রুশো
শেষ পর্ব
____________________
“আমার শুধু তোমাকেই চাই”
প্রেম সায়রে ভাসমান দুই ডুবুরির জন্য কি ভীষণ মধুর বাক্য। যে বাক্যের দোহাই দিয়েই প্রেমের পথে আসা সব বাঁধাকে তুড়ি মেরে জয় করা যায়।
আমি কখনো ভাবিনি আমার জীবনে ভালোবাসা কোন রূপ ধরে আসবে, কতটা চাইবে সে আমাকে, আমার জন্য কতখানি পাগল হবে। তবু, বিশেষভাবে বলে কয়ে কোনো সম্পর্কে না জড়িয়ে, সেসময়ে আমি যা পেয়েছিলাম তা আমার এ জীবনে পাওয়া সেরা প্রাপ্তিগুলোর একটা।
জানতাম, রুশো একটা মিথ্যেবাদী, একটা আপাদমস্তক ক্রি-মিনাল তবু, শুধু ভালোবাসার জালে আটকা পড়ে ওর সমস্ত পাপবোধ আমার সামনে মেলে দেবার পর, আমি আর নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছাতে পারলাম না৷ কথাগুলো শোনার সময় যতটা ঘেন্না লাগছিল আমার, ওকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল, সময় গড়াতে সেই প্রতিজ্ঞা দৃঢ় রইল না। প্রেমের উষ্ণ মিষ্টি জলে পা ভেজানো কোমল মনটা তো চাইছিল, সব ভুলে তক্ষুনি ওকে আপন করে নিতে। জীবনের অমানিশাটুকুকে কেউ না জানার মতো আড়ালে শেকল দিয়ে বন্দী করে মিথ্যে আলোকে সত্যি বানিয়ে ওর সঙ্গী হতে। কিন্তু প্রেমিকা রাইনার দশ কদম দূরে দাঁড়ানো মানুষ রাইনারও তো মিনিমাম বিবেকবোধ ছিল। নিছক একটা শত্রু শত্রু খেলা খেলতে গিয়ে নিরীহ মানুষের ক্ষতি করে ফেলা ভয়ানক দানবটাকে মাফ করতেও ওই রাইনার বড্ড বাঁধছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হলো, নিজের ভেতরে দুই সত্ত্বাকে সমান সমান দুটো ভাগে ভাগ হতে দেখে আমি রাইনা বিপাকে পড়ে গেলাম। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়াল, ওর ভয়াবহ কোনো শাস্তিও চোখে দেখা সম্ভব নয়, আবার এতকিছুর পর ওকে মাফ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা একটা করে সেকেন্ড চলে যাচ্ছিল আর টের পাচ্ছিলাম অচেনা অজানা কোনো চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছি যেন আমি একটু একটু করে।
রুশোর অবশ্য আমার অবস্থা বোঝার ক্ষমতা নেই তখন। কে জানে এতবড় পাপ করে ফেলার পর বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ ওর ভেতরে কাজ করছিল কিনা! আমার হাতদুটো তখনও শক্ত করে চেপে ধরে কপাল ঠেকিয়ে রেখেছিল ওতে সর্বহারার মতো।
সময়টাকে আমি আর ফীল করতে পারছিলাম না। কিন্তু এভাবে, একটা অবিবাহিত ছেলের ফ্ল্যাটে বেশিক্ষণ বসে থাকাও কেমন দেখায়? কেউ ধরে ফেললে! চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে যেতে হুট করে এই ভাবনা আমাকে নাড়িয়ে দিল একটু।
হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বললাম,
— আমাকেই কেন? আমাদের তো দেখাশোনাও বেশিদিনের নয়।
এতক্ষণ বাদে আমার কথা শুনে রুশো মুখ তুলে তাকাল। হাতের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
— জানি না কেন! স্পেসিফিক কোন রিজনে। বাট এই বাসায়, হুট করে একদিন তোমার চোখের দিকে যখন চোখ পড়েছে আমার, সামহাউ ইট ফেল্ট লাইক আই হ্যাড ফাউন্ড এভ্রিথিং আইউড এভার বিন সার্চিং ফর ইন দোজ আইজ।
এতদিন আমার লাইফের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, ওদের শেষ করে দেয়া অথবা নিজে শেষ হয়ে যাওয়া। কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর, তোমার এক্সিসটেন্স ফীল করার পর আমার মনে হয়েছে, লাইফ মাইট হ্যাভ সাম আদার পারপাজ ঠু। আ…আমি, আমি ওই পারপাজটাকে নিয়ে বাঁচতে চাই রাইনা। ইজ ইট ঠু মাচ টু আস্ক?
কাতর এই কথাগুলো শোনার পর, ওর আকুতি ভরা চোখ দুটোর দিকে তাকানোর পর আমার ভেতরে এলোমেলো হয়ে যাওয়া সবকিছু আরও অগোছালো, আরও বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করল। টের পাচ্ছিলাম এখানে আর এক সেকেন্ড থাকলে আমার ধ্বংস কেউ আটকাতে পারবে না;আমি নিজেও না।
কিন্তু ঐ মুহুর্তে বাকি সবকিছুকে একসাথে গুছিয়ে ভাবতে গেলে, আমাদের এক হওয়া সম্ভব নয়৷ নিষ্ঠুর হলেও এটাই আমাদের সত্যি।
চেতনা ফিরে পেয়ে সত্যিটাকে আবিষ্কার করার পর, আবেগতাড়িত প্রেমিকার ভেসে যাওয়া মনকে শেষ মুহুর্তে শক্ত রাশে সামলে নিলাম আমি। ছাড়তে চাইছিল না তবু জোর করে ওর হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
— ইয়েস ইট ইজ। তুমি ভাবলে কি করে এতকিছুর পর আমি তোমাকে আমার জীবনে অ্যাকসেপ্ট করব? রুশো চৌধুরী ইউ আর এ্য ক্রিমিনাল। অসংখ্য মানুষের রক্ত লেগে আছে তোমার ঐ হাতে। তুমি অভিশপ্ত হয়ে গেছ, অভিশপ্ত।
আর আমি আমার জীবনে কোনো অভিশাপের কালো ছায়া চাই না। উই ক্যান্ট বি টুগেদার রুশো; উই ক্যান্ট।
বুক ঠেলে কান্না আসতে চাইলেও বহু কষ্টে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। তবু নিজের বলা কঠিন ঐ শব্দগুলো একেকটা যখন কানে বাজছিল, মনে হচ্ছিল একদলা গরম সীসা কানে ঢেলে দিচ্ছে কেউ আমার। পুড়ে যাচ্ছিলাম, নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবতে পারছিলাম না যাকে ঘিরে আমার এই তীক্ষ্ণ বাক্যের তীর, তার ভেতরটা এর আঘাতে কতটা রক্তাক্ত হচ্ছে। ভাবনার সুযোগও দিলাম না নিজেকে, ভেঙে পড়ার শেষ মুহুর্তে সামলে নিয়ে পা বাড়ালাম দরজার দিকে। রুশো শেষবার বোধহয় জিজ্ঞেস করেছিল,
— ডোন্ট ইউ লাভ মি?
