রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-৬১+৬২

0
5

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৬১_প্রথমাংশ
থমকে যাওয়া ঘড়ির কাটার মতো যেন সকলের জীবনই থেমে আছে। ঘুরেফিরে একই কাহিনি রিপিট হচ্ছে সবার। মানুষ গুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও যেন সবার ব্যথা মিলে যাচ্ছে। পাওয়া না পাওয়ার গল্প থেকে বিচ্ছেদের সুর যেন বেশি। এইতো যেমন রিদ মায়াকে চাচ্ছে না। জুই আয়নকে চাচ্ছে না। এদিকে রাফা আসিফকে চাচ্ছে না। মুক্তা ফাহাদকে চাচ্ছে না। শশী রিদকে পাচ্ছে না। কেমন যেন একটা বিচ্ছেদের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে। আয়ন বিগত দু’দিন ধরেই জুইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে। ফাহাদের সঙ্গে তার শশুর বাড়ি পযন্ত গিয়ে ঘুরে আসল। না ফাহাদ মুক্তা কাছে ঠাই পেল আর না আয়ন জুইয়ের সাথে কথা বলতে পারলো। ফাহাদকে মুক্তার সঙ্গে দেখা করতে মায়ার পরিবার বাঁধা না দিলেও মুক্তা নিজেই আত্মসম্মান তাগিদে ফাহাদকে ফিরিয়ে দিল ফিরবে না বলে। আয়ন তো বেশ কয়েকবার সুযোগও পেয়েছিল জুইয়ের সঙ্গে কথা বলার কিন্তু জুই চোখ তুলে আয়নকে দেখলো না পযন্ত। দীর্ঘদিন পর দুজনের দেখা, আয়ন ভেবেছিল সে জুইয়ের কাছে ক্ষমা চাইবে কিন্তু তার কিছুই হলো না। আয়ন জুইয়ের কাছে পাত্তা না পেয়ে সেও সেদিন ফাহাদের সঙ্গে ফিরে এসেছিল খালি হাতে। তারপর থেকে সে রোজ জুইকে নিয়ম করে কল দেয় কিন্তু আপসোস রোজকার মতোই জুইয়ের নাম্বারটা আজও অফ দেখালো। মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় হাতের ফোনটা পকেটে গুঁজে রাখতে রাখতে আয়ন রিদের বাড়িতে প্রবেশ করলো। মেইন দরজা খোলা পেয়ে সে আশেপাশে তাকাল। রাত তখন ৪ঃ০১। গায়ে তার ফর্মাল পোশাক। ডাক্তারি অ্যাপ্রোনটা হাতের ভাজে নেওয়া। দশটা থেকে তার নাইট ডিউটি। এই অসময়ে রিদের বাসায় আয়নের আসার কথা না। রিদের মা সুফিয়া খান বাসায় নেই। তিনি আজ সকালেই চট্টগ্রামে গিয়েছেন কোনো একটা কাজে, বলেছিল মধ্যরাতের ভিতরে ফিরে আসবেন। সেজন্য উনার অবর্তমানে আয়নকে ফোন করে বলেছিল মায়ার রেগুলার চেক-আপ করে যেতে। মায়া আজ চারদিন ধরে রিদের বাসায় অথচ এই চারদিন রিদ চার পলকও বাসায় ফিরেনি। আর না মায়ার খোঁজ নিয়েছে। বলতে গেলে রিদ নিজ বাড়িতে ফিরে না মায়ার জন্য। এতোদিন সুফিয়া খান মায়ার খেয়াল রাখলেও আজ রিদের বাসায় রাফা একা মায়াকে সামলাচ্ছে বাসার সার্ভেন্টদের নিয়ে। সারাদিন রাদিফ বাসায় থাকলেও দুপুর করে সেও কাজে বেড়িয়েছে ইমার্জেন্সি বলে। আয়ন খালি ড্রয়িংরুমে চোখ বুলিয়ে এগোল নিচে ঘরটায়। কাজের মেয়ে রুজিকে পানি দিতে বলে সুফিয়া খানের ঘরে সামনের দাঁড়াল সে। বন্ধ দরজায় নক করতে খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো। খালি বাড়িতে, এভাবে সে দুটো মেয়ের ঘরে একা প্রবেশ করতে খানিকটা সংকোচ বোধও করলো। যদিও সে একজন প্রফেশনাল ডাক্তার, তারপরও খানিকটা ইতস্তত বোধ করে অল্প আওয়াজে দরজায় নক করতেই ঘরে ভিতরে হতে ভেসে আসলো রাফার কন্ঠ….

‘ দরজা খোলা আছে ভাইয়া। ভিতরে আসুন।

চাপিয়ে রাখা দরজাটা ঠেলে কক্ষে প্রবেশ করতে করতে দেখতে পেলে অল্প আলোয় মায়াকে কোলে শুয়ে বিছানায় বসে আছে রাফা। অসুস্থ মায়া রাফার কোলে মাথা রেখে গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে বটে ঘুমিয়ে। মায়ার চুল জুড়ে বিচরণ করছে রাফার দু’টো হাত। মায়ার অসময়ে বলতে গেলে একমাত্র রাফা ছাড়া কেউ ছিল না। না আজও কেউ আছে। সুফিয়া খানের মতোন শাশুড়ী ছিল বলে মায়া আজ স্বামীর বাড়িতে ঠায় পেয়েছে নয়তো মায়ার আপন বলতে স্বামী, ওর পরিবার কেউ ছিল না। আয়ন বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে ধীর স্বরে রাফা থেকে জানতে চাইল মায়ার কথা…

‘ এখন কেমন আছে মায়া? পরে আর কোনো সমস্যা হয়েছিল?

ইতস্তত রাফা মায়াকে বালিশে শুয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ নাহ ভাইয়া! তবে গায়ে অনেক জ্বর ওর। দুপুরেও কিছু খাইনি। আমি অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারি নি কিছু। আন্টি বাসায় থাকলে উনার ভয়ে এতোদিন কিছু হলেও খেতো। আমার সাথে জেদ করে খেতে চাই না।

রাফার কথায় আয়ন মায়ার মস্তিষ্ক বরাবর দাঁড়াতে দাঁড়াতে চিন্তিত স্বরে বলল…

‘ কি বলো? ঔষধ না খেয়ে ঘুমিয়েছে ওহ?

‘ জ্বি!

আয়ন খানিকটা অধৈর্য্য গলায় শুধালো রাফাকে বলল….

‘ তুমি জানো না ওর ঔষধ গুলো কতো জরুরি?
তাহলে কেন খাওয়ালে না? এই মূহুর্তে মায়ার ঔষধ মিস করা মানে ওর মস্তিষ্কে উত্তেজিত করা।

আয়নের কথায় রাফা অপরাধী গলায় বলল….

‘ আমি অনেক চেষ্টা করছি ভাইয়া কিন্তু শেষ পযন্ত পেরে উঠেনি। আমি বাসার সার্ভেন্টদের নিয়ে মায়াকে জোর করে ঔষধ খাওয়াতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়া ভয় পেয়ে সবার উপর এটাসেটা ছুড়ে মারে। রুজিখালা কপালে আঘাত পেয়েছে। আমার হাতেও কামল। মায়া নিজেকেও আঘাত করেছে অনেক। ওর হাতটা দেখুন কালসিটে হয়ে গেছে বারবার একই জায়গায় কামড়াতে কামড়াতে। সেজন্য আমি ভয়ে পেয়ে গেছিলাম তাই ওকে আর জোর করি নাই। মায়া বাহিরের মানুষ দেখলে ভয় পাই ভাইয়া, তৎক্ষনাৎ অ্যাটাক করে বসে। সেজন্য ওকে নিয়ে আমি রুমে বসে আছি। দুপুর থেকে মায়ার গায়ের জ্বরটা বাড়ালে সুফিরা আন্টিকে কল করে জানায় সেটা। আন্টি আমাকে বলেছিল আপনাকে পাঠাবেন সেজন্য আপনার অপেক্ষা করছিলাম আমি।

রাফার কথায় আয়ন শান্ত চোখে মায়ার শুকনো মুখটা দিকে তাকাল। খুব সুন্দর আদলের মায়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে অসুস্থতায়। আজ মায়ার এই দূর্দশা পিছনে আয়ন নিজেও দায়ি। তারা সবাই মিলে একটা সুস্থ মেয়েকে একটু একটু করে মানসিক অশান্তিতে পাগল বানিয়েছে। একটা সুন্দর ফুলকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। তাদের ভুলের জন্য মায়া কি না হারিয়েছে? স্বামী, সংসার, এমনকি নিজের পরিবারকেও। সবকিছু হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন বিছানায় শুয়ে। এখন মায়া মানুষ দেখলে ভয় পাই অথচ যে মেয়েটা সারাক্ষণ মানুষের ভিড়ে থাকতে পছন্দ করতো সে আজ একা থাকে। সারাক্ষণ কথা বলা মেয়েটা হুট করেই কেমন চুপ হয়ে গেল। মায়ার চঞ্চলতা হারিয়ে, মায়াকে নিঃস্ব শূন্য করার পিছনে আয়নও একজন অপরাধী। তীব্র অপরাধ বোধে আয়নের বুকটাও কেমন চিন চিন ব্যথা করলো। খুব প্রিয় মানুষের অসহায়তা দেখে আয়নের বুকটাও কেমন হা হা করলো। আয়ন দম বন্ধকর পরিস্থিতিতে হা করে নিশ্বাস টানতে চাইল কিন্তু বাতাসে মিশে মায়াময় গন্ধ। আয়নের আটকে থাকা নিশ্বাসটা আরও আঁটকে গেল। কম্পিত হাতটা কোনো রকম মায়ার উত্তপ্ত কাপলে রাখতে সেটা তৎক্ষনাৎ সরিয়ে নিলো। অস্থির উত্তেজিত গলায় বলল…

‘ মায়ার গায়ে ভিষণ জ্বর রাফা। শরীরের টেম্পারে ওর ব্রেইনে চাপ পরতে পারে। ওকে দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে আমি গাড়ি বের করছি তুমি ওকে রেডি করো।

কথাটা বলেই আয়ন কেমন দম বন্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইল। হা করে নিশ্বাস টানতে চাইল খোলা বাতাসে। মায়ার দূর্দশায় তার বুকে ব্যথা অনুভব করলো। ড্রয়িংরুম হতে বেড়িয়ে সোজা
গাড়িতে এসে বসল। হাতের অ্যাপ্রোনটা ঢিল মেরে পাশের সিটে ফেলে পরপর শার্টের দুটো বোতাম খোলে দুপাশে ছড়িয়ে দিল। আটকে রাখা নিশ্বাসটা টানতে চাইল। বুক ফুলিয়ে পরপর নিশ্বাস টেনে স্টিয়ারিং চেপে তাতে কপাল ঠেকাল তীব্র অপরাধ বোধে। আয়ন কখনো এতটা অপরাধ বোধে ভোগেনি আজ যতটা নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে তার। আয়ন চাইলে রিদের অনুপস্থিতিতে সবকিছু ঠিক রাখতে পারতো। মায়ার খোঁজ করতে পারতো। কিন্তু সে করেনি। আসলে রিদ ঠিকই বলে, রিদ ছিল না বলে তার বউয়ের মর্যাদাও কেউ করেনি। সবাই রিদের উপস্থিতে তার বউয়ের মর্যাদা বাড়ায়, রিদের আড়ালে নয়। আজ সবার অবহেলায় মায়াকে হারাতে বসেছে। এইভাবে চলতে থাকলে মায়া মারা যাবে যেকোনো সময়। মায়াকে বাঁচানো মুসকিল হয়ে যাবে। মন্ত আয়ন সেইভাবেই কিছুক্ষণ বসে রইল। খানিকটা সময় পর স্টেয়ারিং থেকে মাথা উঠিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো গাড়ির ডেস্ক হতে। মেসেজ অপশনে রিদের নাম্বারে ছোট করে বার্তা লিখল….

