাক!
শশীর পিছনে ঘুরে সন্দিহা গলায় রিদকে বলল…
‘ তুমি তো ফ্রেশ হবে। তাহলে মায়া কেন থাকবে এখানে?
শশীকে এতো জেরা করতে দেখে রিদ রেগে যায়। তার মোটেও পছন্দ নয় কাউকে কৈফিয়ত দেওয়াতে। শশীর কথায় চিবিয়ে চিবিয়ে রিদ বলল…
‘ আমি বলছি তাই থাকবে। তোর সমস্যা?
‘ কিন্তু….
শশীকে কথা পেঁচাতে দেখে মায়া নিজেই চলে যেতে চেয়ে বলল…
‘ আমি চলে যাচ্ছি আপু। তুমি থাকো!
প্রথমে শশী এখন মায়াকে অবাধ্য হতে দেখে রিদ তড়াক করে রেগে উঠে। মায়াকে চলে যেতে দেখে মিরর দিয়েই রিদ দাঁতে দাঁত পিষে মায়াকে ডেকে বলল…
‘ রিত ডোন্ট গো! স্টে হেয়ার।
মায়া দাঁড়াল না। রিদকে এক প্রকার অমান্য করেই জেদ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেল রুম হতে। মায়ার পিছন পিছন শশীও বেড়িয়ে গেল। রিদ মায়াকে বেড়িয়ে যেতে দেখেই রাগে দাঁতে দাঁত পিষল। মেজাজ হারিয়ে তৎক্ষনাৎ ড্রেসিংটেবিলের সবকিছু ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে। রাগে তির তির করে এগোল ওয়াশরুমের দিকে। শালা বা*লের বিয়ে করেছে সে। জীবনটায় ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। না বউ কথা শুনে আর না বা*লের মেজাজটা কখনো তাঁর পক্ষে হয়। চুন থেকে পান খসতেই বা*লের মেজাজ গরম হয়ে যায়। রিদ ওয়াশরুমে ঢুকে সজোরে দরজা লাগাতেই তার শব্দ বাহির পযন্ত মায়া শশী কানে যায়। মায়া শশী দুজনই বুঝতে পারে রিদ রেগে আছে। সেই একই রাগ-ক্ষোভে মায়াও আছে সেজন্য এই মূহুর্তে সে শশীর সাথে কথা বলতে চাই না বলেই জেদ্দি মায়া শশীকে এরিয়ে নিজের রুমে চলে যেতে চাইলে বাঁধা দেয় শশী। মায়াকে পিছন ডেকে থামিয়ে দিয়ে মুখোমুখি হয়ে বলল…
‘ ওহ তোমাকে কেন ডেকেছিল মায়া?
শশীর এই প্রশ্নটা করা এই মূহুর্তে কতোটা ভুল হয়েছে সেটা একমাত্র মায়াই জানে। ভিতরকার তোলপাড় চলছে মায়ার মনে। মায়ার সকল রাগ ক্ষোভ গিয়ে পড়লো রিদের উপর। মায়ার মনে হচ্ছে রিদ ডাবল টাইমিং করছেন ওর সাথে। সে বউও রাখতে চাচ্ছে আবার পরকীয়ার জন্য গার্লফ্রেন্ডও রাখতে চাইছে। নয়তো কেন রিদের বউ থাকা শর্তেও রিদের আশেপাশে শশীকে ভিড়তে দিবে? কেন রিদের সকল কাজ শশী করবে? যেখানে রিদ জানে শশীর মনোভাব রিদের প্রতি কি রাখে? শশীর মনের ফিলিংস সম্পর্কে জানার পরও শশীর সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে নেওয়াটা কি সে শশীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না নিজের প্রতি? অবশ্যই দিচ্ছে। আর এজন্যই তো পরিবারের সবাই বলে দুজনের মধ্যে প্রেমকাহিনী চলছে বিগত পাঁচ বছর ধরে। সবকিছু তো এমনই শুরু হয়নি। অবশ্য পরিবারের মানুষ রিদ-শশীর মধ্যে এমন কিছু পেয়েছে যার জন্য সবাই এসব সরাসরি বলতে সাহস পাই। যদি এসব মিথ্যা হতো তাহলে কখনো না কখনো রিদকে এসবের জন্য প্রতিবাদ করতে দেখা যেতো কই মায়াতো কখনো দেখেনি রিদকে এসবের প্রতিবাদ করতে। মায়ার রিদের জীবনে আসার আগে যা-কিছু হয়েছিল সেই সবকিছু না-হয় মায়া দেখার প্রয়োজন মনে