ওর উত্তরে ফিরে তাকানোর সাহস হয়নি। দরজার কাছে থেকে শক্ত গলায় বলেছিলাম,
— অভিশাপকে কেউ ভালোবাসে না।
এরপর আমাদের দেখাসাক্ষাৎ সেখানেই সমাপ্ত।
_________________
এরপর রুশো কখন বাসা ছেড়ে দিয়েছিল আমার জানা নেই। সারাদিন অন্ধকার ঘরে একা একা নিজের সাথে বোঝাপড়া করার ফাঁকে কখন ও সব গুছিয়ে আমার ওপর থেকে সত্যি সত্যি অভিশাপের কালো ছায়া সরিয়ে চলে গিয়েছে তা আর জানা হয়নি।
সন্ধ্যাবেলা মা যখন বেজার মুখে এসে বিছানায় বসে বলল,
— ছেলেটা হুট করে চলে গেল। কেন গেল, কোথায় গেল বুঝলাম না। ওর হুট করে এভাবে আসা, তারপর আবার চলে যাওয়া। সবাই বলছে সন্দেহের বিষয়। রাইনা তোরও কি মনে হয় ছেলেটা এসবের সাথে জড়িত হতে পারে?
তখন একটু অবাক হলাম। প্রসেস করতে পারছিলাম না তার কথা। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চাইলাম,
— কার কথা বলছ?
— রুশো ছেলেটার। দেখ বিকেল বেলা এসে ফ্ল্যাটের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে গেল আমাকে। বলল, ওকে নাকি যেতে হবে। এত জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাবে এই ভয়াবহ দিনে, কেন যাবে! উত্তরই দিল না। শুধু বলল, সুযোগ হলে আবারও দেখা হবে আন্টি।
আচ্ছা ছেলেটাকে তো বাকি সবার চাইতে আমি চিনি বেশি করে, এতদিন মিশলাম, কই ওর সরল হাসির আড়ালে খারাপ ছেলে তো মনে হয়নি কোনোদিন। তোর কি মনে হয়েছে? ভাড়াটেরা কেন যেন বলছে ও-ই এসবের সাথে জড়িত ছিল। কেন বলছে ওরা রাইনা এভাবে? আমরা সত্যি সত্যি একটা ক্রিমিনালকে তাহলে জায়গা দিয়েছিলাম?
আশংকামিশ্রিত কথাগুলো বলার সময় মায়ের চোখের দৃষ্টি অসহায়ত্বে, অপরাধবোধে আর ভয়ে ঢেকে রইল। তাঁর এই দৃষ্টি দেখে চট করে মনে পড়ে যাচ্ছিল ঐ মানুষটার কথা যাকে আজ সকালেও অভিশাপ বলে ঠেলে দিয়েছি আমি দূরে। আঘাত দিয়েছি জানি, কিন্তু অন্যায় কি করেছি?
ইচ্ছে হলো মাকে জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু চাইলেই সব জিজ্ঞেস করা যায়?
নিজের ভেতরের ধিকিধিকি আগুনকে খানিক নেভাতে এসব ভাবনা ভুলে এগিয়ে মায়ের কোলের কাছে মাথা রাখলাম। ফিসফিস করে বললাম,
— ওসব আর ভেবো না মা। মাথায় রেখো পরেরবার থেকে বুঝেশুনে বাসা ভাড়া দেবে। কে কখন তোমার কোন বিশ্বাস ভেঙে দিচ্ছে তা কি আর টের পাওয়া যায়?
উত্তরে মা তবু চিন্তা মেশানো গলায় বলল,
— তাই বলে এতবড় ভুল আমি করে ফেললাম রাইনা? সত্যিই?
চাইলে আমি মাকে বলতে পারতাম সব তখুনি। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো না। পৃথিবীর ঘৃণ্যতম একটা অপরাধ বুকের ভেতরে মাটিচাপা দিয়ে দিলাম নিষ্ঠুর ঐ অপরাধীকে ভালোবেসে। হ্যাঁ, ভালো তো আমিও বেসেছিলাম তাকে। সে যেমন জানত না কবে কখন আর কীভাবের সূত্র, জানতাম না আমিও। আলাদা করে বিশ্লেষণ করতে যাইনি। একটা বিশ্বাসের মতো ধরে রেখেছি, আমি ওকে ভালোবাসি। ভীষণ, ভীষণ ভালোবাসি। ব্যাস এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
_____________________
পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও বেশিদিন যে রুশো পালিয়ে থাকতে পারবে না এ আশংকা আমার ছিল। কারণ সরকার নামানোর প্ল্যান তো তাদের ফেইল করেছে, এছাড়াও দেশের শীর্ষ দুই বাহিনীর দুই কর্মকর্তার মৃত্যুর তদন্ত হালকা পাতলাভাবে হবে না তাও জানা। তবু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর ধরা পড়ার কোনো সংবাদ মিডিয়ায় এলো না। ত্রিশ কর্মদিবসে অনেক কমবয়সী ছেলে-মেয়েদের ডিবির হাতে ধরা পড়তে দেখলাম আমরা সবাই নিউজ চ্যানেলগুলোতে, এমনকি বাবাও ফিরে এসে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেইসটা নিয়ে। তবু, কোনোভাবে তাঁর মুখেও একটা দিনের জন্যও রুশোর নামটা অবধি শুনলাম না। আমি কি খুশি হয়েছিলাম তার ধরা না পড়ে যাওয়াতে? হয়েছিলাম, মন জানত প্রত্যেক মুহুর্তে ভয়ে ভয়ে কাটানোর পর একেকদিন যখন আসামীদের তালিকায় চেনা মুখটা দেখতে পেতাম না, কতটা নির্ভার লাগত আমার, কতটা কৃতজ্ঞতায় দু চোখ বেয়ে পানি ঝরত। একটা ক্রিমিনালকে বাঁচানোর জন্য দিনরাত প্রার্থনায় আমার ত্রুটি ছিল না। দূরে থাকুক, সরে থাকুক, কিন্তু সে অক্ষত থাকুক, এতটুকু চাওয়াই আমার দিনরাতের সঙ্গী হয়ে গেল। একবুক ভালোবাসার বিনিময়ে লুকনো ভালোবাসাটুকু তো দেখাতে পারিনি তাকে, যোজন দূরত্ব থেকে তাই এতটুকুই আমার দেবার ছিল।
