রোদ পোহাবার ছুতোয় পর্ব-৩১

0
9

গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ৩১
#নাজমুন_নাহার

সিগারেটের ধূসর ধোঁয়া বায়ুতে ছড়াতে ছড়াতে নিলয় আনমনেই চাইলো পাশের গেস্ট রুমের বারান্দায়। আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সহসাই হাতের সিগারেটটা সরিয়ে ফেললো ঠোঁট থেকে। হাসল জোরপূর্বক। শুধালো, “ঘুমাওনি?”

বর্ষা আরচোখে চেয়ে খোলা বারান্দার রেলিঙে হেলান দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, “স্মোকিং হ্যাভিট কবে থেকে চলছে? লং টাইম?”

নিলয় মাথা ঝাঁকিয়ে হাসল মৃদু। বলল, “নট টু লং।লাস্ট ইয়ার থেকে শুরু করেছিলাম। ঠিক হ্যাভিট না, সময় কাটাই। এটা আমায় সঙ্গ দেয়।”

“পৃথিবীতে আপনার মতো সুদর্শন পুরুষেরও সঙ্গীর অভাব?”

নিলয় ওর কথার অর্থ বুঝে তীক্ষ্ণ চোখে চায়। চাপা হেসে বলে, “সঙ্গী সঙ্গে না থাকতে চাইলে একটু তো অভাববোধ হওয়ারই কথা। দোষটা তবে আমার না, সঙ্গীর।”

“সঙ্গে থাকবে কী করে? আপনি তো দেশে থাকছেন না।”

“যেখানে থাকছি সেও সেখানেই থাকবে।”

“আচ্ছা? তবে শোনান তো একটু, তাকে নিয়ে আর কী কী প্ল্যান আছে ভবিষ্যতে?”

“আপাতত মূল টার্গেটই, তাকে পটানো।”

বর্ষা অবাক হয়। “পটানো মানে! পটিনি আমি?”

“উঁহু। তোমাকে একরত্তিও পটাতে সক্ষম হইনি। পটে গেলে আমাকে বিয়ে পাগল হয়ে যেতে। ইউ হ্যাভ ভেরি সফ্ট ফিলিং ফর মি।”

“মোটেও না। আমার ভালোবাসার ধরনটাই এমন। সফ্ট, স্লো এন্ড পিচফুল। ওসব আধুনিক তাড়াহুড়োর প্রেমে আমার পোষায়। আর শুনুন, আপনার নিজেকে অতো নিঃসঙ্গ ভাবার কোনো কারণ নেই। ইন ফ্যাক্ট আপনি নিঃসঙ্গই নন, বন্ধু।”

নিলয় সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে হাসল। সত্যি সত্যিই মেয়েটার চোখে নিজের প্রতি জন্ম নেওয়া ভালোবাসার নীরব প্রতিচ্ছবি দেখলো। দৃষ্টি পলকহীন রেখে জানতে চাইলো, “খাওয়া হয়েছে?”

“হু। ছোট কাকি, আমি,ইমু আর নিরা একসাথে খেয়েছি। আপনি খেয়েছেন?”

মাথা উপরনিচ করে নিলয়। বলে, “ঘরে ফিরে যাও। পরীদের রাতবিরেতে বাইরে থাকতে নেই। অশরীরিদের কুদৃষ্টি পড়বে। ফোন করছি, রিসিভ করো। সারারাত বকবক করে তোমার ঘুম হারাম করছি।”

“আপনি কী করবেন? আপনিও ঘরে ফিরুন। বকবক ইদানীং আপনার চেয়ে বেশি বোধহয় আমিই করছি।”

নিলয় নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকায়। বাধ্য ছেলের মতো বারান্দা ত্যাগ করতে করতে হাসে আবারও ইশৎ।

