#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩১
“রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,উদ্দেশ্য হচ্ছে তানজুর জন্য লেবুর শরবত তৈরি করা!’রিয়াদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে চলে যায় ফ্রিজের কাছে!’তারপর দুটো লেবু বের করে চাকু দিয়ে কেটে তৈরি করতে থাকে লেবুর শরবত!’সবকিছু কেমন যেন এলেমেলো হয়ে গেল আজ এমনটা হোক এটা রিয়াদ চায় নি,রিয়াদ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না কাজটা করলো কে?মাথার মধ্যে প্রশ্নটা বার বার এসে আঁটকে যাচ্ছে তার!’….
“কিছুক্ষনের মধ্যে লেবুর শরবত তৈরি করে চললো রিয়াদ তানজুর রুমের দিকে!’লাইফে ফাস্ট-টাইম কারো জন্য লেবুর শরবত তৈরি করলো রিয়াদ,না জানি কেমন হয়েছে?’রিয়াদ একপলক লেবুর শরবতের দিকে তাকিয়ে চললো তানজুর রুমের ভিতরে!’
___
“হুট করেই তানজু চোখ খুলে তাকায়,আশেপাশের সবকিছু কেমন যেন ঘুরছে তাঁর!’তানজু তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বসলো এমন সময় রিয়াদ এসে লেবুর শরবত টেবিলের রেখে বলে উঠলঃ
—“তুমি ঠিক আছো তানজু?’
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু শান্ত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“জ্বী স্যার…
“হঠাৎই তানজুর মাথায় আসলো তখন রিয়াদের বলা কথাগুলো!’তানজু কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ তার দিকে লেবুর শরবত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“আমি জানি তানজু,তুমি এখন কি বলবে তবে কথা বলার আগে এই লেবুর শরবতটা খেয়ে নেও…
“উওরে তানজু আর কিছু বলতে পারলো না!’রিয়াদের হাত থেকে লেবুর শরবতটা নিলো সে কারন এই মুহূর্তে এটা তার খুব প্রয়োজন!’তানজু আস্তে আস্তে লেবুর শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো আর রিয়াদ কিছুটা নার্ভাস ফিল করে তাকিয়ে রইলো তানজুর দিকে না জানি শরবত খেয়ে কি বলে?’তানজু শরবতে এক চুমুক দিতেই রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“কেমন হয়েছে তানজু?’ফাস্ট টাইম ট্রাই করলাম ভালো না হলে বলার দরকার নেই..
“তানজু রিয়াদের কথা শুনে অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা আপনি তৈরি করছেন স্যার…?’
“উওরে রিয়াদ মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলঃ
—“হুম ভালো হয় নি…
—“না তেমন নয়,খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আপনি আমার জন্য…
“এতক্ষণ পর রিয়াদ যেন শান্তি পেল,খুশি হয়ে বসলো রিয়াদ তানজুর পাশ দিয়ে তারপর বললোঃ
—“প্রথমবার বানালাম তো তাই একটু টেনশনে ছিলাম…
—“খুব ভালো হয়েছে স্যার…
—“ওকে এখন তাড়াতাড়ি পুরোটা শেষ করো তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে..
“তানজু বুঝতে পেরেছে রিয়াদ কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবে তাই তাড়াতাড়ি লেবুর শরবত শেষ করলো তানজু!’তানজুর খাওয়া শেষ হতেই বলে উঠল রিয়াদঃ
—“আমি জানি তানজু, আমার হুট করে বিয়ের ডিসিশন নেওয়া ঠিক হয়নি,কিন্তু ওই মুহূর্তে এটা ছাড়া আর কোনো উপায়ও পায় নি,,আমি সত্যি ভাবিনি এমন কিছু হবে,এই মুহূর্তে সবাইকে সত্যিটা বলে দিলে অনেকেই অনেক বাজে মন্তব্য করতো তানজু,তারপর যদি শুনতো টাকার জন্য তুমি রাজি হয়েছো তাহলে সমাজ তোমায় খুব বাজে ভাবে দেখতো যেটা আমি মেনে নিতে পারতাম না তাই এমনটা করা লাগলো,আশা করি বুঝবে তুমি….
—“আই এক্সট্রিমলি সরি স্যার, আমার জন্য এমন একটা বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো…
—“তুমি সরি বলো না তানজু,কারন কোথাও না কোথাও এই পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ই,সেদিন যদি মিথ্যে কথা না বলতাম তাহলে হয়তো এমনটা কিছু হতো না,সেদিনই পরিস্থিতির চাপে পড়ে ডিসিশন নিয়েছি আর আজও তবে…
“আর কিছু বলবে রিয়াদ তার আগেই তানজু মাথায় হাত দিলো কিছুটা খারাপ লাগছে তার!’তানজুর অবস্থা বুঝতে পেরে রিয়াদ তানজুকে ধরে বলে উঠলঃ
—“তুমি ঠিক আছে তানজু?’
