রোদরঞ্জন পর্ব-২+৩

0
216

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_২
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

কলেজ ছুটির পর ইনান তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেল। তিনতলার সবচেয়ে বড় টেবিলটা আগেই বুক করে রাখা ছিল। কাঁচের দেয়ালের দিকটাতে ইনান বসেছিল। এইখান থেকে তাদের কলেজের ভিউটা খুব সুন্দর দেখা যায়। হাসিঠাট্টার এক পর্যায়ে ইনানের চোখ চলে যায় কলেজ গেটের কাছে। জেহফিল ছেলেটা কলেজ থেকে বের হচ্ছে। ইনান চোখ ছোট ছোট করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। জেহফিল খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটছে, যেন সে কদম গুণে হাঁটে। একটা হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চাও তাকে অতিক্রম করতে পারবে সহজে। মেইন রোডে এসে জেহফিল এক মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়। ইনান চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে জেহফিল কী করে সেটা দেখার জন্য। হুট করে, একদম হুট করে জেহফিল তিনতলার রেস্টুরেন্টটার কাঁচের দেয়াল ভেদ করে ইনানের চোখে চোখ রাখল। এই হঠাৎ কান্ডে ভরকে গেল ইনান। জেহফিল কোনোদিকে না তাকিয়েই কীভাবে হুট করেই তার চোখে তাকাল? যেন সে জানত ইনান এইখানেই আছে!! বুক ধড়ফড় করে উঠে ইনানের। ইনানের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, যেন সে এইমাত্র চুরি করে ধরা খেয়েছে। চোখ সরিয়ে নিলো দ্রুত।

নিজেকে ধাতস্থ করে চোরা চোখে আবার তাকাল ইনান। জেহফিল তখন গাড়িতে উঠে চলে যাচ্ছিল। যেন এই মুহূর্তে কিছুই হয়নি! মুগ্ধ ইনানের পাশের চেয়ারে বসে ছিল। ইনানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল জেহফিলের পানে। জেহফিল চোখের আড়াল হতেই সে ইনানকে বলল,

‘ছেলেটা ভারী অদ্ভুত!’

ইনানের ধ্যান ফিরে, ‘কিছু বলছিস?’

‘হুম, ঐ বোবা থুরি জেল না যেন কি নাম..’

‘জেহফিল?’

‘রাইট, এত বড় নাম মাথাতেই থাকে না।’

‘ওর কথা কী বলছিলি?’

‘বলছি ও অনেক অদ্ভুত।’

‘কেন মনে হলো?’ ইনানকে কিছুটা কৌতুহল দেখালো। মুগ্ধ কোকাকোলার বোতলে সিপ দেওয়া থামিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ভঙ্গিতে বলল,

‘ও না কেমন যেন জানিস! ওর পাশের বেঞ্চেই বসেছিলাম আমি, কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু ছেলে পাত্তাই দিল না! আজিব! প্রত্যেকটা ক্লাসে ও কী করেছে জানিস?’

কৌতুহলে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ইনানের, ‘কী‌ করেছে?’

‘যেই‌ সাবজেক্টের ক্লাস হতো সব বইতেই খালি স্কেচ করতো। লেখাগুলার উপরেও। ও একটা বারও মাথা তুলে তাকায়নি, ইভেন প্রেজেন্টও দেয়নি। সারাক্ষণ বইয়ে স্কেচ করে গেছে নয়তো জানালা দিয়ে বাহিরে একধ্যানে তাকিয়ে ছিল। আর মুখে কী যেন বিড়বিড় করে বলত। তুই না দেখলে বুঝতেই পারতি না, ওকে কেমন যেন সাইকোপ্যাথের মতো লাগছিল ট্রাস্ট মি। তারপর শুন কী হয়েছে!’

ইনানের থেকে মুগ্ধকেই বেশি এক্সাইটেড লাগছিল। চোখ বড় করে মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ করে বলতে লাগল, ‘অ্যাকাউন্টিং ক্লাসে আমি বই আনিনি। তো ও যেহেতু পড়ায় মনোযোগ দেয়নাই তাই ভাবলাম ওর থেকেই নেই। ও তখন জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিল। কয়েকবার ডাকছি বাট সাড়া দেয়নাই, শেষবার পানির বোতল দিয়ে ওর হাতে একটু টাচ করছি অ্যাটেনশনের জন্য…’

মুগ্ধ ঢোক গিলল, এক ঢোকে সম্পূর্ণ কোকাকোলা সাবার করল।

‘কচুর মাথা, বল কী হয়েছে তখন?’ ইনান তাড়া দিল, তার তর সইছে না।

‘ওই জেহফিল আমার দিকে এমন ভাবে তাকাইছে মনে হয় যেন আমাকে খেয়ে ফেলবে, আর আমার বোতলটা খুব জোরে ধাক্কা মেরে হাত থেকে সরাইছে। ভাই!!! ওর চোখটা দেখলেই তুই বিশ্বাস করতি, কেমন যেন দেখাচ্ছিল, সিরিয়াসলি আই কান্ট এক্সপ্লেইন! আর কী বিড়বিড়াইতেছিলো, আই ফিল লাইক হি ওয়াজ কার্সিং মি আন্ডার হিজ ব্রেথ! আমার আত্মা যেন বাইর‌ হইয়া যাইতেছিলো ঐ টাইমে, ওরে এতো ভয়ংকর লাগছে যে আই ওয়াজ গনা পি ইন মাই প্যান্ট!’

‘এইজন্যই তুই তখন সিট চেঞ্জ করছিলি?’

‘হুম, আমার তো মনে হইছে ওর পাশে থাকলে আমি ওখানেই মা’রা যাইতাম। হি ইজ লিটারেলি আ সাইকোপ্যাথ!’

ইনান ভাবনায় পড়ে গেল। যখন জেহফিলকে সে দেখেছিল কাছ থেকে তখন জেহফিলের শ্যামবরণ মুখের ঐ দৃষ্টি এতটাই মায়া মায়া লেগেছিল যে ইনান ভেবেছে এর থেকে নিষ্পাপ চেহারা আর কারো হয় না। সত্যিই! কী কোমল, স্নিগ্ধ ছিল ঐ চেহারাটা! একটু আগেও তো কেমন শান্ত দেখেছিল। আর এখন মুগ্ধর কথা শুনে তো সম্পূর্ণ বিপরীত মনে হচ্ছে। ইনানের তো বিশ্বাসই হতে চাইছে না যে আসলেই জেহফিলের এমন কোনো রুপ আছে!

