রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব-৭৩

0
1

#রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা_ইসলাম মায়া

৭৩
সকাল আটটার ঘরে। বসার ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসল মায়া। হাঁটুতে দুহাত ঠেকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে রিদকে খুঁজল। বিছানায় রিদকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মায়া সোজা হয়ে দাঁড়াল। রিদকে ঘুমে রেখে মায়া নিজের শ্বশুর-শাশুড়ীকে খুঁজতে গিয়েছিল নিচে। কিন্তু নিচে গিয়ে যতটুকু বুঝতে পারল, মায়ার শ্বশুর নিহাল খান এখনও সুফিয়া খানের রাগ ভাঙাতে সক্ষম হননি। বরং দুজনের মধ্যকার মান-অভিমানের পাল্লা তখনো আগের মতোই শক্ত আর কঠিন। আজ সুফিয়া খানের ঢাকা ফেরার আগে মায়া নিজের শেষ একটা চেষ্টা করে আসল। নিহাল খানের সঙ্গে রিদের জায়গায় সুফিয়া খানকে পাঠাতে চেয়ে মিথ্যা বলে আসল যে, রিদ বাড়িতে নেই। রিদ মধ্যরাতে নিজের কোম্পানির কাজে ঢাকা ফিরে গিয়েছে, কখন ফিরবে জানা নেই – এমনটা বাড়ির সকলকেই জানাল মায়া। তবে রাদিফ যদিও সত্যটা জানে, তারপরও সে মায়ার সাথে তাল মিলিয়ে সমানে মিথ্যা বলল সুফিয়া খানকে। এমনকি সুফিয়া খানের আসিফকে দেখার আগে কাজের বাহানা দিয়ে আসিফকে পাঠিয়ে দিল মুরাদপুরে জনসভার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে। আজ বারোটার নাগাদ সমাবেশে যেতে হবে নিহাল খানকে। নির্বাচনের আগে এটাই শেষ সমাবেশ জনসম্মুখে নিহাল খানের। কাল বাদে পরশু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের সেটআপ করতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রিদ। জায়গায় জায়গায় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিজের ছেলেপেলেদের সেটআপের ব্যবস্থাও করিয়ে রেখেছে সে। কিন্তু এর মাঝে থানা থেকে খবর আসায় রিদের অনুপস্থিতিতে নিহাল খান রাদিফকে পাঠাতে চাইলে পুলিশ কমিশনার নিহাল খানের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব রাখেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কে বা কারা নিহাল খান আর রিদের নামে মা*ম*লা করেছে, বিষয়টি কানে যেতে সুফিয়া খান নিহাল খানের সঙ্গে যাবেন বলে পুলিশ কমিশনারকে জানাই। পেশায় সুফিয়া খান একজন আইনজীবী। মা*ম*লার বিষয় গুলো উনার আয়ত্তে হবে বলেই নিহাল খানও সহমত পোষণ করলো সুফিয়া খানকে সঙ্গে নিতে। আর এজন্য মূলত মায়া দৌড়ে রুমে আসল রিদের অবস্থান জানতে। এই মূহুর্তে রিদের নিচে যাওয়া মানে সুফিয়া খানকে নিহাল খানের সঙ্গে পাঠানো যাবে না। মায়া রিদকে ঘুমে দেখে স্বস্তি পেল। এবার ভালোই ভালোই মায়ার শ্বশুর-শাশুড়ী একত্রে বেরিয়ে গেলেই হলো। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুফিয়া খান নিহাল খানের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মায়া রিদকে এই ঘরে আটকে রাখবে। যদি সুফিয়া খান বা অন্য কারও চোখে রিদের উপস্থিতি বাড়িতে দেখে, তাহলে সুফিয়া খান কখনোই নিহাল খানের সঙ্গে যাবে না, বরং রিদ নিজের মা-বাবা দুজনকে রেখে সে একাই চলে যাবে মা*ম*লা সামলাতে, যেটা মায়া চায় না। মায়া চায় ওর শ্বশুর-শাশুড়ী কাজের সূত্রে হলেও দুজন একত্রে থাকুক কিছুটা সময়, এতে যদি দুজনের মান অভিমানে পাল্লা কমে আসে খানিকটা। মায়া বিছানায় শায়িত রিদকে দেখে বন্ধ রুমের পর্দার দিকে এগিয়ে গেল। রিদের রুমে জানালা নেই। দেয়ালের একটা পাশ কাঁচের তৈরি। সেখান থেকে আলো ছড়ায় ঘরে। কাঁচের দেয়ালে একটা দরজাও রয়েছে যেটা ঠেলে মায়ারা বারান্দায় যাওয়া আসা করে। মায়া ঘরের আলো ছড়াতে চেয়ে পর্দা টেনে ধরেও ছেড়ে দিল। অন্ধকার রুমটা আলোকিত করলেই তো মায়ার স্বামীর ঘুম ভেঙে যাবে, তখন এই লোককে মায়া ধরে বেঁধেও রাখতে পারবে না ঘরে। কাজের ব্যস্ততায় চলে যেতে চাইবে, যেটা মায়া এই মুহূর্তে চায় না। মায়া চায় রিদ আরও কিছুক্ষণ ঘুমাক। অন্তত মায়ার শ্বশুর-শাশুড়ী যতক্ষণ না পর্যন্ত চলে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই লোক ঘুমাক। মায়া হাতে পর্দাটা ছেড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল রিদের উন্মুক্ত পিঠের দিকে। খান বাড়ি ভরতি মেহমান হলেও কেউ এই সাত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে না, গুটি কয়েকজন মানুষ ছাড়া। সামনে নির্বাচনের ব্যস্ততায় খান বাড়ির ছেলেদের সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হয় বলে আজকাল সুফিয়া খানও হেনা খান আর মায়ার সঙ্গে ভোরে ওঠেন। কিন্তু বিগত দু’দিন যাবত মায়ার রাতে ঘুম কম হয় বলে মায়াকে দিনেও সময় নিয়ে ঘুমাতে হয়। মায়ার রাতে জাগার কারণটা অবশ্য রিদ নিজেই। না রিদ নিজে ঘুমায়, আর না মায়াকে রাতে ঘুমাতে দেয়। শেষ রাতে দুজন ঘুমাতে গিয়ে রিদের এতো বেলা অবধি শুয়ে থাকার কারণ। আর নয়তো রিদ সবসময়ের মতোই সাতটার নাগাদ ঘুম থেকে উঠে যেত, অথচ সেই রিদ বিগত দুদিন যাবত শত ব্যস্ততা মাথার ওপর রেখেও সে দিব্যি নিদ্রা ব্যস্ত থাকে অনেক বেলা অবধি। মায়া হাতে পর্দাটা ছেড়ে এগোল রিদের দিকে। বলিষ্ঠ দেহে রিদ উপুড় হয়ে বালিশের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে। রিদের শক্তপোক্ত পিঠে বেশ কিছু আপত্তিকর দাগ মায়ার চোখে পরতে মায়া রিদের পিঠের উপর ঝুঁকে গেল। আলতো হাতে রিদের পিঠে স্পর্শ করে মায়া সেখানটায় ঠোঁট ছোঁয়াল। রিদের শরীরের স্মেল বরাবরই মায়াকে ভিষণ টানে। মায়া মনোমুগ্ধের মতো রিদের উন্মুক্ত পিঠের পরপর বেশ কয়েকবার ঠোঁট ছুঁয়ে উঠল উপরে। রিদের গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বলল…

