রোদরঞ্জন পর্ব-৬+৭

0
177

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

ইনানের ঘুম ভাঙল সকাল সাড়ে নয়টায়। আকাশের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। গুড়িঁগুড়িঁ বৃষ্টি পড়ছে, বাতাসও নেই তেমন। আড়মোড়া ভেঙে খাটে হেলান দিয়ে বসল সে। ঘুম এখনো কাটছে না তার, ইচ্ছে করছে পড়ে পড়ে আরও ঘুমাতে। কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে এমনিতেই ম্যাজম্যাজ করছে শরীর। ইনান বড় করে হাই তুলল। সময় নিয়ে রেশমের মতো চুলগুলোকে রাবারের বাঁধনে জড়িয়ে দিলো।

ডান পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করল।‌ বাম পা উপরে তুলে খাট ধরে ধরে ডান পা দিয়ে লাফিয়ে হাঁটার চেষ্টা করল। কিছুটা সফল হলো। দরজা খুলতেই রুমের অবস্থা ঠিক উল্টো দেখতে পেল। সেদিন রুমের সব আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো ছিল। দেয়ালে জুলানো পোর্ট্রেটটা তখন অবহেলায় পড়ে ছিল ফ্লোরে। অথচ এখন কী যত্নসহকারে সবগুলো জিনিস জায়গামতো রাখা। রুমে চোখ বুলাতে বুলাতে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে নজর আটকালো তার। ডাইনিং রুমের সাথে লাগোয়া মিনি ছাদে বেতের চেয়ারে জেহফিল বসে আছে। তার সামনে ক্যানভাস আর রং তুলি। হালকা বাতাসে মসৃণ চুলগুলো খেলা করছে কপালের উপর। নিচের ঠোঁট কামড়ে গভীর মনোযোগে পেইন্টিং করছে। তাকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে চশমার কারণে। ভারী ফ্রেমের চশমার আড়ালে থাকা ধূসর চোখ আলোতে ঝিকমিক করছে। এ যেন গ্রীক গড! যেন অপার্থিব সৌন্দর্যের সহিত এই শ্যামবরণ পুরুষটিকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে।

জেহফিলের অবচেতন মস্তিষ্ক ইনানের উপস্থিতি টের পেল চট করেই। ঝট করে ইনানের দিকে চায় সে। ইনান তখন ড্যাবড্যাব করে জেহফিলের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। অকস্মাৎ জেহফিলের চোখে চোখ পড়ায় ইনান চোখ নামিয়ে নেয় লজ্জায়। মুখ লুকাতে এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করে। জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসে।

‘এর চেয়েও বেশি লজ্জা যে তোমাকে পেতে হবে বাটারফ্লাই।’ ফিসফিস করে বলে সে।

হাতের কাজ রেখে উঠে‌ আসে ইনানের কাছে। ইনান তখনও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।

‘এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল?’

ইনান ভেবেছে জেহফিল তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে কথাটা বলেছে। তাই লজ্জায় মরিমরি হয়ে জবাব দেয়,

‘আমি সচরাচর এত দেরি করে ঘুম থেকে উঠি না। বোধহয় ঔষধের ইফেক্ট।’

জেহফিল খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলল, ‘তোমার আরও ঘুমানো উচিত ছিলো এঞ্জেল। অ্যাটলিস্ট এগারোটা পর্যন্ত।’

‘সরি? কী নামে ডাকলেন আপনি আমাকে?’ ইনানের কন্ঠে বিস্ময়।

‘এঞ্জেল। ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম উইথ দিস নেইম?’

জেহফিলের এমন ভাবলেশহীন জবাব ইনানের পছন্দ হয় না। দুদিনের পরিচয়ে একটা ছেলে তাকে এই ধরনের ক্লোজ নামে ডাকবে তা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। সে কঠিন গলায় বলল,

‘সরি, বাট আপনি আমাকে এই নামে ডাকতে পারেন না। আমরা ততটাও পরিচিত নই।’

জেহফিল ইনানের চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে ইনানের দিকে ঝুঁকে বলে,

‘ইউ নো হোয়াট?’ ইনানের সামনের চুলগুলোতে ফু দেয় জেহফিল। ক্ষীণ কণ্ঠে বলে, ‘ইউ আর সো ড্যাম প্রীটি! অ্যাবসোলুটলি অ্যান এঞ্জেল। আই হ্যাভ নেভার সীন সাচ আ গর্জাস গার্ল লাইক ইউ বিফোর। হোয়াই সো প্রীটি?’

