#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_পনেরো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
রুমে কেবল মোমবাতির আলো জ্বলছে। অন্ধকার পেরিয়ে এগিয়ে এসে আবছা আলোর ছটাকে দাঁড়িয়ে গেল। ভ্রম কে এদিক ওদিক তাকাতে দেখলো। তা দেখে মুচকি হেসে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। সোজা এসে উপুর হয়ে ভ্রমের পাশে শুয়ে গেল। গালে হাত ঠেকিয়ে ভ্রমের দিকে তাকিয়ে তাকে বললো,
” কি বেবস? কেমন দিলাম? ভেবেছিলে কি মা-বাবার অপমানের কথা ভুলে গিয়েছি? নো মাই ডিয়ার। ভালোবাসা নিজ থেকেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তা নাওনি আর আজ? জোর করে তোমায় দেবো। আজ তো তোমার ভালোবাসা কি যেনো…? হ্যাঁ! বকুল, ও তো নেই। হন্যে হয়ে খুঁজতে ব্যস্ত। শুনশান রাস্তায় একা একা খুঁজে বেড়াচ্ছে এতোক্ষণে বোধহয় সে কারোর শিকার হয়ে গিয়েছে। ”
কথা শেষ করেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাতটা বাড়িয়ে ভ্রমের গাল স্পর্শ করলো। বড় একটা শ্বাস নিয়ে শোধালো,
” লুক এট মি ভ্রম ডার্ল—ং। তোমার ফেবারিট কালার গ্রিন না? এই দেখো আজ আমি স্লিভলেস গ্রিন গাউন পড়েছি, মাথায় এটেছি ব্ল্যাক রোজ। বলো, ভাল্লাগছে আমাকে? ”
ভ্রম কিছু বুঝতে চেয়েও পারলো না। সামনের ব্যক্তির কণ্ঠের সাথে চেহারা টাও তার কাছে স্পষ্ট পৌঁছুলো না। কণ্ঠ আর চেহারা কেমন যেন রোবটিক লাগছে। নাকে ভেসে আসলো কড়া পারফিউমের সুবাস, যা তে ভ্রম মাতাল হতে বাধ্য! তবুও এটুকু জ্ঞানে আসলো এই যে, যেটা হতে যাচ্ছে ঠিক হচ্ছে না। তাই মাথা এদিক ওদিক ঘুরালেও মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলো।
মেয়েটা আরেকটু লেপ্টে গেলো ভ্রমের সাথে।
~~
স্বামীকে রাস্তার চারিপাশে হন্যি হয়ে খুঁজতে ব্যস্ত বকুল। ঘন্টা খানেকের মতো হতে লাগলো তবুও স্বামীর কোনো পাত্তা নেই। বাজে কিছু হয়ে গেল না তো? অজানা এক ভয় কাজ করলো ওর মাঝে। চলন্ত পা দুটো থামিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো। সময় দেখবে বলে। ফোনের স্ক্রিন অন করতেই দৃশ্যমান হয় কয়েকশ মিসড কল। দুটো নাম্বার থেকে। খালেকুজ্জামান ওরফে শশুড় মশাই আরেকটা রিমির থেকে৷
কলেজে আসলে মূলত ওর ফোন সাইলেন্ট থাকে, শুরু থেকে এ অব্ধি ফোনের কথা মনেই আসেনি, তাই এই অবস্থা…..
তড়িঘড়ি করে কল লাগালো খালেকুজ্জামানের নিকট। বার কয়েক রিং হতেই মেয়েলি আওয়াজ কর্ণধার হলো। সে বুঝলো গলাটা তার ফুফুর। ফুপু ওপাশ থেকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই মুখে জমে থাকা কথাগুলো গলগল করে বলে দিলো।
” ফুপু। ভ্রম কে আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কিছুতেই পাচ্ছি না। আমার হাত পা কাঁপছে, কোথায় যাবেন ওনি। ফুফু! ওর কোনো ক্ষতি হলো না তো?