করলো না কিন্তু মায়া রিদের জীবনে উপস্থিত থাকার পরও কেন প্রেমিকার এতো বাড়াবাড়ি তদারকি থাকবে রিদের জীবনে? এটা কি আদৌও মায়া মেনে নিবে? অবশ্যই না। পরিবারের সবাই এমনই এমনই শশীর সঙ্গে রিদের বিয়ের কথা বলছে না। এখানে অবশ্যই কারণ আছে বলেই বলছে। শশীর সঙ্গে রিদের বিয়ের কথা পরিবারের চলছে আর সেটা রিদ জানে না এমনটাতো নয়। বাতাসের গতিতে সকল খবর রিদের কানে পৌঁছায় তাহলে এই খবরটাও নিশ্চয়ই গিয়েছে। কই এজন্য তো রিদ কোনো স্টেপ নেই না। বরং চুপ থেকে বিষয়টা আরও বড়ো করছে। দিন দিন শশীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে রিদের জীবনে ইন্টারফেয়ার করার জন্য। মায়া জীবনে সবকিছু মেনে নিবে কিন্তু কখনো নারী সংক্রান্ত স্বামী পরকীয়া মেনে নিবে না। মায়া ভালোবাসার কাঙ্গাল হতে পারে তাই বলে চোখ বন্ধ করে কোনো নষ্টামি সহ্য করবে না সে। মায়া নাক মুখ শক্ত রেখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শশী পুনরায় একই প্রশ্ন মায়াকে শুধিয়ে বলল…
‘ কি হলে? কথা বলছো না কেন? কি জন্য ডেকেছিল ওহ তোমাকে?
শশীর রিদকে ওহ বলে সম্মোধন করাতে মায়ার ভিতরকার রাগ আরও বাড়ল। অবুঝের মতোন শশীর কথাটা ঘুরিয়ে বলল…
‘ ওহ, কে আপু?
শশী সহজ সরল উত্তর করলো তক্ষুনি…
‘ আমি রিদের কথা বলছি তোমাকে।
মায়া নাক মুখ শক্ত করে বলল…
‘ আপনার উনি জানে আমায় কেন ডেকেছিল আপু। এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে বলেছিল উনার সাথে দেখা করতে সেজন্য গিয়েছিলাম।
‘ ওহ আচ্ছা! আমি আরও ভাবলাম…
শশীর কথা মাঝে থামিয়ে মায়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল…
‘ আপনাদের কতো দিনের সম্পর্ক আপু?
মায়ার কথায় শশী মিষ্টি হেঁসে লাজুক ভঙ্গিতে বলল…
‘ দিন না অনেক বছরের সম্পর্ক আমাদের। সামনে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমরা। সেজন্য তো রিদের দেওয়া এই লাল শাড়িটা পড়েছি আজ। রিদের বাঙালি শাড়ি খুব পছন্দ। এই শাড়িটা ওহ-ই আমাকে দিয়েছে। তুমি হয়তো জা….
শশীর কথা গুলো আর শুনা হলো না মায়ার তার আগেই মায়া জায়গা ত্যাগ করলো ক্ষোভে। বিষাক্ত কাঁটার নেয় বিঁধছে মায়ার মনে শশীর কথা গুলো। শরীর মন দুটোই পুড়ছে তপ্ত দহনে। মায়ার মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে, ভিষণ বড়ো ভুল করেছে রিদ খানকে নিজের স্বামী হিসাবে কবুল করে। মায়াতো জানতো নেতা-ফেতারা ভালো হয়না। এখানে মায়া জেনে-বুঝে আগুনে ঝাপ দিয়েছে। মায়ার উচিত হয়নি রিদের সঙ্গে নিজেকে জড়ানো। মায়া ভুল করেছে। ভিষণ বড়ো ভুল করেছে সে। নয়তো আজ পর্যন্ত মায়াকে তো ওর স্বামী পছন্দ করে একটা শাড়ি গিফট করলো না। বললো না তুমি আমার জন্য আজ এই শাড়ীটা পড়বে। অথচ প্রেমিকাকে নিজের পরিবারের সামনে সুন্দর দেখানোর জন্য নিজের পছন্দের শাড়ি কিনে দিল। সেই লাল শাড়ি পড়া প্রেমিকার হাতের লেবু পানি পান করছে আবার। এসব কিছু তো মায়ার চোখের সামনেই হচ্ছে তাহলে মায়া কেন