.
.

রাতে ইনান ঘর সাজিয়ে অপেক্ষা করছিল বাবার জন্য। সবকিছুই সাজানো শেষ শুধু কেক ছাড়া। বারোটা বাজতে পঁচিশ মিনিট বাকি। এখনো তার বাবা আসেনি। ইনান ছোটোবেলার মতোই বার্বি ড্রেস পরে আছে। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার মন থেকে জন্মদিন নামক দিনটা ধীরে ধীরে মুছেই যেত। এখন আর তার ভালো লাগে না জন্মদিন পালন করতে, বার্বি গাউন পরতে…একটু একা থাকা.. অন্ধকার রুমে। যতটাদিন মা বেঁচে ছিল তত দিন পর্যন্তই জন্মদিনটাকে জীবন্ত লেগেছিল। গত তিনবছর আগেও জন্মদিনে বার্বির মতো সাজাটা উপভোগ করত..কিন্তু মা চলে যাওয়ার পর কেমন পানসে লাগে সবকিছু। একমাত্র বাবার মন রক্ষার্থে ছোটবেলার মতো সাজা হয়! দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইনান। টেবিলের উপর রাখা মায়ের ছবি। অপলক চেয়ে রইল মায়ের দিকে। যদি কখনো বিশ্বসুন্দরীর খেতাব ইনানকে ঘোষণা করতে দেয়া হয়, সে নিঃসন্দেহে এই খেতাবটা তার মাকে দেবে‌।

কলিংবেলের শব্দ ইনানকে ভাবনা থেকে ছুটিয়ে আনে। ফোলানো পিংক গাউনটা দুই হাতে উঁচু করে ধরে দরজা খুলতে যায়। বাবার সাথে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে, ফুলের ব্যুকে হাতে নিয়ে। ইনানের জন্মদিনে এই প্রথম নতুন অতিথির আগমন ঘটল।

ইন করা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা পুরুষালী দেহটার দিকে এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো ইনান। পলক ডেইজি ফুলের ব্যুকে হাতে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল ইনানের দিকে। এই মেয়েটার এত রূপ পলককে প্রতিবার বাধ্য করে ইনানের প্রেমে হাবুডুবু খেতে।

‘হ্যাপি বার্থডে ইনান।’ নিষ্পলক চেয়ে ব্যুকেটা ইনানের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

ইনান পলকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ আপনাকে।’

ইফাজ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে বার্বি ডল। ইউ আর লুকিং সো প্রীটি!’

ইফাজ খানের চোখ টলমল করতে লাগল। তার ইনান এখনো সেই বাচ্চাটাই আছে। দশবছরে যেরকম লাগত উনিশ বছরেও সেই একই আছে। একটুও বদলায়নি তার আম্মুটা!

‘কেক এনেছো বাবা?’

সেই ছোটোবেলার মতো। “কেক এনেছো বাবা?” যেমনটা কথা শেখার পর থেকে প্রতি জন্মদিনে বলতো!

মিক্সড ফ্লেভারের কেক ইনানের হাতে দিলেন তিনি। ইনানের চোখ চকচক করে উঠল কেক দেখে। বাবা ছাড়া তার দ্বিতীয় দুর্বলতা হলো ডেজার্ট আইটেম। দুহাতে কেক আর ফুল নিয়ে হাঁটতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধলো। সে ভুলেই গিয়েছিল তার পরনে যে লং গাউন। হুট করেই গাউনের সাথে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিচ্ছিল ইনান। পলক তার পাশে থাকায় শক্ত হাতে ইনানের কোমড় জড়িয়ে ধরে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাল। ইফাজ ছুটে আসলেন মেয়ের দিকে।

অস্থির হয়ে বললেন, ‘ব্যথা পেয়েছ আম্মু? পায়ে বেশি লেগেছে?’

ইনানকে উঠে দাঁড় করায় পলক। ‘ঠিকাছি বাবা।’

‘এগুলো আমার হাতে দাও।’

কেক আর ফুল ইফাজ খান নিয়েই এগিয়ে চলল। ইফাজ খান যেতেই পলক ইনানের কানের কাছে এগিয়ে বলল,

‘সারাদিন তো দেখি খাই খাই করো। ওজন বাড়ে না কেন? এত শুকনা থাকলে কিন্তু পরে সমস্যা হবে।’

ইনান রাগী চোখে তাকাল, ‘কী সমস্যা হবে?’

পলক ঠোঁট চেপে হাসল, ‘তোমার সমস্যা হবে না, তোমার তাইনের সমস্যা হতে পারে।’

এহেন কথায় ইনান তার হিল দিয়ে খুব জোরে চেপে ধরল পলকের পা। ব্যথায় কঁকিয়ে না উঠে পলক বরং জোর করে হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে রইল। ইনানও পাল্টা হাসি দিল। ‘কেমন লাগছে পাখির পালক?’

পলক ফিসফিস করে বলল, ‘সেটা তো বিয়ের পরই বলতে পারব।’

ইনান মুখ কঠিন করে পা উঠিয়ে আরেকবার পা দিয়ে পাড়া দিল। এবার আর ব্যথা লুকিয়ে রাখতে পারল না পলক। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল।

.

ইনানের জন্মদিন খুব সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হলো। পলক চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আবার কলিংবেল বেজে উঠল। ইফাজ তার রুমেই চলে গেছেন। ইনান তখন রান্নাঘর পরিষ্কার করছিল। রাত বাজে দেড়টা। এই টাইমে কে আসবে?? ভ্রু কুঁচকে গেল ইনানের। কী হোলে উঁকি দিয়ে দেখল কেউই নেই। কিন্তু নিচে কিছু একটা বক্স টাইপ দেখা যাচ্ছে। ইনান দরজা খুলে আশেপাশে দেখল। নাহ! কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। বক্সটা খুব সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করা। উপরে একটা কার্ড লেখা ছিল, ‘হ্যাপি বার্থডে, দিস ইজ আ লিটল গিফ্ট ফর ইউ।’

আড়াইফুট সাইজের গিফ্ট কিনা ছোট্ট!! গিফ্টটা কে পাঠিয়েছে তার কোনো অস্তিত্বই দেখা গেল না। ইনান দোনোমনা করে টেনেহিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে গেল। যেই দিক না কেন! ফ্রি গিফ্ট কে না চায়?

