রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-৪৮

0
2

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৪৮_প্রথমাংশ ও শেষাংশ
একটা সুন্দর দিনের সূচনা। কাক ডাকা ভোরে মায়া খান বাড়ির বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে। অদূরেই আরাফ খান কাজের লোকদের দিয়ে বাড়ির বাগানটা পরিষ্কার করাতে দেখা যাচ্ছে। কাল বাড়িতে মেজবান হওয়াতে বেশ অপরিচ্ছন্ন অবস্থা বাগানের। খান বাড়ির এই বাগানটা বলতে গেলে আরাফ খানের তদারকিতে গড়া। সেজন্য এসব দেখাশুনা তিনিই করে থাকেন। সময় তখন সকাল ০৫:০২। খান বাড়ির সকলেই ঘুমিয়ে। অথচ মায়া জেগে। নতুন পরিবেশ হওয়াতে মায়ার চোখে ঘুম নেই দুই রাত ধরে। আশপাশে দু-চারটে কাজের লোক ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মায়া গায়ের ওড়নাটা টেনে চাদরের মতোন জড়াল। হাল্কা পাতলা শীতের আভাস। কুয়াশার শিশিরকণা দেখা যাচ্ছে গাছের পাতায় পাতায়। মায়া মাথার ঘোমটা ফের টেনে এগোল সামনে। আরাফ খানের পাশে দাঁড়াতেই কারও উপস্থিতি পেয়ে পাশে তাকালেন তিনি। আরাফ খান কিছু বলবে তার আগেই মায়া মিহি স্বরে বলল…

‘ আমি আপনাকে সাহায্য করি দাদাভাই?

মায়া খান প্রসন্ন হাসলেন। মায়াকে বরাবরই উনার ভালো লাগে। বলতে গেলে মায়ার সাথে উনার ভাবমতি সহজে মিলে যায়। কথা বলেও মজা পায় সেজন্য মায়াকে আপাতত নিজের পছন্দের লিস্টেই রেখেছেন তিনি। হাসিমুখেই আরাফ খান বললেন…

‘ আমাকে সাহায্য করতে গেলে তোমার কাপড় নোংরা হয়ে যাবে নাতনী। মেহমানদের দিয়ে কাজ করালে ভালো দেখাবে না। তার থেকে বরং তুমি আমাকে সঙ্গ দিতে পারো। কাজ না-হয় ওরাই(কাজের লোকদের ইশারা করে) করলো। কি বলো? দিবে সঙ্গ?

মায়া সাচ্ছন্দ্যে মাথা কাত করে সম্মতি দিতে দিতে বলল…
‘ আচ্ছা।

মায়ার সাথে আরাফ খানের কথা চলল বেশ। এরমাঝেই কোথা থেকে রিদ এসে সোজা দাঁড়াল মায়ার পাশে। আরাফ খান তখন ঝুঁকে কাজের লোককে কাজের নিদর্শনা দিচ্ছিল। মায়ার মনোযোগ সেইদিকেই ছিল। হঠাৎ রিদ মায়ার কাঁধে হাত রাখতেই মায়া চমকে উঠার মতোন পাশে তাকাল। রিদকে নিজের পাশে দেখে তৎক্ষনাৎ ভয়ার্ত চোখ ঘুরিয়ে তাকাল আরাফ খানের দিকে। আরাফ খান তখনো নিজের কাজে ডুবে আছে রিদকে লক্ষ করেন নি তিনি। মায়া মূহুর্তে আশেপাশে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে কেউ দেখার আগে নিজের কাঁধ হতে রিদের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদ শক্ত হাতে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে কপাল কুঁচকে তাকাল মায়ার দিকে। মায়া ভয়ে থতমত খেয়ে রিদের হাতটা পুনরায় কাঁধ হতে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ভয়ার্ত গলায় কিছু বলবে তার আগেই রিদ বিরক্তি নিয়ে ধমক স্বরে বলল…

‘ কি সমস্যা? এমন করছো কেন? ঠিকঠাক দাঁড়াও।

রিদের কথায় মায়া চুপসে যাওয়া বেলুনের মতোন চুপ করে গেল মূহুর্তে। আতঙ্কিত ভঙ্গিতে তৎক্ষনাৎ ঘুরে তাকাল আরাফ খানের দিকে। তিনি রিদের কন্ঠস্বর শুনেই ঘাড় বেঁকে তাকাল পিছনে। রিদকে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে একত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য নেয় মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াল। যে রিদকে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি কখনো, সেই রিদ এই মূহুর্তে কারও কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে বিষয়টা সত্যি আশ্চর্যের নেয়। আরাফ খান আশ্চর্য সাথে সাথে রিদের প্রতি সন্দিহান দৃষ্টি প্রকাশ করলো। অথচ রিদ আরাফ খানের সেই সন্দিহান দৃষ্টি অপেক্ষা করে তখনো একহাতে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে অন্যহাতে ধোঁয়া উড়া কফির মগে চুমুক বসাচ্ছে লা-পাত্তা হয়ে। গায়ে তাঁর কালো রঙ্গা টি-শার্ট আর তাওজার পড়া। মায়াও কালো রঙের সুতির জামা জড়িয়ে। আরাফ খান দুজনকেই পরখ করলো জহরী দৃষ্টিতে। দাদা-নাতির মাঝে মায়া ভয়ে জড়সড় হয়ে সিঁটিয়ে। আরাফ খান নিশ্চয়ই ওদের দুজনকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করবে। রিদ-তো সবটার উত্তর দিতেই বসে আছে। মুখের উপর ঠাস ঠাস করে বলে দিবে দুজনের মধ্যকার থাকা সম্পর্কের কথাটা। আরাফ খান সবটা জেনে হয়তো রেগেমেগে বাসার সবাইকে বলে দিবে। মুক্তা আজ এখানেই আছে। মায়ার পরিবারের কানেও পৌঁছে যাবে সেই খবর। তখন কি হবে সেই ভয়ে ভয়ে মায়ার শরীরে মৃদু কম্পন দেখা দিল আতঙ্কে। রিদ সেটা বুঝতে পেরে মায়াকে আরও শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো ভরসার হাতে। আরাফ খান রিদ-মায়াকে একত্রে দেখে যে বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না সেটা উনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে। আরাফ খান সন্দিহান চোখে রিদকে বলল….

‘ তুই ওর কাঁধে হাত রেখেছিস কেন?

আরাফ খানের কথায় রিদের সোজাসাপটা উত্তর আসলো তক্ষুনি। আগের নেয় মায়ার কাঁধে হাত রেখে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে দায়সারা উত্তরে বলল…

‘ হাত রাখার জায়গা খোঁজে পাচ্ছিলাম না তাই।

রিদের কথায় ক্ষেপে যাওয়ার মতোন টেনে মায়াকে নিজের পাশে দাঁড়া করাল আরাফ খান। রিদকে খোঁচা মেরে বলল…

‘ তোর হাত তোর পকেটে রাখ আর নয়তো কেটে ফেলে দে! তারপরও মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। নিষেধ!

‘ মেয়ে কে? কাকে বলছো?

আরাফ খানের কথায় রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল উনার দিকে। এমন একটা ভাব যেন এখানে মেয়ে বলতে কেউ নেই। আরাফ খান কাকে মেয়ে বলতে বুঝিয়েছে সেটা বুঝতে পারছে না সে। ক্ষিপ্ত আরাফ খান আরও ক্ষেপে গিয়ে বলল…

‘ হেয়ালি করছিস আমার সাথে? তোর মায়াকে মেয়ে মনে হয়না?

