#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৩_
আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শিশির একটা পার্কের পাশে দাড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কারোর জন্য। অপেক্ষা করছে তার মায়াবী মুখের আশায়। এই প্রথম শিশির ছোয়াকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ছোয়াও রাজি হয়েছে। শিশির একটু নার্ভাস ফিল করছে। কিন্তু, তাও নিজের এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে।
শিশির পাশে তাকাতেই চোখ যেন সেইদিকেই আটকে যায়। এ কাকে দেখছে সে? ছোয়া! এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে? এতো সুন্দর সে? নাকি তার কাছেই এতো সুন্দর দেখায় মেয়েটাহকে?
ছোয়া আজ একটা কালো রং এর শাড়ি জড়িয়ে নিয়েছে। চুল গুলো খোপা করে একটা সাদা জারবেলা ফুল, চোখে টানা কাজল, হাত ভর্তি কালো রেশমি চুড়ি, পরে এগিয়ে আসছে। ছোয়া এগিয়ে এসে শিশিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। শিশিরও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”
ছোয়াও হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”
–” ভেতরে যাওয়া যাক?”
–” হুম!”
দুইজনেই পার্কের ভেতরে আসে। পার্কের ভেতর লোকজনের সংখ্যা কম, ওরা একপাশে একটা বেঞ্চে বসে। এদিকটাই মানুষজন নেই বললেই চলে। দুইজনেই কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসেছে। দুইজনের মাঝেই এক অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছে।
শিশির ভাবছে,, ছোয়া তার প্রস্তাবে রাজি হবে তো? নাকি ফিরিয়ে দিবে তাকে? ফিরিয়ে দিবে তার ভালোবাসা? ভয় লাগছে শিশিরের। ছোয়াকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে নাহ, শিশিরের প্রতি তার অনুভূতি কেমন। শিশির কিছু সময় চুপ থেকে ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া!”
শিশিরের এমন মায়াভরা ডাকে কিছুটাহ কেঁপে উঠে ছোয়া। আস্তে আস্তে শিশিরের দিকে তাকায় ছোয়া। শিশিরকে আজ খুব পবিত্র দেখাচ্ছে। আকাশী রং এর পানজাবিতে বেশ সুন্দর লাগছে। শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।”
ছোয়া আবার যেন কেঁপে উঠে। শিশির তাকে তুমি বলে সম্বোধন করছে? এতো মায়া দিয়ে কেন কথা বলছে লোকটা? এতো মায়া দিয়ে কথা বললে যে ছোয়া নিজেকে সামলাতে পারবে নাহ। আর কি বলবে সে? তাও ছোয়া সব ভাবনা সরিয়ে রেখে স্বাভাবিক ভাবে বলে ওঠে,
–” বলুন।”
শিশির উঠে এগিয়ে এসে ছোয়ার সামনে দাড়ায়। ছোয়া কিছুটা অবাক হয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ায়। শিশির ছোয়ার দিকে একটু এগিয়ে এসে ছোয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া! তোমার সাথে আমার হঠাৎ দেখা হয়েছিলো। আমার পাশে তোমার অসোয়াস্তি মুখের ছাপ দেখেছি প্রথম দিন। আমি তোমার মুখের অসোয়াস্তি দুর করতে নিরাপত্তা দিয়েছিলাম। তারপরেই যতোবার তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে সব দুইজনের জানা মতে নাহ। হঠাৎ হঠাৎ করে। ছোয়া! আমি তোমার আইডি কখনো খুঁজে বেড়াই নি। কাকতালীয় ভাবে তোমার আইডি আমার সামনে চলে আসে। কিন্তু, তাও আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট দেয় নি। কেন জানো? কারন, আমি আমার পরিবারকে শক্ত করে ধরে রাখার একমাত্র খুঁটি। আবার আমার খুব একটা আয়ও ছিলো নাহ। আমার পরিবারকে চালিয়ে তোমাকে সুখী করার মতো সামর্থ আমার ছিলো নাহ। তাই আমি তোমার প্রতি কোনো অনুভুতির সৃষ্টি করতে চাই নি। কিন্তু, আমি ব্যর্থ। সত্যিই ব্যার্থ। আমি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তোমার সাথে কথা বলা শুরু করলাম। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, নিজের অজান্তেই, নিজের মাঝে তোমার নামের অনুভুতি সৃষ্টি হলো। কিন্তু, তোমাকে কখনো বলি নি। সব আমি নিজের মাঝে রেখেছি। কেন বলি নি, জানো? কারন, আমি চাই নাহ তুমি কখনো অসুখী থাকো। আমার পরিবার থেকে তোমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিলো, তাই আমি নিজের অনুভূতি নিজের মাঝেই চাপা দিয়ে রেখেছি।”
ছোয়া শিশিরের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। কি বলছে শিশির এইসব? ছোয়ার চোখ ছলছল করছে। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” জানো ছোয়া, এতোদিন নিজের অনুভুতি গুলো কে চাপা দিয়ে রাখলেও, তোমাকে নিয়ে সব সময় ভাবতাম। সব সময় তোমার কথায় মনে হতো। কিন্তু আজ আর নিজেকে সামলাতে পারলাম নাহ। আর সত্যি কথা বলতে, আজ আমি নিজেকে সামলাতেও চাই নি। কারন কি জানো? কারন, আজ আমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়েছে। ভেসে যাওয়া খড়কুটো গুলো আজ তার অবস্থান করে নিতে পেরেছে। তোমাকে ভালো রাখার পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছি। গতকাল আমার প্রোমোশন হয়েছে। আমি ম্যানেজার পদে এসে গেছি। তোমাকে ভালো রাখার সমস্ত যোগ্যতা আমার হয়ে গেছে। তাই আর নিজেকে আটকাতে চাই নাহ। আমি গতকাল থেকেই ভাবছিলাম কখন তোমাকে বলবো। তাই আজ, যা এতোদিন করি নি, তাই করলাম। তোমাকে আজ দেখা করতে বললাম। জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে আসলাম।”
ছোয়া শুধু চুপচাপ শিশিরের কথাগুলো শুনছে। ভারি হয়ে আসছে তার চোখ। শিশির একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া! জীবনের সব থেকে বড় একটা কথা তোমাকে বলতে চাই। জীবনের প্রথম একটা অনুভুতির কথা বলতে চাই। ছোয়া! আমি তোমাকে ভালোবাসি! অনেক অনেক ভালোবাসি! অতিরিক্ত ভালোবাসি তোমাকে! তোমাকে ছাড়া আমি এখন কিছুই ভাবতে পারি নাহ! এতোটাই ভালোবাসি তোমাকে! I love you choya..!”
ছোয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে ছোয়ার। এ কোন পরিস্থিতির সামনে পড়লো সে? কি করবে এখন সে? নিজের অনুভূতি কে চাপা দিবে কিভাবে? কি বলবে শিশিরকে? নিজের দূর্বলতাকে ঢেকে রাখবে কি করে? এমন সময় ছোয়ার সামনে ভেসে উঠে তার ভয়ংকর অতীত। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে ছোয়া! না, না, শিশিরকে নিজের সাথে জড়াতে পারে নাহ সে। কিছুতেই নাহ। শিশির ছোয়ার দিকে আর একটু এগিয়ে এসে ছোয়ার দুই হাত নিজের দুই হাতে মাঝে নিয়ে নেয়। ছোয়া অবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির ছোয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না ছোয়া। তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। কিন্তু, দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো নাহ। আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে। প্লিজ, ছোয়া….”