বকুলের ফুঁপানো আওয়াজ শুনে ওনার কলিজা টা ধক করে উঠলো। তাকে শামাল দিতেই প্রশ্ন ছুড়ে,
” আগে শান্ত হো মা। ধীরে সুস্থে বল। কিভাবে কি হয়েছে। ”
” আ,আমি আর ওন,ওনি একসাথেই আস্ল,আসছিলাম কলেজ থেক,থেকে। তা,তারপ,র একজন লোক তাকে ডেকে আড়ালে নিয়ে গি,গিয়েছিলেন, তারপর থেকে পাশে আর খুঁজে ওনাকে পাইনি। তুমি আসো, আমি কলেজের পূর্ব দিকেই…! ”
” হ্যাঁ মা, শান্ত হো। ভাইয়্যা আর আমি এই বেরুচ্ছি। একটু ক্লাম থাক। ”
কল কেটে দিলো বকুল। কিছুই ভালো ঠেকলো না তার। পথের ধারের ল্যাম্পপোস্ট টায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো। পড়নে তার ভ্রম’র এপ্রোন টা। কি সুন্দর একটা স্মেল আসছে। অথচ এই লোকটা তার পাশে নেই। শব্দ করে কেঁদে উঠলো। সাথে সাথে এক পশলা বৃষ্টি ধরণীর বুকে ধরা দিলো। বিজলি দিয়ে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হতে লাগলো। গা স্পর্শ করলো তার। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই। মনটা বারবার বলছে বাজে কিছু অবশ্যই হয়েছে। না হলে ওনি যাবেন কোথায়? ওতোটা কেয়ারলেস তো ওনি না।
তারপর হঠাৎই কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করলো। ভ্রম ছুঁয়েছে ভেবে চকিতে তাকাতেই ভাবনা পালটে গেল।
~~
” ভ্রম কে খুঁজে না পেয়ে মেয়েটা রাস্তায় একা কান্না করছে। জলদি চলো ভাইয়্যা। ওর কিছু হয়ে গেলে নিজেদের কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। তার উপর বৃষ্টি নেমেছে। ভালো মন্দ হতেই তো পারে। ভাবি! আমরা বেরোলাম। ”
” সাবধানে যাও, আর যে উদ্দেশ্য যাচ্ছো সেটা সফল হয়ে এসো। ”
” আমিন। ”
বলেই ভ্রমের বাবা আর ফুফু তাদের গাড়ি দিয়েই প্রস্থান ঘটায় তালুকদার বাড়ি।
~~
শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে বকুলের। সকাল থেকে জ্বরের ঘোরে কিসব বলছে বিরবির করে। এতে আয়না কিছুটা অস্থির। হাসি খুশি চঞ্চলা মেয়েটা কে চুপটি মেরে শুয়ে থাকা সেও কিছুটা মেনে নিচ্ছে না। এগিয়ে গিয়ে হাতের বালতি আর গরম পানির ফ্লাস্ক টা নিয়ে গেলো। ভালোবেসে বলল,
” আফা। গলা ডা কুলকুলাইয়া লও। আমরার ভ্রম ভাইজান ঠিক আইসা পড়বো। তাড়াতাড়ি করে খান। ”
আয়নার কথার সমাপ্তি ঘটতেই বেল পড়লো সদর দরজায়। এই অসময়ে আর কে আসবে? এই ভেবে বকুলকে কিছু না বলেই দৌড় লাগালো। সবার আগে দরজা খুলে মুখদর্শন তাকেই করতে হবে।
অতঃপর দরজা খুলতেই চমকে যায় আয়না। খুশি তে চিল্লিয়ে উঠে। বড় গলায় সুরে তুলে শোধায়,
” আমাদের বাড়িতে সাহেব আসছে খালু খালা। সক্কলে আইসা দেইখা যান! ”
আয়নার বলা কথায় বিরক্ত প্রকাশ করলো ভ্রম। মাথা চুলকে ‘এই সরোতো’ বলে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো। এদিকে আয়নার ডাকে প্রায় সকলেই এসে হাজির। ভ্রম পাত্তা দিল না। এই মুহূর্তে মাথাটা তার চরম বিগড়ে আছে। কারন টা সে বুঝতে পারছে না। মাথায় যন্ত্রনা তীব্র হতে তীব্র হলো। দুহাতে মাথা চেপেই আদেশ করলো কড়া করে চা দাও! খাবো। ”
আয়না খালেকুজ্জামানের ইশারা পেয়েই ছুট লাগায় চা আনার জন্য। ফুফু এগিয়ে এসে ভাইপোর পাশে বসলেন। তার হাতদুটো আগলে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
” গতকাল কোথায় ছিলি বাবা? ”
ফুফুর প্রশ্নে চোখ তুলে তাকালো ভ্রম। মাথায় প্রেশার দিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো, তারপর উত্তরে বললো,
” আমি তো দিগন্তের বাড়িতে ছিলাম। ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছিল, আজই চলে এসেছি বাড়িতে। ”
খালেকুজ্জামান কথা শুবে এক সাইড হয়ে সরে গেলেন। কল লাগালেন কলেজে আর নিজের গুপ্তচর দের। সত্যতা কতটুকু তা যাচাই তিনি’ই করবেন।
~~
বারান্দার রকিং চেয়ারে আরাম করে হেলান দিয়ে বসে আছে আমরিন। মুখে স্ট্রবেরি গুঁজে দিয়ে ফোনটায় ডায়াল করলো মায়ের নাম্বার। রিং হতেই কল রিসিভ করলো। সাথে সাথে আমরিনের উৎফুল্লতা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। খুশি খুশি হয়ে মাকে শোধালো কিছুটা…
” মাম্মা! হেভ আ গুড নিউজ। ”
” কি গুড নিউজ মাম্মা? ”
” আই থিংক তোমরা দিদুন হতে যাবে কিছুদিন পরেই। আমার কাজ শেষ। ”
” রিয়েইলি?
