রোদরঞ্জন পর্ব-১০+১১

0
178

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_১০
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.
শ্রাবণের মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। ঝংকার তুলে ভূপৃষ্ঠে নিপতিত হচ্ছে বারিধারা। লোকালয় থেকে দূরে নির্জন জঙ্গলের মাঝে মাথা উঁচু করে থাকা অট্টালিকার দোতলার কোণার রুমটায় মৃদু আলোকছটা।

জেহফিলের কথা শুনতে শুনতে ইনান ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইনানের মাথাটা সাবধানে নিজের বুকে রেখে দিলো সে। মোমবাতি নিভিয়ে দিলো। এখন সম্পূর্ণ রুম অন্ধকার। হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎয়ের ঝলকানিতে মিনি সেকেন্ডের জন্য রুম আলোকিত হয়, তারপর আবার তিমিরে তলিয়ে যায়। গায়ে চাদর টেনে দিলো জেহফিল। ইনানের নরম শরীরের উষ্ণতা জেহফিলকে মাতাল করে দিচ্ছে ক্রমশ। মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সে। চোখে ঘোর লাগা চাহনি। গভীর শ্বাস টেনে ইনানের চুলে মুখ গুঁজল। অবাধ্য হাত চলে গেল ইনানের ধনুকের মতো বাঁকানো চিকন কোমরে। মসৃণ পেটে হাত দিতেই জেহফিল যেন আরো মাতোয়ারা হয়ে গেল। শীতল আবহাওয়াতে প্রিয় মানুষকে এত কাছে রেখেও কীভাবে দূরে থাকা যায়? জেহফিল এলোমেলো হয়ে গেল। তার ভারী নিঃশ্বাসের সাথে ইনানের মৃদু গতির নিঃশ্বাস একত্রে মিলিয়ে গেল।

ইনানকে বেডে শুইয়ে জেহফিল তার অর্ধেক ভার ইনানের উপর আলতো করে ছেড়ে দিলো। নেশা ধরানো চোখে ইনানের দিকে চেয়ে থেকে গালে গলায় চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল…অসংখ্য চুমু। শেষে এমন হলো যে জেহফিলের চুমুর তোড়ে ইনানের গাল গলা ভিজে গেল। তাও থামলো না সে।

গায়ে ভারী পাথরের মতো ওজন এবং গলায় ভেজা অনুভূত হতেই ইনান ঘুমের মধ্যেই এপাশ ওপাশ নড়ল। ইনানকে নড়াচড়া করতে দেখে জেহফিল থমকে গেল। এখন যদি ইনানের ঘুম ভেঙে যায় আর তাকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে খুব সীন ক্রিয়েট করবে সে, ভুল বুঝবে তাকে।

জেহফিল ইনানের উপর থেকে সরে গিয়ে ইনানের মাথায় হাত বুলাতে লাগল যাতে ঘুমিয়ে পড়ে। ইনান আবারও ঘুমে তলিয়ে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ঘুমের ট্যাবলেট খায় সে, যদি একটু ঘুম আসে, তাহলে হয়তো ইনান তার হাত থেকে বেঁচে যাবে। মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে জেহফিল‌। সে ইনানকে কষ্ট দিতে চায়না, কিন্তু ইনান যদি তাকে দূরে ঠেলে দেয়? ভালো না বাসে? তাকে ঘৃণা ভরা চোখে দেখে? চলে যাওয়ার চেষ্টা করে? মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় আরও। কী করবে সে? ইনানকে বেঁধে রাখবে? আটকে রাখবে রুমে? নাকি নিজের হাতের সাথে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে রাখবে? কী করলে ইনান তাকে ছাড়বে না?

জেহফিল শুষ্ক গলায় ঢোক গিলে। ইনানের দিকে একপলক চেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইনান কাছে থাকলে তার পাগলামী আরো বেড়ে যাবে। পাশের রুমে চলে যায়। এই রুমটা তার ব্যক্তিগত পেইন্টিং রুম। সব রুমের থেকে এই রুমটাই তার পছন্দ। কেননা রুমের দেয়ালজুড়ে ইনানের পেইন্টিং।