শিশির আর কিছু বলার আগেই ছোয়া জোরে নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নেয়। শিশির অবাক ছোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোয়ার এমন ব্যবহার যেন তার মানতে কষ্ট হচ্ছে। ছোয়া নিজের চোখ মুছে শক্ত গলায় বলে ওঠে,
–” মি. শিশির! আপনি আমাকে নিয়ে এতো কিছু ভেবে ফেলছেন? আমি ভাবতে পারছি নাহ। দুইদিন ম্যাসেজে একটু ভালো করে কথা বলেছি দেখে, আর আজ একটু দেখা করতে এসেছি জন্য আপনি ভেবে নিলেন আমি আপনাকে ভালোবাসি। সরি, মি. শিশির! আপনি ভুল ধারনা নিয়ে আছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি নাহ। আর নাহ, আপনার প্রতি আমার কোনো দূর্বলতা আছে। আমি শুধু আপনার সাথে পরিচয় হয়ে একটা সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আপনি তো দেখছি, সেইটার অন্য মিনিং বের করে নিয়েছেন। আমাকে মাফ করবেন, এরকম কোনো ফিলিংস আমার নেই।”
ছোয়া কথা গুলো শক্ত গলায় বললেও, চোখ বেয়ে অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। শিশির স্তব্ধ হয়ে ছোয়ার কথা শুনছে। ছোয়ার কঠোর কঠোর কথা গুলো শিশিরকে থমকে দিয়েছে। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” আমি যদি জানতাম, আপনি আমাকে এইসব বলার জন্য এখানে ডাকবেন,, তাহলে আমি এখানে কখনোই আসতাম নাহ। আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি এমনি আমাকে ডেকেছেন। যেমন একজন বন্ধু আর একজন বন্ধু কে ডাকে। একে অপরের সাথে ভালো বন্ধুত্বপূর্ন সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু, আপনি তো দেখি!!! যাই হোক, আমি আর এখানে এক মুহুর্তও থাকতে চাই নাহ। আমি গেলাম। আল্লাহ হাফিজ!!”
কথাগুলো বলে ছোয়া চলে যেতে নিলেই শিশির ছোয়ার হাত ধরে ফেলে। ছোয়া পিছন ফিরে অবাক হয়ে একবার হাতের দিকে আবার শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোয়া রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমার হাত ছাড়ুন মি. শিশির!”
শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছোয়ার সামনে দাড়ায়। ছোয়া একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকায়। শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। ছোয়ার চোখের পানিতে কাজল হালকা লেপ্টে গেছে, যাতে ছোয়ার চোখ আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। নাক, চোখ লাল হয়ে আছে। চোখের পাপড়িতে পানির ফোটা লেগে আছে। মেয়েটাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে এইভাবে। বাহ! তার মায়াবীনি কান্না করলে তো আরও বেশি সুন্দর লাগে। এতো রুপ কেন মেয়েটার? ছোয়া অন্য দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে,
–” আমার হাত ছাড়ুন।”
শিশির ছোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ঐদিকে তাকিয়ে কেন বলছো ছোয়া? আমার দিকে তাকিয়ে বলো, হাত ছাড়তে।”
ছোয়া একপলক শিশিরের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকায়। ছোয়ার চোখ দিয়ে এখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে। শিশির ছোয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি আংগুলের মাথায় নিয়ে ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো নাহ, তাহলে এই চোখ থেকে পানি কেন গড়িয়ে পড়ছে ছোয়া? এই মুক্ত গুলো কি আমার ভালোবাসাময় কথা গুলো শুনে গড়িয়ে পড়ছে? নাকি,, আমাকে এতো কঠোর কথা গুলো শুনানোর জন্য গড়িয়ে পড়ছে,, কোনটা?”
