রোদ পোহাবার ছুতোয় পর্ব-১২

0
1

গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ১২
#নাজমুন_নাহার

নির্জন দুপুর।
গোলাপি-সাদা বাগানবিলাসের ফুলগুলো গ্রিল ডিঙিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে নিরাদের বারান্দার অন্দরে। থোকা থোকা ফুলগুলো অবহেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে সেখানকার শুভ্র মেঝেতে৷ আজকের আবহাওয়া বিভ্রান্তিকর। অতিরিক্ত গরম, কিংবা খুব বেশি ঠান্ডা নয়। মাঝামাঝি ধাঁচের। তবে আবহাওয়া বলছে, রাতে গগন কাঁপিয়ে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা প্রবল।

কিছুক্ষণ আগেই ছোটখাটো একটা ঘরোয়া যুদ্ধ হয়েছে নেহাল-অহনার মাঝে। ইফরান পারদপক্ষে গোপনে গোপনে বাবা-র সাইড নিলেও বাহ্যিকভাবে রইলো নিরপেক্ষ। বেচারা অবলা, অসহায়, নিষ্পাপ বাপটা অকারণেই তার মায়ের কাছে ঝারি খেতে থাকে সারাদিন। অহনা খিটখিটে মেজাজের মেয়ে। ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে চট করেই মাথায় আগুন ধরে যায়। ওর মেজাজের অগ্নিশিখায় প্রতিবার ঘি ঢালার মতো কাজ করে নেহালের বস্তাপঁচা জোকসগুলো। বউ জাতিদের নিয়ে যে ঠাট্টা-মশকরা করা ঘোর বিপদ সংকেত, সেটাও বোধকরি নেহালের সংকীর্ণ মস্তিষ্কে এঁটেছে। শেষ এক ঘন্টা ধরে তার সাথে কথা বলছে না অহনা। চোরা চোখে একটু কথা বলার ছুতো খুঁজছে বেচারা নেহাল। ছোট্ট ছোট্ট ভাই-বোনগুলোর সামনে বউটা মান-অভিমান করে তাকে চরম বিপাকে ফেলছে। ফাজিলগুলো সেসব খেয়াল করে মিটিমিটি মশকরা শুরু করে দিয়েছে।

কাজিনদের ঠাই হয়েছে নিরার ছোট্ট রুমটায়। কেউ বসেছে খাটে, কেউ মেঝেতে, কেউ-বা ডিভানে। নিরা আপতত তার পড়ার টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জড়তা কাজ করছে ভেতরে ভেতরে। অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ। যদিও নিলয় ভাই আসার পর থেকে কেবল একটা বাক্যই জপেছে, “কেমন আছিস বুড়ি?”

হ্যা, ঠিক এই নামেই নিলয় ভাই ডাকতো ওকে। ছোটবেলা থেকেই ডাকতো। এখনও ডাকতে হবে তা-ই বলে? নিলয় ভাইকে আসলে চার-পাঁচ বছর আর উনিশ বছর বয়সটার মধ্যে পার্থক্যটা বোঝানো দরকার।

মিরা আরচোখে কেমন করে যেনো পর্যবেক্ষণ করছে নিরাকে। মিটিমিটি হাসছেও। কানের কাছে এসে বারংবার একই বাক্য জপে যাচ্ছে, “নিলয় ভাই দেখতে আগের চেয়ে আরও হ্যান্ডসাম হয়েছে না, বোনু?”
উত্তরে নিরা প্রতিবার ভ্রু বাঁকিয়ে চেয়েছে। এটার আবার হলো কী?

