লাবণ্যর সংসার পর্ব-১৪

0
661

#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_14
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি

—“ আপ…আপনি এখানে কেনো? আমি কোথায় আছি!”

লাবণ্য খানিক ভয় পায় চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিয়ে একপ্রকার ছটফট করতে থাকে। নিবিড় রুমের লাইটটা জোরালো করে দেয়। লাবণ্যর হাতটা ধরে ফেলে।

—“ লাবণ্য শান্ত হও। ভয় পেয়ো না। তুমি এখনো অভ্রের বাড়িতেই আছো। ”

নিবিড়ের শীতল কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে লাবণ্য মাথা নীচু করে শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে নিবিড়ের দিকে একপলক তাকায়। অবাক হয়ে নিবিড়কে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,,,

—“ আপনি কি করে জানলেন আমি এখানে আছি?”

—“ অভ্র বলেছে তুমি ওর বাড়িতে আছো । কল করেছিলো আমায় দ্রুত চলে আসতে বলে এখানে।”

লাবণ্য এবার অবাকের শেষ সীমা অতিক্রম করে ফেলে।

—“ অভ্র আপনাকে কল করেছিলো মানে? আমি তো অভ্রকে আপনার ফোন নাম্বার দিইনি! তাছাড়া আমিতো আমার ফোনটা সাথে নিয়েও আসিনি যে আমার ফোন থেকে আপনার.. ”

—“ অভ্র আমার এক ভাই লাবণ্য। আমরা ‘জিগরি দোস্ত’ বন্ধু কম ভাই বেশী। তফাৎ শুধু আমাদের রক্তের সম্পর্কে। ”

লাবণ্য অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,,

—“ অভ্র আপনার বন্ধু ! কবে থেকে..?”

—“ যেদিন থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। ”

—“ তার মানে অভ্র জানতো আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা! ”

—“ তোমাদের সম্পর্কের শুরুটা এবং তোমাদের সম্পর্কের শেষটাও আমার জানা লাবণ্য। ”

লাবণ্যর না চাওয়াতেও ওর আঁখিযুগল বিস্ফারিত হয়ে যায়। এটা কোন ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে লাবণ্যকে! অভ্র ও নিবিড় একে অপরকে চেনে , এমনকি সম্পর্কের কথাও জানে। লাবণ্যর কান মাথা গরম হয়ে আসে। চারপাশটা ঘুরতে থাকে।
এমন ভয়ঙ্কর কিছুর সাথে যে লাবণ্যকে মুখোমুখি হতে হবে তা যে ওর কল্পনার বাইরে। লাবণ্য

—“ বাড়ি ফিরে চলো লাবণ্য। বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আব্বু – আম্মু তোমার কথা বলছেন, উনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আম্মু তোমাকে না নিয়ে গেলে এক ফোঁটা পানিও গলা থেকে নামাবেন না। ”

লাবণ্যর চোখের কোণে নোনা পানিদের আগমন হয়। ছলছল দৃষ্টিতে নিবিড়ের মুখপানে চেয়ে থাকে লাবণ্য। কান্নারত অবস্থায় ধরা গলায় বলে উঠে,,

—“ আমি তো আর ফিরে যাবো না বলেছি। আব্বু আম্মু কে আমার চিন্তা করতে মানা করুন। আপনি মেঘলাকে বিয়ে করুন। ”

—“ তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি সিনক্রিয়েট করছো! তুমি আমার বিয়ে করা স্ত্রী। মেঘলাকে আমি কেনো বিয়ে করবো? ”

—“ কারণ আপনি মেঘলাকে ভালোবাসেন। তাই বলছিলাম আপনি মেঘলাকে স্বীকৃতি দিন। ”

নিবিড় এখনো নিজের মাথাটাকে ঠান্ডা রেখে , নরম সুরে লাবণ্যকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লাবণ্য মানতে নারাজ। কিছুটা সময় নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। অনেকটা সময় পর নিবিড় ধমক দিয়ে উঠে।

—“ সব কিছু কি তোমার মর্জি মতো চলবে? আর তুমি আমার আব্বু – ফুপুর ডিসিশনকে ভুল বলার অধিকার কে দিয়েছে তোমাকে? ”

নিবিড়ের চিৎকারে লাবণ্য চোখ বন্ধ করে ফেলে। অপর পাশে মুখ ঘুরিয়ে বলে,,

—“ আমি জানি আপনি মেঘলাকে কতোটা ভালোবাসেন। আর মেঘলাও আপনাকে … আর তাছাড়া আমি একটা মেয়ে হয়ে ..”

