#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪৭
মায়া জোড়াজুড়ি করে জেদ্দি গলায় বলল….
‘ একশো বার বউ বললেও আমি আজ মানবো না। যান!
রিদ রাগে মেজাজ হারিয়ে আগের নেয় মায়ার গাল চেপে নিজের মুখোমুখি করে বলল…
‘ যা তোর মানতে হবে না। তুই ত্যাড়ামিই কর। আমার যা করার আমি তাই করবো। আয়!
রিদ মায়ার বাহু টেনে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাইলে জেদ্দি মায়া নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে মোচড়ামুচড়ি করে বলল…
‘ যাব না আমি। ছাড়েন! আপনি শশী আপুকে
শাড়ি কিনে দিয়েছেন না? যান আপনার সুন্দরী প্রেমিকার কাছে। সে আপনাকে মজার মজার শরবত বানিয়ে খাওয়াবে। আমার কাছে কি? ছাড়েন আমাকে।
বলতে বলতে মায়া রিদের হাতে কামড়ে ধরে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। মায়ার দোপাটি দাঁতের মাড়িতে পিষে রিদের হাতের চামড়া বটে যেতেই রিদ ঝটকা মে*রে নিজের হাত ছাড়াল মায়ার থেকে…
‘ উফফ! বা*ল কামড়াচ্ছিস কেন? কিসের শাড়ি কিনে দিয়েছি কাকে?
‘ আপনি শশী আপুকে লাল শাড়ি কিনে দেননি? সাধু সাজেন?
‘ বা*ল আমি কাউকে কিছু দেয়…. উফফফ! রিত!
রিদ দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচাল। ততক্ষণে মায়া রিদকে বলার সুযোগ না দিয়ে পুনরায় রিদের হাত টেনে একই জায়গায় কামড় বসাল। পরপরই একই জায়গায় আঘাত পাওয়াতে রিদ অসহ্যের নেয় মায়ার মাথা চেপে নিজের হাত ছাড়াতে চাইলে মায়া আবারও রিদের হাত টেনে একই জায়গায় কা*মড় বসাল। এতে রিদ অসহ্যের নেয় চেঁচাল মায়াকে…
‘ উফফ! রিতততত!
মায়া পরপর কামড়ে রিদ সত্যি সত্যি ব্যথা পেল। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো ব্যথার দারুণ। মস্তিষ্ক দপদপ করছে রাগে। কখন না জানি রাগের তোপে মায়াকে আঘাত করে বসে সে। কিন্তু জেদ্দি মায়া তখনো রিদের হাত কামড়িয়ে দাঁড়িয়ে। রিদ দাঁতে দাঁত চেপে প্রথমে মায়ার মাথা ধরে আবারও নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তাতেও ব্যর্থ হয়। এতে মায়া দাঁত আরও জোড়ালো ভাবে চেপে গেল রিদের হাতে। দাঁতে দাঁতে চেপে অসহ্য ব্যথা সহ্য করতে চাইল রিদ। মায়ার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে রিদও একই কাজ করলো মায়ার সাথে। সুযোগ পেয়ে সেও মায়ার খালি কাঁধে ঝুঁকে পরলো মূহুর্তে। শক্তপোক্ত পুরুষালি দাঁত নরম চামড়াই বসে যেতেই চমকে উঠার মতোন তৎক্ষনাৎ মায়া রিদের হাত ছেড়ে পিছিয়ে গেল ব্যথিত জায়গায় হাত ঘষতে ঘষতে। মূলত মায়া রিদের হাত ছেড়ে দিতেই রিদও মায়াকে ছেড়ে দেয় সেখানেই। ততক্ষণে রিদ সবেমাত্র সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাইল কিন্তু তার আগেই মায়া হামলে পরলো আবারও রিদের উপর। দু’হাতে রিদের বুকে নক দাবিয়ে আঁচড় কাটাতে চাইলে রিদ শক্ত হাতে দু-হাত বাঁধল মায়ার পিছনে। অপর হাতে মায়ার গাল চেপে নিজের সাথে আটকিয়ে রাগে তিরতির মেজাজে বলল…
‘ কি সমস্যা তোর? কা*মড়া-কা*মড়ি করছিস কেন? ব্যথা পাচ্ছি না? বেয়া*দ্দব হয়েছিস?