—-

জ্যোৎস্না পড়েছে আকাশে। তাল মিলিয়ে বাড়িতে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে ঝাড়বাতির বাহারি রঙের আলো। ছাঁদে নাবিলের বন্ধুদের আড্ডা জমে উঠেছে ক্লাব থেকে আসার পর থেকেই। গানে, গল্পে এদের হাসির রোল পড়েছে তুমুল। কনের সঙ্গে এসেছে ইমু। সে-ও আছে সেখানে। বাসরঘর সাজানোর ঝঞ্জাটটা ওদের কাউকেই খুব একটা পোহাতে হয়নি বলে সকলেই অবসরে আছে। এই চাপটা বর নিজেই সামলে নিয়েছে। বরং এসব হিজিবিজি অদ্ভুত ব্যাপার তার নিজেরও অপছন্দ। ঘরে কাঁচের টবে রজনীগন্ধা ফুল পানি সমিত সাজানো ছাড়া তেমন কিছুই করলো না। নিরা ব্যতিত প্রায় সকলেই রয়েছে এখানে। বর মহাশয় ঘরে তার প্রিয় বঁধুয়াকে রেখে বন্ধুদের সাথে কেন আড্ডায় বসেছে, সেই নিয়েও সকলের উদ্বিগ্নতার শেষ নেই। শাওন গিটারে টুংটাং বাজাতে বাজাতে বললো, “আজকে একটা বউয়ের ভীষণ অভাববোধ করছি। বউ জড়াইয়া ঘুমানোর বয়সে কোলবালিশরে আপন করলাম৷ বেচারা কোলবালিশ এখন নিজেকে আমার বউ দাবী করে। দু’দিন পর সত্যি সত্যি বিয়ে করে বসলে মরন্ত কোলবালিশ জীবিত হইয়া বলবে, ‘আমার ঘরে আমি কিছুতেই সতিন মেনে নিবো না। তুমি যে-কোনো একজনকে রাখতে পারবে,শাওন’ তখন আমি কী করবো?”

রিফাত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো, “ভেরি সিম্পল। অবভিয়াসলি তুই কোলবালিশকেই চুজ করবি। মনে রাখিস, যৌবনের প্রথম প্রেম আর বিবাহিত জীবনের প্রথম বউয়ের মতো আপন কেউ হয় না। প্রথমরা যেভাবে তোকে সহ্য করেছে, বাকিরা তেমন করবে না। প্রথমরা হয় সরলা, সুফলা, প্রতিমা। সো, অলওয়েজ চুজ ইউর ফার্স্ট গার্ল।”

নাবিল ওদের আলোচনা এড়িয়ে চাইলো ঝলসানো চাঁদের মুখে। কী অদ্ভুত সুন্দর একটা রাত! শাওন ওর বিভ্রমতা খেয়াল করে বলে, “এই বেটা তোর এখানে কী কাজ? ঘরে যা, দুষ্টু পুরুষ।”

নাবিল ওর কথা অগ্রাহ্য করে মোহগ্রস্তের মতো বললো, “একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। সেই প্রথম দিন থেকে নিরার সঙ্গে ঘটে যাওয়া প্রেমঘটিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে চাঁদটা একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চান্দিনায় যেদিন গেলাম। যেখান থেকে সবকিছুর সূত্রপাত, সেখানেও সাক্ষী হয়ে ছিল এই চাঁদ। আমাদের বিয়ের রাতেও পূর্ণিমা ছিল। প্রকৃতির এই কাকতালীয়তা আমাকে খুব আশ্চর্য করছে।”

সকলে একদৃষ্টি চায় আকাশের পানে। আজকের চাঁদটা সত্যি অদ্ভুত সুন্দর। পুরো আকাশ দখল করে রেখেছে রূপবতী প্রতিমার মতো। শাওন আক্ষেপ করে বলে,

“তোর কপাল আছে মাইরি! নয়তো মধুচন্দ্রিমায় হট হট চন্দ্রিমার দেখা, খুব কম মানুষই পায়। আমি বিয়ে করলে কবে পূর্ন চাঁদ উঠবে, ওইটা দেখেই করবো। আমার বাসররাতে যদি আজকের মতো গোলগাল একটা চাঁদ না উঠে ভাই, বাসরই ক্যান্সেল।”

ইমু অপলক চেয়ে একধ্যানে শুনছিলো ওর কথা। শেষের বাক্যটা কানে যাওয়া মাত্রই হাসি হাসি মুখটা নিভে গিয়ে দব করে দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠলো মেয়েটার। নাবিল আড়ালে তা খেয়াল করে বললো, “চাপা মারার জন্য সাত-পাঁচ না ভেবে ফট করে কিছু বলে দিলে কিন্তু বিপদ আছে,বন্ধু। দেখা গেলো, তোর মধুচন্দ্রিমায় চাঁদ না উঠে আকাশে উঠল মেঘ। অর্থাৎ রেইনি নাইট। বাসর রাতে বৃষ্টি পড়ার ব্যাপারটা কিন্তু খুবই রেয়ার এন্ড মোর রোমান্টিক দ্যেন মুনলাইট। সবাই পায় না এমন সুযোগ। তুই পেয়েও চাপা মারার বদৌলতে লস প্রজেক্ট।”

শাওন উৎসুক হয়ে শুধায়, “লস প্রজেক্ট! লস প্রজেক্ট কেন,মামা?”