এরপর, এই করে করে কেটে গেল জীবনের পাতা থেকে দুটো বছর। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের মাঝামাঝি। বাড়িতে হুটহাটই বিয়ের প্রসঙ্গ ওঠার একটা সময়। বাবা-মা যদিও উঠেপড়ে খোঁজার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তবু বন্ধু, কলিগ কিংবা আত্মীয় মারফত সপ্তাহে একটা না একটা প্রস্তাব লেগেই আছে।
আমি ওসবে কান দিচ্ছি না একদমই। দেব কি করে? আমার গোটা অস্তিত্বজুড়ে তখন অন্য মানুষের বসবাস। তার সাথে অল্পদিনে তৈরি হওয়া স্মৃতির পসরা মনের ভেতরে এমনভাবে মোহর মেরে দিয়েছিল! দূরত্ব, যোগাযোগহীনতা কিছুই পারেনি তাকে ভোলাতে। এই দুই বছরে একদিন ভুল করেও আমাদের কিন্তু দেখা হয়নি, কথা হয়নি, হতে পারে কিনা তাও আশা করিনি কোনোদিন। তবু টের পেয়েছি গোটা পৃথিবীর সামনে স্বাভাবিকভাবে চলে ফিরে বেড়ানো রাইনার বুকের ভেতরের নরম মাংসে নিয়ম করে কেউ সূঁচ ফোটাচ্ছে রোজ। রক্তাক্ত হতাম, সেরে উঠতে চাইতাম,তারপর আবার ব্যথায় কুঁকড়ে যেতাম নতুন করে।
চেষ্টা করিনি তা নয়, অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলাম মানুষটাকে ভুলতে। কিন্তু সময়ের চাকা গড়াতে গড়াতে ভুলে যাওয়ার পরিবর্তে তার উপস্থিতি যখন আমার মনের দরজার দৃঢ় হয়ে গেল, তখন প্রেমিকা রাইনাকে গোপনে লুকিয়ে রাখা মানুষ রাইনা বুঝতে পারল, ওকে ছাড়া আর তার চলবে না, কিছুতেই চলবে না। ওকে না পেলে মরেটরে হয়তো যাবে না, কিন্তু ভালোবাসা নামক শব্দের ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে চিরকালের মতো।
আমি আসলে জানতাম না কি হচ্ছিল আমার জীবনে, কীভাবে হচ্ছিল! না আমি রুশোকে ভুলতে পারছিলাম, না খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। ওদিকে তার অবস্থা কেমন জানতে ইচ্ছে হতো কখনো। তারপর কি ভেবে দমে যেতাম।
বাইরে আমি শান্ত নদীর মতো স্থির। অথচ ভেতরে আমার আগুন জ্বলছে কেউ তা বিন্দুমাত্র টের পাচ্ছে না।
এরই মাঝে বাবা একদিন হুট করে বলল,
— লোকে তো বলছে তোমার বিয়েশাদীর কথা। আমারও হয়তো দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে তাই করা উচিৎ। কিন্তু আমি লোকের চোখের দায়িত্বশীল বাবার চাইতে রাইনার বাবা হওয়াটাকে সবসময় প্রায়োরিটি দিয়েছি তুমি জানো। বিয়ে বিষয়টা তো অনেক কমপ্লেক্স। বিয়ের পাশাপাশিও মানুষের লাইফ নিয়ে অন্য অনেক ভাবনা থাকে।
তুমি আমার বড় মেয়ে রাইনা, আমার কলিজার অর্ধেক। তোমার ওপর সোসাইটির কোনো প্রেশার থাকবে বাবা হিসেবে এটা আমি মেনে নেব না৷ তাই আজ সরাসরি কথা বলাটাই বেটার মনে হলো।
বলো, আজ তুমি বাবাকে বলো মা, লাইফের এই স্টেজে তুমি আসলে কি চাও? তুমি কি চাও আমরা এবারে তোমার বিয়েশাদির বিষয়টা নিয়ে আগাই? নাকি ফার্দার পড়াশোনাটা কামপ্লিট করে নেবে?
বহুদিন বাদে বাবার মুখে এত স্নেহার্দ্র কথা শুনে ভেতরের রক্তাক্ত রাইনা হন্যে হয়ে তার ব্যথা যন্ত্রণাগুলো দেখাবে বলে উন্মুখ হয়ে উঠছিল। ওকে কোনোরকমে সামলে মাথা নেড়ে আমি বললাম,
— তোমরা যা বলবে।
এমন উত্তর হয়তো বাবার প্রত্যাশা ছিল। উজ্জ্বল হেসে আমার মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে আদর করে দিল। তারপর সময় নিয়ে বলল,
— আমি ভাবছি, বিয়েশাদি তো আল্লাহ চাইলে হবেই। তুমি বরং বাইরের দেশে একবার গিয়ে দেখবে নাকি? খারাপ নয় কিন্তু। নিউ এক্সপিরিয়েন্স হলো। ইট উইল এনরিচ ইওর নলেজ। কি যাবে?
