রেড হার্ট পর্ব-০৯

0
248

#রেড_হার্ট❤️
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
#পর্ব_নয়

নার্সের বলা কথায় বকুলের চোখেমুখে লজ্জারা এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেল। পিঠ চুলকানোর ভান ধরে চুপ রইলো। কিছু বললো না। কিন্তু নার্স, সে তো বলেই চলেছে,

-“ভ্রম স্যার সোশ্যাল সাইটে মেডিক্যাল বিষয়াদিতে এতো ফেমাস একটা লোক। ওনার প্রত্যেকটা কাজ আমি থেকে শুরু করে চুনোপুঁটি নার্সরা’ও ফলো করে, সত্যিই ওনার কাজের হাত চমৎকার! এতোদিন আমরা এইগুন জানলেও আজ নতুন করে জানলান ওনি অনেক রোমান্টিক। আজকাল এরম স্বামী পাওয়া যায় বলুন?”

বকুল কেশে উঠলো। সত্যিই তার এখন অস্বস্তি লাগছে। লোকটা যে পিঠ বাচাতে এই কাজ করেছে সে ব্যাপারে খানিকটা নিশ্চিত। নাহলে ওমন বউ পাগলা ছেলে তো নয় ভ্রম!

~~
-“আররেহ ইয়ার, চুপ করে কেন? কি হয়েছে বল?”

ইয়াদকে প্রায় দশমিনিট ধরে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে ভ্রম। কিন্তু ইয়াদ কেবল মুখে জোরপূর্বক মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে মাথা উপর-নিচ করে যাচ্ছে। বিরক্তি চলে এলো ভ্রমের মাঝে। মেজাজ দেখিয়ে ইয়াদ কে শোধালো,

-“পাগল টাগল হয়ে গেছিস? ট্রিটমেন্ট করতে হলে আমায় বল আরেকটা মাথার তার কেটে দেই। জীবনের প্রথম মার্ডার আমি তোকেই করি? ভেতরে তো দেখেছিস সেই পরিস্থিতি কীভাবে মেনেজ করেছি। আর এখন তুই কি শুরু করছিস?”

ইয়াদ মাথা থামিয়ে,

-“একটু দাড়া! বাহিরে আসিস না। আমি এই দোকানে যাচ্ছে আর এই আসছি।”

বলেই ছুট লাগালো। পেছনে ভ্রম কেবল দুই হাত সামনে প্রসারিত করে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ইয়াদ ফিরে এল। এসেই,

-“নে। মাস্ক টা পড়ে নে। তারপর বাহিরে যাচ্ছি কথা বলতে বলতে।”

বলে তার হাতে থাকা একটা মাস্ক ভ্রমের হাতে ধরিয়ে দেয়। ‘চ’ সূচক শব্দ বের করে কয়েক পা সামনে এগিয়ে যায়। চোখ ছোট ছোট করে ওকে জিজ্ঞাসা করে,

-“কি হয়েছে বলবি? সেই তখন থেকে বাইরে বেরোবো বেরোবো করছি, আসার সাথে সাথে এই রুমে টেনে আনলি, এখন মাস্ক হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিস!”

-“বলছি তো ভাই বলবো। তার আগে আমার কথাটা শোন?”

-“কেন শুনবো?”

-“আমি বলেছি তাই!”

-“ওকে। পড়ে নিলাম এবার চল!”

বলেই ইয়াদকে নিয়ে পা বাড়ায় রুমের বাহিরে। ‘নিচে নেমে বলছি’ বলে ভ্রমকে চুপ করিয়ে দেয় ইয়াদ। তারপর করিডোরের শেষ প্রান্তে যেতেই কেউ একজন ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“আরে ইয়াদ স্যার যে! আপনি ভ্রম স্যারের বেস্টফ্রেন্ড না, বলছি ভ্রম স্যার এখন কোথায়? ”

পেছনে ফিরে ওরা দুজনেই তাকায়। দেখতে পায় একজন নার্স হেসে হেসে ইয়াদকে প্রশ্নটা করছে। সে তাড়াহুড়োয় নিজের মাস্ক টা পড়ে নেয়। তখনই ভ্রম নিজের ব্যাপারে বলতে যাবে ওমনি ইয়াদ ওকে আটকে দেয়। আর নিজে বলে,

-“আরে, ইয়ে, মানে। ও এখন হোস্টেলে এখানে নেই। আমরা তো ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছি, আজই চলে যাচ্ছি তাই….।”

ইয়াদের কথায় ভ্রম বড়বড় চোখ করলো। তাকে রেখে দিব্যি নাই করে দিচ্ছে? এতো লুকোচুরি কেন হচ্ছে? এদিকে নার্সটা ইয়াদের কথা বিশ্বাস করলো না। খানিকটা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো,

-“কেন জেনো মনে হচ্ছে আপনার সাথের লোকটাই ভ্রম স্যার। মিথ্যে বলছেন কেন?”