রিদের সোজাসাপ্টা উত্তর আসলো তৎক্ষনাৎ…

‘ না।
‘ তাহলে কি মনে হয়?
‘ আমার বউ

রিদের সোজাসাপ্টা কথায় মায়া থমথমে খেয়ে বসলো। ভয়ে জড়সড় হয়ে আরাফ খানের মুখের দিকে তাকাল আতঙ্কে। রিদ যে ঠাস ঠাস উত্তর করতে মুখিয়ে আছে সেটা মায়া আগেই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু এইভাবে যে বলে দিবে সেটা বুঝতে পারেনি। এখন কি হবে সেই ভয়ে মায়ার কলিজা ঢিপঢিপ করছে। অথচ রিদের বলা সত্যিটা আরাফ খান বিশ্বাস করলো না বরং উনার মনে হলো রিদ উনার সঙ্গে হেয়ালি করছে উনাকে বিরক্ত করার জন্য। রিদ পরিবারকে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করে নিবে তারও নারীবিদ্বেষী ছেলে হয়ে সেটা মূলত আরাফ খানের ধারণাতে ছিল না। তাই তিনিও রিদকে হেয়ালি করেই বলল….

‘ তোর কপালে এতো সুন্দর বউ জুটবে না। তোর কপালে জুটবে লাল কালারের বউ। লাল বউ না পেলেও সমস্যা নেই নীল কালারের বউ অর্ডার দিব তারপরও তুই এতো সুন্দরী বউ পাবি না কনফার্ম।

আরাফ খানকে রিদের কথায় বিশ্বাস করতে না দেখে মায়ার মনে সাহস পেল। ভয় থেকে বাঁচতে পেরে স্বাভাবিকও হলো। কিন্তু আরাফ খানের বলা রিদের জন্য লাল বউ অর্ডার করার বিষয়টি বুঝতে পারলো না। তাই রিদ কিছু বলবে তার আগেই আরাফ খানকে প্রশ্ন করল মায়া। জানতে চেয়ে বলল…

‘ লাল বউ কি দাদাভাই?

‘ তুমি লাল বউ চিনো না?

মায়া মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিয়ে বলল…

‘ না।

‘ এসব লাল বউ না চেনায় ভালো। তুমি ভালো মেয়ে এজন্য চিনো না। এইগুলা হচ্ছে টপ সিক্রেট বুঝেছো? কাউকে বলতে নেই। এসব লাল বউ অর্ডার করা হয় ওর মতোন বুড়া মানুষের জন্য। ওহ এই বুড়া বয়সে বউ পাবে কই বলো? এজন্য ওর জন্য লাল বউ ঠিক আছে।

আরাফ খানের কথায় মায়া বড় বড় চোখ করে তাকাল রিদের দিকে। মায়া স্বামী আর বুড়ো? অসম্ভব! মায়ার স্বামী কতো সুন্দর মাশাল্লাহ! একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছা হয়। বিশেষ একটা আর্কষণ কাজ করে তাঁর মাঝে। কোনো দিক থেকেই যেন তার কমতি নেই, যেমন লম্বা তেমন ফিটনেস। কথাবার্তা, অ্যাটিটিউ, দৃষ্টি, বাচনভঙ্গি সবকিছুই অদ্ভুত অসাধারণ মায়ার স্বামীর। সেখানে মায়ার জামাইকে বুড়া বলা মানে হাস্যকর কিছু শুনা। রিদ আরাফ খানের কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে বলল…

‘ তোমার চশমার পাওয়ার বাড়াতে হবে দাদাভাই। মনে হয় এক্সপায়ার হয়ে গেছে।

রিদের খোঁচা মারা কথায় মূহুর্তে রেগে যায় আরাফ খান। ক্ষিপ্ত গলায় বলল…

‘ তুই কি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি বুড়া বললি রিদ?

‘ না! ডাইরেক্টলি বললাম।

রিদের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠার মতোন চেতে উঠলো আরাফ খান। রেগেমেগে বলল…

‘ বুড়া হবে তোর বাপ। আমি এখনো জুয়ান আছি।

কথাটা বলেই আরাফ খান রেগেমেগে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। মূলত কথায় না পারলে চলে যাওয়ার স্বভাব উনার। স্বভাবগতই কাজটা করলেন তিনি। রিদ জানে সেটা। অজ্ঞাত মায়া আরাফ খানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সেও চুপচাপ পালাতে চাইল রিদের থেকে। মায়া কদম বাড়াতে চাইলে রিদ মায়ার বাহু চেপে কাছে টানল। ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইল…

‘ কি ম্যাডাম? পালাচ্ছেন মনে হয়? রাতে ডাকলাম আসলেন না কেন?

রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ লজ্জায় নত মস্তিষ্কের হয়ে আসল মায়ার। উত্তর না করে রিদের পায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মন্ত মায়ার ভাবময় বুঝতে রিদ মায়ার থুঁতনি চেপে মুখটা উপরে তুলল। মায়ার মুখশ্রীতে দৃষ্টি বুলাতে চোখ পড়লো মায়া কাটা ঠোঁটের দিকে। রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হলো। থুঁতনি ছেড়ে মায়ার কাটা ঠোঁটে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চেপে ধরতেই মায়া চোখ মুখ খিঁচে নিলো ব্যাথায় তারপরও উফফ শব্দ করলো না। বরং রাতের দৃশ্য গুলো পুনরায় মনে হতেই লজ্জায় সিঁটিয়ে গেল নত মস্তিষ্কে হয়ে।
রিদ মায়াকে কিছু বলতে গিয়ে পাশে তাকাল। অল্প দূরে একজন মালিকে দেখা গেল বাগানে কাজ করতে। আরাফ খান বাড়ির ভিতরের দিকটায় যাচ্ছেন। আপাতত আশেপাশে আর তেমন কেউ নেই রিদের প্রাইভেসি নষ্ট করার মতোন। রিদ হাতের কফির মগটা বাগানের মালিকে ডেকে দিতে দিতে গম্ভীর গলায় বলল…

‘ আপনি ভিতরে যান।

‘ জ্বি সাহেব।

রিদের বলতে বলতে লোকটা হাতে কফির মগটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে দিকে চলল। আশেপাশে পরিবেশটা বেশ শান্ত আর প্রেমময়। রিদ হাত বাড়িয়ে পুনরায় মায়ার মুখটা উপরে তুলে ঠোঁটের কাটা জায়গা গুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে বলল…

‘এসব দাগ রোজ হবে। অভ্যাস করে নাও। রাতে রুমে আসো নি কেন? ডেকেছিলাম না?

মায়া লজ্জায় চুপ করে যেতে দেখে রিদ পুনরায় একই গলায় বলল…

‘ কিছু প্রশ্ন করছি আমি উত্তর কই?

মন্ত মায়া মিনমিন স্বরে বলল…

‘ এমনি।

‘ কোনটা এমনি ম্যাডাম? বলেন শুনি, আমার সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন করেন? অথচ আমার রুমে আসতে চান না। তো আসতেন রাতে আমার রুমে, তখন আমিও না-হয় মনোযোগ দিয়ে চেক করাতাম আপনাকে মেশিন চলে নাকি অচল।

রিদের ইঙ্গিত মূলক কথাটা মায়া বুঝল না। যেহেতু মায়া রিদকে মেসেজ করেনি তাই মেসেজ লেখা রাফার শব্দ গুলো সম্পর্কেও মায়ার ধারণা নেই। রিদের কথা প্যাঁচে পরে মায়ার মনে হলো রিদ কোনো যান্ত্রিক মেশিন দেখাতে মায়াকে ডেকেছিল রাতে তাই মায়া স্বাভাবিক নেয় রিদকে বোকার মতোন প্রশ্ন করে বলল…

‘ আপনি কি রাতে আমাকে মেশিন দেখাতে ডেকেছিলেন?

‘ জ্বি!

‘ ওহ! কিসের মেশিন?