বুকের ভেতর চাপ দেয়া আরেকটা পাথর যেন নেমে গেল টের পেলাম আমি। একজনকে মনে রেখে আরেকজনের ঘরনি হবার ভাবনা ভেবেও যে যন্ত্রণা প্রেতের মতো খেতে আসছিল এতক্ষণ, সেটা একমুহুর্তে পালিয়ে গেল বাবার ম্যাজিক্যাল কথাগুলোয়। সত্যিকার অর্থে কতটা খুশি হয়েছি প্রকাশ করতে না পারলেও বারণ করলাম না।
এরপর থেকে আমার চাইতে বাবাই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে অ্যাপ্লিকেশনসহ বাকি সব গোছাতে লাগল। আনুষঙ্গিক যা লাগে সব রেডি ছিল আমার। বাকি শুধু এম্ব্যাসি ফেইস করা। মা অবশ্য অপ্রাসঙ্গিক এসব তোড়জোড়ে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিল। কিন্তু বাবার আগ্রহ দেখে শক্তভাবে কিছু বলতে পারল না।
ওদিকে আমার মনে আশা জন্মাতে লাগল, এই জায়গাটা ছেড়ে দিলে, অতীতকে পেছনে ফেলে নতুন করে শুরু করতে পারলেই বোধহয় বুকের ভেতরের রক্তাক্ত জমিন সেরে উঠবে। কিন্তু আমার ভাগ্যে যে অতীত এড়ানো সম্ভব ছিল না তা প্রমাণ হয়ে গেল দিন কয়েকের মধ্যে।
ভিসা অ্যাপ্রুভ হওয়ার ঠিক পরদিন হুট করে বলা নেই কওয়া নেই ছোটো খালামনি একটা সম্বন্ধ নিয়ে এলো আমার জন্য। তার কোন বান্ধবীর ছেলে, বাইরের একটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে। হঠাৎ ছেলে ছুটিতে বাসায় এসেছে, বাবা-মা চায় এবারে শর্ট নোটিসে বিয়ে করেই যাক।
জীবনে সবকিছু যখনই একটু ঠিক হতে চাইছিল, তখনই আমাকে ভেঙে দেয়া এই দুঃসংবাদ ঠেলে সরানোর সুযোগ হলো না, মায়ের জোরাজোরিতে ছেলেটার সাথে দেখা করার জন্য বাধ্য হয়ে রাজি হতে হলো। দিনক্ষণ ওরাই ঠিক করল, কথা হলো আমাদেরই বাসার কাছে একটা রেস্টুরেন্টে ছেলেটা ওর কাজিনের সাথে আসবে, ভালো লাগলে বাকি কথা এগনো হবে।
আমি কোনোদিন কোনো বিষয়ে সিনক্রিয়েট করা টাইপের মেয়ে নই। মনের বিরুদ্ধে হলেও ঝুট-ঝামেলা করে এড়িয়ে যাব তা আমার পক্ষে সম্ভব নয়; অগত্যা ঝলসে যাওয়া বুক নিয়ে বাবা-মায়ের হাতের পুতুলটি হয়ে খালামনির সাথে যেতে হলো রেস্টুরেন্টে হবু বরের সাথে মিট করতে। বাবা-মা, পরিবারের সবাই ছেলেটাকে বেশ পছন্দ করেছিল তা আমি টের পেয়েছিলাম ওদের কথাবার্তার ধরনে। মেয়ের মতামতের ওপর সবটা ছেড়ে দেবে এমন আশ্বাস দিলেও তারা চাইছিল আমার তরফ থেকে যেন পজিটিভ কোনো সাইনই যায়।
গোটা রাস্তা খালামনি পাখি পড়ানোর মতো পাত্রের সিভি মুখস্থ করালো, সাথে আমি কীভাবে কথা বললে, নিজেকে প্রেজেন্ট করলে সে ইমপ্রেসড হবে মনে করাতে ভুল করল না। সামনে বাধ্য মেয়ের মতো ঘনঘন মাথা দুলিয়ে সায় দিলেও আমার মন জানল বাড়ির গেইট থেকে বেরিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়া অবধি ঠিক কতবার আমার ইচ্ছে করেছে পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে এক্ষুনি লাফিয়ে পড়ে ট্রাকের নীচে পিষে ফেলি নিজেকে। দীর্ঘ দুটো বছর যে মানুষটা আমার সামনে না এসে, আমাকে না ছুঁয়ে, মনের গভীরতর স্থান ছুঁয়ে আছে; তার যাতনা এত যোগ্যতা দিয়ে মেপে বেছে অনায়াসে তাকে ভুলব কি করে? কি করে তার পৃথিবী সমান ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্য কাউকে আপন করে নেব হাসিমুখে। অভিশাপ লাগবে না আমার? অভিশাপের থেকে আসা অভিশাপ।
মনের গোপন কুঠুরিতে তালাবন্দী ভঙ্গুর প্রেমিকা রাইনা নিষ্ফল আর্তনাদে আমাকে আরও দূর্বল করে দিল। ভেবে নিলাম আমাদের আলাদা কথা বলতে দিলেই সরাসরি নাফিজকে বলে দেব, এই বিয়েটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সে যেন কোনো এক্সপেকটেশন না রাখে আমার থেকে, বাসায়ও যেন বারণ করে দেয়। আর ইগোর জন্য যদি বারণ করতে না পারে, আমিই না-হয় করে দেব। জীবনে পুরোপুরি জায়গা না দিতে পারলেও, শেষ যে ক’টাদিন আছি, সে ক’টাদিন না-হয় আমার ভাবনাজুড়ে শুধু একজনেরই আনাগোনা থাকুক। তার আর আমার মাঝে তৃতীয়পক্ষের জায়গা যে একদম নেই;একদম না।
_______________________
লাইফ আসলে একটা এক্কাদোক্কা খেলার মতো। এক ধাপ এগনোর পর, পরের ধাপে কি অপেক্ষা করছে এটা আমাদের কাছে সাসপেন্স। সেদিনও, গোটা পথে আমার কিংবা খালামনির নিজেদের নিজেদের অসংখ্য প্ল্যান সাজিয়ে ফেলা হলেও, আদতে হলো তাই, যা জীবন আমাদেরকে নিয়ে ভেবে রেখেছিল।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটাতে মেটাতে খালামনি আমাকে বলেছিল এগিয়ে গিয়ে নাফিজের সাথে যোগাযোগ করতে, সে আসছে। যদিও আমি চাইছিলাম না শুরুতে, কিন্তু মিনিট কয়েক অন্তত একা কথা বলতে পারব ভেবে সাহস করে এগিয়ে গেলাম তার মেসেজ করা টেবিলের দিকে। নার্ভাসনেসে একটুখানি পিছিয়ে যেতে চাইলেও মনটাকে শক্ত গলায় শাসন করে যখন আমি কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, তখনই অকস্মাৎ কাঁচের দেয়ালে সূর্যের প্রতিফলনের মতো আমার ঠিক সামনে প্রতিফলিত হলো একটা মানুষের মুখাবয়ব। থমকে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে আমি দেখলাম যে টেবিলটায় আমাদের বসার কথা ছিল সেখানে চশমাপরা একজন ভদ্রলোকের ঠিক অপজিটে বসে আর কেউ নয়, রুশো। রুশো চৌধুরী; আমার বেদনাবিধুর অতীত, গোপন কুঠুরির জ্বলজ্বলে বর্তমান, আর সেদিন মেনে নিলেই হতে পারত সবচেয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত সময়ে মানুষটা এখানে কেন? নাফিজের সাথে কি করছে সে! তাহলে নাফিজের সাথে আসতে চাওয়া কাজিন অন্যকেউ নয়, রুশোই?
টলে পড়তে গিয়েও একটা চেয়ার ধরে নিজেকে সামলালাম। চোখ ডলে বারবার নিশ্চিত হতে চাইলাম সামনে যে মানুষটাকে দেখছি ও সেই-ই তো? সেই এক অবয়ব, এক বসার ধরণ, নিস্তব্ধতার দুর্বোধ্য দৃঢ় ভাষা। এতদিন পর, আড়ালের এত লুকোচুরির পর হুট করে কীভাবে সামনে এসে পড়ল সে? এবার আমি কি করব? কীভাবে সামলাব নিজেকে? গুছিয়ে উঠতে চাওয়া সব যে এবারে ভেঙে পড়বে আমার একটু একটু করে৷ এই ভাঙনকে ঠেকাব কি করে?
