রেড রোজ পর্ব-০৪

0
5

#রেড_রোজ
পার্ট [০৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(ট’ক্সি’ক লাভার কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
সাদা ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে উৎসা, হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়তেই তন্দ্রা কে’টে গেল তার। ত্বরিতে উঠে বসলো, মাথা প্রচন্ড রকম ব্যথা করছে।
“উফ্ এত মাথা ব্যাথা করছে কেন?”

চোখ খুলে তাকাতেই অচেনা জায়গায় নিজেকে দেখে চমকে উঠে সে।একটি রুমে আছে,বেশ গুছানো রুমটি।

“আমি এখানে কেন?এএটা ক,, কোন জায়গা?”

রাতের ছেলেটার কথা মাথায় আসতেই নিজেকে দেখে নিলো উৎসা। কাল রাতের গাউন এখনো গায়ে আছে, তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো উৎসা। দরজার দিকে এগুতেই পুরুষালী কন্ঠস্বর কর্ণ স্পর্শ করলো তার।

“ব্রো মেয়েটা কী এখনও ঘুমাচ্ছে?”
জিসানের কথা শুনে বেশ বিরক্ত নিয়েই ঐশ্বর্য বললো।
“প্লিজ তুই শুরু করিস না আবার!ওই মেয়েটা ঘুম থেকে উঠলেই পাঠিয়ে দিবি।”

তৎক্ষণাৎ দরজার কাছে ঠাস করে ফুলদানি পড়ে গেলো, জিসান আর ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।উৎসা থরথর করে কাঁপছে, ঐশ্বর্য সুঁ’চালো দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। জিসান দাঁড়িয়েই দিলো,ওর পাশে ঐশ্বর্য উঠে দাড়াতেই উৎসা ফ্লোরে পড়ে থাকা ফুলদানি উঠিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য এক পা এগুতেই উৎসা আ’তং’কিত স্বরে বলল।
“দ,,,, দেখুন আপনারা যদি আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু মে’রে দেবো।আই মিস টু সে আই টোল্ড ইউ নট টু কাম টু মি অ্যাদারওয়াইজ আই উইল কি’ল ইউ!”

ঐশ্বর্য আর জিসান একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠলো। আচমকা হাসির কারণ বুঝতে পারলো না উৎসা। ঐশ্বর্য উৎসা কে বললো।
“এই যে মিস দয়া করে ওইটা রাখো, আমরা তোমার কাছে এমনিতেও আসবো না।”

উৎসা ঐশ্বর্যের মুখে বাংলা ভাষা শুনে বুঝতে পারলো ওরা ওরা বাংলা জানে।উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“একদম না,এই দেশে কাউকে বিশ্বাস করা উচিত নয়।কখন কী হয়ে যায়?”

জিসান কাউচের উপর বসে পড়লো।
“রিল্যাক্স মিস?”

“উৎসা পাটোয়ারী।”

উৎসা নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য।
“বাংলাদেশী?”

উৎসা ফের মিনমিনে গলায় বলল।
“ইয়েস।”

জিসানের চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।
“ও মাই গড হ্যালো মি জিসান,আর ও হলো ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।মানে রিক ওরফে শেইম লেস ম্যান।”

উৎসা ফিক করে হেসে দিলো,জিসানও হাসে, ঐশ্বর্য গম্ভীর মুখ করে তাকালো।চুপসে গেল দুজনেই। ঐশ্বর্য উৎসা উদ্দেশ্য করে বলে।
“এই যে মিস কল গার্ল প্লিজ লিভ!”

উৎসা এতক্ষণ ঠিক থাকলেও কল গার্ল শব্দটি ভীষণ ভাবে গায়ে লাগলো তার।সে মোটেও কল গার্ল নয়।
“দেখুন আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন থ্যাংকস,তবে কারো সম্পর্কে না জেনে জাজ করা উচিত নয়।”

ঐশ্বর্য তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো।
“উপ্স।কল গার্ল নাইট ক্লাবে যেতে পারে অথচ তাকে কল গার্ল বললেই দোষ?”

উৎসা থমথমে মুখে আওড়ালো।
“পরিস্থিতি এসব করাচ্ছে, আমি থুড়িই জানতাম নাকি? আশ্চর্য!”