অন্ধের মতো চোখ বন্ধ করে রাখবে? অসহ্যের নেয় মায়া রুমে প্রবেশ করতেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। শশী বোকার মতোন মায়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেল নিচে। সবকিছু ঠিক হয়েও যেন সবকিছু আবারও এলোমেলো হলো দুজনের মধ্যকার সম্পর্কে। সেই রেশারেশি থেকে সারাটা দিন গেল মায়া রিদের সামনে যায়নি। কথা বলেনি। এমনকি খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করেনি। সারাক্ষণ বড়োবোন মুক্তা আর জুঁইয়ের পাশেপাশেই বসে রইল কক্ষে। কিন্তু ছেলেরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেহমানদারিতে। মেজবানের খাওয়া দাওয়া চলল সন্ধ্যা নাগাত। এরমাঝে আরিফ আসেনি খান বাড়িতে। যদিও মুক্তাকে কথা দিয়েছিল সে খান বাড়িতে আসবে দুপুরে দাওয়াতে কিন্তু আরিফকে আসতে না দেখে বুঝতে পারলো সে কাল মুক্তাকে মিথ্যা বলেছিল। খান বাড়ির ছোট বড়ো, ছেলে-পেলে কর্মচারী পযন্ত সবার খাওয়া শেষ হলেও মায়া তার কিছুই মুখে দিল না। অথচ মায়ার জন্য রাদিফ নিজে দুবার খাবার নিয়ে এসেছিল ব্যস্ততার মাঝেও। বলা যায় খাবার গুলো রিদ পাঠিয়েছিল মায়ার জন্য। কিন্তু মায়া শরীর খারাপের বাহানায় প্রতিবার রিদের দেওয়া খাবার গুলো ফিরিয়ে দিলে তার খবর রিদের কান অবধি পৌঁছায়।ব্যস্ততা মাঝে রিদ সবার সামনে উঠে আসতে পারছে না বলে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে সারাটা দিন পাড় করলেও রাত আটটার দিকে সকল ব্যস্ততা ঠেলে রিদ রাদিফকে দিয়ে মায়াকে খবর পাঠাল রিদের রুমে আসতে। পরপর দুবার মায়াকে সংবাদ পাঠালেও মায়া রিদের সঙ্গে দেখা করতে গেল না কক্ষে। রিদের ক্ষোভ তখন প্রকাশে, চোখ মুখ শক্ত করে দু’হাতে মুঠোয় চাপল রাগ। রাদিফ তখন মায়ার পক্ষ নিয়ে অনুনয় করে রিদকে বলল…
‘ ভাই ভাবি আসলেই অনেক অসুস্থ্য। আমি দেখেছি ভাবিকে রুমে শুয়ে থাকতে।
রিদ রাগের তোপে রাদিফকে কিছু না বলে কক্ষ হতে বের হয়ে যায় তক্ষুনি। কোথায় গেছে কারও জানা নেই। আসিফকেও সঙ্গে নেই নি। শুনা গেল সারাদিন নাকি রিদও না খাওয়া ছিল। কিছু খাইনি। সেটা নিয়ে কতো চিন্তিত শশী। মায়া রিদের চলে যাওয়ার কথাটা শুনলেও চুপ থাকল। কিন্তু যখন শুনলো রিদও কিছু খাইনি তখন ভিতর ভিতর খারাপ লাগতে শুরু করলো অপরাধ বোধে। রিদ না খেয়ে থাকলে সুগার ফল হয় তার। মায়া হয়তো উচিত হয়নি রিদের সঙ্গে রেগে খাবার গুলো ঐভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তার পরমূহুর্তে শশীকে রিদের জন্য বিচলিত হতে দেখে মায়ার ভিতরে রিদকে নিয়ে হওয়া অনুসূচনা গুলো মূহুর্তে পরিবর্তীত হয়ে রাগ জমালো। রিদের চিন্তা করতে তাঁর সুন্দরী প্রেমিকা তো আছেই তাহলে মায়া কেন অযথা চিন্তা করতে যাবে তাঁর? মায়া শশীর সামনে বসে না থেকে আস্তে করে উঠে গেল। এসব নাটক দেখতে মায়ার ভালো লাগছে না। নিচ থেকে উপরে উঠতে উঠতে মায়া আশেপাশে তাকাল, আপাতত কেউ নেই চারপাশে। কারণ খান বাড়ির সকল কাজিনরা মিলে