ভাবনার অশান্ত ঝড়ে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়েই যখন আমি নিঃশেষ হওয়ার পথে, হুট করে খালামনি পিঠে হাত রেখে ডেকে উঠল,
— কিরে রাইনা দাঁড়িয়ে আছিস? এখনো যাসনি তুই?
নিজের ভাবনায় বুঁদ আমি খালামনির ডাকে ভীষণভাবে চমকে উঠলাম। চমকটা বিস্ময় ভাঙার নয়, বরং আড়ালের ঐ মানুষটার কাছে সরাসরি ধরা পড়ে যাওয়ার। আমাদের দু’জনের দূরত্ব তো বেশি ছিল না। ভাইয়ের সাথে কথা বলায় এতক্ষণ ব্যস্ত থেকে আমায় খেয়াল না করলেও এত কাছে নাম শুনে সে নিশ্চয়ই স্থির থাকবে না। এতদিন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার পর আজ এসে ওর ভাইয়ের হবু বউ হিসেবে আবিষ্কার করে ফেলে ও যদি সবার সামনে পাগলামি করতে শুরু করে? কি করে বাঁচাব তখন আমি নিজেকে ভেসে যাওয়ার থেকে? কীভাবেই বা বাঁচাব ওর ভয়ানক অতীতকে সকলের সামনে আব্রুবিহীন হওয়ার থেকে। সৃষ্টিকর্তা এ কেমন বিপাকে ফেললেন আমাকে?
নার্ভাসনেস ভয়ে পাল্টে গিয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম আমি। চোখ বারবার ভিজে আসতে চাইছিল নোনাপানিতে। না তাকিয়েও টের পাচ্ছিলাম অদূরে টেবিলে বসা অগোচরের দৃষ্টি পড়েছে অবশেষে আমার নাম শোনার পর। সেকি উঠে আসতে চাইছিল তখন? চোখের কোণে দেখছিলাম বোধহয় তেমনই ভয়াবহ কোনোকিছুর ছায়া। আত্মা কেঁপে উঠেছিল আমার। ওখানে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ানোর সাহস হচ্ছিল না। তারপর দাঁড়ানোর সাহস করলামও না। কেন এসেছি, না গেলে কি হবে এসবের ভয় ভুলে খালামনির হাত ধরে বিড়বিড় করে বললাম,
— আমাকে যেতে হবে। প্লিজ।
শুনে খালামনি ছটফটিয়ে উঠে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করল; পারল না। তার সমস্ত জোরজবরদস্তি অগ্রাহ্য করে হাত ঠেলে সরিয়ে বেরিয়ে এলাম আমি রেস্টুরেন্ট থেকে।
এরপর গোটা রাস্তা কোন ঘোরে এসেছি জানা নেই। রুশোকে এতদিন পর চোখের সামনে আবিষ্কার করার পর, তাও আবার এমন একটা পরিস্থিতিতে, আমার সমস্ত চিন্তা চেতনা এমনভাবে ঘেঁটে রইল, বাসায় ফিরে মায়ের অসংখ্য বাক্যবাণের একটাও ঠিকঠাক বুঝলাম না। আমি কেন দেখা করিনি, কেন ফিরে এসে তাদের অপমান করেছি এসব নানাবিধ প্রশ্নে যখন মা বাড়ি মাথায় তোলার যোগাড়, সেসময়ে তার সব প্রশ্নের উত্তরে দু-হাত জোড় করে শুধু বলতে পেরেছি,
— একটু সময় দাও আমাকে মা প্লিজ। সব প্রশ্নের উত্তর দেব, শুধু একটু সামলাতে দাও।
যা বোঝার তাতেই হয়তো বুঝে গিয়েছিল তারা। আমাকে আর ঘাঁটাল না। ওদিকে আমার ঘোর কাটেনি পুরোপুরি। ঠিক বছর দুয়েক আগে সব সত্যি জেনে ফেলার পর যেভাবে নিজেকে ঘরবন্দী করে সামলে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম এবারও ওভাবেই ঘরবন্দী করে ফেললে, অন্ধকারে কিছুক্ষণ হারিয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল কিনা! স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কিছুই আর ঠিক হলো না। উল্টো একা একা অন্ধকারে মিশে থাকার সময় আমি টের পাচ্ছিলাম বুকের আগুন ক্রমে বাড়ছে যেন। ধিকিধিকি জ্বলতে জ্বলতে একসময়ে ওটা এত অসহনীয় হয়ে উঠছে যে, মনে হচ্ছে এর চাইতে মৃত্যুই ভাল। কি করব, কীভাবে এই মরণ যন্ত্রণা কমাব কিচ্ছু জানতাম না আমি। শেষে নিজের দুর্বলতার কাছে হেরে, কারোর তোয়াক্কা না করে উদ্দেশ্যহীনের মতো বেরিয়ে গেলাম ছাদের দিকে, যেখান থেকে আমাদের গল্পের শুরুটা হয়েছিল।
_______________________
জানি না আগে থেকেই আমার মন টের পেয়েছিল, নাকি অকস্মাতের যোগ।
ছাদের দরজায় পা দিতেই টের পেলাম মাত্র শুরু হওয়া রাতের নরম কালোতে ছবির মতো মিশে আছে শক্ত পুরুষালী এক অবয়ব। কে জানে! কোন মোহের টানে, এবারে আমার আর পিছু হটতে ইচ্ছে হলো না। নিজের সমস্তটা লুটিয়ে দেবার অভিপ্রায় জড়ো করে একবুক সাহস নিয়ে আমি ধীরপায়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে।
অপরদিকে তারও আমার উপস্থিতি বুঝতে দেরি হলো না। দরজার সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের দূরত্ব যখন অনেকটাই কমে এলো, তখন গোটা পৃথিবীর থেকে আড়াল করতে পিছু ঘুরে আমার হাত চেপে ধরে ঝড়ের মতো টেনে নিয়ে গেলো একদম ছাদের ব্যাকসাইডে, আমার আর্টের স্কুলের কাছে। আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ পেলাম না, হয়তো দেখাতামও না, তার আগেই রুশো প্রায় জাপটে ধরে বলল,
— তুমি নাফিজকে বিয়ে করবে না রাইনা। আই উইল ডেসট্রয় এভ্রিথিং, এভ্রিবাডি। আই জাস্ট….
তু..তুমি বলো তুমি নাফিজকে বিয়ে করবে না। বলো? বলো?