মায়ার কথায় রিদ বুঝতে পারলো মায়া রিদের কথার যথাযথ অর্থ বুঝেনি। আগের নেয় রিদ বলল…

‘ রুমে চলেন! দেখায় কিসের মেশিন।

মায়া নাহুচ করে বলল…

‘ না আমি যাব না। আপনি যান। বাসায় অনেক মানুষ আছে। আমাকে আপনার রুমে দেখলে খারাপ ভাববে সবাই।

মায়া কথায় রিদ মায়ার থুঁতনি চেপে কাছে টেনে বলল…
‘ লোক দেখানো নাটক আমার পছন্দ না ম্যাডাম।আর না আপনি এসব মানুষের দোহাই দিয়ে নিজেকে আমার থেকে বাঁচাতে পারবেন। আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আসি নাই। সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। এবার থেকে আপনি আমার সাথে থাকবেন ঢাকায়। দুই পরিবারের আজকে জানাজানির পাঠ
শেষ করব। তারপর কে মানল, না মানল সেসব আমার দেখার বিষয় না। কারও খেয়ে-পড়ে বাঁচি না আমি। আর না কারও ধার-ধারি। বিয়ে করেছি আমি, মানে আমার বউ আমার সাথেই থাকবে এটাই শেষ। আর যদি দুই পরিবারের কেউ নাটক করে আমাদের মানতে তাহলে সেটা সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত সমস্যা হবে আমি কাউকে তেল মারতে যাব না। আর না বউ ছাড়া থাকতে পারব।

রিদের কথায় মায়া আতঙ্কিত গলায় বলল…

‘ প্লিজ এখন জানাবেন না কাউকে। আরও কয়েকটা দিন যাক না তারপর না-হয় সবাই জানলো আ…

মায়ার কথা শেষ করার আগেই রিদ রাগে মেজাজ দেখিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল….

‘ শ্যাটআপ!
‘ প্লিজ!
‘ রিত
রিদের রাগে ধমকে মায়া চুপ করে গেল। চুপ থেকে নিরবে সবকিছু রিদের হাতে ছেড়ে দিল। রিদ যা করবে দুজনের ভালোর জন্যই করবে এখানে মায়ার কথায় না বলাই উচিত। এরপর যা হবার হবে দেখা যাবে। রিদ যেহেতু মায়ার পাশে আছে এখানে মায়ার ভয় নেই। আল্লাহ ভরসা করে সবকিছু জন্য মায়া মনে মনে প্রস্তুত হলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মায়ার মুখোমুখি ঝুকে থাকা রিদের রাগান্বিত মুখটার দিকে তাকিয়ে উদাস গলায় বলল…

‘ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি যা বলবেন তাই হবে। আপনার কথায় মেনে চলব এরপর থেকে, তারপরও এই বয়সে আপনি এইভাবে দাঁতে দাঁত পিষবেন না প্লিজ। এই শেষ বয়সে এসে দাঁত গুলো পড়ে গেলে নকল দাঁতে ভালো দেখাবে না আপনাকে৷

মায়ার কথায় তেলবেগুনে জ্বলে উঠলো রিদ। আরাফ খান বুড়ো বলায় এতক্ষণ গায়ে লাগেনি রিদের। কিন্তু সেই একই কথাটা যখন মায়া বলল ইঙ্গিতে তখনই ফুঁসে ওঠে রিদ। মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে বলল….
‘ কিহ?

‘ আরে হাইপার হবেন না প্লিজ। এই বয়সে প্রেশার হাই হয়ে গেলে সমস্যা হবে তো। কুল কুল!

#চলিত…..

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া
৪৮_শেষাংশ

সকাল নয়টা পনেরো। খান বাড়ির ড্রয়িংরুম ভরপুর মেহমানে। কাল যে বা যাঁরা খান বাড়ির মেজবানের অনুষ্ঠানে এসেছিল সেইসব আত্মীয়ের একভাগ রাতে রয়ে গেছে খান বাড়িতেই। তাদের মধ্যে প্রায় সকালেই আজ বিদায় হবেন যার যার বাড়িতে। এদের মধ্যে মায়ারাও আছে। মায়া, জুই দুজনেই আজ নিজেদের বাসা মুরাদপুরে ফিরবে। বিকাল থেকে দুজনের কোচিং। বারোটার নাগাদ ফাহাদ দিয়ে আসবে দুজনকে এমনটাই নিধারিত। মেহমান সদস্যদের প্রায় সকলেই নাস্তা করে বসেছে ড্রয়িংরুমে। খান বাড়ির সদস্যরাও উপস্থিত সেখানে। চোখে পলকে উপস্থিত সদস্যদের মাঝে বিশাল আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে রিদ-শশীর বিয়ে নিয়ে। দুজনের বয়স হয়েছে তাই সময় থাকতে থাকতে দুজনকে একত্রে বাঁধা দরকার বলে এমনটা প্রস্তাব রাখলো শশীর পরিবার। এতে সহমত পোষণ করে আরাফ খান বাদে উপস্থিত সকলেই। হেনা খান সকলের সাথেই সহমত করলো। স্বামী আরাফ খানের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিরবে উনার সম্মতি চাইল। কিন্তু আরাফ খানের এই বিষয়ে তেমন কোনো মতামত বা মনোযোগ পেল না তিনি। নিরুদ্দেশ আরাফ খান চা পান করছেন টিভিতে নিউজ দেখতে দেখতে। ভাবখানা এমন তিনি মহিলাদের আলোচনা মিটিংয়ে কিছুই শুনেনি বা সেখানে উনার কোনো মনোযোগ নেই। অথচ দুইকান খোলা রেখে টিভির দিকে উৎসুকমুখী হয়ে সকালে কথা শুনছেন তিনি। টিভিতো শুধু বাহানা। এই মূহুর্তে তিনি মহিলাদের আলোচনায় ঢুকতে চাচ্ছে না বলেই নিরবতার পালন করছেন। তাছাড়া আজকাল রিদের মতিগতিও ভালো ঠেকছে না উনার। রিদ যে বিয়ে করবে না উনি ভালো করেই জানেন সেজন্য আপাতত হেনা খানের কোনো আলোচনায় ঢুকতে চান না তিনি। কারণ রিদের বিয়ের ব্যাপারে উনার বউকে বাঁধা দিলেও সে শুনবে না উল্টো আরাফ খানের সঙ্গে রাগারাগি করবে কেন বাঁধা দিচ্ছে সেজন্য, তার থেকে ভালো উনি চুপ থাকুক। যার বিয়ে সেই দেখে নিবে এসব কিছু। তাছাড়া আরাফ খান বাদে ড্রয়িংরুমে ছেলেদের উপস্থিতও শূন্য। সঙ্গী ছাড়া এতো গুলা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেও পারবেন না তিনি। সেজন্য যা হচ্ছে হতে থাক। যার বিয়ে সেই দেখে নিবে কি করতে হবে তাঁকে। এখানে আরাফ খানের কোনো কাজ নেই দেখা ছাড়া। নিশ্চুপ আরাফ খানকে এরিয়ে শশীকে ঘিরে দুপাশ থেকে জড়িয়ে বসল রিদের দুই ফুপি। শশীর মা রিদের খালা হয়। বলতে গেলে সুফিয়া বেগমের ছোট বোন। অথচ সুফিয়া থেকে খান বাড়ির সঙ্গে শশীর মা সালমা বেগমের সুসম্পর্ক বেশি। সেক্ষেত্রে রিদের সঙ্গে শশীর বিয়ে দেওয়াটাও উনার খুব পুরনো ইচ্ছা ছিল। এই ব্যাপারে অবশ্য দুই পরিবারের মাঝে পূর্ব থেকে কথাও হয়ে আছে। তবে সে-বার যদি রিদ হঠাৎ করে বিয়ে থেকে পিছুপা না হতো তাহলে এতোদিনে হয়তো শশী খান বাড়ির বউ হয়ে থাকতো। রিদ হঠাৎ কেন শশীকে বিয়ে করতে পিছুপা হলো সেটা সঠিক অর্থের কারণটা কারও জানা নেই তবে এখন বিয়েটা আগানো উচিত বলে মনে করছেন সবাই। মেয়ে হিসাবে শশীকে বেশ পছন্দ খান বাড়ির সকলেরই। নম্র, ভদ্র আর মার্জিত ব্যবহারের জন্য শশীর উপর সকলেই সন্তুষ্ট। পার্সোনালি হেনা খানের খানিকটা বেশি পছন্দ শশীকে। রিদের পাশাপাশি দাঁড়ালে দুজনকে মানাই ভালো। হেনা খান স্বামীর পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালেন। অন্তত খুশিমনে এসে দাঁড়ালেন শশীর মুখোমুখি। মাথায় হাত বুলিয়ে শশীকে দোয়া করে বললেন….