.
জন্মদিনের হাসি আনন্দে জেহফিল নামক অধ্যায়টা ধীরে ধীরে মুছে গেল ইনানের মস্তিষ্ক হতে। কিয়ৎক্ষণের জন্য…

.
.
চলবে…

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

.
.
এই বিকেলের ঝকঝকে আকাশে হুট করে বৃষ্টি নামাটা একদমই ভালো লাগেনি ইনানের। কেননা আজ সে সাদা সালোয়ার কামিজ পরেছে। সাইকেলটাও সাথে আনেনি। এখন নিজ মনেই গালাগালি করছে‌ সে। কলেজ থেকে বের হয়েছে আরো আধঘন্টা আগে। বন্ধুবান্ধব একটাও সাথে নেই আজ। ম’রণ দশা! বিপদ যখন আসে, সব একসাথেই আসে। ইনান একটা আধখোলা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। ভেতরে গাদাগাদি অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন বৃষ্টির কবল হতে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টায় রত। ইনান সবার সামনে দাঁড়িয়ে। তার সালোয়ারের নিচের অনেকটা ভিজে গিয়ে তার পা’কে দৃশ্যমান করে তুলছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে কাক ভেজা হতে বেশি সময় লাগবে না। ইনানের এত অস্বস্তি লাগছে বলার বাইরে‌। ব্যাগ দিয়ে নিজের বুক হতে পেট শক্ত করে চেপে ধরে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে সে। দোকানে দাঁড়ানো অধিকাংশ ছেলে বুড়োর নজর তার দিকে। যেন তারা মেইন ড্রামা দেখার অপেক্ষায় আছে।

ঝড়ো বৃষ্টিতে একটা রিকশাও দেখা যাচ্ছে,গাড়ি তো দূরের কথা। এদিকে ইনান কাউকেই কল দিয়ে পাচ্ছে না। বাবাকেও না। বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল ইনানের।‌ আজকে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে সে! এত বাজে দিন তার জীবনে এই প্রথম।

ঠিক সেই মুহূর্তে তার সামনে দিয়ে চেনা একজনকে যেতে দেখল। বা হাতের আঙুলে চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে ছাতা মাথায় সাদা শার্ট পরনের এক সুপুরুষ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।

ইনান অবচেতন, বিভ্রান্ত মনে জোরে ডেকে উঠল তাকে, ‘জেহফিল!!’

জেহফিলের পা থমকে গেল এক মুহুর্তের জন্য। বোঝার চেষ্টা করল ঠিক শুনেছে কিনা! আবারও সে শুনতে পেল মিহি গলার সুরেলা মেয়েলী ডাক, মিষ্টি সুরে তার নাম ধরে ডাকছে… ‘জেহফিল!’

জেহফিল পেছন ফিরে তাকায়। স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক সাদা পরী এক ঝাঁক কুৎসিত কোলাহলে আবদ্ধ। সেই মুহূর্তে এই সাদা পরীটাকে বন্দী থেকে মুক্ত করতে হৃদয়ের অন্তঃকরণ হতে এক অদম্য শক্তি তার ভেতরটাকে তাড়া দিতে লাগল।

ইনান জেহফিলকে হাত নেড়ে ইশারা করল তার কাছে আসতে, ‘প্লিজ শুনে যান একটু। এখানে আসুন!’

জেহফিল ইনানের কাছে আসতেই ফট করে জেহফিলের ছাতার নিচে ঢুকে গেল ইনান। ইনানের গা থেকে আসা মিষ্টি সুবাসে আবিষ্ট হয়ে গেল জেহফিল।‌ ভেতরের মুগ্ধতা বাহিরে যাতে প্রকাশিত না হয় সে চেষ্টায় ঢোক গিলে অন্যদিকে তাকাল সে।

‘আপনার সাথে তো গাড়ি আছে তাই না? আপনি প্লিজ আমাকে একটু লিফ্ট দিতে পারবেন? প্লিজ!’ ইনান বিনীত সুরে অনুরোধ করল।

জেহফিল এক হাত পকেটে নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করল। শীতল আবহাওয়াতেও তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।‌ শুষ্ক ঢোক গিলে সে এগিয়ে যেতে লাগল অদূরে পার্ক করা গাড়ির দিকে।

ইনান যারপরনাই অবাক হলো। জেহফিল কি তার আর্জিতে রেগেছে নাকি সম্মত হয়েছে বোঝা গেল না। নিজের কাছেই কেমন যেন নিজেকে ছ্যাচড়া লাগল। সে যেচেপড়ে সাহায্য চাইতে এসেছে এতে কি তার মান কমে গেছে!! কিন্তু সে তো নিরুপায়। একান্ত বাধ্য হয়েই জেহফিলের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে সে।

গাড়ির দরজা খোলার আওয়াজে চমকে গেল ইনান। জেহফিল দরজা খুলে অপেক্ষা করছে তার জন্য। ইনান খেয়াল করল জেহফিল তার দিকে একটাবারের জন্যও তাকাচ্ছে না। তার মুখে কি কিছু লেগে আছে? নাকি… ইনান দ্রুত নিজের জামার দিকে তাকাল! নাহ! জামা ভিজেনি, শুধু পায়ের দিকটা আগের মতোই ভেজা। ইনান গাড়িতে ঢুকতেই জেহফিল অপর পাশ দিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ কাঁচ ভেদ করে ভেতরে আসতে পারছে না। গাড়ির ভেতরেও পিনপতন নীরবতা। জেহফিল ভুলেও ইনানের দিকে তাকাচ্ছে না। ইনান বুঝতে পারছে না সে কীভাবে কী করবে! ধন্যবাদ জানাবে? কিছু একটা বলে তো কথোপকথন চালানো উচিত। এভাবে সঙের মতো বসে থাকতে আনইজি লাগছে।

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ইনান আরম্ভ করল, ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি। আসলে উপায় না পেয়েই হেল্প চাইতে হয়েছিল। আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?’

জেহফিল নিরুত্তর। আশ্চর্য মানুষ! ইনানের মেজাজ গরম হয়ে গেল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে এরকম আচরণ করার মানে কী?