রুমের এক সাইডে আর্টের সরঞ্জাম। জেহফিল টুলে বসে। পাঁচটা মোম ধরিয়ে ক্যানভাসের পাশে রাখে। এখন নিজেকে ব্যস্ত রাখার এই একটাই উপায়। আর্ট করা। কিন্তু কী আঁকবে? তার মন জুড়ে যে এখন ইনান। ইনানের ছবি আঁকবে? তখন হঠাৎ তার নজর যায় টেবিলের উপর। আধভাঙা একটা মোবাইল সেখানে। জেহফিল মোবাইলটা হাতে নেয়। এটা মূলত ইনানের। ইনানকে তখন মিথ্যা বলেছিল যে মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে। ইনানের মোবাইলের প্রতিটা ফাইল জেহফিলের দুইবার করে দেখা শেষ। ইনান কাকে মেসেজ দিয়েছে, কী পোস্ট করেছে, কোথায় কমেন্ট করেছে, কী অ্যাপ ডাউনলোড করেছে, কেন করেছে সব খতিয়ে দেখেছে সে। প্রত্যেকটা ছেলে ফ্রেন্ডদের ব্লক করে দিয়েছে টুইটার, ইন্সটা আর এফবি থেকে। যেসব মেয়েদের সাথে ইনানের মেসেজ বেশি তাদেরও ব্লক মেরেছে সে।

ইনানের মোবাইলে ছবি ছিল প্রায় সাত হাজার। তার মধ্যে ইনানের একার দুই হাজার। বাকিগুলো সব ডিলিট করে দিয়েছে জেহফিল। যেসব ছবিতে ইনানের সাথে অন্যরা আছে, এমনকি ইনানের বাবার সাথের ছবিগুলো থেকে ইনানকে ক্রপ করে রেখে সবগুলো ডিলিট করে দিয়েছে সে। ইনানের দুই হাজার ছবি জেহফিল প্রিন্ট করে অ্যালবাম বানিয়েছে। তার নাম দিয়েছে ‘mi amor’

ইনানের কথা ভাবতে ভাবতেই ইনানের ছবি আঁকা শুরু করল সে। দীঘির পাড়ে গোলাপী রঙের ছড়ানো গাউন পরে বসে আছে ইনান। পানিতে ভাসছে গোলাপী রঙের ছোটো ছোটো ফুল। ইনান দুহাতে গাউন ধরে অদূরে নিষ্পলক চেয়ে আছে। চোখের তারা আলোতে ঝিলমিল করছে। শরীরের চারপাশে দ্যুতি ঠিকরে পড়ছে। এ যেন স্বপ্ন। স্বপ্নময়ী কন্যা ইনান!

.
.

সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ইনানের ঘুম ভাঙে। সূর্যের দেখা দিলেও আলোর তীব্রতা নেই। হাই তুলে ঘুম থেকে উঠে অচেনা জায়গায় অচেনা বেডে নিজেকে দেখে চমকে যায়। পাঁচ মিনিট পর তার মনে পড়ে সে যে বিবাহিত এবং সে জেহফিলের বাসায় আছে। বাবাকে কল করে কথা বলে নেয়‌। পায়ের ব্যথা তেমন একটা নেই। থেমে থেমে হাঁটা যায়। রুম থেকে বের হয় সে। আজকেও একটা মন মুগ্ধ করা দৃশ্য চোখে পড়ল। অ্যাপ্রোন পরনে জেহফিল খুব মনোযোগ সহকারে প্লেট সাজাচ্ছে। সূর্যের নরম আলোয় জেহফিলের খোঁচা খোঁচা দাড়ি চিকচিক করছিল। সত্যি বলতে কী, গতকাল জেহফিলের নিদারুণ কষ্টের জীবনী শুনে ইনানের মায়া হয়েছিল জেহফিলের প্রতি। নিজেকে জেহফিলের জায়গায় রেখে ভেবেছে, সে কি জেহফিলের মতো করে বাঁচতে পারত? কখনোই না। কারো সাথে কথা না বলে, একা থেকে ইনান দম বন্ধ হয়ে মা’রা-ই যেত।

‘গুড মর্নিং প্রিন্সেস!’

জেহফিল প্রফুল্ল হাসল ইনানকে দেখে। ইনান লক্ষ্য করল, জেহফিল যখন হাসে ঠোঁটের কোণা হালকা উঁচু করে, আর ঠিক সেই স্পটে সূক্ষ্ম টোলের সৃষ্টি হয়। জেহফিলের হাসিতে তার ধূসর চোখজোড়াও হাসে। দেখতে প্রাণবন্ত লাগে।

জেহফিল ইনানের কাছে এগিয়ে আসে। হাত বাড়িয়ে ধরে ইনানকে। ইনানের আহত পা নিজের পায়ের উপর রেখে ইনানকে হাঁটতে সাহায্য করে। চেয়ারে বসিয়ে খাবার সার্ভ করে। ডিশগুলো এমনভাবে সাজানো যেন ইনান ফ্যান্সি রেস্টুরেন্টে এসেছে। ইনান বিমোহিত। জেহফিল ইনানের পাশে দাঁড়িয়ে একটা একটা করে তার প্লেটে তুলে দিচ্ছে। ইনান বিমোহিত। সে যেন সত্যি কোনো প্রিন্সেস এমনভাবে ট্রিট করছে জেহফিল।