ইমু দাঁতে দাঁত পিষে রসিয়ে রসিয়ে বললো, “কারণটা খুব সিম্পল,শাওন ভাই। কাউকে ডিনারের দাওয়াত করে এনে আপনি যদি বলেন, আজ বাদ দাও। আজ অমাবস্যা। অমাবস্যাতে আমার আবার উপোষ থাকে। তাহলে সেটা অপর পক্ষের জন্য অপমানজনক না? তারপর যতোই চন্দ্রবতী ধরা দিক, আপনার এই ডেকে এনে অপমান করার বিপরীতে সে আর আপনার দাওয়াত গ্রহণ করতে চাইবে? সাড়া দিবে আপনার কাছে আসতে? আপনি পূর্নিমা না হলে বাসর করবেন না, কথাটা বলে তাকে খুব সুক্ষভাবে অপমান করেছেন। সে ব্যাপক অপমানবোধ করছে। বউয়ের থেকে যার কাছে চাঁদের প্রায়োরিটি অধিক, তার উচিত চাঁদের সঙ্গেই সংসার করা। চাঁদকেই বিয়ে করা।”

শাওন হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো। কী আবোলতাবোল বলছে মেয়েটা!

“ডিনারের দাওয়াত, অমাবস্যা! কী বলছো এসব?”

নাবিল বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে হাসি চেপে বললো, “এইতো ইমু বুঝেছো। বুদ্ধিমতীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। এর জন্যই তোমাকে এতো ভাল্লাকে, বোনু।”

রিফাত সন্দিহান হয়ে চেয়ে বললো, “বাট তুমি এতো এগ্রেসিভ হচ্ছো কেন,ইমু? ওর ভবিষ্যৎ বউ তো আর এখানে বসে নেই।”

শাওন এতক্ষণে মেয়েটার তেতে উঠার কারণটা ধরতে পারলো। সে চাপা হেসে বলে, “নট ট্টু। আমার বিশ্বাস, আমার ভবিষ্যৎ বউ আশেপাশেই আছে৷ সে আমাকে চোখে চোখে রাখছে এখন থেকেই। ভেরি প্রটেক্টিভ।”

রিফাত হু হা করে হাসল। পরক্ষণেই চোখ ছোট ছোট করে রসিয়ে রসিয়ে বলল, “বায় এনি চান্স, তুই ভূত-প্রেতের সঙ্গে প্রেম চালাচ্ছিস না তো? নয়তো অমন অদৃশ্য প্রেমিকার এক্সিসটেন্স তোর আর ইমুর একার টের পাওয়ার কথা না। সত্যি করে বল, ঘটনা কী? ওই আত্না কী ইমুর কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল? এখন অক্কা পেয়েও প্রেমিককে ছাড়ছে না টাইপ ব্যাপার? তোর টেস্ট কোনদিকে রে? এমনিতেও তোকে আমার স্বাভাবিক বেটালোক মনে হয় না। এত বড় জুয়ান ছেলে এযাবৎকালে একটাও প্রেম করেনি… উঁহু, নট ট্রাস্টেবল।”

টুংটাং শব্দ ভাসল ম্যাসেজের। কেউ নাবিলের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে লিখলো, “আশ্চর্য! তোমার মনে কি একটুও মায়া-দয়া নেই? আমাকে একলা ঘরে ফেলে রেখে কোথায় বসে রইলে?”

নাবিল নিঃশব্দে হাসল। জানতে চাইলো, “শাড়ীটা পরেছিস?”

“শাড়ী পরতে বুঝি সারারাত পাড় করে দিবো? সেই কখন আমার শাড়ী পরা শেষ।”

নাবিলের ঠোঁটের হাসি প্রগাঢ় হয়। জনতার সম্মুখে তা আড়াল করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উঠে রিফাতের পিঠে হাত চাপড়ে বললো, “ইমুকে তুই যা-তা মনে করেছিস? তোর কোনো আইডিয়া আছে ওকে ভূত-প্রেত বলার শাস্তি হিসেবে ও তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ঠিক কয়শো গালি ছুড়বে? এই কাজটা ইমু করলে শাওন নিজেও ইমুকেই সাপোর্ট দিবে এটা জানিস? আফটার অল, ভবিষ্যৎ বউ নিয়ে মজা করেছিস। গেলাম, নিজেকে নিরাপদে রাখিস।”

রিফাত ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইলো নাবিলের যাওয়ার পানে। আশ্চর্য! ইমুকে সে কখন ভূত-প্রেত বললো? ও কেন গালি দিতে যাবে রিফাতকে? আর কে-ই বা কার ভবিষ্যৎ বউ!