‘ ভেবেছিলাম ফাহাদের আগে রিদকে বিয়ে করাব। কিন্তু রিদের জেদের কারণে হলো না। ইনশাআল্লাহ এবার আর হাল ছাড়ব না। দরকার হলে নিহাল-সুফিয়া দুজনকে দিয়ে রিদকে রাজি করাব তারপরও খুব জলদি তোমাদের দুজনের বিয়েটা দিয়ে দিব।

হেনা খানের কথায় শশী নত মস্তিষ্কের লাজুক হাসলো। ফাহাদের মা সরে হেনা খানকে জায়গা করে দিল শশীর পাশাপাশি বসতে। তিনি শশীর পাশে বসলেন। সেঁজুতি জুই মুক্তার পাশেই মায়া সোফার এক কোণায় বসে হাঁটুর উপর দু-হাত রেখে। নত মস্তিষ্কের মায়ার চোখ টলটল করছে হেনা খানের কথা শুনে। সকলেই শশীকে ঘিরে বসে। খান বাড়ির বড়ো নাতির বিয়ে বলে কথা শশীর মূল্যায়ন তো থাকবেই। হেনা খান আবারও বললেন….

‘ আজকেই রিদের সঙ্গে বিয়ে ব্যাপারে কথা বলে দুজনের এনগেজমেন্টের তারিখ আগামী মাসে নির্ধারণ করে ফেলি? কি বলো সালমা?

সালমা বেগম বেশ প্রসন্ন হাসলেন। উত্তর বললেন…

‘ আপনি যেটা ভালো মনে করেন ফুফু। আমার সবদিক থেকেই অনুমতি আছে এতে।

সালমা বেগমের কথায় অন্তত খুশি হলেন হেনা খান
বললেন…

‘ বেশ আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে আজকেই মিষ্টি মুখ করে নেয় সবাই কি বলে? ফাহাদের বউ যাওতো ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসো সবার জন্য।

‘ জ্বি নানুমা।

বলতে বলতে মুক্তা উঠে দাঁড়াল। মুক্তার সঙ্গে সেঁজুতি এগিয়ে গেল কিচেন দিকে ট্রে-তে করে মিষ্টি সাজিয়ে আনতে। নত মস্তিষ্কের মায়া তখনো শরীর শক্ত করে বসে। জুই মায়ার অবস্থা বুঝতে পেরে মায়া সঙ্গে আরও চেপে বসলো। মায়ার কোলের দু’হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল…

‘ তুই চিন্তা করিস না রিতু। এসব বিয়ে-টিয়ে কিছুই হবে না রিদ ভাইয়া আছে না সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাইতো আর জানে না রিদ ভাই যে বিবাহিত জানলে অবশ্যই শশী আপুর জায়গায় তুই বসে থাকতি এখন।

জুইয়ের কথা শেষ হতে হতে মায়ার চোখের পানি টুপ করে পরলো জুইয়ের হাতের উপর। চমকে উঠার মতোন নত মস্তিষ্কের মায়ার দিকে তাকাল জুই। পরপর টপটপ করে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়াল জুইয়ের একই হাতে। জুই দ্রুততায় নিজের দু’হাতে মুঠোয় মায়ার দু’হাত চেপে অস্থির ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বলল…

‘ প্লিজ কাঁদিস না রিতু। ধরা পরে যাবি। অন্তত রিদ ভাইকে আসতে দে। উনার ফ্যামিলির সঙ্গে উনি কথা বলবে। তুই এই মূহুর্তে কাঁদলে সবাই সন্দেহ করবে। মুক্তা আপু কিন্তু এখানেই আছে রিতু। সমস্যায় পরে যাবি। প্লিজ নিজেকে শক্ত রাখ।

জুইয়ের মায়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার মাঝেই রিদকে দেখা গেল রেডি হয়ে নিচে নামতে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে বাহিরে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। হয়তো নিহাল খানের সঙ্গে যাবে কোথাও নির্বাচনের কাজে। রিদ সবাই অপেক্ষা করে ড্রয়িংরুম পাড় হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিল। ড্রয়িংরুমে কে বা কারা আছে তা দেখার প্রয়োজন পযন্ত মনে করলো না। ব্যস্ত রিদকে চলে যেতে দেখেই তাড়াহুড়ো পিছন ডাকল হেনা খান…

‘ রিদ দাঁড়া।

স্বাভাবিক নেয় রিদ পিছন ঘুরে দাঁড়াল। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত মেহমানদের ভিড় দেখে মূহুর্তে কপাল কুঁচকে এলো সন্দেহে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকাতে চোখে পড়লো শশীকে জড়িয়ে হেনা খান আর নিজের ফুপিদের বসে থাকতে। রিদের কুঁচকানো কপালের ভাজ মূহুর্তে সোজা হলো। সন্দেহটা সঠিক তা বুঝতে পেরে চোখে পলকে আশপাশটা পরখ করে নিলো একবার। বাড়ি সকলকে একত্রে গোল মিটিংয়ে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে আশেপাশে মায়াকে খোঁজল। জুইয়ের পাশে মায়াকে নত মস্তিষ্কের বসে থাকতে দেখে রিদ বুঝতে পারলো এতক্ষণে তাঁর বউয়ের একদফা কান্নাকাটি করা শেষ। এটা হয়তো দ্বিতীয় রাউন্ড হতে পারে। এইতো একটু আগেই দুজন বাগানে একত্রে ছিল। তখন রিদ তার বউকে বুঝিয়ে ছিল সে আছে তার বউয়ের পাশে সবসময়, সব পরিস্থিতিতে।তারপরও কেন কোনো কিছু হলেই মেয়ে মানুষের কান্নাকাটি করতে হয় সেটাই বুঝে না রিদ। এতো চোখে পানি পাই কই এরা? রিদ মায়ার উপর বিরুক্ত হতে গিয়ে হলো না। একটা মাত্র বউ তাঁর। অল্পতে বিরক্ত হওয়া যাবে না। তাছাড়া বউতো তার বিরহে কাঁদছে তাই না? কাঁদুক সমস্যা নেই। মাঝেমধ্যে স্বামীর জন্য এমন একটু আধটু কাঁদলে রিদের শান্তিই লাগে। রিদ বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে চলে যাওয়ার তাড়াহুড়ো দেখাল না। বরং স্থির হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শার্টের হাতার বোতাম খোলে টেনে কুইন অবধি তুলতে তুলতে ছোট উত্তরে বলল…

‘ বলো!
রিদকে দাঁড়াতে দেখে শশী লাজুক হাসলো। মাথার ঘোমটা টেনে আরও একটু নিচে নামাল। হেনা উঠে আসলো রিদের মুখোমুখি হতে হতে বলল…

‘ কোথায় যাচ্ছিস?
‘ বাহিরে।
‘ কেন?
‘ কাজ আছে?
‘ এতো সকাল সকাল কি কাজে যাচ্ছিস?

হেনা খানের কথায় রিদ খানিকটা বিরক্ত হলো। সিরিয়াস মোমেন্টে সিরিয়াস কথা বলাটা রিদের পছন্দ। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা তাঁর কোনো কালেই পছন্দ না। রিদ বুঝতে পারছে হেনা খান কেন রিদকে ডেকেছে, রিদ নিজেরও তার উত্তর দিতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রশ্নদাতা যদি প্রশ্ন করতে গিয়ে এতো তালবাহানা করে তাহলে উত্তর করতে মজা পাই না সে। রিদ অপর হাতের শার্ট একই ভাবে টেনে কুইন অবধি গোটাতে গোটাতে বলল…

‘ পয়েন্ট আসো দাদী! কি চাও?