‘আপনিও বসুন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

জেহফিল যেন ইনানের আদেশের অপক্ষাতেই ছিল। চেয়ার টেনে ইনানের পাশে এসে বসল। নিজের প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,

‘জীবনে প্রথম এক টেবিলে পাশাপাশি বসে কারো সাথে ব্রেকফাস্ট করছি‌। তাও মানুষটা আমার ভালোবাসার মানুষ। ফিলিং সো এক্সাইটেড।’

‘আপনার কথাগুলো সত্যি অবিশ্বাস্য। আমার তো এখনো মনে হচ্ছে বইয়ের কোনো ট্রাজেডি গল্প পড়েছি।’

জেহফিল ইনানের প্লেটে আরেকটা প্যানকেক দিল, বলল, ‘পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি ভিন্নধারার গল্প। চোখের আড়ালে থাকা বাস্তবতা বেশি ভয়ঙ্কর। যারা নরমাল লাইফ লিড করে তাদের কাছে অন্যের ট্রাজেডিময় জীবনটা স্বাভাবিই ভাবেই অস্বাভাবিক ঠেকে।’

.

খাবার পর্ব শেষে জেহফিল ইনানকে রেডি হতে বলে,

‘কোথায় যাবো?’

‘শপিংএ।’

‘ভার্সিটি যাবো না?’

‘না।’

‘আপনি‌ আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে চাইছেন?’

জেহফিল ইনানের গালে হাত রাখে, ‘এত বেশি বুঝো কেন? মেয়ে মানুষ ক বললেই কলকাতা বুঝে ফেলে। আমি কি‌ বলেছি তোমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিবো? বিয়ের দ্বিতীয় দিন আজকে। স্বাভাবিকভাবে বিয়ে হয়নি আমাদের যে বিয়ের আমেজটা থাকবে। তাই আজকের দিনটায় তোমাকে নিয়ে একটু বেরোতে চাইছি। আর বাটারফ্লাই..’

জেহফিল ইনানের হাত ধরল, ম্লান গলায় বলল, ‘আমি কখনোই তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করব না বাটারফ্লাই। আমি ডমিনেটিং না, ইভেন ডমিনেট করা পছন্দ না আমার। প্রথম দিকে তোমার সাথে করা অ্যাগ্রেসিভ আচরণের জন্য ক্ষমা চাইছি। আমি সত্যি সরি। তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো। পড়ালেখাতেও আমার বাঁধা নেই। যেটা তোমাকে খুশি রাখবে সেটা আমাকেও খুশি রাখবে।’

ইনান আশ্বস্ত হয় জেহফিলের কথায়। সে ভেবেছিল সত্যিই জেহফিল তাকে ডমিনেট করবে!!

.

.

শপিং করার সময় ইনানের দেখা হয় মাহিনের সাথে। মাহিন ইনানের দুই ইয়ারের জুনিয়র। ইনান প্রাইভেট পড়িয়েছিল মাহিনকে। লিফটে দেখা হওয়ায় কেউ কাউকে এড়াতে পারেনি। মাহিনকে দেখেই ইনান তার গাল টিপে দিয়েছিল জোরে। ছেলেটা গুলুমুলু অনেক।

‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’

‘এইতো আপু, রেস্টুরেন্টে যাব, ফ্রেন্ডদের সাথে।’

‘তোমার না এক্সাম চলে? পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করা হচ্ছে?’

‘ইয়ে.. এরকম সবাই-ই করে, তুমিও তো করেছো কতো।’

ইনান মাহিনের গালে দুষ্টুমি করে হালকা চাপড় দিলো, ‘আমি আর তুমি এক নাকি? আমাদের সময়ে এসব জায়েজ ছিল, তোমাদের সম্পূর্ণ হারাম।’

জেহফিল ইনানের লিফ্টের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে ছিল। ইনান আর একটা ছেলের খুনসুটি করাটা তার ভালো লাগল না একদমই। ম্যানারলেস ছেলে একটা! বড়দের তুমি তুমি করে বলে? বাস্টার্ড! পরিবার থেকে শিক্ষা পায়নি!! হাত মুঠ করে রাখল জেহফিল। তার চোয়াল শক্ত।

.
শপিং করে ফেরার পথে জেহফিল ড্রাইভ করতে করতে শান্ত গলায় বলে,

‘ছেলেটা কে?’

ইনান আয়না সামনে নিয়ে কিনে আনা সবগুলো লিপস্টিক ট্রাই করছিল। জেহফিলের কথা শুনে বলে,

‘কোন ছেলেটা?’