মায়া জোড়াজুড়ি করে জেদ্দি গলায় বলল…
‘ হ্যাঁ হয়েছি বেয়া*দ্দব। দরকার হলে আরও হবো। কি করবেন আপনি? আপনার তো আমার সাথে কিছু করা লাগে না। সব করতে পারেন শশী আপু সাথে। এজন্য আমাকে দূরে দূরে রাখেন। রাগারাগি করেন। ফোন দেননা, খোঁজ নেন না। একটু ভালোবাসেন না। নিজের সাথে রাখতে চান না। অথচ শশী আপুকে লাল শাড়ি কিনে দেন। উনার হাতে শরবত খান। সেজন্য আপনার বউয়ের দরকার পড়ে না। সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড আশেপাশে থাকলে বউয়ের দরকার কেন পড়বে আপনার? যান আপনি আপনার সুন্দরী প্রেমিকার কাছে। আপনাদের তো সামনে বিয়ে তাই না? আমি আর আসব না আপনার কাছে। আসলে আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে খুঁজে বের করাটা। বউ ছাড়া আপনি ভালোই থাকেন। আমি শুধু শুধু আপনার পিছনে পড়ে থাকি বেহায়ার মতোন স্বামী স্বামী করে। আজকের পর আর থাকবো না আপনার পিছনে। যান আপনি!
দীর্ঘ অভিমানের কথা গুলো বলতে বলতে মায়া অতি কষ্টে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো তক্ষুনি। কান্নার দারুণ লাস্টের কথা গুলো আটকে আসছিল নাকে। মায়ার কান্নার দারুণ রিদের মেজাজ আরও খারাপ হলো শশীকে নিয়ে রিদকে জড়াতে। মূলত রিদের ধারণাতে ছিল না তার বউ শশীকে নিয়ে এতোটা ইনসিকিউর
ফিল করবে বা এতোটা হাইপার হয়ে যাবে। শশীর সাথে রিদের কখনোই কিছু না। আর না হবে। দুই পরিবার চাইতো রিদের সাথে শশীর বিয়ে হোক। এতে রিদের তখন কোনো অমত ছিল না তবে রিদের সাথে শশীর কোনো প্রেম জনিত সম্পর্কও ছিল না। দুই পরিবার চাইতো বলে রিদ হ্যাঁ বা না কিছু বলেনি, শুধু চুপ থাকতো এই ব্যাপারে সেজন্য দুই পরিবার একটা সময় রিদের চুপ থাকাটাকে সম্মতি ধরে নেয়। ব্যাস এতটুকুই। তখন শশীকে না করার মতোন রিদের লাইফে কেউ ছিল না আবার অসম্মতি দেওয়ার মতোন এতোটাও পছন্দের কেউ ছিল না শশীর। সেজন্য রিদ এই ব্যাপারে চুপ থাকতো। তাছাড়া রিদের বয়সই বা কতো ছিল তখন? চব্বিশ? বর্তমানে ত্রিশ। শশীর কতো ছিল? উনিশ কি বিশ হবে হয়তো? শশীর বয়স অল্প হওয়াতে দুই পরিবার বিয়েতে সময় নিয়েছিল আর তাতে রিদ নারাজ হয়ে বিয়েটাতে না করেছে এমনটা সবার মনে করলো। অথচ রিদ জানতো শশী ওর ক্লাসমেটের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল নতুন নতুন। যেখানে রিদের ব্যবহৃত টিস্যুতে কারও সামান্য টাচ পছন্দ না সেখানে শশীর লাইফে অন্য ছেলের উপস্থিতি ছিল রিদের এই বিয়েতে নিষেধ করার প্রথম কারণ। যেহেতু শশী রিদের বিশেষ পছন্দ কেউ ছিল না সেজন্য রিদ কখনো চেষ্টা বা আগ্রহ দেখায়নি শশীকে অন্য ছেলের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের কাছে আনার। বরং রিদ সেচ্ছায় পিছিয়ে যায় এই সম্পর্ক থেকে এবং সরাসরি পরিবারকে জানায় সে শশীকে বিয়ে করবে না। কিন্তু সেটা অনেক