—–

দিনের সাতরঙা সাজ ছাড়িয়ে নিশিতে নববধূ নিজেকে মুড়িয়েছে অতি আটপৌরে রুপে। সকল রঙবেরঙের আধুনিকতাকে উপেক্ষা করে সে আজ পরেছে হালকা কারচুপির কাজ করা জরজেটের একটা সফেদ শাড়ী। খোলা চুলে জরিয়েছে মাদকীয় সুভাস ছড়ানো শুভ্র বেলীফুল। আলতা জরানো পায়ে পরেছে অতি চিকন সুক্ষ কাজের সরলা জোড়া নুপুর। নড়েচড়ে উঠলে ঝনঝন করে বাজছে দুই হাতের মুঠোভরা সাদা কাঁচের চুরি। মুখে নেই কোনো কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া, না আছে শরীরে বিচ্ছিরি ভারী পোশাক। স্বামীর চিরকালের অতি গোপন ইচ্ছে পূরণ করার অভিলাষেই নিজেকে সফেদে মুড়িয়েছে মেয়েটা। নাবিলের ইচ্ছে, মধুচন্দ্রিমায় তার প্রেয়সীকে সাদা শাড়ীতে দেখবে। আর নিজে পরবে, সাদা পাঞ্জাবী। নিজেদেরকে ঢাকবে পবিত্রতার রঙে। তার মতে, সাদা হচ্ছে চির শান্তির রঙ। আরামের রঙ, শুদ্ধতার রঙ। এই রাত তার জন্য বিশেষ শান্তির। তাই পোশাকের রঙটাও হওয়া চাই আরামের।

চুলে একটু আঙুল বুলিয়ে দরজায় কড়া নাড়ার প্রস্তুতি নেয় নাবিল।

সফেদ ঘরে নৈশপ্রেমের দূতের মতো আবেদনময় খুশবু ছড়াচ্ছে প্রেমিকদের গোপন প্রেমিকা রজনীগন্ধা। ড্রিমলাইটের টিমটিমে হলদেটে আলোয় সফেদ বিছানা, পর্দা ধারণ করেছে কমলা রঙা রুপ। পাল্লা দিয়ে আলো ছড়াচ্ছে রাত আসমানের সুন্দরী চন্দ্রিমা। কোনো এক অদৃশ্য জাদুবলে, ওদের জীবনের অতি বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে জ্যোৎস্না এসেছে ভীষণ উৎসব করে। আজ-ও পূর্নিমার রাত। সকল উজ্জ্বলতা সঁপে দু’টো ব্যাকুল যুবক-যুবতীকে বিশেষ অনুভব করাতে আজও রুপকুমারী চাঁদ ধরা দিয়েছে তার নৈসর্গিক রুপের ঝলক নিয়ে। দুধসাদা অঙ্গের আলোর সঙ্গে নাবিলের ঘরে প্রবেশ করছে নব মিলনের আগাম প্রণয়বাতাস। সেই বাতাস নেশাগ্রস্থের মতো নাক টেনে শুষে চোখে কাজল লেপ্টে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একঝলক নিজেকে দেখলো নিরা। শুভ্র রাজ্যের মায়াবী প্রতিমা রুপে নিজেকে দেখে কিছুটা আরক্ত হয় লজ্জায়। কেউ প্রেমের বার্তা নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে তখনই। নিরা শেষবারের মতো চুলে একটু চিরুনি চালিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সুপুরুষকে আবিষ্কার করলো অন্যরকম রুপে। দরজার পাশে দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো নাবিল। ক্ষণে ক্ষণে চোখ বুলাচ্ছে নিরার শাড়ীর আনাচে-কানাচে। খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখছে কী যেনো। দৃষ্টি তার কোথায়, কে জানে। নিরা বিভ্রান্ত হয়ে বলে, “দাঁড়িয়ে আছো যে?”