ছোয়া ভেজা চোখ নিয়ে শিশিরের দিকে তাকায়। কি বলছে শিশির এইসব? তাকে যে কথার জালে জড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, ছোয়া যে কখনোই তার অনুভুতির কথা শিশিরকে বলতে পারবে নাহ। কখনোই নাহ। শিশির ছোয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া! তুমি নিজেও জানো, তুমি আমাকে ভালোবাসো।”
শিশিরের কথা শুনে ছোয়া চমকে শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির ছোয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” হুম! আমি তোমার চোখে নিজের জন্য ভালোনাসা দেখেছি ছোয়া! তোমার কথায় নিজের প্রতি ভালোবাসার টান অনুভব করেছি। তাই আমি তোমাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানানোর সাহস পেয়েছি। ছোয়া! আমি জানি নাহ, তুমি কেন নিজের ভালোবাসাকে চাপিয়ে রেখেছো। আমি জানি নাহ, কেন তুমি আমাকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছো। আমি সব সময় তোমার পথ চেয়ে বসে থাকবো। তুমি আমাকে ভালোবাসো ছোয়া, এইটা তোমার চোখই বলে দেয়। প্লিজ! ছোয়া! কেন এমন করছো? আমাকে কেন দুরে সরিয়ে দিচ্ছো? ভালোবাসি ছোয়া! খুব ভালোবাসি তোমাকে।”
ছোয়া কোনো কথা নাহ বলে শিশিরের হাতের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। শিশির ছোয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতো সময় শিশিরের চোখ ছলছল করলেও, চোখ থেকে পানি গড়াতে দেয় নি শিশির। কিন্তু, ছোয়া চলে যেতেই শিশিরের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আঙ্গুল দিয়ে অশ্রুকণা গুলো মুছে নেয় শিশির। তারপর আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে যায়।
★
আদনান অনেক সময় ধরে ভার্সিটির মাঠে বসে আছে। স্নেহার আসার কথা এখনও আসছে নাহ। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এমন সময় রিয়াদ এসে পাশে বসে আদনানের। আদনান রিয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফোন চালাতে থাকে। রিয়াদ আদনানকে একটা চিমটি দিতেই আদনান চেচিয়ে উঠে হাত ঘসতে ঘসতে বলে ওঠে,
–” ফাজিল! মেয়েদের মতো চিমটি দিস কেন?”
রিয়াদ জোরে হেসে দেয়। এমন সময় পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে ওঠে,
–” মেয়েরা শুধু চিমটি দেয়?”
আদনান তাড়াতাড়ি পাশে তাকিয়ে দেখে ছোয়া এসে তার পাশে বসেছে। রিয়াদ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
–” আদনানের কথায় তো তাই মনে হচ্ছে।”
স্নেহা রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তাই?”
রিয়াদ সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই স্নেহা আদনানকে একটা জোরে চিমটি দেয়। আদনান জোরে চেচিয়ে উঠে। রিয়াদ আর স্নেহা জোরে হেসে দেয়। আদনান হাত ডলতে ডলতে স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” চুড়েল! এতো জোরে কেউ চিমটি দেয়। চামড়া উঠে গেলো।”
স্নেহা হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
–” তুই তো বললি, মেয়েরা নাকি শুধু চিমটি দেয়। আমিও তো একটা মেয়ে তাই দিলাম।”
স্নেহার কথা শুনে রিয়াদ আরও জোরে হেসে দেয়। স্নেহাও হাসতে থাকে। আদনান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
–” আমাকে মাফ করবেন। আমার ভুল হয়ে গেছে।”
আদনানের এই কথা শুনে রিয়াদ আর স্নেহা আরও হাসতে থাকে। ওদের হাসি দেখে আদনানও হেসে দেয়। ওরা গল্প করতে করতে ডিসিশন নেয় আজ তিনজন খুব ঘুরবে। যেমন কথা তেমন কাজ,,, তিনজনই বেরিয়ে পড়ে ঢাকায় হালকা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে।
★
রাতের বেলা……
শিশির বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে আছে। ভাবছে, ছোয়ার কথা। ছোয়া তাকে প্রত্যাখান করলো, কিন্তু শিশিরের যে সব সময় মনে হয়েছে ছোয়া তাকে ভালোবাসে। আজও ছোয়ার চোখে পানি দেখেছে, আর তাছাড়া ছোয়া শেষে কথা থেকে এক প্রকার পালিয়ে চলে গেলো। শিশিরের কিছুই ভালো লাগছে নাহ। ছোয়ার ভালোবাসা দরকার তার।
প্রোমোশন টাহ হওয়ার পর ভেবেছিলো হয়তো সে সব পেয়ে যাবে এইবার। পরিবারকে সুখী করতে পারবে,, ছোয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু, ছোয়া যে তাকে ছেড়ে চলে গেলো। সত্যিই কি ছোয়া তাকে ছেড়ে চলে গেলো? মানতে পারছে নাহ শিশির। নাহ,, এতো সহজে ছোয়াকে যেতে দিবে নাহ সে।
শিশির একদম নিশ্চিত ছোয়া তাকে ভালোবাসে। আজ ছোয়ার চোখের পানিই বলে দিছে,, ছোয়া তাকে ভালোবাসে। কিন্তু,, কোনো তো কারন আছে। যার জন্য ছোয়া তাকে প্রত্যাখান করেছে। সেইটাই জানতে হবে এখন তাকে। কিন্তু কিভাবে?
