রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-৫১+৫২

0
1

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৫১
সন্ধ্যা সাতটা সতেরো। চাঁদ বিহীন আকাশটা অন্ধকার বটে। শহর জুড়ে কৃত্রিম আলোর মেলা। রাস্তার দু’ধারের হলুদ আলোর ল্যাম্পপোস্ট থেকে শুরু করে উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে শুধু যান্ত্রিক আলোয় চোখে পড়ছে মায়ার। সাততলা ভবনের তৃতীয় ফ্লোরে দাঁড়িয়ে সে। খোলা ব্যালকনি জুড়ে মুক্ত হাওয়ার আভাস। যান্ত্রিক শহরে টিংটং শব্দ তুলে পারাপার হচ্ছে হুট তুলা রিক্সা গুলো। অল্প সল্প শীতের আভাসে গায়ের ওড়নাটা টেনে চাদরে মতোন জড়াল মায়া। হাতে মায়াদের পারিবারিক ফোন। অথচ দৃষ্টি অদূরে রাস্তায়। মন খারাপের মায়ার উদাসীনতা ওর চেহারায় দৃশ্যমান। দুপুরে রিদের সঙ্গে মুরাদপুরের এই ফ্ল্যাটে উঠেছিল মায়া। তখন থেকে এখন অবধি এই ফ্ল্যাটেই আছে সে। মায়াকে নিজের ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে যায় রিদ নির্বাচনের কাজে। বলেছিল জলদি ফেরবে কিন্তু এখনো অবধি লাপাত্তা সে। কোথায় আছে মায়া জানে না। তবে মায়ার তদারকি জন্য একজন বয়স্ক মহিলা আছে এই ফ্ল্যাটে। উনার নাম সম্ভব স্বপনা আপা। মায়া শুনেছিল রাহাতকে এই নামে ডাকতে মহিলাটিকে। বর্তমানে তিনি রান্না করছেন হয়তো। আর মায়া রিদের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার আকাশের লুকায়িত তাঁরার সন্ধানে করছে। জুই মায়া দুজনের হাতে যে ফোনটা আরিফ দিয়েছিল সেটা বর্তমানে মায়ার হাতে আছে বলেই জুইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না মায়া। আর না নিজ বাড়ির খবর পাচ্ছে কোথাও থেকে। মায়ার মন ভিষণ ছটফট করছে বাড়ির খবর জানতে। মায়া বিয়ের খবরটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে সবার কানে পৌঁছে গেছে? মুক্তা নিশ্চয়ই জানিয়েছে সেটা। কিন্তু মায়া সবার সাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে? জুই ছাড়া আপাতত মায়া কারও সাথে যোগাযোগ করার সাহস করতে পারছে না। আরিফ তো পূর্ব থেকেই মায়ার উপর রাগান্বিত ছিল আর আজ থেকে মুক্তা সেইদলে যোগ হলো। আর এখন নিশ্চয়ই মায়ার পুরো পরিবারও মায়ার উপর ভিষণ রেগে আছে। যার জন্য মায়া চাইলেও সাহস করে কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। বাড়িতে কার কি পরিস্থিতি সেটাও জানতে পারছে না যার জন্য মায়ার মনটা ভিষণ ছটফটে ব্যাকুল হয়ে আছে জুইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। জুইতো মায়ার থেকে বেশি একটা দূরত্বে নয়, মাত্র দশমিনিটের রাস্তা। ওদের মুরাদপুরের বাসাতেই আছে জুই। আর মায়া আছে রিদের বাসায়। দুটো বাসার দূরত্ব বেশি না মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা। রিদের অনুপস্থিতিতে মায়া বেশ কয়েকবার চেয়েছিল নিজেদের বাসায় চলে যেতে কিন্তু রিদের ভয়ে যেতে পারিনি। তাছাড়া এই মূহুর্তে আরিফের সামনে বা কিভাবে দাঁড়াবে মায়া? সেই মুখ তো অনেক আগেই হারিয়েছিল ওহ। আজ আবার নতুন করে হারালো মায়ার জন্য মুক্তাকে সবার কাছে অপমানিত হতে দেখে। আজকে যাবতীয় ঘটনা নিশ্চয়ই আরিফের কানে গেছে। এখনতো মায়া আরও খারাপ হয়ে গেল আরিফের চোখে। বিষাক্ত মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় মায়ার মন বিষিয়ে উঠলো তিক্ততায়। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো গ্রিল চেপে। বাস্তবতা এতো কঠিন মায়ার জানা ছিল না। মায়ার না চাইতেও নিজের পরিবারের মানুষকে বারবার আঘাত করছে অজান্তে। মায়ার ফুঁপানো কান্নার মাঝেই হাতের ফোনটা ভোঁ ভোঁ শব্দ করে কেঁপে উঠলো। চমকে উঠার মতোন তাড়াহুড়ো গ্রিল থেকে মাথা তুলে ফোনের দিকে তাকাতে চোখে পড়লো স্কিনে থাকা আরিফের নাম্বারটির দিকে। আজ তিনমাস পর আরিফের সঙ্গে কথা হবে ভেবে মনটা যেমন খুশিতে নেচে উঠলো ঠিক তেমনই ভয়ার্ত হলো যদি কোনো খারাপ সংবাদ শুনতে পাই সে ভয়ে। মায়া এক মূহুর্তে জন্য মনে মনে দোয়া করলো যাতে ওর পরিবারের কারও কিছু না হোক। তাহলে মায়া নিজেকে কক্ষুনো ক্ষমা করতে পারবে না। আতঙ্কিত মায়া দু’হাতে মুঠোয় ফোন চাপল ভয়ে। কম্পিত হাতের কম্পন দৃঢ় হলো যখন প্রথমবার কল কাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতোন ফোনটা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠলো হলো তখন। মায়া ভয় দৃঢ়তা পৌঁছাল। দুঃসংবাদে আভাসে ভয়ে ভয়ে ফোন কানে তুলে কম্পিত স্বরে বলতে চাইল…

‘ হ্যালো ভাই!

মায়ার কথা শেষ করার আগেই জুই তাড়াহুড়ো অস্থির ভঙ্গিতে বলল….
‘ ভাই না আমি রিতু! জুই!

জুইয়ের গলায় যেন জান ফিরে পেল মায়া। প্রাণ ভরা নিশ্বাসে অস্থিরতায় বলল…

‘ জুই! কই তুই? তোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য জান বেড়িয়ে যাচ্ছি আমার। বাড়ির সবাই….

মায়া অস্থির কারণ বুঝতে পেরে জুই মায়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল…

‘ তুই বাড়ির জন্য টেনশন করিস না। আপাতত সব ঠিক আছে। এখনো বাড়িতে কিছু জানানো হয়নি। আরিফ ভাই বা মুক্তা আপু কেউ বাড়িতে এখনো জানাই নি তোর বিষয়টা।

জুইয়ের কথায় মায়া ভিষণ আশ্চর্য হলো। আজকের ঘটনার পর অন্তত মায়ার বিয়েটা ওর পরিবার থেকে লুকিয়ে থাকার কথা না। অন্তত মায়ার বড়ো বোন মুক্তা দ্বারা তো নই। মায়া জন্য সবাই কতো মুক্তাকে অপমান করলো অথচ মুক্তা এখনো মায়ার বিষয়ে চুপ? তাছাড়া আজকের ঘটনার পর মায়া আশা করিনি ওর বড়ো ভাই-বোন চুপ থাকবে এই বিষয়ে। মায়া ভারি আশ্চর্যের নেয় চোখের পানি মুছতে মুছতে অবিশ্বাস্য গলায় ফের জুইকে শুধিয়ে বলল…

‘ আরিফ ভাই, মুক্তা আপু কেউ বাড়িতে কিছু বলেনি?
‘ না।
‘ সত্যি?
‘ মিথ্যা বলবো কেন?
‘ আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না জুই।

‘ বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে আজব? যা সত্যি তাইতো বললাম। তবে মুক্তা আপু অনেক কান্না করছিল। আরিফ ভাইকে সবটা জানায় তোর বিষয়ে। আপু আমাদের বাড়িতেও তোর বিয়েটা জানাতে চেয়েছিল কিন্তু আরিফ ভাই নাকি না করেছেন এখন কোনো কিছু জানাতে।

মায়া দ্বিতীয়বারের মতোন আশ্চর্য হলো জুইয়ের কথায়। আরিফ পরিবারের কাউকে জানাতে নিষেধ কেন করছে সেটা বুঝতে না পেরে মায়া বলল…

‘ কেন?

