রোদ পোহাবার ছুতোয় পর্ব-২৮

0
7

গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ২৮
#নাজমুন_নাহার

এক সপ্তাহ পর।
ভাদ্র মাসের রবিবারের গুমোট একটা দিন। ভ্যাপসা গরম পড়ছে ক’দিন ধরে। রোদের তপ্ততায় ঝলসে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো ছটছট করছে ধুলোর শহরটা। মালিবাগের চৌধুরীপাড়ার আজকের সকালটা অন্যান্য দিনগুলোর চাইতে কিছুটা ভিন্ন। পাড়ার মোরের চায়ের দোকানে তুমুল আড্ডা জমেছে বহুদিন পর। ১৭শ শতকের জমিদার পরিবারের পদবীতে নামকরণ করা এই এলাকাটিতে এক সময় অলিতে-গলিতে প্রচুর আড্ডার আসর বসতো। কালের বিবর্তন আর আধুনিক যুগের ছোঁয়ায় সেসব কোথায় যে হারিয়ে গেলো, কে জানে। পাড়ায় পাড়ায় দাপিয়ে বেড়ানো শহরের উৎফুল্ল ওই যুবকের দলটা কবে আর কোথায় নিখোঁজ হয়ে গেলো, কেউ খেয়াল করলো না। বয়সের ভার আর দায়িত্বের চাপে ওদের জীবনের সোনালী শৈশব এখন অতীত হয়েছে। ওরা হারিয়ে গিয়েছে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের গানের ওই লাইনগুলোর মতো:

“লিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে, নেই তারা আজ কোনো খবরে….”

ওরা আজ কোথাও নেই। বুকে অযুত প্রলম্বিত শূন্য শ্বাস টেনে ওরা এই পরিচিত লাইনগুলো এখন শুনেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কোথায় গেলো সে-ই আড্ডা, কোথায় গেলো লাঠি লজেন্স, কোথায় গেলো ওদের সন্ধার আগে বাড়ির ফেরার তাড়া! সবকিছুই যেনো এখন ঝাপসা পুরোনো কথা। সময়ের স্রোত কবে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো সব, কে জানে!

এলাকার কর্তা সমাজেরা উৎসুক হয়ে ভীর জমিয়েছে শফিকের ছোটখাটো টঙ্গের দোকানটায়৷ বছর চারেক পর জসিম এহসানের আগমন তাদের মধ্যে হৈহৈ উল্লাস উঠিয়ে দিয়েছে। চৌধুরীপাড়ায় জসিমের পরিচিতি ভালো। তিন দশক পূর্বে ছাত্র অবস্থায় তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন এখানে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকলে-ও পরবর্তীতে কয়েকজন বন্ধুসমিত একটা আটপৌরে বাসায় ভাড়া আসেন মালিবাগে। সারাদিন পড়াশোনার ঝঞ্জাট শেষে সন্ধা থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা চলতো মাঝরাত অব্ধি। বন্ধু জয়নালের বোনের প্রেমে পড়ার সূত্রপাতও এই এলাকা থেকেই। তাদের ভাড়া বাসার দোতলার ঘরটায় বিকালে আরবি পড়তে আসতো রাহেলা। সেখান থেকেই তাকে প্রথম দেখা জসিমের। শান্ত, কপাল অব্ধি সফেদ ওড়নায় ঘুমটা করা টানা টানা কাজলচোখের মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই থমকে গিয়েছিল জসিমের বুক। এক মুহূর্তে মনে বাসা বাঁধা মেয়েটাকে আজীবনের জন্য ঘরে তুলতে কয়েক দিনের মাথায়-ই প্রেম বাদ দিয়ে সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন বন্ধুকে। বন্ধু বেকার হওয়ার সত্ত্বেও খুব সহজেই মেনে নিয়েছিলেন সেদিন জয়নাল পুরো ঘটনাটাকে। এদিক-ওদিক না ভেবেই আদরের বোনকে তুলে দিয়েছিলেন প্রিয় বন্ধুর হাতে। সে-ই থেকেই স্থায়ীভাবে ওরা চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা। স্বল্পভাষী, মিশুক ধরনের জসিম তার বিনয়ী আচরণের জন্য বন্ধুমহলেও ছিল দারুণ পরিচিত। যুবক বয়স থেকে সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার মাধ্যমে নবীন থেকে প্রবীণ সকলের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। তাই তার অনুপস্থিতিতে এতো বড় ডুপ্লেক্স বাড়িতে নাবিল আর তার মা’র নিরাপত্তা নিয়ে বেগ পোহাতে হয়নি কখনও। বাবা-র মতো শান্তশিষ্ট না হলেও নাবিলের পরিচিতিও তার বাবার মতোই। এলাকার সামাজিক বিভিন্ন কাজ, সংস্থাগুলোতো অবদান রাখার মাধ্যমে বাবা-র পরিচিতি সে নিজেও ধরে রেখেছে এযাবতকাল।