ইনানের দম বন্ধ হয়ে আসে জেহফিলের এত কাছে আসাতে। তার উপর এসব কথাগুলো কেমন অসঙ্গত লাগছে তার কাছে। ইনানের একদমই ভালো লাগছে না এসব। দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। জেহফিলের চোখের দৃষ্টিও কেমন অন্যরকম। ইনান আড়ষ্ট হয়ে মাথা পিছু নেয়। এক হাত দিয়ে জেহফিলের বুকে জোরে ধাক্কা দেয়।

‘আমি বাড়ি যাবো।’

‘এত তাড়াতাড়ি না।’ জেহফিল আরো এগিয়ে আসে।

‘প্লিজ জেহফিল, আমি বাড়ি যাবো।’ ইনান শঙ্কিত গলায় বলল।

জেহফিল হঠাৎ হেসে ওঠে সজোরে। ইনানের শরীরে কাটা দেয় অজানা আশঙ্কায়। জেহফিলকে স্বাভাবিক লাগছে না। ইনানের মনটা কেমন কু ডাকছে। জানে না কেন!

জেহফিল হাসি থামিয়ে ইনানের কপালে জমে থাকা ঘাম এক আঙুলে নেয়, ইনানের দিকে টোকা মেরে ঘাড় কাত করে বলল,’এত ভয় পাচ্ছ কেন বাটারফ্লাই? আমি কী বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তোমাকে খেয়ে ফেলব?’

ইনান ঠোঁট চেপে ধরে চুপ থাকে। জেহফিল সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, ‘ইউ আর সিক, রেস্ট নেয়া প্রয়োজন তোমার। রুমে ফিরে যাও। খাবার নিয়ে আসছি।’

ইনান রুমে গেল না। পা টেনে টেনে ড্রয়িং রুমের নরম সোফায় বসল। সে আর কিছুতেই রুমে যাবে না। জেহফিলকে ভালো ঠেকছে না। যদি রুমে আটকিয়ে রাখে? এখন তো তাকে প্রটেস্ট করার মতো শক্তি নেই ইনানের। এই সুযোগের যদি কাজে লাগায়?

জেহফিল ব্রেকফাস্ট এর প্লেট টেবিলের উপরে এনে রাখল। ইনানের পাশ ঘেঁষে নিজেও বসল।

‘প্লিজ, দূরে।’

জেহফিল পাত্তাই দিলো না ইনানকে। নিজ হাতে রুটি ছিঁড়ে ইনানের মুখের সামনে ধরলো।

‘আমি পারবো।’

জেহফিল শান্ত চোখে তাকালো। শীতল গলায় বলল, ‘হা করো বাটারফ্লাই।’

ইনান মুখ বন্ধ করেই রইল। জেহফিল আবার বলল, ‘হা করো সোনা।’

ইনানের কান্না পেয়ে গেল। নিজেকে কেমন অসহায় লাগতে লাগল তার। জেহফিল হঠাৎ এমন আচরণ কেন করছে? কাল অবধি ও তো ঠিক ছিল। আজ হঠাৎ এত চেঞ্জ হলো কিভাবে? ভেবে পেল না ইনান। ইনানকে হা করতে না দেখে জেহফিল হঠাৎ ধমকে উঠলো, ‘মুখ খুলতে বলেছি তোমাকে!’

জেহফিলের ধমকে ইনান কেঁপে উঠলো। হাত পা কাঁপতে লাগলো থরথর করে। বুঝতে পারল সে পাগলের খপ্পরে পড়েছে আর তাকে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। এমন নির্জন নীরব একটা বাসার মধ্যে জেহফিলের সাথে থাকা ঠিক হয়নি তার। জেহফিল যদি বাজে কিছু ঘটায়? যেহেতু তার শরীর ঠিক অবস্থায় নেই সেহেতু তাকে বুদ্ধি খাটিয়ে এখান থেকে বের হতে হবে। তাই জেহফিল যা বলে তাই করলো।

জেহফিল মুচকি হাসলো, ‘দ্যাটস মাই গার্ল।’

খাওয়ার মাঝে ইনান সতর্ক ভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘ডু ইউ লাইক মি জেহফিল?’