—“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না স্যার?’মাথা যন্ত্রনা করছে…
—“আচ্ছা আমরা এটা নিয়ে পড়ে কথা বলবো,তুমি এখন শুয়ে থাকো আর বেশি হলে আমি ডক্টরকে কল করছি…
—“না স্যার তার দরকার নেই,এইমাত্র তো লেবুর শরবত খেলাম,আর হাল্কা রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবো,আপনি টেনশন নিবেন না…
“রিয়াদ কিছুক্ষন ভেবে বললোঃ
—“ঠিক আছে তানজু,তুমি রেস্ট করো…
“এতটুকু বলে তানজুকে শুয়িয়ে দেয় রিয়াদ!’তানজুও চুপটি করে শুয়ে পড়ে বিছানায়!’রিয়াদ তানজুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ
—”টেনশন নিও না তানজু আমি তো আছি…
”উওরে হাল্কা হাসলো তানজু!’
—”আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি আসছি….
“এতটুকু বলে তানজুর গায়ে সুন্দর মতো কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে চলে যায় রিয়াদ!তানজু কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো রিয়াদের যাওয়ার পানে,সে বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তার ঠিক কি করা উচিত?’নীরবে চোখ বুঁজিয়ে ফেললো তানজু?’
_____
“বিকেল_৪ঃ০০টা….
“নিজের রুমের বিছানায় শুয়ে আছে রিয়াদ!’নানান ভাবনায় মগ্ন সে,রিয়াদ এখনও বুঝে উঠতে পারছে না কি থেকে কি করবে?’তার কি উচিত তানজুকে তার মনের কথা বলে দেওয়া,কিন্তু রিয়াদ এভাবে বলতে চায় নি,,উফ সবকিছু ঘোলাটে আর এলেমেলো লাগছে তার!'”এমন সময় রিয়াদের দরজায় নক করলো তানজু বললো সেঃ
—“আসবো স্যার…
“দরজায় নক করার শব্দ শুনে রিয়াদ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো!’তানজুর ভয়েস শুনে বললো সেঃ
—“হুম আসো…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজুও দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো!’রিয়াদ তানজুকে দেখে বললোঃ
—“তুমি ঠিক আছো তানজু,
—-“জ্বী স্যার,আমার আপনার সাথে জরুরি কথা আছে…?’
“রিয়াদ তানজুর কথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলো তারপর বললোঃ
—“হুম বলো…
—“আমি আপনার কথাগুলো ভেবে দেখলাম স্যার…?’
—“ওহ…
—“জ্বী স্যার,আর এরজন্য আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে…
—“কিসের আইডিয়া…?
—“বিয়ের…
—“মানে..
—“মানেটা হলো চুক্তির বিয়ে…
—“কিসের চুক্তি..
—“এক বছরের বিয়ের এগ্রিমেন্ট স্যার,দেখুন আপনি তো আমায় ভালোবেসে বিয়ে করছেন না আর আমিও আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করছি না,একদমই পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়ে করতে হচ্ছে,তাই চাপ নিবেন না স্যার একবছর পর আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিয়েন,বলবেন আপনার সাথে আমার মিলে না,,আমি ভালো না এন তেন চারশো বিশ,আর এমনিতেও সেলিব্রেটিদের মধ্যে এটা এবেল এবেল তাই এটা নিয়ে আর কারো কোনো প্রবলেম থাকবে না,আমি চাই না স্যার আমার জন্য আপনার লাইফে কোনো প্রবলেম আসুক,আপনার সাথে আমার কখনই যায় না কোথায় আপনি আর কোথায় আমি,,নিতান্তই আপনি পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়ে করতে চাইছেন,আর তার চেয়েও বড় কথা আপনি আমার সম্মানের কথা ভেবে এত কিছু করলেন এটাই আমার জন্য অনেক!’তাই আমিও এভাবে ভেবেছি স্যার,আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমার জন্য আপনার লাইফে কখনো কোনো প্রবলেম সৃষ্টি হবে না,
“পুরো একশ্বাসে কথাগুলো বলে থেমে গেল তানজু!’আর রিয়াদ নীরব দর্শকের মতো শুনে গেল সবটা!’যেন সবটা তার মাথার উপর দিয়ে গেল?’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে বললো তানজুঃ
—“কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন?,কেমন লাগলো আমার আইডিয়াটা…
“রিয়াদ কিছুটা বিষন্ন ভরা কন্ঠে বললোঃ
—“খুব ভালো তানজু,এর জন্য তোমায় নোবেল দেওয়া উচিত…
—“থ্যাংক ইউ স্যার…
“তানজুর কথা শুনে রাগ হয় রিয়াদের কিন্তু নিজের রাগকে যথাসম্ভব কন্ট্রোলে রাখলো!’
_____
“দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো দশদিন….