‘লিফ্টের ছেলেটা।’

‘ওও, ও আমার স্টুডেন্ট। ইন্টারে থাকতে ও’কে পড়িয়েছিলাম।’

‘কত বছর?’

‘বছর না, চার মাস পড়িয়েছিলাম।’

‘পড়ানোর পাশাপাশি ম্যানারস শেখানোটাও টিচারদের কর্তব্য।’

ইনান লিপস্টিক রেখে জেহফিলের দিকে তাকালো, ‘কী বলতে চাইছেন?’

‘মানে ছেলেটাকে দেখলাম তোমাকে তুমি করে বলছে, নরমালি আমরা টিচারদের তুমি ডাকি না। তাই বলছি।’

‘ওহ, আরে বাচ্চা ছেলে তো, এগুলো কিছু না।’

‘তাও বাটারফ্লাই। এখনকার যুগে ক্লাস ফাইভের ছেলেরাও এডাল্টদের মতো বিহেভ করে। তাই তোমার উচিত এসব ছেলেদের থেকে দূরে থাকা।’

ইনান কপালে ভাঁজ ফেলে তাকায়, তা দেখে জেহফিল হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘আরে বলতে চাইছি, ছেলেটা দেখলাম কলেজ ফাঁকি দিয়ে এদিক সেদিক যায়, বলা তো যায় না, যদি খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে। ভবিষ্যতের জন্য খারাপ।’

‘এগুলা হয়ই। এতটাও স্ট্রিক্টে রাখা দরকার নেই এসব ছেলেমেয়েদের। এমন কত করেছি আমি।’

‘কার সাথে?’

‘আর কে, ফ্রেন্ডদের সাথে।’

‘তোমার ছেলে ফ্রেন্ড মোট কয়জন?’

‘স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি মিলিয়ে অনেকজনই। যদিও এখন আর তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এত কিছু জিজ্ঞেস করছেন কেন বলুন তো?’

জেহফিল জোর করে হাসল, ‘এমনিই বলছি, আমার বউয়ের ফ্রেন্ড মানে তো আমারও ফ্রেন্ড তাইনা?‌ তাদের খোঁজ নেওয়াটাও আমার কর্তব্যের মতো।’

ইনান হাসল। জেহফিলকে সে যেমনটা ভেবেছিল আসলে তেমন না, মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করলেই মিশতে পারবে, আপন করে নিতে পারবে। সারা রাস্তা সে তার ফ্রেন্ডদের গল্পই বলে যেতে লাগল। আর এদিকে জেহফিলের হাসি থেমে গিয়ে স্টিয়ারিংয়ে রাখা হাত শক্ত হয়ে গেল নিমিষেই।

.
.
চলবে…

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_১১
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

গভীর রাত। মেঘেদের তান্ডবে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষণে ক্ষণে ডেকে উঠছে আকাশ, বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ করে। বারান্দার কাঁচে আছড়ে পড়ছে বৃষ্টির ছাঁট। ফেইরি লাইট জ্বালানোর কারণে রুমটাকে স্বপ্নের মতো লাগছে। ইনান ঘুমে আচ্ছন্ন। কিছুক্ষণ পরপরই ঘুমের ঘোরে কিছু বিড়বিড় করে আবার কোমল বালিশে মুখ তলিয়ে দিচ্ছে। বিড়বিড় করার সময় ইনানের লাভ শেপের গোলাপী ঠোঁট দুটো হালকা ফাঁক হয়ে আবার ওষ্ঠাধর মিলিত হচ্ছে। আর এই সম্মোহনকারী ঠোঁটের দিকে পলকহীন চেয়ে আছে জেহফিল। তার ইচ্ছে করছে ইনানের ঠোঁটদুটো নিজের মাঝে নিয়ে নিতে। তন্দ্রায় আচ্ছন্ন ইনানকে তার কাছে আকাশ থেকে নেমে আসা লিটল ফেইরি মনে হয়। যদিও ইনান সুপারম্যানের প্রিন্ট করা ওভারসাইজড টি-শার্ট আর শর্ট প্যান্ট পরে আছে, তাও ইনানের সৌন্দর্যকে জেহফিলের চোখ হতে আড়াল করতে পারছে না।

জেহফিল ইনানের খাটের পাশে বসে। এক হাত ইনানের চুলে, আরেক হাতে ইনানের হাত আলতো করে চেপে ধরে আছে। জেহফিলের ইচ্ছে করছে ইনানের হাতটা নিয়ে তার এলোমেলো চুলে রাখতে। জাগ্রত অবস্থায় ইনানের সন্নিকটে না আসতে পারলেও, ঘুমন্ত অবস্থায় ইনানের সান্নিধ্য নাহয় একটু পেলো! কিন্তু জেহফিলের অভীপ্সা মন নামক অদৃশ্য কুঠুরিতেই বন্দী থেকে গেল। পাছে ইনানের ঘুম ভেঙ্গে যায়!