এতোগুলো বছর পর লোকটার শান্ত কন্ঠস্বর নিরার কর্ণগহ্বরে পৌঁছে হৃদয় অশান্ত করে তুললো। নিলয় ভাই নামক মানুষটা কোনোকিছু না করেও নিরাকে প্রতিবার লজ্জায় ফেলে। আড়ষ্টতায় কুঁকড়ে যায় মেয়েটা। লজ্জার দরুন ঠিক মতো জবাবটুকুও দিতে পারেনি সে। নিলয় দেখতে সত্যি এখন আগের চেয়ে বেশ সুদর্শন হয়েছে। কানাডা’র ভিনদেশী ছোঁয়া বোধহয় তার শরীরেও লেগেছে কিছুটা। গায়ের শ্যামরঙটা আরও উজ্জ্বল হয়েছে৷ স্বাস্থ্য বেড়েছে কিছুটা। লম্বা ছিপছিপে শরীরে কালো প্যান্টের সাথে সাদা শার্ট ইন করে পড়েছেন। সিলভার কালারের ব্র্যান্ডের ঘড়ি আর চোখে কালো সানগ্লাস। শরীর থেকে অদ্ভুত সুন্দর বিদেশি পার্ফিউমের ঘ্রাণ সারা বাড়ি ভেসে বেড়াচ্ছে। আরচোখে চাইলো একপলক সেদিকে। লোকটা আসার পর থেকে যতোটুকু কথা বলেছে তার বেশিরভাগই নাবিলের সঙ্গে। কতোকালের কথা জমা রয়েছে এদের কে জানে! নিরা তাকাতেই নিলয়ের বদলে চোখাচোখি হয় নাবিলের সাথে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরায় নিরা। শয়তানটা সারাক্ষণ এদিকেই ঈগলের মতো তীক্ষ্ণ চোখ করে চেয়ে থাকে নাকি?

অহনা ট্রে হাতে নিরার ঘরে ঢুকলো। বউকে দেখামাত্রই হাসিখুশি মুখটা চুপসে গেলো বেচারা নেহালের। ফটাফট উঠে দাঁড়ালো ওকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। সাথে মিছিমিছি দুষ্টু স্বর টেনে ফিসফিস করে বলে, “কালো শাড়ীতে তোমাকে পরী লাগে,অহনা। বয়সটাও কম কম লাগছে। মনেই হচ্ছে না তোমার যে একটা সাত বছর বয়সের ছেলে আছে।”

ফায়দা হলো না বিশেষ। রাগে কটমট করতে করতে গরম চোখে চাইলো অহনা। মিয়িয়ে যায় নেহাল। আরচোখে সকলের দিকে একপলক চেয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা চালালো। ঠোঁট টিপে হাসছে শয়তানগুলো। অহনা চলে যেতেই গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠল এরা। হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। নাবিল ওর কাঁধে হাত রেখে বিজ্ঞের ন্যায় বলে, “নেহাল ভাইরে কিন্তু দেখলেই বোঝায় যায় ভাই যে বিবাহিত। যেনতেন না, একেবারে নয় বছরের সলিড এক্সপেরিয়েন্স। ভাই, বিবাহ নিয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিন আমাদের মতো সিঙ্গেলদের। আপনি অভিজ্ঞ মানুষ, যা বলবেন জীবন থেকে নিয়ে সলিড ফ্যাক্টই বলবেন।”

মিরা বলে, “নেহাল ভাইয়ের কাছ থেকে ফয়সালা চাইলে ভাইয়া তার সার্বজনীন স্লোগানটাই শোনাই দিবে। ” নো বিয়ে, নো রিস্ক। লাইফ উইল বি ঢিশমিশ।” ভাইয়ার থেকে ফয়সালা নেওয়া মানে বিবাহকে বয়কট করা। ভাই হেইটস বিবাহ। সে তো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিবাহ একটা করে ফেলেছেন।”

নেহাল পয়তাল্লিশ ডিগ্রি এঙ্গেলে চায় বোনের পানে। মুখ বাঁকিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বলে,” এরেএএ ঘষেটি বেগমের বংশধর, নতুন নতুন বিয়ে করছিস তো, এখন ধূসর,কালো রঙটারেও লাল-নীল-সবুজ লাগবে। ক’দিন যেতে দে, তারপর তোর জামাই-ও আমার এই স্লোগানের উপরেই আমল করবে। ময়মুরুব্বি নিয়া মশকরা করিস না বোন আমার। কঠিন অভিশাপ লাগবে।”

বউয়ের সৈনিক মুখ খুললো এবার। রাতুল ঝুঁকে এসে প্রতিবাদী স্বরে বলে, “ভাইয়া, আপনি আশি বছরের এক্সপেরিয়েন্সড হলেও আমাদের টপকাতে সক্ষম হবেন না বোধহয়। বউকে পটানোর চ্যাপটার আমরা জুনিয়র সিটিজনরা অনেক আগেই শিখে রেখেছি। আমাদের বউরা প্রথম দিনেই কাবু হয়ে যায়।”

