#রোদেলা_বেলার_রোদ্দুর
লেখিকা:Sabrin Jahan
পার্ট:০৮
আজ বিয়ে,,
চারদিকে সবার কত হই হুল্লোড়,,আর রোদেলার মনে বিষাক্ত পাহাড়,,, তিলে তিলে শেষ হচ্ছে রোদেলা
বউ সেজে বসে আছে রোদেলা,,,কত স্বপ্ন ছিল ওর বিয়ে নিয়ে,, রোদ্দুরের সাথে ওর বিয়ে হবে,,,দুইজন জোস্না রাত বিলাস করবে ,,কিন্তু সব স্বপ্নই রয়ে গেলো,,, হুঃ ভাগ্য শেষ মুহূর্তে মুখ ফিরিয়ে নিল,,
ঐদিকে রোদ্দুর ভালো নেই ,,কেনো জানি তার মনে হচ্ছে তার জীবন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলে যাবে,,,,
হটাৎ তার সামনে একটা মেয়ে আসলো
মেয়ে:Hi জিজাজি
রোদ্দুর:what
মেয়ে:আরে আমি আপনার শালীকা
ইমন: এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছো
মেয়ে: আরে আমি নীরা ,,রোদেলার বন্ধু
ইমন:তুমি ওর বন্ধু হলে ওকে জিজাজী বলছো কেন??
নীরা:আরে রোদেলা আর রোদ্দুর ভাইয়া একে অপরকে ভালবাসে না
রোদ্দুর:what!! এটা তোমাকে কে বললো
নীরা:কেনো!! রোদেলা বলেছে
মাহির:তুমি কি জানো আজকে রোদেলার বিয়ে
নীরা:what!!!(অবাক হয়ে) but এটা কি করে সম্ভব,,আপনারা ছোট থেকে একে অপরকে ভালবাসেন না??
রোদ্দুর:ছোট থেকে ??
নীরা:আরে রোদ্দুর ভাইয়া রোদেলাই আপনার পিচ্ছি রোদ
মুহুর্তে সবাই চুপ,,,রোদ্দুরের কানে একটা কথাই বাজছে ” রোদেলাই আপনার পিচ্ছি রোদ”
রোদ্দুর:এগুলো কি বলছ?
নীরা শুরু থেকে শেষ সব বললো ,,এমন কেনো করেছে তাও বললো,,,
রোদ্দুর স্তব্ধ ,,এই জন্য রোদেলাকে তার এত এত কাছের মনে হয়েছে,,,মুখে এক চিলতে হাসি,,,পেয়ে গেছে ও রোদেলাকে
নীরা:রোদ্দুর ভাইয়া এখানে দাড়িয়ে থাকবেন না,,আমি জানি না রোদেলা কেনো এমন করলো,, ও তো সেদিন আমার বললো ও আপনাকে জানাবে যে ওই আপনার রোদেলা ,,কিন্তু মাঝে কি হলো,,হটাৎ কেনো বিয়ে,,,কিছু গড়বড় আছে,, রোদেলার কাছে চলুন,,,
বলতে দেরি কিন্তু রোদ্দুরের যেতে দেরি নেই,, ও কিছুতেই তার রোদ পাখিকে হারাতে পারবে না,,এখন বুঝতে পারছে রোদেলা কেনো তাকে sorry বলেছিল,, ও ওর কথা রাখতে পারে নি বলেই sorry বলেছিল
বিয়ে বাড়ীতে খুব একটা লোক নেই যেহেতু ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে,,,পাশে দিম্মা কেদেই যাচ্ছে,,হাজার হোক নাতনি যে কতটা রোদ্দুর কে ভালোবাসে তা তার পাগলামি দেখেই বুঝেছেন,,
মুহূর্তেই শোনা গেলো বর এসেছে,,,রোদেলার দিম্মা ও গেলেন দেখতে,, তা দেখে রোদেলা বাকা হাসলো ,,,,এই জীবনে রোদ্দুরের না হলে আর কারো হবে না ,,তাতে যদি তার জীবন ও দিতে হয় সে দিবে,,
ড্রয়ার থেকে একটা poison বের করলো,,এর কাজ ধীরে ধীরে হলেও বাঁচার সম্ভাবনা কম,,,সেদিন ফার্মেসি তে এটা কিনতেই গেছিলো,,,
।কিছু না ভেবেই খেয়ে নিল ,,,
কিছুক্ষণ পর কতগুলো মেয়ে এসে ওকে নিয়ে গেলো ,,,, পাশাপাশি বসিয়ে দিল রোদেলা আর রিয়ান কে ,,রিয়ান লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,কিন্তু রোদেলার তা খেয়াল নেই,,বার বার একটা কথাই আওরাচ্ছে ,,যদি শেষ বার রোদ্দুর কে দেখতে পেত
হুট করে কেও রোদেলা কে টেনে দাঁড় করালো,,রোদেলা সামনে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর,,তার পাশেই ইমন,মাহির,আভা আর নীরা,,নীরা কে বুঝতে বাকি রইলো না যে ও সব রোদ্দুর কে বলে দিয়েছে
রোদ্দুর:কেনো করলে রোদেলা
রোদেলা:রোদ্দুর
রোদেলার মুখে রোদ্দুর ডাক শুনেই সম্রাট বুঝতে পড়লেন এটাই রোদ্দুর,,
সম্রাট:এই ছেলে এইটা কোন ধরনের অসভ্যতা,,এখানে আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে
রোদ্দুর: কারো বিয়ে হবে না ,,,রোদেলা শুধুই রোদ্দুরের,,,
ঐদিকে রিয়ান পিছে চলে গেছে ,,আগের বারের মার তার দিব্যি মনে আছে