‘ মায়াকে তোর বড্ড প্রয়োজন রিদ। প্লিজ চলে আয়। মেয়েটা মরে যাবে তোর অবহেলায়। ফিরে আয় প্লিজ।

মেসেজটি সেন্ট করে আয়ন খানিকটা সময় নিলো উত্তরের আশায় কিন্তু ফোনের ওপাশ হতে কোনো উত্তর না আশায় আয়ন পুনরায় একই ভাবে মেসেজ লিখল রিদের নাম্বারে…

‘ তোর বউ ভিষণ অসুস্থ রিদ। দ্রুত হসপিটালের নিতে হবে। স্বামী হিসাবে না পারিস অন্তত মানুষ হিসাবে দায়িত্ব পালন কর নয়তো মরে যেতে দে মায়াকে। আমি হসপিটালে অপেক্ষা করবো।

আয়ন রিদের নাম্বারে পরপর দুটো মেসেজ পাঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। আয়নের জানা নেই রিদ আয়নের মেসেজ গুলো পড়বে কি পড়বে না। সে মায়ার টানে বাড়িতে ফিরবে কি ফিরবে না। তবে আয়ন মায়াকে একা রেখেই হসপিটালে চলে গেল। আজ সেও দেখতে চাই মায়ার জন্য রিদের মনে কতোটা ঘৃণা জম্মেছে। ভালোবাসার মানুষকে চাইলেই ঘৃণা করা যায় না। মায়ার অসুস্থতার সম্পর্কে সব জানা রিদের। সব জেনেও যদি মায়ার থেকে রিদ মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আয়ন নিজে রিদের মা সঙ্গে কথা বলে মায়াকে আলাদা বাড়িতে রাখার জন্য। সবকিছুর আগে মায়ার সুস্থতা প্রয়োজন। রিদের আশেপাশে থাকলে মায়া সুস্থ হবে না। রিদের ঘৃণা, অবহেলা বরং মায়ার মানসিক চাপ বাড়াবে। আয়ন চলে গেল রাত আটটা। সেই আটটা থেকে নয়টা হলো, নয়টা থেকে দশটা গড়িয়ে ঘড়ির কাটা এগারোটায় পৌঁছাল। মায়ার শরীর আরও খারাপ হলো। গাঁয়ের জ্বর খিঁচনি দিয়ে শরীরে কম্পন ধরলো। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে মায়া আবারও প্যানিক অ্যাটাক করলো। অসহায় রাফার চিৎকার দেখার মতোন ছিল। খালি বাসায় অচেনা শহরে মায়াকে নিয়ে কোথায় যাবে সেই ভয়ে চিৎকার করতে লাগল মায়াকে জড়িয়ে। আয়ন মায়াকে হসপিটালে নিবে বলেও সে নিরুদ্দেশ। রাফা বাসার সার্ভেন্টদের নিয়ে মায়াকে হসপিটালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বয়সে রাফা মায়ার সমবয়সী। সে নিজেও কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরেনি। অচেনা শহরে মায়াকে নিয়ে কোন পথে যাবে আয়নের হসপিটালের সেটাও জানে না। শুধু জানে মায়াকে এই মূহুর্তে হসপিটালে নিতে হবে। কোথায় কার কাছে গেলে সাহায্য পাবে তাও জানে না রাফা। রিদের ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে রাফা পরপর কল মিলাল সুফিয়া খানকে। তারপর রাদিফ, আয়ন তিনজনকে পরপর কল দিল রাফা। প্রথমবার সুফিয়া খান কল রিসিভ না করলেও রাফার আয়নকে কল দেওয়ার মধ্যেই সুফিয়া খান কল আসলো রাফার হাতের ফোনে। রাফা তৎক্ষনাৎ সুফিয়া খানের কল রিসিভ করে অস্থির উত্তেজিত ভঙ্গিতে কাঁদতে কাঁদতে মায়ার কথা জানাতে জানাতে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো রিদ।রাফার চিল্লাচিল্লিতে শক্ত গম্ভীর রিদের পা থামে কাজের মহিলা রুজিনা গায়ে ঢলে পরা মায়ার দিকে তাকিয়ে। হাত-পা খিঁচে নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে মায়ার। ফর্সা মুখটা কালো হয়ে আছে মুখ দিয়ে ঝাঁঝ বের হয়ে। রিদ কেমন শক্ত হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল মায়ার দিকে তাকিয়ে। রিদের মুখ দেখে ভিতরকার অনূভুতি বলা দায়। রাফা কান্নাকাটি করে সুফিয়া খানকে সবটা বলতে বলতে চোখে পরলো মেইন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিদের উপর। আশার আলো দেখার মতো তৎক্ষনাৎ ছুটে গেল সেদিকে। কল না কেটে দুহাতের মুঠোয় ফোনটি চেপে রিদের কাছে মিনতি করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল…

‘ ভাইয়া প্লিজ মায়াকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান না প্লিজ। আপনার পায়ে ধরছি আমি, প্লিজ মায়াকে বাঁচান। ওহ অনেকক্ষণ ধরে এমন করছে। আমি একা এই শহরের কিছু চিনি না ওকে নিয়ে কোথায় যাব? প্লিজ আপনি ওকে বাঁচান ভাইয়া প্লিজ। মায়াতো আপনাকে ভালোবাসে। ওহ আপনার জন্য সু*ইসা*ইড পযন্ত করতে গিয়েছিল। প্লিজ ভাইয়া ওকে হসপিটালের নিয়ে যান । প্লিজ!

মায়ার সু*ইসা*ইডের কথাটা কানে যেতেই রিদ তাড়াক করে তাকাল রাফার দিকে। চোখ মুখ তখনো কেমন শক্ত আর কঠিন। রাফা বুঝতে পারলো না রিদের কঠিন দৃষ্টির কারণ। রাফা বারবার মায়াকে বাঁচানোর আকুতি মিনতি করছে রিদের কাছে। সেকেন্ডের মাঝে রিদ দৃষ্টি ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে চলে যেতে যেতে গম্ভীর মুখে রাফার উদ্দেশ্যে বলল…

‘ কাম উইথ মি!

রিদকে বাহিরের দিকে চলে যেতে দেখে রাফা দৌড়ে মায়ার দিকে এগিয়ে আসলো। কাজের মহিলা রুজিনাকে নিয়ে মায়াকে ধরাধরি করে বসাল হুইল চেয়ারে। রিদের অনুসরণ করে মায়াকে নিয়ে দ্রুত পৌঁছাল গাড়ি অবধি। রিদ গাড়িতেই বসা ছিল। আসিফকে আশেপাশে কোথাও দেখা গেল না। তবে রিদের গাড়ির দরজা খোলা পেয়ে রাফা রুজিনা বেগমকে নিয়ে মায়াকে নিয়ে বসল গাড়ির পিছনের সিটে। ওদের বসতেই রিদ তৎক্ষনাৎ গাড়ি টানলো খালি রাস্তায়। রাফা থেকে থেকে বেহুশ মায়াকে জড়িয়ে কাঁদছে। রিদের শক্ত মতিগতি তখনো বুঝার দায়। রাফা মায়াকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রিদের উদ্দেশ্যে বলল….

‘ আর কতক্ষণ লাগবে আমরা হসপিটালের পৌঁছাতে ভাইয়া?

রাফা কথা গুলো বলতে বলতে গাড়ির মিরর দিয়ে দূর রাস্তা দিকে তাকাল। ওরা কোথায় আছে কিছুই জানে না রাফা। দূর রাস্তা হতে দৃষ্টি সরাতে গিয়ে চোখ পড়ল গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাতে থাকা রিদের কম্পিত হাতে দিকে। কেমন থরথর করে কাঁপছে স্টেয়ারিংয়ে থাকা রিদের দুটো হাত। অথচ রিদের মুখ ভঙ্গিমা কেমন শক্ত আর কঠিন করে রাখা। গাড়ির এসির মধ্যেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে রিদের কপালে। রাফা বুঝতে পারলো না রিদের অস্থির কম্পিত হাতে কারণ। রিদ কি অসুস্থ মায়ার মতোন নাকি তার অন্য কোনো ভয়? রাফার রিদকে দেখে মনে হলো না সে অসুস্থ। তারপরও রাফা রিদকে নিয়ে আর ঘাটাল না মায়ার চিন্তায়। দশ থেকে পনেরো মিনিটে মধ্যে রিদের গাড়িটি এসে থামল হসপিটালের সম্মুখে। রিদ শব্দ করে গাড়ির দরজা খোলে দাঁড়াল পাশে। হসপিটালের বাহিরে আগ থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল আয়ন নার্সদের নিয়ে। রিদের গাড়ি থামাতে আয়ন তৎক্ষনাৎ নার্সদের দিয়ে মায়াকে নামাল। নার্সদের সাহায্যে মায়াকে কেবিনেও দেওয়া হলো সঙ্গে সঙ্গেই। মায়ার চিকিৎসা চলল
মূহুর্তে। রাফা মায়ার কেবিনে বাহিরে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে। রিদ এই পুরোটা সময় নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে তার ভূমিকা অদেখা মতোন। ঘন্টা দেড়েক সময় নিয়ে মায়াকে চিকিৎসা দিয়ে কেবিনে শুয়ানো হলে ডক্টর সাজিদার সঙ্গে বেড়িয়ে আসল আয়ন। আয়নের চোখ মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। রিদকে পেল মায়ার কেবিনের পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আয়ন দূর থেকে রিদের শান্ত ভঙ্গি দেখে ঠাহর করতে পারলো রিদের অশান্ত মনের তোলপাড়টা। রিদ হয়তো আশা করেনি মায়া সত্যি সত্যি এতোটা অসুস্থতা হবে। আয়ন রিদের মুখোমুখি হতে হতে ক্লান্তিময় হতাশার গলায় বলল….

‘ আমার সাথে কেবিন আয় তুই।

জায়গা ছেড়ে রিদকে নড়তে না দেখে আয়ন রিদের হাত টেনে মিনতি স্বরে বলল…

‘ মায়ার রিপোর্ট এসেছে। প্লিজ আমার সাথে আয় ভাই। ডক্টর সাজিদা কথা বলতে চাই মায়ার গার্ডিয়ানের সঙ্গে। তুই ছাড়া আপাতত মায়ার এখানে কেউ নেই। মামীও ঢাকা নেই। প্লিজ আয়।

আয়নের হাতটা ঝটকা মেরে ফেলে রিদ এগিয়ে গেল ডক্টর সাজিদার কেবিনে। কাউকে কিছু না বলে ঠাস করে বসে পরলো ডক্টর সাজিদার মুখোমুখি চেয়ারটায়। আয়ন রিদের পাশাপাশি চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলল…

‘ আপনি বলুন ডক্টর সাজিদা। আমরা শুনছি।

মধ্য বয়স্কর ডক্টর সাজিদা সুফিয়া খানের অনুসন্ধান করে বলল….

‘ মিসেস সুফিয়া খান আসেননি ডক্টর আয়ন?

আয়ন স্বভাব স্বরুপ বলল…
‘ না ডক্টর! মামী ঢাকার বাহিরে আছেন কাল সকালে আসবেন, আপনি আমাদের বলুন।

ডক্টর সাজিদাকে মায়ার ব্যক্তিগত ডাক্তার হিসাবে রেখেছেন সুফিয়া খান। তাই তিনি মায়ার সকল রিপোর্ট সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত ছিল বলে ডক্টর সাজিদা আবারও আয়নের উদ্দেশ্য বলল…..

‘ দেখুন পেশেন্টের মানসিক ব্যাপারটা আগেই ক্লিয়ার করে বলেছিলাম মিসেস খানকে। তিনি বলেছিল পেশেন্টের যত্ন নিবেন। সেখানে পেশেন্ট আবারও প্যানিক অ্যাটাক করলো? সেজন্য বলছিলাম সুফিয়া খানের অনুপস্থিতিতে আমার পেশেন্টের ব্যক্তিগত গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন ডক্টর আয়ন আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন।

ডক্টর সাজিদার ঘুরেফিরে একই কথায় তৎক্ষনাৎ রেগে যায় রিদ। অধৈর্য্যের নেয় ডক্টর সাজিদার টেবিলে হঠাৎ থাপ্পড়িয়ে গর্জনে বলল…

‘ বালের ডক্টর আপনি আমার। সামনে বসে আছি চোখে পরছে আমাকে? ডিগ্রি অর্জন করছেন কিভাবে ভন্ডামী করে?

রিদের হঠাৎ গর্জনে ডক্টরসহ আয়নও ভয়ে চমকে উঠলো। আয়ন তৎক্ষনাৎ রিদকে থামাতে চেয়ে ডক্টর সাজিদাকে শুধিয়ে বলল…

‘ আপনি প্রশ্ন না করে রিপোর্ট বলুন প্লিজ। রিদ খান পেশেন্টের হাসবেন্ড হয়। আপনি বলুন।

ডক্টর সাজিদা থমথমে মুখে রিদের দিকে তাকাল। রিদ খানকে তিনি ভালো করেই চিনেন। এই শহরে প্রভাবশালীদের একজন। এদের ক্ষমতা আর দাপটের কথা শুনেছেন তিনি আগেই। তবে বিগত কয়েকদিন ধরে সচক্ষে সবটা দেখছেন তিনি। যেমন মা তেমন ছেলে। দুজনই অধৈর্য। তারপরও সুফিয়া খান যেমন তেমন উনাকে বুঝানো যায় কিন্তু উনার ছেলে রিদ খানতো আরও গরম। অধৈর্য মানুষ। ডক্টর সাজিদা থমথমে মুখে বলল…

‘দেখুন মিস্টার খান পেশেন্টের অবস্থা খুবই সূচনীয়। পেশেন্ট মানসিক ডিসঅর্ডারের রোগী। এতো ঔষধাদি মধ্যেও এতোদিন ধরে পেশেন্টের জ্বর কমছে না। বারবার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। মানসিক চাপ বাড়ছে। পেশেন্ট হয়তো কোনো কিছু নিয়ে তীব্র ড্রিপশনে ভোগছে যার জন্য বারবার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। আমার মনে হয় পেশেন্টের চারপাশে পরিবেশ ঠিক নেই। পেশেন্টকে সুস্থ করতে চাইলে আগে পেশেন্টকে একটা সুস্থ পরিবেশ দিন। যথাসম্ভব সবাই পেশেন্টের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। পেশেন্টকে হাসিখুশি রাখুন। ঔষধের চেয়ে পেশেন্টের পরিবেশ পরিবর্তন করা জরুরি তাহলে পেশেন্টের মস্তিষ্কে পড়া প্রভাব এমনই কমে আসবে।
নয়তো আমরা পেশেন্টকে খুব দ্রুত পাবনার ডক্টরের
কাছে সাজেস্ট কর…

ডক্টরের বাকি কথা শেষ করার আগেই রিদের হাত উঠে গেল টেবিল ভর্তি ফাইলে। এক থাবায় ঝরঝর করে টেবিলের সবকিছু ফেলে দিল ফ্লোরে। খালি টেবিলে থাবা মেরে ডক্টর সাজিদার উদ্দেশ্য চোখ মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত পিষে বলল…

‘ ডাক্তারি শেখান আমারে? পাবনায় পাঠাবেন? ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে পাগল বানিয়ে পাবনায় সরকারি চিকিৎসা দিব আপনারে যাবেন?

রিদকে টেনে থামাতে চেয়ে আয়ন বলল…

‘ রিদ কি করছিস তুই। এখানে ডক্টর সাজিদা কি করেছে? উনিতো মায়ার বর্তমান পরিস্থিতি কথায় জানালো তোকে। আর তুই…

আয়নকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরাতে সরাতে রিদ খিটখিটে মেজাজে বলল…

‘ সর সামনে থেকে। বালের ডাক্তার তোরা আমার। সর!