ম্যাসেজের টুং টাং শব্দ জেহফিলকে ঘোর থেকে বেরিয়ে আনে। ইনানের মাথার কাছে মোবাইলে অনবরত ম্যাসেজ আসছেই আসছে। জেহফিলের সুন্দর সময়টা নষ্ট করায় মোবাইলের উপর এত রাগ উঠল যে প্রায় আছাড়ই দিয়ে ফেলছিল। তবে নিজেকে সামলায় তার বাটারফ্লাইয়ের ঘুম ভেঙে যাবে বলে। জেহফিল সাবধানে ইনানের মোবাইলটা হাতে নেয়। ব্রাইটনেস কমিয়ে লক খুলে। আড়চোখে ইনানের ফোনে সবসময় উঁকি দেওয়ায় লক খুলতে কষ্ট হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে একটার পর একটা নোটিফিকেশন আসছে। এসব আসছে ইনানের ফ্রেন্ডরা মিলে তৈরি করা গ্রুপ থেকে। সেখানে তিনজন এই মধ্যরাতেও মেসেজ করছে। “বেয়াদব অসভ্যদের চোখে ঘুম নেই?” বিরক্তির সাথে মনে মনে বলল জেহফিল।

যতগুলো মেসেজে ইনানের রিপ্লাই ছিল সবগুলো কনভারসেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ল জেহফিল। হোয়াটসঅ্যাপে কার কার সাথে কথা বলে সব দেখল, ম্যাসেন্জার আর ইন্সটাও বাদ গেল না। ইনানের ফ্রেন্ডের অভাব নেই। সবার সাথেই তার ভাব। তাদের সাথে এত কথা দেখে জেহফিলের কপালের রগ ফুলে উঠল। এত কথা কিসের এসব আলতু ফালতু ফ্রেন্ডসের সাথে? কাজের তো কোনো কথা খুঁজে পেল না। কে কোথায় বেড়াতে গিয়েছে, কে ইন্ডিয়ায় কী খেয়েছে, কে জাপানে শপিং করেছে, এসব ইউজলেস কথাবার্তায় ভর্তি। জেহফিল খেয়াল করল ইনান এখনো কাউকেই তাদের বিয়ের খবরটা জানায়নি। কেন, তা জানতে হবে ইনানের কাছ থেকে? তারমধ্যে কিছু সংখ্যক ছেলে ইনানের সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে। ইনান যদিও রিপ্লাই দেয় না তাও জেহফিলের রাগ উঠে গেল।‌ বাটারফ্লাই কেন এদের ব্লক করল না? কেন কিছু বাংলা গালি দিলো না?

ইনানের হয়ে জেহফিল সবগুলো ছেলেকে ব্লক করে দিলো, এমনকি ফ্রেন্ডদেরকেও। যত গ্রুপ আছে সবগুলো থেকে লিভ নিলো।

ইনানের মোবাইল পরীক্ষা করা শেষে জেহফিল খাটের উপরে ছুঁড়ে মারল মোবাইলটা‌। রাগে দাঁত খিঁচে রেখেছে সে। ইনানের ঘুমন্ত মুখে নজর দেওয়ার সাথে সাথেই তার রাগ গলে পানি হয়ে গেল। ঝুঁকে পড়ে ইনানের কপালে চুমু খেল। পাতলা চাদর জড়িয়ে দিলো ইনানের গায়ে‌। চুলগুলো এক সাইডে নিয়ে ভাঁজ করে রাখল যাতে ইনানকে তারা বিরক্ত না করে। কী মিষ্টি একটা মেয়ে!! জেহফিল মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল। তার ইস্পাতের মতো শক্ত হাতের আঙুল ইনানের নরম তুলতুলে গালে স্লাইড করতে লাগল।

ফিসফিস করে বলল,’ইউ আর সো প্রীটি মাই বাটারফ্লাই। প্রীটি লাইক অ্যান এঞ্জেল।’

জেহফিল ইনানকে গুড নাইট চুমু দিয়ে ইনানের পায়ের কাছে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। ইনানের পায়ে নিজের হাত প্যাঁচাতে ভুলল না।
.

.