শফিকের দোকানের দিকে একপলক চেয়ে আঁচলের কার্নিশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে চুলা বন্ধ করলেন রাহেলা। ফ্লাক্সে ছেলের জন্য বানানো ধোঁয়া উঠা কফিটা ঢালতে ঢালতে স্বামীকে হাঁক ছাড়লেন জানালা দিয়ে। জসিম এহসান আড্ডার মাঝখানেই রান্নাঘরের দিকে চাইলেন সাড়া দেওয়ার দৃষ্টিতে। তুমুল হৈচৈ আর হাসির সুরের মধ্যেও শুনতে পেলেন স্ত্রী’র সেই আহ্বান। হাসলেন মৃদু। আড্ডায় সাময়িক ইস্তফা টেনে চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

এমনি সময় দুপুর বারোটার আগে ঘুম ভাঙেনা অশান্ত নাবিলের। ভার্সিটির ক্লাস না থাকলে পাখি ডাকা সকাল আর ভোরের সূর্য সে খুব কমই দেখে। মা’য়ের আদরের একমাত্র সন্তান হওয়ায় শাসন-বারণও কম তার বিহঙ্গের মতো মুক্ত জীবনে। তবে আজ ভদ্র ছেলের মতো আটটার আগেই কীভাবে কীভাবে যেনো উঠে পড়ল। চোখ-মুখ অন্ধকার করে রান্নাঘরে একঝলক উঁকি দিতেই ব্যস্ত মা রমণীকে ঘেমে একাকার হতে দেখে মায়া হলো নাবিলের। বিনাবাক্যে আবার ঘরে ফিরে চার্জার ফ্যানটা নিয়ে এসে রান্নাঘরের কেবিনেটে মা’র দিকে তাক করে রাখলো। ঠান্ডা বাতাস লাগতেই পেছন ফিরে চাইলেন রাহেলা। ছেলের উপস্থিতি টের পেয়ে কিঞ্চিৎ ভ্রু জরালেন। এই অসময়ে ছেলেকে রান্নাঘরে দেখে বিস্ময়ে চোখ চড়কগাছ। কাছে এসে উদ্বিগ্ন হয়ে হাত ছোঁয়ালেন ছেলের কপালে, গলায়। নাবিল ঘুমুঘুমু চোখ বুঁজে ঠোঁট মিলিয়ে হাসে ইশৎ। হাই তুলতে তুলতে শুধায়, “আব্বু কই?”

“আর কোথায়! উঠেই তো শফিকের দোকানের আড্ডায় দৌড়। ডাকলাম তো। চা শেষ না করে আসবে বলে মনে হয় না। পাড়ার লোকগুলোও আছে, এরা এই লোককে পেলে আর কিচ্ছু বুঝে না।”

নাবিল সেসব আলাপ উপেক্ষা করে আপন ধান্দায় ফিরলো। “কখন যাবে মামাদের বাসায়?”

রাহেলা কপালে বিস্ময়কর ভাজ ফেলে তাকালেন ছেলের পানে। মহারাজের সূর্যিমামার সাথে সাথে জেগে উঠার কারণ এতোক্ষণে বোধগম্য হলো তবে। তিনি কাজ করতে করতে চোখে-মুখে কৃত্রিম নির্লিপ্তভাব টেনে বললেন, “আজকে যাওয়ার কথা আছে নাকি তোর মামার বাসায়?”

নাবিল মায়ের নাটকীয়তা ধরতে পারে। কথার জবাব না দিয়ে কফি নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসলো। হুট করেই হাসলো বিশ্ব জয় করে। পাল্টা প্রশ্ন করলো, “নেই বলছো?”

রাহেলা ওর ধূর্ততা ধরতে পেরে ব্যাঙ্গ করে শ্বাস ফেললেন। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রসিকতার স্বরে বললেন, “আব্বাজানের সাতসকালে ঘুম ভাঙার বিশেষ কারণ তবে এটাই? তাই তো বলি, আজ সূর্যের উদয় হওয়ার দিকটা এমন অপরিচিত লাগছে কেন?”