মায়ার কথায় জুই দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে রয়েসয়ে বলল…

‘ নিহাল আঙ্কেল নাকি আমাদের বাড়িতে যেতে চেয়েছেন বড় চাচার(মায়ার বাবা) সাথে কথা বলতে। কিন্তু আরিফ ভাই নাকি নিহাল আঙ্কেলের থেকে দুইদিন সময় চেয়েছেন। তোর বিয়ের খবরটা এখনো বাড়িতে জানানো হয়নি তারপর চেয়ারম্যান বাড়ির সঙ্গে তোর বিয়েটাও পুরোপুরি ভাঙ্গেনি। সেজন্য আরিফ ভাই চাচ্ছেন আগে আমাদের বাড়িতে তোর বিয়ের ব্যাপারটা সবাইকে জানাবে তারপর সকলকে বুঝিয়ে-বাঝিয়ে প্রস্তুত করে নিহাল আঙ্কেলকে আমাদের বাড়িতে নিতে। কারণ নিহাল আঙ্কেল সম্মানিত মানুষ, উনার সাথে কোনো রকম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি হোক সেটা ভাই চাইনা বলে এজন্য মূলত মুক্তা আপুকেও বলেছেন আপাতত চুপ থাকতে। অন্তত আরিফ ভাই বাড়িতে না যাওয়া অবধি। তুই তো জানিস আব্বা চাচা কেমন জেদ্দি মানুষ।

জুইয়ের কথায় মায়া চুপ করে গেল। মায়ার সাথে আরিফ কথা বলে না আজ বিগত তিনমাস। মন কষাকষির পর্বটা এখনো চলিত ভাই বোনের মাঝে। অথচ আরিফ সবদা ভাইয়ের দায়িত্ব থেকে একবিন্দুও পিছুপা হয়নি। বড় ভাইয়ের মতোন মায়াকে সকল বিপদ থেকে আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করে। গুমোট মায়া গ্রিলের পাশ থেকে সরে বসলো সোফায়। খোলা বারান্দার জয়েন্ট সোফায় বসতে বসতে আরিফের খোঁজ নিয়ে বলল…

‘আরিফ ভাই কই জুঁই?

‘ ভাই নিচে গেছে খাবার আনতে। সেই ফাঁকে তোকে আমি ভাইয়ের নাম্বার থেকে কল দিলাম। তুই কি এখন থেকে রিদ ভাইয়ের সঙ্গেই থাকবি রিতু?

মায়া হতাশতায় ডুবে বলল…

‘ জানি না। উনি তো বলছেন আমাকে নাকি সঙ্গে নিয়ে যাবেন ঢাকা। এখানে আর রাখবে না। কলেজও নাকি ট্রান্সফার করাবে ঢাকায়।

মায়ার কথায় জুই অস্বস্তি বোধ করলো। দুজন হুটহাট একত্রে থাকার সিদ্ধান্তটা কেমন জানি লাগল জুইয়ের। মায়াকে হুট করে রিদ নিয়ে যাবে ভাবিনি জুই। তাছাড়া মায়াও নিজ পরিবারের পারমিশন ছাড়া এইভাবে রিদের সঙ্গে চলে যাবে সেটাও ভাবিনি ওহ। অন্তত ওদের পরিবারের ঝামেলা মিটে গেলে তখন দুই পরিবারের সম্মতিতে একত্রে বসবাস করলে বিষয়টা আরও সুন্দর দেখাত এমনটা জুইয়ের ধারণা। কিন্তু মনের অস্বস্তিতে জুই মায়াকে বিষয়টা খোলাসা করে বললো না। বরং ভিতরে চেপে গেল। মায়া জুইকে চুপ করে যেতে দেখে ফের বলল…

‘ আরিফ ভাই আমার খোঁজ করেছিল জুই?
‘ না।

জুইয়ের কথায় মায়া আবারও অবিশ্বাস্যের নেয় শুধিয়ে বলল….
‘ ভাইয়া জানতে চাইনি আমি কোথায় আছি?

জুই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল…
‘ না! ভাইয়া মনে হয় জানে তুই রিদ ভাইয়ার সঙ্গে আছিস সেটা।

জুইয়ের কথার মায়া উত্তর করতে পারলো না। তাই ছোট শব্দে বলল…
‘ ওহ!

‘ আচ্ছা শুন! রিতু? কাল কলেজে যাবি না? আমার তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।

মায়া তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো তক্ষুনি..
‘ যাব যাব।

জুই খানিকটা সন্দেহ নিয়ে বলল…
‘ রিদ ভাইয়া দিবে?
‘ উনাকে বলেই যাব।
‘ আচ্ছা আয়। আমি অপেক্ষা করবো কলেজে।

জুইয়ের কথাটা মায়া তাড়াহুড়োয় শুধিয়ে বলল…

‘ তুই কলেজে না আমার কাছে আসবি জুই। আমার এখানে কোনো জামা-কাপড় নেই। তুই সকালে আসার সময় আমার জন্য কাপড় আর বই গুলো নিয়ে আসবি কেমন? আমি অপেক্ষা করবো।

‘ আচ্ছা আসব। এখন রাখি বাই।
‘ আচ্ছা।

টুট টুট শব্দে কল কেটে যেতেই মায়া কান থেকে ফোন নামিয়ে কোলের উপর রাখল। স্বাভাবিক নেয় শ্বাসরুদ্ধের গুমোট নিশ্বাসটা যেন স্বস্তিতে ছাড়লো। প্রথমে বাড়ির কথা ভেবে মনটা যেমন অস্থির ব্যাকুল হচ্ছিল সেটা এখন আর নেই। অনেকটাই স্বস্তির হালকা হলো জুইয়ের সাথে কথা বলে। মায়া অন্ধকার খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির আর ভালো লাগা খোঁজে পেল। কয়েক পল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে অচিরে ভাবনায় হঠাৎ করে রাফার খেয়াল আসলো। মায়ার স্বাভাবিক মুখটা রাগের প্রকাশ পেল। চট করে কোলের ফোনটা উঠিয়ে কন্টাক্ট নাম্বারে রাফার খোঁজ করলো। খোজাখুজি করে রাফার নাম্বার পেয়ে কল মিলানোর আগেই কেউ বলল…

‘ কি ম্যাডাম? কি করেন?

মায়া চমকে উঠার মতোন তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল পাশে। বারান্দার দরজায় রিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাড়হুড়ো রাফার কল কেটে ফোন লুকালো পিছনে।

‘ আমি কিছু দেখিনা, দেখিনা।

মায়ার কথায় রিদ কপাল কুঁচকাল। দরজার সামনে থেকে মায়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল…

‘ কি দেখবেন? আমি বললাম কি করেন আর আপনি সোজা দেখাদেখিতে চলে গেলেন? কি ব্যাপার মুডে আছেন মনে হয়?

নিজের কথায় মায়া নিজেই ফেঁসে গেল। হঠাৎ রিদের উপস্থিত ছিল ওর কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। সেজন্য মায়া রিদকে দেখে সেই দুপুরের কথা মনে করে ভুল উত্তর করে ফেললো। মায়া নিজের কথা শুধাতে চেয়ে মিনমিন করে বলল…

‘ আসলে আমি ভুলে কিছু দেখিনা বলে ফেলেছি।

‘ তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি মুডে নেই?