রিদ কেবিন ছেড়ে বেড়িয়ে সোজা হাঁটল করিডোর ধরে। উদ্দেশ্য হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যাওয়া। রিদকে চলে যেতে দেখে রাফা দৌড়ে আসল রিদের পিছনে। রিদের পিছন ডেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল রাফা…

‘ আপনার সাথে আমার কথা ছিল ভাইয়া। একটু শুনবেন প্লিজ?

রিদ থামল না। বরং রাফার কথা না শুনার মতো করে চলে যেতে নিলে রাফা পুনরায় রিদের পিছন ডেকে অধৈর্য গলায় বলল…

‘ আমি বেশ কয়েকদিন ধরে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম ভাইয়া। কিন্তু আপনি বাড়িতে আসে না বলে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। প্লিজ ভাইয়া আমার কথাটা অন্তত শুনুন। প্লিজ!

রিদ রাফাকে এরিয়ে অদেখার মতো করে চলে যেতে লাগলে রাফা ফের রিদের পিছন দৌড়িয়ে অস্থির উত্তেজিত গলায় খানিকটা উঁচু স্বরে বলল….

‘ আপনার অনুপস্থিতিতে মায়া সুইসাইড করতে গিয়েছিল ভাইয়া। সেদিন আমরা না থাকলে হয়তো মরে যেতো ওহ।

রাফার কথায় সঙ্গে সঙ্গে রিদের পা থামে কিন্তু রাফার দিকে ঘুরে তাকাল না রিদ। রাফা রিদকে দাঁড়াতে দেখে পরপর অস্থির গলায় বলল…

‘ মায়া আপনাকে অনেক ভালোবাসে ভাইয়া। আপনাকে ভালোবাসে বলেই আজ মায়া পাগল হয়ে বিছানায় পরে। প্লিজ ভাইয়া মায়াকে আর অবহেলা করবেন না। ওহ নির্দোষ। মায়া আপনার সাথে বেঈমানী করতে চাইনি ওকে দিয়ে এসব করানো হয়েছে। মায়ার বিয়েটা তো ছ….

রাফাকে বলতে না দিয়ে রিদ এক প্রকার জেদ করেই চলে গেল রাফার কথা না শুনে। শেষ পযন্ত রাফা কি বলতে চেয়েছিল সেটাও শুনলো না রিদ। রিদকে চলে যেতে দেখে রাফা আগ বাড়িয়ে আর কিছুই রিদকে জানাতে চাইল না। বরং উল্টো পায়ে হেঁটে মায়ার কেবিনে গেল। রাফা বুঝতে পারছে রিদ ইচ্ছা করেই মায়াকে এরিয়ে যাচ্ছে। হয়তো মায়াকে আর চাচ্ছে না বলে তাই।
~~

রাত প্রায় ১ঃ৪৫ ঘরে। অন্ধকার কারাগারে চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসা কেউ। মাথার উপর হলুদ আলোর লাইট ঝুলছে। সামনেই চৌদ্দ শিকলের জেল। সন্ধ্যার পথ থেকে লোকটা এখানে একইভাবে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে থানার পুলিশরা। বসে থাকতে থাকতে একটা সময় ঝিমিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো চেয়ারে বসা লোকটা। হঠাৎই কোনো কিছুর টংটং শব্দ কানে যেতেই চেয়ারে বসা লোকটা ঘুমন্ত চোখ মেলে তাকাতে চাইলে ঘুমের তাড়নায় ঝাপসা চোখে দেখলো শিকলের তালা খোলছে বয়স্ক পুলিশ। লোকটার হেলিয়ে পড়া ঘাড়টা মূহুর্তে সোজা করতে করতে দেখল পুলিশ নয় বরং একজন ভদ্র মহিলা মাথা নুইয়ে জেলে প্রবেশ করছে। চেয়ারে বাঁধা লোকটার ঘুম তৎক্ষনাৎ ছুটে গেল। চোখ টেনে সামনে তাকাতে খুব পরিচিত একটা মুখ চোখে পরলো। লোকটার কপাল কুঁচকে আসে ভদ্র মহিলাটি কে তা স্বরণ করতে চাইলে মহিলাটি লোকটার দিকে এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসতে বসতে মাধুর্য হেঁসে কৌতুক করে বলল…

‘ কিরে জসিম? কি অবস্থা তোর? আগের মতোই হারিমি আছিস নাকি আরও লেভেল বাড়িয়ে উন্নতি করেছিস কোনটা? আমাকে তোর সামনে হাজির করেছিস মানে অবশ্যই তোর হারামির লেভেল বেড়েছে। শুনলাম আমাকে নাকি খুব মিস করছিলি তাই চলে আসলাম। নাইস টু মিট ইউ এগেইন দোস্ত।
.

#চলিত….

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৬১_শেষাংশ
রাত প্রায় ১ঃ৪৫ ঘরে। অন্ধকার কারাগারে চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসা কেউ। মাথার উপর ঝুলছে হলুদ আলোর লাইট। সামনেই চৌদ্দ শিকলের জেল। সন্ধ্যার পথ থেকে লোকটাকে একইভাবে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে থানার পুলিশ। বসে থাকতে থাকতে একটা সময় ঝিমিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো চেয়ারে বসা লোকটা। হঠাৎ কোনো কিছুর টংটং শব্দ কানে যেতে চেয়ারে বসা লোকটার ঘুম হাল্কা হয়ে আসলে সে ঘুমন্ত চোখ টেনে সামনে তাকাতে চাইল, কিন্তু ঘুমের তাড়নায় ঝাপসা চোখে দেখলো শিকলের তালা খোলছে বয়স্ক এক পুলিশ। লোকটার হেলিয়ে পড়া ঘাড়টা মূহুর্তে সোজা করতে করতে দেখলো পুলিশ নয় বরং একজন ভদ্র মহিলা মাথা নুইয়ে জেলে প্রবেশ করছে। চেয়ারে বাঁধা লোকটার ঘুম তৎক্ষনাৎ ছুটে গেল। সে চোখ টেনে সামনে তাকাতে দেখলো খুব পরিচিত একটা মুখ। কিন্তু তিনি তৎক্ষনাৎ মনে করতে পারলো না এই মুখটা আসলে সে কোথায় দেখেছিলো? অজ্ঞাত
লোকটার কপাল কুঁচকে আসে ভদ্র মহিলাটি কে তা স্বরণ করতে চেয়ে, ততক্ষণে পরিপাটি শাড়ি আর লম্বাটে মহিলাটি লোকটার মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসতে বসতে কৌতুক স্বর করে বলল…

‘ কিরে জসিম? কি অবস্থা তোর? আগের মতোই হারা*মি আছিস নাকি আরও লেভেল বাড়িয়ে নিজের উন্নতি করেছিস কোনটা? আমাকে তোর সামনে হাজির করেছিস মানে অবশ্যই তোর হারা*মিপনা লেভেল বেড়েছে। শুনলাম আমাকে নাকি খুব মিস করছিলি? দেখ তোর টানে চলে আসলাম। নাইস টু মিট ইউ এগেইন দোস্ত।

কথাটা বলেই সুফিয়া খান হাত বাড়ালো চেয়ারে বাঁধা জসিমের দিকে। কিন্তু দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেশ। মধ্যস্ততার টেবিলের একপাশে জসিম অন্যপাশে সুফিয়া খান বসায় সুফিয়া খান উঠে দাঁড়াল জসিমের সঙ্গে হাত মিলাতে। অল্প ঝুকে খুব স্বাভাবিক নেয় জসিমের সঙ্গে হাত মিলাল যেন খুব পুরাতন সম্পর্কে অবগত দুজন। জসিম লোকটা তখনো কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে সুফিয়া খানের দিকে। লোকটার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি ভারি আশ্চর্য হয়েছেন এই রাতে সুফিয়া খানের দেখা পেয়ে। কতোটা বছর পর দুজনের আবার দেখা হলো। চোখের সামনে যেন ভেসে উঠলো সেই ভার্সিটিকালের পুরাতন স্মৃতি গুলো। দূরদর্শী সুফিয়া আর তার মোহনীয় সৌন্দর্য, মধ্যবয়সে এসেও যেন ভাটা পড়েনি বরং গোছালো পরিপাটি শাড়িতে মোহনীত লাগছে সুফিয়াকে। জসিম অবাক নেত্রে তাকিয়ে সুফিয়া খানের দিকে অথচ তার খানিকক্ষণ বাদই সে চেঁচিয়ে উঠলো সুফিয়া খানের হাত মিলানোর সঙ্গে সঙ্গে। সুফিয়া খান ঝটকায় হাত সরিয়ে নিতে নিতে বলল…

‘ স্যরি দোস্ত ব্যথা পেলি নাকি? আমিতো তোর সঙ্গে হাত মিলাতে চেয়েছিলাম, আফটার অল তুই আমার পুরাতন ফ্রেন্ড বলে কথা। অনেকদিন পর দুজনের দেখা ভাবলাম তোর সাথে আন্তরিকতা দেখায়। কিন্তু মনে হচ্ছে তুই তার যোগ্য না। আচ্ছা দে দেখি তোর হাতটা কোথায় ব্যথা পেলি।

কথাটা বলে সুফিয়া খান টেবিল ঘুরে এগিয়ে আসল জসীমের দিকে। জসীমের একহাতের বাঁধন খোলে হাতটা টেনে দেখলো বাম হাতের তালুতে ছোট একটা সুই ঢুকে। সুফিয়া খান দরদ দেখিয়ে সেই সুইটা টেনে বের করে তিনি গলা উঁচিয়ে ডাকলো শিকলের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তারেক নামক ছেলেটিকে, গম্ভীর মুখে বলল কক্ষে পানি দিয়ে যেতে। সুফিয়া খানের আদেশ অনুযায়ী ছেলেটি তাই করলো। দ্রুত একটি ছোট বোতলের পানি এগিয়ে দিয়ে গেলো সুফিয়া খানের দিকে। পানির বোতলটি হাতে নিয়ে সুফিয়া খান কোমর ঠেকিয়ে বসল টেবিলের উপর জসীমের মুখোমুখিতে। ক্যাপ খোলে হাতের বোতলটা জসীমের মুখ বরাবর ধরতে ধরতে বলে….

‘ পানিটা খা-তো জসীম! তোর ভালো লাগবে।

ব্যথা পেয়েও জসীম লোকটা হতবাক চোখে সুফিয়া খানের দিকে তাকিয়ে কম্পিত স্বরে আওড়াল…

‘ সুফিয়া তুমি?

সুফিয়া খান জসীমের মুখে পানি দিতে দিতে বলল…

‘ চিনতে পেরেছিস তাহলে? নে ধর আগে পানি খা। হাতের ব্যথা কমে যাবে। তোর সাথে গল্প করতে আসলাম জসীম। জমিয়ে আড্ডা দিবো দুজন। তুই আর আমি বুঝলি।

সত্যি সত্যি জসীম লোকটা সুফিয়া খানের দিকে তাকিয়ে হা করলো। ছোট বোতলের সম্পূর্ণ পানিটাই পান করলো সুফিয়া খানের হাতে সে। সুফিয়া খান খালি বোতলটা হাতে নিয়ে পুনরায় জসীমের মুখোমুখি চেয়ারের উপর বসতে বসতে খেয়ালি করে বলল….

‘ দেখলি দোস্ত তোর জন্য আমার কতো ভালোবাসা? নিজ হাতে তোকে পানি পর্যন্ত খাওয়ালাম। আমার এতো ভালোবাসা রেখে তুই শুধু শুধু আমার জামাইটার পিছনে পড়ে থাকিস। শুনলাম তুই নাকি আমার জামাইরে খুব জ্বালাস? এখন আবার আমার ছেলেটাকেও এসবে টানলি। দিস ইজ নট ফেয়ার দোস্ত।

সুফিয়া খানের কথায় জসীম থমথমে মুখে বলল…

‘ বিশ্বাস করো সুফিয়া আমি কারও পিছনে কিছু করিনি। আমি এসবের কোনো কিছু জানি না। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমি নির্দোষ।

জসিম লোকটার কথায় সুফিয়া খান তাল মিলিয়ে বলল…

‘ বিশ্বাস তো আমারও করার কথা না দোস্ত। তুই তো জানিস, আমার দৃষ্টি হারা*মিদের চিন্তে ভুল করে না। তুই হা*রামি ছিলি, আছিস, থাকবি এটা আমি জানি। কিন্তু আমার জামাইটা বুঝে না বারবার একই ভুল করে তোকে বিশ্বাস করে। আসলে আমার জামাইটা বোকা-সোকা নরম মনের মানুষ তো সেজন্য তুই বারবার অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাস। আমি বুঝি না ভাই, নরম মনের মানুষ হয়েও সে কিভাবে রাজনীতি করতে আসে? নরম মন নিয়ে কি কখনো রাজনীতি হয় তুই-ই বল? রাজনীতি করতে হলে কলিজা হতে হবে লোহার মতো শক্ত, যেন এক থাবাই শত্রুর কলিজা ছিঁড়ে হাতে নিয়ে খেলতে পারে তাহলেই না সে হলো আদর্শ নেতা। কিন্তু তার সরলতা দেখে আমি তাঁকে আরও পনেরো বছর আগেই না করছিলাম রাজনীতি তোমার জন্য না নিহাল। তুমি ছেড়ে দাও। সামাল দিতে পারবা না ঝামেলায় পড়বা। আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে তোমার জন্য। তুমি ছেড়ে দাও রাজনীতি কিন্তু সে শুনলো না আমার কথা। তার পারিবারিক ঐতিহ্য রাজনৈতিক দলকে তার-ই সামাল দিতে হবে এটা নাকি তার দায়িত্ব। আচ্ছা তুই-ই বল, এইভাবে সামাল দিবে সে? আমার ছেলেদের রক্ত জড়িয়ে? আমি তার জন্য কয়টা ছেলে জন্ম দিছি যে, তার জন্য বারবার রক্ত ঝড়াবে? সারাবছর আমার বড়ো ছেলেটাকে রাজনৈতিক দন্ডের ভিড়ে রাখে। তাও ঠিক ছিল যদি আমার ছেলেটার কথা শুনে সে কাজ করতো তাহলে, কিন্তু না তার অতিরিক্ত মানবতার জন্য শেষ পর্যন্ত আমার ছেলেটার জান নিয়ে পর্যন্ত টান দিলো সে। মা হয়ে আমাকে তো এসবে আসতেই হতো তাই না বল?