ছোয়া আজ আর অনলাইনে আসে নি। বার বার চেক করেছে শিশির। কিন্তু,, ছোয়া অফলাইন। ছোয়ার বাসাও সঠিক ভাবে চিনে নাহ সে। শুধু জানে,, ফার্মগেটের আশেপাশে। কিন্তু, কোথায় তা জানে নাহ। উফ! বিরক্তিকর। শিশির মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” ভালোবাসি ছোয়া! অনেক অনেক ভালোবাসি! প্লিজ,, চলে আসো আমার কাছে। দয়া করো। মেনে নাও আমার ভালোবাসাকে। দয়া করো।”
#_চলবে…………🌹
#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৪_
রহমান পরিবারের সবাই খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে। শিশিররা আজ তাদের নতুন বাসায় উঠছে। কিছু ফার্নিচারও কিনেছে শিশির। আদনানও টাকা দিয়েছে, আজিজ রহমানও কিছু জমানো টাকা দিয়েছে। মোটামুটি ফ্লাটটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছে তারা।
আদনান, সাঝ, আজিজ রহমান, আহিয়া রহমান সবাই বেশ খুশি। শুধু খুশি হতে পারছে নাহ শিশির। সব সময় ছোয়ার কথা মাথায় ঘুরপাক খায়। সেইদিনের পর থেকে ছোয়া অনলাইনে আসে নাহ। শিশির ফার্মগেটের আশেপাশে অনেক ঘোরাঘুরি করেছে,, কিন্তু ছোয়াকে পায় নি। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ সে। তাহলে ছোয়াকে কি সে হারিয়ে ফেললো?
সাঝ তো খুব খুশি নতুন ফ্লাটে এসে। সাঝের মেডিকেলের কোচিং চলছে। সাঝের চিন্তাও হচ্ছে, কয়েকদিন পর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হবে। তাই নিয়ে সাঝ খুব চিন্তিত। কিন্তু,, তাও নিজের উপর আশাবাদী সে। তাও চিন্তা যে কমে নাহ।
আদনান তার অনার্স চতুর্থ বর্ষের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। সেই সাথে তার বার্বিডলের সাথে ঘোরাঘুরি তো আছেই। আদনান আর কখনোই স্নেহাদের বাসায় যায় নি। আর স্নেহাও নেয় নি। ভয় পায় স্নেহা,, আবার যদি তার মা আদনানকে অপমান করে,, সেই ভয় পায় স্নেহা।
আহিয়া রহমান শিশিরকে কয়েকবার বলেছিলো বিয়ের কথা কিন্তু শিশির তাতে চেইতে যায়। তাই আহিয়া রহমান এখন আর শিশিরকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলে নাহ।
★
শিশির বাস থেকে নামছে,, বাসায় আসার উদ্দেশ্যে। এমন সময় রাস্তার একপাশে তাকাতেই একটা মেয়ের দিকে চোখ পড়ে শিশিরের। মেয়েটাহ কে চেনা চেনা লাগছে শিশিরের। কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাহ কে। কিন্তু,, কোথায়?