নাবিল হাসে ঠোঁট কামড়ে। পরমুহূর্তেই চুলে ব্যাকব্রাশ করতে করতে বলে, “আমার বিয়ে করা বউকে নিয়ে এতো রঙ্গো কেন হচ্ছে, বুঝি না। শশুর বাড়িতে জামাই আদর পাওয়ার বদলে নিজের বাপকে পাঠাতে হচ্ছে শশুরকে তেলাতে। বাঁশভাঙ্গা কপাল আমার।”

ভাইয়ের দুর্নাম শুনে চোখ গরম করে চাইলেন রাহেলা।

“তো তেলাবে না? একজনের মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে ফেলেছিস, আর সে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তোমাকে জামাই আদর করবে?”

“সে নিজেও তো দাদুর অনুমতি ছাড়া তোমার আর আব্বুর বিয়ে করিয়ে দিয়েছিল। এসব নিয়ে আমি কখনও খোঁটা দিয়েছি? দিয়েছি নাকি? নিজের মেয়ের বেলায় তার যত সুশীলতা।”

“একদম তুলনা করবি না। আমাদের ঘটনার সাথে তোদেরটার কোনো মিল নেই। তোর বাবা-র পরিবার আমাকে সহজে মেনে নিতো না বুঝেই সে আমাকে এভাবে বিয়ে করেছে। কিন্তু ভাইজান তো মেনে নিতো তোদের। একটু ঝারিঝুরি পড়ত, কিন্তু একেবারেই তো ফেলে দিতো না। অবশ্য একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে আমি নিজেই কিছু করিনি তখন। নিরু সেদিন জ্ঞান হারানোর পর যখন নিশ্চিত হলাম, ও তোকেই পছন্দ করে, তার ক’দিন পরই এসব নিয়ে কথা আগানোর ব্যাপারে ভেবেছিলাম। পেলাম কোথায় সে-ই সুযোগ?”

মা’র আবেগী বিলাপে ইতি টানতে নাবিল আর কথা বাড়ায় না। রিমোট দিয়ে টিভি অন করতে করতে শুধায়, “দাদু এতোসব কীভাবে জানলো? মানে আজ ওদের বাসায় যাবে সে-ই ব্যাপারে। আব্বু কি চান্দিনায় গিয়েছিল?”

গম্ভীর মুখে হঠাৎ ইশৎ হাসির রেখা ফুটে উঠে রাহেলার ঠোঁটে। টেবিলে নাশতা রেডি করতে করতে বলেন, “বাপ-বেটা মিলেছে অনেক আগেই। এসব তোর দাদুরই বুদ্ধি। তোর আব্বু একটু পরেই বের হবে বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাবাকে আর ফয়সাল ভাইকে নিয়ে বিকালের দিকে যাবে ভাইজানের বাসায়।”

“নিরুকে কবে আনবে তাহলে?”

“এক সপ্তাহ পর।”

নাবিল বোয়াল মাছের মতো লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। চোখ-মুখ গম্ভীর করে অসন্তুষ্ট স্বরে বলল, “এসব কী ধরনের অ্যাটাক, আম্মু? এক সপ্তাহ পর কেন?”

“বেশি হয়ে গেছে? তুই কি বলছিস আজই নিয়ে আসতে?”

“আমি তো চাই এক্ষুণি নিয়ে আসো। এই বিবাহিত বিরহ আর কতকাল সইবো?”

শব্দ করে হেসে ফেললেন রাহেলা। বললেন,

“আমার একমাত্র ছেলের বউকে কি আমি এমনি এমনি ঘরে তুলবো? বাড়িতে তিন-চারদিন ধরে লাইটিং হবে না? আত্মীয়স্বজনদের ভীর থাকবে না? তোর বন্ধুবান্ধবরা বেন্ডপার্টির সাথে নাচবে না? আমার ভাতিজীকে লাল বেনারসি পরাবো না? তুই বললেই হলো?”

“ঠিকই তো। তোর মা একেবারে ঠিক বলেছে, নাবিল। সহমত তোমার সাথে।”

রাহেলা চেয়ার টানলেন স্বামীর বসার জন্য। নাবিল কফিতে চুমুক দিতে দিতে মুখ বাঁকিয়ে বলে, “স্বামী-স্ত্রী মিলে যুক্তি-পরামর্শ করে এসব ষড়যন্ত্র করছো?”