ইনান ঠোঁট কামড়ে রাগ, অপমানকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করল। তখন লুকিং গ্লাসে চোখ গেলে দেখল পেছনের সিটে কয়েকটা বই রাখা। ইনান পেছনে ফিরে চোখ ছোট করে বোঝার চেষ্টা করল বইগুলো কিসের। এগুলো মাস্টার্সের! ইনানের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গেল চকিতে। কৌতুহলকে দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,

‘মাস্টার্সের বই কেন আপনার কাছে? এখনো অনার্স ফাইনালই দেননি, মাস্টার্সের বই দিয়ে কী করবেন?’

ইনান জেহফিলের পারমিশন ছাড়াই বইগুলো হাতে নিলো। স্টিয়ারিংয়ে রাখা জেহফিলের হাত শক্ত হয়ে গেল। তার পারমিশন ছাড়া কেউ কিছু ধরাটা একদম ভালো চোখে দেখে না সে।

ইনান উল্টে পাল্টে বই দেখতে দেখতে কয়েকটা পেজে এসে থমকে গেল। বইয়ের অধিকাংশ পেজে পেন্সিল দিয়ে একেক টাইপের স্কেচ করা।

‘বইটা তো নিউ এডিশন। এর মধ্যে এতোকিছু এঁকেছেন কেন?’

প্রথমবারের মতো একটা বাক্য জেহফিলের মুখ থেকে বেরুলো, তাও কাঠ গলায়, ‘আমার বই, আমার ইচ্ছা।’

‘তাই বলে…ওয়েট! আপনার বই মানে? আপনি তো আমার ব্যাচমেট।’ ইনান বিস্মিত নেত্রে চেয়ে বলল।

‘নোপ।’

‘তাহলে যে ঐদিন আপনাকে আমার ক্লাসে দেখলাম!’

‘আমার ইচ্ছে হয়েছিল তাই যেকোনো একটা ক্লাসে ঢুকে গিয়েছিলাম, এনিথিং এলস?’ জেহফিল কঠিন গলায় বলল।

‘আজব ইচ্ছা।’ বিড়বিড় করে বলল ইনান। কিন্তু মুখে বলল, ‘ওহ আচ্ছা।’

ইনান ভাবনায় পড়ে গেল। সেইদিন জেহফিলের চেহারা দেখে সে সিরিয়াসলিই ব্যাচমেট ভেবেছিল। কিন্তু এখন কাছ থেকে দেখায় তার ভুল ভাঙলো। ছেলেটির শরীর আসলেই একজন বলিষ্ঠ পুরুষের। দেখলে কেমন টিচার টিচার লাগে। আর পাশে দাঁড়ানোতেও বুঝল, লোকটি যে কত লম্বা! খাম্বা একটা!

চারপাশ আঁধারে ঢেকে আছে। বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েই চলেছে। বোঝার উপায় নেই এখন যে বিকেল, মনে হয় রাত নেমে গেছে অচিরেই। ইনান এতক্ষণে খেয়াল করল, রাস্তাটা তার সম্পূর্ণ অচেনা। রাস্তার দুধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অচেনা অজানা আকাশ ছোঁয়া গাছ। কিছুটা হতভম্ব হলো ইনান। এই রাস্তা তো তার চেনা নয়। এখানে আগে এসেছিল বলেও মনে হয় না।

তড়িৎ পাশ ফিরে জেহফিলের দিকে তাকালো, ‘এটা কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

সাথে সাথেই জবার দিলো না জেহফিল। ভ্রু কুঁচকে চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর ধীরস্বরে বলল, ‘বাড়ি।’

‘কার বাড়ি? এটা তো আমার বাড়ির রাস্তা নয়!’ ভয় খেলে গেল ইনানের চোখে। কুচিন্তারা এসে ভিড় জমাতে লাগল তার ভাবনায়।

‘আমার বাড়ি।’ সহজ জবাব জেহফিলের।

‘হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস? আমি কি আপনার বাড়িতে যাওয়ার জন্য লিফট চেয়েছি? আমি আমার বাড়িতে যাব।’ চেঁচিয়ে উঠলো ইনান। আতঙ্কে তার সারামুখ নীল‌ হয়ে গেছে।

‘ইউ ডিডন্ট টেল মি ইওর এড্রেস।’

ইনান মাথায় হাত দিয়ে হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলল, রাগে তার গলার স্বর কাঁপতে লাগল, ‘ভাই!! লিসেন। আমি নাহয় ভুলেই গিয়েছিলাম বলতে, তাই বলে আপনি একটাবার জিজ্ঞেস করবেন না আমি কোথায় যাব?’

‘দ্যাটস নট মাই প্রবলেম।’ জেহফিল স্বাভাবিক গলায় বলল।

ইনানের কান্না চলে এল রাগে। তার সত্যিই তখন খেয়ালে ছিল না ঠিকানাটা বলার। তাই বলে কি জেহফিলের দায়িত্ব ছিল না নিজ দায়িত্বে জিজ্ঞেস করা? উল্টো বলে কিনা এটা তার সমস্যা না?

বড় বড় কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল, ‘গাড়ি ঘুরান। বাসায় দিয়ে আসুন। এড্রেস বলছি।’

‘আ’ম নট ইওর ড্রাইভার যে তুমি যা বলবে তাই শুনব।’ জেহফিলের কন্ঠ শীতল।

ইনান মেজাজ হারানোর পথে। পাশাপাশি তার ভয়ও লাগছে, এভাবে একটা মেয়েকে তার বাড়িতে না দিয়ে এসে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পেছনে মতলবটা কী? নাকি বাড়ির কথা বলে অন্য কোনো পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে যাবে? ইনানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ঘামাতে লাগল দরদরিয়ে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘আপনি আমাকে যেখান থেকে এনেছেন সেখানেই দিয়ে আসুন! বাড়িতে দিয়ে আসা লাগবে না।’

জেহফিল যেন শুনলোই না তার কথা এমনভাবে গাড়ি চালাতে লাগল।

নিজের মেজাজ হারিয়ে আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো ইনান, ‘কী হলো শুনতে পাননি? আমাকে দিয়ে আসুন কলেজে! রাইট নাও!’