“এই দশদিনে অনেক ব্যস্ত ছিল রিয়াদ তানজু!’সারাদিন শপিং বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিয়েই ব্যস্ত ছিল দুজন!’আজ রিয়াদ তানজুর বিয়ে একটা বড় ফাইভ স্টার হোটেল বুক করা হয়েছে রিয়াদ তানজুর বিয়ের জন্য!’বড় বড় সব নামি দামি সেলিব্রেটিরা আসছে ওদের বিয়েতে,কেউ কেউ খুশি আবার কেউ কেউ অখুশি!’কারন অনেকেই মনে করে রিয়াদের সাথে তানজুর যায় না আবার অনেকেই মনে করেন ভালোবাসা থাকলে ডিসটেন্ট ডাজ নট মেটার!’তবে রিয়াদ এই মুহূর্তে কারো কথাই কানে নিচ্ছে না,সে তার মতো বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত,কোথাও তার খুশি খুুশি লাগছে শুধু ওই এগ্রিমেন্ট বাদে,রিয়াদ এই মুহূর্তে ওটা নিয়ে ভাবছে না কারন সে ভেবে রেখেছে এই ঝামেলা মিটে গেলেই তানজুকে সবটা বলে দিবে তবে তার আগে তাকে কিছু কাজ করতে হবে!’
.
.
.
“একটা সুন্দর রুমের মাঝখানে আয়নার সামনে বসে আছে তানজু পাশেই তাকে বড় বড় বিউটিশিয়ানরা সাজাতে ব্যস্ত!’
“তানজুর পড়নে রেড কালার গর্জিয়াস ভাড়ি লেহেঙ্গা,দু’হাত ভর্তি ভাড়ি ভাড়ি গর্জিয়াস চুড়ি,হাত ভর্তি করে মেহেন্দি দেওয়া,গলায় ভাড়ি নেকলেস, কানে ভাড়ি দুল,চুলগুলো সামনে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে খোলা,কপালে টিকলি,মুখে ভাড়ি মেকাপ,ঠোঁটে গাঁড়ো করে লাল লিপস্টিক,আর মাথায় বড় করে ঘোমটা দিয়ে তৈরি সে,এই মুহূর্তে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তানজুকে,বিউটিশিয়ানরা তো বলেই উঠল তানজুকেঃ
—“ইউ লুকিং সো জর্জিয়াস ম্যাম…
“উওরে হাল্কা হাসলো তানজু,যদিও এগুলো মিথ্যে তারপরও তানজুর কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে,,আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ তানজু…
“কিন্তু এসবের মাঝখানে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তাঁর!’কারন এখানে তার পরিবার নেই,অবশ্য রিয়াদ বলেছিল তানজুকে তার ফেমেলিকে আনতে কিন্তু তানজু বারন করে দেয়!’এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে রিয়াদের কথায় রাজি হলেই ভালো হতো,,ছোট্ট শ্বাস ফেললো তানজু….
“এমন সময় হন হন করে তার রুমে ঢুকলো হিয়ামিনি!’পিছন থেকে তানজুকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ
—“কেমন আছিস তুই?’
“হুট করে এমন এটাকে কিছুটা চমকে উঠলো তানজু,তারপর আয়নায় হিয়ামিনিকে দেখে অবাক হয়ে বললোঃ
—“তুই…
—“হুম আমি কি ভেবেছিলি তোর বিয়েতে আমরা আসবো না…
“এরই মাঝে বলতে না বলতে একে সবাই ঢুকলো তানজুর রুমে তানজুর মা,তানজুর বাবা, বোন,দুলাভাই, আদিসহ আরো অনেকেই!’তানজু সবাইকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাদের!’তানজুর মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ
—“বিয়ে করছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করিস না তুই…
—“সরি মা আসলে..
—“হইছে তোকে আর কিছু বলতে হবে না রিয়াদ আমাদের সব বলেছে,,
—“তার মানে তোমরা সব জানো মা…
—“হুম,রিয়াদই তো আমাদের ফোন করে সব বলেছে সাথে আমাদের সবাইকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে….
—“তোমরা খুশি তো মা…
—“খুশি না হওয়ার কি আছে,,রিয়াদ কত ভালো ছেলে সাথে তোর কতো কেয়ার করে….
“উওরে তানজু শুধু জড়িয়ে ধরে তার মাকে!’তারপর বলেঃ
—“তোমরা এসেছো এতেই আমি খুশি হয়েছি…
“এমন সময় কিছু মেয়েরা এসে বললো তানজুকেঃ
—“চলুন ম্যাম এখন আপনাকে যেতে হবে..
“মেয়েটির কথা শুনে তানজুও বলে উঠলঃ
—“হুম…
“এমন সময় তানজুর ফোনটা টুং করে উঠলো, মোবাইলটা দেখতেই রিয়াদ মেসেজ করেছে তাকে লিখেছেঃ
—“বিয়ের দিন বিয়ের কনেকে মন খারাপ দেখতে ভালো না কিন্তু,তার থেকেও বড় কথা রিয়াদের বউকে মন খারাপ দেখলে লোকে কি বলবে,টেনশন নিও না তানজু আমি তো আছি,,সারপ্রাইজ পছন্দ হয়েছে তো,এখন তবে মুচকি হাসো সাথে কুইকলি সবাইকে নিয়ে নিচে চলে আসো..
“i waiting for you my fake wife….❤️
“রিয়াদের মেসেজ দেখে আনমনেই মুচকি হাসলো তানজু!’হোক পুরোটা মাত্র এক বছরের তারপরও ভালো লাগছে তার….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………