হঠাৎ শিশিরের মনে হলো,, এইটা তো সেই মেয়েটা,, ছোয়ার বান্ধবী। এক রাতের বেলা ছোয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো আর পরিচয় হয়েছিলো। শিশিরের মুখে হাসি ফুটে উঠে। এই মেয়েটাই এখন তার একমাত্র মাধ্যম,, ছোয়ার কাছে যাওয়ার। শিশির আর দেরি নাহ করে জারিফার কাছে চলে যায়। জারিফার সামনে গিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”
জারিফা ভ্রু কুচকিয়ে সামনে তাকায়। চিনতে পারছে নাহ সে। শিশির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে ওঠে,
–” আপনি মনে হয় আমাকে চিনতে পারেন নি, আমি শিশির!”
নামটাহ শুনতেই জারিফার মুখে হাসি ফুটে উঠে। জারিফা অনেকটাহ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! মি. শিশির! আমি আপনাকেই কয়েকদিন ধরে মনে মনে খুজছিলাম। কিন্তু,, কোনো মাধ্যম নাহ থাকাই হয়ে উঠছে নাহ।”
–” আমার আপনাকে খুব দরকার। অনেক অনেক দরকার।”
–” আমরা কি কোথাও বসে কথা বলতে পারি?”
–” শিওর!!”
একটা ছিমছাম কফিশপে শিশির আর জারিফা বসে আছে। একজন ওয়েটার দুইটা হট কফি দিয়ে যায়। শিশির কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে,
–” মিস. জারিফা! আমাকে একটা হেল্প করতে পারবেন? প্লিজ!”
জারিফা হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ছোয়ার সাথে দেখা করতে চান, তাই তো?”
শিশির কিছুটাহ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” জি! হ্যা! কিন্তু,, আপনি কি করে জানলেন?”
–” আমি সবই জানি মি. শিশির! আমি ছোয়ার বাসা থেকেই আসছিলাম।”
শিশির ব্যাস্ত ভাবে বলে ওঠে,
–” আমাকে ছোয়ার বাসার ঠিকানা দিবেন প্লিজ? খুব দরকার ওকে আমার। আমার কাছে ওর কন্টাক্ট নাম্বারও নেই। প্লিজ,, দিন নাহ।”
জারিফা সহাস্যে জবাব দেয়,
–” মি. শিশির! আপনি শান্ত হোন। আমি আপনাকে সবই দিবো। কিন্তু, তার আগে আমি কিছু কথা আপনাকে বলি,, একটু মন দিয়ে শুনুন প্লিজ!”
–” জি!”
জারিফা কিছু টাহ মলিন হয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া একদম ভালো নেই। খুব একটা কারোর সাথে কথাও বলে নাহ। তৃতীয় বর্ষের ক্লাস, তাও আবার নতুন ক্লাস, তাও ঠিকমতো এটেন্ড করছে নাহ। সব সময় মন মরা হয়ে থাকে। যাহ আমার একদম ভালো লাগে নাহ।”
জারিফার কথা শুনে শিশিরের আরও কষ্ট লেগে উঠে। তাও,, চুপচাপ জারিফার কথা শুনতে থাকে। জারিফা আবার বলে ওঠে,
–” ছোয়া আপনাকে,, আপনার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে এইটা সত্যি। কিন্তু,, এইটাও সত্যি,, ছোয়া আপনাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে আপনাকে। ও স্বীকার করতে চাইছে নাহ, কিন্তু আমি ওকে বুঝি। ওর ভালোবাসা আছে আপনার প্রতি। কিন্তু,, ও প্রকাশ করবে নাহ। কারনও আছে তার যথেষ্ট। যদিও আমি জানি,, কিন্তু,, আমি আপনাকে বলবো নাহ। আপনার নিজে থেকে খুজে বের করে নিতে হবে।”
শিশির মলিন ভাবে বলে ওঠে,
–” আমিও জানি ছোয়া আমাকে ভালোবাসে। আর ওর আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ারও কারন আছে। কিন্তু,, এখন শিওর হলাম,, আসলেই তাহলে কারন আছে।”