‘না।’ তৎক্ষণাৎ জবাব জেহফিলের।

ইনান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। জেহফিল ইনানের চোখে চোখ রাখল, ‘আই ডোন্ট লাইক ইউ। আই লাভ ইউ।’

বিদ্যুতের মত চমকে উঠল ইনান। সে কি ঠিক শুনেছে? জেহফিল সত্যি…? কিভাবে সম্ভব? তাদের পরিচয় মাত্র কিছু দিনের। তাদের ভালো করে কথাবার্তাও হয়নি। এর মধ্যে কিভাবে তার প্রেমে পড়তে পারে জেহফিল? ইনান ঢোক গিলল।

‘আর ইউ সিরিয়াস?’

সাথে সাথে জবাব দেয় জেহফিল, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট।’

একটু থেমে উদগ্রীব হয়ে বলল, ‘আমি ভণিতা করতে জানিনা বাটারফ্লাই। আমি আমার অনুভূতি নিয়ে শিওর, হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমাকে লাইক করি,বাট ইট টার্নস আউট দ্যাট আই লাভ ইউ। তাই সরাসরিই বলছি, আই লাভ ইউ বাটারফ্লাই।’

‘কিন্তু আমাদের পরিচয় মাত্র অল্প কয়েকদিনের।’

‘সো হোয়াট? প্রেমে পড়তে দুই সেকেন্ডও সময় লাগে না, কয়েকদিন তো আরো বেশি। আই ডোন্ট নো হাউ টু সে, বাট…বাট ইউ আর মাইন..ইউ আর অনলি মাইন। আই অ্যাম অবসেসড অ্যাবাউট ইউ মাই বাটারফ্লাই!’ জেহফিল ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে বলল।

ইনান কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যেহেতু সে এখন জেহফিলের বাসায় আছে, তাই জেহফিলকে সরাসরি রিজেক্ট করা উচিত হবে না।

‘তুমি কি আমাকে পছন্দ করো না বাটারফ্লাই?’

ইনান চুপ করে রইল। সে অস্বীকার করতে পারবে না যে জেহফিল আসলেই মারাত্মক সুদর্শন, এবং সে নিজেও এই সুন্দরের উপর মোহিত হয়ে পড়েছিল। তবে এটা স্বাভাবিক। সুন্দরের প্রতি কে না আকৃষ্ট হয়? তাই বলে তো আর সে জেহফিলকে ভালোবাসেনি তাই না? রাস্তাঘাতে সুন্দর সুন্দর ছেলেদের দেখলে মুখ থেকে আপনাআপনি প্রশংসামূলক বাক্য বেরিয়ে আসে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্রাশও খায়, তাই বলে কি সবাইকে সে ভালোবেসেছে নাকি? জেহফিলও তেমন একজন।

‘আন্সার মি।’

‘জেহফিল। আমার সময় দরকার। আমি আপাতত এসব ভাবার অবস্থায় নেই ইউ নো। সুস্থ হই আগে? ভার্সিটিতে তো দেখা হবেই। তারপর আলোচনা করি?’ জোর করে হাসার চেষ্টা করল ইনান।

‘কিসের আলোচনা? এখানে তো কোনো আলোচনার কথা আসছে না। আই লাভ ইউ এবং এটাই শেষ কথা।’ জেহফিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই বাটারফ্লাই। তুমি হ্যাঁ বলো কিংবা না, ডাজন্ট ম্যাটার। তোমাকে আমি যেকোনো মূল্যেই নিজের করব।’

ইনান ভয় পেয়ে গেল। এভাবে কেউ প্রপোজ করে? জেহফিল অনেক দূর চলে গেছে। একেবারে বিয়ে পর্যন্ত। জেহফিলকে অপ্রকৃতিস্থ লাগছে। সে জেনেশুনে কেন এমন সাইকোকে বিয়ে করবে?

‘জ.. জেহফিল, বিয়েটা ছেলেখেলা নয়। আমার ফ্যামিলি আছে, তাদের সিদ্ধান্তের উপর এসব নির্ভর করে।’

হিম শীতল কণ্ঠ জেহফিলের, ‘সো তুমি বলছো তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবেনা?’

‘না।’ ইনানের জবাবে অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে তাকাল জেহফিল। তা দেখে ইনান আতঙ্কিত হলো কিছুটা। জেহফিলের এমন দৃষ্টির সাথে সে পরিচিত নয়। আমতা আমতা করে বলল, ‘না মানে…‌বলছি বাবার সাথে তো কথা বলা লাগবে এসব ব্যাপারে তাই না? যেহেতু তিনিই আমার একমাত্র গার্ডিয়েন। আপনি বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান। যদি নিজেকে যোগ্য করে প্রেজেন্ট করতে পারেন তাহলে তো সমস্যা দেখছি না।’ ইনান থেমে থেমে বলল, জেহফিলকে শান্ত করতে।

জেহফিল চিবুকে হাত রেখে ভাবতে লাগল, ‘রাইট, আমার শ্বশুরকে অবশ্যই ইমপ্রেস করতে হবে.. তবে তার আগে…।’ ইনানের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসলো।

‘তার আগে কী?’