ঐশ্বর্য গুরুত্ব দিলো না, ডাইনিং থেকে আপেল নিয়ে কা’ম’ড় বসালো।উৎসা ফের বললো।
“যাই হোক থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া যে আপনি আমাকে এতটা হেল্প করেছেন।”

ভাইয়া শব্দটি বেশ কানে লাগলো ঐশ্বর্যের।
“হোয়াট?কী বললে তুমি?”

উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
“কী হলো বলো?”

“থ্যাংক ইউ বললাম!”

“নো নো এর পর কী বললে?”

“ভাইয়া!”

ঐশ্বর্য বেজায় রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“হাউ ডেয়ার ইউ? আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া হ্যাঁ?”

উৎসা থতমত খেয়ে গেলো, অবশ্যই ঐশ্বর্য দেখতে এবং বয়সের তুলনায় উৎসার অনেক টা বড়।সেই জন্যেই তো ভাইয়া ডেকেছে, তাহলে এমন করছে কেন?
জিসান এগিয়ে গিয়ে বললো।
“ব্রো এত রি’য়্যাক্ট করছিস কেন?”

“সো হোয়াট? আমি কখন ওর ভাই হলাম?এই যে মিস উৎসা, ডোন্ট কল মি ভাইয়া!”

উৎসা কিছুই বুঝলো না। ঐশ্বর্য বিরক্তের রেশ টেনে শুধায়।
“তুমি কী এখন যাবে? প্লিজ গো!”

জিসান ঐশ্বর্যের মুখ চেপে ধরে।
“এমন কেনো করিস?সি ইজ বাংলাদেশী।”

“সো হোয়াট?তোর যদি এতই বাংলাদেশী পছন্দ তাহলে মাথায় তুলে নাচ।”

জিসান ঐশ্বর্যের কথা গায়ে মাখলো না।
“মিস উৎসা ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ। তা আপনি কোথায় যাবেন?”

উৎসা তো কিছুই চিনে না!যাবে টা কোথায়?
“আসলে আমি এই শহরে একদম নতুন,কিছুই চিনি না। মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে এসেছি। আচ্ছা আমাকে কি একটু ড্রপ করে দিবেন?”

জিসান কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই ঐশ্বর্য কা’ট কা’ট কন্ঠে বলে।
” হ্যা হ্যা কেনো নয়? আমরা তো আপনার ড্রাইভার।”

উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকিয়ে রইল, ঐশ্বর্য ভেতরে যেতে যেতে বলে।
“জিসান আইস কিউব নিয়ে আয়।”

জিসান তম্বা খেয়ে গেলো।
“কীঈ আইস কিউব আবার?”

ঐশ্বর্য ভেতরের রুমে চলে গেলো।
“এই আইস কিউব দিয়ে কী হবে?”

জিসান আহাম্মকের মতো হেসে বলল।
“হে হে নাথিং। আপনি একটু ওয়েট করুন এখুনি আমরা আসছি।”
________________
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?কেনো গিয়েছিলি? আমি তো টাকা পাঠাচ্ছিলাম তাহলে কী দরকার ছিল জব খোঁজার?”

উৎসা কে ফোনে না পেয়ে সিরাত কে কল করেছিল নিকি,তার পরেই এসব কিছু জানতে পারে।উৎসা ঘুমিয়ে ছিলো,সিরাত ওকে ডেকে দেয়। এরপর নিকির সঙ্গে কথা বললো।
“আপু শান্ত হও আমি ঠিক আছি।”

নিকি সোফায় বসলো, নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করে বলে।
“প্লিজ আর পা’কা’মো করিস না!তোর যা লাগবে আমাকে ফোন করে বলবি।”

“আচ্ছা আচ্ছা।আপু আই লাভ ইউ।”

নিকি মুচকি হেসে বলে।
“আই লাভ ইউ টু।”

“ইয়েস আঙ্কেল এত আর্জেন্ট কল করলে যে?”