সুফিয়া খানের পরপর কথায় জসীমের শরীরে চিকন ঘামের রেশ দেখা দিল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা জমা হতে জসীম ভয়ার্ত মুখে অস্থির ভঙ্গিতে বলল…

‘ আমি কিছু করিনি সুফিয়া। আমি সত্যি তোমার ছেলের এক্সিডেন্ট করাইনি। আমিতো সেদিন চট্টগ্রামেই ছিলাম না যেদিন রিদ খানের এক্সিডেন্ট হলো। আমি কিভাবে তোমার ছেলের এক্সিডেন্ট করাবো বলো? আমাকে অন্যভাবে জেলে আনা হয়েছে আমি নির্দোষ।

জসীমের কথায় দারুণ হাসলো সুফিয়া খান। হাতের বোতলটা পাশের টেবিলের উপর শব্দ করে রাখতে রাখতে বলল…

‘ তোর নিজের সাক্ষী তুই কেন দিচ্ছিস জসীম? আমি কি তোকে মে*রেছি? নাকি কারও এক্সিডেন্টের কথা ম্যানশন করেছি? না পিটানো অবধি তুই সাক্ষী দিবি না জসীম। কারণ আমি জানি তুই নিষ্পাপ। সেজন্য তোকে জেলে ধরে আনা হয়েছে। থানার পুলিশরা হলো বেয়াদব তারা আমাকে ফোন করে জানালো তোর মতো এতো নিষ্পাপ নেতা নাকি তাদের পেটে হজম হচ্ছে না। দ্রুত তোর সাথে কথা বলতে যাতে তোর হা*রামিপনার লেভেল আপডেট হয়। নয়তো বদ-হজমে মারা যাবে তাঁরা বুঝলি?

সুফিয়া খান সম্পর্কে জসীমের ধারণা পুরাতন। ভার্সিটি লাইফ থেকে তিনি সুফিয়া খানকে চিনেন। অসম্ভব মেধাবী আর চতুর মানুষ সুফিয়া। শান্ত মস্তিষ্কে মানুষ খু*ন করার মতোন ক্রিমিনাল মাইন্ড এই মহিলার আছে। কিভাবে, কাকে, কোথায় ফাঁসিয়ে দিবে সামনের মানুষটা নিজেও বুঝবে না। জসীম লন্ডনে পড়তে গিয়েই পরিচিত হয়েছিল সুফিয়ার সঙ্গে। অপরুপ সুন্দরী আর অসম্ভব মেধাবী স্টুডেন্ট দেখে সে একটা সময় ভালোবেসেছিল সুফিয়াকে। কিন্তু তখন সুফিয়ার সঙ্গে নিহাল খানের প্রেম ছিল সবে তিনমাসের। নতুন প্রেম হওয়ায় জসীম চেয়েছিল সহজ সরল নিহালকে টপকে সুফিয়াকে জিতে নিবে। নিহালের সঙ্গে জসীমের বন্ধুত্ব না থাকলেও ওরা মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে পরিচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো বলে রোজ দেখা হতো তাদের। সেজন্য জসীম চেয়ে ছিল নিহালকে ভুল বুঝাতে সুফিয়ার সম্পর্কে। এতে সে সফলও হতো যদি না সুফিয়া কাছে সে ধরা পরতো। সহজ সরল নিহালকে অনেকটায় কনভিন্স করে ফেলেছিলো সুফিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু চতুর সুফিয়ার কাছে জসীম অল্পতেই ধরা পরে যায় এবং সেদিনই জসীমকে ভার্সিটির মাঠে পিটিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়াও করলো সুফিয়া। লন্ডনের মাটিতে দাঁড়িয়ে সুফিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ার মতোন ক্ষমতাও ছিল না জসিমের কারণ তখনকার সময়ে লন্ডনের রয়েল পরিবারের সদস্যের মধ্যে সুফিয়ার পরিবারকেও গনা হতো। সুফিয়ার পরিবারের পূর্ব পুরুষদের ব্রিটিশআমল থেকেই তাদের আধিপত্য ছিল লন্ডন শহরে। তাদের ক্ষমতা দাপটও দেখার মতোন ছিল। সুফিয়া নিজেও অস্ত্র বিদ্যা, শাস্ত্র বিদ্যা এমনকি ট্রেইনার হিসাবে পারদর্শি ছিল। সুফিয়ার হাতের ধনুক বা বন্দুকের গুলি কোনটায় নিশানা মিস হওয়ার মতোন গল্প আজও নেই। সে এক পারদর্শী নারী। জসীম সেসময়ে সুফিয়ার হাতের মার খেয়ে লোক লজ্জায় ভয়ে সে বাংলাদেশে চলে আসে। তারপর একটা রাজনৈতিক দলে যোগদান করে, এক নেতার মেয়েকেও বিয়ে করল। বছর তিনেক পর দেখা গেল নিহালও সুফিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হয়। তখন সুফিয়ার কোলে ছয়মাসের ছেলে সন্তান। দেখতে ঠিক সুফিয়ার মতোই অপরুপ সুন্দর হয়েছিল। খুব সম্ভবত সুফিয়ার বড়ো ছেলে রিদ খান হবে। জসীমের ভুলে যাওয়া শত্রুতা পুনরায় তাজা হয় যখন নিহাল জসীমের বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগদান করে তখন। পাশাপাশি একই এলাকাতে বিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নিহালের যোগদান করাতে পার্সোনাল শত্রুতা থেকে রাজনৈতিক দন্ডে পৌঁছাল জসীমের ক্ষোভ। সুযোগ পেলে নিহালকে হেনস্ত করতে পিছু পা হতো না জসীম। সুফিয়া তখন নিজের ক্যারিয়ারের সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে স্বামীর সংসারে মনোনিবেশ করে কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর নিহালের বেগতিক পরপর রাজনৈতিক দন্ড দেখে সুফিয়া আর নিহালের মধ্যে আনবান শুরু হতে লাগলো। তারপর কিভাবে কি হলো আর কেন সুফিয়া নিহালকে ছেড়ে চলে গেল সেটা আজও জানে না জসীম। তবে সুফিয়ার চলে যাওয়ার খবরটা জসিমের কানে এসেছিল সেজন্য জসীম বহুবার চেয়েছিল সুফিয়ার অনুপস্থিতিতে নিহালের সুযোগ নিতে সেজন্য কারণে অকারণে এমন বহুবার বহুরকম মিথ্যা কে*স-মা*ম*লা দিয়ে নিহালকে ফাঁসাতে চেয়েছিল কিন্তু থানা-পুলিশ করে সবগুলো কে*স মা*ম*লা কোট পর্যন্ত যেতে যেতে কেমন গায়েব হয়ে যেতো। সে সব মা*ম*লামকদ্দমার আর কোনো পাত্তা পাওয়া যেতে না। এমন ঘটনা বহুবার হওয়াতে, মা*ম*লা গুলো হঠাৎ গায়েব হয়ে কি হয়? সে সব তথ্য যোগাড় করতে একটা সময় জসীম গোপনীয় ভাবে লোক লাগাল তদন্ত করতে আসলে মা*ম*লা গুলো কি হয় সেটা জানতে। অনেক তদন্তের পর বুঝতে পারলো সুফিয়া স্বামীর সংসার নাম মাত্র ছাড়লেও সে স্বামীর সঙ্গ ছাড়েনি কখনো। নিহালের ছোট বড়ো রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যবসায়ীক, সকল মা*ম*লা গুলোই সুফিয়া নিজে দেখাশোনা করে। প্রফেশনাল এডভোকেট হওয়ায় অবশ্যই আইন সুফিয়ার হাতেই থাকবে। তাই জসীম কোনো ভাবে নিহালের সঙ্গে আইনি ভাবে পেরে উঠবে না সেটা বুঝতে পেরে জসিম আইনের আশ্রয় নেওয়া ছেড়ে দেয় এবং সরাসরি আক্রমণ করতে শুরু করলো নিহালে উপর। সুযোগ পেলে অপদস্ত করতে চাইতো নিহালকে। নিহালের লোকদের পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখত। নয়তো জোর করে, ভয় দেখিয়ে নিহালের লোকদের নিজের দলে নিয়ে আসতো। বলতে গেলে রাজনৈতিক খেলায় জসীমের হাত চলতো সব জায়গায়। ভেবেছিলো ইলেকশনটাও সেবার জসীমের হাতেই হবে। কিন্তু সেইবার ইলেকশনের আগে আগে হঠাৎ করে একদিন শুনা গেল নিহালের বড়ো ছেলে রিদ খান নিজের পড়াশোনা শেষ না করেই বিদেশ থেকে চলে এসেছে বাবার রাজনৈতিক দলের সাপোর্টে দাঁড়াতে। জসীম বিষয়টা শুনেও বিশেষ একটা পাত্তা দেয়নি। নিহালের ছেলে নিহালের মতোই সরল মনের মানুষ হবে ভেবে উড়িয়ে দেওয়া বিষয়টা একটা সময় জসীমের মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়াল। বুঝতে পারলো ছেলে নিহালে হলেও স্বভাব সুফিয়ার থেকেও দশ কাঠি উপরে পেয়েছে রিদ খান। ক্রমাগত জসীমের কাজে জসীমকে ফাঁসাতে লাগল রিদ খান। সকল দিক থেকে হঠাৎ করে জসীমের দলকে ব্লক করতে লাগল। জসীমের দলের ছেলেরা দল ছেড়ে নিহালের ছেলের পিছনে ছুটতে লাগল। চোখের পলকে যেন জসীমের সাজানো গুছানো রাজনৈতিক দলটা ভেঙ্গে নিস্তেজ হয়ে গেল। চারদিকে শুধু নিহালের ছেলে রিদ খানের নাম ছড়াতে লাগল। যে নাম কামাতে জসীমের বছরের পর বছর রাজনৈতিক মাঠে ষড়যন্ত্র ছক আঁকতে হয়েছিল সেই মাঠ বছর ঘুরতে না ঘুরতে নিহালের ছেলে রিদ খানের হয়ে গেল। নিহালও নিজের বড়ো ছেলে রিদ খানের উপর রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্ভরশীল হয়ে পরলো। অথচ রিদ খান একহাতে বাবার রাজনৈতিক দল সামলাতে লাগলো অন্যদিকে মাসের এ মাথা ঐমাথা করে লন্ডনে যাতায়াত করতো নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বাবার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলে থেকে রিদ খান নিজের বাকি পড়াশোনাটাও শেষ করতে করতে ব্যবসায়ীক কাজে জড়িয়ে পড়ল। পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি নিজের একটা ব্যবসাও দাঁড় করাল, সব মিলিয়ে রিদ খানের নামটা হঠাৎ করেই অনেক বড়ো হয়ে গেল। এতে জসীম হিংসা*ত্মকে জ্বলে পুড়ে নিজের দুই ছেলেকেও রাজনৈতিক মাঠে নামাল। কারণে অকারণে রিদ খানের সঙ্গে ঝামেলা জড়াতে লাগল কিন্তু এতেও রিদ খানের সঙ্গে কোনো সুবিধা করতে পারছিল না বলে, নিহালের ছোট ছেলেকে টার্গেট করলো ওরা। এতে কাজের কাজও হলো। নিহালের বড়ো ছেলে রিদ খান যতোটা চতুর মাইন্ডের ছিল ততটাই নরম মনের ছিল ছোট ছেলেটা। কিন্তু খান পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে যে রাদিফ খানকে প্রটেক্ট করে সেটা জসীম লাস্টবার আক্রমণ করতে গিয়ে বুঝতে পারলো। জসীমের বড়ো ছেলে যখন লোকজন নিয়ে এয়ারপোর্টে থেকে আসা রাদিফ খানের উপর আক্রমণ করল তখন সেই যাত্রায় রিদ খান বাঁচিয়ে নেয় তার ভাইকে এবং সেখানের মা*রামা*রিতে রিদ খানের হাতে উনার বড়ো ছেলেটা পঙ্গুও হয়ে যায় সারাজীবনের জন্য। দু’টো পা কেটে আজও বেড রেস্টে আছে সে। সেজন্য তিনি শপথ করে রেখেছিল অন্য কাউকে নয় বরং এবার রিদ খানকে জা*নে মে*রে শান্ত হবেন তিনি। সেই অনুযায়ী তিনি গোপনীয় ভাবে লোক লাগিয়ে রেখেছিল রিদ খানকে মারতে। বহুদিন চেষ্টা করার পর একদিন সুযোগে পেয়ে রিদ খানের এক্সি*ডেন্টও করালো। ট্রাকের চাপায় রিদ খানের মৃ*ত্যু নিশ্চিত হবে এমন খবরও জসীম পেয়েছিল কিন্তু এতো ধকলের মধ্যেও সুফিয়া নিজের ছেলেকে বাঁচিয়ে আনলো। তারপর কিভাবে কি তদন্ত করে জসীমের নামও বের করে নিলো এ-সবের মাঝে। হঠাৎ এক রাতে পুলিশ জসীমকে ওর পার্টি অফিসের বাহির থেকে ধরে আনে এবং কোথাকার কোন কারাগারে গায়ের করে রাখে। আজ প্রায় একমাস হতে চলল সে সূর্যের আলো দেখে না। জসীমের পরিবারের কারও খবর নেই। জসীমের পরিবার আদৌও ওর খবর জানে কিনা সেটাও বলা দায়। আজ এই মূহুর্তে সুফিয়া জসীমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মানে জসীমকে এতোদিন গায়েব রাখার পিছনে যে সুফিয়ার হাত রয়েছে সেটা তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন। তবে জসীম এটা জানে না ওকে সন্দেহের বশে সুফিয়া এখানে আটকে রেখেছে নাকি সত্যিটা জেনে বুঝে আঁটকে রেখেছে। যেটাই হোক না কেন, আগে সুফিয়ার মনোভাব বুঝে তারপর জসীম কিছু বলবে নয়তো আগ বাড়িয়ে কিছু বলে নিজের বিপদ ডেকে আনবে না। কারণ এই মূহুর্তে জসীমের হাতে কিছু করার নেই, যতক্ষণ না পযন্ত সে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছে ততক্ষণ পযন্ত। যদি সুফিয়া সত্যিটা জেনেও যায় তাহলে বড়জোর কি করবে? জসীমকে কোটে চালান করে দিয়ে আদালতে সর্বোচ্চ বিচার দাখিল করবে এটাই তো? বিচারে বড়োজোর কি করবে? যাবত জীবন কারাদন্ড দিবে ব্যস? কারণ রিদ খান এখনো জীবিত আছে, মরেনি, তার মানে জসীমকেও মৃত্যুদন্ড দিবে না আদালত। জসীম বেঁচে থাকলে, কিছু ক্ষমতা তো জসীমেরও আছে। বাংলাদেশের আইনকে কিনে সেও শাস্তি কমিয়ে নিতে পারবে। তাই আপাতত সুফিয়া যা বলতে চাচ্ছে তাই বলুক। জসীম বারাবাড়ি কিছু বলে পরিস্থিতি নষ্ট করবে না। বরং বুদ্ধি খাঁটিয়ে চুপ থাকাটায় শ্রেয় হবে। জসীমের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার মাঝেই সুফিয়া খান ফের বলে উঠলো…