রিদের সরাসরি কথায় হেনা খান কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ করে গেল। এর আগে যতবার রিদের বিয়ে নিয়ে কথা হয়েছে ততবারই রিদ রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে এবারও যদি তাই হয় তাহলে উনার ছেলে নিহাল খুব রেগে যাবে উনার উপর, কারণ সামনে ইলেকশন। এই মূহুর্তে রিদের প্রয়োজন নিহালের খুব বেশি। আবার খান বাড়ি গুরুজন হিসাবে রিদের বিয়ের ব্যাপারটা তো উনার দেখা উচিত তাই না? বাপ-মার তো ছেলের বিয়ে নিয়ে কোনো কথায় বলে না। ছেলে বিয়ে করবে কিনা? ছেলের বয়স হয়ে এসব দেখার প্রয়োজনই মনে করে না দুজনের একজনও। এজন্য মূলত হেনা খানের সবসময় আগ বাড়িয়ে রিদকে নিয়ে টেনশন করতে হয়। একটা ত্রিশ বছরে তামড়া ছেলে চোখে সামনে ঘুরছে বিয়ে না করে অথচ এতে কারও মাথা ব্যথা নেই। আর থাকবেই বা কি করে? রিদের বাবা-মার সাংসারিক যে অবস্থা। এতে রিদের বিয়ে করতে মন চাইবে কখনো? রিদের বাবা-মা তো দুজন ভালোবাসে বিয়ে করেও আজ পনেরো বছর ধরে আলাদা থাকে। এমনকি এই পনেরো বছরের দুজন একে অপরের চেহারা পযন্ত দেখেনা। সংসার করবে তো দূর। এই নিয়ে কতো ঝামেলা হলো। দুজনকে একত্রে করতে চাইল কিন্তু কেউ রাজি হলো না। আবার কেউ কাউকে তালাক ও দিবে না, সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। দূরে থাকবে তারপরও দুজন একই সম্পর্কে থাকবে। এটা কেমন যুক্তি তিনি তা আজও বুঝে উঠতে পারেননি। কতো বছর, কতো সময় উনি নিহাল-সুফিয়াকে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়েছেন সবভুলে আবার একত্রে হয়ে সংসার করতে শেষ পযন্ত কেউ মানেনি শুধু দুজন দুজনার ব্যাপারের চুপ থাকে। সবশেষে যখন রিদের বাবা-মার সম্পর্কটা ঠিক করতে পারছিল না তখন হেনা বলেছিল একসঙ্গে থাকতে না চাইলে দুজনই ডিভোর্স দিয়ে আলাদা হয়ে যেতে এতেও কেউ রাজি হলো না। এজন্য হেনা খান চাই অন্তত রিদ সুন্দর একটা সংসার করুক। খান বাড়িটা আবার পরিপূর্ন হোক। আর কতো একা একা কাটাবেন তিনি?

‘ আমরা তোকে বিয়ে করাতে চাই।
শার্টের হাতা পুল্ড করা শেষে রিদ দুহাত পকেটে গুজাতে গুজাতে বলল…
‘ সেটা তো আমিও চাই।
রিদের কথায় খুশিতে উৎফুল্লতা দেখা দিল হেনা খানের মাঝে…
‘ সত্যি তুই করবি?
‘ তোমরা করাতে চাইলে করবো।
‘ আমরা তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি।
‘ মেয়ে কে?
রিদের কথায় পারভিন শেখ শশীকে উঠে হেনা খানের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইশারা করলো। ইশারা অনুযায়ী শশী লাজুক ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল কিন্তু হেনা খানের কাছে পৌঁছানোর আগেই হেনা খান শশীর দিকে আঙ্গুল তুলে রিদকে দেখিয়ে বলল…

‘ আমরা তোর জন্য ওকে পছন্দ করেছি। তোর পছন্দ না?

হেনা খানের কথার পিষ্টে উত্তর না দিয়ে বরং পাল্টা প্রশ্ন করে বলল রিদ…
‘ আমি পছন্দ করলে বিয়ে কনফার্ম?
হেনা খান খুশিতে সম্মতি দিয়ে তাড়াহুড়োয় বলল…
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ!

রিদের কথায় আরাফ খান জহির দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকাল। উনার ধারণা মতে এতক্ষণে রিদের প্রচন্ড রকমের বাড়াবাড়ির রাগ করার কথা অথচ সেই রিদ রাগারাগি না করে উল্টো বিয়ের জন্য আপোষে রাজি হয়ে যাচ্ছে দেখে উনার সন্দেহ হলো।
তখনই শুনা গেল রিদের কথা। রিদ হেনা খানকে সম্মতি দিতে দিতে বলল…

‘ ঠিক আছে তোমাদের পছন্দকেই আমি পছন্দ করলাম। তবে এটাই লাস্ট! বারবার কিন্তু মেয়ে পছন্দ করতে পারবো না।

রিদের কথায় হেনা খান তাড়াহুড়ো বলল…
‘ না না বারবার তোকে মেয়ে পছন্দ করতে হবে না। তুই একবার পছন্দ করলে হবে। আমরা তোর পছন্দেই বিয়ে করাব।

‘ ওকে ডান!
কথাটা বলতে বলতে রিদ হেনা খানের পাশ কাটিয়ে সামনে এগোল। উপস্থিত সবাই উৎসুক খুশিমনে তাকিয়ে শশীর দিকে। এই হয়তো রিদ শশীকে পছন্দ করবে। শশী মাথার ঘোমটা টেনে মায়ার সম্মুখে দাঁড়িয়ে লাজুক ভঙ্গিতে। রিদ এগিয়ে এসে শশীকে পেরিয়ে সোফায় বসে থাকা মায়ার হাত টেনে দাঁড় করাল। থুঁতি চেপে মায়ার মুখটা উপরের তুলে এদিকে সেদিক ঘুরিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে হেনা খানের উদ্দেশ্যে বলল।

‘ এই মেয়েকেই তো তোমরা আমার জন্য পছন্দ করেছো দাদী তাই না? চেহারা তো ঠিকঠাকই লাগছে। খারাপ না পছন্দ হওয়ার মতো। তবে বিনা কারণে চোখ থেকে একটু বেশিই পানি পড়ে মনে হয়। বাকি সব ঠিক আছে, তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ দাদী, ফাহাদের ছোট শালীকেই বিয়ে করবো ডান। তোমরা কথা বলো আমি রাজি।

রিদের কথায় হেনা খানসহ উপস্থিত সকালেই তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে। মুক্তা ডাইনিংয়ে পাশে মিষ্টির প্লেট নিয়ে স্তব্ধ নেয় দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত চোখে রিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে। ততক্ষণে রিদ যত্ন সহকারে মায়ার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। শশী বা অন্য কেউ রিদকে কিছু বলবে তার আগেই হেনা খান দ্রুততায় এগিয়ে এসে রিদকে শুধাতে চাইল। রিদ শশীর জায়গায় ভুল করে মায়াকে পাত্রী মনে করছে সেটা বুঝাতে চেয়ে বলতে চাইল….

‘ রিদ তোর ভুল হচ্ছে আমরা ফাহাদের শালীকে না শশীকে তোর….
হেনা খানের কথা শেষ করার আগেই রিদ বিরক্তি নিয়ে বলল…

‘ দাদী বারবার মেয়ে পছন্দ করতে পারবো না। একবার করেছি এটাই শেষ। বিয়ে করতে হলে ফাহাদের শালীকেই করবো। নয়তো বিয়ে ক্যান্সেল। এবার বলো তোমরা কি চাও? ইয়েস অর নট?

রিদের কথায় শশীর মধ্যে অস্থির উত্তেজনা দেখা তৎক্ষনাৎ। প্রিয় কিছু হারানোর ভয়ে শশী এগিয়ে গেল রিদের দিকে। অস্থির ভঙ্গিতে রিদের হাত টেনে কিছু বলতে চাইলে রিদ শশীকে বাঁধা দিয়ে রাগে কটমট করে বলল…

‘ ডোন্ট টাচ! স্টে হেয়ার।

অস্থির তোলপাড় শশী রিদকে বুঝাতে চেয়ে উত্তেজনায় বলতে লাগল…

‘ তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে তুমি মায়াকে কেন এসবের মাঝে টানছো? পরিবারের সবাই আমাকে পছন্দ করেছে মায়াকে না।

শশীর কথায় রিদ বিরক্তি নিয়ে বলল…

‘ বিয়ে করবো আমি, সংসার করবোও আমি, আর আমার বউ পছন্দ করবে অন্য কেউ? কেন? আমার কি চোখ নাই? অন্ধ মনে হয় তোর?