মিস্টার রাজেশ চৌধুরী মিটিং রুমেই বসে ছিলেন, ঐশ্বর্য কে দেখে বললো।
“এভরি ওয়ান জাস্ট অ্যা মোমেন্টস।”

মিস্টার রাজেশ বের হয়ে বাইরে গেলেন, ঐশ্বর্য ওনার পিছু পিছু গেলো।
“রিক হোয়াট হ্যাপেন মাই সান?তুমি তো বিজনেসে মনই দিচ্ছো না! টেল মি অ্যানি প্রবলেম?”

ঐশ্বর্য কপাল চুলকে বলে।
“নো আঙ্কেল, এক্সুয়েলি দু দিন বিজি ছিলাম,বাট ডোন্ট ওয়ারি তুমি বলো কী হয়েছে?”

“তোমাকে ফরান মালয়েশিয়া যেতে হবে, আমাদের ব্র্যান্ডের কি অবস্থা তা দেখতে হবে।”

“ইয়া আই উইল বি গো।”

“হ্যালো আঙ্কেল।”

জিসান সবে মাত্র অফিসে এলো।
“হেই জিসান কাম কাম।”

জিসান এসে ঐশ্বর্যের পাশে দাঁড়ালো।
“হাউ আর ইউ জিসান? রিকের সাথে সাথে তো তুমিই গা’য়েব হয়ে যাও।”

জিসান মৃদু হাসলো।
“ওই আর কী?তা আঙ্কেল আপনি কেমন আছেন?”

“অ্যাম ফাইন। নেক্সাট উইক রিক মালয়েশিয়া যাচ্ছে,ক্যান ইউ গো?”

“ইয়েস অফকোর্স হোয়াই নট?”

“সো রিক তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের নিয়েই যেয়ো, ভ্যাকেশন হয়ে গেলো।”

ঐশ্বর্য মিহি স্বরে বলল।
“ইয়া আঙ্কেল।”

“ওকে দ্যান আ’ল বি গো,সি ইউ টুমোরো।”

রাজেশ চৌধুরী যাওয়া মাত্র জিসান ঐশ্বর্য কে হা’গ করলো।
“ইয়া হু ব্রো ফাইনালি অ্যা ট্রি’প।”

“ইয়া ইয়া,বাট কেয়া কোথায়?”

“দেখ গিয়ে কোথাও ফ্লার্টিং করছে!”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।

বার্ড কলেজ বার্লিনের থেকে কিছুটা দূরে একটা ক্যাফেতে বসে আছে কেয়া।পরণে নেভি ব্লু কালারের টপস তার উপর জ্যাকেট জড়ানো।ওর সামনেই বসে আছে একটি ফর্সা ছেলে।
“ইওর ম্যাসাল্স আর নাইস!”

ছেলেটি ঠোঁট টিপে হাসলো।
“এন্ড ইউ আর সো হট।”

কেয়া বেশ ভাব নিয়েই বললো।
“ইয়া আই নো।”

ছেলেটি আর কেয়া সফট ড্রিংকস পান করে তার মাঝে গাড়ির হ’র্ন শুনতে পায়।কেয়া সফেদ কাঁচ দিয়ে দেখতে পায় মার্সিডিজ কার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য আর জিসান। কেয়া তড়িঘড়ি করে নিজের পার্স নিয়ে বের হতে লাগলো।
“সুইটহার্ট ওয়ার আর ইউ গোয়িং?”

“স্যরি।”

কেয়া বেরিয়ে গেলো,অধরে ঝু’লছে তার হাসি। জিসান বললো।
“কী রে এত দাঁত দেখাচ্ছিস কেন?”

কেয়া পার্স গাড়িতে রেখে বলে।
“লুক।”

কেয়া নিজের হাত দেখালো, পাঁচ আঙুলে ডায়মন্ড রিংস।
জিসান চোখ বড়বড় করে তাকালো।
“ডায়মন্ড?”

“ইয়া।”

ঐশ্বর্য ফিক করে হেসে উঠলো।
“আজ পাঁচজনের সঙ্গে ফ্লার্টিং করেছিস, অ্যাম অ্যা রাইট?”

“ইয়া ইয়া।”

জিসান কপাল কুঁচকে নেয়।
“উফ্ তোরা কী এসবই করবি সারা জীবন?আরে বিয়ে কর আমাকেও বিয়ে করতে দে! আফটার অল আমার নেক্সাট প্রজন্মের ব্যাপার।”

কেয়া আর ঐশ্বর্য হায়ফায় করলো। ঐশ্বর্য ভ্রু নাচিয়ে বলল।
“তাহলে করে নে বিয়ে, না করেছে কে?”