নাবিল-নিলয় হৈহৈ করে উঠলো। নেহাল কন্ঠে অভিমান মিশিয়ে বলে, “রাতুল, ভাই আমার, সম্পর্কে আমি তোমার বউয়ের বড় ভাই, মানে তোমার গন্যমান্য একজন সম্বন্ধি। দাঁড়িয়ে সেলুট করার মতো সম্পর্ক তোমার-আমার মধ্যে। একজন সিনিয়র সিটিজন এখানে আমি। তার উপর আমরা দু’জনই বিবাহিত দলের সদস্য। মানে বুঝতে পারছো কতোটা আত্মিক সম্পর্ক আমাদের? কই তুমি আমাকে সঙ্গ দিয়ে এদেরকে শায়েস্তা করবা, তা না করে বউয়ের সাথে সহমত হয়ে দল খালি করতেসো। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ম্যারিড টিমের অযোগ্য সৈনিক তুমি।”

মিরা স্বামীর পাশে বসতে বসতে বলে, “নেহাল ভাই, তুমি আর নিজের বিচ্ছিন্ন দল নিয়ে গর্ব করো না। আমার ভোলাভালা স্বামীটাকে বিপথে নেওয়ার পায়তারা করলে পরে তোমার সংসারে কেরোসিন ঢালতে আমাদের দুই মিনিটও লাগবে না। প্রমাণ চাই?”

সটান হয়ে বসে নেহাল। বিদ্রোহী হয়ে উঠে বুকটা। “কেরোসিন, নারকেল তেল, জলপাইয়ের তেল সব ঢাল। আমার বউ তোর মতো হারেবজ্জাত না। তুই কেরোসিন ঢালবি আর সে পানি ভেবে কাপড় দিয়ে মুছে ফেলবে। বউ আমার সবুজ বাত্তি।”

সকলে হু হা করে হেসে ফেললো। যেনো মজার কৌতুক শোনালো নেহাল।

“আচ্ছা! তাহলে তো হলোই। এখন যা ঘটতে যাচ্ছে সেটার ফিডব্যাক যা-ই আসুক, তার জন্য কিন্তু আমরা রেসপন্সিবল না।”

সকলে সজোরে মাথা উপরনিচ করলো। নেহাল চোখ বড় বড় করে চাইলো মিরার পানে। চরম বিপদ আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছে কুটনিটার চোখে-মুখে। মিরা নাটকীয় ভঙ্গিতে ডেকে উঠল ভাবীকে। তাৎক্ষণিক কোথা থেকে ছুটে আসল অহনা। নেহাল বউয়ের খিটখিটে মুখটা দেখে এদিকসেদিক মুখ লুকাবার পায়তারা করছে। কু ডাকছে বুকটা। মনে হয় না আজ আর প্রাণে বেঁচে ফিরবে।

“কিছু লাগবে, মিরা?”

মিরা আরচোখে ভাইয়ের চুপসে যাওয়া মুখে একপলক চেয়ে চোখ ঘুরিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বলে, “কাচ্চি খেয়েছিলেন, ভাবী?”

অহনা বিভ্রান্ত নয়নে চায়। এটা বলার জন্যই ডেকেছে মিরা? “খেয়েছি। কেন?”

“কেমন লেগেছে?”

“ভালোই তো।”

“অহহ, আচ্ছা।”

অহনা তখনও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সকলের পানে। এদের মুখভঙ্গি একেবারে সিরিয়াস ধরনের। ভেতরে কী চলছে একেবারেই দেখে বোঝার উপায় নেই। মন্ত্রীসভায় জরুরি বৈঠক বসার মতো সিরিয়াস। মিরা চোখ দিয়ে নাবিলকে কী ইশারা করলো কে জানে। অহনা দরজার দিকে ফিরে যেতে নিতেই নাবিল লাফিয়ে বলে উঠে, “ভাবী, শুনলাম আপনি-ও কাচ্চি রাঁধতে পারেন? একদিন দাওয়াত করে খাওয়ালেও তো পারেন। আপনাদের বাসায় একদিন কাচ্চি পার্টি করলে খারাপ হয় না।”

হাসে অহনা। “তোমাকে তো কম দাওয়াত দেওয়া হয় না, নাবিল। এই এক মামার বাড়ি ছাড়া তুমি আর কোনো আত্নীয় চিনো?”