মায়া অবুঝের নেয় মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিতেই রিদ আবছা আলো মায়ার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। গায়ে তার এখনো সকালের পোষাকটা জড়িয়ে। ব্যস্ততা এমন যে দুই মিনিটের স্বস্তির নেই। তারপরও রিদ মায়ার টানে বাসায় ফিরল শতকাজ ফেলে। দুজন একত্রে কিছুটা সময় কাটবে বলে। নিচে আসিফসহ আরও বেশকিছু ছেলেপেলে বসে অফিসে। রিদ হাতের ঘড়িটা খোলে সোফার সামনে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল…

‘ সমস্যা নেই ম্যাডাম, আমি আপনার মুড চালু করতেই আসলাম। আমার উপর ছেড়ে দিন আপনার মুড।

রিদের কথায় মায়া সিটিয়ে গেল। দুপুরে কথা মনে করেই ভয়ার্তও হলো। রিদ হাতের ফোনটা একই ভাবে ঘড়ির পাশে রাখতে রাখতে পুনরায় বলল…

‘ ফোনটা দাও।

মায়া রিদের কথায় জড়সড় হয়ে পিছনে লুকিয়ে রাখা ফোনটা বের করে দিল রিদকে। রিদ আনলক করা ফোনের গ্যালারিতে না গিয়ে সোজা ঢুকল গুগল ওয়েবসাইটে। গুগল সার্চ হিস্ট্রি স্ক্রল করতেই দেখতে পেল অসংখ্য বাংলিশ লেখা সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু বাংলা টাইপিংও আছে সেখানে। রিদ সচারাচর বাংলা পড়তে পারে না। জড়তা কাজ করে বাংলা পড়তে। তার পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবটাই ছিল বাহিরে যার জন্য বলতে গেলে তার বাংলা নিয়ে পড়াশোনা হয়নি তেমন। তবে তার বাংলিশ পড়তে সমস্যা হয়না। যার জন্য গুগল সার্চ হিস্ট্রিতে থাকা মায়ার যাবতীয় বাংলিশ লেখা পড়তে রিদের কপাল কুঁচকে আসে তীক্ষ্ণতায়। কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত লেখা সব। জামাইকে কিভাবে পটাতে হয় তার পদ্ধতি কি কি? জামাইর রাগ কিভাবে ভাঙ্গতে হয় তার পদ্ধতি? জামাইকে বউয়ের ভালোবাসায় পাগল বানানোর পদ্ধতি কি কি? জামাইর মন পাওয়ার পদ্ধতি কি? এসব লিখে লিখে পুরো গুগল সার্চ হিস্ট্রি ভরপুর। রিদের জানা ছিল না এত সকল পদ্ধতির মাধ্যম যে গুগল বহন করে থাকে। জানলে অবশ্যই রিদ নিজের বউয়ের ব্রেনও গুগলে খোঁজ করতো। রিদ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের ফোনটা দেখিয়ে বলল…

‘ এসব কি? কি লেখেছো এসব? গুগল জামাইকে বউয়ের ভালোবাসায় পাগল বানানোর পদ্ধতি কি কি বলো? জামাইর মন পাওয়ার পদ্ধতি কি কি বলো? তারপর জামাই….

রিদের বাকি কথা শেষ করার আগেই মায়া চেঁচিয়ে উঠলো তক্ষুনি। লাফিয়ে উঠে রিদ থেকে ফোন কেঁড়ে নিতে চেয়ে উত্তেজনায় বলল….

‘ এই আমার ফোন দিন! ফোন দিন বলছি। বাজে লোক মানুষের ফোন দেখেন কেন? ফোন দিন।

মায়া রিদ থেকে ফোন কেঁড়ে নিতে চাইলে রিদ হাতটা উপরে তুলে নিলো। ছোট্ট মায়া রিদের নাগাল না পেয়ে তৎক্ষনাৎ লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল সোফায়। রিদের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করতেই রিদ নিজের একহাত থেকে অপর হাতে ফোন সরাতে সরাতে বলল…

‘ এসব করে বেড়াও তুমি ফোনে?

মায়া একই ভাবে রিদের থেকে নিজের ফোনটা নিতে চেয়ে জোড়াজুড়ি করে বলল…

‘ আমি যা খুশি তাই করবো তাতে আপনার কি? আমার ফোন দিন। দিন বলছি।

‘ আমার বউ! আমারই তো সব। তাই আমার দেখার দরকার আছে না? আমার বউ আরও কি কি সন্ধান করে বেড়ায় গুগলে?

রিদর কথায় মায়া আরও অধৈর্য্যের নেয় হয়ে উঠে বলল…
‘ এই না না প্লিজ। আর দেখার দরকার নেই প্লিজ প্লিজ। আমার ফোন দিন নাহহ প্লিজ ।

রিদের কাছে ধরা পরে যাবার ভয়ে মায়া ছটফট বাড়ল। বিষয়টা বুঝতে পেরেই রিদ দুষ্টু হাসলো। বউকে হেনস্ত করতে তার দারুণ লাগছে। রিদ একহাতে মায়াকে বাঁধা দিয়ে অপর হাতটা উপরে তুলে ক্লিক করলো মায়ার সার্চ করা হিস্ট্রিতে ‘ জামাইকে বউয়ের ভালোবাসায় পাগল বানানোর পদ্ধতি কি কি, লেখাটিতে ক্লিক করতেই সঙ্গে সঙ্গে রিদকে সাজেস্ট করলো বাংলা লেখার সঙ্গে আরও কিছু রোমান্টিক হেলদি ভিডিও। সবগুলো সাংসারিক ব্লগ ভিডিও টাইপের ছিল। তাতে খারাপ কিছু নেই। তবে রিদ যেহেতু বাংলায় দূর্বল সেহেতু সে বাংলা লেখাটা স্কিপ করে ইংলিশে চোখ বুলিয়ে ক্লিক করলো একদম নিচে থাকা একটা ভিডিও ক্লিপে। বিশ সেকেন্ডের ওষ্ঠমিলের ভিডিওতে ক্লিক করেই রিদ মায়ার চোখের সামনে ধরে বলল…

‘ চলো কয়েক বার ট্রাই করি।

রিদের হাতের ভিডিও প্লে দেখেই মায়া লজ্জা সিটিয়ে গেল। রিদ থেকে ফোন না নিয়ে বরং পালাতে চাইল রিদের মতিগতি বুঝে। রিদকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরাতে চেয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলল…

‘ ছিঃ! কতো খারাপ আপনি? দূরে সরুন। সরুন।

মায়ার কথায় রিদ কপাল কুঁচকে বলল…

‘ আপনি লিংক পাঠাতে পারেন, বসে বসে ভিডিও দেখতে পারেন আর আমি প্রাক্টিক্যালি দেখাতে চাইলেই দোষ? মজা যখন নিচ্ছেন তখন আমার থেকে নিলে দোষ কি? আমি পুরা ফিল দিব আপনাকে। ট্রাই করেই তো দেখুন। একবার ভালো না হলে দ্বিতীয়বা ট্রাই করুন। দ্বিতীয়বার না হলে তৃতীয় বার। আমিতো বারবার রিপিট করতে ইচ্ছুক।

রিদের লাগামহীন কথায় মায়া লজ্জা আর ভয়ে চুপ করে গেল মূহুর্তে। রিদের থেকে পালাতে চেয়ে লাফিয়ে সোফা থেকে নামতে নামতে বলল…

‘ আমি বাড়িতে যাব।

মায়া দৌড়ে পালাতে চাইলে রিদ তৎক্ষনাৎ পিছনে থেকে মায়া পেট পেঁচিয়ে ধরতে ধরতে বলল…

‘ আমি আসলাম আপনি চলে যাবেন সেটা কিভাবে হয় ম্যাডাম। আগে লেনদেনটা শেষ করি। তারপর যাইয়েন।

বলতে বলতে রিদ দু’হাতে মায়ার পেট পেঁচিয়ে নিজের কাছে টানল। মায়া রিদ থেকে বাঁচতে চেয়ে লাফালাফি করতে গিয়ে উল্টো বাঁধা পরলো রিদের হাতে। শক্তপোক্ত রিদের সঙ্গে শক্তিতে পেরে উঠতে পারলো না। বরং রিদ মায়াকে দুহাতে পেঁচিয়ে সোফায় চেপে ধরলো বক্ষতলে। মূহুর্তে মাঝে রিদের একহাতে বন্দী হলো মায়ার দুহাত। অপর হাতে মায়ার গায়ের ওড়নাটা টেনে নিচে ফেলতেই মায়া ছটফট করলো রিদের থেকে ছাড়া পেতে। অধৈর্য্যের নেয় বলল…

‘ প্লিজ প্লিজ আমাকে ছাড়ুন! ছাড়ুন!