ইনানের ঘুম ভাঙল কঠিন বজ্রপাতের শব্দে। ধড়ফড় করে উঠে বসল সে। তার বুক এখনো ঢিপঢিপ করছে। এখনো রুম অন্ধকার। ইনান মোবাইল হাতে দেখল সাড়ে সাতটা বাজে, অথচ বাহিরে তাকালে মনে হয় এখনো নিশিরাত। ইনান হাই তুলে খাট থেকে নামতে গিয়ে পায়ে বাঁধা পেল। দেখল জেহফিল তার পায়ের কাছে পা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ইনান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তাদের বিয়ের এক সপ্তাহ রানিং। তবে ইনান জেহফিলের সাথে এক রুমে থাকে না। পাশের রুমটা জেহফিলের। ইনান মূলত সময় চেয়েছে, হুট করেই তো কিছুদিনের পরিচয়ের ছেলের সাথে বেড শেয়ার করতে পারে না। তার আনইজি ফিল হয়। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ইনান সময় চেয়েছে। আর এই এক সপ্তাহের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জেহফিলকে তার পায়ের কাছে দেখতে পায়।

ইনান চাদরে নিজের পা ভালো করে ঢেকে নিলো। তারপর জেহফিলের দিকে এগিয়ে তাকে উঠানোর চেষ্টা করল। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে গিয়েও হঠাৎ থমকায় সে। জেহফিলকে দেখে চোখ আটকে যায়। জেহফিলের গায়ের রং শ্যামলা, ইনানের কাছে মনে হয় এই রংটা একমাত্র জেহফিলের জন্যই পারফেক্ট। জেহফিলকে দারুণ মানিয়েছে এই চাপা রং। শ্যামসুন্দর সুপুরুষ! না চাইতেও ইনানের হাত জেহফিলের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে চলে গেছে। সূচের মতো হাতে ফুটলেও ভালো লাগছে। জেহফিলের ঘাড় অবধি সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। জেহফিলের চোখ দুটো ইনানের সবচেয়ে পছন্দের। বিশেষ করে চোখের পাপড়িগুলো। বড় বড় পাপড়িতে আবদ্ধ ধূসর চোখজোড়া। ইনানের তো মাঝে মাঝে হিংসে হয় জেহফিলের আইল্যাশ দেখে। ছেলেদের এত সুন্দর চোখ কেন হতে হয়?

আবারও বজ্রপাতের শব্দে ইনানের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে জেহফিলকে ঘুম থেকে উঠায়। ঘুম ঘুম চোখে জেহফিল যখন ইনানের দিকে তাকালো ইনানের ইচ্ছে করল বুকে হাত দিয়ে সিনেমার নায়কদের মতো পড়ে যেতে! হায়!! সব ছেলেরাই কি এত সুন্দর করে ঘুম থেকে উঠে?

‘গুড মর্নিং বিউটিফুল বাটারফ্লাই।’

জেহফিলের ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ইনান আরেকবার কুপোকাত হলো! ওহ গড!‌ সব ছেলেদের ঘুম জড়ানো কন্ঠ কি এত আবেশিত? এত সুন্দর একটা ছেলেকে কি সত্যি সৃষ্টিকর্তা তার জন্য পাঠিয়েছে? নাকি এই রাজকুমার গল্প থেকে টুপ করে বাস্তবে চলে এসেছে? ইনানের পেটে প্রজাপতি উড়তে লাগল। মনে হয় তাদের এক রুমে থাকার দিনটা বেশি দূরে নেই!

‘কোথায় হারিয়ে গেলে বেবিগার্ল?’

উফফ! জেহফিল বোধহয় ইনানকে সত্যি সত্যি মে’রে ফেলবে। ডিপ ভয়েসে বেবিগার্ল ডাকাটা যে কত সেনশুয়াল জেহফিল কি বুঝে না? ইনান পেট চেপে ধরে আছে। কিছুতেই বাটারফ্লাইগুলো উড়াউড়ি থামাচ্ছে না।

ইনানকে পেট চেপে ধরে দেখে জেহফিলের ঘুম ছুটে যায়, অস্থির হয়ে ইনানের কাছে এসে বসে, ‘কী হয়েছে সোনা? পেটে ব্যথা করছে?’

ইনান এবার সোজা হয়ে বসে। গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের ভেতরকার ডেল্যুশনাল চিন্তাভাবনা দূর করে‌।

‘নাথিং। এমনিই বসে ছিলাম।’ তারপর কিছুটা চিন্তিত সুরে বলে, ‘আপনার কি সিরিয়াস স্লিপওয়াকিংয়ের প্রবলেম? কবে থেকে?’

জেহফিল উপর নিচ মাথা ঝাঁকায়, ‘ছোটো থেকেই। কেন?’