‘ তুই তো আমাকে চিনিস জসিম। বিনা উদ্দেশ্যে সুতা বহন করার মতোন পাবলিকও আমি না। আমার এখানে আসার উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই তোর মাথাও চলছে। চলাটাও স্বাভাবিক। দেখ আমি এই পলিটিক্স খেলতে চাইনি বলে আরও অনেক বছর আগে স্বামী সংসার ছেড়েছিলাম। আজ আবার সন্তানের জন্য ফিরে আসলাম। নিহাল সহজ সরল বলে সেজন্য তুই বারবার খেলতে পারিস। সে মন থেকে চিন্তা করে কিন্তু আমি ভাই এই নষ্ট মন বুঝি না। আমার মনে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। আমি শুধু আমার পরিবার বুঝি এর বাহিরে সব বাদ। আমি অপরাধীকে বারবার ক্ষমা করতে পারি না। এতো বড়ো কলিজা নিয়ে ঘুরি না। আমার কলিজা ছোট। সেজন্য যে আমার সাথে যেমন আমি তার সাথে তেমন। তুই ভালো তো আমি ভালো, তুই খারাপ তো আমি তোর থেকে দ্বিগুণ খারাপ। আমার বড়ো ছেলেটার রক্ত গরম সেজন্য হুটহাট রেগে যায়। রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না জেদ বেশি। তবে আমি কিন্তু সেরকম না। আমার সহজে রাগ আসে না। খুবই শান্ত মস্তিষ্কে থাকি। হৈ-হুল্লোড় করে লোক জানিয়ে কাজ করা আমার স্বভাবে নেই। আমি ডান হাতে কাজ করলে বামহাত টের পাবে না। এই যেমন ধর আজ এখানে এসেছি তোকে চিরবিদায় দিতে। বাহিরে পুলিশ ভিতরে তোর সাথে আমি। বাহিরের পুলিশও টের পাবে না তোর মৃত্যুটা কিভাবে হলো বুঝলি?

সুফিয়া খানের কথায় অস্থির উত্তেজিত হলো জসীম। চেয়ারে বসা অবস্থায় ছটফটিয়ে বলল….

‘ কি বলছো তুমি এসব সুফিয়া। আমার মৃত্যু মানে তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?

জসীমের কথায় সুফিয়া খান হেয়ালি করে বলল…

‘ এতো হাইপার হচ্ছিস কেন জসীম? তোর এই মূহুর্তে হাইপার হওয়া খুবই রিস্ক বুঝলি? তুই যতো শান্ত থাকার চেষ্টা করছি ততই তোর লাইফটাইম বাড়বে। নয়তো অতিরিক্ত হাইপার হলে তোর ব্লাড প্রেশার বেড়ে তুই যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারিস বুঝলি?

সুফিয়া খানের কথায় জসীম রাগে চিৎকার করে বলল…

‘ পাগল পেয়েছিস আমাকে? আমি কিছু বুঝি না মনে করেছিস? শুধু শুধু কেউ মারা যাবে কেন? আমার গায়ে হাত দিলে রক্ষা তুইও পাবি না সুফিয়া। আমাকে মারা দায়ে তুইও ফেঁসে যাবি।

জসীমের কথায় সুফিয়া খান নাক মুখ কুঁচকে বলল….

‘ তওবা! তওবা! তোর এই মনে হয়? তোকে মেরে হাত নষ্ট করবো আমি? এতো বছরের তুই আমাকে এই চিনেছিস? তুই তো এমনি মরে যাবি ভাই?তোকে মেরে আমার আবার হাত নষ্ট করতে হবে কেন? বড়োজোর তুই আর ছয় ঘন্টা লাস্টিং করবি তারপর ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

‘ তুই আমাকে মিথ্যা বুঝাতে চাচ্ছিস। আমি বিশ্বাস করি না তোর কথা। তুই আমাকে জানে না মারলে আমি কেন মারা যাব? আমিতো সুস্থ।

সুফিয়া খান আগের নেয় বলল…
‘ অবশ্যই তুই সুস্থ। সেটা আমি দেখছি, থানার পুলিশরা দেখছে, কারাগারে সিসি ক্যামেরা দেখেছে আমরা সবাই জানি তুই সুস্থ। কিন্তু তুই তো মরবি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে। অতিরিক্ত ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে রক্ত চাপে মারা যাবি। ডক্টরের রিপোর্টে তাই এসেছে দেখবি?

সুফিয়া খানের কথায় মনে ভয় জমা হলো জসীমের। সে উত্তেজিত গলায় বলল…
‘ রিপোর্ট? কিসের রিপোর্ট?

‘ তোর ডেডবডির পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট দেখবি?

কথা বলেই সুফিয়া খান জসীমের সম্মতির অপেক্ষা না করে গলা ছেড়ে ডাকল তারেক ছেলেটিকে। সুফিয়া খানের ডাকা সঙ্গে সঙ্গে হাতে ফাইল নিয়ে তৎক্ষনাৎ দৌড়ে আসল তারেক। সুফিয়া খানের হাত বাড়ানো সঙ্গে সঙ্গে সে এগিয়ে দিল বেশ কিছু ডাক্তারি রিপোর্টস। সুফিয়া খান হাতের ইশারায় ছেলেটিকে চলে যেতে বলে, পরপর কাগজ গুলো জসীমের সম্মুখে ছড়িয়ে রাখতে রাখতে বলল…

‘ এই যে দেখ তোর ডেডবডির সাটিফিকেট গুলো। তুই কতো ভাগ্যবান দেখলি জসীম? মরার আগে নিজের পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট গুলো দেখে যেতে পারছিস। তোর সাত কপাল ভাই আমার মতোন এমন বান্ধবী পেয়েছিস জীবনে। তোর কতো খেয়াল রাখছি আমি দেখ।

ডাক্তারী রিপোর্ট গুলো দেখে জসীম তীব্র আক্রোশে ফেটে পড়লো। বাঁধন খোলা হাতটা দিয়ে সকল কাগজ পত্র গুলো দুমড়ে মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে চিৎকার করে বলল….

‘ তুই আমাকে মিথ্যা ফাদে ফেলতে চাচ্ছিস। আমি জানি আমার কিছু হবে না। অকারণে কারও ব্লাড প্রেশার হাই হয়না। আর না হার্ট অ্যাটাক হয়।

‘ অকারণে কেন হবে দোস্ত। অল্প ব্রেইন তো চালা নিজের। আমি এখানে আসতে দুজন হাত মিলালাম প্রথমে? তারপর তোর হাতে সুই বিঁধে ছিল? আমি আবার দরদ দেখিয়ে তোকে পানিও খাওয়ালাম মনে আছে সেগুলো? আসলে প্রথমে সুইটা কোনো সাধারণ সুই ছিল না। ঐটা বিষাক্ত পয়জন তোর বডিতে পশ করা হয়েছে। যেটা তোর হার্ট ব্লক করতে সাহায্য করবে দ্রুত। তারপর যে পানিটা খেলি আমার হাতে? সেটার মধ্যেও আরেকটা পয়জন ছিল। যেটা তোর ব্লাড সার্কুলারকে মাত্রাতিরিক্ত হাইপার করতে সাহায্য করবে। দুটো বিষের প্রতিক্রিয়ায় তোর হায়াত বড়োজোর পাঁচ ঘন্টা। এর মধ্যে তৃতীয় ঘন্টা থেকে তোর শরীর রেসপন্স করা ছেড়ে দিবে। একদম ম*রা লা*শের নেয় পরে থাকবি, তোর শরীরে রুহ তো থাকবে কিন্তু রেসপন্স করার জন্য শক্তি থাকবে না। মজার বিষয় কি জানিস? ছয় ঘন্টা হতে হতে তোর শরীর থেকে দুটো বিষই ভ্যানিস হয়ে যাবে। কারণ বিষ দুটো একটা অপরের প্রতিষেধক, অ্যান্টিডোট হিসাবে কাজ করবে। তাই তোর বডির পোস্টমর্টেম করার সময় রিপোর্টে আসবে তোর সাধারণ হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর হয়েছে।

সুফিয়া খানের কথায় জসীমের সর্বাঙ্গে কাঁপতে লাগল। মৃত্যুকে সবাই ভয় পায়। জসীমও তীব্র ভাবে পাচ্ছে। সে সুফিয়া খানের কাছে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে বলল….

‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও সুফিয়া। আমাকে প্রাণে মেরো না। লাস্ট একটা সুযোগ দাও তারপরও প্রাণে মেরো না আমায়। আমি মরতে চাই না।

জসীমের আর্তচিৎকার সুফিয়া খানের মন গলল না। তিনি আগের নেয় বলল….

‘ তোর অপরাধের লিস্ট তো অনেক বড়ো দোস্ত। ক্ষমা করা যাচ্ছে না। আমার ছেলে আর স্বামী দুজনই তোকে খুঁজছে মারতে সেজন্য আমি ভাবলাম মা হয়ে তোর চেপ্টার ক্লোজ করে যায় বাপ ছেলে অবধি যাওয়ার আগে। শুন জসিম তোরে একটা মনের কথা বলি, তুই তো আমার ব্যাচমেটছিলি, তুই জানিস নিহালকে আমি লাভ ম্যারিজ করেছিলাম। কিন্তু ওকে আমি প্রেম করে বিয়ে করেও ঠকে গেলাম। পনেরো বছর ধরে একসাথে নেই। শালা বুইড়া খাটাশ আমার ফিলিংস বুঝে না। অথচ তুই বুঝলি, আমাকে বিশ্বাস করে বিষও পান করলি। তোর আসলে আমার ইমোশন ধরে টান দেওয়াটা ঠিক হয়নি। আমার ছেলেটা আমার ইমোশন ছিল। আচ্ছা যায় হোক তারপরও আমি দোয়া করবো তুই জাহান্নামে ভালো থাক। আল্লাহ তোকে সর্বোচ্চ জাহান্নাম দান করুক আমিন।

কথাটা বলে সুফিয়া খান জায়গায় ছেড়ে উঠে দাঁড়াল চলে যেতে। সামনে কদম বাড়াতে জসীম হাউমাউ করে চিৎকার করতে লাগলে সুফিয়া খান বিরক্তি স্বরে বলল…

‘ তোর মতোন আমার পরিবারও এমন করেই কেঁদেছিল সেদিন কিন্তু তুই শুনতে আসিস নি তাই আজ আমিও শুনবো না। তারপরও তোর ভালো জন্য বলে যায়, তুই যতো হাইপার, চিৎকার করবি তত দ্রুত তোর শরীরের বিষ এক্টিভ হয়ে কাজ করবে। পাঁচ ঘন্টার জায়গায় তুই এক ঘন্টায় মারা যাবি। সেজন্য চিল্লাচিল্লি না করে আল্লাহকে ডাক হারামি। এখানে তোর চিৎকার শুনার মতো কেউ নেই।