‘আই কান্ট।’

ইনান এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ‘ইউ আর সাচ আ ডি*হেড।’

আচমকা গাড়ির ব্রেক কষল জেহফিল। ইনানের পাশের দরজা খুলে দিল পলকেই। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, ‘গেট আউট।’

বৃষ্টির তোড়ে ইনানের জামা কাপড় ভিজে যাওয়া শুরু করল। সাদা কাপড় ভেদ করে শরীর ভেসে উঠার আগেই গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল ইনান।

‘মানে কী? আমি কেন নামব? আপনি নিয়ে এসেছেন , আপনিই দিয়ে যাবেন।’ ইনান তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল।

জেহফিল একপলক তাকালো ইনানের চোখের দিকে। ইনান বুঝতে পারল না জেহফিলের চোখের ভাষা। জেহফিল প্রলম্বিত শ্বাস ছেড়ে ড্রাইভিং শুরু করল,

‘আর দুইমিনিট লাগবে আমার বাড়ি যেতে‌। আই হ্যাভ সামথিং ইম্পর্টেন্ট দেয়ার। ওটা নিয়েই আবার সিটিতে ব্যাক করব। যদি তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তাহলে তুমি বেরিয়ে যেতে পার গাড়ি থেকে। এখানে একটা গাছের নিচে দাঁড়াও, ব্যাক করার সময় নিয়ে যাবো। অ্যান্ড ইয়েস, মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ।’

‘মশকরা করেন আমার সাথে? এইখানে কোন কচুর নিচে দাঁড়াব আমি?’

ইনান কাঁচের জানালায় হাত ঠেকিয়ে হাতের তালুতে মাথা রাখল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে, ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে আরেক হাতে লুকিয়ে রাখল। কিছু করতে আসলেই ঘ্যাচাং করে দিবে।

সন্ধ্যাও নেমে গেছে। এর মাঝেই চলে আসল জেহফিলের বাড়ি। রাস্তার সাথেই দোতলা বাড়ি। প্রথম দেখায় বাড়িটাকে দেখলে মনে হয় পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। মনে হয় না এখানে কোনো মানুষ থাকে। জঙ্গলের ভেতরে কিছু বাড়ি থাকে না? তেমন। ইনান হাতে রাখা কলম আরো শক্ত করে চেপে ধরল। জেহফিল গেটের কাছে থামিয়ে ইনানের দিকে তাকাল।

‘যদি তুমি চাও উপরে আসতে পারো।’

‘কু’ত্তায় কামড়াইছে তো আমারে।’ দাঁত কিড়মিড় করে বলল।

‘ফাইন। থাকো তাহলে।’

জেহফিল বেরিয়ে গেল গাড়ি থেকে। গেইট খুলেই কি মনে করে ইনানের কাছে আসলো আবার।

ধীর গলায় বলল, ‘ভয় পাবে না তো?’

প্রচন্ড বিরক্তির সাথে ইনান বলল, ‘আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে আসবেন?’

জেহফিল আর কোনো কথা না বলে গেট খুলে সোজা দোতলায় চলে গেল। ইনান দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে চারপাশের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করল। মোবাইলের ব্যাটারি লো, কাউকে যে মেসেজ দিবে সেই চার্জটুকুও নেই। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় শুধু সামনের রাস্তাটাই দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখতে পেল, দোতলা বাড়ির পাশেই একটা ছোট্ট পুকুর। এর আশেপাশে কোনো বাড়ির চিহ্নও দেখা গেল না। চারিদিকে অন্ধকার আর ঘন জঙ্গল। রাস্তাটা দেখে মনে হচ্ছে যেন সোজা জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে। ইনানের হাড়হিম হয়ে গেল অজানা ভয়ে। শ্বাস দ্রুত ওঠানামা করতে লাগল। বারবার মনে হলো গাড়ির পেছনের সিটে কেউ আছে। আবার মনে হলো জানালার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে আতঙ্কে ইনান হুট করেই গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল। নিচ তলায় সম্পূর্ণ অন্ধকার। দেখে মনে হচ্ছে পরিত্যক্ত গোডাউন ছিল আগে। টিমটিমে হলদে আলোর বাতি জ্বলছে মাথার উপর। দোতলা থেকে ছিটকে আসা আলোয় সিঁড়ি কিছুটা আলোকিত। ইনান দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। গোডাউনের বড় দরজাটা খোলা। তা দেখে আরো ভয় লাগছে ইনানের। তবে গাড়ি থেকে কিছুটা কম। বুকে হাত দিয়ে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে হঠাৎ টের পেল তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল শিড়দাঁড়া বেয়ে। শুকনো ঢোক গিলল। হাত পা অবশ হতে লাগল ধীরে ধীরে। পেছনে ফেরার মতো সাহস তার অবশিষ্ট নেই। তাও, বহুকষ্টে, সাহস সঞ্চয় করে পেছন ফিরে তাকাতেই পিলে চমকালো তার। জেহফিল খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে। হলদে আলোয় জেহফিলের ধূসর চোখ আর ঘাড় কাত করে রাখা কঠোর চোয়াল কেমন ভয়ানক লাগছিল ইনানের কাছে। যেমনটা হয় হরর মুভিতে ভূত দেখলে। ইনান টের পেল তার চারপাশ কেমন তমসাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল জেহফিলের ভয়ংকর মুখশ্রী। ঝাপসা চোখে দেখল দুটো হাত তাকে শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করেছে…দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল ইনানের। অন্ধকার অতলে হারিয়ে যেতে লাগল সে…ধীরে ধীরে..

.
.
চলবে…

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩ [অতিরিক্ত]
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

.
.
প্লাস্টিকের খসখসানো আওয়াজে ইনান মৃদু নড়ে উঠে। অচেতন দেহ চেতনা ফিরে পায়। চোখ খোলার চেষ্টা করে, পারে না। চোখ সয়ে আসলে চোখ খুলে ইনান। চারিদিক অন্ধকার। রুমের মাঝখানে একটা মোমবাতির হালকা আলোর ছটায় রুমটা সামান্য আলোকিত। বাহির থেকে এখনো প্রবল বেগে ছুটে চলা বাতাসের শো শো আওয়াজ শোনা যায়।
চোখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে সে কোথায়!

‘গুড মর্নিং বাটারফ্লাই!’