আগের ঘটনা। বলতে গেলে আজ থেকে পাঁচ বছর পূর্বের ঘটনা। হ্যাঁ রিদ শশীকে প্রায় বলতে শুনেছে রিদের সাথে নাকি ওর প্রেম জনিত সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেটা নিয়ে রিদ এতোদিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন মনে করেনি কারণ সেটা তার জীবনে বিশেষ কোনো ইফেক্ট করছে না তাই। কিন্তু আজ হুট করে তার বিবাহিত জীবনের ইফেক্ট পড়াই সেটা সে মোটেও ভালো ভাবে নিচ্ছে না। এমন না যে শশীর সাথে রিদের রোজ দেখা সাক্ষাৎ হয়। কয়েক মাস পরপর বা খান বাড়ির বিশেষ কোনো পারিবারিক ফাংশন গুলোতেই সবার মতো শশীর সাথেও রিদের দেখা হয়। এছাড়া তাদের দেখা হয়না তেমন। কারণ রিদের নিজের বাড়িতে শশীর আসা যাওয়া পূর্ব থেকেই নিষেধ। আর সেটা খান বাড়ির সবাই জানে। এখন এর মধ্যে যদি শশী রিদকে দুই একবার লেবু পানি খাওয়াই তাহলে সেটার জন্য যে কাউকে বিয়ে করতে হয় তা জানা ছিল না রিদের। শশীর হাতের কতোটা লেবু পানি খেয়েছে রিদের তা জানা নেই কিন্তু তারজন্য দরকার হলে রিদ শশীর মুখের লেবু পানির ফ্যাক্টরি খোলে দিবে শোধবোধ করার জন্য তারপরও বউ ছাড়া অন্য নারীর দিকে তাকানো ইম্পসিবল, বিয়ে তো দূর প্রশ্ন। শশী পাগল না ছাগল হয়ে গেলেও রিদ সেটা দেখতে যাবে না। কিন্তু বোকা বউটাকে কে বুঝাবে এটা? রিদ মোটেও তার বউয়ের উপরে কাউকে রাখে না। আর না রাখবে। প্রথম ভালো লাগা, ভালোবাসার জায়গাটায় বলতে গেলে তার বউ। সেখানে বউয়ের বাহিরের শশী কেন আসবে? তার কি কারেক্টারে সমস্যা আছে নাকি? সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি কখনো রিদের পছন্দ না।
সেখানে তার বউ এতোকিছু মনে চেপে এতোদিন রিদকে সন্দেহ করছিল? রিদের বউয়ের অধিকার নিয়ে আরও আগে কেন আসল না এই বিষয়ে রিদের সাথে ডিসকাশন করতে? অতি মেজাজেও রিদ নিজেকে শান্ত করতে ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ফেলল। মায়া তখনো মাথা ঝুঁকে ফুপিয়ে কাঁদছে রিদের বাহুতে আটকে। রিদ নরম হাতে মায়ার থুঁতনি ধরে মুখটা উপরে তুলে বলে…
‘ শশীর সাথে আমার কিছু নেই জান।
মায়া ফুপিয়ে কেঁদে বলে…
‘ মিথ্যা বলছেন আপনি।
রিদ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল…
‘ আমি মিথ্যা বলি না জান।
‘ না আপনি বলছেন।
রিদের মেজাজ খারাপ হয় মায়ার কথায়। রিদ কখনো কোনো পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলা পছন্দ করে না। সেখানে মায়া বারবার রিদকে মিথ্যাবাদী বলাতে রিদ নিজের মেজাজ হারাচ্ছে রাগে। কিন্তু বউয়ের কান্নায় তার রাগ নয় মায়া হচ্ছে। একটা মাত্র বউ তাঁর। আজ কতোদিন পর দুজন একত্র হলো। সেজন্য রিদ বউকে আঘাত করতে চাইল না। বরং যত্ন করে মায়ার গালে আসা চোখের পানিটুকু দু’হাতে মুছে দিতে দিতে হেয়ালি করে বলল…
‘ কাঁদছো কেন? জামাই মারা গেছে তোমার?
