রেড হার্ট পর্ব-১০

0
3

#রেড_হার্ট❤️
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
#পর্ব_দশ

রক্তের কথা শুনে ভড়কে গেলো বকুল। মনের কোনে জেকে বসলো হাজারো প্রশ্ন। ফের কথা না বলে দু পা পিছিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। চাওনি নিক্ষেপ করলো ভ্রমের দিকে। বুলি আওড়িয়ে শুধালো,

– আমাকে…

– তোমার কোথাকার কোন এক্স কে জানে! রাস্তায় আমাকে পেয়ে ঝামেলা করেছে।

কথা শুনে চুপ মেরে রইলো সে। ভাবলো, তার এক্স? এইটা আবার কে? সে তো কখনো প্রেমের প টাও করতে যায়নি। পরক্ষনেই ভাবলো, নির্ঘাত লাইভে ওসব করে তার কাছে ভালো সাজতে চাইছে!

ঢোক গিলে দৃষ্টি স্বাভাবিক করলো। কন্ঠস্বরে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে শোধালো,

– আমি তো প্রেম করিনি কখনো। তাহলে কার কথা বলছেন?

উত্তর পাওয়া গেলো না ওপাশ থেকে। খানিকটা নড়েচড়ে জানালার দিকে তাকালো, খানিকটা সংকোচ নিয়ে উত্তরের আশায় প্রশ্ন করলো,

– শার্টে রক্ত কিসের?

প্রশ্ন করার মিনিট কয়েক পেরোনোর পড়েও উত্তর আসলো না। বিরবির করে বজ্জাত লোকটাকে একটু গালাগাল দিলো। অসভ্য লোকটা বোধহয় মুখে তালা মেরে বসেছে, নাহলে এতো প্রশ্নের উত্তর কেন নেই।

পাত্তা দিলো না সে। কর্পূরের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো ব্যাপার খানা। যেখানে প্রেন-টেম সে করেনি সেখানে মিথ্যে অপবাদ গায়ে মাখানোর কোনো প্রশ্ন‘ই আসেনা।

– কেউ জেলাস হলে কিছু করার নেই কিন্তু আমার!

আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রম তার পানে একপল চাইলো। চোখে চোখ লেগে গেল বকুলের। খানিক সময়ের জন্য স্তম্ভিত হলো সে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রয়েছে মুখের আদলে। মস্তিষ্কে প্রশ্ন যুক্ত হলো— গোসলের পর কি সকল নর-নারী কেই দেখত স্নিগ্ধ লাগে? নাকি তার চাওনি স্নিগ্ধ!

আচ্ছা চাওনি‘ও স্নিগ্ধ হয়?
প্রশ্নটা মনের কোনে এক লাগোয়া পাখির বাসার মতো থেকে গেল। কন্ঠ উগলে শোধোতে পারলো না। দ্বিধা কাজ করলো। ভ্রম উত্তর দিলো নির্লিপ্ত কণ্ঠে,

– আমি কেন জেলাস হবো? হুয়াই?

– তোমার জন্য?

ভ্রু কুচকে প্রশ্নটা বকুলকে জিজ্ঞাসা করলো। তার সেদিক পানে খেয়াল নেই। চোখ গিয়ে আটকেছে এই পুরুষের উদোম বুকটায়। পানিগুলো এখনো চিকচিক করছে। যেনো হাজারো ফটিকের মেলা। আচ্ছা এই মানুষ টা নিজেও তো একটা ফটিক। তাই নয় কি?

চমকায় সে নিজের ভাবনায়। অতি দ্রুত দৃষ্টি অন্য কোথাও দিলো। এইটা কি ভাবছে সে। এনাকে নিয়ে ভাববার ব্যামো হয়েছে নাকি তার হ্যাঁ? হয়তো! এই ঘরে আজই একটা বই পেয়েছিল সে। আসরিফা সুলতানা জেবা আপুর বই প্রিয় চৈত্রমাস। বইয়ের বুকমার্কে লেখাটা এমন—

“মোহর পড়িয়ে দিলাম, এখন আপনি আমার!”