বাড়ির ছাঁদে আড্ডা দিচ্ছে সন্ধ্যা থেকেই। যদিও মায়াকে বেশ কয়েকবার রাদিফ ও সেঁজুতি মিলে বলেছিল ওদের সাথে সেখানে আড্ডা দিতে কিন্তু মায়া যায়নি। জেদ ধরে নিচে মুক্তার পাশে বসেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মায়া আরও কিছুক্ষণ নিচে বসে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না হয়তো রাগের তোপে কান্না করে বসবে সবার সামনে। তখন বিষয়টা খুবই বাজে দেখাবে। বলতে গেলে মায়া নিজের ইমোশন লুকাতে নিচ থেকে ছাঁদে চলে এসেছে। তাছাড়া জুঁইও বেশ ঘন্টা খানিক হলো ছাঁদে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। মায়া ছাঁদে পা রাখতেই সে ভিষণ চমকালো। চারপাশে মরিচবাতি আর বেশ জমকালো সাজ দেখে মুগ্ধ হলো। এই মূহুর্তে খান বাড়িতে থাকা আত্মীয় স্বজনদের বাচ্চা কাচ্চা থেকে শুরু করে ছোট বড়ো সবাই ছাঁদের জায়গা জায়গায় দাঁড়িয়ে, বসে আড্ডা দিচ্ছে। এমনকি এখানে খান বাড়ির ছেলেরাও উপস্থিত। মায়া গিয়ে জুঁইয়ের পাশে আসন নিয়ে বসলো বিছানো পাঠিতে। সবার একত্রে অনেকটা সময় পার হলো আড্ডায়। রাত তখন এগারোটা দিকে। আকাশের বিদুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। ছোট বাচ্চা কাচ্চারা অনেক আগেই দৌড়ে নিচে নেমে গেছে বাকি সেঁজুতিরা বসে আছে এককোণে। ছাঁদের অন্য পাশে ছেলেরাও হৈচৈ করছে। তখনই কোথা থেকে রাদিফ দৌড়ে আসলো ছাঁদে। মায়াদের ঠেঙ্গিয়ে এগিয়ে গেল ছাঁদে অন্যপাশে ছেলেদের উদ্দেশ্যে। সবাইকে নিচে নেমে যেতে বললে একে একে সকল ছেলেরা নিচে নেমে গেল মূহুর্তে। বাকি রইল সেঁজুতির দলের মেয়েরা। যেখানে মায়া, জুইকে নিয়ে আরও বেশ কিছু মেয়েরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল একত্রে। রাদিফ এগিয়ে এসে সেঁজুতিকে বলল…
‘ সেজু তোদের জন্য আমি আইসক্রিম, চিপস এনেছিলাম। যা-তো সেই গুলো নিয়ে আয় ছাঁদে সবাই একত্রে বসে খাবো।
‘ আচ্ছা ভাই।
রাদিফের কথায় সেঁজুতি মূহুর্তে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল নিচে যেতে। তখনই রাদিফ সেঁজুতিকে আবারও থামিয়ে দিয়ে বলল…
‘ আরে তুই একা এতো গুলো আনতে পারবি না সেজু। তুই বরং তোর সাথের সবগুলো সহপাঠীদের নিয়ে যা তাহলে আনতে সুবিধা হবে।
রাদিফের কথায় সেঁজুতি সাথে থাকা বাকি মেয়ে গুলো একত্রে উঠে দাঁড়াল সাহায্য করবে বলে। সবাই ছাঁদের দরজার দিকে যেতেই জুঁইও সবার পিছন পিছন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…
‘ তাহলে আমিও যায় সেঁজুতি আপুদের সাথে।
‘ অবশ্যই বিয়াইন! আপনি গেলে আমিও আপনার সাথে যাব। আমার আবার আপনাকে ছাড়া একা ভালো লাগে না। চলেন নিচে যায়।
রাদিফের মজার ছলে কথা গুলো বলেই উঠে দাঁড়াল। জুঁই ইতস্তত বোধ করে রাদিফকে কিছু না বলে সেঁজুতিদের পিছন পিছন হাঁটল। পুরো ছাঁদ খালি করে সবাইকে চলে যেতে দেখে মায়া খানিকটা ভয়ভীত হলো। মায়াকে রাদিফের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে রাদিফ মায়াকে থামিয়ে বলল….