” ওর অস্বিত্বে ভার কেবল আমিই বইবো অন্য কাউকে অংশীদার করার প্রয়োজন নেই। তাই আমার কাজ সেরে ইঞ্জেকশন পুশ করে দিয়েছি যা ওর ইহকালে আর কোনো বংশধর সৃষ্টি করতে পারবে না। আমি দ্যা অনলি অয়ান রয়েছি। ক’দিন পরই আমি ইন আর ও আউট! ”
চলবে ইন’শা’আল্লাহ
#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_ষোলো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
মেয়ের মুখের রহস্যলাগোয়া কথা শুনে শোয়া থেকে বসে যান আমরিনের বাবা। মেয়েটা কে লাই দিতে দিতে কি এ পর্যায়ে নিয়ে আসবেন তিনি? তিনি কণ্ঠ খানিকটা গম্ভীর রেখে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন,
” কি করেছো তুমি? এ বয়সে তুমি বাচ্চা… আমরিন! তোমার বয়স হয়নি আর তুমি কিনা…। ”
বাবার এমন চিন্তিত প্রশ্নে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। ফোনের অপরপাশে থাকা বাবা ভ্রু উঁচিয়ে নিলেন। বুড়ো আঙুলে কপাল ঘষে কিছু আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন। তারপর মেয়েকে প্রশ্ন করলেন,
” তুমি কি প্ল্যান এটেছো, আমায় বলো। আর গতকাল রাতে তুমি ভ্রম কে দিগন্তের বাসায় দিয়ে এসেছিলে কেন? আমাদের প্ল্যান তো অন্যকিছু ছিল। লাস্ট মোমেন্টে চেইঞ্জ করলে কেন? ”
বাবার এতোগুলো প্রশ্নে আমরিন হেয়ালি হেসে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে। নিজের হাতেই নিজের হাত স্লাইড করে সামনের দিকে তাকায়। ওর বরাবর আয়না। স্লিভলেস ড্রেসে নিজেকে দেখতে মত্ত সে। এই মুহূর্তে নিজের কাছেই তার অনেক ভালো লাগলো। সে তো মনে করে মিস ওয়ার্ল্ড তো তাকেই করা উচিত। কত নিঁখুত তার গঠন, যার নজর যাবে সে চোখের পলক ফেলতে বেমালুম ভুলে বসবে। কিন্তু এই ভ্রম টা যে কেন তাকে ইগনোর করে, কে জানে!
” হ্যালো, হ্যা লো! হ্যালো? ”
বাবার গলায় আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের স্ক্রিনে একপল তাকিয়ে নিল সে। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বাবাকে শোধালো,
” আরে! ড্যাড। একটা মাস্টারপ্ল্যান মাথায় এসেছিল। তুমি আমি যেরম টা ভেবেছিলাম সেরম টা হবে না। হলে আমার জন্য খুব কঠিন হবে জেতাটা। আমার রাগ তো ওই মেয়ে বকুলের সাথে। মেয়েটা একটু বেশিই করে। সে যাই-হোক। তুমি নানা-নানু হচ্ছো তবে ফেইক! ”
” কি? ফেইক? ”
” হুম। ”
” তাহলে….”
