রেড রোজ পর্ব-১৪

0
3

#রেড_রোজ
পার্ট [১৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
পড়ার টেবিলে বসে আছে উৎসা,বই সামনে থাকলেও তার পড়ায় মোটেও মন নেই। বারংবার মনে হচ্ছে এই বুঝি ঐশ্বর্য রুমে এসে বললো।
“রেড রোজ আই ওয়েন্ট টু টাচ ইউ।”

উৎসা সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে, অদ্ভুত মানুষ একটা।কী সব বলে? ফিজিক্যাল নি’ডস্ এসব কী? আশ্চর্য!
বাইরে বেশ শব্দ হচ্ছে,উৎসা বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রয়িং রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো ঐশ্বর্য ওখানেই আছে। তবে কেবিনেটের ড্রয়ারে কী যেনো খুঁজতে ব্যস্ত সে। উৎসা গিয়ে মিনমিনে গলায় জিজ্ঞেস করে ।
“আপনি কী কিছু খুঁজছেন?”

ঐশ্বর্য ঘাড় খানিকটা বাঁ’কিয়ে তাকালো,হাত পা শিরশির করছে তার। বারংবার ইচ্ছে করছে এই উৎসা কে ছুঁয়ে দিতে। অস্থির মন শান্ত করতে, আচমকা তার সঙ্গে অদ্ভুত অনূভুতি জাগ্রত হচ্ছে।উৎসা কে দেখলেই মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে।
ঐশ্বর্যের তাকানোতে উৎসা ফের শুধায়।
“কী হলো বলুন?কী খুঁজছেন আপনি?”

ঐশ্বর্য কিছু বললো না,তবে ড্রয়ার থেকে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা নিয়ে দ্রুত দুতলায় যেতে লাগে।উৎসার মনে হচ্ছে ঐশ্বর্যের কিছু একটা হয়েছে,সেই জন্য উৎসাও পিছু পিছু যেতে লাগল।
ঐশ্বর্য ইন’জেক’শন পু’শ করলো নিজের বা হাতের পেশিবহুল জায়গায়। ঐশ্বর্য সেন্টার টেবিলের উপর ডান পা তুলে কাউচের মাঝে ঘাড় এলিয়ে রাখলো।
উৎসা এগিয়ে গিয়ে দরজা খানিকটা ফাঁক করে দেখে, ঐশ্বর্য ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।উৎসা ত্বরিতে প্রবেশ করে বলে।
“কী হয়েছে আপনার? এভাবে পড়ে আছেন কেন? এটা কী?”

উৎসা অস্থির ভ’ঙিতে ঐশ্বর্যের হাত থেকে ই’নজে’কশন নিয়ে নিলো।
“কী হয়েছে আপনার ভাইয়া? আপনি কী অসুস্থ?”

উৎসা ঐশ্বর্যের কপালে হাত ছোঁয়াতেই যাবে তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরে ফেললো।উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্য হেঁচকা টানে নিজের শক্তপোক্ত বুকে এনে ফেললো উৎসা কে।
“উফ্।”

মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে উঠলো উৎসা। ঐশ্বর্যের মুখের উপর উৎসার ঘন কালো চুল গুলো ছড়িয়ে পড়লো,ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে চুল গুলো সরিয়ে নেয় ঐশ্বর্য।উৎসা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, ঐশ্বর্যের চোখে মুখে অদ্ভুত কিছু ফুটে উঠেছে। তীব্র কাছে পাওয়ার ইচ্ছা জেঁ’কে বসেছে তার মনে।
“রেড রোজ ইউ আর টু মাচ প্রীটি ড্যামেড। ক্যান আই কিস ইউ? প্লিজ?”

কী আবদার?উৎসা চমকালো, কথা গুলোতে কতই না ব্যাকুলতা!উৎসা কিয়ৎক্ষণের জন্য যেনো ব’শীভূ’ত হয়ে গেলো। ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁট বরাবর তাকিয়ে আছে, নিজের পুরুষালী ঠোঁট এগিয়ে নিচ্ছে।উৎসা কাঁপছে, তৎক্ষণাৎ ভয়ে ছি’টকে দূরে সরে গেলো।
ঐশ্বর্য আচমকা শব্দ করে হেসে উঠলো,উৎসা ঘন ঘন নিঃশ্বাস টেনে নেয়।
“রেড রোজ তোমাকে দেখলেই খেয়ে নিতে ইচ্ছে করে।”

উৎসা অধর কিঞ্চিৎ ফাঁক করে ড্যাবড্যাব চোখে তাকায়।
“ছিহ্ ছিহ্ আপনি এত খারাপ? আমি থাকব না আপনার সঙ্গে, আজকেই আমি চলে……..