রিদের শক্ত গলার কথায় শশীর চোখ টলমল করে উঠে কান্নায়। মায়া ভয়েভয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মুক্তাকে দেখে নিল। মূলত মুক্তা এইদিকেই তাকিয়ে। রিদ যেকোনো সময় দুজনের বিয়েটার কথা বলে দিতে পারে সবাইকে, তখন হয়তো সবাই ক্ষেপে যেতে পারে সেই ভয়ে মায়া রিদের দিকে চেপে গেল, রিদের শরীর ঘেঁষে নত মস্তিষ্ক হয়ে দাঁড়াল। টানটান উত্তেজিত পরিস্থিতিতে মায়ার রিদের দিকে চেপে যাওয়ার বিষয়টা হয়তো তেমন কেউ লক্ষ করেনি তবে চতুর মুক্তা ঠিকই লক্ষ করলো। নাক মুখ শক্ত করে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইল ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে। নিজের শশুর বাড়িতে নিজের বোনকে নিয়ে এতো কাহিনি হবে সেটা ঘুনাক্ষরেও ধারণাতে ছিল না মুক্তার যদি থাকতো তাহলে এসব কখনই হতে দিতো না সে। শশী আকুতি স্বরে বলল…

‘ সবার তো আমাকে পছন্দ রিদ।

শশীর কথায় রিদ বিরক্তি প্রকাশ করে বলল…

‘ তাহলে সেটা তাদেরকে গিয়ে বল আমার কাছে কি? আমিতো তোকে পছন্দ করি নাই? আমাকে পেইন কেন দিচ্ছিস? যাহ সর!

থমথমে পরিস্থিতিতে সকলেই স্তব্ধ, হতবাক হয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে। হেনা খান বিস্ফোরণে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল শক্ত হয়ে। রিদ হঠাৎ করে এমন কিছু বলবে সেটা অবিশ্বাস্য ছিল সবার কাছে। রিদ বিয়ে করতে না করলে সেটা হয়তো স্বাভাবিক ছিল কিন্তু শশীর জায়গায় মায়াকে পাত্রী হিসেবে টেনে আনাটা ছিল সবচেয়ে বড় চমক সবার জন্য। যে আরাফ খান সকাল পযন্ত রিদকে অবিশ্বাস করছিল রিদ একা বিয়ে করতে পারবে না বলে সেই আরাফ খানও এই মূহুর্তে অবিশ্বাস্যে থমকে দাঁড়িয়ে। এরই মাঝে মেয়ের কান্না দেখে এগিয়ে আসলো শশীর মা সালম বেগম। তিনি শশীর কাঁধ জড়িয়ে রিদকে রাগান্বিত গলায় বলল….

‘ রিদ এবার তুমি বাড়াবাড়ি করছো। আমার মেয়ের সাথে এতো বছর প্রেম করে বিয়ের প্লবন দেখিয়ে এখন বিয়ের জন্য অন্য মেয়েকে পছন্দ করবে সেটাতো হবে না। আমরা কেউ সেটা মেনে নিব না। তোমার বিয়ে হলে শশীর সাথে হবে। এটা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। এখন তুমি বিয়ের থেকে পিছুপা হতে পারবে না।

‘ প্রথমত আপনি ঠিক করবেন না আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেটা। আমার মন, আমার মর্জি, আমি কাকে বিয়ে করবো, না করবো সেটা আমি ঠিক করবো নট ইউ। দ্বিতীয়ত্ব আপনার সস্তা মেয়েকে নিয়ে সাইড হোন। আই এম নট ইন্টারেস্টটেড!

‘ রিদ এবার কিন্তু তুমি বেয়াদবি করছো। আমি তোমার খালা হয়।

রিদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চেয়ে একহাতে মুঠোয় মায়ার একটা হাত চেপে অপর হাতটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে হেয়ালি ভঙ্গিতে বলল…

‘ দেখো খালা, বেয়াদবির জন্য সমাজে আমি এমনই বদনাম। নতুন করে আর কিছুই গায়ে লাগে না। তারপরও তোমাকে বলছি, আমাকে জোড়াজুড়ি তো আমার বাপ-মাও করে না সেক্ষেত্রে তুমি খালা হও, মানে মার বোন। তাই বলছি আমার থেকে দূরে থাকো। নয়তো আমি বেয়াদবি করতে বসলে তুমি কিন্তু পাড় পাবে না খালা।

রিদের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠার মতোন ফুসে উঠলো সালমা বেগম। রিদকে মায়ার হাত চেপে ধরতে দেখে উনার রাগে যেন ঘি পরলো। তিনি রাগে বশবতী হয়ে রিদের পিছনে মায়াকে দেখে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলল…

‘ এই মেয়ের সাথে কি চলে তোমার? ছোটলোক ঘরের মেয়েরা টাকা চিনে সেজন্য তোমার মতো বড়লোক ছেলেদেরকে ফাঁসাতে চাইছে। যেমন করে ফাহাদকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে ওর বোন। তুমি ভুল করছো রিদ। এসব মেয়েদের থেকে বেড়িয়ে আসো, এখনো সময় আছে।

সালমা বেগমের কথায় মূহুর্তে মায়া সকলের দৃষ্টির কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠলো। মূহুর্তে সকলে তাকাল রিদের পিছনে আশ্রয় নেওয়া মায়ার দিকে। মুক্তা রাগে কটকট করে উঠলো সালমা বেগমের কথায়। কিন্তু শশুর বাড়ির হওয়ায় দাঁত কামড়ে রাগ কন্ট্রোল করতে চাইল। তীব্র অপমানের কথা গুলো বেশ আত্ম-সম্মানের লেগেছে মুক্তার। সে পারছে না রাগে ট্রে-তে রাখা সবকিছু নাস্তা উল্টে ফেলে মায়াকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে। একঘর মানুষের সামনে রিদের ঐভাবে শশীর জায়গায় মায়াকে পছন্দ করাটা মোটেও ভালো লাগেনি মুক্তা। দ্বিতীয়ত্ব মায়া এখনো রিদের পাশে চুপ দাঁড়িয়ে আছে বলেই সালমা বেগম মুক্তার পরিবারকেও অকারণে টেনে এনে অপমান করছে। মায়া সালমা বেগমের অপমানে ফুপিয়ে কেঁদে উঠতেই রিদ দৃষ্টি ঘুরিয়ে মায়াকে দেখে আনারও তাকাল সালমা বেগমের দিকে। তপ্ত মেজাজে দু’হাত মুষ্টি বদ্ধ করে হেনা খানের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল রিদ…

‘ দাদী তোমার মেহমানদের সামলাও। নয়তো আমাকে সামলানো তোমার দায় হয়ে যাবে। আমার মোটেও পছন্দ না কেউ আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে, আমার সামনে, আমার বউকে অপমান করবে। সেই রাইট আমি কাউকে দেয়নি।

রিদের কথায় কেউ কিছু বলবে তার আগেই হেনা খান অবিশ্বাস্য গলায় রিদকে শুধিয়ে বলল…

‘ বউ মানে? কে বউ? মায়ার সাথে তোর সম্পর্ক আছে রিদ?