নিলয় হাসে। বলে, “এখন থেকে আসবে। এতোদিন আমি ছিলাম না বলে যায়নি।”

অহনা খুশি হয়। “সবাই একসাথে এসো একদিন, যা খেতে চাও ভাবী খাওয়াবো। একদিন এসে সুযোগটা লুফে নিও।”

মাথা ঝাঁকিয়ে হাসে নাবিল। পূনরায় চলে যেতে উদ্যত হতেই সে দাঁত বের করে হেসে বোকা বোকা মুখ করে বলে, “নেহাল ভাই বলছিল, আপনার রান্না নাকি সাংঘাতিক খারাপ, ভাবী? মুখেই নাকি তোলা যায় না। মশলাপাতির ব্যালেন্সটা নাকি এখনও শিখেননি? আরও বলল, আপনার নাকি মামির কাছ থেকে রান্না শেখা উচিত। মামির কাচ্চিটা একশোতে একশো।”

অহনার মুখভঙ্গি ফট করে পরিবর্তন হয়ে যায়। এতোক্ষণের ঝলমলে মুখটায় আঁধার নেমে আসে। নাবিল নিষ্পাপ, অসহায় মুখ করে আত্নবিশ্লেষন করার ভঙ্গিতে বলে, “এসব আমাদের কথা না, নেহাল ভাই বলছিল এতোক্ষণ। আমরা কিন্তু সলিড প্রতিবাদ করেছি। তার জন্যই সেধে সেধে দাওয়াত নিলাম। আমরা কিন্তু ভাবী আপনার রান্নার ডাই ফ্যান।”

বাকিরা চোরা চোখে অহনার প্রতিক্রিয়া বোঝার খেয়াল করছে। বেজায় রেগে আছে মেয়েটা। নিলয় সেখানে নেহাতই একটা জড়বস্তু ছাড়া কিছুই না। সে বরাবরই শান্ত প্রকৃতির মানুষ। বড় ভাইয়ের সাথে মজা-মশকরা করার মতো জড়তাহীন সম্পর্কও ওদের না।
অহনা অগ্নিদৃষ্টিতে চাইলো স্বামীর পানে। নেহালও অসহায় মুখ করে চাইলো। সামাজিকতার খাতিরে কেঁদে ফেলা বাকি শুধু ছেলেটার। বাকিরা গোয়েন্দার মতো একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। মিরা কিছু একটা বলতে ইশারা করে নিরাকে। নিরা ভোলাভালা মুখ করে ব্যাপারটাকে আরেকটু ঘোলাটে করতে তেল মারার স্বরে বলে,

“কিন্তু আমরা দলীয়ভাবে আপনার পক্ষই নিয়েছি,ভাবী। নিরানব্বই পার্সেন্ট ভোট আপনাকেই করেছি। গত বছরও তো কী সলিড একটা বিরিয়ানি পাকালেন। একেবারে পার্ফেক্ট একটা টেস্ট ছিল। ভাবী, আপনার আসলে উচিৎ একটা কোকিং শো তে অংশগ্রহণ করা। আপনি মাস্টারশেইফ। চলে যান, চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা আমাদের ফ্যামিলিতেই আসবে। কী বলো মিরাপু, মজা হয়েছিল না সেদিনের বিরিয়ানিটা?”

মিরার ধ্যান ভাঙ্গে। দ্রুত মাথা উপরনিচ করে বোনের কথায় সম্মতি জানায়। “হ্যা হ্যা, আমার তো মনে পড়লেই আবার খিদে পাচ্ছে। আমি এমন বিরিয়ানি রান্না করতে জানলে তোর দুলাভাই তো আমাকে মাথায় করে রাখতো। আফসোস! ভাবীর মতো গুনী হয়ে জন্মাতে না পারার সার্বজনীন আফসোস। বাট ইটস ওকে,ভাবী শিখিয়ে দেবে। দেবেন না, ভাবী?”

প্রশ্ন রয়ে গেলো প্রশ্নের জায়গাতেই। অহনার দৃষ্টি,ধ্যান পুরোটাই অন্যদিকে। আরচোখে অহনার অগ্নিমুখটায় চেয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে আক্ষেপের শ্বাস ফেলে মিরা। নেহালের অবস্থা কিছুটা মাটি ফাঁক করে গর্তে লুকিয়ে পড়ার মতো।

জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে, “চিন্তা করো না মিরা, তোমাকে রান্না শেখাতে না পারলেও তোমার ভাইকে অনেক শিক্ষাই দিতে পারবো। তারটা ঠিকি সে পাচ্ছে।”

বলেই ধুপধাপ পা ফেলে প্রস্থান নেয়। নেহাল কাঁদো কাঁদো মুখ করে চায় সকলের পানে। ঘোর অমাবস্যা নিকটে।
“মশকরা করার আর মানুষ পেলি না? এই বেরসিক মহিলা আমার ঘুম চান্দে উঠাবে আজকে।”