এক পুরুষের কণ্ঠ কানে এসে লাগে তার.. বুঝতে পারল না কণ্ঠটি কী বলল তাকে। ভারী কণ্ঠের মানুষটিকে খুঁজতে গিয়ে চোখ পড়ে ডিভানে বসে থাকা জেহফিলকে। হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়ে ইনান। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। জামাকাপড় সবই ঠিকঠাক। মোমের আলোয় যতটুকু দেখছে তাতে মনে হচ্ছে এটা কোনো বেডরুম। ইনান মনে করার চেষ্টা করল কী হয়েছিল তার সাথে। গাড়ি থেকে বের হয়ে নিচ তলায় এসেছিল, তারপর পেছনে জেহফিলকে দেখল…জেহফিলের তখনকার রূপ মনে পড়তেই গা শিউরে ওঠে ইনানের। চকিতে তাকায় জেহফিলের দিকে। জেহফিল কতগুলো বড়‌ বড় ক্যানভাস প্যাক করছিল। দেখে মনে হয় কোনো আর্ট করা ক্যানভাস।

‘আমি কোথায়?’ ভয়াতুর গলায় বলল ইনান।

হাতের কাজ শেষ করে জেহফিল তাকায় ইনানের দিকে। ইনান আরো চমকে উঠে। তখনকার রূপের সাথে এখনকার জেহফিলের কোনো মিল নেই! প্রথমদিন জেহফিলকে যতটা কোমল দেখেছিল এখনও ঠিক তেমন।

‘আমার রুমে। তুমি হঠাৎ জ্ঞান হারালে আমাকে দেখে অ্যাজ ইফ তুমি ঘোস্ট দেখেছ।’ জেহফিল শ্রাগ করে বলল।

‘ক’টা বাজে?’ ক্লান্ত গলায় বলল ইনান।

‘সাড়ে আটটা।’

‘কীহ।’ ইনান প্রায় লাফিয়ে উঠল। ব্যস্ত হয়ে মোবাইল খুঁজতে লাগল। জেহফিল ইনানের দিকে তাকিয়েই ছিল। সে যেন বুঝল ইনান কী খুঁজছে। পকেট থেকে ইনানের মোবাইল বের করে দিলো সে। ফোন হাতে পেয়েই হতাশ হলো ইনান। সে তো ভুলেই গিয়েছিল মোবাইল বন্ধ।

অস্থির হয়ে জেহফিলকে তাড়া দিলো, ‘আপনার কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলুন। বাবা চিন্তা করছে অনেক।’

জেহফিল ইনানের দিকে মোহাবিষ্টের ন্যায় চেয়ে ছিল‌। হলদে ক্ষীণ আলোয় পিঠ সমান চুলের মিষ্টি ইনানকে শুভ্র পরীর মতো লাগছিল। তার চির আঁধার জগৎ এবং মনে যেন এক হুরপরী পথ হারিয়ে ঢুকে পড়েছে।

ইনান রুম থেকে বের হতে নিলেই হাতে টান পড়ে। কপাল কুঁচকে পেছনে হাতের মালিকের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়।

ঝাড়ি মেরে হাত সরায় ইনান, ‘হাত ধরেছেন কেন?’

‘অন্ধকারে পড়ে যাবে তাই ধরেছি। রুমের অবস্থা ভালো নয়। অন্যকিছু ভাবার কারণ নেই।’

তাচ্ছিল্য করে বলল জেহফিল। ফ্ল্যাশ অন করে মোমবাতি অফ করে দিলো। হাতে প্যাক করা ব্যাগগুলো নিয়ে রুম থেকে বের হলো সে। পেছনে থাকা ইনান ঘরের অবস্থা খেয়াল করল অবাক চোখে। চেয়ার টেবিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রুমটায়, ল্যাম্প, ওয়ালমেট সব এলোমেলো ভাবে ফ্লোরে পড়ে আছে। দেখে মনে হয় না এখানে আদৌ কোনো মানুষ থাকতে পারে!

‘এটা কি সত্যিই আপনার বাসা?’ কণ্ঠে বিস্ময় তার!

জেহফিল ছোট করে জবাব দেয়, ‘হু।’

‘ঘরে কি আর কেউ থাকে না? আপনার বাবা মা কোথায়?’

এক মুহুর্ত চুপ থেকে অপরপক্ষ থেকে জবাব আসে,’নেই।’

ইনান বুঝতে পারল না জেহফিলের জবাবটা। জেহফিলের কি বাবা মা নেই নাকি এখানে তারা কেউ থাকে না; কোন প্রশ্নের জবাবে সে নেই বলল ইনান বুঝতে পারল না। তবে আর ঘাটলোও না সে। জেহফিলকে নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। আপাতত তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাবাকে নিয়ে। টেনশনে আবার প্রেশার লো হয়ে যায় ইফাজ সাহেবের!

জেহফিল খুব সাবধানে আসবাবপত্র সরিয়ে ইনানের জন্য জায়গা করে দিলো ও সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আর বারবার লাইট তার দিকে দিয়ে বলতে লাগল, ‘সাবধানে..ধীরে.. সাবধানে পা ফেলো.. আস্তে..’

ইনানের কাছে মনে হলো জেহফিল যেন একটা বাচ্চাকে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছে। সে জোর করে হেসে বলল, ‘আপনি নিজের দিকে লাইট মারেন তো। আমাকে সাবধান সাবধান বলতে গিয়ে নিজেই চিটপটাং হয়ে যাবেন…’

বাতাসের সাথে এক প্রকার পাঞ্জা লড়েই গাড়িতে উঠতে হয়েছে ইনানকে। এত বাতাস ছিল মনে হচ্ছিল তাকে উড়িয়েই নিয়ে যাবে! ভাগ্যিস জেহফিল ছিল! জেহফিলের শার্ট খামচে ধরে নিজেকে বাঁচিয়েছে সে।

গাড়ি চলতে আরম্ভ করলে ইনান দ্বিধাগ্রস্ত চোখে তাকায় জেহফিলের দিকে। জেহফিল ইনানের দিকে না চেয়েই বলে,

‘হোয়াট?’

‘আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন প্লিজ? বাবাকে কল দিবো একটা।’

‘কল দিয়ে কী বলবে?’

‘আজব! কী বলব মানে কী? বাবা টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে, ওনাকে একবার জানাবো না আমি ঠিক আছি!’

