রেড রোজ পর্ব-১২

0
4

#রেড_রোজ
পার্ট [১২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)

“ইউ আর লুকিং সো প্রীটি,টু মাচ প্রীটি গার্ল।”

উৎসা ঐশ্বর্যের কথায় মৃদু কেঁপে উঠলো।
কিয়ৎক্ষণ পূর্বে উৎসা নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়, তৎক্ষণাৎ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য, জিসান, কেয়া, রুদ্র।
“আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
রুদ্র হেসে উঠলো।
“তোদের ড্রপ করতে।”

উৎসা অবাক হলো,এত জন মিলে তাকে ড্রপ করতে যাচ্ছে?
“ভাইয়া তিনজন মিলে আমাকে ড্রপ করতে যাচ্ছো? সিরিয়াসলি?”

রুদ্র জিসান ফিক করে হেসে দেয়।
“আরে নো মিস বাংলাদেশী, এক্সুয়েলি আমরাও জার্মান ব্যাক করছি।”

উৎসার কিঞ্চিৎ চমকে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো, ঐশ্বর্যের কোনো ভাবান্তর নেই।সে তো নিজের মতো আইপ্যাড দেখছে।উৎসা আশ্চর্য হয়,কাল তো কেউই বললো না ওরা ফিরছে!

“সত্যি? মানে কই কেউ তো বললেন না? কেয়া আপু তুমিও তো বললে না!”

কেয়া জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে,আসলে তারা কেউই তো জানতো না।হুট করেই ঐশ্বর্য সকাল সকাল বললো ব্যাগ গুছিয়ে নিতে,আজকেই ওরা ব্যাক করবে।

“কিউট গার্ল অ্যাম রিয়েলি স্যরি, আমাদের মনেই ছিলো না।”

উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
রুদ্র ওদের কে ঢাকার সবচেয়ে ফার্স্ট ক্লাস সিট বুক করে বাসের। ঘন্টা খানেক পরেই ঢাকা পৌঁছে গেলো সবাই,উৎসা তাড়া দিতে লাগলো ঐশ্বর্য কে।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া এক ঘন্টা পর ফ্লাইট আমরা পৌঁছবো কখন?”

ঐশ্বর্য বেশ চিল মু’ডে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।উৎসা বেশ বিরক্ত।
“কেয়া আপু কী হচ্ছে এসব? ফ্লাইট মিস করব তো!”

কেয়া উৎসা কে শান্ত করতে বললো।
“কাম ডাউন কিউট গার্ল,জাস্ট টু মিনিট?”

উৎসা এবার রাগে চিৎকার করতে যাবে তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য ওকে টেনে গাড়ির সঙ্গে চেপে ধরে।
“রেড রোজ ইউ আর লুকিং সো প্রীটি টু মাচ প্রীটি, প্লিজ বেবী এত প্যানিক করতে নেই।”

উৎসা হা হয়ে গেলো, ঐশ্বর্যের কথা গুলো মস্তিষ্কে ঢুকছে না উৎসার।শুকনো ঢুল গিললো উৎসা, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে আকাশের দিকে দেখায়। উৎসা অনুভব করলো বাতাসের বেগ বাড়ছে,ধীরে ধীরে উৎসার জ্যাকেট খানিকটা উড়ছে।উৎসা ঐশ্বর্যের আঙ্গুল অনুযায়ী তাকালো আকাশ পানে, হেলিকপ্টার ধীরে ধীরে ল্যান্ড করছে।উৎসা চমকালো, হেলিকপ্টার?