নিবিড় লাবণ্যর বাহু দুটো চেপে ধরে। লাবণ্য ব্যাথা পেলেও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয়।

—“ মেয়ে হয়ে কি? হ্যা মেয়ে হয়ে কি বলো আমায়? লিসেন লাবণ্য আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে। আমি তোমার সাথেই সংসার করবো। তাই আমি তোমার কোনোও কথাই শুনবো না। তুমি এখন আমার সাথে বাড়ি যাবে এটাই ফাইনাল ।”

—“ জোর করে সংসার করবেন! না মানে মনের মধ্যে মেঘলাকে রাখবেন আর আমাকে সকলের সামনে স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন? ”

—“ তুমি বুঝি আমার মন দেখতে পাও! একটা কথা বলতো আমায় তুমি হঠাৎ এই যে আমায় ছেড়ে চলে আসলে তার কি কারণ শুধুই মেঘলা! না কি অন্য কিছু? ”

লাবণ্য চাহনি স্থির করে নিবিড়ের চোখে চোখ রাখে। মূলত ওর চোখের ভাষা বুঝতে চাইছে।

—“ আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো? ”

—“ মানেটা হল তোমার পুরাতন প্রেম কি জেগে উঠেছিলো! আমায় ডিভোর্স দিয়ে ওই অভ্রকে বিয়ে করতে চাও না কি? ”

লাবণ্য কথাগুলো শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে নিবিড়ের মুখোমুখি দাঁড়ায়।

—“ মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ! আমি আপনার মতো না। আর ডিভোর্স.. আরে আমি তো কখনো আপনার কাছে ফিরে যাবো না তাই ডিভোর্সের কোনও প্রশ্ন আসে না। ”

—“ তোমায় আমি ছাড়লে তো তুমি যাবে লাবণ্য। এই তুমি কেমন স্ত্রী নিজের অধিকারটা বুঝে নিতে পারোনা? আমি তোমার স্বামী আমার ওপর তোমার জোর সবথেকে বেশি। ”

নিবিড় শান্ত কন্ঠে কথাগুলো লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরলো।

—“ তুমি চাইলে আমি মেঘলা কেনো পৃথিবীর কোনো নারীকেই বিয়ে করতে পারি না। দেখো যা হয়েছে দূর্ঘটনা বশত হয়ে গিয়েছে। আমি যতোটুকু পারছি মেঘলাকে মুছে তোমাকে স্থাপন করছি। লাবণ্য ভালোবাসি তোমাকে ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যন্ড! তুমি আমাকে একটু সাপোর্ট করো। ”

দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি এতোক্ষণ ওদের কথাই শুনছিলো। কিন্তু নিবিড়কে এভাবে ভেঙ্গে পরতে দেখে এবং লাবণ্যকে বোঝাতে ওদের কাছে এগিয়ে আসে অভ্র।

—“ তুমি কি এখনো বুঝতে পারছো না লাবণ্য তোমার স্বামী কতোটা ভালোবাসে তোমাকে! ”

অভ্রের কথাশুনে নিবিড়ের থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকায়। লাবণ্যর মনে পড়ে যায় নিবিড়ের বলা কথা । অভ্র ও নিবিড় দুই বন্ধু স্কুল লাইফ থেকে। মুহূর্তেই লাবণ্যর প্রচন্ড পরিমাণ রাগ হয়।

—“ তুমি জানতে আমার স্বামী কে? আর তোমরা বন্ধু হও! ও তারমানে আমাকে আমার ঠিকানায় পৌঁছে দেবে কথার অর্থ হল আমাকে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া?
তোমার সাহস হল কি করে আমার সাথে এমন করার। এই জন্য তুমি আমাকে জোর করে তোমার বাড়ি আনলে? ”

—“ হুম এনেছি। আর আমিই নিবিড়কে খবর দিয়েছি যাতে ও তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। ”

—“ ভুল করেছো , বড়ো ভুল করেছো তুমি। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। আর তুমি যখন আমার স্বামীর বন্ধু হও তখন তুমি নিশ্চই মেঘলার সম্বন্ধেও জানো! আমি আমার স্বামীকে বলেছি তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে নিতে। ”

—“ অসাধারণ সিদ্ধান্ত তোমার। কিন্তু তোমার চাওয়াতেই সবকিছু ঠিক হবে না বুঝতে পেরেছো। যাও স্বামীর সাথে বাড়ি ফিরে যাও। ”

—“ বললাম তো আমি যাবো না। আমাকে আপনারা এখান থেকে যেতে দিন। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। ”

লাবণ্য চিৎকার করে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। নিবিড় লাবণ্যর হাতটা ধরে নিয়ে নিজের কাছে টেনে এনে। লাবণ্য নিবিড়ের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে ।

—“ এতো যে তেজ দেখছি … তা কোথায় যাবে শুনি। বাবার বাড়িতে তো আর জায়গা হবে না। ”

—“ আমি আমার নিজের ব্যবস্থা ঠিক করে নিব। ছাড়ুন আমাকে। ”

—“ হুম ছেড়েও দিব , তোমার ব্যবস্থাও তুমিই করো। তবে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে ডিভোর্স টা দিয়ে যাও। ”

নিবিড়ের মুখে ডিভোর্স কথাটা শুনে লাবণ্যর বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। ভিতর থেকে চাপাকান্নার দল বের হয়ে আসতে লাগলো। লাবণ্য নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলো,,

—“ ডি.. ডিভোর্স.. আপনি পেপার রেডি করেন আমি সাইন করে দিচ্ছি। ”

নিবিড় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠে,,

—“ তুমি চাইলেই ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারবে কি? ডিভোর্স দেওয়া কি এতোই সোজা! ”

চলবে… ..
(লেখায় কোনও ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন 🙏)