মেহমানদের বিদায়ের পর্ব শেষ। মিরা আর রাতুল বাদে বেয়াই বাড়ির সকলেই প্রায় বিদায় নিয়েছে। আত্মীয়স্বজনরাও আস্তেধীরে যাচ্ছে। নিরা ফুপ্পির সাথে রান্নাঘরে সবকিছু গোছগাছে সাহায্য করছিল। তাদের বাসার দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় ভাইয়ের বাড়ির যে-কোনো ছোটখাটো অনুষ্ঠানে রাহেলাই সবকিছু সামলান। ননদটাকে ছাড়া আমিনারও চলে না। কোথায় কোনটা কতোটুকু করতে হবে রাহেলা ভালোই বোঝেন সেসব।
নাবিল তখন থেকে রান্নাঘরের দরজায় ঠেস দিয়ে বিরক্তি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ রাহেলা ছেলের মতিগতি বুঝতে পেরে চোখ গরম করে চাইলেন। নাবিল নাছোড়বান্দার মতো হাত জোর করে অনুরোধ করে কিছু একটার। তিনি নিরার পানে চাইলেন। কাজে ব্যস্ত মেয়েটা। এতোদিকে চোখ যাওয়ার সুযোগ নেই। কৃত্রিম ধমকের স্বরে ছেলেকে শুধালেন, “কিছু লাগবে? এখানে ঘুরঘুর করছিস কেন? ঘরে যা, কিছু প্রয়োজন হলে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

নিরা ফিরে চাইলো। চোখাচোখি হয় দু’জনের। নাবিল মায়ের ষড়যন্ত্র ধরতে পেরে উল্টো ফাঁসানোর স্বরে বলে, “তোমাকে মামা ডাকছে।”

কঠিন চোখে চাইলেন তিনি। মুখে কথা হলো না মা-ছেলের। চোখে চোখেই যা বোঝার বুঝে নিলো নাবিল।

” কখন ডাকলো? জ্বালাস না, যা নাবিল।”

“আমি কি মিথ্যে বলছি? বিশ্বাস না হলে দেখে আসো নিজেই?”

রাহেলা খুন্তিটা হাতে নিয়ে চোখ বড় বড় করে চাইলেন তীব্র হুশিয়ারী দৃষ্টিতে। কিন্তু কে ভয় পায় এসব? ছেলেটা তবুও হার মানলো না। ভোলাভালা, নিষ্পাপ ধরনের মুখ করে চেয়ে রইলো মায়ের পানে। মনে মনে বলল, “প্লিজ আম্মু, যাও না একটু! কাবাবে হাড্ডি হইয়ো না।”

রাগে ফোঁস করে শ্বাস ফেললেন রাহেলা। যাওয়ার আগে দুম করে পিঠে থাপ্পড় বসালেন ছেলের । আওয়াজ হতেই নিরা পেছন ফিরে চাইলো। নাবিল জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে, “আদর করলো আম্মু আমায়।বাই দ্য ওয়ে, হেল্প চাই তোর?”

নিরার কাটকাট জবাব, “লাগবে না।”

নাবিল আর অনুমতির ধার ধারল না। মুখ বাঁকিয়ে নিঃশব্দে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া পাতিলগুলো সুন্দর মতো ক্যাভিনেটে সাজিয়ে রাখলো। নিরা কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে শান্ত চোখে চাইলো। করছে কী লোকটা! মাথাটা পুরোপুরি গিয়েছে গোল্লায়। নাবিল তীর্যক চেয়ে বলে, “দৃষ্টি সরা মর্জিনা। ভয় পাই না আমি তোকে।”

নিরা হতাশ শ্বাস ফেলে সন্দিহান স্বরে বলে, “সত্যি করে একটা কথা বলবে?”

নাবিল নিজের কাজে মনোযোগ রেখেই প্রতুত্তর করে, “এতো শর্ত রাখবি না আমার সামনে। আমি চির সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন মানুষ। বলার হলে বল, নয়তো গো টু হেল।”

নিরা মুখে চ সূচক শব্দ করে।

“তোমাকে কী জ্বীন-ভূতে আছড় করেছে? উল্টাপাল্টা কিছু ফিল-টিল হয় ইদানীং? মানে এই ধরো, রাতে কোনো খারাপ শক্তির স্পর্শ লাগছে মনে হয়? আমার বান্ধবীর এক আত্নীয় ভালো কবিরাজি করে, তুমি বললে না-হয় আলাপ চালাতাম।”

বেশ গুরুতর মুখভঙ্গি করে কথাটা বলল সে। নাবিল বিস্ময় নিয়ে চাইলো। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে তীব্র ক্রোধ নিয়ে।

“আর ইউ সিরিয়াস?”