সম্রাট:রোদেলা তুমি যদি রোদ্দুরের সাথে যাও তাহলে জানোই কি হবে
রোদ্দুর:রোদেলা চলো
সম্রাট:রোদেলা আমার কথা মনে আছে তোমার
রোদেলা: ব্যাস (চিল্লিয়ে)
সবাই চুপ
রোদেলা বাবার দিকে ঘুরে বললো
রোদেলা:যাবো না কোথাও,,শুধু একটু কথা বলবো
সম্রাট কিছু বললেন না
রোদ্দুর:রোদেলা কি বলছো তুমি
রোদেলা:আমার কথাটা শুনবে প্লিজ,,
রোদ্দুর কিছু বললো না
রোদেলা:জানো ছোটবেলা থেকে তোমাকে ভালোবাসি,,কিন্তু তখন তো ছোট ছিলাম তাই বুঝতে পারি নি,,,যখন তোমার থেকে চলে এলাম তখন খুব কষ্ট হতো তোমায় ছাড়া,,,বড়ো হওয়ার পর বুঝতে পারি আমি ভালোবাসি তোমায়,,,বাবাকে বলেছি বাবা আমি রোদ্দুর কে চাই,,বাবা বলেছিলেন দিবে,,,কিন্তু আজ টাকা দেখে ঘুরে গেলেন উনি
সম্রাট:রোদেলা(চিল্লিয়ে)
রোদেলা:প্লীজ মিস্টার খান,,,
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলত শুরু করলো
রোদেলা:যেদিন প্রথম তোমায় ভার্সিটিতে দেখি,,কেনো জানি তোমায় খুব চেনা মনে হচ্ছিল,,তাই এগিয়ে গেলাম ,,তোমার আর তোমার ফ্রেন্ড এর কথা শুন এ বুঝত পারি you are my roddur,,,তখনই তোমায় বলতাম রোদ্দুর আমি তোমার রোদেলা ,,কিন্তু বলি নি কারণ আমি তখন জানতাম না তুমি কি আমায় ভালোবাসো নাকি শুধু বন্ধু ভাব ,,তাই জানার জন্য তোমার সাথে অমন করতাম
কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ,,বুক জ্বালা করছে, বিষের কাজ শুরু হয়ে গেছে,,টাও কষ্ট করে বললো
রোদেলা:যেদিন জানতে পারলাম তুমিও আমায় ভালোবাসো সেদিন ঠিক করলাম তোমায় জানবো রোদ্দুর আমি তোমার রোদ পাখি,,কিন্তু সব ওলট পালট হয়ে গেলো,,বাবা নিজের business প্রফিট এর জন্য আমায় বিয়ে দিচ্ছে ,,টাও তার সাথে যে আমাকে দেখলেই বাজে দৃষ্টি দেয়,,আর সেদিন রাস্তায় আমাকে ,,,,,(আর কিছু বলল না) জানো বাবাকে যখন বললাম he is a scoundrel,, বাবা আমাকে বিশ্বাস করে নি,, বিশ্বাস করে নি তার মেয়েকে ওই ছেলেটা কত কু রুচিপূর্ণ কথা বলেছে,,সেদিন তুমি না থাকলে হয়তো আমার সব শেষ হয়ে যেত
সম্রাট অবাক চোখে তাকালো,,এত কিছু হয় গেলো আর উনি কিছু টের পেলেন না,,, রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে ,, তা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তার মেয়ে সত্যি বলেছে,,,এখন নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে ,,কেনো সে কিছু জেনে শুন পদক্ষেপ নিল না,,টেস ও অবাক ,,রোদেলা যে মিথ্যে বলছে না তা ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,,,টেস অগ্নি চোখে ছেলের দিকে তাকালো,,, হ্যাঁ হয়তো সে সম্পত্তির জন্য বিয়েটা দিতে চেয়েছে কিন্তু কারো অসম্মান করার জন্য উনি আজ অবধি কিছু করেননি,,
রোদেলা:বাবা আমাকে ওর জন্য মেরেছে ,,,জানো ছোট বেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা ই আমাকে আগলে রেখেছে,,বিয়ে করেননি এই ভেবে যে যদি ঐ মহিলা ভালো না হয় তাই,,সবাই তখন বলতো বাবা বাবা ই হয় ,,কখনও মা হতে পারে না,,কিন্তু তখন আমি বলতাম আমার বাবা আমার মা হয়ে দেখিয়েছে
সম্রাট ছল ছল চোখে তাকালো
রোদেলা:কিন্তু আজ না মনে হচ্ছে,,মা থাকলে এমন করত না,,মা থাকলে নিজের মেয়ের কষ্ট টা বুঝত
সম্রাট এর বুক মোচড় দিলো,,কত বড় অন্যায় করতে যাচ্ছিল সে
সম্রাট:রোদেলা মা
রোদেলা:প্লীজ মিস্টার খান,,আরেকটু
রোদেলা:আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না ,,কিন্তু বাবার মরা মুখ ও দেখতে পারব না,, দোটানায় পড়ে গেছি আমি
হটাৎ রোদেলার কাশি উঠলো,, মুখ দিয়ে ফিনকি মেরে রক্ত বের হচ্ছে,, উপস্থিত সবাই অবাক ,,কি হচ্ছে,,রোদেলা পরে যেতে নিলেই রোদ্দুর ধরে তাকে
রোদ্দুর:এই রোদেলা কি হয়েছে তোমার,,??