‘ ভাবি আপনাকে উঠতে হবে না। আপনি এখানেই বসুন। আমাদের জন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন আমরা দশ মিনিটের মধ্যে আসছি কেমন?
মায়া ভয়ভীত মুখে জায়গায় বসে রইল। দেখতে দেখতে সবাই চলে গেল পুরো ছাঁদ খালি করে। মায়া অন্ধকারে মধ্যে আশেপাশে তাকিয়ে ভয় পেল। বৃষ্টি হওয়ার পূর্বে বাতাসের তোপ বাড়তে দেখে মায়া উঠে দাঁড়াল। বসে থাকা পাঠিটা উঠিয়ে একপাশে রাখল। বৃষ্টি হতে পারে যেকোনো সময়। মায়া চলে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। যদিও সবাই বাদে আসে তাহলে বেশিক্ষণ বসতে পারবে না যেকোনো সময় বৃষ্টি হবে বলে। মায়া চারপাশের ঠান্ডা বাতাস অনুভব করে শাড়ির আঁচলটা টেনে গায়ে জড়াল। সবাই বলেছিল মায়াকে শাড়িটা চেঞ্জ করতে কিন্তু কেন জানি মায়া করতে পারলো না। হয়তো এখন নিচে নেমে চেঞ্জ করে নিবে। দীর্ঘশ্বাসে মায়া গিয়ে দাঁড়াল রেলিং ধরে। শরীর ঝুকে নিচে তাকাতেই দেখল খান বাড়ি পাহারাদার বেশ কিছু বডিগার্ড আর কর্মচারীদের যাতায়াত ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পড়লো না। হয়তো বৃষ্টি হবে বলে সবাই বাড়ির ভিতরে অবস্থান করছে। মায়া মনে মনে রিদের খোঁজ করলো। আচ্ছা লোকটা কি বাসায় ফিরেছে? নাকি এই বৃষ্টি মধ্যে বাহিরেই ঘুরছে কোথাও? মায়ার ছাঁদের রেলিং ধরে ঝুঁকে থাকার মধ্যেই হঠাৎ ঠাস করে ছাদের দরজার শব্দ হতেই মায়া ভয়ে ধরফরিয়ে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখল রিদ শক্ত হাতে ছাঁদের দরজার খিল লাগাচ্ছে। হঠাৎ করে রিদকে এই অসময়ে ছাঁদে দেখে মায়ার মনে ভয় হলো। সারাদিন রিদকে অনেক অমান্য করেছে মায়া, এখন নিশ্চয়ই মায়াকে একা পেয়ে এর শুধ তুলবে লোকটা? আশেপাশে কেউ নেই যে মায়াকে বাঁচাবে রিদের হাত থেকে। আচ্ছা রাদিফ ভাই প্লানিং করে সবাইকে নিচে পাঠালো নাতো মায়াকে একা ছাঁদে রেখে যাতে উনার ভাই এসে মায়াকে একা পাই? অবশ্যই এটা হতে পারে। মায়া হঠাৎ মনে মনে রাদিফের প্রতি রাগ হলো। সেই রাগ দেখিয়ে রিদকে এরিয়ে চলে যেতে চেয়ে সাহস দেখাল। রিদের উপস্থিত অবজ্ঞা করে মায়া রিদকে পাশকাটিয়ে দরজা কাছে যেতে চাইলে মূহুর্তে রিদ চেতে উঠে শক্ত হাতে থাবা পরে মায়ার মুখে। মায়া ছটফটিয়ে উঠে তৎক্ষনাৎ দু’হাতে রিদের হাত থেকে মুখ ছাড়াতে চেষ্টা করলে রিদ আরও ক্ষেপে যায়। রাগে রি রি করে বলে…
‘ ইগনোর করছিস কেন? কি সমস্যা? চোখে পরে না আমায়? ডাকলে আসিস না কেন? শরীরে তেজ বাড়ছে হ্যাঁ?
রিদের শক্ত হাতের থাবাই মায়ার দাঁতের মাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। ঠোঁট উঁচিয়ে উপরে উঠে আসলো গোল হয়ে। কোনো রকমের মায়া বলল…
‘ আমি কেন আসবো? আপনার শশী আছে না? তাঁকে গিয়ে ডাকেন আমার কাছে কি? ছাড়ুন আমাকে ব্যথা পাচ্ছি।
মায়ার কথায় রিদের হাতটা আরও শক্ত হয়ে আসল মায়ার গালে। রিদ মায়ার মুখের উপর ঝুঁকে বলল…
‘ একদম তেজ দেখাবি না আমাকে। তাহলে হাড় ভেঙ্গে হাতে ধরাই দিবো। তুই আমার বউ হোস নাকি শশী? আমি শশীকে কেন ডাকবো বল?