জারিফা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে কিছু লিখে শিশিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এখানে,, ছোয়ার বাসার ঠিকানা, কন্টাক্ট নাম্বার সব আছে।”
শিশির কাগজটাহ নিয়ে আনন্দপূর্ন হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ধন্যবাদ! অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি নিজেও জানেন নাহ,, কতোটা উপকার করলেন আমার।”
জারিফা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমি সব সময় চাই,, ছোয়া হাসি খুশি থাকুক। ভালো থাকুক ছোয়া। বেরিয়ে আসুক তার সেই অতীত থেকে। যাই হোক,, আপনাকে একটা কথা আমি বলতে পারি,, ছোয়াকে যদি নিজের করে পেতে পারেন,, তাহলে সব থেকে মূল্যবান সম্পদ আপনি পেয়ে যাবেন। ছোয়া অত্যন্ত ভালো একটা মেয়ে।”
–” আমি জানি,, আর সেই জন্যই তো ওকে এতো ভালোবাসি।”
জারিফা দাড়িয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” তাহলে, আজ আসি দুলাভাই!”
জারিফার কথা শুনে শিশির হেসে বলে ওঠে,
–” আমি কি একটু এগিয়ে দিবো, শালীকা?”
–” নাহ! সমস্যা নেই আমি চলে যেতে পারবো। আল্লাহ হাফিজ!”
–” আল্লাহ হাফিজ!”
জারিফা চলে যায়। শিশির হাতের কাগজটাহ একবার দেখে নিয়ে ফোনে নাম্বার টাহ সেভ করে নেয়। তারপর বিল দিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসে।
★
আদনান ভার্সিটিতে বসে আছে। এমন সময় ফোন বেজে উঠে। আদনান ফোন বের করে দেখে স্নেহার ফোন। সাথে সাথে আদনানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আদনান কল রিসিভ করে কানে রাখতেই ওপাশ থেকে স্নেহা বলে ওঠে,
–” আদনান ভার্সিটিতে আছিস?”
–” হুম! আমি তো ভার্সিটিতে। তুই কোথায়?”
–” আমি ভার্সিটির পাশের ক্যাফেট এরিয়ায় আছি। তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। তুই তাড়াতাড়ি আই।”
–” কার সাথে?”
–” আসলেই দেখতে পাবি,, তাড়াতাড়ি আই।”
–” আচ্ছা! আসছি আমি।”
আদনান ফোন কেটে ক্যাফেট এরিয়ায় চলে আসে। চারিদিকে তাকিয়ে স্নেহাকে খুজতে থাকে। তারপর দেখে স্নেহা এক পাশের একটা টেবিলে বসে একটা ছেলের সাথে অনেক হেসে হেসে গল্প করছে। ছেলেটাহ কে দেখতে বেশ সুদর্শন। আদনান কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকায়। ছেলেটাহ কে আগে কখনো দেখে নি আদনান। আদনান টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই স্নেহা আদনানকে দেখে বলে ওঠে,
–” ওহ! তুই এসেছিস। বোস!”
আদনান ওদের অপজিট সিটে বসতেই একজন ওয়েটার একটা কোল্ড কফি আদনানের সামনে রাখে। স্নেহা হেসে পাশের ছেলেটার হাত জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আদনান! এই হলো আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলে। ইয়াশ! আমার অনেক অনেক অনেক প্রিয় একজন মানুষ।”
আদনান ছেলেটির দিকে একবার তাকিয়ে আবার স্নেহার জড়িয়ে ধরে রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে আবার স্নেহার দিকে তাকায়। স্নেহা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ! এই হচ্ছে আদনান! তোমাকে বলেছিলাম নাহ,, আদনানের কথা,, এই সেই আদনান!”