‘বাড়িতে তো পৌঁছে দিচ্ছিই। গেলেই তো দেখতে পাবে।’

‘মোবাইল দিবেন না সেটা বলতে পারেন না…’

ইনানের কথা শেষ হতে না হতেই জেহফিল মোবাইল এগিয়ে দেয়, ‘বেশি কথা আমি পছন্দ করি না।’

মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় ইনান, ‘কথা আপনিই বাড়িয়েছেন।’

ইফাজ খানকে ফোন দিয়ে পেল না ইনান। মূলত নেটওয়ার্কই পাচ্ছিল না সে। হতাশ হয়ে মোবাইল ফেরত দিয়ে দিলো। কপালে হাত ঠেকিয়ে বাহিরে দৃষ্টিপাত করল। অন্যসময় হলে এই ভারী বর্ষণ উপভোগ করত সে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা।

পেছনের সিটে বড় বড় ক্যানভাসগুলো দেখে ইনান বলল, ‘আপনি কি একজন আর্টিস্ট?’

‘হু’

‘জানতাম! আপনার আর্ট দেখেই বুঝেছি। এগুলো কি ডেলিভারী দিতে যাচ্ছেন? সেল করেন?’

‘না, এক্সিবিশনের জন্য করা এগুলো, সেখানেই যাবে‌।’

‘বাহ! এগুলোর জন্যই এত তাড়া ছিল বাড়িতে আসার?’

‘হু’

‘আচ্ছা’

আবারও পিনপতন নীরবতা নেমে এলো গাড়িতে। সাথে রাস্তাটাও এত নির্জন! মনে হচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে কোথাও এই জায়গা‌। একটা গাড়িরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না‌। না আছে রাস্তার মাঝে কোনো স্ট্রিট লাইট। বড় বড় গাছগুলো মাথা উপরে এমনভাবে ঢেকে আছে যে দিনের বেলাতেও মনে হয় আকাশ দেখা যায় না। জঙ্গল পার হয়ে এবার মেইন রাস্তায় ঢুকেছে গাড়ি‌। পরিচিত রাস্তায় এসে এবার কিছুটা হালকা লাগছে ইনানের।

নীরবতাকে ভেঙে দিয়ে জেহফিল হঠাৎ বলে উঠল, ‘ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।’

আচানক জেহফিলের গলায় এই কথা শুনে ফিরে তাকায় ইনান।‌

‘এক্সকিউজ মি?’

রাস্তায় চোখ রেখেই জেহফিল বলল, ‘বন্ধু নির্বাচনে তুমি যথেষ্ট অসচেতন। যার সাথেই মিশবে খোঁজ নিয়েই মিশবে।’

‘আপনি আমার ফ্রেন্ড সম্পর্কে কীভাবে জানেন? আর আপনি এসব বলার কে?’

কেমন অন্যরকম গলায় জেহফিল বলল, ‘মানুষ আজকালকার বড় খারাপ। ভালো মানুষীর আড়ালে থাকা তার বিভৎস রূপটা আমাদের নজর এড়িয়ে যায় সবসময়।’

‘আপনি কি প্লিজ ডিরেক্টলি বলবেন আসলে কী বলতে চাচ্ছেন?’

‘নাথিং। জাস্ট ওয়ার্ন করলাম যাকে তাকেই বিশ্বাস না করতে। কয়েকদিনের পরিচয়টাই মানুষের সব না। সারাজীবন একসাথে থেকেও তো মানুষকে চেনা যায় না সেখানে তো মাত্র কয়েকটা দিন!’

‘আপনি বলতে চাচ্ছেন আমার ছেলে ফ্রেন্ডরা খারাপ?’

জেহফিল জবাব দিলো না। ইনান কথা চালিয়ে গেল, ‘আপনিই তো বললেন কয়েকদিনের পরিচয়ে কাউকে বিশ্বাস না করতে। আপনার সাথে কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে আপনাকে কোন কথায় বিশ্বাস করব আমি? আপনি যে আমার ফ্রেন্ড সম্পর্কে মিথ্যা বলছেন না তার কী গ্যারান্টি?’

‘তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই যে আমি তোমার খারাপ চাইব। শুধু এটুকুই জেনে রাখো, মানুষ তোমাকে যেই রূপ দেখায় সেটা সবসময় সত্য হয় না।’

ইনান চুপ করে রইল। ভাবতে লাগল তার ফ্রেন্ডদের কথা। কই? তাদের মাঝে তো নেগেটিভিটির কিছুই দেখল না। জেহফিল হঠাৎ কেন এই ধরনের সতর্ক দিচ্ছে তাকে?

.
.

ইনানের বাড়ির সামনে জেহফিল গাড়ি থামাল। ততক্ষণে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমেছে।‌ গাড়ি থেকে নামার সময় ইনান বলল,

‘যাই হোক, অনেক মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমিই বেশি সীন ক্রিয়েট করে ফেলেছিলাম বোধহয়। আজেবাজে কথাও অনেক বলেছি। তার জন্য সত্যিই সরি। কিছু মনে নিবেন না প্লিজ।’ স্মিত হেসে বলল ইনান।

জেহফিল ইনানের ঠোঁটের দিকে একবার চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

‘আর ধন্যবাদ।’ ইনান গাড়ি থেকে নেমে গেল।

‘ওয়েলকাম।’ মৃদু কন্ঠে বলল জেহফিল, ইনানের দিকে না তাকিয়েই।

জেহফিলকে বায় বলে বাসায় ঢুকে পড়ল ইনান। একটাবার পেছন ফিরলে দেখতে পেত, এক জোড়া চোখের প্রমত্ত চেয়ে থাকা নিষ্পলক দৃষ্টি..

.

.

ইনানের বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছেন।

কান্নারত গলায় বললেন, ‘কোথায় ছিলে আম্মু আমার? এত দেরি করে কেউ বাড়ি ফিরে? বাবাকে একবার ইনফর্ম করা উচিত ছিল না? কত খুঁজেছি তোমাকে জানো? ভার্সিটি গেলাম, তোমার সবগুলা ফ্রেন্ডের বাসায় খোঁজ নিলাম, সবগুলা রেস্টুরেন্টে খুঁজলাম, কোথায় ছিলে মা?’

ইনানের মন খারাপ হয়ে গেল বাবার কান্না দেখে। বাবাকে শান্তনা দিলো, ‘মোবাইলটার চার্জ ছিল না বাবা, আমি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথেই ছিলাম, এত বৃষ্টি ছিল যে ও গাড়িও চালাতে পারেনি ঠিকমত। এইজন্যই আমরা কোথাও বসে ওয়েট করছিলাম বৃষ্টি থামার।’ খুব সাবধানে বলল সে, পাছে ধরা পড়ে যায়।

পলকের কণ্ঠ শোনা গেল এর মাঝে, ‘তাই বলে ফ্রেন্ডের মোবাইল দিয়ে কল দেয়া যাচ্ছিল না?’