নাবিল জবাব না দিয়ে স্থির থেকে ফের দৃষ্টি বুলায় নিরার মোহতায় মোড়ানো নারীত্ব দেহে। মেয়েটার পাতলা সাদা শাড়ীর ভাজে ভাজে দৃশ্যমান শরীরের প্রতিটা নিখুঁত রূপরেখা। দীঘির মতো ঢলঢলে লতানো কোমরটাও স্পষ্টতর। নিরা চোখ ছোট ছোট করে বোঝার চেষ্টা করে নাবিলের মতিগতি। এভাবে রোবটের মতো স্টাচু হয়ে যাওয়ার অর্থ বোধগম্য হলো না। নাবিল শরীর থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি রাখে নিরার ঘাড়ে। এই অঘটন ঘটানোর জন্যই শপের সকল শাড়ী উপেক্ষা করে সে তুলে নিয়েছিল এই পাতলা, ফিনফিনে শাড়ীটা। শাড়ীর উপরিভাগে উন্মুক্ত থাকবে তার একান্ত নারীর মসৃণ দেহ। সে না ছুঁয়েই আদর করবে ওদের দৃষ্টি বুলিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে নাবিল নেশাগ্রস্তের মতো অকস্মাৎ ঝাপিয়ে পড়ল নিরার পেলব তুলোর শরীরে। আকস্মিক হামলায় নিরা কিছুটা হতবিহ্বল। পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নিলো নিজেকে। ওকে কিছু বলা-কওয়ার সুযোগ না দিয়েই নাবিল টপাটপ কয়েকশো চুমু বর্ষণ করে ফেললো নিরার গালে, কপালে,গলায়। কবিতার মতো করে জেমসের গানের কয়েকটা লাইন আবৃত্তি করলো,
“সুন্দরীতম আমার
তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারো?
ওই আকাশ আমার
নীলাকাশ রবে নিরুত্তর
যদি তুমি বল
আমি একান্ত তোমার”

নিরা কিছুটা হতবিহ্বল হলেও পরমুহূর্তেই দরজার পানে চোখ যেতেই মেজাজ চটে উঠলো মেয়েটার। বিরক্তি নিয়ে নিজেকে ছাড়ালো ওর থেকে। দরজার পানে চেয়ে ক্ষোভ ঝাড়তে ঝাড়তে বললো, “অসভ্য, লম্পট। লাজলজ্জার বালাই নেই। কেউ দেখে ফেললে কী হতো?”

নাবিল সত্যি সত্যিই হাসল লম্পটের মতো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে মুখে শিষ বাজিয়ে বললো, “কী হতো? একটু ধরাই তো পড়তি। আহামরি কিছু না। এতো শুদ্ধতা দিয়ে কি তেল বেঁচে খাবি? বউয়ের একটু কলঙ্ক না করে দিতে পারলে কী বালের প্রেম করলাম!”

নিরা দরজা আটকাতে আটকাতে তীব্র তাতানো চোখে চায়। আয়নার সামনে নিজেকে একটু দেখে নিয়ে দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসল। শরীরে সুভাষিত পার্ফিউম মাখতে মাখতে ঘরে নজর ঘুরাতে ঘুরাতে নাবিল বলে, “ঘর তুই গুছিয়েছিস? বাসর রাতে স্বামীর শার্ট-প্যান্টও আয়রন করেছিস? বাহহহ! ইমোশনাল করে দিলে তুমি আমায়। লাভ ইউ, বেইবিইইই!”

কথাটা বলে কেমন নাটকীয় ভঙ্গিতে ঠোঁট দ্বারা উড়ন্ত চুমু পাঠালো নাবিল। নিরার তেতে উঠা মুখে চেয়ে আরেকটু তাতিয়ে দিতে বললো, “সারাদিন শরীরটার উপর দিয়ে যা ধকল গেলো। আমাদের ঘুমানো দরকার। আয় একসাথে ঘুমাই। স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঘুমাইলে সাওয়াব আছে। ঘুমাইলে দুইশো ওয়ার্ডের এনার্জি আসবে। তাছাড়া বাসরটাও তো করা দরকার। রাত তো আর কম হলো না। বাসর করে ঘুমিয়ে পড়ি, আয়।”

নিরা অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে চেয়ে রইলো। লোকটা এমনভাবে বলছে যেনো বাসর না, দু’টো নাপা কিংবা প্যারাসিটেমল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। নাবিল ওর মনের ঘটনা বুঝে ফের রসিয়ে রসিয়ে বলে, “করবি না বাসর? আসলেই করবি না? ল্যাহ্! তো বিয়ে করে কী লাভ হলো? ছলনাময়ী! ভুলিয়েভালিয়ে ফাঁসিয়ে একটা দুধের শিশুকে বিয়ে করে এখন বাসর করতে দিচ্ছে না। না দিলে না দে। তোর বাসর তুইই কর,বেয়াদব। আমার বাসর আমি আলাদাই করতে পারি।”

নিরা তপ্ত চোখে চেয়ে মাঝামাঝিতে কোলবালিশের বেরিকেট দিয়ে উল্টো পিঠ হয়ে শুয়ে বললো, “তুমি আর কখোনও আমার সাথে কথা বলবে না। অসহ্য লোক!”