“হ্যা হ্যা একশো পার্সেন্ট। তুমি গিয়েই দেখো না, একদিনেই সুস্থ হয়ে ফিরবা।”

ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়লেও উপর থেকে দৃষ্টি শান্ত রাখলো। দু কদম বাড়িয়ে সামনাসামনি এসে দাঁড়াল নিরার। দৃষ্টি অনড় রেখে বলে, “তোদের ফুপ্পি-ভাতিজির সমস্যাটা কী? একই গোয়ালের গরু হয়ে বসে আছিস দেখছি।”

নিরা ওর তাকানোর ধরন দেখে একটা শুষ্ক ঢোক গিলে৷ নাবিল গাল ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে।

“আম্মু আমাকে মানসিক রোগী ভেবে পাবনা পাঠিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে, এদিকে তুই জ্বীন-ভূত ধরেছে ভেবে সন্দেহ করছিস। সমস্যা টা কোথায়? এলিয়েন টাইপ আচরণ করছি? মাথা মাটিতে ফেলে জংলী ডান্স করছি? পেয়েছিস টা কী তোরা আমায়?”

“ফুপ্পিও সন্দেহ করছে? তার মানে আসলেই তোমায় জ্বীনে ধরেছে? আল্লাহ! আমার কিন্তু চান্দিনায় থাকাকালীন শেষ কয়েকদিন এমন মনে হয়েছিল। ও গড! তার মানে আমার সন্দেহই ঠিক। এখন ফুপ্পিও কনফার্ম করলো।”

বলেই আরচোখে চায় নিরা। নাবিল দাঁত কটমট করে। চোখ দিয়েই ভস্ম করে ফেলার মতো ধ্বংসাত্মক চাহুনি। “কিপ ইউর মাউথ সাট! আমাকে রাগালে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না,নিরা।”

নিরা দুই হাত বুকে ভাজ করে দুই কদম এগিয়ে মুখ বাঁকিয়ে তোতাপাখির মতো অনুরূপভাবে ভেঙ্গানোর স্বরে বলে, “আমাকে রাগালে তার ফল ভালো হবে না,নিরা। কচু হবে।”

তীব্র রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নাবিল। নিরা অকস্মাৎ হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বেসিনে বেঁকে পড়ে সে। অতিরিক্ত হাসলে নিরার চোখে পানি জমে। চোখের পানিটুকু মুছে আবার ওর দিকে চেয়ে দ্বিগুণ আওয়াজ করে হাসতে লাগলো। কিছুতেই হাসি থামাথামির নাম নেই মেয়েটার। তখনও শান্ত চোখে চেয়ে থাকে নাবিল। আজকের এই হাসিতে সে কোনো নির্মলতা খুঁজে পায় না। পায় নিজের জন্য এক পৃথিবী অবহেলা আর অদৃশ্য প্রত্যাখ্যান। নাবিল অগত্যাই হাত মুচড়ে পেছনে ঘুরিয়ে আনে ওকে। রাগে চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে আপাতত। সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরল হাতটা। ব্যথায় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে মেয়েটা। নাবিল তবুও ছাড়ল না। হাতের বাঁধন দৃঢ় করে কানের কাছে এসে প্রকট রাগান্বিত কন্ঠে বলে, “যা বোঝাচ্ছি সেসব ছাই ভেবে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর তামান অবান্তর বিষয়গুলো ঘাটিয়ে আর কতো জ্বালাবি তুই আমায়? আর কীভাবে, কতোভাবে বোঝাই! আমার ধৈর্য্য কম, নিরা। আর তুই ঠিক এই দূর্বলতাটাই কাজে লাগাচ্ছিস। পরিক্ষা নিচ্ছিস? ধৈর্য্যের বাঁধটা একবার ভেঙ্গে গেলে পালাই পালাই করেও ছুটতে পারবি না কসম।”

নাবিলের ধুকপুকানি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। অদ্ভুত কিছু একটা টের পাচ্ছে লোকটার কন্ঠে নিরা আজ। হাতের ব্যথায় আর মনের উৎকন্ঠায় অচিরেই চোখে পানি জমেছে তার। নাক টেনে শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “ছাড়ো। লাগছে খুব।”