এরপর থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে একটা কথাই যে, মোহর পড়িয়ে দিলেই কি কারো হওয়া যায়? তাহলে সে কেন এই মানুষটার না। হয়েও না, কোথাও যেনো এক অদৃশ্য দেয়াল রয়েছে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে।

কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করলো, সে কি আর পাঁচ টা মেয়ের মতোই ভালোবাসায় মজেছে?
পরক্ষণেই ভাবলো, মজলে মজেছি তাতে দোষ তো নেই। স্বামী একান্তই আমার। আমায় বউ হিসেবে মানে না, তবে মানবে না এমনও না। মেনে নিতে পারলেই স্বস্তি।

– এই মেয়ে! তোমার কি বোবা হওয়ার রোগ আছে।

ধমকে দিলেন। মৃদ্যু কেঁপে উঠলো বকুল, দৃষ্টি তাক করলো সেদিকে। প্রশ্ন ছুড়লো,

– বোবা হতে যাবো কেনো?

– তাহলে কি ওত ভাবছিলে?

– আপনাকে কেন বলবো?

– এই থামো তো! তোমার সাথে ঝগড়ার মুড আমার নেই।

– হ্যাঁ! আমার তো বয়েই গিয়েছে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে।

– তুমি যেই মেয়েরে বাবা! পায়ে পা কেন ভুড়ি তে ভুড়ি লাগিয়েও ঝগড়া করতে পারো।

– কিহ!

– চিরন্তন সত্য কথা।

– ফালতু লোক।

– তাহলে ডিভোর্স দাও।

– দেবো নাহ!

– দেখে নেব তোমাকে মেয়ে।

– মেয়ে বলতে নিষেধ করিনি? বউ ডাকবেন বউ! আর আমাকে দেখবেন? বাহ! তাহলে দেখুন না। এই দেখুন। আমি তো আপনার সামনেই বসে আছি।

খানিকটা চ্যালেঞ্জ করল। ইচ্ছে করেই বলেছে সে এই কথাগুলো। কারন আগে যা হয়েছে তা হয়েছে কিন্তু সবটা স্বাভাবিক করা দরকার। তাই…
ভাবনার ছেদন ঘটলো নিজের খুব কাছে কারো ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দে। পিলে চমকে উঠলো, কিছুটা পেছনে ঝোকলো সে। তার একবার বলাতেই এইভাবে আসতে হবে নাকি? অসভ্য লোক।

নিজের অস্বস্তি বুঝতে না দিয়ে প্রশ্ন করলো,

– কাছে এসেছেন কেন?

– তুমিই তো বললে।

– আমি বললেই আসতে হবে?

– বউ বলেছে বলে কথা! করতেই হবে।

– আপনি না বউ মানেন না আমায়?

– এখন মানছি।

বলে আরেকটু কাছে এলেন। এবার ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে বিছানায় ধপ করে পড়ে গেলো। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো কিছু টের পেল না। যখনই চোখ খুলল তখনই গগন কাঁপানো হাসির শব্দ কানে আসলো। হাসি টা নিঃসন্দেহে নজরকাড়া কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হাসি ব্যাপারটা হজম হলো না। তেঁতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

– বুড়োর মতো হাসছেন কেন?

প্রশ্নের প্রতিত্তুরে কেবল হাসির শব্দ পেল। রাগটা তরতর করে বাড়তে লাগলো। ফের গলা আরেকটু উঁচু করে শোধালো,

– আরে হাসছেন কেন সেটা তো বলবেন!

এবার তিনি মুখ খুললেন। সবচেয়ে অসত্য কথাটা তিনি বকুলকে বলে দিলেন।

– হাসছি আমাকে নিয়ে তোমার এক্সপেক্টেশনের লেভেল দেখে। মানে তুমি আমায় নিয়ে এতদূর ভেবে নিয়েছো? এই তুমি না কত ব্রিলিয়ান্ট একটা মেয়ে তাহলে আমাকে নিয়ে কেন স্বপ্নের পাহাড় সাজাচ্ছো? বাট ট্রাস্ট মি মেয়ে! স্বপ্নের পাহাড় যত উঁচুই করো না কেন সেটা এক চুটকিতেই ভেঙে ফেলবো। মাইন্ড ইট!
আর হ্যাঁ! তুমি ডিভোর্স দাও বা না দাও আমি ঠিক ছ’মাস পর তোমাকে দিয়ে দেবো। ততদিন আমার প্রতি কোনো ফিলিংস আশা করি আনবে না। আনলেও তোমায় পস্তাতে হবে।