নাবিল হু হা করে হাসতে বললো, “তোর আদেশ আমি মানলে তো! স্বামীকে আদেশ করো? জাহান্নামে পু্ড়বে পাপীষ্ঠ রমণী! তোর কোলবালিশের গোষ্ঠী কিলাই। সরা এই বাল। কোলবালিশ দিয়ে আমার বিশেষ নাইট অবরোধ করতে আসছে।”

চির অবাধ্য পুরুষ ঠিকি তার অভদ্রতার পরিচয় দিতে কোলবালিশের কোমরে এক লাত্থি মেরে সেটা কোথায় ফেললো, কে জানে। নিরা বুঝলো, তাকে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই। তাকে কোনো বেলাতেই কোনোকিছুর অধিকার যেচে দিতে হয় না৷ সে অধিকার আদায় করে নেওয়ার মানুষ। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মুখে কুরুক্ষেত্র ঘটিয়ে বাস্তবে তেমন কিছুই করলো না নাবিল। লক্ষী ছেলের মতো শুয়ে কেবল একটা সরল আবদার করলো, “আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে, নিরু। বুকের ভেতরে যে-ই এক ভাগ জ্বলন থেকে গিয়েছিল, সেটাকে তোর শীতল স্পর্শে নেভা। আমাকে তোর কোমল আদর দিয়ে উপলব্ধি করা, তুই আমারই ঘরে আছিস। আমার অধিকার তুই। আমার ঘরণী, আমার নারী। একটু বিশ্বাস করা যে তুই আমার হয়েছিস।”

নিরা হেসে ফেললো হঠাৎ। রাগের লাভা নিভে গিয়ে ঠোঁটে ফুটে উঠলো সুখ সুখ হাসি। কিছুক্ষণ মায়াভরা দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে নাবিলের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো, “তোমাকে মাঝে মধ্যে এত ভালো লাগে আমার। এত লক্ষী মনে হয়। ইচ্ছে হয়, একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো কোলে নিয়ে আদর করি। চুমোয় চুমোয় গাল ভরিয়ে দিতেও ইচ্ছে হয়, বিশ্বাস করো। তুমি অসম্ভব সুদর্শন, নাবিল ভাই।”

চুমোয় চুমোয় গাল ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে! নাবিল ঝড়ের গতিতে লাফিয়ে উঠলো কথাটা শোনামাত্রই। নিরা থতমত খায় কিছুটা। কী হলো আবার!

“কী বললি? আরেকবার বল। ওয়ান্স এগেইন। তোর আমাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে? আসলেই?”

বলেই নিজের গাল পেতে দিলো নাবিল। বললো, “এইযে নে গাল ৷ খা চুমু। আমার গাল এখন থেকে পরিপূর্ণভাবে তোর। চাইলে কেটে আঁচলে বেঁধে রাখতে পারিস। যখন ইচ্ছে হবে, জাস্ট খুলে টপাটপ চুমু খাবি। ইচ্ছে হলে আমার কলিজাটাও কেটে নিয়ে নে। তুই বেলা-অবেলা আমার কলিজায় চুমু খাচ্ছিস, ভাবতেই কী মজা লাগছে। হাউউ পিচফুল!”

নিরা হতাশ শ্বাস ফেলে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসলো। হেসে ফেললো সহসাই। রাগ ঝাড়ার বিপরীতে সত্যি সত্যি গালে কতগুলো চুমু খেলো ভীষণ আদর করে। কিছুটা প্রশ্রয় পেয়ে নাবিল জন্মলগ্ন শিশুর মতো চোখ বুঁজে নিজেকে সঁপে দিলো। বিড়ালের মতো লুফে নিলো সবটুকু আদর। জড়িয়ে ধরলো কেমন আহ্লাদ করে। নিরা হাসে। বুকে থাকা ওর মাথাটায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,নাবিল ভাই। তোমাকে আমি পাহাড়ের মতো ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসতে না পারার মুহুর্ত যদি কোনোদিন আসে, আমি সত্যি মরে যাবো তোমাকে ভালো না বাসতে পারার আক্ষেপ নিয়ে। আমার সবটুকু আয়ু তোমার হোক।”

নাবিল মায়াবতীর দিকে চেয়ে থাকে মধুর দৃষ্টিতে। এতো মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা!