‘না মানে, প্রতিদিনই দেখি আপনি আমার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছেন, আমি তো দরজা আটকেই ঘুমাই। আপনার সমস্যাটা সিরিয়াস না হলে তো এমনটা হবার কথা না, এমন হলে তো ঘরের বাইরেও চলে যেতে পারেন!’ ইনানের চিন্তিত সুর।

জেহফিল ঠোঁট চেপে ইনানের দিকে তাকায়। মনে মনে হাসে। তারপর অসহায় কণ্ঠে বলে,

‘সরি সোনা যদি তোমাকে বেশি ডিস্টার্ব করে থাকি। আজকে থেকে হাত বেঁধে রাখব খাটের সাথে। তাহলেই আর ঘুমের ঘোরে তোমার রুমে ঢুকে পড়ব না।’

ইনান বিচলিত হয়। দুহাত দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘না না, এসব করতে যাবেন না, শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না। আর আমি তো বলিনি আমার সমস্যা হচ্ছে। আপনি তো ঘুমের ঘোরে এসে আবার ঘুমিয়েই পড়ছেন। বোধহয় এটা নরমাল, আমার বাবাও ঘুমের ঘোরে ড্রয়িংরুমে চলে যায়‌।’

জেহফিল চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে। ভেতরে ভেতরে সে হাসছে, তার বাটারফ্লাইয়ের মনটা কত সরল!

.

.

ইনান ফ্রেশ হয়ে বেরোনোর পর দেখল খাটে অনেকগুলো প্যাকেট রাখা। প্যাকেট খুলতেই দেখল ভেতরে কিছু ঔষধ আর কতগুলো স্যানিটার প্যাড রাখা‌। ইনান কপালে হাত ঠেকিয়ে হাসল। জেহফিল ভেবেছে তার মান্থলি চলছে??

প্যাকেট সব আলমারিতে রেখে রুম থেকে বের হতে নিচ্ছিল। দরজার নব ঘুরানোর আগেই ওপাশ থেকে দরজা খুলল জেহফিল। হাতে তার খাবারের ট্রে। ইনানকে দেখে জেহফিল হালকা ধমকের সুরে বলল,

‘তুমি কষ্ট করে আসলে কেন?‌ আমি নিজেই তো খাবার নিয়ে আসছিলাম!’

ইনানের হাত টেনে তাকে খাটে বসায়। নিজ হাতে খাইয়ে দিতে উদ্যত হলে ইনান তাকে থামায়।

‘আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই না। তখন খিদে পেয়েছিল দেখে পেট চেপে ধরেছিলাম।’

জেহফিল বাঁকা চোখে তাকালো, ‘সত্যিই তো? নাকি বলতে লজ্জা পাচ্ছ?’

‘আজব। লজ্জার কী আছে? যা সত্যি তাই বললাম।’

জেহফিল তাও একইভাবে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল, ‘আমাদের যদি নরমাল হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্ক থাকত তাহলে…’

বিড়বিড় করে বললেও ইনান সব শুনতে পেল, ‘তাহলে কী?’

জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসে। এই অবস্থায় জেহফিলকে দেখতে এত হট লাগছিল যে ইনানের পেটে আবারও শুরু হয়ে যায় উড়াউড়ি। ঢোক গিলল সে।

‘বললে তুমি লজ্জা পাবে।’ জেহফিলের দুষ্টু কণ্ঠ।

ইনান চোখ উল্টায়। ‘আমি এত সহজে লজ্জা পাই না। আমার মধ্যে লজ্জা কম।’

‘তাহলে…’

‘হুম বলেন বলেন।’

বাঁকা হাসে জেহফিল, চোখ টিপে বলে, ‘তাহলে নিজের চোখে চেক করতাম, মেবি হাত দিয়েও..’

ইনানের কাশি উঠে যায়। আর তা দেখে জেহফিলের হাসি আরো চওড়া হয়। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় ইনানের, গাল লাল হয়। জেহফিল এত ঠোঁটকাটা! কীসব বাজে বাজে কথা! ইনান কাশতে কাশতে জেহফিলের দিকে চায়, আড় নজরে।

ইনান দ্রুত টপিক চেঞ্জ করে। নাহলে এই লোক আরো লজ্জা দিবে, ‘শুনুন, ভেবেছি আজ অথবা কাল আমরা বাড়িতে যাব। বাবাকে দেখি না অনেকদিন।’

জেহফিলের হাসি থেমে যায়‌। মুখ থমথমে হয়ে যায়‌। কিন্তু ইনান দেখার আগেই মুখটাকে স্বাভাবিক করে।

‘আমার কয়েকটা পেইন্টিং বাকি। সামনের মাসে ইউকেতে সেন্ড করতে হবে‌। সামনের মাসে নাহয় যাই সোনা?’