মায়া সেই ভাবেই রিদের হাতটা ছাড়াতে চেয়ে বলল….
‘ তাহলে শশী আপু কেন আপনার উপর এতো অধিকার দেখায়? কিসের সম্পর্ক আপনার আর শশী আপুর মধ্যে? পরিবারের সবাই বলে আপনাদের বিয়ে ঠিক, পাঁচ বছরের সম্পর্ক আপনাদের মাঝে, সামনে নাকি বিয়ে হবে। শশী আপু আপনার জন্য লেবু পানি কেন সবসময় এনে দেয়? আর সেটা আপনি কেন সাদরে গ্রহণ করে পান করেন। শশী আপু না-হয় জানে না আপনি বিবাহিত পুরুষ সেটা, কিন্তু আপনি তো জানেন আপনি বিবাহিত আপনার বউ আছে, তাহলে আপনি কেন শশী আপুকে এলাউ করছেন আপনার উপর অধিকার খাটানোর জন্য? আর আমি বউ হয়ে কেন সেটা মনে নিব বলেন? আমি মানব না কোনো কিছু। আপনি প্রেমিকার রাখতে পারবেন আর আমি একটু কথার অমান্য করলেই সমস্যা হয়ে যায় আপনার? আমি মানব না কোনো কিছু। হয় শশী আপু আপনার লাইফে থাকবে নয়তো আমি। তারপরও এসব কিছু আমি মিনে নিব না।
সারাদিনের মায়ার রেগে থাকা কারণটা রিদ আগেই বুঝতে পেরেছিল কিন্তু মায়া রিদকে সুযোগই দিচ্ছিল না কিছু বলার। আর ব্যস্ততার জন্য রিদেরও সময় হয়ে উঠেনি। এখন রাদিফকে দিয়ে সবাইকে নিচে পাঠিয়ে বউকে একা পেতে হলো। রিদের হাতটা মায়ার গালে নরম হয়ে আসতেই মায়া নিজেকে রিদ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদ বলে….
‘ শশী মেন্টাল পেশেন্ট বউ। ওর সাথে রাফ বিহেভ করা নিষেধ।
রিদের কথা মায়া মুহূর্তে চুপ করে যায়। শশীকে দেখলে কেউ বলবে না সে মেন্টাল পেশেন্ট। কিন্তু শশী মেন্টাল পেশেন্ট হলেও রিদতো আর মেন্টাল নয়। সে যদি এখন শশীকে শশীর কাজে বাঁধা না দেয় তাহলে ভবিষ্যতে যদি শশী নিজের অসুস্থ্যতার দোহাই দিয়ে রিদকে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি রিদ বিয়ে করে নিবে? অসুস্থ্যতা দোহাই দিয়ে তো মানুষ অনেক কিছু করায় তাহলে রিদ কেন এই বিষয়টাতে শশীকে বাঁধা না দিয়ে বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে। মায়া রিদের কথায় রেগে গিয়ে রিদকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে চলে যেতে চেয়ে বলল….
‘ তাহলে যান আপনার পাগল প্রেমিকার কাছে সে ভালো আদর যত্ন করতে পারবে আপনার, আমার কাছে কি? যানতো আপনি!
রিদ রেগে চিবিয়ে বলল….
‘ রিত এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে?
‘ হলে হোক! তারপরও আমি মানবো না কোনো কিছু। শশী আপু কেন বারবার বলে সে আপনার প্রেমিকা হয় সেটা আগে আমাকে বুঝান।
রিদ পুনরায় মায়ার বাহু চেপে মায়াকে কাছে টেনে বলল…
‘ আরে বাবা কি জ্বালা! বলছি না শশী আমার কিছু হয়না। তুমি আমার বউ শশী নয়।
মায়া রিদের সঙ্গে মোচড়ামুচড়ি করে জেদ্দি গলায় বলল….
‘ একশো বার বউ বললেও আমি আজ মানবো না। যান!
রিদ রাগে আগের নেয় মায়ার গাল চেপে নিজের মুখোমুখি করে বলল…
‘ যা তোর মানতে হবে না। তুই ত্যাড়ামিই কর। আমার যা করার আমি তাই করবো। আয়!
#চলিত…..