‘ আমার খুব পছন্দের মানুষ আপনি, নেতা সাহেব। আপনাকে পেয়ে দুনিয়াটা আমার স্বর্গসুখের মনে হয়। আপনি শুধু আমার সঙ্গী নন, আমার সোলমেটও। আপনাকে ভিষণ ভালোবাসি আমি। আই লাভ ইউ আমার নেতা সাহেব।

কথাটা বলেই মায়া রিদের কানে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়াল। খুব স্বাভাবিক নেয় চলে যেতে চেয়ে পিছন ঘুরতেই রিদ দক্ষ হাত বাড়িয়ে তৎক্ষণাৎ মায়ার চুলের বেণি টানতে মায়া মৃদু চিৎকার করে খেই হারিয়ে পড়ল রিদের উপর। রিদ তৎপর করে মায়াকে টানল নিজের বাহুবেষ্টনীর ভিতর। দু’হাতে মায়াকে জাপটে জড়িয়ে ধরে মায়ার গলায় মুখ ডোবাতে মায়া ছটফট করে উঠল নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে। রিদ ঘুমন্ত গলায় বিরক্তির রেশ টেনে বলল…

‘ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি রিত।

রিদের ভারি আওয়াজে মায়া খানিকটা দমে যায়। শিরশির করে ওঠে মায়ার পায়ের তলপিঠ। ভয়ার্ত মায়া শুকনো ঢোক গিলে বলল…

‘ প্লিজ ছাড়ুন। যেতে দিন আমাকে।

‘নো।

‘প্লিজ।

রিদ ভারি আওয়াজে মায়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে বলল…

‘ ঘুমিয়ে ছিলাম, ভালো লাগেনি তোমার। নাও, আই ওয়ান্ট ইউ ওয়ান মোর টাইম।

রিদের কথায় মায়া লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। তারপরও রিদকে বাঁধা দিয়ে ছটফটিয়ে উঠে বলল…

‘ প্লিজ না। ছাড়ুন! আমি বারবার গোসল করতে পারব না। আমার চুল এখনো ভেজা, শুকায়নি দেখুন।

মায়ার কথায় রিদ আগের মতোই বিরক্তি গলায় বলল…

‘বেয়াদব মহিলা। বিবাহিত মেয়েদের বারবার গোসল করার নিয়ম আছে। এতে পাবলিক মাইন্ড করবে না। বরং তোমার গোসল না করা নিয়ে পাবলিক মাইন্ড করতে পারে। জিজ্ঞাসা করো দেখো।

কথাটা বলেই রিদ মায়ার গালে শব্দ করে চুমু খেল। পরপর মায়ার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে গলায় নেমে যেতেই মায়া রিদকে ফের বাঁধা দিয়ে বলল…

‘আপনার যতসব ধান্দাবাজি কথা। ছাড়ুন আমাকে। সবাই আপনার জন্য নিচে অপেক্ষা করছে, যাবেন না সেখানে?

‘না।

রিদের অসম্মতিতে মায়া নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে এতক্ষণের লুকিয়ে রাখা কথাগুলো রিদকে বলে দিয়ে বলল…

‘ কারা যেন আপনাদের নামে মা*ম*লা করেছে। সেজন্য আব্বু-আম্মু থানায় যাচ্ছে, আপনি যাবেন না?

মায়া সত্যিটা রিদকে বলতে চায়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে মায়া রিদের সঙ্গে আটকা থাকতে চায় না বলে বাধ্য হয়ে সত্যিটা বলতে হলো। মায়ার কথা শুনে রিদ তৎক্ষণাৎ উঠে বসল বিরক্তিতে। রাগে চোয়াল শক্ত করে তৎক্ষণাৎ গায়ে ব্ল্যাঙ্কেটটি উড়িয়ে ফেলতে ফেলতে বলল…

‘হারামির বাচ্চারা আর মানুষ হলো না। শেষ মুহূর্তে এসেও ক্যাঁচাল করতে হবে। নিষেধ করার পরও বারবার মরতে আসে আমার কাছে, ছেহ।

রিদের মেজাজি কথায় মায়া বোকার মতো তাকিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসল। রিদ খালি গায়ে টাউজার প্যান্ট পরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে মায়ার উদ্দেশ্যে বলল…

‘ আমার কাপড় বের করো রিত, কুইক।

মায়া রিদের পিছন ডেকে বলল…

‘আপনি গোসল করবেন না?

রিদ চলে যেতে চেয়েও পিছন ঘুরে মায়া দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল….

‘ কয়বার গোসল করব? একবার তো করলাম।

মায়া সরল ভাবে বলল…

‘ আপনার তো সকালে গোসল করার অভ্যাস আছে, তাই বললাম আরকি।

মায়ার কথায় রিদ সামনে ঘুরে যেতে যেতে সোজাসাপ্টা উত্তরে বলল…

‘ সকালে গোসল রাতে করা শেষ। সকালে আমি ভার্জিন, সেজন্য গোসল নট এলাউ।

রিদের কথায় মায়া মুখ বাঁকাল। এতো কিছু করেও মানুষ ভার্জিন হয় কিভাবে? আজব। রিদ ওয়াশরুমে ঢুকতে মায়া অগোছালো বিছানা গুছাল। রিদের জন্য সাদা পাঞ্জাবি নামিয়ে রাখল। এর মাঝে মায়ার শ্বশুর-শাশুড়ীর অবস্থান জানতে দৌড়ে একবার নিচে গিয়ে দেখতে পেল সুফিয়া খান আর নিহাল খান ততক্ষণে সবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। তাদের আরও পনেরো-বিশ মিনিট সময় লাগবে বের হতে, ততক্ষণে রিদও নিশ্চয়ই ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসবে। মা-বাবার সঙ্গে রিদের অনায়েসেই দেখা হয়ে যাবে, তখন আর সুফিয়া খানকে নিহাল খানের সঙ্গে পাঠানো যাবে না। চিন্তিত মায়া কী করবে ভেবে না পেয়ে পুনরায় তাড়াহুড়ো করে রুমে আসল রিদকে আটকাতে। ততক্ষণে রিদ ফ্রেশ হয়ে গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়েছে। আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে চুল সেটআপ করে শরীরে পারফিউম মাখতে মায়াকে দেখল তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকতে। রিদ আয়না দিয়ে মায়াকে পর্যবেক্ষণ করে বলল…

‘ কী সমস্যা? এইভাবে দৌড়াদৌড়ি করছ কেন?