~~
সকাল পাঁচটার ঘরে। বাড়ির গেইট পেরিয়ে পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি এসে থামল সুফিয়া খানের। গম্ভীর মুখোর সুফিয়া খান গাড়ি থেকে নামতে নামতে চোখে পরলো বাগানের খোলা বাংলোর চেয়ারের হাত পা ছড়িয়ে গা এলিয়ে বসা থাকা রিদকে। রিদ চোখের উপর ডানহাত রেখে বামহাত ঝুলছে ফ্লোরে উপরে। গম্ভীর সুফিয়া খান রিদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে হাতের ঘড়িটায় সময় দেখতে পুনরায় কপাল কুঁচকে তাকাল রিদের দিকে। এতো সকালে রিদ না ঘুমিয়ে জাগ্রত অবস্থায় বাগানঘরে কি করছে? ছেলেটা এখনো অনেক অসুস্থ। এই মূহুর্তে রিদের বেশি বেশি ঘুমের প্রয়োজন মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখার জন্য। নয়তো মায়া পাগল হয়ে বেঁচে থাকলেও রিদ বাঁচবে না যদি কোনো কারণে রিদের মস্তিষ্কে পুনরায় রক্ত ক্ষরণ হয় তাহলে। রিদের ফুলবেড রেস্টে থাকার কথা অথচ রিদ দুই দন্ড বেডে থাকছে না সারাক্ষণ অফিসে কাজে দৌড়াদৌড়ি করছে । রেগুলার চেক-আপ পযন্ত করাচ্ছে না সে। বাড়িতেও ফিরে না। আবার সুফিয়া খানের সঙ্গেও কথা বলে না। উনি ফোন দিলে কল রিসিভ করে না। আয়ন, রাদিফ এমনকি নিজের বাবার কলটা পযন্ত রিদ রিসিভ করছে না। সুফিয়া খান বুঝতে পারছে রিদ পরিবারের সকলের উপর রেগে আছে বলে হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলছে না। রিদের রাগটা যে মায়াকে ঘিরে সেটাও তিনি জানেন। রিদের অনুপস্থিতিতে মায়া খেয়াল না রাখাতে রিদ অভিমানে সবাইকে এরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন? যা হবার তা হয়ে গেছে। অতীতে ফিরে উনারা কিছু ঠিক করতে পারবে না কিন্তু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ যেন ভালো হয় সেটার খেয়াল রাখতে হবে উনাদের। সবকিছু ভুলে আপাতত সবার মায়ার পাশে দাঁড়ানো উচিত। এই মূহুর্তে মায়া মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। কাউকে চিন্তে পযন্ত পারছে না। মানুষ দেখতে ভয় পাচ্ছে, কান্নাকাটি করছে। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে তিনি সোজা হসপিটালের গিয়েছিল মায়া কাছে তারপর রাতভর মায়ার সঙ্গে থেকে মাত্র রিদের বাড়িতে ফিরল ফ্রেশ হতে। তারপর আবার যাবেন হসপিটালের। মায়ার সুস্থতা নিশ্চিত করতে যা যা করা লাগে তিনি সেই সবটায় করবেন। কিন্তু স্বামী হিসাবে এই মূহুর্তে রিদকে খুব প্রয়োজন মায়া নয়তো একা মায়া নিজের মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে পারবে না। মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার সুফিয়া খান রিদের খোলা চাউনিঘরে প্রবেশ করতে করতে বলল….

‘ তুমি সারারাত ঘুমাওনি রিদ? এখানেই ছিলে?

সুফিয়া খানের কথায় রিদের মাঝে হেলদোল দেখা গেল না। সুফিয়া খান কপাল কুঁচকে তাকাল রিদের দিকে, রিদ জাগ্রত নাকি ঘুমিয়ে আছে তিনি আপাতত বুঝতে পারছে না। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিদকে পরখ করতে দেখতে পেল রিদের ঝুলন্ত বামহাতটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে র*ক্ত ঝরছে ফ্লোরে। তাজা র*ক্তে তিনি আঁতকে উঠল। বুঝতে পারলো রিদ জাগ্রত অবস্থায় বসে। সুফিয়া খান বড়ো বড়ো পা ফেলে রিদের আহত হাতটা টেনে নিতে নিতে বলতে চাইল….

‘ তোমার হাতে র*ক্ত কিসের রিদ? তুমি আবার মারামারি করেছো? তোমাকে না বলেছিলাম মারামারিতে না জড়াতে, তুমি অসুস্থ। তোমা….

সুফিয়া খানের কথা শেষ হওয়ার আগে রিদ ঝটকায় হাতটা ফেলে দিল নিজের মায়ের। রিদের ব্যবহারে সুফিয়া খান শক্ত গলায় বলল….

‘ রিদ আমি কিছু বলছি তোমাকে।

সামনের টি-টেবিলটা ঠাস করে উল্টে ফেলতে ফেলতে উঠে দাঁড়াল। তিরতির মেজাজে বলল….

‘ তোমাকে না করেছিলাম না আমাকে ভারতি দরদ না দেখাতে। তারপরও কাহিনি করো। বালের নাটক আমাকে দেখাবা না। যাও!

রিদের কথায় সুফিয়া খান শক্ত গলায় বলল….

‘ তুমি বেয়াদবি করছো রিদ।

মায়ের কথায় যেন রিদ আরও চেতে উঠলো। রাগে রি রি করে বলল…

‘ আমি বেয়াদবি করলে তুমি কি করেছো আমার সাথে? তুমি জানতে না আমি বিবাহিত ছিলাম? আমার একটা বউ ছিল? তাহলে কেন তোমরা সবাই মিলে আজ ওকে পাগল বানিয়ে ছাড়লে? আমার সুস্থতার প্রতিদান কি তোমরা আমার বউকে পাগল বানিয়ে নিয়েছো? আজ আমি সুস্থ হয়েও তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। তোমরা সবাই স্বার্থপর। আজ আমি সুস্থ না হলে তোমরা কখনোই মায়ার খোঁজ করতে না? আমার আমানতের খেয়াল তোমরা রাখনি, সেজন্য সে আজ অন্যের বউ হয়ে গেছে। আমি পেয়েও হারিয়ে ফেললাম ওকে। এই যন্ত্রণা তুমি বুঝবে কখনো?

রিদের কথায় সুফিয়া খান নরম হয়ে আসলো। তিনি নিজেও মায়ার ব্যাপারটা নিয়ে অপরাধ বোধে ভুগছেন। যতবার মায়ার দিকে তাকায় ততবার নিজের করা ভুলটা তীব্র ভাবে মাথা নাড়া দিয়ে উঠে। তিনি বাহিরের মানুষের কাছে শক্ত হলেও নিজের পরিবারের দিকটায় তিনি দূর্বল। রিদ কষ্ট পাচ্ছে ভেবে তিনি রিদকে নরম সুরে বুঝাতে চেয়ে বলল…

‘ কোনো কিছু খুব বেশি দেরি হয়নি রিদ তুমি চাইলে সবকিছু আবার ঠিক করতে পারবে। এই মূহুর্তে মায়ার পাশে তোমার থাকা উচিত। সি নিড ইউ।

মায়ের কথায় রিদ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো আরও। সবটা শেষ করে বলছে কোনো কিছু খুব বেশি দেরি হয়নি। আর কি বাকি আছে যেটা ঘটেনি রিদের জীবনে? রিদ রাগে তিরতির করে বলল…

‘ কোনটা বেশি দেরি হয়নি তুমি আমাকে বুঝাও। আমার বউ অন্যের বউ হয়ে গেছে সেটা নাকি মায়ার পাগল হওয়াটা। আর কি দেরি হওয়া বাকি আছে তোমার জন্য আমাকে বলো। আমার বউ আমার জন্য হারাম হয়ে গেছে। তাঁকে চাইলেও দেখতে পারছি না, ছুঁতে পারছি না, দুটো কথা বলতে পারছি না, সারাক্ষণ মনে হয় আমার বউ আমার আর নেই। এখন আমার তার দিকে তাকালেও পাপ হবে। আমার এই দ্বিধাকে কে কাটাবে বলো? তুমি? তুমি যে সিচুয়েশনে বাবা সঙ্গে আছো? সেইম সিচুয়েশনে তোমরা আমাকেও দাঁড় করিয়েছো। সম্পর্কে না রাখতে পারছি আর না বহন করতে পারছি। এর থেকে ভালো ছিল আমি মরে যেতাম তোমাদের ঝামেলাও শেষ হয়ে যেতো।

কথাটা বলেই রিদ হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরে হাঁটল। সুফিয়া খান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল রিদের চলে যাওয়ার দিকে। উনি সহজে কান্না করতে পারে না নয়তো এই মূহুর্তে খুব করে কেদে নিজের ভিতরকার কষ্টটা প্রকাশ করতো। সন্তানদের কষ্টে মায়েদেরও সেইম কষ্ট হয় সেটা প্রকাশ করতো। এই পরিস্থিতি তিনি কিভাবে ঠিক করবেন জানা নেই। তবে তিনিও সহজে হার মানার মানুষ নয়। যেকোনো মূল্যে মায়ার সুস্থতার সঙ্গে ছেলের মনের জোড়াও তিনি লাগাবেন ইনশাআল্লাহ। এই সবকিছুর জন্য প্রয়োজন মায়ার দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করা।

#চলিত…..

#রিদ_মায়ার_প্রেমগাঁথা
রিক্তা ইসলাম মায়া

৬২
রাত নয়টা পনেরোর ঘরে। সারাদিন পর রিদের গাড়ি প্রবেশ করলো বাড়ির চত্বরে। পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি থামতে একজন দেহরক্ষী এগিয়ে আসলো দ্রুত। তাড়াহুড়োয় গাড়ির দরজা টেনে ধরতে গম্ভীর মুখোর রিদ নামলো তাতে। হাতের কোটটা পাশের দেহরক্ষীকে এগিয়ে দিতে দিতে হাঁটলো বাড়ির ভিতরে। পিছনে আসিফ তখনো ড্রাইভারের সাথে বসা। রিদের পরপর সেও গাড়ি থেকে নামল তবে রিদের পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে গেলো না। দেহরক্ষীর হাত থেকে রিদের কোটটা নিজের হাতে নিতে নিতে ফের ঘুরে তাকালো রিদের চলে যাওয়ার পথে। আজ বিগত একমাস বারোদিন হতে চললো রিদ বাংলাদেশে ফিরেছে অথচ প্রয়োজনের বাইরে রিদ আসিফের সঙ্গেও দু’টো কথা বলে না। কাজের সূত্রে দুজনের সার্বক্ষণ একত্রে থাকায় হয় তারপরও রিদ বিগত দিনের কথা জানতে চাইনি আসিফের কাছে, কেনো আসিফ মায়ার খবর নেয়নি রিদের অনুপস্থিতিতে? আসিফ থাকতেও কেনো মায়ার বিয়েটা হলো? কেনো আসিফও রিদের পরিবারের মতোই মায়ার ব্যাপারে উদাসীন রইলো? সবাই না জানুক আসিফ তো জানতো তার রিদ ভাই কতোটা পাগল ছিলো তার বউয়ের জন্য তারপরও সে কেনো হেফাজত করলো না তার রিদ ভাইয়ের আমানতকে? সত্যি বলতে আসিফ এতোদিন ভয় পেতো এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে, তার কাছে উত্তর নেই এসব প্রশ্নের? কিন্তু আজকাল আসিফ খুব করে চাই তার রিদ ভাই এসব প্রশ্ন গুলো করুক আসিফকে! আসিফ কি উত্তর দিবে তা জানা নেই, তারপরও সে খুব করে চাই রিদ অন্তত আসিফের উপর আগের মতো অধিকার বোধ দেখিয়ে প্রশ্ন করুক। মানুষ প্রশ্ন তাঁকেই করে যার উপর মানুষ অধিকারবোধ রাখে। আসিফের উপর তার রিদ ভাইয়ের অধিকারবোধ ছিল সর্বত্র। মূলত রিদের সঙ্গে আসিফের শুধু প্রফেশনাল সম্পর্কে সীমাবদ্ধ ছিলো না। রিদের পার্সোনাল মানুষ গুলোর মধ্যে আসিফও একজন ছিল। দুনিয়া না জানলেও আসিফ জানতো রিদের প্রফেশনাল কিংবা পার্সোনাল বিষয়ের সম্পর্কে। কিন্তু আজকাল রিদ শুধু আসিফকে প্রফেশনাল কাজের মধ্যেই রাখে। পার্সোনাল কোনো বিষয়ে ভিড়ায় না। রিদের এই অদৃশ্য দূরত্বটা আসিফকে খুব করে পুরায়। তার রিদ ভাইয়ের পার্সোনাল মানুষ গুলোর মধ্যে সে নেই সেটা মানতে নারাজ আসিফের মন। সেজন্য আসিফ খুব করে চাই রিদ তাঁকে মায়াকে ঘিরে অসংখ্য অসংখ্য প্রশ্ন করুক। দিন রাত প্রশ্ন করুক। আসিফ উত্তর দিতে না পারলে অপরাধী হয়ে থাকবে তারপরও রিদ প্রশ্ন করুক, অধিকার দেখাক আসিফের উপর। রিদের চলে যাওয়ার দিকে আসিফ আরও একবার তাকালো। ভিতরকার কষ্ট চাপিয়ে হাঁটলো নিজের বরাদ্দকৃত বাগানের কোয়ার্টারের ঘরটার দিকে।