উৎসা পুরো কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলো না তার পূর্বেই ঐশ্বর্য এসে ওর মুখ চেপে ধরে ভয়ংকর কন্ঠে বললো।
“আর একবার যদি বলো চলে যাবার কথা!ট্রাস মি আই উইল কি’ল ইউ রেড রোজ।”

উৎসা যেনো নিঃশ্বাস নিতেই ভুলে গেছে, ঐশ্বর্যের আচরণ গুলো খুব অদ্ভুত!
ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দিলো,তার সোজাসাপ্টা প্রশ্ন।
“আমি ইদানীং মেয়েদের কাছে যেতে পারছি না রেড রোজ,কারণ টা কী জানো?”

ঐশ্বর্য তাকায় উৎসার দিকে,উৎসা শুকনো ঢুক গিললো। ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে বললো।
“তোমাকে টেস্ট করতে মন চাচ্ছে।ইয়াম্মি ইয়াম্মি।”

উৎসা থতমত খেয়ে গেল,বড় বড় পা ফেলে ঐশ্বর্যের রুম থেকে বের হয়ে যায়, ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“রেড রোজ রেড রোজ পাগল হয়ে যাচ্ছি।লুক ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী দু দিন ধরে কোনো মেয়ের কাছাকাছিই পর্যন্ত যায়নি!ও মাই গড হা হা,,

ঐশ্বর্যের হাসিতে পুরো রুম ছড়িয়ে পড়লো।
___________________
“বুঝতে পারছি না তোমার বড় ছেলে কেনো এখানে এসেছিল কেন?”

আফসানা পাটোয়ারী রুমে ঢুকেই এ কথা জিজ্ঞেস করে শহীদ কে, তিনি ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
“ওর ইচ্ছে হয়েছে এসেছে, এখন ওর ইচ্ছে হয়েছে আবার চলে গিয়েছে।”

আফসানা দাঁত কটমট করে বললো।
“বলি কেনো এখানে আসতে হবে?”

শহীদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, বিরক্তের রেশ টেনে বলে।
“উফ্ তুমি চুপ করো,ওর যখন ইচ্ছে হবে আসবে।ভুলে যেও না তুমি ঠিক কী করেছো? আজ তোমার জন্যেই আমার ছেলে আমাকে বাবা বলে পর্যন্ত ডাকে না।”

আফসানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শহীদ রুম থেকে প্রস্থান করলেন, এখানে থাকলেই কথা বাড়বে।

ফোনের টুং শব্দ শুনতেই ফোন রিসিভ করলো নিকি, অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।
“হ্যালো?”

“হ্যালো মিস নিকি হাউ আর ইউ?”

জিসানের কন্ঠস্বর শুনা মাত্র চমকে উঠে নিকি,কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বারে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
“আপনি কল করেছেন? বাহ্ বাহ্ আমি কী লাকী?”

জিসান ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“কেনো ম্যাডাম আমি কী কল করতে পারি না?”

নিকি ফোড়ন কে’টে বলে।
“অবশ্যই না, আপনি তো বড়লোক্স মানুষ কত শত গার্লফ্রেন্ড এখন এত জনের মধ্যে আমাকে কল করা মানে তো…

“ব্যস ব্যস এনাফ।”

নিকি নৈঃশব্দ্যে হাসে। জিসান বললো।
“মনটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ করছে।”

নিকি ভারী নিঃশ্বাস ফেলে।
“তাহলে বাংলাদেশের কাউকে বিয়ে করে নিন।”

জিসান তৎক্ষণাৎ বলে উঠে।
“তাহলে বলছো?”

নিকি হয়তো লজ্জা পেলো, নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগছে তার।
“হ্যা বলছি তো,করে নিন বিয়ে।”

জিসান ফটাফট বলে।
“তাহলে লাল শাড়ি রেডি করো, বাঙালি বেশে শেরওয়ানি পড়ে আসছি।”

নিকি শব্দ করে হেসে উঠলো,ওর সাথে জিসানও হেসে দেয়।

“জোশ?”

রাতের ডিনার টেবিলে সাজিয়ে রাখছে উৎসা, ঐশ্বর্য এসে চেয়ারে বসে পড়ল। ঐশ্বর্য কে দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল উৎসার,খালি গায়ে এমন ভাবে একটা মেয়ের সামনে কী করে বসতে পারে?
উৎসা যেনো রিতিমত নির্বাক।
“ছিহ্ ছিহ্ বেশরম গায়ে তো কিছু দিন?”