মায়া দুহাত মাথা উপর আড়াআড়ি ভাবে আঁটকে রিদের একহাতে। রিদ সেই হাতে চাপ দিয়ে ঝুঁকে পড়লো মায়ার উপর। অপর হাতে মায়ার গাল চেপে ঠোঁট দু’টো উঁচিয়ে ধরে বলল…

‘ সরি বউ! মাত্র ধরলাম। আর এক্ষুনি ছেড়ে দিলে বিষয়টা পুরুষত্বে চলে আসবে আমার।

বলতে বলতে রিদ মায়ার ওষ্ঠে মন্ত হলো। পাঁচ কি দশ সেকেন্ড যেতেই রিদের রোমাঞ্চকরের বাঁধা দিয়ে উচ্চো স্বরে ফোনের রিংটোন ভেজে উঠলো তক্ষুনি । মন্ত পরিবেশ মূহুর্তে বিরক্তকর হয়ে উঠলো। তিরতির মেজাজে রিদ মায়ার ঠোঁট ছেড়ে তাকাল টেবিলের উপর থাকা ফোনটির দিকে। স্ক্রিনে আসিফের নামটি দেখতেই ক্ষিপ্ত মেজাজ আরও ক্ষিপ্ত হলো। এমন একটা সময়ে রিদের মোটেও পছন্দ হয়নি কেউ ওকে ডিস্টার্ব করুক। রিদ ঐ অবস্থায় হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়েই রিসিভ করে কানে ধরল। তিরতির মেজাজে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল….

‘ হারামির বাচ্চা আর সময় পেলিনা কল দেওয়ার?

রিদের কথায় আসিফ তাড়াহুড়ো বলল…

‘ ভাই! জসিমের লোক আমাদের দু’টো ছেলেকে মেরে রাস্তা ফেলে গেছে মাত্র। ছেলে দুটোকে হসপিটাল পাঠাচ্ছি। আপনি যদি একটু আসতেন তাহলে ভালো হতো। একটা চিঠি পাঠিয়েছে আপনার আব্বা নামে। চিঠিতে লেখা ওরা নাকি খান বাড়ির র’ক্ত চাই।

জসিম নামক উটকো ঝামেলা নামটা শুনতেই রিদ বিরক্ত হয়। দুইদিন পরপর একই কাজ করে জসিম নামক লোকটা। রাজনৈতিক দন্ড কারণের রিদের বাবা বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময়। তবে এতোদিন ছোটখাটো ঝামেলা করলেও আজকাল বড়বড় ঝামেলা করতে চাচ্ছে সে। হয়তো সামনে ইলেকশন বলে রিদের বাবার সম্মান নষ্ট করতে চাইতে জনগণে কাছে। মূলত এজন্য রিদের রাজনৈতিক করা পছন্দ না। নেতাদের নামে সামান্য কিছু শুনলে ভোট চলে যায় অন্যদিকে। পা চেটে দুইদিনের পদ নিতে ইচ্ছুক নয় সে। তার যা দরকার আপোষে না পেলে জোড় করে আদায় করার ক্ষমতা রিদ খানের আছে বলেই সে প্রথমেই চেয়েছিল জসিম নামক লোকটাকে ঠিকানায় লাগাতে কিন্তু নিজের বাবার মহানতার কারণে পারছে না। আর এতে অতিষ্ঠ রিদ। বিরুদ্ধি দলের প্রতি উদারতা দেখানোর কারণ সে বুঝে না। এই জসিমের ছেলেই তো ফাহাদের গায়ে হলুদের রাতে রাদিফের উপর হামলা করেছিল, ভাগ্য সহায় থাকায় সে যাত্রায় রাদিফ বেঁচে যায়। কিন্তু রিদও জসিমের ছেলেকে ছেড়ে দেয়নি। দু’পা কেটে এখনো পঙ্গু হাসপাতালে ফেলে রেখেছে সেজন্য হয়তো জসিম লোকটা ছেলের পঙ্গু হওয়ার প্রতিশোধে রিদের ছেলেপেলেদের আঘাত করছে। তবে বিষয়টা এবার বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে রিদের কাছে। এবার জসিমকে ঠিকানা না লাগালেই নয়। বিরুক্ততে রিদ আসিফকে কিছু বলবে তার আগেই বেখেয়ালি দৃষ্টি পড়লো নিজের বক্ষতলে শায়িত মায়ার দিকে। রিদের কুঁচকানো কপালের ভাঁজ মূহুর্তে সোজা হলো। দৃষ্টি ঘুরাল বউয়ের নিষ্পাপ মুখে। রিদ হাতের ফোনটার আলো মায়ার মুখে ধরলো। মূহুর্তে চোখে পড়লো মায়া ঘাড় বেঁকে ঘনঘন নিশ্বাসে ফেলছে এক পাশে মুখ করে। অপর পাশের গাল হতে গলা অবধি মায়ার ঠোঁটের ছড়ানোর লিপস্টিক লেপ্টে আছে। অতি ছোট দৃশ্যটা যেন রিদের বুকে আঘাত করলো। অজানা ভালো লাগায় তার ক্ষিপ্ত মেজাজ মূহুর্তে শীতল হলো। কিছু জায়গায় রিদ চাইলেও রাগ করতে পারে না। তার বউয়ের সামনে তো নয়ই। রিদ মায়ার উপর ঝুঁকে পড়তে পড়তে পুনরায় ফোনটা কানে নিয়ে আসিফকে শুধালো…

‘ এক কাজ কর আসিফ! তুই গাড়ি বের কর। আমি আসছি। আজ জসিমের বাসায় দাওয়াত খেতে যাব আমরা কি বলিস?

‘ জ্বি ভাই!

রিদ ফের শুধালো আসিফকে…

‘ আমি নিচে না আসা অবধি যেন তোর দ্বিতীয় কল না আসে আমার ফোনে মনে রাখিস।

‘ জ্বি ভাই।

আসিফ কল কেটে দিতেই রিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হাত ফোনটা আস্তে করে রাখল টেবিলে উপর। পুনরায় একই ভাবে মায়ার উপর ঝুঁকে গলায় ডুবে মায়াতে মন্ত হতে হতে বলল…

‘ সরি বউ! তোমার সাথে কাটানো সময় গুলো অনেক কঠিন মনে হচ্ছে! কাছে পেয়েও যেন হারিয়ে ফেলছি তোমায়। আমার হয়েই থেকো বউ। আমার তোমাকেই চাই একবার নয় বারংবার।