‘জানতে পারবে, শীঘ্রই। এখন গুড গার্লের মতো রুমে চলো।’

চকিতে বলল ইনান, ‘কেন?’

‘রিল্যাক্স। আমার উদ্দেশ্য বাজে না। তুমি রেস্ট নিবে সেইজন্য বলছি।’ ইনানের মুখের কাছে এসে কানের পেছনে চুল গুজিয়ে বলল, ‘তুমি কি নটি চিন্তা করছিলে বেবিগার্ল?’

‘এসব নামে ডাকবেন না, অস্বস্তি লাগে।’

‘আই ডোন্ট কেয়ার।’

ইনান ভাবতে লাগল কী অযুহাতে এখান থেকে বের হওয়া যায়। তাই বলল, ‘দুপুর ১২ টার মধ্যে ডিবেট ক্লাবে আর্জেন্ট উপস্থিত থাকতে হবে আমার।’

জেহফিল বাঁকা হাসে, ‘তুমিতো ডিবেট ক্লাবে নামই লেখাওনি।’

ঈমান আবারও চমকে ওঠে। জেহফিল কিভাবে জানল? জেহফিল ইনানের কাছে এগিয়ে আসে আবার। ফিসফিস করে বলল,

‘ভাবছো, কিভাবে জানলাম?’

‘আপনি…আপনি..’

‘ইয়াপ, তোমাকে স্টক করছিলাম।’
এই বলে ইনানকে আচমকা কোলে তুলে নিলো।

ইনান চেঁচিয়ে উঠে, ‘হোয়াট দ্য হেল জেহফিল!! ডোন্ট টাচ মি উইদাউট পারমিশন।’

জেহফিল কঠিন চোখে তাকায়, ‘তোমাকে টাচ করার জন্য আমার কোনো পারমিশন লাগবে না বাটারফ্লাই। আমার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা তোমাকে টাচ করব। বাঁধা দিতে আসবে না একদম। তাহলে এর চেয়েও খারাপ জেহফিলকে দেখবে। অ্যান্ড আই মিন ইট।’

ইনানকে রুমে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো। ইনানের গালে হাত রেখে বলল, ‘চুপচাপ বসে থাকো। আমি এক্ষুনি আসছি।’

জেহফিল চলে যেতেই ইনান হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল। কী ঘটে গেল একদিনে? সে তো এমনটা চায়নি! জেহফিল বলল সে তাকে স্টক করছিল! তার মানে জেহফিল আগে থেকেই এসব ভেবে রেখেছে? আর জেহফিল যে এভাবে হুট করেই কনফেস করবে ভাবতে পারেনি ইনান। জেহফিলের প্রতি তো ইনানের কোনো ফিলিংস নেই। তাহলে সে কীভাবে জেহফিলকে ভালোবাসবে? আর জেহফিলের আচরণ গত কয়েকদিনে যতটা নম্র মনে হয়েছিল আজকে পুরোই উল্টো। একজন স্টকার! অ্যাগ্রেসিভ! এটাই তো জেহফিলের আসল রং। এই ধরনের ডমিনেটিং মানুষের সাথে সংসার করা তো দূর; ভালোবাসা-ই তো অসম্ভব। যদি জেহফিল নরমাল কোনো ছেলে হতো আর তাকে সুন্দরভাবে প্রপোজ করতো তাহলে বিষয়টা ভেবে দেখা যেত। তবে জেহফিলের বলার ধরণ কিংবা আচরণ কোনোটাই মনঃপুত হয়নি ইনানের।

ইনান চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। আগে প্রয়োজন এখান থেকে বের হওয়া। বাড়িতে গেলে বাবাকে সব বলবে। তার বাবা পুলিশের এস পি। বাবা-ই পরে সামলে নেবে ব্যাপারটা। বাবাকে দিয়ে ধোলাই দেওয়াবে এই পাগলকে। আসলেই তো! বাবা থাকতে এত চিন্তা কিসের?

ইনান টেনশন মুক্ত হলো কিছুটা। এখন জেহফিলের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বাড়ি যেতে হবে। তারপর সে জেহফিলকে দেখে নিবে, দরকার হলে মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে জেহফিলকে জেলে ভরবে।

‘বাটারফ্লাই!’

