#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_10
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি
— “ আমার রুমের দরজা খোলা রাখবো , না কি লক নষ্ট করে রেখে আমার বউ কে আদর করবো , সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেখানে তোকে নাক না গলালেও চলবে। ”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে মেঘলা। নিবিড়ের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,,
—“ তুমি ও কে সত্যিই ছুঁয়েছো? ওর গলার লাভ বাইট গুলো তোমার দেওয়া? ”
নিবিড় চোখ গরম করে মেঘলার দিকে তাকায়। শোয়া থেকে উঠে বসে হাত বাড়িয়ে পাশে থাকা তোয়ালেটা কোমরে পেঁচিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হেঁচকা টানে মেঘলাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,
—“ তোর কি এখনও হ্যাংওভার কাটেনি? আর তুই এখানে কি করছিস? আমি তো তোকে সকালে আনতে যাবো বলেছিলাম?”
—“ তোমার বউ এর আদরে আমার কথা তোমার মনে আছে? ”
—“ পাগল হয়ে গেছিস না কি? কি সব আবোল তাবোল বকে চলেছিস? ”
মেঘলা করুণ চাহনিতে নিবিড়ের চোখে চোখ রাখে। নিবিড়ের বুকে , গলায় হাত রেখে প্রশ্ন করে,,,
—“ তোমার বুকে এই নখের আঁচড় , গলায় লাভ বাইট এই সব কিছু ওই লাবণ্যর দেওয়া?”
প্রচন্ড রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে নিবিড় মেঘলার হাত দুটো পিছনে মুড়িয়ে ধরে। মেঘলার চোখের কোণ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে আসে।
—“ কাল তুমি লাবণ্যর শরীর ছুঁয়েছো? তোমার শরীরের প্রতিটা ভাজেও কি লাবণ্যর ছোঁয়া আছে?”
নিবিড় আর নিজের রাই সংবরণ করতে পারে না। মেঘলার এক হাত গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে পেছনে মুচড়ে ধরে। আর এক হাত দিয়ে গাল দুটো চেপে ধরে নিবিড়। মেঘলা দু চোখ বন্ধ করে অস্পষ্ট স্বরে ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। দু চোখ থেকে সমুদ্রের ন্যায় নোনাপানি ঝাঁপিয়ে আসে।
—“ লাবণ্য আমার বিয়ে করা স্ত্রী মেঘলা। তাই আমাদের পার্সোনাল ম্যাটারে প্রশ্ন করার অধিকার তোর নেই। আর লাবণ্য নয় ভাবী বল। ”
মেঘলাকে সজোরে ধাক্কা দেয় নিবিড়। মেঘলা কয়েক পা পিছিয়ে নিজের টাল সামলে নেয়।
ব্যথায় নিজের কাঁধ ধরে নেয়। কাঁপা গলায় বলে উঠে,,,
—“ খুব ভালোবাসো লাবণ্যকে তাই না নিবিড়! ”
— “ নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসাটাই তো স্বাভাবিক তাই না! ”
—“ আর আমার ভালোবাসা? ”
—“ বাসি তো ভালোবাসি বোন হিসেবে। ”
—“ নিবিড়..! ”
—“ ডোন্ট কল মি নিবিড়.. সেড মি নিবিড় ভাইয়া। তুই এখন আসতে পারিস। নীচে যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”
—“ এতোটা অবহেলা করছো আমায়! তুমি কি সব ভুলে গেছো? ভুলে গেছো আমাদের তিন বছরের সম্পর্কের কথা?”
—“ হুম তা নাহলে বিয়ে করতে পারতাম। তুই আমার বোন এতটুকুই তোর সাথে আমার সম্পর্ক। চল যা এখন..। আর এভাবে আমার রুমে আসবি না। লাবণ্য খারাপ ভাবতে পারে। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সুখে সংসার করতে চাই। ”
মেঘলাকে আর কিছু বলতে দেয়না নিবিড়। হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে বের করে দেয় নিবিড়। মেঘলা কিছু বলতে গেলেই নিবিড় দরজাটা ওর মুখের ওপর বন্ধ করে দেয়। মেঘলা বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কাতে থাকে। নিবিড় সে সবে পাত্তা দেয় না।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুকের আঁচড় , গলায় লাল দাগ দেখে মুচকি হাসে নিবিড়। ওর মনে আর কোনও সংশয় নেই , লাবণ্যকে নিয়েই সারাজীবন সংসার করতে পারবে নিবিড়। লাবণ্যই ওর জীবন সঙ্গী হিসেবে পারফেক্ট।
মেঘলা চোখের পানি মুছে টলমল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে ড্রয়িং রুমে। ড্রয়িং রুমে তখন সবার হাসির উল্লাস। শিউলি বেগম সিঁড়ি থেকে মেঘলাকে নামতে দেখে এগিয়ে গেলেন।
—“ কি রে মা হাসিমুখে উপরে গেলি। আর নামছিস মুখ গোমড়া করে কেন? ”