“হেলিকপ্টার এখানে?”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“আমরা ফ্লাইটে যাচ্ছি না বেইবি।উই আর গোয়িং টু বাই হেলিকপ্টার।”

উৎসা আশ্চর্যের অষ্টম আকাশ পাড় করে, বড়লোক হলে বুঝি শো অফ করে? অদ্ভুত!
কেয়া চেঁচিয়ে বললো।
“উৎসা,,কাম।”

ঐশ্বর্য গিয়ে পাইলটের পাশের সিটে বসলো, জিসান উৎসা কেয়া পিছনে বসলো।সিট বেল্ট লাগিয়ে নেয় সবাই,যেহেতু উৎসা কর্ণারে বসেছে তাই তার একটু বেশি ভয় করছে। প্রথম বার হেলিকপ্টারে বসেছে,হাত পা রিতিমত কাঁপছে।পাইলট টেক অফ করতেই উৎসা ভয়ে সামনে থাকা ঐশ্বর্যের ঘাড় খা’মচে ধরে।
“আহহ,,
ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসার দিকে,উৎসা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসার হাত সরালো না, বরংচ ওর ডান হাতও টেনে নিজের ডান হাত পিছনে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো।উৎসা যেনো কিয়ৎক্ষণের জন্য ভরসা পেলো।
“আমরা ফ্লাইটে গেলেই হতো শুধু শুধু ভাইয়ের টাকা নষ্ট?”

উৎসার এহেন কথায় ঐশ্বর্য চোখ গুলো ছোট ছোট করে নেয়।
“সো চিপ!”

উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“হ্যা আমরা চিপ। আচ্ছা আপনি বড়লোক এটা সবাই জানে তাই বলে কী এটা শো অফ করতে হবে?”

ঐশ্বর্য কিছু বললো না, জিসান হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“উৎসা ঐশ্বর্য বরাবরই এমন, প্রাইভেট হেলিকপ্টার ছাড়া তেমন যাওয়া আসা করে না।”

উৎসা বিড়বিড় করে আওড়াল।
“যত্তসব ঢং।”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“ঢং মানে কী?”

উৎসা এবার ঢং মানে কী এটার উত্তর কী দেবে? উফ্ এই ইংরেজির দ’ল নিয়ে তার যত জ্বা’লা!
_________________
“ভাইয়া কেয়া কেমন?”

রুদ্র সকাল সকাল অফিসের জন্য বের হয়েছিল, তৎক্ষণাৎ নিকিও রেডি হয়ে নিচে চলে এলো।
আচমকা বের হতে হতে কথাটা জিজ্ঞাস করে, রুদ্র বুকে হাত গুজে বলে।
“তোর মাথায় আবার কী ভূ’ত চাপলো?”

নিকি দাঁত দেখিয়ে বললো।
“না মানে আমার না কেয়া আপা কে দেখলে বেশ ভাবী ভাবী ফিল আসে।”

রুদ্র নিকি কে তেড়ে গিয়ে বলে।
“তবে রে,,,,

নিকি দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে, রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো। আসলেই কেয়া মেয়েটা খুব একটা খারাপ না।

সারাটা দিন হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে কাটছে উৎসার, গার্ড থাকে ঢুকতেই দিচ্ছে না। কারণ রেজিষ্ট্রি পেপারে তার নাম নেই,উৎসা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু গার্ড শুনলো না। এমনিতেই এখানে আসতে আসতে কতটা জার্নি করতে হয়েছে উৎসা কে। তার উপর একটু রেস্ট নিতে পারি পর্যন্ত, এখনও দাড়িয়ে আছে সে।ল্যাকেজ গুলো পাশে রেখে সিরাত কে কল করলো।

“হ্যালো সিরাত তুমি প্লিজ বাইরে এসো।”

সিরাত দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এলো।সিরাত কে দেখে বেশ ভরসা পেলো উৎসা।
“সিরাত দেখো না গার্ড আমাকে ঢুকতেই দিচ্ছে না, বার বার বলছে আমার নাম কা’ট করা হয়েছে!”

সিরাত মাথা নুইয়ে নেয়।
“স্যরি উৎসা তোমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে, অ্যাম রিয়েলি ভ্যারি স্যরি। আমি ট্রাই করেছিলাম, কিন্তু….

উৎসা ফুঁপিয়ে উঠলো, এখন কোথায় যাবে সে?সে তো এখানের কিছুই চিনে না।তাকে তো থাকতে হবে,মিহি কে খুঁজতে হবে।
“উৎসা প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”

উৎসা অস্থির হয়ে উঠে।
“এখন কোথায় যাবো? এত তাড়াতাড়ি কে হোস্টেলে সিট দিবে আমায়? রাতও হয়ে যাচ্ছে।”

সিরাত ভাবলো, কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলে।
“তুমি তো তোমার ওই কাজ করো যেখানে সেখানে যেতে পারো! কেয়ারটেকার হিসেবে!”