জেহফিল হাসিমুখে ইনানের কাছে আসলো। জেহফিলের এমন গিরগিটির মতো চেহারা বদলানো ইনানকে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

দেড়ফুটের একটা ক্যানভাস ইনানের চোখের সামনে ধরল জেহফিল।

‘হাউ ইজ ইট?’

ক্যানভাসে ইনানের চেহারা আঁকা। চোখ বন্ধ করে হাসছে ইনান। কানে রোদরঞ্জন ফুল। হতচকিত নয়নে চেয়ে রইল ইনান। কখন আঁকল, এত নিখুঁত! মনে হয় যেন মন প্রাণ ঢেলে এঁকেছে প্রতিটা অংশ। সত্যি বলতে কী, জেহফিলের পেইন্টিংএ ইনান কিছুটা ইমপ্রেস হলো। তার মুখের হাবভাবে তা ফুটে উঠল।

‘এটা তোমার জন্য। ভালোবাসার প্রথম উপহার।’

ইনান ভালোবাসা হিসেবে গিফ্ট গ্রহণ করল না, বরং তার এত সুন্দর পোট্রের্ট দেখে লোভ সামলাতে পারল না, তাই নিয়ে নিলো। কিন্তু মুখে বলল, ‘থ্যাংকস।’

জেহফিল পলকহীন চোখে ইনানের মুগ্ধভরা চেহারায় তাকিয়ে আছে। তার বাটারফ্লাই এত সুন্দর কেন? কেন এত সুন্দর হতে হবে তাকে? বড় বড় পাপড়িতে ঘেরা অন্তরস্পর্শী দৃষ্টিতে যখন তাকায়, জেহফিল যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। গোলাপী পুরু ঠোঁটের মিষ্টি হাসিতে জেহফিল ডুবে ম’রে প্রতিবার। এত কেন মাদকতা তার বাটারফ্লাইয়ের মধ্যে?

.
.
চলবে…

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৭
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

দুপুরের দিকে ইনানের ছটফটানি বেড়ে গেল দ্বিগুণ। গত দুই ঘন্টা সে যে কীভাবে এই নরকের সামনে বসে ছিল একমাত্র সে-ই ভালো জানে। জেহফিল ইনানের সামনে থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও নড়েনি। ইনানকে বারান্দায় বসিয়ে সে নিজেও রং তুলি নিয়ে ইনানের মুখোমুখি বসে আছে। মূলত ইনানের পোর্ট্রেট আঁকছে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে জেহফিল গভীর চোখে ইনানকে দেখছে আর রং তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে তুলছে। জেহফিলের ধারাল দৃষ্টির তোপে পড়ে ইনান টু শব্দটিও করতে পারছে না। মুখ স্বাভাবিক রাখলেও ভেতরে ভেতরে চিন্তায় আছে কখন সে বাড়ি ফিরবে।

‘জান, মাথাটা একটু এদিকে।’

ইনান বিরক্ত চোখে তাকায়। রাগে তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।‌ কিন্তু মুখে কিচ্ছুটি বলতে পারছে না ভয়ে। তাই একটু অভিনয় করল, যদি একটু জেহফিলের মন গলে।

‘পা অনেক ব্যথা করছে জেহফিল।’

কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই জেহফিল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। ‘বেশি ব্যথা করছে সোনা? পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে?’

ইনান মাথা উপর নিচ করল। ভেবেছিল এবার বোধহয় একটু নিস্তার পাবে। কিন্তু না। জেহফিল আরেকটা চেয়ার এনে তাতে কুশন রেখে ইনানের বাম পা হালকাভাবে রেখে দিলো। হতাশ শ্বাস ফেলে ইনান। এমনই চলছে গত দুই ঘন্টা, ব্যথার কথা বললেই জেহফিল এসে আরামের ব্যবস্থা করে দেয় তবে ইনানকে একা ছাড়ার কথা ভুলেও ভাবে না।

ইনানের বিরক্ত দৃষ্টি জেহফিলকে খুব আনন্দ দিচ্ছে। ইনানের ছবি আঁকা শেষ হলেও সে ইচ্ছে করেই ইনানকে বসিয়ে রেখেছে। বারান্দার সাথে লাগোয়া কদম ফুল গাছ। ফুল জেহফিলের কখনোই পছন্দ ছিল না। সে ভেবেছিল এই গাছটাও কেটে ফেলবে। কিন্তু এখন সে ডিসিশান চেঞ্জ করেছে।

ইনানকে নিয়ে প্রতিদিন সে এইখানে বসবে, তারপর কদম ফুলের সাথে ইনানের তুলনা করবে। দেখবে কার ফুল বেশি সুন্দর। গাছের নাকি তার?