রিদের মেজাজ বরাবরই ক্ষেপ্ত হচ্ছে সালমা বেগমের কথায়। এরমাঝে রিদ বারবার মায়াকে নিজের বউ বলে দাবি করার পরও কেন সবাই রিদকে একই প্রশ্ন করছে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। সেতো শুরু থেকে বলছে মায়া তার বউ তাহলে কেন সবাই অবুঝের মতোন রিদের থেকে একই কথা শুনতে চাচ্ছে? রিদ ক্ষিপ্ত মেজাজ বলল…

‘ বাল একই কথা কতোবার বলবো? সি ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড, সি ইজ মাই ওয়াইফ। উই আর ম্যারেড।

রিদের কথায় উত্তাপ পরিবেশটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য হঠাৎ নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে গেল। ঘরভর্তি মানুষ শুধু একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। মায়া রিদের কথায় মূহুর্তে দু’হাতে রিদের একহাত আঁকড়ে ধরলো ভয়ে। হেনা খান এই মূহুর্তে কিছু বলার মতোন ভাষা পেল না। উনার শুধু মনে হলো এই মূহুর্তে পরিস্থিতি শান্ত করার দরকার নয়তো বিশাল ঝামেলা হতে পারে। হেনা খানের এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরাফও এগিয়ে আসল পরিস্থিতি সামলাতে। রিদ যদি মায়াকে পছন্দ করে থাকে তাহলে এই বিষয়ে উনারা পারিবারিক ভাবে পরে কথা বলে নিবে তারপরও এই মূহুর্তে অন্তত পরিস্থিতি সামলানোর দরকার। শশী -মায়া দুজনই কাঁদছে। সালমাও রেগে আছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো রিদ যদি এরথেকে বেশি রেগে যায় তাহলে ভয়ানক তান্ডব হবে বাসায়। হেনা খান, আরাফ খান এগিয়ে আসার মধ্যেই সালমা বেগম ক্ষোভে থাবা মেরে মায়াকে টেনে রিদ থেকে আলাদা করতে চেয়ে বলল….

‘ সবদোষ এই নষ্টা মেয়ের। বড়লোক ঘরের ছেলেদের মাথা চিবিয়ে খেতে পারে ভালো এরা। একবোন ফাহাদকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেও শান্তি হয়নি এদের। এখন ছোট বোনকে লেলিয়ে দিয়েছে বড় ভাইয়ের মাথা খেতে। এদের বাবা-মা ব্যবসা শুরু করছে মেয়েদের দিয়ে।

কথা গুলো বলতে বলতে মায়াকে রিদের পাশ থেকে টেনে নিজের কাছে নিতে চাইলে মূহুর্তে বাঁধা দেয় রিদ। এতক্ষণে একটা ছেলে হলে রিদ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো কিন্তু মেয়ে বলেই বেঁচে গেল সালমা বেগম। মায়াকে রিদের পাশ থেকে টেনে বের করতে চাইলে মুক্তা আতঙ্কিত ভঙ্গিতে এগিয়ে আসলো বোনকে বাঁচাতে। হাতে ছিল ট্রের ট্রলি। তাড়াহুড়ো সেটি রেখে আসতে ভুলে গেছে ওহ। দু’হাতে ট্রের ট্রলি ধাক্কা দিয়ে ড্রয়িংরুমে রেখে এগিয়ে গেল মায়াদের কাছে। যেখানে পূর্ব থেকেই সালমা বেগম মায়ার হাত আর, রিদ সালমা বেগমের হাত চেপে দাঁড়িয়ে। এরমাঝে হুট করে মুক্তা ঢুকে দুজনের হাত মায়ার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে শক্ত গলায় সবার উদ্দেশ্য বলল…

‘ প্লিজ আমার বোনকে নিয়ে কেউ তামাশা করবেন না। আমার বোন কারও বউ নয়। আর না আমরা কেউ আপনাদের বাড়ির ছেলের সঙ্গে বোনকে বিয়ে দিতে বসে আছি। মায়ার বিয়ে আমরা অলরেডি ঠিক করে রেখেছে এই মাসে বিয়ে হবে। তাই দয়া করে কেউ আমার বোনকে নোংরামিতে জড়াবেন না প্লিজ।

মুক্তার কথায় রিদের উত্তাপ মেজাজ আর খিঁচে গেল রাগে। শরীরে রক্ত টগবগ করলো ক্ষোভে। এই মূহুর্তে সবগুলো মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে এতক্ষণে রিদের হাত উঠে যেতো। র*ক্তার*ক্তি একধাপ পার করতো হিংস্রতায়। তারপরও রিদ কিছু করবে বা বলবে তার আগেই সালমা বেগমের পরপর মুক্তা ঢুকে গেল মাঝে। কিন্তু হিংস্রত্ব রিদ তখনো একহাতে মায়ার হাত শক্ত করে চেপে। সালমা বেগম মুক্তার কথা শুনে মায়ার হাত ছেড়ে দিতে দিতে মুক্তাকে অপমান করে বলল…

‘ তাহলে বলতে হবে, তোমরা ডিগ্রি করে রেখেছো ছেলেদের পটাতে। তোমার বোনের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও আমাদের বাড়ির ছেলের সাথে নোংরামিতে জড়িয়ে পড়েছে। এসব আপদ আর খান বাড়িতে ঢুকাবে না কখনো তুমি।

অতিরিক্ত রাগে রিদের শরীর কাঁপছে ক্ষণে ক্ষণে। হাতে রগফুলে কপালে শিরা পযন্ত দপদপ করছো কন্ট্রোল করতে না পেরে। মুক্তার নিজেরও রাগে কষ্টে চোখে পানি চলে আসে মায়াকে জড়িয়ে ওর পরিবারকে এতো অপমান করায়। মুক্তা রাগে আরও কিছু বলতে গিয়েও বলল না। দাঁত কামড়ে শুধু এখান থেকে মায়াকে নিয়ে চলে যেতে চাইল। অথচ মায়া তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সালমা বেগমের কথা শুনে। মায়ার হাতটাও লাল হয়ে উঠেছে রিদের হাতের মুঠোয় পিষে। মুক্তা সালমা বেগমকে এরিয়ে মায়ার অপর খালিহাতটা টেনে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়ে রাগান্বিত গলায় বলল…

‘ তুই আমার সাথে আয় মায়া।

বলে মুক্তা মায়ার হাতটা টেনে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাইলে পারলো না। হঠাৎ হাতে টান পরলো। বাঁধা পেয়ে মুক্তা রাগান্বিত অশ্রু ভেজা চোখে পিছনে তাকাতেই দেখল মায়ার একটা হাত তখনো রিদের মুঠোয় চেপে দাঁড়িয়ে যার জন্য সে বাঁধা পাচ্ছে। মায়া কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে ততক্ষণে কিন্তু রিদকে এই মূহুর্তে বলতে পারছে না হাতটা ছেড়ে দিতে কারণ রিদের রাগের ঠাহর মায়ার নিজের হাতে করতে পারছে। দ্বিতীয়ত্ব মায়া চাই এই পরিস্থিতিটা মায়া রিদের পাশে দাঁড়িয়েই ভালো মন্দ দুজন একত্রে ফেইস করুক। সেজন্য মায়া কাঁদতে কাঁদতে মুক্তাকে কোনো রকমে বলতে চাইল….

‘ আমি যাব না আপু। আমি…

মায়ার বাকি কথা শেষ করার আগেই ঠাস করে শব্দ হলো। ড্রয়িংরুম ভরপুর মেহমানদের সামনে মুক্তা মায়াকে ঠাস করে থাপ্পড় মারতেই মায়া তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়লো রিদের পায়ে উপর। একহাত তখনো রিদ শক্ত করে চেপে। মায়ার অপর হাতে রিদের পা আঁকড়ে ফ্লোরে বসে তীব্র অপমানে হু হু শব্দ করে কেঁদে উঠলো তক্ষুনি রিদের পা জড়িয়ে। অথচ রিদ জায়গায় থেকে নড়লো না আর না মায়াকে টেনে তুললো। হেনা খান, জুই, ও ফাহাদের মা আহাজারি করে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে আসলো মায়াকে ধরতে। রাগান্বিত রিদের রাগে ষোলো কলা পূরণ হলো মুক্তার থাপ্পড় মারার সঙ্গে সঙ্গে। হেনা খান আহাজারি করে মায়াকে ধরার আগেই দ্বিতীয়বারের মতোন ঠাস করে শব্দ হলো। এতে পুরো ঘর থমকে গেল শশীকে ফ্লোরে উপর লুটিয়ে পরতে দেখে। রিদের শক্তপোক্ত হাতে কঠিন থাপ্পড়ে শশীর মাথা ঘুরে উঠলো তক্ষুনি। ঝাপসা চোখে থ মেরে বসে রইল কয়েক সেকেন্ড। ঠোঁট দিয়ে তাজা গরম রক্ত গড়িয়ে পরতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো শশী। সালমা বেগম মেয়ের অবস্থা দেখে তৎক্ষনাৎ চিৎকার করে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো শশীকে। ততক্ষণে পারভিন শেখ আর হেনা খান থমকে দাঁড়িয়ে গেলেও জুই মায়াকে টেনে তুলে নিলো নিজের কাছে। সালমা বেগম বা অন্য কেউ রিদকে কিছু বলবে তার আগেই রিদের হিংস্রতা প্রকাশ পেল ভাংচুরে। রিদ রাগে হিতাহিত অজ্ঞ হয়ে তৎক্ষনাৎ লাথি মেরে উল্টে ফেললো মুক্তার রাখা ট্রে ট্রলিটি। তার পরমূহুর্তে দুহাত মুষ্টি বদ্ধ করে গলা ফাটিয়ে গর্জনের চিৎকারে ডাকল ফাহাদকে….