জসিম এহসান ছেলের রসিকতায় হাসলেন। বললেন, “যুক্তি-পরামর্শের ভাগীদার তোর শশুরও। খামোখা আমাকে আর আমার স্ত্রীকে দোষারোপ করা বন্ধ কর।”

রান্নাঘর থেকে রাহেলার হাসির শব্দ ভেসে আসে বাপ-ছেলের শীতল যুদ্ধে। নাবিল চোখ গরম করে চায় বাবা-র পানে। জসিম এহসান না দেখার ভান ধরে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পরোটা ছিঁড়ে মুখে নিলেন। আঙুলে লেগে থাকা অবশিষ্ট ঝোল চেটেপুটে খেতে খেতে বলেন, “কী দারুণ রান্না তোমার রাহেলা! অমৃত! তোমার ছেলের বউ এমনভাবে রাঁধতে না জানলে বেচারা নাবিলের পোড়া কপাল। বাপের মতো চাঁদের কপাল কী আর সবার হয়!”

বাবা-র ঠান্ডা অপমানে নাবিল গরম চোখে চাইলো। জসিম এহসান ভোলাভালা, না জানা মুখ করে খেয়ে চলেছেন তখনও। রাহেলা ছেলের পক্ষপাতিত্ব করে জবাব দেয়, “না জানলে না জানবে। শিখে নেওয়ার সময় আছে ওদের। আমিও তো শুরুতে কিছুই জানতাম না বুঝতাম না, তুমি তা-ও তো কখনও দুর্নাম করোনি। আমার ছেলেও করবে না। ছেলের অনার্স শেষ হলে সে নিজেও আয় করবে, সংসার কী সেটা বুঝবে, দায়িত্বশীল হবে। তাছাড়া নিরাটা বুদ্ধিমতী। ঠিকি আস্তে আস্তে ঘুছিয়ে নিবে সব। এসব নিয়ে একদম খোঁচাবে না আমার ছেলেকে।”

নাবিল বাবা-র পানে শয়তানি দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে চোখ টিপে হু হা করে হেসে ফেলল। বাপ-ছেলের খুনসুটিময় যুদ্ধ চললো আরও কিছু সময় ধরে। রাহেলা ক্ষণে ক্ষণে আঁচল মুখে নিয়ে হাসলেন এদের কান্ডে।

——

চোরের মতো গুটিগুটি পায়ে নিজের ঘর পেরিয়ে ডাইনিং রুমে এসে পৌঁছেছে নিরা। নাশতা শেষ করে ভার্সিটির নাম করে বের হতে হবে বাসা থেকে আজ। বাবা বাড়িতে থাকে বিধায় ঘর ডিঙিয়ে নিরার বাইরে যাওয়া হয়ে উঠেনি এ ক’দিন। তিনি থাকলে তার আশেপাশে নিরা আজকাল একটু কমই আসে। ক’দিন ধরে অবশ্য বাবা-র মেজাজ কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে। মুখে সমাদর না দেখালেও ডেকে ডেকে খেতে বসাচ্ছেন আগের মতো। এরিয়ে যাচ্ছেন না। নিরা পর্দা সরিয়ে উঁকি মারলো। বাবা নেই। এই সময়ে অবশ্য তার বাসায় থাকার কথা না। রবিবারে বাবা-র কাজের চাপটা একটু বেশিই থাকে।
আমিনা বেগম মেয়েকে দেখামাত্রই তীক্ষ্ণ চোখে চাইলেন। ওকে আগাগোড়া পরখ করলেন বেশ কিছুক্ষণ। নিরা আড়ালে আড়ালে ভীত চোখে চায় মা’য়ের পানে। মায়ের তাকানোর ভঙ্গি দেখে মনে মনে উদ্বিগ্ন হয় আসন্ন বিপদ ভেবে।

“চেহারার এই অবস্থা কেন তোর? রাতে ঘুমাস না, বাদর মেয়ে?”

নিরা ভোলাভালা মুখ করে চায় মা’য়ের পানে। নিচু স্বরে জবাব দেয়, “ঘুমাই তো,আম্মু।”

আমিনা তেজি দৃষ্টিতে তাকালেন ফের৷ ঝনঝন করে শব্দ তুলে কাজ করতে করতে ঝারি দিয়ে বলেন, “একদম নাটক করবি না আমার সামনে। ভুল করে অনুশোচনা হওয়ার কোনো নাম নেই, আবার শোক পালন করা হচ্ছে রাত জেগে। ভাবখান তোদের এমন, যেনো বাবা-মা’রাই দায়ী সবকিছুর জন্য। একা তোদেরই পছন্দ আছে, মন খারাপ আছে। চোখের নিচটা করে রেখেছে কেমন দেঝো মেয়েটা! পাতিলের তলার মতো লাগছে দেখতে।”