বকুলের ধরনী কেঁপে উঠলো। এতোক্ষণের পরিষ্কার আকাশটা ঘন কালো মেঘে ছেঁয়ে গেলো। মেঘগুলো যে তার দুঃখ। একটু ভারী হলেই আপন গতিতে ধরনী কে স্পর্শ করবে। চোখ ছলছল করছে, অন্যদিকে তাকাল। উত্তর দিলো,

– ঠিক আছে। আমিও আর কোনো এক্সপেক্টেশান রাখবো না।

ওপাশ থেকে একটা কথাই শুনতে পেলো,

– এইতো গুড গার্ল। বুঝতে পেরেছো।

চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো বকুলের। আত্মসম্মান জিনিসটা বুকে,মনে উভয় প্রান্তেই চাড়া দিয়ে উঠলো। জানান দিলো সংসারে মত্ত না হয়ে আত্মসম্মান নিয়ে ক্যারিয়ারে ফোকাস দে।

~~
দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসলো মেডিকেলের প্রথম দিন। ভর্তির সকল কার্যাদি শেষ করে আজ এমএমসি তে যাবে বকুল। আজই তাদের নবীন বরণ উৎসব। ভ্রম সকাল ছ’টার দিকেই কলেজে ছুটে গিয়েছে। সিনিয়র তারা, অধিকাংশ কাজ তো তাদের ঘিরেই। ঘড়িতে বাজে ৯:১০। অনুষ্ঠান শুরু এগারো টার দিকে। কলেজে রিমিও আসবে, তার সাথে জমিয়ে আড্ডাও দিতে হবে। তাই একটু এগিয়ে যাওয়া হবে তার। কি পড়বে না পড়বে ভেবে পাচ্ছিলো না। তখনই ঘরে প্রবেশ করলো ভ্রমের মা।

– কিরে মা বকুল! তোর না আজ নবীন বরণ উৎসব? কি পড়ে যাবি?

বলতে বলতেই এগিয়ে আসেন তিনি। মাঝের এই ক’দিনে বাড়ির সকলের সাথেই তার সম্পর্ক ভালো হয়েছে। একদম পরিবারের একজন সদস্য। কিন্তু মান অভিমান চলে ভ্রমের সাথে। এই দিকে ওদের সাথে সম্পর্ক ভালো হলেও ওদিকে সম্পর্কে চলে টানা পোড়ন। যার সূত্র ধরেই এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক তার সাথেই নেই কোনো বোঝা-পড়া। তবুও দিন চালিয়ে নিচ্ছে।

ভালোবাসার জন্ম যেটুকু হয়েছিল তা চেপে রেখেছে নিজের মাঝে। বাড়তে দেয়নি। প্রেমে পড়া বারণ বলে নিজের মনকে বাধিয়ে রেখেছে। সবটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে। যা হবার হবে। অনশ্চিত ভবিষ্যতে তার কোনো ভয় নেই। আল্লাহ তার সাথেই আছে।

– কিরে বকুল মা!

আনমনে উত্তর দিলো,

– হ্যাঁ বলো।

– কিছু ভাবছিস?

বলে পাশে এসে বসলো বকুলের। বকুল মুখে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,

– হ্যাঁ মা। এই যে দেখো কতকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি। কিন্তু কোনটা পড়বো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।

বকুলের কথা শুনে দৃষ্টি বিছানায় ফেললেন ভ্রমের মা। শব্দ করে হাসলেন।

– এই ব্যাপার! আমাকে আগেই বলতি তাহলে তোর আর সমস্যা হতো না।

– তাহলে এখন সলভ করে দাও!

‘হুম’ বলে কিছু থ্রিপিস উলটে পালটে দেখলেন। বোধহয় ওনার মনে ধরেনি। তারপর আচমকা হাত লাগালেন অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়িতে। সবুজ আর লেভেন্ডার কম্বিনেশনের কাঞ্জিভরমে। দারুন সব কারুকাজ রয়েছে সেটায়। ভ্রমের মা রিনা শাড়িটা হাতে তুলে নিলেন। মহা আনন্দে ছেলে বউয়ের গায়ে ধরলেন।
উৎফুল্ল স্বরে বলে উঠে,

– মাশা’আল্লাহ! আমার মেয়ে এই শাড়ি’ই পড়বে।

#চলবে?