রোদেলা:আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারবো না আবার বাবার মরা মুখ ও দেখতে পারবো না,,তাই নিজেই চলে যাচ্ছি
রোদ্দুর:রোদেলা কেনো করলে এমন
সম্রাট:রোদেলা মা
রোদেলা:sorry বাবা ,,কিন্তু আমি তোমার কথা রেখেছি ,, হা হা রেখেছি,,sorry রোদ্দুর তোমার কথা রাখতে পারলাম না,,,রোদেলা রোদ্দুরের কাহিনী এখানেই সমাপ্ত,,,
রোদেলা চোখ বন্ধ করে নিল,,,
নীরা:ভাইয়া ওকে জলদি হাসপাতাল নিন,,
রোদ্দুরের খেয়াল হলো,, ও জলদি করে রোদেলাকে নিয়ে হসপিটাল গেলো,,,সাথে বাকি সব,,,
বর্তমান
এতক্ষণ রোদ্দুর সবাইকে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হিসেবে গল্পটা বললো,,,
সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে,,প্রথমে সবাই বিরক্ত হলেও পরে তারা মনোযোগ দিয়ে কাহিনী শুনছিল,,, কারো কারো চোখে জল
রোদ্দুরের চোখেও পানি ,,,,পুরনো স্মৃতি চোখে ভাসছে,,,রোদেলা ও দূরে দাড়িয়ে কাদঁছে,,,তারা আলাদা হয়ে যেত এই ভেবেই তার মন টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে
সারা:তারপর কি হলো ভাইয়া,,
ইতি: হ্যাঁ তারপর কি হলো রোদ্দুর বলো না
রোদেলা অবাক হলো ,অহংকারী মেয়েটাও এই কাহিনী শুনে আবেগী হয়ে উঠলো
রোদ্দুর আবার বলা শুরু করলো,,,
সেদিন রোদেলাকে hospital নেওয়ার পর সবাই সাথে এলো সাথে টেস আর রিয়ান,,তখনই পুলিশ আসে পুলিশ দেখে সবাই অবাক
পুলিশ:এখানে রিয়ান কে
টেস:এইযে এ (রিয়ানকে দেখিয়ে)
রিয়ান:dad
টেস:চুপ আমাকে dad বলবি না,,তোর মত লাফাঙ্গা ছেলের দরকার নেই আমার,,(তারপর অফিসার। কে সব বললো,,,সাথে কিছু সিসিটিভি ফুটেজ দিল যেগুলো তিনি collect করেছে,,পড়ে police রিয়ান। কে নিয়ে চলে গেলো)
টেস সম্রাটের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে চলে গেলো,,,সম্রাট ও তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত,,, সে রোদ্দুরের কাছে ক্ষমা চাইলো,,রোদ্দুর ক্ষমা করে দিলো,,হাজার হোক বাবার বয়সী তো,,,
সবাই চিন্তায় আছে ,,,ot এর লাইট বন্ধের সাথে সাথে সবাই গেটে দাড়ালো
ডক্টর:she is now out of danger,, don’t worry
সবাই সস্থির নিশ্বাস নিল,,,কয়েক ঘণ্টা পর রোদেলার জ্ঞান ফিরলো,,রোদেলার কাছে রোদেলার বাবা ক্ষমা চাইলেই রোদেলা বাবা কে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো,,, বাবাকে খুব ভালোবাসে সে,,,
রোদেলা fully সুস্থ হতে ২ সপ্তাহ লাগলো,, এই ২ সপ্তাহ রোদ্দুর রোদেলার পূর্ণ খেয়াল রেখেছে,,কিন্তু কোনো কথা বলে নি,,রোদেলা চেষ্টা করেছে কিন্তু রোদ্দুর বলে নি,,রোদেলা বুঝতে পারলো রোদ্দুর রাগ করেছে ,,এখন তার রাগ ভাঙাতে হবে,,,,,কপাল
চলবে..
.