ওর কণ্ঠ ক্ষ্যাপাটে। মুখ ফুটে কোনো উত্তর দেয়ার সাহস আমার হলো না। একগুঁয়েভাবে আমিও তাই পড়ে রইলাম ওর বুকের কাছে শার্ট শক্ত করে চেপে ধরে। ও বোধহয় বুঝল আমার ভয়ের ছাপ। খানিক বিরতি নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
— এতদিন কেটে গিয়েছে, এত দূরে থাকার চেষ্টা করেছি, ভেবেছি সরে গেলেই মোহ কেটে যাবে। ভুলতে পারব তোমাকে।
পারিনি তো, একদম পারিনি। তুমি আমার অস্থিমজ্জায় মিশে আছ। কীভাবে ভুলব তোমাকে? কীভাবে বোঝাব নিজেকে, ইট ওয়াজ নট জাস্ট এ্য ফ্যাসিনেশন। আই ফ্রিকিং লাভ ইউ।
এরপর আমার কোনো প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করে অনুনয়ের সুরে আবারও জানতে চাইল,
— হোয়াই ডোন্ট ইউ লাভ মি রাইনা? আমি সত্যিই কি তোমার ভালোবাসার যোগ্য নই?
আমি কিছু বলার সুযোগ পাইনি তখনো। এতদিন বাদে হুট করে তখন ওকে আবিষ্কার করার পর এত কম সময়ে এত কাছে পেয়ে সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছিল। ও যে আমার সামনে আছে, আমাকে জড়িয়ে ধরেছে দুহাত দিয়ে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। ও অবশ্য আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল বুঝতে পারেনি। বরং আমার কাঁধ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তখনও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চাইছিল, কেন আমি ওকে ভালোবাসি না?
ভালোবাসি না! সত্যিই ভালোবাসি না? গোটা দুই বছর প্রত্যেক ঘণ্টায়, মিনিটে, সেকেন্ডে আমি যতবার ওর নাম যপেছি, যতবার অন্তরাত্মা চিৎকার করে ওকে কাছে চেয়েছে, পাশে চেয়েছে, এমন করে আমার জীবনে সে কাউকে চায়নি। কতবার অস্থির হয়ে উঠেছি, ওকে একটাবার দেখার নেশায় আমার সমস্ত পৃথিবী ওলটপালট করে দিতে ইচ্ছে করেছে, এই খবর কেউ জানে না একমাত্র আমি ছাড়া। আর ও ভাবে আমি ওকে ভালোবাসি না? কি নিষ্ঠুর জীবন ছকের খেলা, কি নির্মম আমাদের দূরত্বের গল্প। উফফ!
প্রবল অভিমানে স্বল্প সময়ের সান্নিধ্য থেকে ছুটে যেতে চাইলেও পরক্ষণে আমার বেহায়া বেপরোয়া মন দমন করল আমাকে। উল্টো প্রবোধ দিয়ে বলল,
“তুই ই তো নিজেকে এমন নিষ্ঠুর দেখিয়েছিলি রাইনা। মনে করে দেখ, কি নির্মমভাবে ওর সদ্য ফোটা ভালোবাসার ফুল মাড়িয়ে দিয়েছিলি পা দিয়ে। অভিশাপ বলে ছাড়িয়ে দিয়েছিলি ওর হাত। তাহলে আজ যদি ও তোকে ফিরতি প্রশ্ন করে, কেন ভালোবাসনি? তাহলে কি সেটায় অন্যায় হয়ে যাবে!”
সরাসরি নিজের মনের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আজ ভীষণ অসহায় লাগতে শুরু করল আমার। সাথে টের পেলাম, অভিশাপ বলে পিছু ছেড়ে দেবার পর এই যে বহুদিন ওকে চোখ ভরে দেখিনি আমি, এতদিন রাগ করেছি, অভিমান করেছি ওকে নিয়ে; ওকে ভালোবাসার অপরাধবোধে অভিযোগও করেছি অনেক; কিন্তু আমার সমস্ত অভিযোগের আড়ালে কখনো ওকে ঘৃণা করতে পারিনি। অস্বীকার করতে পারিনি একটাবার চোখের সামনে দেখতে চাওয়ার তৃষ্ণাটাকে।
অথচ আজ ভাবনার বিপরীতে গিয়ে অকস্মাৎ যখন আমার তৃষ্ণা নিবারণ হলো, তখন আর দুর্বল রাইনার ওপর সবল রাইনার জোর খাটতে চাইল না কোনোভাবে৷ নিজেকে ওর শক্ত বন্ধনের থেকে ছাড়ানোর পরিবর্তে যেন এগিয়ে গিয়েই সঁপে দিলাম প্রেমিকা রাইনার পুরোটাকে।
রুশো অবাক হলো। এত অভিযোগ, এত প্রশ্নের উত্তরে আমার সহজ সমর্পণ ও নিশ্চয়ই আশা করেনি। একমুহুর্ত থেমে নিজেকে সামলে নিয়ে দু’হাতের তালুতে আমার মুখ আগলে কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাকের ডগায় নাক স্পর্শ করাল। আমি কি চমকে উঠলাম ওর নিঃশ্বাসের স্পর্শে! খেয়াল করার সময় হলো না। তার আগেই ও আর্দ্র ভাঙা স্বরে বলল,
— থিংকিং অফ এ লাইফ উইদাউট ইউ ইয ইম্পসিবল ফর মি। এতদিন কীভাবে কাটিয়েছি ক্যান ইউ ইম্যাজিন। আর নয়। এবার আ..আমার তোমাকে চাই-ই চাই রাইনা। আই ওয়ান্ট ইউ ইন এভ্রি ব্রিদ, ইন এভ্রি হার্টবিট। বলো তুমি আমার হবে? বলো?
রুশোর কণ্ঠে এবার তীব্র জেদ। ছোট্ট শ্বাস ফেলে ওর হাতের ওপর এতক্ষণে হাত রাখলাম আমি। কণ্ঠ চিরে একটা শব্দ বেরতে চাইছিল না। তবু কীভাবে যেন বলে ফেললাম,
— রুশো চৌধুরী, র্যাপ মি ইন ইওর হার্ট লাইক, দিস গার্ল ওয়াজ মেন্ট টু বি ইওরস ফরেভার৷
— তুমি সত্যি আমার হবে? স..সত্যি?
দ্বিতীয়বার চমক ভেঙে প্রায় চিৎকার করে স্বগতোক্তি করে উঠল রুশো। লজ্জা কিংবা বিব্রতবোধে, এরপর কোনো উত্তর দেয়ার শক্তি অবশিষ্ট রইল না আমার মধ্যে। ওকে আঁকড়ে ধরে শ্রাবণের বানভাসি সন্ধ্যায় ভেসে গেলাম আমি গন্তব্যহীন কোনো এক পথে। এই পথকে কি পরিপূর্ণ ভালোবাসার নাম দেয়া হবে?