” রিলাক্স বাবা। মে হু না? ”
” আমার প্রেশার বাড়িয়ে দিচ্ছিস তুই আমরিন। ”
” উফফো বাবা। বলছি। দরজা আটকে দিয়ে আসি। ”
” হ্যাঁ যাও। ”
বাবার অনুমতি পেয়েই স্লিপার দুটো পড়ে এগিয়ে যায় ডোর লক করতে। ফিরে এসে বলতে শুরু করে,
” বাবা। আমাকে ইউজেজ প্রোডাক্ট ফের ইউজ করতে দেখেছো? ”
” না। ”
” তবে ভাবলে কি করে ওই ভ্রম কে আমি ফিরতি নেব? ”
মেয়ের কথায় কিছুই বুঝলেন না বাবা। আমরিন আবারো বলে,
” আমি শুধু প্রতিশোধ নিতে এই গেইম টা স্টার্ট করেছি। ”
” তুই না ওকে ভালোবাসিস? ”
” ভালোবাসা? মাই ফুট! ওকে কোনো ভালো টালো বাসি না আমি। ”
” তাহলে… ”
” পাপা! ”
” জি বলো। ”
” প্ল্যান শুনবে নাকি ভ্রম গাধা কে নিয়ে ভাববে? ”
” তুমি যেটা করতে বলবে মামনি। ”
” তাহলে শুনো। ”
” জি। ”
” ভ্রম আর আমার মধ্যে কোনো ফিজিক্যাল রিলেশন কিচ্ছু হয়নি। ওকে কড়া ডোজের একটা ড্রাগ দিয়েছিলাম, যে ড্রাগে ও সব উপলব্ধি করতে পারবে ইভেন সবটুকু স্পষ্ট মনে রাখবে কিন্তু স্মৃতিতে হালকা হয়ে দৃশ্য হলেও কেউ যখন তা মনে করিয়ে দেবে সে তখন মনে করতে সক্ষম হবে। তাই ওর সাথে একটু ক্লোজ হওয়ার অভিনয়ে কাছে বসে এটা ওটা বলেছি। প্ল্যান A কমপ্লিট, তারপর ওর কয়েকটা চুল উপরে নিয়ে নিই যা বর্তমানে শিখা মেডিকেলে আছে আর সেই কাঙ্খিত ইনজেকশন টাও পুশ করা ডান। যেটা ওর প্রজনন ক্ষমতা শূণ্যের কোঠায় নিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। অর্থাৎ প্ল্যান B কম্পলিট। প্ল্যান C ছিল ক্লোজ হওয়া বাট ওটাই চেইঞ্জ করে দিয়েছি। দিগন্ত কে কল করেছি ও এসে ভ্রমকে নিয়ে গিয়েছে। দ্যান ও জানবে, দিগন্ত ওকে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থান মধ্যরাতে পেয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। বাস টাস্ক পুরোটা কমপ্লিট! ”
” কিন্তু এতে তো কিছুই হলো না! ”
নিরস মুখে কথাটা বলে উঠলো আমরিনের বাবা। আমরিন মুখে স্মিত হাসি রেখেই বাবাকে বললো,
” অনেক কিছুই হয়েছে বাবা! ”
” যেমন? ”
” যেমন টেমন বলতে পারবো না। ডিরেক্ট একশন দেখতে পাবে। ”
” কোথায়? ”
” তালুকদার বাড়িতে। আমরিন কে অপমান তাইনা? গোটা পরিবার ধ্বংস করে দেবো। শুরু টা ওই ছিচকে চোর দিয়ে করিয়েছি। মাত্র কটা মাস অপেক্ষা করো! অশান্তি কাকে বলে আর কত প্রকার দেখতে পাবে। ”
মেয়ের কথায় বাবা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন। ভয়ানক এক খেলায় মেতে উঠেছে মেয়ে। থামিয়ে দেবার সামর্থ্য তার নেই।
” বাবা শুনো! ”
” হ্যাঁ বলো। ”
” তালুকদার বাড়িতে একই সময়ে দুজন গর্ভবতী হবে। একজন আমি তো অন্যজন নিঃসন্দেহে বকুল। তার টা থাকবে রিয়েল আর আমার টা ফেইক! ও বাড়িতে বসে বসে কেবল আনন্দ শুষে নেব। ”
” বুঝেছি। ”
” ঠিক আছে, রাখছি। বা,বাই! ”
” বাই! ”
কলটা কাটতেই সাথে সাথে একটা মেসেজ আসে ভদ্রলোকের ফোনে। নামটা আমরিন শো করছে। মেয়ে তাকে মেসেজ দিয়েছে। মেসেজ টা ওপেন করলেন তিনি। তখনই লম্বা একটা মেসেজ শুধু করে।
মেসেজ টা এরুপ—
বাবা, তোমার জন্য হিন্ট– একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে ‘সারোগেসি’ বলে। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ হতে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।[১]