মেঘলা ছলছল নয়নে শিউলি বেগমের দিকে তাকায়। কেনো জানি ওর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ওর নিবিড় কে ফিরিয়ে দিতে। শিউলি বেগমকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে মেঘলা।
—“ পাগল মেয়ে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে মা আমার? ”
মেঘলার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে মামী সবটা জানার পরও! নিজেকে কোনরকমে সামলে নেয় মেঘলা।
রুমানিয়া বেগম তখন লাবণ্যর সাথে হাসিতে মাতোয়ারা হয়ে ছিলেন। হঠাৎ মেয়ের এমন আচরণে রুমানিয়া বেগম সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
—“ কি হয়েছে মেঘলা কাঁদছিলে কেনো তুমি? ”
মেঘলা গম্ভীর গলায় বলে উঠে,,,
—“ কিছু হয়নি তো। আমার আবার কি হবার আছে! ”
কিছুটা হলেও রুমানিয়া বেগম ধরতে পারে মেয়ের কথা। লাবণ্য মেঘলার কাছে এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে।
—“ তুমি তো তোমার ভাইয়ার কাছে গিয়েছিলে। তোমার ভাইয়ার সাথে কি তোমার কিছু হয়েছে? না মানে তোমায় কি উনি বকুনি দিয়েছেন? ”
লাবণ্যর এমন প্রশ্ন মেঘলার কাছে বোকামোর ইঙ্গিত বোঝায়। মেঘলা লাবণ্যকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,
—“ এই শোনো আমি বাচ্চা নই যে নিবিড় ভাইয়া আমাকে বকুনি দিবে। আর আমাদের সম্পর্কটা… ”
মেঘলা কথাগুলো বলার সময় ওর মায়ের দিকে চোখ যায়। ওর মায়ের ইশারায় ও চুপ হয়ে যায়। তবে লাবণ্যর ওপর রাগটা ক্রমশ প্রখর হয়।
লাবণ্য মুচকি হেসে মেঘলাকে বলে,,,
—“ বুঝেছি নির্ঘাত ভাই বোনের ঝগড়া হয়েছে । আচ্ছা আমি তোমার হয়ে তোমার ভাইয়াকে বকা দিব কেমন। আর আমার একটা মাত্র আদরের ননদিনীর সাথে ঝগড়া যেনো না করে।”
মেঘলা লাবণ্যর মুখে ননদিনীর কথা শুনে রাগ চরমে উঠে। খুন করতে ইচ্ছা হয় লাবণ্যকে ওর। মন চায় গলা টিপে এখুনি শেষ করে দিতে। ও এলো বলেই তো নিবিড় কে আর এই জন্মে পেলো না মেঘলা। মেঘলা এক ঝটকায় লাবণ্যর হাত সরিয়ে নিলো। মেঘলার এরুপ আচরণে লাবণ্যর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো।
—“ তুমি আমার জন্য অনেক করেছো লাবণ্য। থাক তোমাকে আর আমার হয়ে কিছু করতে হবে না। আর ননদিনী! কে কার ননদীনি হ্যা? ”
রূমানিয়া বেগম ধমকে উঠেন মেঘলাকে। মায়ের ধমকানির আওয়াজে মেঘলা কিছুটা দমে যায়।
—“ মুখ সামলে কথা বল। ও তোর ভাবী হয় , সম্পর্কে তুই ওর ননদ। বড়ো ভাবীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দে।”
—“ ভাবী! ভাবী মাই ফুট! আর প্রাপ্য সম্মান! ওটা তোমরা আমাকে দিয়েছো? ”
—“ মেঘলা… ”
রুমানিয়া বেগম আর সহ্য করতে না পেরে মেয়ের গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন। কারণ মেয়ে কি চায় তা ওনার ভালো মতোই জানা আছে। কিন্তু যা কখনো সম্ভব নয় তার জন্য ভাবাও উচিৎ নয়। মেয়ে যদি অবুঝ হয় তার জন্য শুধু থাপ্পড় কেনো? মারতেও প্রস্তুত রুমানিয়া বেগম।
লাবণ্য মেঘলাকে ধরতে গেলে মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে একছুটে পালিয়ে যায়।
—“ অতো বড়ো মেয়েটার গায়ে হাত তুললি? ”
—“ মেয়ে যদি বেপথে হাঁটে তাহলে তো শাসন করতেই হবে ভাবী! ”
—“ তাই বলে.. ”
শিউলি বেগম পুনরায় প্রশ্ন করে উঠে কিন্তু তাকে থামিয়ে লাবণ্য বলে উঠে,,,
—“ আপনি এভাবে গায়ে সাত তুলো ঠিক করেন নি ফুপ্পিমা। ওর নিশ্চয়ই কোথাও একটা কষ্ট আছে। সেটা জানা উচিৎ আমাদের। ওর সমস্যাটা সমাধান করা উচিৎ আমাদের। ”
শিউলি বেগম লাবণ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মূলত বোঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ে কি বলছে! মেঘলা যে ওর স্বামীকে চায়। সেটা জানলে কি করবে ও!!
শিউলি বেগম মেঘলা রুমে চলে আসে। মেঘলা বিছানায় বালিশ বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। শিউলি বেগম বিছানায় বসে মেঘলার মাথায় হাত রাখে।
চলবে… ..
(লেখায় কোনও ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। )