“তোর আয়ু আমার লাগবে না। বরং আমার সবকিছুই তোর হোক। ভালোবাসা, সুখ, জীবন….সব।”

বলেই কোন মোহতে ডুবে হাত কোথায় নিয়ে গেলো, কে জানে। ওর শাড়ীর ভাজে নিজের উন্মাদ পুরুষালি হাতের বিচরণ নিভৃতে ঘটাতেই নিরা সহসাই ভূতে ধরা রোগীর মতো কেঁপে বড় বড় চোখ করে তাকায়। উত্তেজনায় ছিটকে সরে যেতে নিতেই নাবিল তাৎক্ষণিক ঝড়ের গতিতে উঠে এক থাবায় ওর আঁচল টেনে ধরে বললো, “উঁহু।৷ আর পালাবি না। কাছে আয়।”

নিরা ঘাড়ে হাত রাখে শাড়ী বাঁচানোর প্রচেষ্টায়। চায় করুণ করে অসহায় চোখে। নাবিলের দৃষ্টি তখনও তেমনই প্রত্যাশিত বেহেলাজ, অশান্ত, ধারালো। ঠোঁটে স্থায়ী রইলো সেই পরিচিত দুষ্টু হাসি। সে-ই নির্লজ্জ হাসি স্থির রেখে আঁচল টানতে টানতে নিজের কাছে টেনে আনলো লাজুকলতাকে। ওর বিক্ষিপ্ত চুলগুলো মুখের সামনে এসে নিরার কোমল গাল স্পর্শ করতেই ঢাক-ঢোলের মতো উঠানামা করতে শুরু করলো মেয়েটার স্থির হৃদপিণ্ড। কোথা হতে মধুর এক টুকরো শীতল বাতাস তার নারীসুলভ শরীরকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বাঙ্গে শিহরণ তৈরি করলো অবাধ্য ভূমিকম্পের ন্যায়। নাবিল স্পষ্ট টের পায় ওর নিশ্বাসের গতি। প্রগাঢ় হয় তার ঠোঁটের বাঁকা হাসি। চোখ-মুখের শয়তানি হাসি বজায় রেখে বললো, “যত নিজেকে গুটাবি, তত লজ্জা বাড়াবো। আবারও বলছি, প্রশ্রয় দে। নয়তো আমাকে ঠেকানোর ক্ষমতা তোর নেই।”

নিরা মুখ তুলে আবারও চাইলো সে-ই বেপরোয়া চোখ জোড়ায়। চোখের কোটরে পৈশাচিক আনন্দ উপচে পড়ছে শয়তানটার। এই ছেলেকে কে শোনাবে নিরার বুকের তীব্র প্রলয় দহন? কে বোঝাবে, সে ছুঁয়ে দিলেই নিরা আরক্ত হয়ে যাচ্ছে সবুজ লাজুকলতা হয়ে। নিরার ভেতরের তোলপাড় কে জানাবে লোকটাকে? ইশশ! এত লজ্জা! এত লজ্জা! এত লজ্জা! লোকটার স্পর্শ এত অবাধ্য!

“চুমু খা। এইযে, এখানে।”

নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে আঙুল বুলিয়ে ইশারা করলো নাবিল। নিরা চমকে তাকালো। কী বলছে অসভ্য লোকটা! ছিহহ্!
নিরার মতিগতিতে হেলদোল না দেখে নাবিল অকস্মাৎ কোমর টেনে বুকের সঙ্গে ওকে মিশিয়ে বললো, “মাথায় সব নষ্ট চিন্তা ঘুরছে? চুমুটা না খেয়ে আমাকে অবাধ্য করার উদ্দেশ্য তোর?”

নিরা ঝড়ের গতিতে দুইদিকে মাথা দোলায়৷ নাবিল ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে চোখ বুঁজে বলে,

“চুমুটা খা তাহলে। ধ্যাত! খা তো ভাই। মজা আছে। এর আগে ট্টাই করেছি না?”

কী আশ্চর্য লোক! এমনভাবে চুমু খাওয়ার কথা বলছে যেনো চুমু নয়, নিরাকে সে খাওয়াতে যাচ্ছে খুব সুস্বাদু একটা ডেইরি মিল্ক চকোলেট।

নাকের সামনে মানুষটার পুরুষালি নিশ্বাস পড়ছে ধীরগতিতে। নিরা বিপদ আশঙ্কা বুঝে কাঁপা কাঁপা হাতে গাল স্পর্শ করে ওর। নাবিল হাসে মুচকি। ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে দেয় আরও কিছুটা। নিরা ঠোঁটের সম্মুখে মুখ নিয়েও অকস্মাৎ থেকে যায়। নাবিল ভ্রু কুঁচকে চায়। কিছু বলার পূর্বেই নিরা মাথা নুয়িয়ে বলে, “আমি পারবো না। মরে যাচ্ছি আমি। লজ্জায় আমার মাথা ঘুরচ্ছে, নাবিল ভাই।”

বলে কী মেয়েটা! লজ্জায় মাথা ঘুরচ্ছে? নাবিল হাসল নিঃশব্দে। বোকা নিরু, ভিতু নিরু। কানের কাছে মুখ নিয়ে শুধালো, “তাহলে….