#চলিত…

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৫২
রাত ৩ঃ১৫। শেষ রাতের প্রহর ঘনিয়ে ভোর হতে চলল। সবেমাত্র বাসায় ঢুকলো রিদ। চারপাশে নিস্তব্ধ আর নিশ্চুপ পরিবেশ। এতো রাতে নিশ্চয়ই কেউ জেগে থাকবে না। রিদের পিছন পিছন আসিফও এসেছিল তবে সে নিচতলায় চলে গেল নিজের বরাদ্দকৃত রুমে ঘুমাতে। জসিমের ম্যাটার শেষ করতে করতে তাদের এতোটা সময় লেগেছে। আশা করা যায় আজকের পর জসিম বা তার লোকজন অন্তত রিদের বাবার পিছনে লাগবে না। ফ্ল্যাটের দরজা খোলে ভিতর থেকে লক করতে করতে আশেপাশে নিরব দৃষ্টিতে তাকাল রিদ। ড্রিম লাইটে আলোয় জনমানবহীন বসারঘরটা দেখে এগোল নিজের কক্ষের দিকে। চাপানো দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতে চোখের পরলো খালিঘরটাকে। বুঝতে পারলো মায়া রিদের ঘরে ঘুমাইনি। রিদ কক্ষের আলো জ্বালিয়ে এগোল সামনে, হাতের চাবিটা ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখেই মায়ার সন্ধান করলো পুনরায় কক্ষ হতে বেরুতে বেরুতে। পরপর দুই কক্ষে চেক করে তৃতীয় কক্ষ প্রবেশ করতেই মায়া দেখা মিলল সেখানে। এলোমেলো পা ফেলে বিছানায় শুয়ে মায়া। খোলা চুল বিছানা পেরিয়ে ফ্লোরে পরে। রিদ এগিয়ে এসেই ঘুমন্ত মায়াকে কোলে তুলে নিলো। অন্ধকারে সেভাবে এসেছিল ঠিক একই গতিতে পরপর পা ফেলে চলল নিজের কক্ষে। মায়াকে বিছানায় শুয়ে বেড সাইডের আলো জ্বালিয়ে মায়ার গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়াল রিদ। ঠান্ডায় উষ্ণ আরাম পেতেই মায়া কাত হয়ে শুলো গায়ের ব্ল্যাঙ্কেটটা টেনে। রিদ কোমর ঝুঁকে মায়ার এলোমেলো খোলা চুল গোছাতে লাগল। মেয়েলি কাজের ধারণা তার নেই। তাই মায়ার সকল চুল এলোমেলো অবস্থায় দলাবটা করল পেঁচিয়ে, বালিশের উপর রেখে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বেখেয়ালি চোখ পরলো ঘুমন্ত মায়ার নিষ্পাপ মুখে। অল্প আলোয় কেমন জ্বলমল করছে মায়ার রুপ। রিদ কপাল কুঁচকে হাঁটু গেঁড়ে বসল মায়ার সম্মুখে। পরপর কপালে ভাজ ফেলে দৃষ্টি ঘুরাল মায়ার মুখে। এই মুখটা তাঁকে ভিষণ ডিস্টার্ব করে। অথচ এই মুখটার দিকে তাকালে সবাই বলবে এই নারী কতো নিষ্পাপ। সে কাউকে জ্বালাতেই পারে না। অথচ রিদ জানে এই নারী কতোটা ভয়ংকর। রিদের মতোন শক্ত পার্সোনালিটির মানুষকেও এই নারী বাধ্য করতে পারে। এইতো আজ যেমন বাধ্য হয়ে বউয়ের সামনে ঝুঁকে আছে এর থেকে বড় প্রমাণ কি হতে পারে? রিদের কুঁচকানো কপালের ভাজ সোজা করলো। মায়া গালে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিতে চাইলে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পরলো মায়ার গালে। বরফের নেয় ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেতেই ঘুমন্ত মায়া নড়ে উঠল অল্প। রিদ নিজের ঠান্ডা হাতটা তবুও সরাল না মায়ার গাল থেকে বরং আক্রোশের নিজের কাজ করলো। মায়ার গালে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে নিজে ঠান্ডা হাতটা মায়ার গালে চেপে ধরলো। মায়া আবারও নড়ে উঠতে রিদের দৃষ্টিতে নমনীয়তা দেখা গেল। দীর্ঘ শ্বাস গোপন করে রিদ বলল…

‘ আজকেও তুমি বেঁচে গেল বউ। তবে দিন আমারও আসবে। এই একই বিছানা তোমার রাত জাগার সাক্ষী হবে।

কথাটা বলেই রিদ নিজের উষ্ণ ঠোঁট ছুঁয়াল মায়ার গালে। শব্দ করে চুমু খেল পরপর একই জায়গায়। মায়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে মায়ার নাকে নাক, কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিশ্চুপ রইল রিদ। ধীরে বলল….

‘ আমার তুমি কখন আপন হয়ে গেলে বউ। তোমায় ছাড়া কিছু চলে না আমার। শূন্য আমি।

মায়া নাকে নাক ঘষে রিদ উঠে দাঁড়াল। কবাট থেকে টি-শার্ট আর তাউজার নিয়ে ঢুকলো ওয়াশরুমে। ঘুমন্ত মায়া ঘুমিয়ে থাকল। টের পেল না রিদের উপস্থিতির খবরটা। আর না শুনতে পারলো রিদের না বলা ভালোবাসাময় কথা গুলো। রিদের অব্যক্ত ভালোবাসার কথা গুলো আবারও মায়ার কাছে অপ্রকাশিত থাকল। মায়ার শুনা হলো না স্বামীর বলা ভালোবাসার কথা গুলো। রিদ সময় নিয়ে গোসল করে একেবারে বেরুলো। রাতে খাবার সে বাহির থেকে খেয়ে এসেছিল বলে দ্বিতীয়বার খাওয়ার প্রয়োজন পরলো না। রিদ হাতের টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে কফি মেকারে নিজের জন্য কফি বানালো। হাতের কফিতে চুমুক দিতে দিতে পিছন ঘুরে তাকাল ঘুমন্ত বউয়ের দিকে। ভেজা চুল আর ধোঁয়া উড়ানো কফির মগ যেন নিস্তব্ধ পরিবেশ মোহিত করছে। রিদ পিছনের শিলটে কোমর ঠেকিয়ে বামহাত গুঁজাল পকেটে। ডানহাতের কফির মগে চুমুক বসাতে বসাতে ভাবল,বিয়ের পর এই প্রথম দুজন একত্রে বন্ধ দরজার ভিতরে রাত কাটাচ্ছে। অথচ তাঁর বউ ঘুমিয়ে। এই রাতটা সুন্দর হতে পারতো যদি তার বউ সঙ্গ দিতো। ঘুমন্ত বউকে জাগ্রত করতে আপাতত তার মন নারাজ। সেও খানিকটা ক্লান্ত। সারাদিন পর রাতটাও পার হলো ব্যস্ততায়। দুই ঘন্টা ঘুমিয়ে আবারও বেরুতে হবে বাবার সঙ্গে। এমন আরও দুইটা দিন যাবে এখানে ব্যস্ততার মধ্যে। ঢাকা ফিরে যা করার করতে হবে ওদের বিয়ের ব্যাপারে। তবে যত যায় কিছু হোকনা কেন কোনো ভাবে সে বউকে আর হাত ছাড়া করবে না। রিদ যেখানে থাকবে তার বউ সেখানেই থাকবে। এতে দুই পরিবারের কারও কথা সে শুনবে না আর। বউ তার ডিসিশনও তারই হবে। তার শশুর বাড়ির মানুষ মানুক বা না মানুক। বিয়ে করার সময় যখন সম্মতি নেওয়া হয়নি বিয়ের পর বউকে তার সাথে রাখার জন্য অন্য কারও সম্মতি অন্তত রিদ খানের প্রয়োজন নেই। দুই পরিবারের যদি কারও রিদের বিয়ের নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে সেটাও রিদ শুনতে যাবে না। তবে পরিবারের সবাই যদি তাদের বিয়ের
সামাজিক অনুষ্ঠানিকতা চাই তাহলে এতে রিদের কোনো সমস্যা নেই। করুক আয়োজন কিন্তু শর্ত একটাই তার বউ তার সাথেই থাকবে। খান বাড়ির বাহিরের রিদের বউ কোথাও যাবে না। এমনকি মায়ার নিজের বাড়িতেও না। মোট কথা পরিস্থিতি যায়ই হোক ভালো-মন্দ সকল পরিস্থিতিতে তার বউ তার পাশে চাই। অন্তত কারও জন্য সে তার বউকে নিজের থেকে দূরে করবে না। মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় রিদ পরপর কফির মগে চুমুক বসাল। অর্ধ খাওয়া মগটা কফি মেকারের পাশে রেখে বিছানার দিকে এগোল। মায়ার পাশে বিছানায় টানটান করে শুতে শুতে একই ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে ঢুকল রিদ। মায়া তখনো রিদের দিকে পিঠ করে কাত হয়ে শুয়ে। রিদ বিছানায় শুয়েই মায়ার বাহু চেপে নিজের কাছে টানল। উষ্ণতা আরাম পেয়ে মায়াও মিশে গেল রিদ বুকে মাঝে। রিদ দুজনের গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়াতে জড়াতে মায়ার মাথায় শব্দ করে চুমু খেল। হাত বাড়িয়ে বেড সাইডের লাইট অফ করে দিতেই মূহুর্তে অন্ধকার ছুঁয়ে গেল কক্ষ জুড়ে। মায়া ঘন নিশ্বাস আর রিদের আলিঙ্গনের উষ্ণতা বয়ান করছেন ভালোবাসা সুন্দর। যদি সঠিক মানুষের সাথে হয়।
~~
সকাল ৮ঃ৪৫। রিদের গাড়ি হতে মায়া জুই দুজনেই নামল কলেজের সম্মুখে। রিদ সঙ্গে আসেনি সে দুই ঘন্টা ঘুমিয়ে আবারও ছুটেছে নিবার্চনের কাজে। তাই মায়া আর জুইকে ড্রাইভারই নামিয়ে দিয়ে গেল রিদের অপর গাড়িতে। জুই খুব সকালেই মায়ার জন্য জামা-কাপড় আর বই নিয়ে উপস্থিত ছিল ফ্ল্যাটে। মায়াকে রিদের রুম থেকে বেরুতে দেখে খুব ইতস্ততায় জড়িয়ে ছিল জুই। তারপরও মায়াকে এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলো না সে। বরং স্বাভাবিক নেয় মায়াকে নিয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে আসল কলেজের উদ্দেশ্য। রিদের সঙ্গে জুইয়ের দেখা মিলেনি। তার আগেই রিদ বেড়িয়ে যাওয়াতে মায়াকেও সকালে লজ্জার সম্মুখীন হতে হয়নি। ইতস্ততার জুই মায়ার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে জড়তায় আস্তে করে বলল…