চিন্তিত মায়া রিদের দিকে এগিয়ে গেল। যেভাবেই হোক রিদকে বিশ মিনিট রুমে আটকে রাখতে চায় সে। কিন্তু কিভাবে কী করবে বুঝতে না পেরে মায়া রিদের পেটের কাছটার পাঞ্জাবি মুঠোয় চেপে মিনমিন করে বাহানা বানিয়ে বলল….

‘আমার না আপনার প্রতি খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।

মায়ার কথায় রিদ কপাল কুঁচকে মায়ার মুঠোয় চেপে ধরা হাতটার দিকে তাকাল। একটু আগেই তো এই নারী তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে ছটফট করছিল, আর এখন হুট করেই তার প্রতি প্রেম প্রেম পাচ্ছে? এতো ভদ্র মহিলা তো এই নারী না। রিদ অবিশ্বাস্য গলায় মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…

‘ আপনার প্রেম প্রেম পাওয়ার পিছনে কাহিনি কী ম্যাডাম? সহজে ধরা দেওয়ার মানুষ তো আপনি না। মতলব বলুন।

‘কোনো মতলব নেই। সত্যি বলছি। আপনাকে দেখলেই আমার প্রেম প্রেম পায় শুধু। আপনি তো আমার স্বামী, তাই আমার হক আছে আপনার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর।

মায়ার কথায় রিদ গলল না। বরং আগে নেয় বলল…

‘ওকে ম্যাডাম, কোনো সমস্যা নেই। মনকে আপাতত তালা মারুন। আপনার হক তোলা রইল দুইদিনের জন্য। নির্বাচন শেষে আপনাকে নিয়ে দেশ ছাড়ব আমি। তখন আপনার সব ধরনের হক মনোযোগ সহকারে আদায় করব আমি। তারপরও এখন না, আমার সময় নেই।

মায়া রিদের দেশ ছাড়ার কথাটা তেমন লক্ষ্য করেনি রিদকে আটকানোর চিন্তায়। রিদ মায়াকে ফিরিয়ে দিতে মায়া ফের রিদের পাঞ্জাবি মুঠোয় চাপল। রিদকে আটকাতে চেয়ে নতুন ফন্দি এঁটে মিনমিন করে বলল….

‘তাহলে আমি আপনার সাথে যাব। আমাকে নিয়ে চলুন।

রিদ খানিকটা বিরক্ত হলো মায়ার উপর। নির্বাচন শেষ সময়টা খুব ব্যস্ততা যায় রিদের। ব্যস্ততায় রিদ কোথা থেকে কোথায় কোথায় যাবে, সেটা রিদ নিজেও জানে না। নির্বাচনের আগে রিদের এই দুইদিন বাড়ি ফেরা পর্যন্ত হবে না, সেখানে রিদ মায়াকে নিয়ে কোথাও যাবে সে? রিদ মায়ার কথায় খানিকটা বিরক্ত গলায় বলল…

‘রিত, আমি সমাবেশে যাচ্ছি।

রিদের কথায় তৎক্ষণাৎ উত্তর আসল মায়ার। মিনমিন সুরে বলল…

‘তাহলে আমিও যাব আপনার সাথে।

রিদ মায়ার হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল…

‘ মেজাজ খারাপ করবে না রিত। আমি সমাবেশে যাচ্ছি। আর সমাবেশে মেয়েরা যায় না। জেদ করবে না।

কথাটা বলেই রিদ মায়ার হাত পাঞ্জাবি থেকে ছাড়িয়ে সামনে হাঁটতে চাইলে মায়া পুনরায় রিদের পাঞ্জাবি টেনে ধরতে ধরতে বলল…

‘আমাকে না নিয়ে গেলে আমি আপনাকে ভোট দেব না কিন্তু।

‘তোমার ওই একটা ভোট লাগবে না আমার, সরো!

মায়া ফের রিদের পথ আটকে দাঁড়ালো। দু’হাতে মুঠোয় রিদের পাঞ্জাবি চেপে বলল…

‘একটা ভোট কেন হবে? আমি, জুই, আরিফ ভাই – আমরা কেউ আপনাকে ভোট দেব না কিন্তু।

রিদ বিরক্তিতে ঝেড়ে মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…

‘তোমার ভোটাধিকার হয়েছে?

‘ভোটাধিকার হতে হবে কেন? আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আপনাকে জাল ভোট দেব।

রিদ মায়ার কপালে টোকা দিতে দিতে বলল…

‘এমন নাবালিকা নাগরিকের ভোট কেন্দ্রে পৌঁছাবে না, ম্যাডাম। আগে বড় হোন, তারপর ভোট দিতে আইসেন। সরেন এখন। রাস্তা দিন।

রিদ চলে যেতে চাইলে মায়া আবারও রিদের পাঞ্জাবি টেনে বাহানা বানিয়ে বলল…

‘শুনুন না, প্লিজ। আমার সত্যি সত্যি আপনার প্রতি ভীষণ প্রেম পাচ্ছে। আপনি আমাকে না নিয়ে যান, অন্তত একটু সময় ডো দিয়েন যাবেন প্লিজ। বেশি না, একটু রোমাঞ্চ করব আপনার সাথে। প্রমিস।

মায়ার কথায় রিদের দৃষ্টি গাঢ় হলো অবিশ্বাস্যে। যে মেয়ে ধরলে শুধু পালায় পালায় করে, সে মেয়ে স্বেচ্ছায় বারবার রোমাঞ্চের প্রস্তাব রাখছে রিদের কাছে — বিষয়টা আসলেই সন্দেহজনক। রিদ মায়ার দিকে সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…

‘কী ব্যাপার ম্যাডাম? মতিগতি তো ভালো না। কী চলে মাথায়, হুম?

‘আপনি চলেন শুধু।

‘তাই?

‘ হুম!