তীব্র অপমান, অপবাদে নিরার হৃদয়টা ভেঙে আসে। মাথায় নুয়িয়ে মুখে আঁধার নামিয়ে বসে রয় চুপচাপ। পরক্ষণেই চেহারা পর্যবেক্ষণ করতে ফোনের ক্যামেরা অন করে নিজেকে চায় একটু। মা ভুল বলছে না। চোখের নিচটায় ডার্ক সার্কেল পড়েছে অতিরিক্ত রাত জাগার দরুণ। আমিনা গরম দুধের সঙ্গে এক চামচ কাচা হলুদের পেস্ট মিশিয়ে মেয়ের সামনে রাখলেন। চোখ বড় বড় করে আদেশের স্বরে বললেন, ” ফ্রিজে ব্লেন্ড করে রেখে দিয়েছি কাঁচা হলুদ একেবারে। আগামী চারদিন তুই দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাবি আর আজকে থেকে দশটার মধ্যে ঘুমাবি। দশটার পর তোর ঘরের আলো যেনো নিভানো পাই। আমি রেহেনা আপার সাথে কথা বলেছি গতকাল, উনার পার্লারে যাবি সোমবারে। নিজের যত্ন নে একটু।”

নিরা চোখ-মুখ কুঁচকে বিভ্রান্ত হয়ে চেয়ে থাকে মায়ের পানে। এমন আশ্চর্যজনক আদেশ চাপিয়ে দেওয়ার মতো মানুষ তো তার সরলা মা নয়। এই বাড়ির কোনো মেয়েই এযাবৎকালে পার্লারে দুয়ার মারায়নি। তাছাড়া এসব নিরাও কখনও করেনি।

“আমি পার্লারে যাই না, আম্মু। আর খামোখা পার্লারে কেন যাবো?”

আমিনা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,”যাবি না? তাহলে ঘরোয়া স্কিন কেয়ারের একটা ভালো রুটিন কর। ইউটিউবে অনেক ভিডিও আছে। ঘেটে ভালো একটা ভিডিওর টিপস ফলো করে দেখ।”

নিরা উত্তর না করে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইলো সন্দিহানভাবে মায়ের পানে৷ এই মহিলার আবার হলো কী। হঠাৎ এসব জিনিসের ভূত চাপার রহস্য কী?

মেয়ের বিভ্রান্তি বুঝেও মুখভঙ্গি পরিবর্তন করলেন না আমিনা। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর স্বরেই হুট করে করে বসলেন এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন। “নাবিলের সাথে কথা হয় তোর?”

ভূত দেখার মতো চমকে ধ্যান ভাঙ্গে নিরার। কথার অর্থ বুঝতেই শুষ্ক ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বিপদ থেকে বাঁচতে দু’দিকে মাথা নাড়ায় যত্রতত্র।

“কেন হয় না? নাবিল ফোন করে না?”

একের পর এক অবিশ্বাস্য প্রশ্ন শুনে রিতীমত থতমত খেয়ে যায় নিরা। সকাল সকাল এসব কী হচ্ছে তার সাথে! সে মেয়ে মানুষ, নেশাপানির অভ্যাস তার নেই। তাহলে?

“করে আম্মু,আমিই রিসিভ করি না।”

চোখ গরম করে চাইলেন তিনি। নিরা মা’র চাহুনিতে আঁতকে উঠে কিছুটা।

“রিসিভ করিস না কেন? কী সমস্যা?”

কাঠপুতুলের মতো অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নিরা মা’র পানে। আম্মুকে ভূতে ধরলো নাকি! ভাবনা কাটিয়ে ভোলাভালা মুখ করে রয় নিরা। পরক্ষণেই স্বর নরম হয় আমিনার। মেয়ের শান্ত পেলব মুখে চেয়ে বলেন, “ওর বাবা যে দেশে ফিরে সর্বপ্রথমে আমাদের বাসায় এসেছিল এই ঘটনা জানিস?”

নিরা মাথা নাড়ায় দু’দিকে। সে আসলেই জানে না ঘটনা। শুনে অবাক হলো অনেকটা। কপালে ভাজ ফেলে চেয়ে রয় উত্তরের অপেক্ষায়।

“ভার্সিটিতে ছিলি, জানার কথা না।
তোর বাবা যে ইদানীং তোর সাথে নরম হয়ে কথা বলছে সেটা খেয়াল করেছিস?”