জিসান ঐশ্বর্যের বাহুতে ঘু’ষি দিয়ে বললো।
“তোরা না করলে আমি কী ভাবে করব?”

ঐশ্বর্যের দৃষ্টি তৎক্ষণাৎ সামনের রাস্তার দিকে গেলো।
বেশ লং টপস আর লেডিস জিন্স প্যান্ট প্লাজু,টপসের উপর জ্যাকেট জড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পাড় করছে উৎসা।
কেয়া ঐশ্বর্যের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো, উৎসা কে দেখে বললো।
“লুক লুক মিস উৎসা।”

জিসান আশেপাশে তাকিয়ে বললো।
“বাংলাদেশী !লেটস গো।”

জিসান দৌড়ে উৎসার কাছে গেলো। আচমকা জিসান কে দেখে প্রথম দিক ভয় পেলেও পরক্ষণেই সামলে নেয়।
“হ্যালো ভাইয়া।”

“হ্যালো মিস বাংলাদেশী। কোথায় যাচ্ছো?”

“কলেজে।”

কেয়া এগিয়ে আসলো, ঐশ্বর্য ওদের পিছু পিছু আসছে। ঐশ্বর্য কে দেখে নাক মুখ কুঁচকে নেয় উৎসা,কেয়া এসে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে।
“ওহ ইউ আর লুকিং সো কিউট।”

আচমকা কেয়া উৎসার নরম তুলতুলে গালে হামি দেয়। আঁ’তকে উঠে উৎসা।

“আপনি কী মেয়ে?”

কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“অফকোর্স,আরে ওইটা মজা করে দিলাম।”

উৎসা স্বস্তি পেলো। ঐশ্বর্য গুরুগম্ভীর স্বরে বলল।
“মিস কল গার্ল এখানে কী করছো?”

কল গার্ল কথায় বেশ অপমানিত বোধ করলো উৎসা।সে মোটেও ওই সব মেয়ে না।
“দেখুন ভাইয়া…….

“স্টপ।”

উৎসার কথা শুরু হওয়ার আগেই ঐশ্বর্য ফুল স্টপ দিয়ে দিলো।
“কে তোমার ভাইয়া?আই ওয়ান্ট ইউ অ্যাগেইন ডোন্ট কল মি ভাইয়া।”

উৎসা ফুস করে শ্বাস টেনে নেয়।
“ওকে ফাইন, দেখুন মিস্টার আপনি আমার সাথে মোটেও এমন ভাবে কথা বলবেন না। হ্যা আমি মানছি আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন থ্যাংকস, কিন্তু বার বার কল গার্ল বলবেন না অ্যাম নট।”

ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে বললো।
“জাস্ট শাট আপ,ইউ অ্যা কল গার্ল।”

জিসান বলে।
“রিক প্লিজ।”

উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো।
“স্টপ।কী হচ্ছে এসব? একজন এসে কিস করছে, আরেক জন হ্যলো মিস বাংলাদেশী,আর আরেকজন এসে কল গার্ল বলছে! হচ্ছে টা কী?”

ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে টেনে গাড়ির সঙ্গে চেপে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো উৎসা।পিঠ দিয়ে খানিকটা বেঁকে গেলো,আর ঐশ্বর্য ঠিক ততটাই ঝুঁ’কে পড়লো উৎসার মুখের দিকে।
“লিসেন মিস রেড রোজ অ্যাম নট গুড বয়,সো স্টে ওয়ে ফ্রম মি।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়। ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার মুখে ফু দেয়,উৎসা চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নেয়।

জিসান ফিক করে হেসে উঠলো,কেয়া ঐশ্বর্য কে টেনে দাঁড় করালো। জিসান বললো।
“ডোন্ট মাইন্ড বাংলাদেশী,রিক একটু ঘাড় ত্যা’রা।”

উৎসা ফিসফিসিয়ে বললো।
“একটু না পুরোটাই।”

চলবে………….।✨