ইয়াদ প্রতিবর্তী ক্রিয়ার কারনে সাথে সাথে শোধায়,

-“ও,ও হতে যাবে কেন হ্যাঁ? ও আমার ভাই। ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে তাই হসপিটালে এডমিট ছিল। এখন নিয়ে যাচ্ছি।”

-“তাহলে মাস্ক কেন?”

-“আপনি নার্স কেন?”

-“তার মানে?”

-“ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগী কি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরবে? আর আপনার সাতগে এতো ক্যাচাল কেনই বা করছি। নিজের কাজ করুন গিয়ে। এসেছেন ভ্রম স্যারের কথা বলতে। শুনুন, ভ্রম স্যারের বিয়ে হয়েছে, ওর #রেড_হার্ট আছে । মাঝখানে আপনারা এসে পড়বেন না। একদম ব্ল্যাক হার্ট লাগবে।”

আর এক পা’ও দাড়ালো না সে। ভ্রম কে এক প্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে আসলো। ভ্রম এদের কথোপকথনে এতোটাই শকড যে সে ভাবান্তরহীন! এই ইয়াদ ভেতরে কথা বাহিরে কেন বলছে?

তারা এসে থামলো বড় বটগাছটার নিচে। ভ্রম হাত ঝাড়া মেরে ইয়াদকে দূরে সরালো। বড় একটা শ্বাস নিয়ে,

-“কি হয়েছে তোর ইয়ার?”

অসহায় ফেস করলো ইয়াদ। মুখ বোঝা না গেলেও চোখের এক্সপ্রেশন সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। উত্তর দিলো না সে ভ্রমের। ভ্রম ফের জিজ্ঞাসা করলো,

-“কি রেড হার্ট ব্ল্যাক হার্ট শুরু করে দিয়েছিস? এগুলো তো ভেতরের কথা, বাহিরে কেন বলছিস। আর বিয়ের ব্যাপারে তুই জানিস না? বিয়ে করেছি, বিয়ে করেছি বলে বেড়াচ্ছিস কেন?”

ইয়াদ কাঁদোকাঁদো ফেইস করে বলে,

-“ভাি ব্যাপার টা আর তর পার্সোনাল না। পাব্লিক!”

আতঁকে উঠে সে। চরম কৌতূহল নিয়ে বলে,

-“তার মানে?”

-“তোর ফোন কোথায়?”

-“তোর কাছে!”

-“হ্যাঁ, আমার কাছে, নে এইবার দেখ!”

বলেই ফোনটা ভ্রমের দিকে এগিয়ে দিল। ভ্রম’ও ফোনটা নিয়ে নিলো। জিজ্ঞাসু হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

-“কি দেখবো?”

-“তোর প্রোফাইলে গিয়ে দেখ!”

ভ্রম দ্রুত হাত চালালো। দেখলো ৪০ মিনিট আগে একটা লাইভ হয়েছে। অবাক হলো! চল্লিশ মিনিট আগে আবার কীসের লাইভ। দুরুদুরু বুক নিয়ে লাইভ টা প্লে করলো।


বকুলকে নিতে ভ্রমের বাবা ও ফুপু এসেছে। আজ বিকালেই ওকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে। বকুলের হাতে,পায়ে,মাথায় ব্যান্ডজ করা। নিজেকে সাদা সাদা লাগছে তার। অনেকদিন পর হসপিটালের গন্ধ তাকে ছুঁতে পারলো। মহিলা নার্সরা এসে ওকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিল। ভ্রম কোলে করে ওকে নিয়ে যাবে এমন এক্সপেক্ট করেছিল এখানকার স্টাফরা। মূলত এটারই ভিডিও করার জন্য অনেকে গোপনে ফোন সেট করে রেখেছিলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

বাড়িতে এসেই বকুলকে ভ্রমের ঘরে দিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ঘন্টা পা’চেক হলো তার বাড়িতে আসার। হঠাৎই ভ্রম রুমে প্রবেশ করে। ফোন ঘাটছিল সে। ঘরে কারো উপসস্থিতি পেতেই চোখ তুলে তাকায় বকুল। লোকটার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক, শার্টে লাল পদার্থ লেপ্টে শুকিয়ে গিয়েছে। ভাবুক হলো সে। লোকটা মারপিট করেছে নাকি?