‘বিশ্বাস তো হচ্ছে না।

‘আমি যাই করি আপনি খালি সন্দেহ করেন। ভালোবাসেন না। আপনি বসুন। আমি রোমাঞ্চ করব। তাহলেই আপনার বিশ্বাস হবে। বসুন।

সামনে থেকে বউয়ের রোমাঞ্চের প্রস্তাব পেয়ে রিদ অবিশ্বাস্যে বিছানায় বসল। বিছানায় বসল বলতে, মায়া নিজেই ঠেলে রিদকে বিছানায় বসাল। রিদ তখনো সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে। বউ তার কী রোমান্স করবে, এক মূহুর্তের জন্য রিদও দেখতে চায়। একটু আগেই তো রিদ এই নারীকে কাছে টানতে চেয়েছিল, তখন কতোই না তালবাহানা করে রিদের থেকে নিজেকে ছাড়ল। আর এখন রিদ চলে যেতে চাইছে, সেখানে এই নারী নিজের থেকে রিদের পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে বারবার রোমান্সের প্রস্তাব দিয়ে — মানে বিষয়টা আসলেই সন্দেহজনক রিদের কাছে। মায়া রিদকে বিছানায় বসিয়ে গায়ের ওড়না খোলে মাথায় হিজাবের মতো গোল করে বেঁধে নিতেই রিদ সন্দিহান দৃষ্টিতে মায়ার কার্যক্রম লক্ষ্য করে বলল…

‘কী ব্যাপার? রোমান্স করতে কাপড় খুলতে হয়, তুমি বাঁধছ কেন?’

মায়া রিদের কথার তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে দিতে বলল….

‘রোমান্স করতে আগে আমাকে সতেজ হতে হবে। আমি এখন শুকিয়ে আছি। আমার বড্ড পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। নিচে যাব ঠান্ডা পানি পান করতে। ফিরে আসব এক মিনিটের ভিতরে, তারপর দুজনের উড়াধুরা রোমান্স চলবে। আপনি বসুন, আমি আসছি কেমন।

‘ভণ্ডামি করো আমার সাথে? এই রুমে ফ্রিজ আছে, সেখানে ঠান্ডা পানি পাবে তুমি। নিচে যেতে হবে না।

রিদের কপাট রাগে মায়া রিদকে তেল মারার মতো করে বলল…

‘ আপনি বড্ড অধৈর্য্য! কিচ্ছু বুঝেন না। আপনার জন্য বিশেষ রোমান্সের সারপ্রাইজ আছে। আমি নিচে না গেলে হবে না। আপনি বসুন। আমি ফিরে এসে রোমান্স করব। খবরদার কোথাও যাবেন না কিন্তু। আমি এক্ষুনি আসছি।

মায়া আসছি বলে রিদকে রুমে বসিয়ে রেখে উধাও হয়ে গেল। মায়া এক মিনিটে ফিরে আসার কথা বলে রিদকে প্রায় ৪০ মিনিটের ঊর্ধ্বে বসিয়ে রাখল রোমান্সের আশা দিয়ে। রিদ অবশেষে অধৈর্যের মতোন উঠে দাঁড়াল। সে খুব করে বুঝতে পারছে তার বউ ভণ্ডামি করেছে তার সাথে। রোমান্সের কথা বলে ধোঁকা দিয়েছে, কিন্তু রিদ জানে না মায়া এই কাজটা কেন করল। রিদ রেগেমেগে নিচে নামতেই মায়াকে দেখতে পেল বসার ঘরে হেনা খান আর নিজের মা রেহেনা বেগমকে ট্রে-তে তুলে নাস্তা দিতে। মায়া যে রিদকে রুমে বসিয়ে এসেছে, সেই খবর মায়ার নেই, সে দিব্যি হেনা খান আর রেহেনা বেগমকে নাস্তা দিতে ব্যস্ত। মায়া নাস্তার প্লেট রেখে খালি ট্রে নিয়ে চলে যেতে গিয়ে ক্রসিং পথে রিদের দেখা পেতেই মায়া রিদকে দেখে আশ্চর্য হওয়ার মতো করে বলল….

‘সেকি! আপনি এখনো যাননি? এতক্ষণ রুমে কি করছিলেন?

মায়ার কথায় রিদ দাঁতে দাঁত পিষল। হেনা খানের সঙ্গে রেহেনা বেগমও মায়ার কথায় রিদের দিকে তাকাল। রিদ হেনা খান আর রেহেনা বেগমকে একত্রে দেখে মায়াকে কিছুই বলল না, বরং দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগে কটমট করল। মায়া এড়িয়ে রিদ চলে যেতেই মায়া ঠোঁট উল্টালো। মূলত মায়ার সত্যি মনে ছিল না যে সে রিদকে রুমে বসিয়ে এসেছিল। ব্যস্ততায় রিদের কথা ভুলে বসেছিল মায়া। তাছাড়া তখন মায়া নিচে নেমে সুফিয়া খানকে দেখল নিহাল খানের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে। মায়ার মিশন সাকসেসফুল হওয়ায় মায়া আর রুমে ফেরেনি, বরং নিচে থেকে যায়। মায়ার মিশন সাকসেসফুল না হলেও মায়া আর দ্বিতীয়বার রুমে ফিরে যেত না। রিদকে আটকানোর জন্য তখন মায়া রোমান্সের মিথ্যা বাহানা বানিয়েছিল। রিদ রাগে চোয়াল শক্ত করে পার্কিং এরিয়াতে যেতে আয়নের দেখা পেল রাদিফের সঙ্গে। রাদিফের সঙ্গে আয়নও জানত রিদ বাড়িতে আছে সেটা, সেজন্য মূলত ওরা দুজন রিদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। রিদ আশেপাশে আসিফকে না দেখে হাঁক ছেড়ে ডাকল আসিফকে…..

‘আসিফ কই তুই? গাড়ি বের কর।

রিদের গলা কানে যেতে কিছুদূর দাঁড়িয়ে থাকা রাদিফ পার্কিংয়ের দিকে দৌড়ে যেতে যেতে বলল….

‘ভাই, আসিফ ভাইকে মুরাদপুরে পাঠানো হয়েছে। তোমাকে কল দিয়েছিল আসিফ ভাই, কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ থাকায় বলে যেতে পারিনি।

রাদিফের কথায় রিদ উত্তর করল না। দুই রাত ধরে রিদ ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজের ফোনের সঙ্গে মায়ার ফোনটাও বন্ধ করে রাখে, যাতে কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে। বউকে নিয়ে একান্ত সময়ে কারও ডিস্টার্বেন্স পছন্দ নয় বলে সে এমনটা করে। রাদিফের গাড়ি বের করার মধ্যে দিয়ে দুজন বডিগার্ড এগিয়ে আসে। রাদিফ তাদের গাড়ি বের করতে বলে সে পার্কিংয়ের দিকে দাঁড়াল। রিদ গাড়ির উদ্দেশ্যে কিছুটা দূরে দাঁড়াতেই আয়ন রিদের মুখোমুখি দাঁড়াতে দাঁড়াতে তীক্ষ্ণ গলায় বলল…

‘ কী ব্যাপার ভাই, আজকাল তোর ফোন বন্ধ থাকে কেন? তুই তো ফোন বন্ধ রাখার মানুষ না। কতো কল করলাম তোকে পেলাম না কেন? কাহিনি কী বলতো?