‘ আমার জামাই নেই।
‘ তাহলে আমি কে?
‘ কেউ না।
কথাটা বলেই মায়া গাল থেকে রিদের হাত ছাড়িয়ে পিঠ বেঁকে দাঁড়ায় কাঁদতে কাঁদতে। রিদ পড়েছে মহাফেসাদে। জীবনে সে কাউকে তেল মেরে রাগ ভাঙ্গিয়েছে বলে মনে হয়না। মূলত কাউকে তেল মেরে রাগ ভাঙ্গানোটা তার শক্তপোক্ত পার্সোনালিটির সঙ্গে যায় না। সেখানে এই প্রথম সে কোনো দোষ না করেও অকারণে বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে হচ্ছে। রিদের মনে হচ্ছে সে আঁটকে গেছে কোথাও? বউ নামক মায়া জালে সে ভিষণ ভাবে ফেঁসে গেছে যেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা জানা নেই। কিন্তু বউয়ের রাগ ভাঙ্গাবে কিভাবে তাও বুঝতে পারছে না। তারপরও মায়ার বাহু টেনে নিজের দিকে ফেরাতে ফেরাতে রিদ বলল….
‘ আচ্ছা আসো! একটু আদর করে দেয়। তাহলে রাগ কমবে?
‘ আদর করলেও আজ আমি মানব না।
রিদ মায়াকে টেনে মুখোমুখি করে বলল…
‘ তাহলে কি করবো?
‘ কিছু করতে হবে না।
‘ আচ্ছা একটা কিস করি তাহলে?
‘ কিস করলেও মানব না।
‘ তাহলে কিভাবে মানবে তুমি? বড় আদর করবো?
রিদের কথার যথাযথ অর্থ মায়া বুঝল না। তাই খানিকটা কনফিউজড হয়ে প্রশ্ন করলো…
‘ বড় আদর কি?
মায়ার প্রশ্নে মূহুর্তে দুষ্টুমি খেলে গেল রিদের ফেইসে। মায়ার উপর ঝুঁকে পরে নাকে নাক ঘষে বলল…
‘ রুমে চলো বলবো।
রিদের অল্প কথায় মায়ার কান্না কমে আসল। শিহরিত হলো শরীর। গাল ফুলিয়ে রিদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলল…
‘ কোথায় যাব না আমি। আপনি যান।
‘ তুমি ছাড়া আমি একা গিয়ে কি করবো? একা কিছু হয় না জান। আসো না।
‘ পারব না।
মায়ার নরম গলায় রিদ নিঃশব্দে হাসলো। বুঝতে পারলো বউ তার নরম হয়ে এসেছে। হয়তো রাগ কমে যাওয়ার পূর্বাভাস। সুযোগ পেয়ে রিদ মায়ার গাল ছেড়ে কোমর টানতেই মায়া খৈ হারিয়ে মূহুর্তে চেঁচিয়ে উঠলো দু’হাতে রিদের গলা জড়িয়ে। মায়ার দু’পা মূহুর্তে উঁচুতে উঠে গেল। রিদ মায়ার গালে নাক চেপে দিতেই মায়া শরীর ছেড়ে দিল রিদের হাতে। রিদ দু’হাতে মায়ার শরীরে ভার বজায় রেখে আরও ঘনিষ্ঠ হলো। মায়ার গাল থেকে ঠোঁট বুলিয়ে গলায় নেমে আসতেই রিদের রোমান্টিকতায় বাঁধা হয় শশী। শক্তি প্রয়োগ করে ছাঁদের দরজাতে শব্দ করতেই দুজনের মনোযোগ ভাঙ্গে। মায়া চমকে উঠার মতোন ছটফট করে রিদের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইল ভয়ে। না জানি কখন ছাঁদে দরজা দিয়ে বাড়ির মানুষ চলে আসে। এই অবস্থায় রিদ মায়াকে একত্রে দেখলে নিশ্চয়ই তান্ডব হয়ে যাব বাড়িতে। অথচ রিদ ছাঁদের দরজাটা বাহির থেকে আঁটকে এসেছিল, যেটা মায়া জানে তারপরও পরিবারের ভয়ে ছটফট করলো।