ইনান পাশে থাকা পলকের দিকে আড়চোখে তাকায়।পলক রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল ইনানের দিকে। চোখ দুটো তার টকটকে লাল। যেন ইফাজ সাহেব সামনে থাকায় রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে চাইছে না।

ইনান কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলল, ‘দিয়েছিলাম, নেট পাইনি।’

‘ছেলে না মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো?’

‘মেয়ে, চিনবেন না আপনি, স্কুলের এক ফ্রেন্ড।’ ঢোক গিলে ইনান। মিথ্যা বলতে গিয়ে তার গলা বারবার কেঁপে উঠছে।

পলক আরো কিছু বলতে চেয়েও বলল না‌। রাগে ফোঁস ফোঁস করছে সে। মেয়েটা জানে না আজ তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পলকের মাথা যে কতটা খারাপ হয়ে গেছিল! এই বৃষ্টির মধ্যেও পাগলের মতো খুঁজেছিল ইনানকে। দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রতিটা মুহুর্তে এই ভেবে ইনানের কোনো খারাপ কিছু হলো না তো!

ইনান বাবাকে অনেক শান্তনা দিয়ে টিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। পলক তখনো সোফায় বসেছিল। তার পুলিশের পোশাক চুপচুপে ভেজা‌। ইনান একটা তোয়ালে নিয়ে পলকের নিকট বাড়িয়ে দিলো। পলক তোয়ালেটা নিলো না। সারাদিন দুষ্টুমি করা মানুষটা হঠাৎ রেগে গেলে প্রলয়ের মতো লাগে। পলককেও তেমন লাগছিল।

পলক সোফা থেকে উঠে ইনানের দুই বাহু ধরতে গিয়েও ধরল না। অনধিকার চর্চা তার মানায় না। একহাতে মাথার চুল টেনে নিজেকে শান্ত করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘এতটা টেনশনে না ফেললেও চলতো। স্যার তোমার জন্য কত চিন্তা করে জানো ইনান? আজ তো কথা ছিল স্যারের সাথে নিউ রেস্টুরেন্টে যাবে। সে জন্য স্যার কত তাড়াহুড়ো করে কাজ সেরে বাড়িতে এসেছিল! তারপর বিকেল হয়ে যাওয়ার পরও তুমি এলে না, সন্ধ্যার টাইমে স্যার আমাকে কল করল, উনি এতো টেন্সড ছিল!!’

একটু থামল পলক, ‘ইনান, তুমি এখন আর ছোটো নেই। স্যারেরও বয়স হচ্ছে। পুলিশের চাকরিতে কত প্যারা জানোই তো! তার উপর তোমার টেনশন! একটু নিজে দায়িত্ব নিয়ে চলতে শেখো ইনান। বুদ্ধি খাটাও এই ধরনের পরিস্থিতিতে।’

ইনান চুপ করে রইল। তার নিজের এখন খুব খারাপ লাগছে।‌ এমন তো না যে তার দোষ আছে। কিন্তু সে যেই মিথ্যেটা বানিয়েছে তাতে তার দোষই বেশি। তাই পাল্টা কোনো কথা বলতে পারল না ইনান।

‘আসি। নেক্সট টাইম, বি কেয়ারফুল।’

ইনান রুমে চলে আসলো। খাটের এই মাথা হতে
ঐ মাথা গড়াগড়ি খেতে লাগল অনুশোচনায়। বাবা কত‌ কষ্ট পেয়েছে! কত চিন্তা করে তার জন্য! আর সে কিনা উল্টো বাবার উপর টেনশন চাপিয়ে দিচ্ছে?ধুর!

ইনান উঠে বসল। কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। তখন তার নজরে গেল রুমের কোণায় রাখা কার্টুনটার দিকে। সেদিন কার্টুন অর্ধেক খুলে রেখে দিয়েছিল। ইনান উঠে গিয়ে কেঁচি নিয়ে বসল আবার। স্কচটেপ কেটে কার্টুন খুলতেই সে কিছুটা দুরে ছিটকে পড়ল হঠাৎ। কার্টুনের মধ্যে একটা দুই ফিটের টেডি রাখা। তবে ইনানের ভয় পাওয়ার কারণ হলো টেডির রংটা কুচকুচে কালো, তাই হঠাৎ আঁতকে উঠেছিল। সাধারণত কোনো টেডিবিয়ারই এমন কালো হয় না। ইনান ভালো করে খেয়াল করে দেখল ব্ল্যাক কালার স্প্রে দিয়ে পুতুল কালো করে দেয়া হয়েছে। পুতুলটা ধরতে গিয়ে পেটের দিকের বোতামটায় চাপ লাগে অদ্ভুত আওয়াজে হেসে উঠে টেডিটা, কেমন ভৌতিক হাসির আওয়াজ। কে পাঠিয়েছে এমন বিদঘুটে গিফট! কেউ নিশ্চয়ই তার সাথে মশকরা করেছে!ইনান টেডিটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে অদূরে ছুঁড়ে মারল সে। যেই জিনিস তাকে ভয় পাওয়ায় সেটা এভাবেই ছুঁড়ে মারবে সে। খট করে বারান্দার দরজা আটকে দিলো ইনান।

বৃষ্টিতে কালো রং ধুয়ে মুছে টেডির আসল রং বেরিয়ে আসল। কিছু অংশ কালো, কিছু অংশ ব্রাউন। অন্ধাকারে একজোড়া ভেজা হাত এসে পুতুলটাকে উঠিয়ে নেয়। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় পুতুলটাকে সুক্ষ্ম চোখে পরখ করে এক হাত দিয়ে পুতুলের গায়ে লেগে থাকা কালো রং ছড়িয়ে দিতে থাকে পুতুলের গায়ে। বাদামি ও কালোর মিশ্রণে বিভৎস দেখায় পুতুলটাকে। পুতুল হাতে তাকায় দোতলার বন্ধ বারান্দার দিকে। তারপর পুতুলটার পেটের সুইচটা টিপে দেয়। আবারও অদ্ভুত.. ভয়ংকরভাবে হেসে উঠে পুতুলটা…হাড়হিম করা হাসি…

.
.
চলবে…