নিরা ফের একই ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। আমিনা এবার মহা বিরক্তি নিয়ে তাকালেন মেয়ের পানে। এই উদাসীন মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবেন তিনি। বাবা দুঃখ পেয়েছে বলে শশুর বাড়ির নামই ভুলতে বসবি তুই? স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবি না? বিয়েটাকে অস্বীকার করবি? তিনি তাৎক্ষণিক চোখ গরম করে চেয়ে বললেন, “জসিম ভাই আজকে বিকালেও বাসায় আসবে অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক করতে। এই সপ্তাহে ফেলবে তারিখ। নাবিলের দাদা আর বড় চাচাও আসতে পারে। এই তুই কোন দুনিয়ায় থাকিস রে? গতকাল তোর বাবা একঘন্টা ধরে ডেকোরেটদের সাথে কথা বললো, সেটাও তো শুনিসনি?”

নিরা ভ্যাবলার মতো মা’য়ের মুখের পানে চেয়ে রইলো। অনুষ্ঠান! কীসের অনুষ্ঠান!

“ডেকোরেটদের সাথে কেন কথা বলেছে? আমাদের বাসায় কী কোনো প্রোগ্রাম আছে, আম্মু?”

তিনি হতাশ শ্বাস ফেলে মেয়ের পানে চাইলেন। মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে প্রতুত্তরে শান্ত স্বরে বললেন, “যাদের বাড়ির বউ হয়েছিস, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বউকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। তোর শশুর আসবে সেটারই দিনক্ষণ ঠিক করতে।”

তোর শশুর! মা’য়ের মুখে ফুপার এহেম সম্বোধন শুনে নিরা কিছু আড়ষ্ট হলো লজ্জায়। পরক্ষণেই বিভ্রম থেকে বেরিয়ে চোখ বড় বড় করে মা’য়ের যাওয়ার পানে চেয়ে রয়। ‘ওরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাড়ির বউকে তুলে নিয়ে যেতে চায়’ বাক্যটা পরপর তিনবার কানের কাছে এসে ধাক্কা খেলো। বিশ্বাস হচ্ছে না নিরার। স্বপ্ন লাগছে কথাগুলো। পরক্ষণেই অদ্ভুত এক দৈব বলে সর্বাঙ্গ আনন্দ আনন্দ ভয়ে নেচে উঠতে চাইলো। চোখে নেমে আসতে চাইলো পূর্নতার বর্ষা।

—–
অলস দুপুরের কাঠফাটা রোদটা বড্ড বিরক্ত করছে আজ। রমনার সবুজে ঘেরা মাঠটাতেও একরত্তি স্বস্তি স্বস্তির বাতাস নেই। প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর, রগচটা আচরণ যেনো কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো না৷ চারিদিকে থেকে থেকেই ভেসে বেড়াচ্ছে প্রবল উত্তাপের ভাপা সুভাস।

টানা বিশ মিনিট ধরে নাবিলের জন্য রমনায় অপেক্ষা করছে নিরা। গতিশীল ঘড়ির কাঁটা চারটার ঘর ছুঁবে ছুঁবে ভাব। কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে শেষবারের মতো রাস্তার দিকে চাইলো সে। এখনও আসার নাম নেই মহারাজের। এই রঙঢঙ করা নাটকীয় লোকটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এই ছেলে রেডি হতে মেয়েদের চেয়েও বেশি সময় নেয়। কোথাও বের হবার আগে একঘন্টা ধরে সে শার্ট-প্যান্ট সিলেক্ট করবে সে। আধাঘন্টা তার লেগে যায় কোন সুভাসের পার্ফিউম গায়ে মাখবে সেটা ভাবতেই। একটা জলজ্যান্ত পুরুষমানুষ হয়ে এতো ঢং এই লোক কীভাবে করতে পারে, নিরার বোধগম্য হয় না। নিরা তো পারলে কেবল পরনের থ্রি-পিসটা পরেই বেরিয়ে যেতো। মেয়ে হওয়ার দরুণ বাধ্য হয়েই তাকে একটু পরিপাটি থাকতে হয়। নয়তো এতো কাহিনী করার কী আছে!