মায়া ছটফট আর দরজার শব্দে রিদ মায়ার গলা থেকে মুখ তুলে লালাভ চোখে মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া চুপসে যায়। ভয়ার্ত গলায় মিনমিন করে বলল…
‘ কে জানি এসেছে, দরজায় ধাক্কাছে। ছাড়ুন আমাকে। কেউ আমাদের এইভাবে দেখলে বাসায় হাঙ্গামা হয়ে যাবে।
এইতো একটু আগেই তো মায়ার রিদকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করছিল। এই নিয়ে রিদের সাথে রাগারাগিও করলো। তাহলে এখন পরিবারের মানুষদের ভয় পাচ্ছে কেন? রিদ-তো ভেবেছিল হয়তো মায়া প্রস্তুত পরিবারের সবাইকে নিজেদের সম্পর্কের কথাটা জানানোর জন্য। তাহলে এখন রিদের সাথে তার বউকে কে বা কারা দেখল তাতে তার কি আসে যায়? যেখানে রিদ নিজের দাঁড়িয়ে আছে সেখানে তাঁর বউ অন্য কাউকে কেন ভয় পাচ্ছে? যেটা মোটেও তার পছন্দ না। রিদ কি যথেষ্ট নয় তার বউয়ের জন্য? মায়ার অহেতুক ভয় পাওয়া দেখে রিদের আরও মেজাজ খারাপ হলো। সুন্দর মোমেন্টে ব্যাঘাত ঘটতেই রিদ পুনরায় মায়ার গলায় মুখ ডুবাতে ডুবাতে বলল…
‘ রিত ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। ভালো লাগছে না আমার।
কথাটা বলতে বলতে রিদ মায়াতে মন্ত হতে চাইল। কিন্তু শশীর পরপর দরজাতে জোড়ালো আঘাত করে রিদের নাম ধরে ডাকাতে হঠাৎই চেতে উঠে মায়া। এতক্ষণ শব্দে কারণে ঠিকঠাক বুঝেনি দরজা ওপাশে কে ছিল। কিন্তু হঠাৎ শশীর গলা শুনতে পেয়ে মায়ার নিভে যাওয়া রাগটা ধপ করে জ্বলে উঠলো রিদের উপর। হাত-পা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছটফট করে উঠলো রিদের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে…
‘ ছাড়ুন আমাকে! যান আপনার সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড এসেছে আপনাকে নিতে। থাকবো না আমি আপনার সাথে! ছাড়ুন।
রিদের বাহুতে পিষে যাওয়ার মতোন চেপে গেল মায়া। শরীরের হাড় ভেঙ্গে আসার জোগাড় হলে মায়ার নিশ্বাস আঁটকে আসল। কোনো রকমে বললো…
‘ আমার কষ্ট হচ্ছে, ব্যথা পাচ্ছি, প্লিজ ছাড়ুন।
মায়ার কথায় তক্ষুনি শুনা গেল রিদের ক্ষিপ্ত মেজাজে কথাটি…
‘ নাটক পেয়েছিস? আদর করছি ভালো লাগছে না? বারবার কাহিনি করিস? বলেছিনা আমার তুই ছাড়া কেউ নেই? কথা কানে যাচ্ছে না কেন? বেয়া*দ্দব হয়েছিস?