‘কোনো কাহিনি নেই। প্রয়োজনে ফোন বন্ধ রেখেছিলাম ব্যাস। এবার সর সামনে থেকে।

আয়ন সরল না, বরং একহাতে রিদের কাঁধ চেপে অপর হাতে রিদের গলায় থাকা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজটা চট করে টেনে ফেলতে ফেলতে বলল…

‘ সরা যাবে না ভাই বরং তোর গলায় থাকা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে বুঝলি? গলায় এসব লাগিয়ে ঘুরিস কেন বলতো? বউ কাম*ড়া*য় সেজন্য?

রিদ বিরক্তির সহিত আয়নের হাতটা ঝাঁকিয়ে নিজের কাঁধ হতে ফেলে আয়নকে ঠেলে দূরে সরাতে সরাতে বলল….

‘ সর সামনে থেকে। মেয়ে মানুষের মতো ঘেঁষাঘেঁষি করবি না দূরে যাহ।

আয়ন রিদের রাগের পাত্তা না দিয়ে বরং হাতে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজটি পুনরায় রিদের গলায় চেপে লাগাতে লাগাতে বলল….

‘সে তুই যতই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ঘুরিস না কেন, আমার আগে বাবা হতে পারবি না বুঝলি। তোর মেয়ের জামাই তো আমার ছেলেই হবে। এখন তুই যদি চাস বিয়াই বিয়াই একটু ঘেঁষাঘেঁষি, কোলাকুলি করবি তাহলে আয় আমার বুকে আয় ভবিষ্যৎ বিয়াই সাহেব।

কথা বলে আয়ন রিদকে দু’হাতে জাপটে জড়িয়ে ধরতে রিদ বিরক্তিতে ঠেলে আয়নকে সরাতে সরাতে মেজাজ দেখিয়ে বলল…

‘আয়ন, ছাড়! মাইয়া মানুষের মতো ঘেঁষাঘেঁষি স্বভাব তোর গেল না ছাড়!

প্রথমে মায়া আর এখন আয়নের কাণ্ডে পরপর দুবার রিদের মেজাজ চটে গেল। রিদ রাগের তোপে আয়নকে ঠেলে সরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল গাড়ির দিকে। ড্রাইভার গাড়ি বের করতে রিদ পিছনের সিটে উঠে বসল। রাদিফ ড্রাইভারের সঙ্গে বসতে আয়ন দৌড়ে এসে রিদের সঙ্গে পিছনের সিটে বসল দুষ্টু হেঁসে। গন্তব্য সকলের একই। চলন্ত গাড়িতে রাদিফ বলল…

‘ভাই, থানা থেকে কল এসেছিল। কারা যেন মামলা…

রাদিফের কথা শেষ করার আগেই রিদ বলল….

‘জানি বিষয়টা।

রিদ এসব বিষয়ে জানবে সেটা রাদিফ আগেই বুঝতে পেরেছিল। কোনো কিছু ঘটার আগে সেই খবর কোথা থেকে যেন রিদের কাছে আগে আগে পৌঁছে যায়। অবশ্য রিদের নেটওয়ার্ক বিশাল বড়ো বলেই সবকিছুর খবর দ্রুত রিদ খানের কানে পৌঁছায়, তাই রাদিফ রিদের কাছে মা*মলা দাখিলকারীর তথ্য জানতে চেয়ে বলল…

‘এই অসময়ে মা*মলাটা কারা দাখিল করেছে, ভাই?

‘নাদিমের বাবা জামাল চেয়ারম্যান।

রিদের কথা শুনে কপাল কুঁচকে এলো রাদিফের। অবিশ্বাস্য গলায় রিদকে শুধিয়ে বলল…

‘ভাবীর সঙ্গে যে পরিবারের ছেলের বিয়ের কথা হয়েছিল, ওই পরিবার থেকে মা*মলা করা হয়েছে?

নিশ্চুপ রিদকে আরও গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে রাদিফ সাহস করে রিদকে আর কোনো প্রশ্ন করল না। বরং রিদের নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো রিদ যেহেতু এই বিষয়টা জানে, তারমানে অবশ্যই এই বিষয়ে সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। রিদ খান মানেই সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান।
~~

‘ আমার নতুন করে সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে ফিরিয়ে দিলে বেশি কষ্ট পাবেন রাফা?

থমথমে মুখে কথাটি বলে নাদিম রাফার দিকে তাকাল। নত মস্তকের রাফা ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকাতে চাইল, কিন্তু চোখের অশ্রুকণায় বারবার গাল ভিজে উঠছিল বলে রাফা আনাড়ি হাতে বারবার নিজের গাল মোছে। নাদিমের সামনে নিজেকে আর দুর্বল দেখাতে চায় না রাফা। অনেক তো ভালোবাসার পিছনে ছুটে আত্মসম্মান খোয়াতে হলো রাফাকে, এবার না-হয় ভালোবাসার পিছু ছাড়ল সে। যে চলে যেতে চায় তাকে কি বেঁধে রাখা যায়? যায় না। রাফাও আর নাদিম নামক মানুষটার পিছনে ছুটবে না। নত মস্তকের রাফা নিজের গাল মুছতে মুছতে খানিকটা শক্ত হতে চেয়ে নাদিমকে বলল—