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে করতে রিদের পা থেমে গেলো আলো বিহীন অন্ধকারময় ড্রয়িংরুমটা দেখে। আবছা আলোয় রিদ চারপাশে তাকাতে তার কপাল কুঁচকে এলো বিরক্তিতে। বাড়িতে এতোগুলা কেয়ারটেকার থাকতে রাত নয়টা অবধি এখনো ঘরের আলো জ্বালেনি এই বিষয়টিতে ক্ষিপ্ত হলো রিদ। এমন না বাসায় বিদুৎ নেই। বাহিরে আলো জ্বলছে মানে বাসায় বিদুৎ আছে। বিদুৎ না থাকলেও জেনারেটর আছে বিদ্যুৎতের সমস্যা হওয়ার কথা না। ক্ষিপ্ত রিদ বিরুক্তিতে এগিয়ে গেলো ড্রয়িংরুমের আলো জ্বালাতে, সুইচবোর্ডের অনুসন্ধান করতে হঠাৎই রিদের পা থেমে গেলো অদ্ভুত কিছুর গোঙ্গানির শব্দে। মূহুর্তে সুইচবোর্ডের থাকা রিদের হাতটা স্থির হলো। আলো না জ্বালিয়ে কান খাড়া করলো শব্দের উৎস খোঁজে। ক্রমশয় রিদের বিরক্তি কপালটা শীতল হয়ে আসলো সুফিয়া খানের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে। এই ঘরটায় সুফিয়া খান আর মায়া থাকে। এই মূহুর্তে তার মা সুফিয়া খান বাসায় নেই বাহিরে আছেন কোনো কাজে। বাড়িতে রাফা মেয়েটাও নেই বিগত একমাস হলো। মায়াকে ঢাকা নিয়ে আসার বারোদিন পর রাফাকে ওর পরিবার নিয়ে যায়। তারপর থেকে মায়া সুফিয়া খানের সঙ্গেই থাকছেন। তবে আজ মায়া একা ছিলো বাড়িতে কেয়ারটেকারের সঙ্গে। সকলের অনুপস্থিতিতে মায়ার কক্ষ হতে অদ্ভুত গোঙ্গানির শব্দটা পেতে রিদের বুক মুচড়ে উঠলো ভয়ে। আবারও মায়ার প্যানিক অ্যাটাক করেছে ভেবে ঘরের আলো না জ্বালিয়ে তৎক্ষনাৎ দৌড়ালো সেদিকে। দরজার সম্মুখে যেতে যেতে রিদের পা থমকে দাঁড়ালো আবছায়া আলোয় অন্ধকার রুমের দৃশ্য দেখে। স্তব্ধতার নেয় মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো মূহুর্তে। অন্ধকার রুমের আপত্তিকর দৃশ্যে রিদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতোন অনুভব করলো। সমস্ত সত্তা নাড়িয়ে কেঁপে উঠলো বুক। রিদ স্থির পায়ে, কম্পিত হাত উঠিয়ে ছাপানো দরজাটা ভিতরে ঠেলতে দৃশ্যমান হলো যৌ*ন*তায় লিপ্ত হতে কাউকে। রিদ অনূভুতি চোখে তাকালো সেদিকে। দেখলো খুব জো*ড়া*জুড়ি করেই লোকটা তার যৌ*ন*তা মিটাচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে। রিদের মনে হলো কক্ষে মেয়েটি তার রিত। এই কক্ষে, এই বেডে, তার রিতই শুয়ে থাকে সবসময়। আজ সকলের অনুপস্থিতিতে তার অসুস্থ্য রিতের সুযোগ নিলো অন্যকেউ। রিদ আবারও দেরি করলো তার রিতের কাছে পৌঁছাতে। রিদের ভিতরকার সত্তা তীব্র ভাবে ধিক্কার জানালো রিদকে। তার এতো ক্ষমতা, এতো পাওয়ার থাকার পরও সে দুই দুইবার ব্যর্থ হলো নিজের বউকে বাঁচাতে। রিদের ব্যর্থতা যেনো রিদের উপরই হাসালো। সে তার বউকে প্রথমে অন্যের সাথে বিয়ে হওয়া থেকে আটকাতে পারলো না আর আজ অন্যের লালসা স্বীকার হতে রক্ষা করতে পারলো না। রিদ নিস্তব্ধ শীতল চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। ঠান্ডা পরিবেশেও রিদের কপালের ঘাম ঝরছে কার্নিশ বেয়ে। দরজার উপর হাতটা কাঁপছে তিরতির করে। রিদের গলার গলগণ্ডটাকেও বারবার উপর নিচ হতে দেখা গেল। মানুষ রিদ খানের বাড়ি অবধি আসবে তো দূর রিদের সামনে দাঁড়াতেও ভয় পায় না জানি প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারে সেই ভয়ে। অথচ আজ তাঁর বাড়ি, তার ঘরে, এতো পাহারাদারের মাঝেও রিদের বউ সেইফ রইলো না। লালসার স্বীকার হলো অন্য কারও হাতে। মায়া তো মানসিক রোগী সেজন্য কেউ তার সুযোগ নিলেও সে ঠিকঠাক বলতে পারবে না। এজন্য হয়তো তার অসুস্থ্য বউয়ের সুযোগ নিলো অন্য কেউ? আচ্ছা কার এতো বড়ো কলিজা হলো? যে রিদ খানের বউকে অপবিত্র করলো? কে ছুলো তার বউকে? এসব কতোদিন ধরে হচ্ছে তার বাড়িতে? রিদের অবহেলায় কি সে তার রিতকে হারিয়ে ফেললো? রিদ অনূভুতিহীন চোখে হঠাৎই ঝিমিয়ে উঠলো, নাকে তরল কিছু গড়িয়ে পরল গলগল করে। বামহাতের উল্টো পিঠে রিদ নাক মুছতে মুছতে দেয়াল ধরে দাঁড়াল শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে। কিন্তু তারপরও সেই একই ভাবে গড়িয়ে যাওয়া তরল পদার্থ অনুভব করতে রিদ নিজের ভারসাম্য হারালো। দূর্বলতা নেয় পরে যেতে নিলে পিঠ ঠেকে গেল দেয়ালে। অসাবধানতায় রিদের হাত লেগে ফ্লাওয়ার প্যাশনটা পরলো ফ্লোরে। মূহুর্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল মাটির প্যাশনটা। উচ্চ শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলো ধ*র্ষ*ণ কারী লোকটা। তড়িঘড়ি করে বিছানা হতে মেয়েটিকে ছেড়ে ফ্লোর থেকে শার্ট, প্যান্ট উঠিয়ে জড়াল গায়ে। প্যান্টের চেইন টানতে টানতে বাহিরে বেড়িয়ে আসতেই দরজার সম্মুখে রিদকে নিস্তব্ধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে থতমত খেয়ে বসল বয়স্ক ডাইভার হাশেম। রিদ তখনো অনূভুতিহীন শূন্য চোখে তাকিয়ে রইলো বয়স্ক ড্রাইভার লোকটার দিকে। ক্রমেই চোখ ঘুরাল লোকটা খোলার প্যান্টের চেইনের দিকে। থমথমে বয়স্ক হাশেম রিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে ভয়ে তৎক্ষনাৎ বাহিরের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে প্যান্টের চেইন আটকালো। ঘরের ভিতর থেকে কারও ফুঁপানো কান্নার শব্দ রিদের কানে যেতেই রিদ দেয়াল ধরে বসলো ফ্লোরে। রুমের মেয়েটির আর্তচিৎকার যতোটা গাঢ় হচ্ছিল রিদের নিশ্বাসের গতি ততই ধ্রীর হচ্ছিল। অন্ধকারে মেয়েটির আর্তচিৎকার বলছে রিদ আবারও ব্যর্থ হয়েছে তার রিতকে হেফাজত করতে।
~
সোফায় হাত পা ছড়িয়ে গা এলিয়ে বসে রিদ। ডানহাত ঝুলছে ফ্লোরের উপরে। সেই হাতে ধারালো ছু*রিটা চুইয়ে চুইয়ে র*ক্ত ঝরছে ফ্লোরে। সামনেই লা*শ হয়ে উপুড় হয়ে পরে আছে তখনকার ড্রাইভার হাশেম লোকটা। তার তাজা র*ক্তে রঞ্জিত ফ্লোর। রিদের ছাই রঙের শার্টটা কালো হয়ে আছে রক্তে*র ছিটায়। দু’পায়ের নিচ অবধি ভেসে গেলো সেই র*ক্ত। নিস্তর রিদের একটা পা-টা হাশেমের পিঠে রেখে বাগানের খোলা বাংলোতে গা এলিয়ে সোফায় শুয়ে সে। সামনেই আসিফ থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। নিস্তব্ধ পরিবেশে কারও মুখে কোনো কথা নেই। রিদের ভয়ে আসিফ কথা বলতে সাহসও পাচ্ছে না। বাড়ির ড্রাইভারকে রিদ হঠাৎ কেনো কুঁপিয়ে মারলো তাও বুঝতে পারছে না আসিফ। তবে রিদ যে অকারণে কিছু করবে না তাও জানে আসিফ। ড্রাইভার চাচাকে মারার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো মারাত্মক কারণ হবে রিদ ভাইয়ের এটাও আসিফের ধারণা। কিন্তু হাশেম লোকটা হঠাৎ কি করেছে সেটাই ভয়ে জিগ্যেসা করতে পারছে না আসিফ। পিনপিন নিরবতা বিচ্ছিন্ন করে হঠাৎই গেইট ধরে প্রবেশ করলো সুফিয়া খানের সাদা গাড়িটি। গাড়ির হর্ণের শব্দে আসিফ সেদিকে তাকিয়ে দেখলো সুফিয়া খানের সঙ্গে মায়াকে নামতে। দুজনের হাতেই শপিং ব্যাগ চাপা। তবে মায়া একহাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে অন্য হাতে সুফিয়া খানের হাত জড়িয়ে রেখেছে ভয়ে। আসিফ সুফিয়া খানকে এদিকটায় আসতে দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে তৎক্ষনাৎ রিদকে ডেকে বলল….

‘ ভাই আপনার আম্মু এদিকেই আসছেন। হাশেমের লা*শটা কি করবো? সরিয়ে ফেলবো?

আসিফের ডাকে নিরুত্তর রিদের কোনো হেলদোল দেখা গেল না। আর না চোখ মেলে তাকালো। আসিফ রিদের নড়াচড়া দেখতে না পেরে তৎক্ষনাৎ আবারও তাকালো সুফিয়া খানের দিকে। তিনি মায়ার হাত চেপে এদিকটাই হেঁটে আসছেন। সুফিয়া খান যেমন তেমন মায়ার তো মানসিক অবস্থা ভালো না। মায়ার এই অবস্থায় খু*ন খারাবি কিংবা র*ক্ত দেখাটাও বিপদজনক। একটা স্বাভাবিক সুস্থ মানুষই খু*ন-খারাবি র*ক্ত দেখলে অস্বাভাবিক হয়ে যায়, সেখানে মায়া অসুস্থ্য হয়ে লা*শ দেখলে আরও উত্তেজিত অস্থির, হয়ে পরবে সেটাও স্বাভাবিক। আসিফ মায়াকে দেখে রিদকে সর্তক করতে চেয়ে বলল….

‘ ভাই আপনার মার সাথে ভাবিও আছেন। লা*শটা দেখলে উনি ভয় পাবেন। লা*শটা কি আমি সরিয়ে ফেলবো?

আসিফের কথাটা রিদের কান অবধি পৌঁছালেও রিদের মস্তিষ্ক সেটা ধারণ করতে পারেনি। বেখেয়ালি নিস্তব্ধ নিশ্চুপ রিদ তখনো এককইভাবে শুয়ে। অথচ ততক্ষণে সুফিয়া খানের হাত ধরে মায়া রিদের নিকটবর্তী এসে থমকে দাঁড়ালো র*ক্তে রঞ্জিত লা*শ দেখে। ভয়ার্ত মুখে উত্তেজিত ভঙ্গিতে সুফিয়া খানের হাত টেনে আঙ্গুল তাক করলো রিদের পায়ের নিচে থাকা হাশেমের লা*শটির দিকে, কম্পিত স্বরে বলল…

‘ রর*ক্ত!

মায়ার ভয়ার্ত গলার স্বর অল্প শুনালো রিদের কানে, অথচ তড়াক করে খোলে গেলো রিদের দু’চোখ। মূহুর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অদূরে মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার দিকে। গায়ে সাদামাটা একটা পোষাক জড়িয়ে মায়া ভয়ার্ত মুখে তাকিয়ে রিদের পায়ের নিচে লা*শটার দিকে। রিদ মায়াকে নিজের মায়ের সঙ্গে সহিসালামত দেখে কেমন নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রইলো মায়ার আদলের নিষ্পাপ মুখটার দিকে। রিদের চোখ দেখে তার ভিতরকার গভীরতা প্রকাশ করা দায়। অথচ মায়া পুনরায় একই ভাবে সুফিয়া খানের হাতটা টেনে রিদের পায়ের নিচে লা*শটা দেখিয়ে ভয়ার্ত, অস্থির, উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল….

‘ আম্মু র র*ক্ত! আম্মু ররর*ক্ত!

মায়ার আঙ্গুল তাক করার দিকে সুফিয়া খান কপাল কুঁচকে তাকালো, দেখলো ড্রাইভার হাশেমের লা*শটাকে। তারপরও চোখ ঘুরালো রিদের অনূভুতিহীন শূন্য চোখের দিকে। মায়া তখনো একই ভাবে সুফিয়া খানের হাত টানছে ভয়ে। হাতের শপিং ব্যাগগুলোও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে। মায়াকে ভয় পেতে দেখে সুফিয়া খান রিদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মায়াকে সামলাতে চাইলে মূহুর্তে উঠে দাঁড়াল রিদ। র*ক্তা*ক্ত ছু*রিটি হাতে নিয়েই তৎক্ষনাৎ দৌড়ালো মায়ার দিকে। আতঙ্কিত মায়া আরও আতঙ্কিত হলো রিদকে ছু*রি হাতে ওর দিকে দৌড়ে আসতে দেখে। ভয়ে উত্তেজিত মায়া বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে নিতে কোনো রকমে সুফিয়া খানের হাত টেনে বলল….