এই বিরক্তির আরও দশ মিনিট সময়কাল পেরিয়ে ভূতের মতো কোথা থেকে উড়ে এসে দুম করে নিরার পাশে বসলো নাবিল। পরনে হালকা আকাশী রঙের শার্ট। মিড-ব্লু জিন্সপ্যান্টের সাথে আকাশী শার্টটা বেশ মানিয়েছে ওকে। শরীর থেকে ভেসে আসছে ছড়ানো বেস নোট ধরনের পার্ফিউমের খুশবু। ধপাস করে পাশে ঘেঁষে বসলো। হাতের চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিমটা নিরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শার্টের উপরের দু’টো বোতাম খুলে ক্লান্ত ভঙ্গিতে আকাশের পানে চেয়ে শ্বাস ফেললো। নিরা জড়বস্তুর মতো ঠান্ডা আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে হতচকিত হয়ে চেয়ো রইলো ওর পানে। নাবিল খাপছাড়া ভঙ্গিতে আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে খোলা একাংশ বুকের দিকে ফু দিতে দিতে অবশেষে চাইলো উত্তপ্ত প্রেয়সীর পানে। শার্টের বুক উঠানামা করে হাওয়া নিতে নিতে নিরাকে চোখ কঠিন করে চেয়ে থাকতে দেখে মনে মনে হাসল। আইসক্রিমটা ওর হাত থেকে টেনে নিয়ে সেটার খোলশ ছাড়িয়ে দিয়ে রসিকতা করে বলল, “খা এইটা, মাথাটা কুল হবে। যা গরম পড়সে, বউয়ের মাথা গরম হবে না তো কারটা হবে? খা বউ, খা। তোর অস্থিরতা আমার সহ্য হয় না।”

নিরা রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে চেয়ে অকস্মাৎ ঝারি মারার ভঙ্গিতে ওর হাতটা কনুই দিয়ে সরাতেই নাবিলের হাত ছিটকে আইসক্রিমটা শুকনো ঘাসের উপর গিয়ে পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় নাবিল হতবিহ্বল। বিস্ময় বিস্ময় ভাব নিয়ে মাটিতে গলে গলে লুটোপুটি খাওয়া আইসক্রিমটার দিকে একপলক চেয়ে দুঃখী দুঃখী স্বরে বললো, “ভাই তুই ফেললি কেন এইটা? না খাইলে না খাইতি। আমি খাইতাম। তোর কোনো আইডিয়া আছে কত কষ্ট হয়েছে এটা কিনতে আমার? এই চান্দিগলানো গরমে দেশে আইসক্রিমের একটা রিজার্ভ তুই কমাই দিলি। তোর এই অকাজের জন্য জিডিপির অংকে কী মারাত্মক হেরফের হইতে পারে কোনো আইডিয়া আছে তোর?”

নিরা হতাশ ভঙ্গিতে শ্বাস ফেলে কপালে হাত রাখলো। কী আশ্চর্য বিরক্তিকর কথাবার্তা লোকটার। এই সামান্য আইসক্রিমের জন্য নাকি দেশের জিডিপির অংকে বিরাট হেরফের হবে? বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে দেশ ও দশের। এটা কিনতে নাকি তার আবার কত কষ্ট হয়েছে!

নিরা ওর পানে কিছুক্ষণ কটমট করতে করতে চেয়ে প্রকট রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়াতে নিতেই নাবিলের পুরুষালী হাতের হেঁচকা টানে আকস্মিক ওর গায়ের উপর ধপাস করে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয় নিরা। পেছনের পথচারী শিশু দু’টো ঘটনা’র কী বুঝে খিলখিল করে হেসে উঠলো, কে জানে। নিরা বিব্রত হয় খানিক। পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে আসে তার পেলব মুখখানা। নাবিল হাতের ইশারায় বাচ্চা দু’টোকে ডাকে। পকেটে থেকে একশো টাকার দু’টো নোট বের করে ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “আমার বউয়ের রাগ গলিয়েছিস, এই খুশিতে একটা করে ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইসক্রিম খেয়ে নিস।”

টাকা পেয়ে বাচ্চা দু’টো হৈহৈ করে উঠলো। তাৎক্ষণিক দৌড়ে ছুটে গেলো আইসক্রিম কিনতে।

বেশ কিছুক্ষণ বিনাবাক্যে চেয়ে থেকে নিরা অভিমানী কন্ঠে শুধায়, “দেরি হলো কেন? আমি মেয়ে হয়ে কেন এতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো? কতক্ষণ ধরে গরমে বসে থাকা যায়? তোমার কাহিনী দেখে মনে হচ্ছে, আমি তোমার প্রেমিক আর তুমি আমার প্রেমিকা। রূপসী প্রেমিকার দেরি হওয়া নিয়ে কোনে আক্ষেপ থাকতে নেই আমার। তাই গায়ে লাগছে না আমার অপেক্ষা, তাই না?”