‘আপনার যাওয়ার হলে আপনি চলে যেতে পারেন। আমি কষ্ট পাব না।

রাফার কথায় নাদিম অনুতপ্ত হলো। সে জানে রাফা কতটা চায় তাকে। কিন্তু এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সে চায় মায়াকে। মায়া নাদিমের বাল্যকালের ভালোবাসা, যাকে ভুলা এত সহজ নয়। নাদিম জানে ভালোবাসার মানুষকে হারানো কতটা বেদনাদায়ক। সেজন্য নাদিম রাফাকে ফিরিয়ে দিতেও অপরাধবোধে ভুগছে। এই রাফা তার বিপদে দিশেহারা হয়েছিল। সেদিন রিদ খান নাদিমকে যখন র*ক্তা’ক্ত অবস্থায় রেস্টুরেন্টে ফেলে যায় তখন এই রাফা নামক মেয়েটিই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তার পাশে থেকেছে। রাফার মা-বাবার থেকে টাকা নিয়ে তার চিকিৎসা করেছে, দিনরাত সেবা করেছে। খুব কাছ থেকে নাদিম রাফাকে দেখেছে, মেয়েটা আপন মানুষের প্রতি খুব যত্নশীল। শুধু একটা মিথ্যা বিয়ের পিছনে পড়ে নাদিমকে মনে মনে নিজের স্বামী ভেবে গ্রহণ করে বসে আছে। সেজন্য নাদিম বিগত দিনে খুব করে চেয়েছিল রাফার ভুল ভাঙাতে। রাফাকে বোঝাতে রাফা মিথ্যা একটা সম্পর্কের পিছনে ছুটছে। সেজন্য তো নাদিম টানা তিন দিন চিকিৎসার পর সে রাফা আর রাফার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে আশুগঞ্জ ফিরে যায়। দশ দিন পর পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে আসে রিদ খানের ডাকে। বলতে গেলে নাদিম স্বেচ্ছায় চট্টগ্রামে আসে রিদ খানের সঙ্গে দেখা করতে, নাদিমের বাবার হয়ে ক্ষমা চাইতে। নাদিম শুনেছে, নাদিমের বাবা একবার খান পরিবারের ছোট ছেলে রাদিফ খানের ওপর মানুষ দিয়ে হামলা করিয়েছে, আবার রিদ খান ও নিহাল খানের নামে মা’মলা করেছে এরমাঝে। সেজন্য নাদিম বাবার হয়ে ক্ষমা চেয়ে মা’মলাগুলো তুলে নিতে এসেছে। বিগত দিনে চট্টগ্রামে থেকে নাদিমের অভিজ্ঞতায় এতটাই বুঝেছে যে রিদ খান ও তার পরিবার কোনো সাধারণ পরিবার নয়। রিদ খানের পরিবারের সঙ্গে টক্কর নিয়ে নাদিমের বাবা বোকামি করেছে সেটা বুঝেই নাদিম আগ বাড়িয়ে সবকিছুর শেষ করতে এসেছে। অবশ্য রিদ খানের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা অনেকটা মীমাংসা পথে এসেছে। থানার মা*মলা গুলো নাদিম তুলেও নিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নিহাল খানের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে নাদিম, তারপরও পরিশেষে রাফার সঙ্গে শেষ বিদায় নিতে এসেছিল সে। কিন্তু নাদিমের রাফার জন্য মনে ভালোবাসা না থাকলেও বেশ মায়া জন্মেছে বিগত দিনে। সেই মায়ার টানে রাফাকে ফিরিয়ে দিতে গিয়েও কোথাও যেন একটা আটকে যাচ্ছে নাদিম। মানুষ বলে না, ভালোবাসা না থাকলেও মানুষ মায়ায় পড়ে সংসার করে, কিন্তু একবার মায়া চলে গেলে মানুষ ছত্রিশ বছরের সংসার ছাড়তেও দ্বিধা করে না। মায়া হচ্ছে এক ভয়ংকর জিনিস। মানুষ মায়ায় জড়িয়ে গেলে নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে যায়। নাদিমের সঙ্গে আপাতত তাই হচ্ছে। মায়াকে সে ভালোবাসে, কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত সে রাফার প্রতি বেশ মায়ার টান অনুভব করছে। যার জন্য রাফাকে ছেড়ে দিতেও পারছে না। তার মন সায় দিচ্ছে না এটা করতে। এই মুহূর্তে নাদিমের কী করা উচিত বুঝতে না পেরে গভীর শ্বাস টানল নিজের মাঝে। ধীরস্থিরভাবে বলল—
‘ আমার আমেরিকা যাওয়ার ভিসা বাতিল হয়ে গেছে রাফা। ভিসা বাতিলের পিছনে অবদান অবশ্য আপনার দুলাভাই রিদ খানের। আমাদের পারিবারিক ব্যবসায় তিনি প্রশাসনিক নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন। বলতে পারেন রিদ খান তার সর্বত্র ক্ষমতা দেখিয়েছেন তার বউকে বিয়ে করতে চাওয়ার অপরাধে। আমার পরিবার খুব বিপদে আছে, আমরা পথে বসে যাব যদি রিদ খান আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ না দেন তো। যদিও আমাকে আসিফ ভাই আশ্বস্ত করেছেন তিনি রিদ খানের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের নোটিশগুলো তুলে নিবেন, তারপরও আমাদের এই দুঃখের নড়বড়ে অবস্থায় আপনাকে নিয়ে কোথায় রাখব রাফা? আপনি পারবেন আমাদের সাথে মানিয়ে নিতে?

নাদিমের কথায় রাফার মনে যেন এক বিশাল আশার আলো জাগল। অশ্রু ভেজা সিক্ত নয়নে তাকাল নাদিমের দিকে। ভেজা গলায় বলল—

‘ আমাকে আপনার দুর্বল মনমানসিকতার মেয়ে মনে হয় যে অভাব দেখে পালিয়ে যাব?

‘ আপনি ভীষণ সাহসী একটা মেয়ে সেটা আমি জানি রাফা। আপনার সাহসিকতা আমি নিজেও দেখেছি আপনার বান্ধবীকে ঘিরে। আপনি সাহসী বলেই যে আমি আপনাকে ঠকাব বিষয়টা এমন নয়। আমার কর্তব্য আপনাকে একটা উত্তম ভবিষ্যৎ দেওয়ার। যেটা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, সেজন্য আমি আপনাকে আমার অবস্থাটা অবগত করছি। আপনি পারবেন আমার সঙ্গে মানিয়ে…

নাদিমের কথা শেষ করার আগেই রাফা উত্তর দিয়ে বলল—

‘পারব।

নাদিম নিষ্ক্রিয় চোখ তুলে তাকাল রাফার দিকে। কান্নাকাটি করে রাফা চোখমুখ ফুলিয়ে রেখেছে। নাদিম রাফার মুখোমুখি টেবিলে বসে একটা রেস্টুরেন্টে। নাদিম অল্প হেসে পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে রাফার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল—

‘ আপনাকে কাঁদলে সুন্দর দেখায় না রাফা। এরপর থেকে আমার সামনে আর কাঁদবেন না। নিন।

রাফা হাত বাড়িয়ে টিস্যুটি নিল কিন্তু নাদিমের কথায় কিছু বলল না। দুজনের মধ্যকার এখনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি তাই রাফাও চট করে কিছু বলতে পারল না। নাদিম রাফাকে উত্তর করতে না দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—

‘ আসিফ ভাই আপনাকে অনেক পছন্দ করেন রাফা। বলতে পারেন একতরফা ভালোবাসেন উনি আপনাকে। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব উনি আমাকে দিয়েছেন। উনার সঙ্গে আমার আজ সকালে দেখা হয়েছিল। উনি আপনাকে নতুন জীবনের শুভকামনা জানিয়েছে। সাথে আমাকে বলেছেন সারাজীবন আপনাকে আগলে রাখতে। এমনকি আপনার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে উনি আমার হয়ে রিদ খানের কাছে সুপারিশ করেছেন। এমন একটা মানুষকে রেখে আপনি আমার প্রেমে পড়লে কীভাবে রাফা? আসিফ ভাই কিন্তু আপনাকে ভালো রাখত।