‘ গোসল করিস নি কেন?

মায়া কলেজে ঢুকেই আশেপাশে তাকিয়ে রাফার খোঁজ করলো। রাফার সাথে মায়ার কষাকষির হিসাব বাকি। রাফার জন্য মায়া কম বিপদে পড়েনি। বলতে গেলে সে এখনো বিপদের মুখে ঝুলে আছে শুধু মাত্র এই রাফার জন্য। আজ রাফাকে হাতের কাছে না পেলেই নয়। অন্যমনস্কর মায়া জুইয়ের মনোভাব বুঝতে পারলো না। আর না বুঝলো জুইয়ের বলা কথাটার মানে। বরং জুইয়ের কথায় মায়া মুখ কুঁচকে বলল…

‘ এতো সকালে গোসল কে করে? আমাকে দেখেছিস কখনো এতো সকালে গোসল করতে? যে আজ করব। শুধু উল্টাপাল্টা কথা বলিস।

মায়ার কথা জুইয়ের ইতস্ততা আরও বাড়ল। মায়াকে সরাসরি কিছু বলতে না পেরে আবারও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে মিনমিন করে বলল…

‘ এখন-তো আলাদা বিষয় তাই না?

মায়া জুইয়ের কথার অর্থ না বুঝে আশেপাশে রাফার খোঁজে অনুসন্ধানে চোখ ঘুরিয়ে বলল…

‘ কিসের আলাদা বিষয়? দেখ জুই! বিষয় যায় হোক না কেন এই শীতের সকালে গোসল করার মতোন পাবলিক আমি না বুঝেছিস?

‘ গোসল না করে বেড়িয়েছিস যে ভাই কিছু বলবে না?

‘ সে আবার কি বলবে? আমি কি তার মতো নাকি? যে কথায় কথায় গোসল করবো? সে-তো রাত নেই, দিন নেই যখন তখন গোসল করে। রাতের তিনটা বাজেও উঠে গোসল করা পাবলিক। এসব মানুষের সাথে আমার তুলনা দিলি কেমনে?

মায়ার কথায় জুইয়ের ইতস্ততা বাড়ল। জুই মায়াকে আসলে কিভাবে গোসলের বিষয়টা বুঝাবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়লো। মূলত জুই সকালে মায়াকে রিদের রুম হতে বেরুতে দেখেছিল বলে এই মূহুর্তে সে সংকোচে আছে। মায়াকে গোসল করতে না দেখে সেটা দ্বিগুণ হলো। জুই মায়াকে পুনরায় বুঝাতে চেয়ে বলল…

‘ তারপরও রিতু! সবাই বলে মেয়েদের বিয়ে হলে নাকি গোসল করতে হয়।

মায়া বিরক্ত হয়ে বলল…

‘ আমার বিয়ের আড়াই বছর হয়েছে, এতোদিন দেখেছিস আমাকে গোসল করতে যে আজ করবো?

‘ তারপরও…

জুইয়ের কথায় ফোঁড়নকেটে মায়া বিরক্তি নিয়ে বলল…

‘ তারপরও কি জুই? তুই আজকে আমার গোসল নিয়ে পরেছিস কেন? তুই কি আমাকে চিনিস না? আজ নতুন দেখছিস আমাকে সকালে গোসল না করতে? এমন ভাব করছিস আজকে সকালে গোসল করাটা যেন আমার জন্য ফরজ ছিল। তুইও তো গোসল করিস নি তাহলে আমাকে বলছিস কেন?

‘ আমি আর তুই কি এক?

‘ অবশ্যই এক। এখন আয়। রাফাকে খোঁজ আগে। এই মাইয়ার আজ খবর আছে। ওর জন্য আমি এখনো বিপদের মুখে ঝুলে আছি। চল চল।

কথা গুলো বলতে বলতে মায়া তাড়াহুড়োর পা চালাল কলেজ পথে। আশেপাশে তাকিয়ে রাফার খোঁজ করেও সন্ধান মিলল না। শ্রেয়া,নাদিয়াও কলেজে নেই। মায়ার কলেজর গেইট পেরিয়ে মাঠে যাবে তখনই পিছন থেকে কেউ মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরে উৎফুল্লতায় বলল…

‘ জানু এসেছিস! আই মিস ইউ।

রাফার কন্ঠ পেতেই মায়া ফুঁসে উঠল। কাঁধের উপর রাফার হাতটা খপ করে ধরে আক্রমণ করলো রাফার উপর। রাগে ফুঁসে উঠে সরাসরি মেসেজের কথাটা উল্লেখ্য করে মায়া চেতে
বলল…

‘ বেয়াদব মাইয়া মেসেজে কি পাঠিয়ে ছিলি উনাকে? আমার জামাই ছাড়া রাতে ঘুম আসে না, একা একা লাগে? সে বাসর বুঝে না? তার সিস্টেমে সমস্যা আছে এজন্য বউয়ের কাছে আসে না? কিসের লিংক পাঠিয়েছিলি তাঁকে? আবার বলেছিল লিংক দেখে দেখে শিখতে? ঐ কি শিখবে হ্যাঁ? কি শিখবে?

মায়া রাগান্বিত মুখটা দেখে রাফা দুষ্টু হাসল। মায়াকে আরও রাগিয়ে দিতে নিজের হাতটা টেনে পুনরায় মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল…

‘ আরে জানু চিল! দুইদিন দেখা হয়নি বলে আমার উপর তোর এতো ভালোবাসা বেড়ে গেল? মাইরি সাংঘাতিক তো তুই!