______________________
হাজার প্রশ্নে জর্জরিত সেদিন রাতে এক অদ্ভুত নাটকের সাক্ষী হলো আমার পরিবার। রুশো তার সমস্ত অপরাধের প্রমাণাদিসহ স্যারেন্ডার করল আমার বাবার কাছে। বাবা তো রাগে পারলে ওকে মেরেই ফেলে তখন।
আমি শেষ মুহুর্তে আটকাতে বাবার পায়ে পড়লাম। দু’হাতে পা জড়িয়ে অনুনয় করে বললাম,
— প্লিজ বাবা, আমি..আমি থাকতে পারব না ওকে ছাড়া। মরে যাব। বিশ্বাস করো একেবারে মরে যাব। আমাকে মাফ করে দাও বাবা। কিন্তু আমার ওকে চাই।
বাবা আমার আচরণে অবাক হতেও ভুলে গেল। কেঁপে উঠে বজ্রাহতের মতো স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর একসময় আহত গলায় থেমে থেমে বলল,
— তুই ভুল করছিস রাইনা। ভীষণ ভুল করছিস।
ওদিকে আমার স্পর্ধায় মাও বিস্মিত। কিছু সময় থেমে নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করার পর, তার মনের আদালত যখন একমাত্র দোষী রুশোকে সাবস্ত করে ফেলল, তখুনি ছুটে গিয়ে নিজের সমস্ত রাগ মেটাতে অনবরত চড় থাপ্পড় মারতে লাগল ওর গালে। কীভাবে সে আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারল, কীভাবে এতবড় পাপে আমাদের ব্যবহার করল, এখন কেন আবারও শনির ছায়া হয়ে ফিরে এসেছে, এসব নানাবিধ প্রশ্নে মুহুর্তে ওকে নাকাল করে দিতে লাগল।
আমি দেখলাম মারের চোটে লাল হয়ে গিয়েছে রুশোর মুখ। তবু ও মুখ ফুটে একটা কথা বলছে না। বাঁধা অবধি দেয়ার চেষ্টা করছে না মাকে। ওর এমন করুণ দশা দেখে ভীষণ কষ্ট হলো আমার। এগিয়ে গিয়ে মাকে আটকাতে চাইলাম। কিন্তু রুশো চোখের ইশারায় বারণ করে দিল। মনের আঁশ মিটিয়ে মা যখন ওকে মেরে ক্লান্ত তখন আত্মদহনে দগ্ধ আমার রুশো মায়ের পা জড়িয়ে কেঁদে ফেলল। ভাঙা গলায় বারবার মাফ চাইতে চাইতে বলতে লাগল,
— আমি সব ছেড়ে দিয়েছি আন্টি। বিশ্বাস করুন। প্লিজ একবার আমাকে বিশ্বাস করুন। একটা লাস্ট চান্স দিন। আমাকে রাইনা দিন আন্টি। আমার ওকে লাগবেই।
ওর এমন অবসেসিভ আচরণে বাবা-মা দু’জনে রাগে স্তব্ধ হয়ে গেল। কে জানে ওদের মনের ভেতরে কি কাজ করছিল তখন! আমি দু-হাত জোর করে দু’জনকে অনুনয় করছিলাম যেন একবার আমাদের কথা শোনে। একটাবার আমাদের বলার সুযোগ দেয়। কিন্তু এতকিছুর পর সুযোগ পাওয়া ভীষণ কঠিন৷ তবু আমার অনুনয়ের জোরে বাবার কাঠিন্য কিছুটা কমে গেল। আমাদের দুজনকে নিয়ে ভাবতে চাইল ওরা কিছুটা সময়।
এবং আমার জীবনের সবচাইতে কঠিন একটা সময় ছিল ঐ ভাবনার সময়টুকুই। জানি না কতক্ষণ, কিন্তু পুরোটা সময় প্রায় ভৌতিক নিস্তব্ধতায় কেটে গেল। মা একাধারে কাঁদতে কাঁদতে ডাইনিং টেবিলে মাথা এলিয়ে রেখেছে। বাবাও অপজিটের চেয়ারে গম্ভীর মুখে বসে। আর রুশো? ও তখন বাবার পায়ের কাছে বসে আছে একটুখানি আশার কথা শুনবে বলে।
আমাকে ঘিরে সবার এত অসহায়ত্ব সহ্য করতে পারছিলাম না আমি। লজ্জায় মুখ নামিয়ে কাঁদছিলাম অনবরত।
কে জানে! আমার কান্নায় বাবার মায়া হলো কিনা! নিস্তব্ধতা ভেঙে একসময় ডাকল আমাকে। ক্লান্তি মিশে ছিল তার কণ্ঠে, মিশেছিল বুকভরা আক্ষেপ। তবু সে অনুভূতিগুলোকে কথায় ফুটতে না দিয়ে বাবা বলল,
— এই ছেলেই যদি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত হয় তাহলে আজই একে বিয়ে করে যতদ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়বে তোমরা। বাইরের কেউ আপাতত জানবে না বিয়ের খবর, শুধু জানবে তুমি পড়াশোনার জন্য বাইরে যাচ্ছ। ইটস গুড যে ওর আইডি এখনো প্রকাশ করা হয়নি মিডিয়ায়। আই হ্যাভ নো ক্লু কীভাবে ওকে সরকারের হাত থেকে..
ওয়েল দ্যাটস নান অফ ইওর থিংকিং। যা করার আমিই করব। মনে রেখো বাবা হিসেবে তোমাকে করা এটাই আমার শেষ ফেভার। এরপর তোমার লাইফে যা হবে তার দায়িত্ব আমার নয়।
বাবার মুখে একসাথে এত অপ্রত্যাশিত কথা শোনার পর আমি বিনিময়ে কিছু বলতে চাইলাম, মাও তীব্র শব্দে দিরুক্তি করতে চাইল, বাবা আমাদের কাউকে কিচ্ছু বলার সুযোগ দিল না। হাত তুলে বারণ করে বলল,
— সমাধান দুটোই। রাইনা ওকে চাইলে বিয়ে করে চলে যাবে। নইলে আমি ওকে আজই, এই মুহুর্তে অ্যারেস্ট করব। চয়েজ শুধু ওদের দু’জনের।
এরপর আর কোনো দ্বিরুক্তির সুযোগ থাকে না। জানি, ভালোবাসা ঐ মুহুর্তটায় আমায় খুব স্বার্থান্বেষী করে দিয়েছিল। এতদিন পর পাওয়া ভালোবাসাকে আপন করার সুযোগ পেয়ে আমি আর একে অগ্রাহ্য করতে পারলাম না৷ বেছে নিলাম বাবার দেয়া দুটো চয়েজের প্রথমটা, বিয়ে।
____________________
মা কিন্তু শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মুখ ফিরিয়েই রইল। গোটা একটা নরম মানুষ থেকে যেন সে পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বাস ভাঙার জোর বোধহয় এতটাই। শেষে তার শত বারণ, অভিমান অগ্রাহ্য করে রুশোর মাকে ডাকা হলো। এবং তিনি এলে সেদিন রাতেই শর্ট নোটিশে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল।
রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার সময় বারবার কেঁপে উঠছিল আমার হাত। এক ভালোবাসাকে আপন করতে গিয়ে আমি কতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম ভাবলেও মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। রুশো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিল শেষ মুহুর্তে আমার থেমে যাওয়ায়। কানের কাছে মুখ নামিয়ে অনেকটা আর্তির সুরে ডাকল,
— রাইনা?