‘এসব কথার উত্তর আমার কাছে নেই। কখন কীভাবে আপনাকে আমার মন গ্রহণ করেছে সেই উত্তর আমি নিজেও দিতে পারব না। তবে এতটুকু বলতে পারব আমি উনাকে(আসিফ) ঠকাইনি। উনার সাথে আমার কখনো প্রেম ছিল না আর না কখনো ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম বিয়ে করব বলে। উনি উনার পছন্দের বিষয়টা আমার অবধি কখনো আনেননি। আমি বুঝতে পারতাম উনি আমাকে পছন্দ করে, কিন্তু উনি স্বেচ্ছায় সেটা কখন আমাকে বলেনি আর না বলার কখনো চেষ্টা করেছে। সেজন্য আমিও কখনো উনার(আসিফ) পছন্দের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি। আসিফ ভাইয়ের একতরফা পছন্দের বিষয়টাতে আমি কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। এই বিষয়ে অন্তত আমাকে জড়াবেন না প্লিজ।

নাদিম মনোযোগ সহকারে রাফার কথাগুলো শুনল। একতরফা ভালোবাসার কষ্ট সে জানে। সেই ক্ষেত্রে আসিফের কষ্ট নাদিম বুঝতে পারছে কিন্তু রাফা আসিফকে চায় না এটাও সত্য। যদি রাফা আসিফকে চাইত তাহলে আজ নাদিম এখানে বসে থাকত না। নাদিম ভেতরের কথাগুলো গিলে নিল, অতীত নিয়ে আর নয়। নাদিম রাফাকে আর আসিফ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না আর না সে মায়াকে জড়িয়ে দ্বিতীয় কোনো কথা রাফাকে বলবে। আজ এই মুহূর্তে নাদিম অতীত ফেলে নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করবে রাফাকে নিয়ে। রাফাকে ভালোবাসতে কতটা সময় লাগবে নাদিম জানে না। তবে রাফার প্রেমে নাদিম অবশ্যই পড়তে চাইবে। রাফার প্রতি যেহেতু নাদিমের মায়া আছে তাহলে ভালোবাসা এমনি হয়ে যাবে। দেরিতে হলেও নাদিম একদিন ঠিকই রাফাকে ভালোবাসবে ইনশাআল্লাহ। নাদিম অতীত পিছনে ফেলে নতুন জীবনের সূচনা করতে চেয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল—

‘ আপনি আনুষ্ঠানিক বিয়ে করতে চাইবেন নাকি ঘরোয়া বিয়ে করবেন রাফা? কোনটাতে আপনার সম্মতি?

নাদিমের হুট করে বিয়ের প্রস্তাব রাখায় লজ্জা পেল রাফা। চোখাচোখি দৃষ্টি লুকাতে তৎক্ষণাৎ নত মস্তিকে হয়ে রাফা মিনমিন করে বলল—

‘ঘরোয়া বিয়েতে।

নাদিম ফের প্রশ্ন করে বলল—

‘অনুষ্ঠান করবেন না?

‘না।

‘ কেন স্বামীর টাকা বাঁচাচ্ছেন?

‘হয়তো।

‘আমি মনে হয় হিসাবি বউ পাব তাই না রাফা?

‘জানি না।

নাদিম এগিয়ে এসে রাফার হাত চেপে দাঁড় করাতে করাতে বলল—

‘ আপনি আমার প্রথম ভালোবাসা না হলেও শেষ ভালোবাসা হবেন রাফা। যে ভালোবাসায় আমি আমার বলতে আপনাকে খোঁজে পাব শেষ নিঃশ্বাস অবধি। বিশ্বাস রাখুন আমাদের শুরুটা যেমনই হোক না কেন শেষটা সুন্দর হবে রাফা।
~~
অসময়ে নিহাল খানের আগমন ঘটল খানবাড়িতে। ঘরে ঢুকে সুফিয়া খানের দেখা না পেয়ে পুনরায় বেরিয়ে গেল সুফিয়া খানের সন্ধানে তিনি। কাল নির্বাচন অথচ আজ উনি সকল ব্যস্ততা ফেলে বাড়ির চক্কর কাটছেন বউয়ের দেখা পেতে। মূলত উনি টেনশনে আছেন বউকে নিয়ে। কখন না জানি উনাকে শুনতে হয় উনার বউ আবার উনাকে ছেড়ে চলে গেছে সেটা। সেই চিন্তায় উনি আজকাল ঘনঘন বাড়িতে ঢুকছেন আর বেরিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বিষয়টা তেমন কেউ লক্ষ্য করছেন না। তারপরও নিহাল খানের বাহ্যিক মনোভাব এমন যেন তিনি কারও টেনশনে নেই। বাড়িতে তিনি নিজের কাজে আসা-যাওয়া করছে, সুফিয়া খানকে খুঁজতে নয়। অথচ এই যে এখন উনার চঞ্চল মন আর বুড়ো চোখ বিরতিহীনভাবে সুফিয়া খানের সন্ধান করেই যাচ্ছে সেটা কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারছে না আর না জিজ্ঞাসা করতে পারছে সুফিয়া খান কোথায় সেটা? পাছে যদি পরিবারের মানুষ বুঝে যায় যে নিহাল খান সুফিয়া খানের খোঁজে অসময়ে বাড়িতে চলে এসেছে সেটা, তাহলে বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক হবে উনার জন্য। উনি এখন আর সেই তরুণ বয়সের তাগড়া যুবক নেই যে বউয়ের জন্য উতলা হয়ে ঘুরবে। বরং উনি একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। ছেলে বিয়ে দিয়ে বউ বাড়িতে এনেছেন, তাই উনার এই বয়সে এসে বউয়ের জন্য উতলা হওয়া সাজে না। পাছে মানুষ বলবে বড়ো বয়সে মন্ত্রীমশাই বউ পাগল হয়ে গেছে সুন্দরী বউকে এত বছর পর পেয়ে। তখন উনার মানসম্মান কিছু থাকবে না। তাছাড়া উনিও মানুষকে বোঝাতে পারবে না যে পুরুষ মানুষের সব বয়সেই বউ প্রয়োজন হয়। দ্বিধায় পড়ে নিহাল খান নিজের ভিতরকার তীব্র ছটফটানি চেপে গেল। মুখটা গুরুগম্ভীর করে আশেপাশে অবিচল দৃষ্টি বুলাল বউকে খুঁজতে। উনার ভাবখানা এমন যে উনি কারও সন্ধানে নেই। হলোও তাই। বাড়ির কেউ উনার মনোভাব ধরতে পারল না তাতে তিনি বেশ সন্তুষ্ট হলেন। একা একা হেঁটে পুরো খানবাড়ির ভেতর তল্লাশি করে যখন সুফিয়া খানের সন্ধান পেল না, তখন হঠাৎ করে উনার মন কামড়ে উঠল ভয়ে। এত কাঠখড় পুড়িয়ে বউকে খানবাড়িতে ফিরাল আর এখন কিনা আবার চলেও গেল উনার বউ? অস্থির উত্তেজিত নিহাল খান বড় বড় পা ফেলে বাহিরে বের হতেই দেখা মিলল সুফিয়া খানের গাড়ির। খানবাড়ির গেট ধরে সাদা গাড়িটি ভিতরে প্রবেশ করে পার্কিং এরিয়াতে এসে থামল। একজন দেহরক্ষী দ্রুত গাড়ির পিছনের দরজা টেনে ধরতে গাড়ি পিছনের সিট হতে নেমে দাঁড়াল সবুজ শাড়ি পরিহিত সুফিয়া খান। চোখে মোটা ফ্রেমের রোদচশমা পরে বাড়ির দিকে হেঁটে আসছেন গম্ভীর সুফিয়া খান। সুফিয়া খানের হাইট আর ওয়েট চোখে দেখার মতন, সুন্দরী দেখাল। নিহাল খান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সুফিয়া খানের পদচারণের দিকে। মনস্তাত্ত্বিক সুফিয়া খান নিহাল খানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে মুহূর্তে নিহাল খান ডাকল—