রাগান্বিত মায়া আরও ক্ষেপে গেল। রাফার হাতটা ঝটকা দিয়ে ফেলে দিতে দিতে বলল…

‘ অসভ্য মাইয়া! কিসব লিংক পাঠিয়েছিলি তুই উনাকে আগে সেটা বল? খবরদা কথা ঘুরাবি না।

রাগে মায়ার নাকের ফাটা ফুলে উঠছে। রাফা তাতে মজা পেয়ে বলল…

‘ বাপরে তোরা এতো এডভান্স জানু? সব লিংক দেখাও শেষ? তা কি কি শিখলি তোরা? কয়টা কাজে লাগালি বলতো শুনি? আউচ!

বাহুতে হাত চেপে রাফা মৃদু চেঁচাল। রাফার কথায় মায়া তৎক্ষনাৎ হাতের বোতলটায় আঘাত করলো রাফার বাহুতে। রাফার চেঁচানোতে নাক মুখ শক্ত করে মায়া আবারও বলল…

‘ অসভ্য মাইয়া।

মায়াকে অতিরিক্ত রেগে যেতে দেখে রাফা এগিয়ে আসল। জোর করে টেনে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরতে চাইলে মায়া রাফার হাতটা ঝটকা ফেলে দিতেই রাফা আবারও মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল….

‘ দেখ জানু আমি যে-টা করেছি সেটা তোর ভালোর জন্যই করেছি। যদি সেদিন আমি এসব না করতাম তাহলে রিদ ভাইয়া হয়তো আজও আসতো না তোর কাছে। তুই বল, বিগত তিনমাস ধরে ভাইয়ার রাগ ভাঙ্গাবোর চেষ্টা করছিস পেরেছিস বল? হয়তো আমার তরিকা ভুল ছিল কিন্তু উদ্দেশ্য সঠিক ছিল। তুই ভাইয়ার জন্য কষ্ট পাচ্ছিলি যেটা আমার ভালো লাগছিল না। এজন্য আমার উদ্দেশ্য ছিল যে করেই হোক ভাইয়া অন্তত তোর কাছে ফিরে আসুক। তারপর তোদের দুজনের রাগ-অভিমান এমনই চলে যাবে।

রাফার কথায় মায়া রাগ কমলো। খানিকটা নমনীয় হয়ে মায়া বলল…

‘ তাই বলে এসব পাঠাবি? অন্য কিছু করতি।

‘ তুই তো কতো কিছু করেছিস ভাইয়াকে ফিরাতে কাজ হয়েছে বল? তাছাড়া তখন এর থেকে ব্যাটার অপশন আমার মাথায় আসেনি। ঐ মূহুর্তে মনে হয়েছিল আমি যা করছি সেটাতেই ঠিক কাজ হবে। হয়েছেও তাই! ভাইয়া ঠিকই চলে আসলো তোর টান খেয়ে।

রাফার কথায় মায়া গলে গেল। আসলেই মায়া বিগত তিনমাসে অনেক কিছু করেছে রিদের অভিমান ভাঙ্গাতে যেটাতে মায়া ব্যর্থ হয়েছিল। তবে রাফা যা করেছে তাতে তরিকা ভুল হলেও সঠিক কাজ হয়েছে। রিদকে চট্টগ্রাম ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। তবে রিদের কাছে মায়ার ইজ্জত শেষ। রিদ ভাবছে মায়া এসব কিছুর লিংক পাঠিয়েছে তাঁকে। এজন্য-তো রিদ মায়ার সাথে অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যবহার করছে। আর এখন তো সোজা বলে দিয়েছে মায়া রিদকে ছাড়া অন্য কোথাও থাকতে পারবে না। বলতে গেলে রাফার কাছে মায়ার ভালোও হয়েছে আবার বিপদেও পরেছে। ভালো হয়েছে কারণ মায়া সবসময় রিদকে চোখের সামনে পাবে। আর বিপদের কথা মায়া কাউকে বলতে পারছে না যে মায়ার স্বামীর ওর সাথে কেমন কেমন কাজ করে বেড়াচ্ছে উফ!

এই পুরো বিষয়টাতে জুই বোকার মতোন দাঁড়িয়ে। মূলত মায়া রাগের কারণটা জুই বুঝতে পেরেই চুপ থাকল। রাফা যে মায়ার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করেছে তার ধারণা জুইয়ের হয়েছিল আগেই কিন্তু কাউকে কিছু বলল না। চঞ্চল রাফা মূহুর্তে মায়াকে নিজের দলে করে নিলো। মায়া কাঁধ জড়িয়ে গলাগলির ভাবও হয়ে গেল। জুই সেইদিকে তাকিয়ে বিনোদন নেওয়ার মাঝেই কোথা থেকে আয়ন উপস্থিত হলো সেখানে। গলা কেশে সকলে মনোযোগ ভাঙ্গতেই চমকে উঠার মতোন জুই পিছনে তাকাতে আয়ন এগিয়ে আসল মায়ার দিকে। জুইকে ইগনোর করে মায়া, রাফার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে আয়ন মায়াকে বলল….

‘ শুনলাম তোমার নাকি কলেজ ট্রান্সফার করাবে রিদ?

মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতে দিতে বলল…

‘ উনিতো তাই বলল।

আয়ন ভ্রুর উঁচিয়ে জানতে চাইল…
‘ তোমার তাতে অসম্মতি আছে?

মায়া মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিতেই আয়ন সুন্দর হেসে বলল…

‘ রিদ তোমাকে নিয়ে খুব সেনসিটিভ মায়া। তোমার ব্যাপারে কারও ইন্টারফেয়ারেন্স পছন্দ করে না। ওহ সেটা বলে সেটা শুনে যাও মায়া। তোমার উপর আসা সকল বিপদের মোকাবিলা রিদ একাই সামলে নিবে। তুমি শুধু ওর হয়ে থাকো বাকিটা ওহ সামলে নিবে।

আয়নের কথায় মায়া আবারও মাথা কাত করে সম্মতি দিতেই আয়ন অল্প হাসলো। ফের মায়ার উদ্দেশ্য বলল….

‘ তাহলে তোমরা ক্লাসে যাও মায়া। আমি জুইকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।

আয়নের কথায় জুই চুপ রইল। আয়ন বলেছিল জুইকে বিকালে দেখা করতে কিন্তু তার আগেই যে সকাল সকাল দেখা করতে আয়ন চলে আসবে তা বুঝেনি জুই। মায়া আয়নের কথায় পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাইল…

‘ কেন ভাইয়া?

‘ একটু কাজ আছে। যেটা জুইকে ছাড়া সম্পূর্ণ হবে না।

‘ ওহ ক্লাস করবে না?

‘ আজ করবে না।

‘ আচ্ছা।

মায়া আবারও ঘাড় কাত করে সম্মতিতে দিতে দিতে রাফাকে নিয়ে চলে যেতেই জুই ইতস্তত বোধ করলো আয়নের সম্মুখে দাঁড়িয়ে। আয়নের পিছনে ঘুরেই জুইয়ের ইতস্তত মুখটা দেখে কপাল কুঁচকে বলল…

‘ আপনার আবার কি হলো জুই? এমন করছেন কেন?

নত মস্তিষ্কের জুই মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিতে দিতে বলল…

‘ কিছু হয়নি।

আয়ন কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বাড়াতে চাইনি কারণ আশেপাশে অনেকেই এদিকটা তাকিয়ে ওদের দেখছে। আয়ন কলেজে গেইটের বাহিরের পথে হাঁটা দিতে দিতে জুইয়ের উদ্দেশ্য বলল….