এক জীবন্ত ফুল ইনান, যে কিনা প্রাণহীন‌ ফুল গাছের সামনে বসে সেটাকেও জীবন দিচ্ছে। চেহারা মায়াবী.. সদ্য ফোঁটা ফুলের মতো স্নিগ্ধ। তার বাটারফ্লাই এত সুন্দর!! জেহফিলের মাথার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে গেল। শুষ্ক ঢোক গিলে সে। ইনানকে যত দেখছে ততই সে মুগ্ধ হচ্ছে। উফফ! এত মন দহন করা জ্বালাপোড়া হচ্ছে কেন ভিতরে!!

‘খিদে পেয়েছে।’ আচমকা বলে উঠল ইনান।

‘কী খাবে সোনা?’

‘আপনার মাথাটা দেন। চিবিয়ে খাই। শালা পাগল!’ মনের কথা মনেই রেখে মুখে বলল, ‘কী কী বানাতে পারেন?’

‘কী কী খাবে বলো!’

‘চিকেন বার্গার আর চকলেট কেক।’

‘এই দুপুরে?’

‘হু, অন্য কিছুর রুচি নেই আপাতত।’

‘অ্যাজ ইউ সে মাই প্রিন্সেস।’

জেহফিল উঠে গেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ইনান। এটাই তো চেয়েছিল। জেহফিলকে ব্যস্ত রাখা! এবার একটু শান্তিতে থাকবে। তবে তা আর হলো না, ইনানের আরাম হারাম করে জেহফিল এসে ইনানকে কোলে তুলে নিলো।

‘আজব তো! কোলে নিচ্ছেন কেন? নামান বলছি।’ রাগে গজগজ করে বলল ইনান।

জেহফিলের কঠোর জবাব, ‘চিৎকার করবে না আমার উপর বাটারফ্লাই। চেঁচামেচি আমি পছন্দ করি না। কী ভেবেছ! তোমার প্ল্যান আমি বুঝি না? এই ছোটো ব্রেইনের বুদ্ধিগুলোও তো দেখি কাঁচা।’

কিচেনের কাছে চেয়ার রেখে বসিয়ে দিলো সে ইনানকে। তার সামনে টি টেবিলে পা উঠিয়ে দিলো সাবধানে। অ্যাপ্রোন পরতে পরতে বলল,

‘এইখান থেকে এক পাও নড়ার চেষ্টা করবে না কিন্তু লিটল কিটি। ফল ভালো হবে না।’

‘কীসব আলতু ফালতু নামে যে ডাকেন, গা জ্বলে।’

বিরক্তির শ্বাস ফেলে বলে ইনান।

জেহফিল দুষ্টু হাসে। তা দেখে পিলে চমকে উঠে ইনানের। আবার কী বাজে চিন্তা করছে এই ছেলে!! জেহফিল চেয়ারের পেছনে এসে ইনানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ‘জ্বলুনি দূর করে দিবো মাই লিটল কিটি? ভালো মেডিসিন আছে আমার কাছে।’

‘নো থ্যাংকস। এখন গিয়ে কাজ করুন, ক্ষুধায় পেট ফেটে যাচ্ছে।’

জেহফিল হাসতে হাসতে কাজে ফিরে গেল। অবশ্য কাজ করার টাইমেও ইনানকে নিস্তার দিলো না। ক্রীম গালে লাগায়, গলায় লাগায়, কানের কাছে ফু দেয়, নানাভাবেই ইনানকে টিজ করে। ইনান দাঁতে দাঁত চেপে এসব সহ্য করছিল।

.

.

বিকেলে যাওয়ার সময় হয়ে যায়। জেহফিল ইনানকে কোলে নিয়েই গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার টাইমে, ইনান কপালে ভাঁজ ফেলে তাকায়।

‘এনিথিং রং কিউটিপাই?’

‘এই নাকি গাড়ি নষ্ট, বিকালে মেকানিক আসবে? কাউকেই তো দেখলাম না আসতে, আপনি নিজেও তো আঠার মতো আমার সাথেই চিপকে রইলেন সারাদিন।’

শয়তানি হাসির রেখা ফুটে উঠে জেহফিলের বাদামী ঠোঁটে। ইনানকে চোখ টিপ দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে। ইনানের আর বুঝতে বাকি রইল না কিছুই। জেহফিল কালকে ইনানের অসুস্থতার সুযোগ নিয়েই এসব মিথ্যে বানিয়েছে, কিন্তু এসব করে জেহফিলের কী লাভ হয়েছিল? কনফেস করতে চাইলে তো কালকেই করতে পারত? ওকে এখানে রাখার কারণ কী ছিল?