নিরা মাঝপথে থামিয়ে চোখে চোক রেখে বললো, ” আমি আটকাবো না তোমায়।”

“আটকাবি না বললে হবে না। প্রশ্রয়ও চাই। রাজী?”

নিরা শির নুয়িয়ে নিশ্চুপ লজ্জা আড়াল করলো নিজের। নীরবতা থেকেই সম্মতি জানালো গোপনে।

মধ্যরাত। চাঁদ যখন তার আপন মহিমা প্রদর্শনে ব্যস্ত, তখন পৃথিবীর সমস্ত নীরবতার সুযোগ লুফে নিয়ে তৃষ্ণার্ত বয়সের কামনা মেটাবার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠলো একটা বেয়াড়া পুরুষ। লজ্জাবতীর ঠোঁটের গোলাপীভাব উবে গিয়ে তাতে রক্ত জমে স্পষ্ট হয়েছে গাঢ় লাল আভা ইতোমধ্যেই। শরীরে পড়েছে কালো দাগ। ভূমিকম্পের ন্যায় শিহরণ বয়ে গিয়েছিল পুরোটা সময় নিরার নরম, নাজুক দেহপৃষ্ঠে । পুরোটা সময় ওদের নিঃশব্দ আস্কারা, প্রশ্রয়, যোগাযোগ হয়েছিল কেবল চোখে চোখেই। ব্যক্ত করেছিল হৃদয়ে পুষে রাখা সকল অনুচ্চারিত ভালোবাসা। বিপরীতে পেয়েছিল প্রেয়সীর নীরব সম্মতি। নিরা উপলব্ধি করে, এই লোকটা একটা উন্মাদ ঘোড়া। সে একটা ঝড়। নিরা আরও উপলব্ধি করে, এই ছেলের স্পর্শের ভাষা তার কথার চেয়েও প্রখর। তার চোখের যোগাযোগ পৃথিবীর সমস্ত নেশাকে হার মানাতে সক্ষম। সে দাবানলের ওই তপ্ত অগ্নিশিখা। যার একটু ছোঁয়ায় নিরার সর্বাঙ্গে এক নিমিষেই জ্বলে যায়। এই দস্যি ছেলে নিরার মনে হৃদয়দহন ঘটাতে ঘটাতে কখন যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওকে বশীভূত করে ফেলেছিল, নিরা জানে না। শুধু জানে, এই ছেলে একটা নেশা। যাকে ভালোবেসে নারীত্বের সকল আবেগ অনায়াসেই ঢেলে দেওয়া যায়। যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেওয়া যায় এই অগোছালো ছেলেটার স্পর্শ সর্বাঙ্গে বহন করে। তার দিকে একশো কোটি বছর চেয়ে থাকলেও ফুরাবে না তৃপ্তি। তাকে সম্ভবত আজন্ম ভালোবাসা যায় অক্লান্ত, নিরলসভাবে!

পূর্ণচন্দ্রকে সাক্ষী রেখে সে যৌবনের সমস্ত ব্যাকুলতা নিভিয়ে শেষ নিশ্বাসটুকু ছাড়লো প্রেয়সীর বিক্ষিপ্ত, বিধ্বস্ত মুখের কাছে। দৃষ্টি বিনিময় হতেই পৃথিবীর সমস্ত প্রশান্তি বুকে বয়ে হাসে দু’জন একসাথে। নাবিল কানের কাছে মুখ ডুবিয়ে বলে, “আই লাভ ইউ!”

প্রতুত্তরে ওর বুকে লজ্জা আড়াল করলো নিরা। আড়াল করলো বুকের কালবৈশাখী উঠানামাও। নাবিল হাসে।বুকের মধ্যে সুখের স্রোত নিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রেয়সীকে। কোথায় একটা গানের মধুর সুর টের পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বেশ মিষ্টি করে গাইছে,

এই রাত তোমার-আমার
এই চাঁদ তোমার-আমার
শুধু দু’জনার…”

চলবে।