‘ ফাহাদ..ফাহাদ.. ফাহাদ..

রিদের চিৎকার উত্তাপে ঝংকার তুললো খান বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে। প্রতিটি জিনিস যেন রিদের চিৎকারের শব্দে কম্পিত হলো। উপস্থিত সবাই ভয়ার্ত মুখে থ মেরে দাঁড়িয়ে। ফাহাদ রিদের গর্জের চিৎকারে বাহির থেকে উত্তেজনায় দৌড়ে আসলো ড্রয়িংরুমে। ফাহাদের পিছন পিছন আয়ন,রাদিফ, আসিফসহ, নিহাল খানও দৌড়ে আসল উত্তেজনায়। ফাহাদ ড্রয়িংরুমে উপস্থিত মানুষের ভিড় দেখে ভয়ার্ত মুখে দৌড়ে গেল রিদের দিকে। কি হয়েছে জানতে চেয়ে বলতে চাইলল…

‘ কি হয়েছে ভাই? ডেকেছো…

ফাহাদের কথা শেষ করার আগেই রিদ বগলথাবা বসাল ফাহাদের শার্টের কলারে। দুহাতে ফাহাদের কলার চেপে রিদের মুখোমুখি টেনে হিংস্র প্রকাশ করে রাগে রি রি করে দাঁত পিষে বলল….

‘ তোর বউরে সামলা ফাহাদ। নয়তো আমাকে সামলানো তোর দায় হয়ে যাবে।

রিদের হিংস্রতে আয়ন, রাদিফ এগিয়ে আসল রিদকে বাঁধা দিতে। দুপাশে থেকে দুজন রিদকে আঁকড়ে ফাহাদকে ছাড়ানো চেষ্টা করে রাদিফ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল…

‘ ভাই! ভাই কি হয়েছে তোমার? প্লিজ শান্তি হও তুমি। বাবা এদিকে আসো তুমি। ভাইয়াকে বুঝাও।

নিহাল খান তখনো জায়গায় দাঁড়িয়ে। মূলত তিনি বুঝতে পারছেন এখানে কিছু একটা হয়েছে যার জন্য রিদ এতোটা হাইপার হয়ে গেছে। তিনি রিদকে না থামিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। পরিস্থিতি জানতে আরাফ খানে দিকে তাকালে তক্ষুনি শুনা গেল ফাহাদের ভয়ের জড়সড় কন্ঠ। রিদকে বলল…

‘ কি হয়েছে ভাই? আমাকে বলো। মুক্তা বেয়াদবি করেছে কোনো?

আয়ন রাদিফ দুজনই রিদ থেকে রাদিফকে আলাদা করলো। নয়তো দেখা গেল অকারণে রিদের রাগে শিকার হয়ে যাবে ফাহাদ। রিদ গর্জে ওঠে আবারও বলল…

‘ আমার সামনে দাঁড়িয়ে, আমার বউকে মায়ার সাহস তোর বউকে কে দিসে?

হেনা খান রিদকে শান্ত করতে বুঝানোর উদ্দেশ্যে ল বলল…

‘ রিদ ওরা দুজন বোন হয়। মুক্তা মায়াকে মারতে পারে। এত….

হেনা খানের কথায় শেষ করার আগেই রিদ আবারও গর্জে বলল…

‘ বোন হবে নিজের বাড়িতে। আমার বাড়িতে সে শুধুই আমার বউ, অন্য কারও বোন নয়। আমার সামনে আমার বউকে থাপ্পড় দেওয়া মানে সে থাপ্পড়টা আমার বউকে নয় আমাকে মেরেছে। আমি আমার বিয়ের জন্য কাউকে কৈফিয়ত দিতে আসিনি আর না সম্মতি নিতে চাইছিলাম। আমার বিয়ে নিয়ে কারও ইন্টারফেয়ারেন্স সহ্য করবো না আমি। এটাই লাস্টবার দাদী, এরপর কেউ আমার বউ কিংবা আমার সম্পর্কের দিকে আঙ্গুল তুললে আমি কাউকে ছাড় দিব না দাদী আর সেটা তুমি তোমার আত্মীয়দেরকেও বুঝাও। যদি বিষয়টা আমার বুঝাতে হয় তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে দাদী।

রিদের উত্তাপ রাগে রি রি করছে। নিহাল খান সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে রিদের উদ্দেশ্য গম্ভীর গলায় বলল…

‘ রিদ শান্ত হও। আমি দেখছি বিষয়টা। তুমি যাও।

পর মূহুর্তে নিহাল খান ফাহাদের মাকে উদ্দেশ্য করে একই গম্ভীর গলায় বলল….

‘ পারভিন তোর ছেলের বউকে নিয়ে ঘরে যাহ। মেয়েটা কাঁদছে, ওকে ফ্রেশ করা। সেঁজুতি তুমি রিদের বউকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। আম্মু তুমি সালমা আর ওর মেয়েকে নিয়ে ওদের ঘরে যাও। বাকিরা সবাই আপনারা যার যার ঘরে যান। এই বিষয়টা আপাতত এখানেই শেষ। আমি আমার ছেলের বিয়ে সম্পর্কে আরও আগে থেকেই জানতাম। আমাদের পারিবারিক ম্যাটার ছিল বলে সবার সামনে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনি, কিন্তু এরমানে এই না যে আপনারা আমার ছেলে বা ছেলের বউয়ের দিকে আঙ্গুল তুলবেন। সেই রাইট আমি কাউকে দেয়নি। আমার ছেলের বউ এই খান বাড়ির ইজ্জত। আর আমাদের বাড়ির ইজ্জতে আঘাত হানলে আমি নিহাল খান অবশ্যই চুপ থাকবো না। আপনারা এখন যার যার রুমে যান প্লিজ…

নিহাল খানের কথায় সালমা বেগম কিছু বলতে চাইলে নিহাল খান হাত তুলে থামিয়ে দেন মূহুর্তে । এরমানে তিনি এই মূহুর্তে কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক নয়। ড্রয়িংরুমের সবাই যে যার যার রুমে দিকে যেতে লাগল তার আগেই রিদ রেগেমেগে খান বাড়ির ড্রয়িংরুম ত্যাগ করলো বাহিরের দিকে যেতে যেতে। রিদের পিছন পিছন আয়ন,রাদিফ, আসিফ দৌড়াল। ফাহাদ বোকার মতোন মুক্তার দিকে তাকিয়ে। মুক্তাকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে ততক্ষণে। মুক্তাকে নিয়ে ফাহাদের মা রুমের দিকে যেতে চাইলে ফাহাদও ওদের পিছন পিছন গেল। মূহুর্তে মাঝে পুরো ড্রয়িংরুম খালি হয়ে গেলে নিহাল খান ঘড়িতে সময়টা দেখে নিল এক পলক। সকাল ১০ঃ২৭। এগারোটা ভিতরে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকতে হবে উনার রিদকে নিয়ে। গম্ভীর নিহাল খান ভারি নিশ্বাস ফেলে তিনিও বাহির দিকে হাঁটল। গাড়িতে উঠতে উঠতে আসিফ কল দিয়ে বলল….

‘ রিদকে বলো এগারোটার ভিতরে সভায় উপস্থিত থাকতে আসিফ।

আসিফের তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো…
‘ জ্বি স্যার ভাই আসবেন।
‘ ওকে!

#চলিত….