জেহফিলের আরেকটা মিথ্যা বেরিয়ে আসে রাস্তার মাঝেই। ও বলেছিল রাস্তায় নাকি গাছ ভেঙে পড়ে গেছে অথচ সিঙ্গেল ডালেরও চিহ্ন পেল না ইনান। মনে মনে জেহফিলকে যত প্রকারের বাজে বাজে গালি জানে সবগুলোই দিতে লাগল।

গাড়ি থামল একটি মসজিদের সামনে। চোখে এক ঝাঁক প্রশ্ন নিয়ে তাকাল ইনান।

‘এখানে কেন?’

‘বিয়ে করব।’ ভাবলেশহীন জবাব জেহফিলের।

‘কীহ??’ উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে ইনান।

জেহফিল থেমে থেমে বলে,’বি য়ে ক র ব।’

‘হাহ! সিরিয়াসলি!’‌ অবজ্ঞার হাসি হাসে ইনান, ‘মামার বাড়ির আবদার যেন।’

‘মামার না, তোমার স্বামীর আবদার।’

‘একটা কথা বলব জেহফিল? ইনান হাত ভাঁজ করে তাকায় জেহফিলের দিকে, সরাসরি।

‘গো অ্যাহেড প্রিন্সেস।’

‘ইউ আর আ ফাকিং অ্যাসহোল।’

জেহফিলের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, কপালের রগ ফুলে উঠল রাগে, ‘মুখ সামলাও বেবিগার্ল।’

‘পারবো না। আমার মুখ আমার ইচ্ছা।’ কাষ্ঠ গলা ইনানের।

গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ল জেহফিল। মুখে হাত বুলিয়ে নিজেকে শান্ত রাখল, ‘শুধু সময়ের ব্যাপার বাটারফ্লাই। মুখ কীভাবে বন্ধ রাখতে হয় শিখিয়ে দিবো, নো প্রবলেম।’

‘শালা বাস্টার্ড।’

এবার যেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না জেহফিল। খপ করে ইনানের গাল চেপে ধরল শক্ত হাতে। হাতের পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিলো ইনানের কোমল গালে। ব্যথাতুর শব্দ বেরিয়ে আসল ইনানের গলা থেকে।

দাঁত কটমট করে চোখ রাঙিয়ে বলল জেহফিল, ‘বেশি প্রশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠে গেছ একদম। কিছু বলি না, রাগ দেখাই না, তাই বলে যে কখনো করব না এটা তুমি ভাবলে কীভাবে সোনা? এমন হাল করব না!! কথা বলার অবস্থাতেও থাকবে না।’

ইনান দুই হাতে জেহফিলের শক্তপোক্ত হাত সরাতে লাগল, পারল না কিছুতেই। জেহফিলের শক্তির কাছে তার শক্তি পুটি মাছের মতো। জেহফিলের হাতের মাঝে গাল থাকা অবস্থাতেই ইনান ফ্যাসফ্যাস করে বলল,

‘কিছুই করতে পারবি না তুই এখন। তখন তো তোর বাড়িতে ছিলাম বলে কিছু বলতে পারিনি, এখন যদি চিৎকার করি, জনগণের হাতে উত্তম মধ্যম খেতে হবে তোকে।’

ইনান তাকে তুই করে বলাতে রাগ আরও চড়াও হলো জেহফিলের মাথায়। দপদপ করে জ্বলে উঠল সে। গালে রাখা আঙ্গুল আরো শক্ত হয়ে উঠল তার।

‘ছাড় বলছি, তোর মতো সাইকোকে তো আমি মরে গেলেও ভালোবাসবো না, বিয়ে তো দূরে থাক।’

ইনানের কথা জেহফিল যেন হঠাৎ মজা পেল। বাঁকা হেসে ইনানকে ছেড়ে দিলো।

‘বিয়ে করবে না তাই না? আচ্ছা ঠিকাছে মানলাম।’
তারপর নিজের ফোন বের করে ইনানের চোখের সামনে ধরল, চিন্তিত হবার ভান করে বলল, ‘দেখো তো কিটেন, এটা কে? তোমার মতো দেখাচ্ছে মনে হয়।’