ভ্রম একপলক ওর দিকে তাকিয়ে ওর সামনেই শার্ট খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলো। বকুল দৃষ্টি ফোনে নিবদ্ধ করে আবারো। লোকটার কি কিছু হয়েছে? ফোনে চোখ রেখে আড়চোখে ভ্রমের পানে তাকালো। লোকটা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

ফেসবুকে রিমির সাথে সে কথা বলছে। অনেকদিন পর তার সাথে কথা হচ্ছে। তাই ভ্রমের বিষয় ভাবলো না। লোকটা এমনিতেও তাকে সকালে কম হেনস্থা করেনি। যা হয় হোক তাতে ওর কি!

-“এই শোন!”

-“হ্যাঁ বল।”

-“আমি কিন্তু এমএমসি তেই চান্স পেয়েছি।”

-“আরে, বলিস কি রে! সত্যিই?”

-“হ্যাঁ রে! তোকে ছবিতে দেখেই তো চিনতে সুবিধা হলো আমার। সেজন্যই তো তোকে খোঁচাতে আসলাম।”

-“যা বলেছিস! যাক, ভালোই হলো বল দু’প্রান্তের মানুষ একই মেডিকেলে, তাও বেস্টফ্রেন্ড!”

-“হ্যাঁ রে। আমারও বেশ ভালো লাগছে।”

-“হুম।”

-“আচ্ছা আজ রাখি তাহলে। একটু ঘুড়তে বেড়োবো।”

-“আচ্ছা।”

কথা শেষ বকুল আর রিমির। ততক্ষণে লোকটা বেরিয়ে এসেছে। অবাক হলো বকুল। সময়টা পরখ করলো। ২০ মিনিটে এনার গোসল শেষ? আয়না না বললো, এনার চল্লিশ মিনিট বরাদ্দ থাকে গোসলের। কি এমন তাড়া! অবাক হলো ভীষণ। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে খানিকটা গলা খ্যাকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

-“আব,বলছিলাম যে আর ইউ ওকে?”

ভ্রম কেবল এক পলক তাকালো। তার গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। চুলগুলো কোনোমতে শ্যাম্পু করেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে পানিগুলো মুছতে লাগলো। বকুল বুঝলো কিছু একটা হয়েছে ভ্রমের। নাহলে এমনটা করার ছেলে তো ভ্রম নয়!

বকুল ফের শোধালো,

-“বললেন না?”

সে শত চেষ্টা করেও ভ্রমের মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না। ভ্রম মানুক আর না মানুক সে ভ্রমের স্ত্রী । ভ্রমের সমস্যা তার’ও সমস্যা। ভ্রম হুট করে বিয়ে করেছে কিন্তু দিন কয়েক পেরুলে তো অবশ্যই বুঝবে সে ভুল পাত্রী কে বিয়ে করেনি।

তাই নিজ থেকেই উঠে দাড়ালো। পায়ে বেন্ডেজ থাকলেও হাটতে অসুবিধা নেই, কিন্তু তবুও ডাক্তার হাটতে মানা করে দিয়েছেন। স্বামীর সমস্যা সমাধানের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় নিজ উদ্যমে উঠে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল। ভ্রমের পেছন বরাবর দাড়ালো। আয়নার তাদের একসাথে সেখাচ্ছে।

অসুস্থ নারী আর ভাবনাহীন নর একই আয়নায় বন্দি হলো। পেছন ঘুরে তাকালো ভ্রম। খানিকটা গম্ভীর কন্ঠস্বরে জিজ্ঞাসা করলো,

-“উঠে কেন এসেছো?”

এমনটা আশা করেনি সে। ঠোঁট কামড়ে ভেবে নিলো কি উত্তর দেবে। অতঃপর ধীর কন্ঠে তাকে শোধায়,

-“শার্টে লাল দাগ…”

বকুলের কথা শুনে ভ্রম কাঠকাঠ গলায় উত্তর দিল,

-“রক্ত!”

দু’কদম সরে যায় সে। অবাক করা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

-“রক্ত? কীসের রক্ত, কার রক্ত?”

ভ্রম উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে উত্তর দিল,

-“বকুল আহমেদ কে বিয়ে করেছি রক্তের সাথে পরিচয় হতে হবেনা?”

#চলবে?