ঐশ্বর্য হাত টানিয়ে নেয়,বড় সড় হামি তুলে বলে।
“অভ্যাস করে নাও সুইটহার্ট।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়। মনে মনে গালি দেয় অস’ভ্য।
ঐশ্বর্য একের পর এক হু’কু’ম দিচ্ছে। একবার এইটা তো আরেকবার ওইটা।
উৎসা চেয়ার টেনে বসে, ঐশ্বর্যের সামনে আছে নুডুলস, স্যুপ আর জোশ।আর উৎসার সামনে রুটি আলু তরকারি,উৎসা নিজের মতো করে খাচ্ছে। ঐশ্বর্য নুডুলস মুখে নিতে নিতে বলল।
“ওগুলো কী খাচ্ছো?”

উৎসা মুখে এক টুকরো রুটি তুলে বলে।
“রুটি তরকারি জাস্ট ইয়াম্মি খেতে।”

ঐশ্বর্য ভ্রুকুটি করে তাকালো, ঐশ্বর্য আর খেলো উঠে গিয়ে কাউচের উপর বসলো।উৎসা কিছুই বুঝলো না,কী আশ্চর্য এভাবে খাবার রেখে যাওয়ার মানে কি?
উৎসা কিছুই বললো না, নিজের খাবার পুরোটা শেষ করে ডাইনিং গুছিয়ে নেয়।সব কিছু পরিষ্কার করে কিচেনের লাইট অফ করে ড্রয়িং রুমে এলো।
ঐশ্বর্য এখনও বসে ছিল সেখানে।
“গুড নাইট।”

উৎসা রুমের দিকে পা বাড়াতেই তার খোলা চুলে টান পড়লো।উৎসা উল্টে গিয়ে ঐশ্বর্যের উপর পড়লো।
“আরেহ!”

ঐশ্বর্য উৎসা কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।উৎসা ছটফট করতে করতে বলে।
“কী করছেন চৌধুরী সাহেব? প্লিজ লিভ?”

ঐশ্বর্য হয়তো শুনলো না।সে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে।
“খাবারের থেকেও তুমি বেশি টেস্টি,টু মাচ ইয়াম্মি ইয়াম্মি।”

উৎসার যেনো গলা শুকিয়ে গেল,সে মিনমিনে গলায় বলল।
“আআপনি কিন্তু বলেছেন আমাকে টাচ করবেন না!”

ঐশ্বর্য উৎসা কে উল্টো ঘুরিয়ে কাউচের উপর ফেলে দেয়, ওর উপর ঝুঁ’কে পড়ে।
“লিভ ইন রিলেশনশিপে কী কী হয় জানো?”

উৎসা মাথা নুইয়ে নেয়, ঐশ্বর্য ব্যাড বয়। একদম ভালো না সেটা উৎসা জানে।
“লিভ ইনে কী কী হয় জানো না তো! ডোন্ট ওয়ারি আমি শিখিয়ে দেবো।”

ঐশ্বর্য শেষের কথাটা বলে চোখ টিপে,উৎসা ভয়ে গুটিয়ে নিলো নিজেকে।
“আপনি কি…..

এরপর?উৎসা আর কিছু বললো না, ঐশ্বর্য ইতিমধ্যেই উৎসার গালে শীতল অধর ছুঁয়ে দেয়। আচমকা এমনতর স্পর্শে কেঁপে উঠলো উৎসা।
“ডোন্ট ডু দিস!”
উৎসা অশান্ত কন্ঠে বলে। ঐশ্বর্য সেই একই কন্ঠে বলে।
“আই কান্ট কন্ট্রোল।”

ঐশ্বর্য উ’ন্মা’দ হলো, তার বেসামাল স্পর্শ গুলো উৎসা কে অদ্ভুত অনূভুতি জাগ্রত করতে বাধ্য করছে।উৎসা ভয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে হাসলো,উৎসা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
“আপনি এমন কেনো?এতই যদি নি’ডস থাকে তাহলে বিয়ে করে নিন!”

ঐশ্বর্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না, নৈঃশব্দ্যে কেবিনেটের ড্রয়ার থেকে ই’নজে’কশন নিয়ে পু’শ করলো হাতে। মৃদু কেঁপে উঠলো তার বলিষ্ঠ দেহ,উৎসা মিনমিনে গলায় শুধোয়।
“এসব কি করছেন?”

ঐশ্বর্য সিল্কি চুল গুলো ডান হাতে পিছনে ঠেলে দেয়।
“তুমি তো টাচ করতে দিচ্ছো না আপাতত এটাতেই কাজ চালাই।”

ঐশ্বর্যের লাগামহীন কথাবার্তা শিহরণ তুলছে উৎসার মনে।
“রেড রোজ ইউ আর লুকিং সো প্রীটি টু মাচ প্রীটি বেইবি।”

ঐশ্বর্য রুমের দিকে এগিয়ে গেলো,উৎসা সরে দাঁড়ায়।তার এখন কী করা উচিত? এখানে এসে ভুল করেছে সে, ঐশ্বর্য যেমন দেখায় সে মোটেও তেমন টা নয়।

চলবে…………..✨।