নাবিল ওর রাগী রাগী মুখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হু হা করে হেসে ফেলল আকস্মিক। হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা ওর। হাসতে হাসতেই বলল, “খারাপ বলিসনি৷ এই শহরের একঘেয়ে প্রেমগুলো আর মনে ধরছে না। আমরা একটু ভিন্নতা আনলে পারি প্রেমের টেস্টে৷ আমি তোর বউ, তুই আমার স্বামী। আমাদের সংসার হবে সলিড আর দামী।”

ওর বিচ্ছিরি ছন্দ শুনে চোখ বুঁজে হতাশ শ্বাস ফেলে নিরা। রাগ ভুলে দৃষ্টি আটকায় নাবিলের মুখে চেয়ে। ছেলেটাকে সত্যি দারুণ সুদর্শন লাগে সবসময়। এই ছেলে যেভাবেই থাকে, ওভাবেই কেমন গোছানো লাগে। বুকে অদ্ভুত শান্তি লাগে টের পায় এই মুখে তাকালে নিরা। সে মনে মনে হেসে নিশ্চুপ চেয়ে রয় নাবিলের শুভ্র, সতেজ মুখের পানে। পরক্ষণেই আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে মুখ গম্ভীর করে ঈর্ষান্বিত স্বরে বলে, “এতো রঙঢঙ করে সেটিংফেটিং হয়ে কেন এসেছো? এতো গুছিয়ে আসতে হবে আমার সামনে? মেয়েগুলো তাকিয়ে আছে তখন থেকে। আমি উঠে ওদের চোখ তুলে নিবো বলে দিলাম,নাবিল ভাই! মেয়েমানুষ এতো বেহায়া হবে কেন? অসহ্যকর!”

কোথায় কোন মেয়েরা ওর তাকিয়ে আছে সেসবে চোখ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না নাবিল। তার মনোযোগী দৃষ্টি কেবল নিজের তেজি অর্ধাঙ্গিনীর পানে। মুচকি হেসে ঘোর লাগানো চোখে সেভাবেই চেয়ে রইলো ওর হিংসুটে, মসৃণ চেহারায়। নিরার উদ্বিগ্নতা দেখে অজানা ভালো লাগায় ঠোঁট হেসে উঠলো ছেলেটার। সব উপেক্ষা করে নেশা নেশা বিভ্রর কন্ঠে হঠাৎ বলল, “আম্মু বলেছে, তোকে লাল বেনারসি পরিয়ে ঘরে তুলবে। তোরও কি ওই রঙটাই প্রিয়,নিরু?”

বিরক্তিমাখা মুখটা থেকে হঠাৎ করেই আঁধার কেটে আসে। শান্ত হয়ে যায় দৃষ্টি, মন। নিরা বাকহারা হয়ে দৃষ্টি এলোমেলো করে লজ্জা আড়াল করার চেষ্টা করলো। আমতাআমতা করে বলল, “জানি না।”

নাবিল আরেকটু ঘেঁষে বসলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি তো শুধু শাড়ীর কথাই বললাম, তুই এতসব ডার্টি ডার্টি কল্পনা করে হুদাই লজ্জা কেন পাচ্ছিস? ভেরি ব্যাড,নটি গার্ল।”

নিরা ফট করে রেগে গেলো পূনরায়। দুম করে বুকে কিল বসিয়ে এক মুহুর্তে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো। নাবিল হু হা করে হাসতে হাসতে পিছু নেয় ওর। পাশাপাশি পা চালাতে চালাতে বলে, “এসব কী! এইটা তো কথা ছিল না৷ এটা ডিল ছিল না, নিরু। প্রেমিকা তো আমি। তুই আমাকে আহ্লাদ না করে নিজেই গাল ফুলাচ্ছিস। প্রেমিক সমাজের নাক কাটিয়ে দিচ্ছিস ভাই। মানি না। বি আ জেন্টাল রেসপন্সিবল লাভার।”

নিরা জবাব না দিয়ে কঠিন চোখে চাইলো ফের। নাবিল একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করেই স্বস্তি পাচ্ছে। মুখ চলছে তো চলছেই। আশেপাশের একঘেয়ে সব কপোত-কপোতীদের দৃষ্টি তখনও ওদের পানেই। কিন্তু আমাদের জোড়া চড়ুই পাখিরা সেসব পরোয়া করলে তো? ওদের মিষ্টি প্রেম কাঠফাটা রোদেও নরম হয়ে গলে গলে পড়ল রমনার মাটিতে। তুমুল দুর্যোগেও বাতাসের সঙ্গে ওরা সম্পর্কের মধুর বাসনা ছড়ায়। চড়ুইদের প্রেমের উষ্ণতা বিলাতে হুট করেই তপ্ত রুক্ষতা থেকে তীব্র কোমল হয় বিকেলটা। কোথায় থেকে যেনো একটা মধুর সুর ভেসে আসে। কে যেনো দারুণ আনন্দ নিয়ে হেলেদুলে গাইছে:

“তোর সাথে পথে
নেমেছি শপথে
তোর সাথে ছোঁব রোদ…”

চলবে।