‘ আম্মু র!ক্ত! আম্মু! আম্মু…

মায়ার কথা গুলো বলতে বলতে রিদ ততক্ষণে
র*ক্তের উপর দিয়ে দৌড়ে মায়াকে দু’হাতে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল আক্রোশে। হাইটে রিদ লম্বা হওয়ায় মায়ার পা উঠে গেলো ভাসমান শূন্যে। আতঙ্কিত মায়া আরও আতঙ্কিত হলো রিদের শরীরের তাজা র*ক্তে লেপ্টে। রিদের বক্ষে ছটফটিয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো তক্ষুনি। মায়াকে জ্ঞান হারাতে দেখে রিদের হাতে ছু*রিটাও পরলো মাটিতে। তার এতক্ষণ মনে হয়েছিল সে ব্যর্থ হয়েছিলো এই নারীকে হেফাজত করতে। কিন্তু এখন সশরীরে নিজের মায়ের সঙ্গে মায়াকে দেখে রিদের শুকিয়ে যাওয়া কলিজাতে যেনো পানি আসলো। রিদ দু’হাতে মায়াকে জড়িয়ে মায়ার গলায় মুখ ডোবাতে সুফিয়া খান মায়ার হাতটা ছেড়ে হাঁটলো বাড়ির ভিতরে। মা হিসাবে এই মূহুর্তে এখানে দাঁড়ানোটা উনার কাম্য নয় বলে তিনি চলে যেতে যেতে কপাল কুঁচকে তাকালো হাশেমের লা*শটার দিকে। সুফিয়া খানের দৃষ্টি অনুসরণ করে আসিফও উনার পিছন পিছন হাঁটলো বাড়ির ভিতরে। মূলত কারও জানা নেই রিদ কেনো মারলো বাড়ির ড্রাইভারকে তবে হাশেমকে মারার পিছনে যে মায়ার কোনো কারণ থাকতে পারে সেটা ঠিক বুঝলো আসিফ। নয়তো এতোদিন পর হঠাৎ করেই কেন রিদ ভাই মায়া ভাবির জন্য উতলা হয়ে উঠবে। নিশ্চয়ই মায়া ভাবিকে নিয়ে রিদ ভাই কোনো বিষয়ে ভয় পেয়েছে ভিষণ সেজন্য বিগত দিনের ভুল বিভ্রান্তি ভুলে নিজের বউকে কাছে টানছে সে। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? দুজন মিলে গেলেই হয়। সবার করা অপরাধবোধও কমে আসবে তাতে। তাছাড়া এবার নিশ্চয়ই মায়া ভাবি দ্রুত ঠিক হতে পারবে রিদ ভাই সাথে থাকলে সবই সম্ভব। আসিফ রিদকে প্রাইভেসি দিয়ে সরে যেতেই দীর্ঘদিনের টানাপোড়া চাপিয়ে মায়াকে জড়িয়ে পরপর ঠোঁট বুলালো মায়ার গলায়। বেহুশ মায়া রিদের বক্ষে শরীর ছেড়ে দিতে রিদ মায়াকে নিয়ে বসলো জায়গায়। দু’হাতে মায়ার মাথা চেপে মুখটা মুখোমুখি ধরতে কপাল ঠেকালো মায়ার কপালে। রিদ বিরবির করে বললো…

‘ স্যরি রিত! খুব করে স্যরি!
তোকে হারিয়ে বেঁচে থাকার মতো সাহসী আমি নয়।

রিদের শরীরের স্যাঁতস্যাঁতে র*ক্তে মায়ার শরীরেও লেপ্টে গেলো তাতে। রিদের হাতের র*ক্তে মায়ার গলা গাল লেপ্টে যেতে রিদ কপাল উঠিয়ে তাকালো মায়ার আদলে মুখটার দিকে। এই মুখটা তার খুব শখের। এই মুখটা ছাড়া তার দিন যায় না রাত পোহায় না। অথচ তার অনুপস্থিতিতে এই মুখটার প্রতি সকলের অবহেলা জড়িয়ে। রিদ জানে না এই নারীকে ছুয়া তার জন্য কতটুকু হালাল? তারপরও সে এই নারীকে তার অবহেলায় অন্য কাউকে ছুঁতে দিবে না। এই নারী তার না হোক তারপরও রিদের কাছে হেফাজত থাকুক এই নারী। এই নারীকে হারিয়ে সে প্রাণে বাঁচতে পারবে না এই বিষয়টা সে অনেক আগেই উপলব্ধি করেছিলো। তারপরও রিদ বিগত দিনে অনেক চেষ্টা করছিলো এই নারী থেকে দূরে থাকার। কিন্তু রিদ ব্যর্থ এই নারীকে ভুলতে। রিদ জানে না তখন অন্ধকার রুমে মায়ার জায়গায় কে ছিলো সেই কক্ষে তবে এখন এক মূহুর্তে জন্য মনে হচ্ছে অন্য মেয়ের জায়গায় আজ মায়া থাকতে পারতো। রিদের অবহেলায় কেউ মায়ার অসুস্থ্যতার সুযোগ নিতে পারতো। কিন্তু আজ নিজের মায়ের জন্য রিদ মায়াকে হেফাজতে পেয়েছে। গুমোট নিশ্বাসে রিদ মায়াকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বড়ো বড়ো পা ফেলে হাঁটলো বাড়ির ভিতরে। ড্রয়িংরুমে একপাশে রহিমা মাথা নুইয়ে সুফিয়া খানের পা চেপে কান্নাকাটি করছে হাশেমের হাতে ধ*র্ষি*তা স্বীকার হয়ে। আসিফ তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে। রিদ খানের বাড়িতে যে কেউ এসব করার সাহস করতে পারে সেটা রহিমার কাছে এসব না শুনলে বুঝতো না আসিফ। সুফিয়া খান চোখ মুখ কেমন শক্ত করে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে। রিদ বেহুশরত মায়াকে কোলে করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে গম্ভীর সুফিয়া খান চোখ ঘুরিয়ে তাকালো সেদিকে। দেখলো রিদ মায়াকে নিজের রুমে না নিয়ে তার পাশাপাশি অন্য রুমে ঢুকতে। রিদের তখনকার হাশেমকে মা*রার কারণটা চট করে বুঝে গেলো সুফিয়া খান। একজন নারীকে অসম্মান করার বিষয়টা সুফিয়া খানের নীতিমালার বাইরে। নারীকে অসম্মান করা পুরুষ সমাজে নোংরা কীট হয়। আর এসব কীট সমাজে জীবিত থাকলে ক্রময় সমাজটা দূর্ষিত হতে থাকবে। তাই এসব কীটের বেঁ*চে থাকা থেকে ম*রে যাওয়ায় উত্তম। সুফিয়া খান শক্ত চোয়ালে আসিফকে ডেকে বললো…

‘ আসিফ! লা*শটা পুলিশ ম*র্গে পাঠিয়ে দে। ওরা সামলে নিবে।

আসিফ সম্মতি দিয়ে তৎক্ষনাৎ বলল…

‘ জ্বি ম্যাডাম
~~
রেস্টুরেন্টের মুখোমুখি চেয়ারে বসে আয়ন আর জুই। জুইকে এই অবধি আয়নের সঙ্গে দেখা করতে মানাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আয়নকে। বিগত দেড়মাসে অনেক চেষ্টা পর আজ জুই রাজি হলো আয়নের সঙ্গে দেখা করবে বলে। জুই এসেছে সবে বিশ মিনিট হলো। অথচ অল্পতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে। আয়ন সেই তখন থেকে জুইকে বুঝানো চেষ্টা করে যাচ্ছে বিগত দিনে যা হয়েছে তাতে আয়ন ইচ্ছাকৃত ভাবে হার্ট করতে চাইনি কাউকে। একটা ভুল বুঝাবুঝি থেকে এসব কিছু হয়েছে বলে দাবি করলো তারপরও অবুঝ জুই মানতে নারাজ আয়নের কথা। আয়নের বাক্যের মাঝেই জুই কেমন অসন্তুষ্ট গলায় বলল….

‘ আপনার কথা শেষ হয়েছে? আমার আর শুনতে ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যাব।

জুইয়ের কথায় আয়ন খানিকটা শক্ত গলায় বলল…

‘ জুই আপনি এবার বাড়াবাড়ি করছেন। একবার অন্তত শান্ত মাথায় আমার কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ!

জুঁই ত্যাড়া উত্তরে বললো..

‘ আমার মুড নেই আপনার কথা শুনার। সময় থাকলে অন্য একদিন শুনবো আজ আসি। বাই!

কথা বলেই জুঁই দাঁড়িয়ে যায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। জুঁইকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে খপ করে জুঁইয়ের হাতটা চেপে ধরলো আয়ন। জুঁইকে টেনে জায়গায় বসাতে চেয়ে বললো…

‘ আমার কথা শেষ না হওয়া অবধি আপনি কোথাও যেতে পারবেন না জুঁই। জায়গায় বসুন।

আয়নের হাত ধরাতে চেতে উঠলো জুঁই। নিজের হাত মুচড়া মুচড়ি করে ছাড়াতে চেয়ে বললো….

‘ অসভ্যতামির একটা লিমিট থাকে। আপনি সকল লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন। আমার পারমিশন ছাড়া আপনি আমাকে ছুঁলেন কিভাবে? হাতটা ছাড়ুন বলছি অসভ্য লোক।

জুঁইয়ের কথা বাতাসে উড়িয়ে দেওয়ার মতোন করে আয়ন তৎক্ষনাৎ উত্তর দিয়ে বলল….

‘ আমার আপনাকে ছুঁয়ার অধিকার আছে বলেই ছুঁয়েছি জুঁই। আমার শুধু আপনার হাত না আরও অনেক কিছু ছুঁয়া বা দেখার অধিকার আছে। আপনার সাথে আমার সকল লিমিট ক্রস করার রাইটও আছে। তাই চুপচাপ আমার কথা গুলে শুনুন নয়তো আমি বাধ্য হবো আপনার সাথে জোর করতে।

জুঁই জেদ্দি গলায় বললো…

‘ আপনার যা করার আপনি তা করেন। আমার কিছু যায় আসে না। আর কি বাকি রেখেছেন আপনারা আমাদের সাথে করতে? আমার পরিবারের প্রতিটা সদস্য ছন্নছাড়া জীবন পার করছে। মায়া পাগল হয়ে বাড়ি ছাড়লো। আরিফ ভাই কাকীকে নিয়ে ঘর ছাড়লো। মুক্তা আপু স্বামীর সংসার ছাড়লো। কাকা অসুস্থ্য হসপিটালে আছেন। আপনাদের দয়া আমাদের সুন্দর পরিবারটা ধ্বং*স হয়ে গেলো,এতো কিছুর পর যদি আরও কিছু করা বাকি থাকে তাহলে সেটাও করে যান প্লিজ। আমরা সয়ে নিবো, আমাদের চামড়ায় সয়ে গেছে এসব কিছু।

জুঁইয়ের কথায় আয়ন জুঁইয়ের হাতটা চেপে নিজের কাছে টেনে বললো…

‘এসবের পিছনে আমাকে কেন দোষী করছেন জুঁই? আমি সত্যি বুঝতে পারিনি আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনাদের পরিবারের এতো কিছু ঘটে যাবে?

‘ আপনাদের আর কিছু বুঝতেও হবে না। যা হওয়ার আমাদের সাথেই হয়েছে। আপনারা ভালো থাকুন। প্লিজ এবার আমাকে যেতে দিন। ভালো লাগছে না আমার। হাতটা ছাড়ুন।

আয়ন জুইয়ের হাতটা না ছেড়ে বরং আরও জোড়ালো ভাবে চেপে ধরে অসহায় গলায় বললো…

‘ আপনি কখনো আমাকে বুঝতে চান না জুঁই। আমার ভালোবাসা কখনোই আপনার চোখে পরে না। আপ…

আয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই জুঁই চেতে উঠে বললো…

‘ আপনার কি ভালোবাসা বুঝবো আমি? মুখে মুখে চিল্লালে বুঝি ভালোবাসা হয়? ভালোবাসার মানে বুঝি না আমি? আপনি বুঝেন ভালোবাসা কি? আজ যদি রিদ ভাইয়ের জায়গায় আপনি অসুস্থ্য থাকতেন তাহলে রিদ ভাই কখনোই নিজের বউয়ের খোঁজ না নিয়ে থাকতো না আপনার মতোন। আপনার বউ ছাড়া চলে কিন্তু রিদ ভাইয়ের বউ ছাড়া চলে না বলেই সে এতো হাঙ্গামা করতে পারে মায়াকে ঘিরে। আপনার বিয়ে করা বউও তো আমি ছিলাম। কই আমার প্রতি কি দায়িত্ব পালন করেছেন আপনি? খোঁজ নিয়ে ছিলেন আমার বিপদের সময়ে? জানতে চেয়েছিলেন কেমন আছি আমরা? দায়িত্ব কি শুধু আপনার নিজের পরিবারের প্রতিই? আমি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ি না? বিয়ে করলেই সকল দায়িত্ব শেষ? মনে করেছেন বিয়ে করে আমাকে পেয়ে গেছেন তাই না? তাহলে শুনে রাখুন। আমিও বলছি আপনার মতোন মানুষের সংসার আমি জুঁই কখনো করবো না বেঁচে থাকতে।

আয়ন জুঁইয়ের হাত ছেড়ে গালে হাত রাখতে রাখতে অসহায় গলায় বললো….

‘ জুঁই প্লিজ এমনটা বলবেন না। আমাকে অন্তত একটা সুযোগ দিন নিজের ভুল গুলো ঠিক করার প্লিজ।

জুঁই ছিটকে আয়নের হাতটা নিজের গাল থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলল…

‘ একদম আমাকে ছুঁয়ার চেষ্টা করবেন না আপনি। আমার থেকে দূরে থাকুন।

কথাটা বলেই জুঁই আয়নের হাত ছাড়িয়ে চলে যায় বাহিরের দিকে। আয়ন অপরাধী মুখে তাকিয়ে রইলো জুঁইয়ের চলে যাওয়ার দিকে। এসব টানাপোড়ার সম্পর্ক গুলো কবে ঠিক হবে আল্লাহ জানে। তবে আয়ন মনে মনে ঠিক করলো একবার জুঁইয়ের বাবার সঙ্গে দেখা করবে দুজনের বিষয়টা জানাতে।

#চলিত…