উৎসা চমকালো,সে ঐশ্বর্যের কাছে যাবে? কিন্তু ঐশ্বর্য কে দেখলেই উৎসার কেমন ভয় লাগে!এর মাঝে ঐশ্বর্য খুব একটা ভালো আচরণ করে না উৎসার সঙ্গে।
উৎসা আমতা আমতা করে বলল।
“হ্যা,ঠঠিক বলেছো।”

সিরাত মৃদু হাসলো।
“তাহলে তুমি ওখানে কিছু দিন থাকো, তার মধ্যে দেখি আমি কিছু ব্যবস্থা করতে পারি কী না?আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

উৎসা তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লো,আর যাই হোক অবশ্যই ঐশ্বর্যের কাছে যাবে না সে!কেনোই বা যাবে? তাকে ভাইয়া বলে ডাকলেই তো ফুস করে উঠে।
উৎসা নিজ মনে হাঁটছে আচমকা তার ল্যাকেজে টান পড়লো।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসা,দু তিনটে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
তার মধ্যে একটি ছেলে বললো।
“ওয়াও,ইউ আর সো হট বেইবি!”

উৎসা ভীত হয়ে গেলো, মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ সেদিন রাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেলো,এর মধ্যে দুটি ছেলে ওর হাত ধরে নেয়।
“ওয়ার আর ইউ গোয়িং বেইবি?”

উৎসা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
“লিভ মি, প্লীজ।”

ছেলে গুলো তাচ্ছিল্য করলো, চোখে মুখে তাদের কা’মনা’র ছা’প।উৎসা ভালো করেই বুঝতে পারছে এখানকার ছেলে গুলো মেয়েদের মধ্যে সারাক্ষণ ডু’বে থাকে।উৎসা কেঁদে উঠলো।
“প্লিজ লিভ মি এলন।”

“নট অ্যাট অল বেইবি,ইউ গননা স্পেন দ্যা নাইট উইথ অ্যাচ।”

উৎসা কিছুই বলতে পারলো না তার পুর্বেই লোক গুলো ওর উপর ঝা’পিয়ে পড়লো। দু’জন ওর হাত ধরে অন্য দিকে আরেকটি ছেলে ওর উপর আসতে লাগলো।উৎসা চিৎকার করে উঠল।
“নো নো নো।”

এর মধ্যে আবারও পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো কর্ণে।
“ডোন্ট টাচ।”

মস্তিষ্ক যেনো তখনই বললো ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।

উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো, সত্যি অফ হোয়াইট শার্ট সাথে নেভি ব্লু জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বললো।
“ইফ অ্যানি ওয়ান টাচ হিম ,আই নো আই উইল কি’ল হিম।আই রিপিট আই উইল কি’ল হিম।
ছেলে গুলোর যেনো সাহস হলো না উৎসা কে ছুঁতে, তারা পিছুতে লাগলো। ঐশ্বর্য অগ্নি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উৎসার দিকে, দ্রুত পিছনে গিয়ে। ঐশ্বর্য নিজের গাড়ি থেকে হক স্ট্রি’ক বের ওদের কে উরাধুরা ধুলাই দিলো।

ছেলে গুলো প্রাণ বাঁচাতে পালাল, ঐশ্বর্য সজোরে ছুড়ে ফেলল হক স্ট্রি’ক।উৎসার সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে।সে চিৎকার করে বলে উঠল।

“ঐশ্বর্য ভাইয়া।”

ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকানো মাত্র ভারী কিছু এসে ওর বুকে লাগলো।উৎসা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে উৎসা কে।
ঐশ্বর্য সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো।তার বুকের মধ্যে একটাই শব্দ হচ্ছে লাভস্, ওদিকে মস্তিষ্ক বলছে ফিজিক্যাল নি’ডস্ সে’ক্সু’য়াল নি’ডস্।

চলবে…………….।✨