‘ আমার সাথে আসুন জুই।

আয়নের পিছন পিছন জুইও হাঁটল। আয়নের গাড়ির সামনে আসতেই দরজা খোলে দাঁড়াল। জুই আঁড়চোখে আয়নের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। আয়ন পূর্ব থেকে গাড়ির দরজা খোলে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে দুজনের চোখাচোখি হলো। ইতস্তত জুই লজ্জায় দ্রুত গাড়িতে উঠে বসতেই আয়ন ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল। গাড়ি স্টার্ট করতে করতে আয়ন বলল…

‘ আপনার বান্ধবী নাদিয়া কোথায় জুই? আজ আসেনি?

আয়নের ছোট কথাটা যথেষ্ট ছিল জুইয়ের মুড সুইংয়ের জন্য। মূহুর্তে জুইয়ের সকল জড়তা বিরক্তিতে রুপান্তরিত হলো আয়নের এক কথায়। আয়ন জুইয়ের রাগের কারণটা বুঝতে পেরে আবারও একই সুরে বলল…

‘ আপনি আমার ভালোবাসার প্রস্তাবটা আপনার বান্ধবী নাদিয়াকে জানিয়েছিলেন জুই?

জুই বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে জেদ্দি গলায় বলল…

‘ জানি না। আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটা বলুন আগে?

আয়ন গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল…

‘ যেখানে নতুন সম্পর্ক গড়া হয় সেখানে।

আয়নের কথার মানে জুই বুঝতে না পেরে বলল…
‘ মানে?

‘ মানে আজকে আমার বিয়ে সেজন্য আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি সাক্ষী হতে।

জুই আয়নের কথায় সিরিয়াস নিলো না। অহেতুক মজা বলে উড়িয়ে দিতে দিতে বিরক্ত গলায় বলল…

‘ আপনার বিয়েতে আমার কি কাজ? আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন? আমি কোনো সাক্ষী টাক্ষী হতে পারবো না। আমাকে কলেজে দিয়ে আসুন। ক্লাস করবো।

জুইয়ের কথায় আয়ন আর হেয়ালি করলো না। বরং সিরিয়াস হয়ে বলল…

‘ কালকের কথা ভুলের যাচ্ছেন জুই? আপনি তো আমাকে কাল ওয়াদা করেছিলেন যে আমি যা চাইবো আপনি তাই আমাকে দিবেন তাহলে আজ কেন নিজের কথার ক্ষেলাপ হচ্ছে?

আয়নের কথায় জুই শান্ত হতে হতে বলল…

‘ আমি কথা ক্ষেলাপ করছি না। আমাদের রক্তেই নেই কথা দিয়ে না ক্ষেলাপ করাটা। আপনি বলুন আপনার কি চাই?

আয়ন সরাসরি আবদার করে বলল…

‘ আপনাকে চাই জুই।

জুই শকট হওয়ার মতোন করে বলল…
‘ মানে?

আয়ন জুইকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলল…

‘ আমি আপনাকে আজ বিয়ে করতে চাই। করবেন আমাকে বিয়ে?

‘ অসম্ভব!

জুইয়ের অসম্মতি আয়ন শান্ত কন্ঠে বলল…

‘ আমার হয়ে যান জুই। সারাজীবন আগলিয়ে রাখব আপনাকে। যদি আজ আমাকে ফিরিয়ে দেন তাহলে লাইফে আপনি কখনো তৃতীয় চান্স পাবেন না আমার জীবনে ফিরে আসার। আমি অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে দুজনের জন্য এই ডিসিশন নিয়েছি জুই। আমাকে খালি হাতে ফেরাবেন না। বাকিদের সামলে নেওয়ার দায়িত্ব আমার। আপনি শুধু হ্যাঁ বলুন।

আয়নের কথায় যেন জুইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতোন চাপ পরছে। খালি মস্তিষ্ক ধপধপ করছে আয়নের কথা গুলো। জুই কিছু বুঝে, না বুঝে শুধু আয়নকে না করে যাচ্ছে একে পর এক…
‘ অসম্ভব!

জুইয়ের না করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি থামল একটা কাজি অফিসের সামনে। কলেজ থেকে মাত্র দশমিনিট দূরে কাজী অফিসটি। আর সেখানে অনেকেই দাঁড়িয়ে। রাদিফকে দেখা গেল হাতে দুটো বরমালা নিয়ে আয়ন-জুইয়ের অপেক্ষা করছে উৎফুল্লতায়। সঙ্গে চারটি মেয়ে আর সাত-আটজনের মতোন দামড়া দামড়া ছেলে দাঁড়িয়ে একত্রে। আয়নের গাড়িটি থামতে সকলে হৈচৈ করে এদিকটায় এগিয়ে আসতে চাইলে আয়ন গাড়িতে বসা অবস্থা হাতে ইশারায় সবাইকে থামতে বলল। সকলে থেমে যেতেই আয়ন দীর্ঘ শ্বাস
নিজের মধ্যে টেনে আস্তে ধীরে বলল…

‘ আপনার হাতে এক ঘন্টার মতোন সময় আছে জুই। একঘন্টা ভেবে চিন্তে তারপর উত্তরটা দিবেন আশা করছি। এখন থেকে হয় আপনার সাথে আমার নতুন যাত্রা শুরু হবে, নয়তো এখানে সবকিছুর ইতি ঘটবে। এখন বাকি সম্পূর্ণটা আপনার হাতে, এতে আমি জোর করবো না। তবে একটা কথা মাথা রাখবেন জুই। আজ আমি এখান থেকে খালি হাতে ফিরে গেলে সোজা বিয়ে করে নিব পারিবারিক পছন্দের মেয়েকে। আমার দেখা আপনি কখনোই পাবেন না। আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াবেন মেয়েরা এসে আপনাকে নিয়ে যাবে। অসম্মতি হলে সমস্যা নেই গাড়ি থেকে নামার প্রয়োজন নেই আমি বুঝে নিবো আপনি বিয়েতে রাজি নন।

কথাটা বলেই আয়ন গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল নিজের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে। জুই অশ্রু সিক্ত চোখ ঠোঁট কামড়িয়ে কাজী অফিসের দিকে তাকাল। এই মূহুর্তে জুইয়ের কি ডিসিশন নেওয়া উচিত বুঝতে না পেরে দু’হাতে মুখ ডেকে ফুপাতে লাগল কান্নায়। মায়া পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে বলে এটা নিয়ে কত কিছু হচ্ছে। ওদের পরিবারের মানুষজন জানলে কি হবে সেই ভয়েও আছে ওরা। এমন একটা পরিস্থিতিতে আয়ন কিভাবে জুইকেও এনে দাঁড় করাল। জুইয়ের এখন কি করার উচিত? আয়নকে ফিরিয়ে দেওয়া নাকি গ্রহণ করা উচিত? আয়নকে আজ ফিরিয়ে দিলে চিরতরে জুই আয়নকে হারাবে। বারবার আয়ন আসবে না জুইয়ের কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে ছোট হতে। আবার আয়নকে গ্রহণ করে যদি এই মূহুর্তে বিয়ে করে নেয় তাহলে ওর পরিবারের সঙ্গে আবারও বড় ধরনের ধোঁকাদারি করা হবে। যেটা জুইয়ের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়।

[ গল্প লেখা শেষ ছিল রাত এগোরোটার দিকেই। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি আপলোড করবো কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় বাসার ওয়াই-ফাইও ছিল না সেজন্য রাতের ২টা অবধি শুধু গল্পের পার্টটা আপলোড করার জন্য বসেছিলাম এই ঠান্ডার মধ্যে। শুয়ে থাকলে যদি ঘুমিয়ে পড়ি তারজন টানা ৩ ঘন্টা শুধু একজায়গায় বসে ছিলাম। তারপরও অনেকেই আমাকে ভুল বুঝবে আমি কেন গল্প দেরিতে দিলাম।

আয়ন ও জুইয়ের পার্টটা রি-এডিটিং করে এড করা হয়েছে এটা। এই গল্পটাতে জুই আয়নের কাহিনি একদম কম সেজন্য এবার থেকে ওদের জুটিকেও দেখানো হবে।]

#চলিত….