ভিডিওটা দেখে ইনানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এটা গতরাতের ভিডিও। ইনান ঘুমিয়ে ছিল যখন তখনকার। ভিডিওতে দেখাচ্ছে, জেহফিল খালি গায়ে শুধু প্যান্ট পরনে ইনানকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে আছে। ইনানের টি-শার্ট পেট পর্যন্ত উঠানো, সেখানে হাত বুলাচ্ছে জেহফিল। জেহফিল ইনানকে এমনভাবে পেঁচিয়ে গালে গলায় চুমু খাচ্ছে দেখে মনে হয় স্বামী স্ত্রীর কোনো ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের প্রথম চিত্র। ইনান আঁতকে উঠল, হাত চলে গেল মুখে। কান্নায় ভরে উঠল তার দুচোখ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।

জেহফিল মোবাইল সরিয়ে নিলো, বাঁকা হেসে বলে, ‘দেখে মনে হচ্ছে সফ্ট প’র্ণ তাই না?’

‘এ…এগুলো.. আপনি…’

কান্নার দমকে কথা বলতে পারল না ইনান। হেঁচকি তুলে কাঁদছে সে।

‘এগুলো তেমন কিছুই না। কালকে জাস্ট ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলাম তোমাকে, তারপর একটু আকটু আদর করলাম। চিন্তা করো না, এর বেশি কিছুই করিনি, গড প্রমিস।’ জেহফিল কণ্ঠনালীতে চিমটি কেটে ধরল নিষ্পাপ চোখে।

ইনানের চোখের পানি মুছে দিয়ে তার ছোট্ট মুখটা হাতের আঁজলায় ধরল জেহফিল। নরম সুরে বলল,

‘জান, আজকে, এই মুহুর্তে তোমার আমার বিয়ে হবে। তারপর তোমার বাবাকে বলে বিয়ে করব, যদি মানে তাহলে তো ভালোই আর না মানলে..’

তারপর হুমকির সুরে বলল, ‘তুমি তোমার বাবাকে যে করেই হোক মানাবে, জানি না কীভাবে মানাবে বাট মানাবেই! কাল বিকেলে তোমার বাসায় যাবো। ব্যাগ নিয়ে রেডি থাকবে। কালকেই তুমি ফিরে আসছো আমার সাথে। আজকের দিনটা সময় দিলাম নিজেকে আসন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করতে। এখন চলো, বিয়ে করব।’

ইনানের কান্না থামছে না দেখে জেহফিল বলল,’কান্না থামাও বাটারফ্লাই। আমি ভিডিওটা কাউকে দিচ্ছি না, তবে, যদি তুমি আমাকে অমান্য করো…’

ইনানের গাল ধরে নিজের দিকে ফিরালো জেহফিল, চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, ‘তোমার বাবা আর ফ্রেন্ডসের কাছে যাবে প্রথমে..তারপর অনলাইনে…’

ইনান চোখ বন্ধ করে আছে, তার ইচ্ছে করছে এখনই ম’রে যেতে। এতটা নীচে নামতে পারবে জেহফিল সে কখনো ভাবতে পারেনি।

‘কান্না থামাও, একদম চুপ। এই সুখের মুহুর্তে কেউ কাঁদে নাকি? কান্না থামাও বলছি, গাড়ি থেকে নামার সময় যাতে হাসি হাসি মুখ দেখি। নাহলে কিন্তু..’

জেহফিল ইনানকে গাড়িতে রেখে বেরিয়ে গেল, আবার দুমিনিটের মাথাতেই ফিরে আসলো। তার হাতে গোলাপের মালা। ইনানের চুলে ফুল গুজে দিয়ে হাতেও পরিয়ে দিলো।

‘সরি সোনা, এই অল্প সময়ে এর থেকে বেশি কিছুই পাইনি তোমাকে দেয়ার মতো। চলো এখন। মুখ স্বাভাবিক রাখো।’

জেহফিল ইনানকে গাড়ি থেকে ধরে নামালো। ইনান যেন নিজের মধ্যে নেই। রোবটের মতো জেহফিলের সঙ্গে হেঁটে চলছে সে। তার বিবেকবুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে সেই মুহুর্তে। নিজেকে কেমন অনুভূতিহীন লাগছে। কী হতে চলেছে ভবিষ্যতে ভেবে ভেবেই তার সারা গা কাঁটা দিচ্ছে।

সেই মুহুর্তেই কোনো আয়োজন ছাড়া বিয়ে হয়ে গেল তাদের।

.
.
চলবে…