ঘাড়ের কাছে মুখ এনে একটা উষ্ণ অথচ গভীর শ্বাস ফেলে হাতটা প্রবল ঝারির সাথে ছেড়ে নিঃশব্দে প্রস্থান নেয় নাবিল। ওর অকস্মাৎ অদ্ভুত আচরণে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে নিরা। কথাগুলোর অর্থ মস্তিষ্কে খানিক আঁটতেই বুকের উঠানামা বাড়ল। কপাল থেকে চুয়িয়ে চুয়িয়ে ঘাম ঝরছে। নাবিল একটা বার মুখ ঘুরিয়ে দেখলো না তার এমন উন্মাদনায় বলা বাক্যগুলোর প্রভাব নির্লিপ্ত মেয়েটার উপর কতোটুকু পড়ল। কতোটুকু বক্ষপিঞ্জরের দোটানায় পড়ল নিরা নামক নির্লিপ্ত, শান্ত প্রাণটা।
বরফের মতো শক্ত হয়ে যায় নিরার সর্বাঙ্গ। পাথরের মতো স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। কী বলে গেলো লোকটা! কেন বললো এসব?

মিরা আজ কিছুতেই বোনের সঙ্গ ছাড়ছে না। আসার পর থেকে আঠার মতো লেগে আছে ওর সাথে। যেনো কতো বছরের কথা জমে আছে দু’জনের। খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে এতোদিনের দূরত্বে জমে থাকা গল্পের ঝুলিটা খুলে বসল। নিরা ধ্যানমগ্ন হয়ে দ আকৃতিতে বসে জানালার অপর প্রান্তে চেয়ে আছে। অস্থির হয়ে আছে মনটা। বোনের কথায় মন নেই তার। কানের কাছে নাবিলের বলে যাওয়া বাক্যগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। মিরা খেয়াল করে ওর মাথায় হাত বুলায়। শীতল ছোঁয়া লাগতেই কেঁপে উঠে নিরা।

“কী হয়েছে তোর? কখন থেকে আমিই বকবক করে যাচ্ছি একা। চুপ হয়ে আছিস কেন, আম্মু কিছু বলেছে? আব্বু বকা দিয়েছে?”

নিরার ধ্যান কাটে। ধাতস্থ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে হেসে বলে, “কিছু হয়নি। বল তুই, শুনছি তো।”

“তারপর কী হলো জানিস?”

নিরা তো এটাও জানে না যে তার আগে কী হয়েছিল। শুনেইনি সেসব। তবুও শুধায়, “কী হয়েছিল?”

“নাবিল ফোন করেছিল। আমি প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। যদি ও বিয়েতে রাজি থাকে ব্যাপারটা আমার জন্য আতঙ্কের। ভেবেছিলাম কাউকে কিছু বোঝাতে না পারলে একসাথে অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খাবো। এতে যা হওয়ার হবে। কিন্তু আমার সেসব কিছুই করতে হয়নি।”

নিরা আগ্রহ নিয়ে চাইলো। বুঝলো এতোক্ষণ নিজের বিয়ের ইতিহাস নিয়ে কথা বলছিল তার বোন। মিরা থেমে আবার বলে, “নাবিল নিজেই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য ফোন করেছিল সেদিন। ও যে কী পরিমাণ রেগেছিল আমার উপর, নিরা। আই ওয়াজ সো শকড। বলছে, যা-ই হয়ে যাক ও বিয়েটা কিছুতেই করতে পারবে না। ব্যাস, আর-কী। আমাকে আর সেধে সেধে তেমন কিছুই করতে হয়নি। নাবিল আমাকে অনেকটা হেল্প করেছিল সেদিন। তুই জানিস? আমাদের বিয়ের সাক্ষীও কিন্তু নাবিলই ছিল।”

নিরা বিস্ময় নিয়ে চায়, “মানে! নাবিল ভাই তোকে বিয়ে করতে রাজি ছিলো না?”

মিরা মাথা ঝাঁকায়। “পাগল নাকি তুই? ও তো পারে না সেদিন আস্ত চিবিয়ে খায় আমাকে৷ এক আনাও রাজি ছিল না।”

“সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বাসা থেকে বের হতে তো তোকে আমি সাহায্য করেছিলাম। নাবিল ভাই উদয় হলো কোথা থেকে?”