আধুনিক সারোগেসি প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্ম দিচ্ছেন একজন সারোগেট
সারোগেসি ব্যবস্থা তখনই একটি দম্পতি করতে পারে যখন কোন স্ত্রী গর্ভধারণে অক্ষম, গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ অথবা যখন একজন অবিবাহিত পুরুষ বা নারী বা সমকামী দম্পতি সন্তান নিতে চান।[২] সারোগেসি শব্দের অর্থ হল গর্ভাশয় ভাড়া।সারোগেসি একটি আধুনিক প্রজনন ব্যবস্থা।
~~
ছেলের অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা খালেকুজ্জামান ই দায়িত্ব নিয়ে ছেলেকে ঘরে নিয়ে এসেছেন। তার সাথে কন্টিনিউয়াসলই ঝগড়া করে যাওয়া ছেলেটা তার চুপ করে আছে। সেটা তার সহ্য হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বাড়িতে একটা হালকা শোক নেমেই এসেছে। বাড়ির দুই প্রাণ ভোমড়া প্রাণ হারানোর পথে। ফুফু বিন্তি রুমে প্রবেশ করলেন। বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে বসে থাকা স্বামী স্ত্রী কে দেখে শত কষ্টেও আনন্দ খুঁজে পেলেন তিনি। যে উদ্দেশ্যে এসেছিলেন সে উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এগিয়ে গেলেন ভাইয়ের নিকট।
” পুলিশ অফিসার থানায় যেতে বলেছে। ভ্রম নামে ডায়েরি যে করেছিলে ওটার কিছু কাজ নাকি ছিল ওনার সাথে। গিয়ে দেখা করে আসো। এখনিই! ”
” ঠিক আছে। যাচ্ছি। ”
বলেই বাবা খালেকুজ্জামান চলে গেলেন। ফুফু বিন্তিও ওদের পানে একপল তাকিয়ে মুচকি হেসে প্রস্থান করলেন। ভ্রম আসা অব্ধি বকুল টু শব্দও করেনি। রাগ, অভিমান দুটোই হয়েছে তার। হওয়া স্বাভাবিক নয় কি?
ভ্রমের কথা বলতে মন সায় দিচ্ছে না। বারংবার চোখে আবছা কিছু আসছে। আবেদনময়ী কোনো নারী, অন্ধকার রুম, কড়া পারফিউমের গন্ধ। আর….! শিট, কিছুতেই মনে হচ্ছে না তার। দুহাতে মাথা চেপে শুয়ে গেল। যেটা বকুলের ভালো লাগলো না। তবুও স্বামীর হাবভাবে বুঝলো নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। আপাতত মান অভিমানের পালা দূরে সরিয়ে লোকটার যত্ন নেওয়া উচিত।
এটা ভেবেই ও নিজ থেকে দূরত্ব কমিয়ে নিল। কাছাকাছি ঘেষে লোকটার চুলে হাত বুলালো। স্পর্শ টা বকুলের তা ভ্রম টের পেল। কিছুটা নড়েচড়ে শুইলো। বকুল এমন ব্যবহারের কারণ খুঁজে পেল না। তবুও বললো,
” বলছিলাম যে এদিকে আসুন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুমিয়ে পড়বেন। আসুন! ”
বকুলের কথায় ভ্রম উঠে বকুলের কোলে মাথাটা রাখলো। বকুল মূলত আধশোয়া অবস্থায় ছিলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আর কোনো শব্দ করলো না। তারপরই ভ্রম আওয়াজ তুললো,
” বকুল। ”
হঠাৎ কথা বলায় অবাক হয়েছে বকুল। তবুও অবাকতা না বাড়িয়ে প্রতিত্তুর করলো,
” বলুন। ”
” আমাকে একা ছেড়ে দিলে কেন? আমার খুব যন্ত্রনা হচ্ছে। চোখের সামনে কি সব!…আমি আর পারছি না বকুল। ”
এই কথাগুলোয় শরীর ও মনের যন্ত্রণা স্পষ্ট। কথাগুলো উপলব্ধি করতেই ওর বুকটা হিরহির করে হিমশীতলের মতো শীতল হয়ে গেল। ও তাকে একা ছাড়লো কই? তবে কি গতকালের ঘটনা প্রি প্ল্যান?
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।