রিদের কথায় মায়া আবারও কেঁদে উঠলো কষ্টে। রিদ মায়ার ফ্যাচফ্যাচ কান্নায় দাঁতে দাঁত চেপে একহাতে মায়াকে নিজের সাথে আটকে অপর হাতে পাঞ্জাবির পকেট হতে ফোন বের করে রাদিফকে কল লাগালো লাউডস্পিকারে। ফোনের ওপাশের রাদিফ ‘ হ্যালো ‘ বলার আগেই রিদ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল…
‘ দুই মিনিট সময় দিলাম। দুই মিনিটের মধ্যে শশীকে নিয়ে যাহ রাদিফ। মেজাজ এমনই খারাপ। আমি বের হলে খুব খারাপ কিছু হবে।
রিদের কথায় ওপাশের রাদিফকে বেশ উত্তেজিত শুনাল। অস্থির গলায় জানতে চেয়ে বলল…
‘ কি হয়েছে ভাই? কোনো সমস্যা?
রাদিফের প্রশ্নে রিদ মেজাজ খিঁচে বলল…
‘ তোরে বলছি প্রশ্ন করতে? বলেছিলাম না কেউ যাতে ছাঁদে আসতে না পারে? তাহলে শশী কিভাবে আসলো? কই ছিলি তুই?
‘ সরি ভাই, আমি আসলে দেখিনি! আমি এক্ষুনি আসছি শশীকে নিতে। তুমি একটু অপেক্ষা ক…
রিদ ঠাস করে কল কেটে ফোনটা ছুটে মারলো পাশে রাখা ছাঁদের টেবিলের উপর। মায়া তখনো কাঁদছে দু’হাতে মুখ ঢেকে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে শশী আর মায়ার দুজনের শব্দ একত্রে থেমে গেল মূহুর্তে। মায়া সময় লাগল কি হয়েছে ওর সাথে তা বুঝতে। যখন বুঝতে পারলো কি হয়েছে ওর সাথে তখন তীব্র ভয়ে শরীর শক্ত হয়ে আসল নিশ্বাস আঁটকে। রিদ তখনো মায়ার ওষ্ঠে মন্ত। কিন্তু মায়া হাইটে বেশ ছোট হওয়ায় ফ্লোরে পা রাখতে গিয়ে খৈ হারিয়ে কদম পিছিয়ে গেল তাল সামলাতে না পেরে। অথচ রিদ মায়ার শরীরের ভার বজায় রাখতে মায়ার সঙ্গে কদম মিলিয়ে এগিয়ে গেল ঝুঁকে পরে। মায়ার কদম যতোটা পিছাচ্ছিল রিদ ততই কদম মিলিয়ে হাঁটছিল অন্ধকার অতলে। একটা সময় ছাঁদের সিঁড়ি ঘরের দেয়ালে মায়ার পিঠ ঠেকে যেতেই রিদ মায়ার দু’হাত নিজের মুঠোয় চাপলো দেয়ালে আঁটকে। সেকেন্ডের জন্য মায়ার ঠোঁট ছেড়ে অপর হাতে গাল চেপে বলে…
‘ নিশ্বাস ছাড়! এবার অজ্ঞান না মরে গেলেও ছাড়ব না। আমার যা করার তাই করবো।
মায়ার আঁটকে আসা নিশ্বাসটা সবে থেমে থেমে অল্প একটু শ্বাস টেনেছিল নিজের মাঝে। এরমাঝেই রিদ একই ভাবে মায়াতে মন্ত হয়। মায়ার মনে হলো সে সত্যি জ্ঞান হারাবে। এসবের সাথে সে পূর্ব পরিচিত নয়। তরতর করে কাঁপতে কাঁপতে রিদের বাহুতে শরীর ছেড়ে দিতেই রিদ মায়াকে জড়িয়ে নেই নিজের সাথে। সময়ের খেয়াল নেই রিদের তবে একটা সময় মায়ার রিদের উপর শরীর ছেড়ে আঁচড়ে পরতেই রিদ মায়াকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিয়ে মায়ার মাথায় আদুরে হাত বুলাতে বুলাতে বলল…
‘ আমি জানি তুমি জ্ঞান হারাও নি। হয়তো ভয় পাচ্ছো। রেস্ট নাও। আমার মন ভরেনি। এটা আবার চলবে। যতক্ষণ আমার মন চাইবে ততক্ষণ। তারপরও ছাড় পাবে না তুমি।
#চলবে…..