ওর ডাকটা শুনেও আমার এত হেল্পলেস লাগছিল। কলম রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম আমি। দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম অনবরত। বাবা বলেছিল তো অনেক শক্ত শক্ত কথা, কিন্তু শেষে গিয়ে আমাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে আর থাকতে পারল না। পাশে বসে কলমটা আবার হাতে গুঁজে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বলল,
— সাইন করো রাইনা৷ বাবা আছে।
“বাবা আছে” এতটুকু নির্ভরতাই যেন আমার সম্বল হলো গোটা জীবনের। সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথম হাঁটা শিখিছিলাম, আজ তার হাত ধরেই নতুন আরেকটা জীবন শুরু হলো।
আমি জানতাম না, এই জীবনে কতটা সুখ অথবা যাতনা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, তবু দুটো মানুষের ওপর ভরসা করে চোখ বুঁজে আমি মেনে নিয়েছিলাম নিজের আকাঙ্ক্ষিত শুরুকে।
অবশ্য শুরুর গল্পেও অসন্তোষের সাথে কম অপমান মিশেছিল না।
সেদিন রাতে আর জায়গা হলো না আমার ওবাড়িতে। মা খুব খারাপভাবে অপমান করে এক কাপড়েই বের করে দিয়েছিল আমাদের তিনজনকে। বুঝে গিয়েছিলাম বাবার বাড়িতে আমার পাঠ চিরকালের মতো চুকলো তবে। কষ্ট যতটা না পেয়েছিলাম তার চাইতে সদ্য হওয়া শাশুড়ির কাছে অপমানে ছোট হয়ে গিয়েছিল আমার মুখ। অথচ তিনি, ফিরতি কোনো কটু কথা শোনালেন না। বরং এমনভাবে ডানা ভাঙা আমাকে আগলে নিলেন বুকের মাঝে! বিস্মিত হলাম আমি। টের পেলাম ভালোবাসার অদ্ভুত ক্ষমতাটা রুশো আদতে ওর মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে। তাই তো ভালোবাসায় পাগল হয়ে উঠেছে ও। কে জানে! কতদিন পাগল থাকবে। আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, সারাজীবন থাকবে; এভাবেই প্রথমদিনের মতো।
অনেক অপ্রাপ্তিকে সঙ্গী করে যে পূর্ণ হয়েছি আমরা। দু’জন দু’জনকে প্রার্থনা করেছি এক সমান। এক হওয়ার পর আমাদের জীবনে এই ভালোবাসাটুকু ছাড়া আর কিচ্ছু নেই বেঁচে থাকার জন্য। জীবনের কোনো পর্যায়ে, কখনো একে হারিয়ে ফেললে, হারিয়ে যাবে আমাদের দুটো সত্ত্বা, হারাবে গোটা পৃথিবীর বুক থেকে ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস।
আর বিশ্বাস নিশ্চয়ই এত ঠুনকো নয়, পলকা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়?
আমি, রাইনা চৌধুরী, এই বিশ্বাসের ওপরে আস্থা রেখে নিজেকে রুশো চৌধুরীর নামে চিরকালের মতো লিখে দিয়েছি। আমি জানি, যে জীবন আমাদের ভিন্ন দুটো পথকে পবিত্র বন্ধন দিয়ে এক করেছে, সে জীবন কখনো বিশ্বাসঘাতকতার কালো ছায়া আমাদের ওপর পড়তে দেবে না। এভাবেই একজন আরেকজনের মনের আকাশে উজ্জ্বল তারা হয়ে জ্বলে রব আমরা আয়ুর শেষ দিন পর্যন্ত;শেষ দিন পর্যন্ত।
পুনশ্চঃ
দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবার পর রুশো কিন্তু আর ওর অন্ধকার অতীতের গলিও মাড়াল না। যদিও অন্ধকারের হাতছানি প্রেতের মতো তাড়িয়ে মারতে চাইত ওকে প্রায়ই, কিন্তু ও কীভাবে যেন শক্ত হাতে দমন করত ঐ প্রেতটাকে। আমার শাশুড়ি বলেন, রুশোর জীবনে দুই আশীর্বাদ। এক হলাম আমি, যে ওকে অন্ধকার থেকে টেনে আলোতে এনেছিলাম একসময়, আরেক আমাদের অনাগত মেয়ে শাইনা। যে নিজের উপস্থিতি জানান দেবার পর থেকেই এক অসীম সাহস ভর করে ফেলেছে ওর বাবার ওপর। ওর বাবা এখন পৃথিবীর কোনো কিছুকেই আর তোয়াক্কা করে না। প্রতিনিয়ত অসংখ্য থ্রেট কল, ক্ষমতা, প্রতিপত্তির লোভের হাতছানি সবকিছুকে উপেক্ষা করে সে একটা সাদামাটা জীবনের আলোয় বেঁচে থাকার চেষ্টা করে আমাকে নিয়ে, আমাদেরকে নিয়ে। আমি জানি, এরপরও আমাদের জীবনে প্রতি পদে অনেক বিপত্তি আসবে, প্রাণনাশের মতো বিপদও আসবে। কিন্তু এই বিপদকে আজকের মতই শক্ত হাতে দমন করবে দু’জন মানুষ। এক, আমার চোখের সামনের অসীম সাহসী মানুষটা, রুশো। আরেকজন পাশে থাকবে না বলেও, দূর থেকে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো সবসময় পাশে থাকা আমার বাবা।
এতকিছুর পর, এতটুকু জীবনে আমার প্রাপ্তি বলতে তো এতটুকুই; এতটুকুই।
‘সমাপ্ত’
Sara