মিরা চোখ মারে। “ওটা সিক্রেট প্ল্যান ছিল।শুধু নাবিল না, নিলয় ভাইও ইনভলবড৷ এখন তুই বল, তোদের কাহিনী কী? তোরা এতোগুলা ঝামেলা কেন করলি? বিয়েই যখন করবি না তো দু’জন আগে থেকে ক্লিয়ার হলেই হতো। খামোখা বিয়ের দিন অব্ধি কেন পৌঁছালো সবকিছু? মাঝখান থেকে বাবা-র মন ভাঙ্গলো।”

নিরা ঘোরে চলে যায়। সেসকল কথা হাওয়ায় উড়িয়ে উল্টো শুধায়, “মিরাপু, তুই কি নিশ্চিত নাবিল ভাই তোকে বিয়ে করতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন?

“হ্যা।”

“কেন? মানে কী কারণ?”

“ও নাকি আমাকে বোন বোন নজরে দেখে। তাছাড়া সে এখনও কচি একটা ছেলে। বিয়ের বয়সই নাকি হয়নি।”

বলেই বিশ্ব জয় করে হাসল মিরা। নিরা ভাবনায় পড়ে যায়৷ অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। মিরার সাথে করা আচরণের একভাগও নাবিল নিরার সঙ্গে করেনি৷ না দ্বিমত, না কোনো অসন্তুষ্টি। এমনকি বিয়ের দিনটাও ছিল মিরার পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পরের ঘটনা। এই এক মাসে কচি ছেলে থেকে নিরার সাথে বিয়ের পিরিতে বসার জন্য প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে গেলো সে? অদ্ভুত ব্যাপার!
এমনকি বিয়েটাও নিরার সিদ্ধান্তেই ভাঙ্গতে রাজি হয় নাবিল। নয়তো কি নাবিল ভাই করে নিতো বিয়েটা? কেন কোনো অসম্মতি ছিল না ওর বেলায়? সবকিছু কেমন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নাবিল ভাই,উনি কী তবে,…..
ভাবতেই ম্লান হয়ে এলো মুখটা নিরার। তাল মিলিয়ে বাড়ছে উৎকন্ঠা। কোথাও বোধহয় একটা বিশাল কিন্তু রয়ে গেছে। ধোঁয়াশা কিছু একটা। মিরা হাত দিয়ে হাল্কা ধাক্কা মারে। নড়েচড়ে উঠে নিরা।

“হঠাৎ হঠাৎ কী হয় তোর বল তো? এমন ধ্যান করিস কী নিয়ে?”

বোনের কথা তীরের ফলার মতো এসে বিঁধল কানে। অস্থির হয় কন্ঠ।

“কিছু না। মিরাপু, আমি একটু একা থাকি? মাথাটা ধরেছে খুব।”

চোখে ঘুম নেই। এপাশ-ওপাশ করলো বেশ কিছুক্ষণ। এলোমেলো চিন্তারা জেঁকে বসেছে মাথায়। রাত বাড়ছে মনের উচাটনতার সাথে পাল্লা দিয়ে। নিরা বারান্দায় এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে। দৃষ্টি সুদুর আকাশে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কেন ইচ্ছে করছে? কেন এমন বিভ্রান্তি আজ তার? নাবিল ভাইয়ের জন্য এতো ব্যাকুল লাগছে কেন? এসব ভাবনা নিরাকে দূর্বল করছে। ভীষণ রকম দূর্বল। আচ্ছা, নিলয় ভাইকে ঠকানো হচ্ছে? নাহ,কী সব অবান্তর বিষয় নিয়ে ভাবছে সে। এসব আর ভাববে না। নিজেই নিজেকে শাসায় । হৃদয়টাকে স্বাভাবিক করতে আকাশের পানে চেয়ে গুনগুন করে গায়,

“আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুব তাঁরা
আর কতো কাল আমি রব দিশেহারা
রব দিশেহারা……
জবাব কিছুই তার দিতে পারি নাই শুধু
পথ খুঁজে কেটে গেলো এ জীবন সারা
এ জীবন সারা…..”

তুমুল বর্ষণ নেমেছে। মধ্য রাতের বৃষ্টির পানি শরীর ভেজাচ্ছে নিরার। কোনো এক অদৃশ্য দৈব বলে আপনাআপনি চোখ দু’টোও ভিজে এলো এক পশলা বৃষ্টি হয়ে। বিষন্ন হওয়ার কারণ নেই, তবুও আজ আয়োজন করে নিরার জন্য ধূসর রঙা বিষাদ নেমে এলো অতৃপ্ত ধরণীতলে। মনে হচ্ছে, এই প্রথম…হ্যা, এই প্রথম তাকে দুঃখ ছুঁয়ে গেলো পরম আবেশে!

চলবে।