‘সুফিয়া?

সুফিয়া খানের পা থামে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতে দেখা মিলল নিহাল খানের। যদিও সুফিয়া খান নিহাল খানের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না। তবে কাল পুলিশ কে*সটা নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে দুজনের সেই সুবাদে তিনি অল্পসল্প কথা বলেন নিহাল খানের সঙ্গে। যদিও কাল সুফিয়া খান ঢাকায় ফিরতে পারেননি। আজও যাবেন না রিদের কথায়। কাল নির্বাচনের ফলাফল জেনে উনাকে রাতের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে যেতে বলেছেন রিদ। বরাবরই সুফিয়া খান রিদের কথা শোনেন। ছেলে হিসাবে রিদ কখনোই সুফিয়া খানের অমর্যাদা করেননি। সেই সুবাদে সুফিয়া খানও রিদকে নিয়ে বেশ গর্বিত। সুফিয়া খান নিহাল খানের ডাকে এগিয়ে এসে নিহাল খানের মুখোমুখি দাঁড়াতে দাঁড়াতে কপাল কুঁচকে বললেন—

‘তোমার না গায়ে জ্বর ছিল? কমেছে?

কথাগুলো বলতে বলতে সুফিয়া খান নিহাল খানের কপালে নিজের হাতের উল্টো পিঠ ছুঁইয়ে তাপমাত্রা চেক করল। কাল হঠাৎ জ্বর ওঠায় থানা থেকে নিহাল খানকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সুফিয়া খান। রাতে জ্বরের তাপমাত্রা বাড়তে নিহাল খানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় রিদ। সকালে যদিও সুফিয়া খান নিহাল খানের খোঁজ নিয়েছিল কিন্তু তখন নিহাল খান ঘুমিয়ে ছিল বলে সুফিয়া খান প্রয়োজনীয় কাজে বাড়ির বাহিরে যেতে হয়। আর এখন সময় তিনটের নাগাদ। এর মাঝে নিহাল খানের খোঁজ সুফিয়া খানের কাছে ছিল না বিদায় তিনি বর্তমানে দাঁড়িয়ে নিহাল খানকে উক্ত কথাগুলো জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু তখনো বেখেয়ালি নিহাল খান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সুফিয়া খানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল—

‘তুমি অনেক সুন্দর সুফিয়া।

নিহাল খানের কথায় সুফিয়া খানের মনোভাব পরিবর্তন হলো না। বরং আগের ন্যায় কপাল কুঁচকে চোখের রোদচশমাটা খুলে হাতে নিতে নিতে বলল—

‘সেটা তোমার বুড়ো বয়সে এসে চোখে পড়েছে?

সুফিয়া খানের খোঁচা মারার কথায় থতমত খেয়ে গেল নিহাল খান। মুখটা ছোট করে থমথমে গলায় বলল—

‘আমি বুড়ো হয়ে গেছি সুফিয়া?

সুফিয়া খান এক কদম বাড়িয়ে নিহাল খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল। নিহাল খানের দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে তিনি কটাক্ষ করে বলল—

‘কোনো সন্দেহ আছে তোমার?

‘তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না সুফিয়া?

‘না!

‘আমি বুড়ো হয়ে গেছি তাই?

‘হ্যাঁ!

‘আমি তোমাকে আজও ভালোবাসি সুফিয়া, সেই আগের মতো।

সুফিয়া খান নিহাল খানের কথায় মনোযোগী না হয়ে বলল…

‘সেটা তোমার সমস্যা, আমার না।

সুফিয়া খানের কথায় নিহাল খান বেশ আকুতি স্বরে বলল….

‘ চলো না সুফিয়া সবকিছু ভুলে আবার একত্রে হই। অনেক তো হলো মান-অভিমান। আমি শেষ বয়সে তোমাকেই পাশে চাই। থেকে যাও না আমার কাছে। এবার আর অযত্ন করব না তোমার। খুব যত্নে রাখব তোমাকে। আমাকে আর একটিবার ক্ষমা করে দিয়ে থেকে যাও না আমার কাছে সুফিয়া।

নিহাল খানের আকুতি স্বরে মন নরম হলো না সুফিয়া খানের। বরং নিহাল খানের চোখে চোখ রেখে বলল…

‘তোমার সাথে আমার পনেরো বছরের হিসাব বাকি নিহাল। তুমি জানো আমি হিসাবে কতটা পাকাপোক্ত। আপাতত তোমাকে ক্ষমা করতে পারছি না। তোমার জন্য আমার জীবনের পনেরোটা বছর নষ্ট হয়েছে। আমার জীবনের পনেরোটা বছর ফিরিয়ে দিতে পারলে অবশ্যই তোমাকে গ্রহণ করব আমি, আর নয়তো জীবনের বাকি দিনগুলোও নিঃসঙ্গ কাটাবে তুমি।

সুফিয়া খানের কথায় বেশ অনুতপ্ত হলো নিহাল খান। তারপরও হাল না ছাড়লেন না তিনি বরং জেদি গলায় বলল…

‘তোমাকে যখন খান বাড়িতে ফিরাতে পেরেছি তখন পিছু ছাড়ব না সুফিয়া। নিঃসঙ্গ রাত আমার একা ঘুমাতে ইচ্ছা করে না তুমিহীনা। তুমি দেখে নিও সুফিয়া, তুমি যেখানে যাবে আমিও তোমার পিছু পিছু ছুটব। তুমি আমাকে কত দিন ফিরাবে সেটা আমিও দেখে নিব।

#চলিত….