ইনান ভারাক্রান্ত মনে জেহফিলের দিকে তাকাল,

‘বাবা আমাকে ছাড়া কখনো থাকেনি, আমিও না। হুট করেই বিয়েটা হওয়ায় বাবার আর আমার দুজনেরই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাহলে এক কাজ করি। আমি নাহয় যাই আজকে। কয়েকদিন থাকি। আপনার কাজের চাপ কমলে নাহয় যাবেন, তারপরের দিন চলে আসব আমরা!’

জেহফিল বাহিরে দৃষ্টিপাত করল। ফ্যাকাশে গলায় স্বগোতক্তি করল, ‘এই কয়েকদিন আমি আবার একা হয়ে যাব..আগের মতো।’

জেহফিলের কথা শুনে ইনানের খারাপ লাগল। এই কয়েকটা দিনে যা বুঝল জেহফিল তার সারাজীবন একাকীত্বের সাথে লড়েছে। ইনান আসার পর তার রেশ কিছুটা কমেছে। এখন যদি আবার ইনান তাকে একা করে চলে যায় তাহলে কি ইনান স্বার্থপর হয়ে গেল না? কিন্তু তার বাবাকে যে সে খুব মিস করছে, চোখের দেখা দেখেনি এক সপ্তাহ।

ইনান জেহফিলের বিবর্ণ মুখের দিকে তাকাল। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

বিমর্ষ কণ্ঠে বলে, ‘সকালে গিয়ে বিকেলে আসলেও কি সমস্যা হবে?’

পারফেক্ট! এটাই চেয়েছিল জেহফিল। কিছু সময়ের জন্য ইনান বাড়িতে গেলে কিছু হবে না, অন্যদিকে বাটারফ্লাইয়ের মনও রক্ষা করা গেল। কিন্তু দুই তিনের জন্য ইনানকে সে দূরে রাখতে পারবে না, একটা মুহূর্ত যেখানে ইনানকে ছাড়া থাকতে পারে না সেখানে একটা দিন তো অনেক!

জেহফিল কখনো কারো বাসায় থাকেনি, তার অবশ্য কোনো আত্মীয়ও নেই। তাই নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও থাকাটা তার জন্য আনকম্ফর্টেবল। ইনানের বাড়িতে ইনানকে সে কাছে পাবে না কোনোভাবেই, সে সারাক্ষণ তার বাবার কাছেই পড়ে থাকবে…. ওয়েট ওয়েট, জেহফিল মনে মনে গভীর চিন্তা করল, তারপর শয়তানি হেসে কিছু একটা ভেবে বলল,

‘একদিনের জন্য যাওয়া যায়।’

ইনানের মুখ উজ্জ্বল হলো। চোখ চকচক করে উঠল খুশিতে। তা দেখে জেহফিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। ইনানের প্রফুল্লিত চেহারা দেখে জেহফিলের ভেতরটা তাকে তাড়া দিচ্ছে ইনানকে জড়িয়ে ধরে কঠিন চুমু খেতে।

‘সত্যি? কবে যাচ্ছি? কখন?’ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল ইনান।

‘আজকে বিকেলেই চলো।’

ইনানের কী যে খুশি খুশি লাগছে! জেহফিল এত ব্যস্ততার মাঝেও যাওয়ার জন্য সময় বের করল, তাও একদিনের জন্য?

তারমধ্যে ইনানের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রীনে দেখল ইনানের ফ্রেন্ড ফারা কল করেছে। জেহফিলের নজর গেল ফোনের দিকে‌। শিট! সে তো কালকে বড় একটা কাজ করতেই ভুলে গিয়েছিল। সবগুলা ফ্রেন্ডের নাম্বার ব্লক করা!

ইনান দুইমিনিট কথা বলে ফোন রেখে দিল। জেহফিল যদিও সব শুনেছে কান‌ খাড়া রেখে তাও ইনানের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে বলল,

‘কিছু হয়েছে বাটারফ্লাই?’

‘হুম। আপনাকে বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার এক ফ্রেন্ড, শরৎ নাম। কিছুদিন আগে ও’কে কে বা কারা নাকি মেরে ওর বাসার সামনে ফেলে রেখে গিয়েছে। দুই হাতের হাড় ভেঙে গেছে, পায়েও সেইম। চিকিৎসা চলছে। আহারে! বেচারা ইদানিং কেন যেন খালি মা’রই খায়।’

জেহফিল ছোট্ট করে বলল, ‘ওহ।’

তারপর ইনানকে খাইয়ে দিতে লাগল।

.
.
চলবে…

[সবাই মন্তব্য করবেন]