ইয়াশ আদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা তোমার কথা অনেক বলে, আদনান! নাইস ঠু মিট ইউ!”
আদনান অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাত মেলায় ইয়াশের সাথে আর বলে ওঠে,
–” মিঠ ইউ ঠু!”
আদনান আবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এতোদিন, ওনার সাথে পরিচয় করাস নি কেন?”
স্নেহা কিছুটাহ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে, বাবা, কিভাবে পরিচয় করাবো? সে দেশে থাকলে তো করাবো। ইয়াশ কানাডায় থাকে। কানাডায় সিটিজেনশিপ। মাঝে মাঝে দেশে আসে, আমিও মাঝে মাঝে কানাডা যায়। আর কানাডায় সে তার বিজনেস নিয়ে সব সময় ব্যাস্ত,, দেশে আসে মাত্র কয়েকদিনের জন্য তাও একগাদা কাজ সাথে করে নিয়ে আসে। কিন্তু,, এইবার সে শুধু আমাকে সময় দেওয়ার জন্য এসেছে। নো কাজ,, তাই তোকে পরিচয় করাতে পারলাম।”
কথাটাহ বলে স্নেহা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় আর জড়িয়ে ধরে ইয়াশকে। ইয়াশও মুচকি হাসি দিয়ে স্নেহাকে আগলে নেয়। আদনানের যেন পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত রাগের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে আদনান। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান! ইয়াশ যে কয়দিন দেশে আছে, সে কয়দিন তুইও আমাকে টাইম দিবি। আমরা অনেক ঘুরবো,, ফিরবো,, মজা করবো। ওকে?”
–” কিন্তু,, স্নেহা……”
কথা শেষ করতে পারে নাহ আদনান তার আগেই স্নেহা বলে ওঠে,
–” কোনো কিন্তু নাহ। যা বললাম তাই। আজ তোর ছাড় কিন্তু আগামীকাল থেকে তুই অলটাইম আমাদের সাথে। আমি আর কিছু শুনতে চাই নাহ।”
ইয়াশও বলে ওঠে,
–” ইয়েস,, আদনান! তুমি আমাদের সাথে জয়েন্ট করলে স্নেহা অনেক খুশি হবে। আর স্নেহা খুশি হলে আমি খুশি। প্লিজ,, তুমি জয়েন্ট করো আমাদের সাথে।”
আদনান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি ট্রাই করবো।”
ইয়াশ স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”
–” হুম!”
–” আমাদের তো শপিংমলে যেতে হবে। আমার ড্রেস কেনা লাগবে কিছু। আর তুমি আমাকে চয়েজ করে দিবে। চলো।”
–” আচ্ছা!”
তারপর স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান! তুইও চল আমাদের সাথে।”
–” নাহ! তুই তো বললি আজ আমার ছাড় আছে। আমার কিছু দরকারি কাজও আছে। তাই এখন যেতে পারছি নাহ।”
–” আচ্ছা,, ঠিক আছে। তাহলে আগামীকাল দেখা হচ্ছে।”
–” হুম!”
স্নেহা আর ইয়াশ চলে যায়। আদনান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওরা দুইজন হাত ধরে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে,, তারা যেন নবদম্পতি। আদনানের রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে। সহ্য হচ্ছে নাহ তার। স্নেহার সাথে ইয়াশের এরকম মেলামেশা সে সহ্য করতে পারছে নাহ। আবার কিছু করতেও পারছে নাহ।
স্নেহার আম্মুর ও নিশ্চয় এই ছেলেকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। থাকবে কি করে,, ছেলে দেখতে সুদর্শন,, কানাডায় সিটিজেনশিপ,, বিজনেসম্যান,, কোটি কোটি টাকা,, আর কি চায়? যদিও আদনানের পরিবারের অবস্থা আগে থেকে অনেক ভালো পজিশনে। অনেক ভালো অবস্থানে আছে। ভাইয়ার চাকরির প্রোমোশন হওয়ার পর নিজেদের অবস্থান অনেক বদলে গেছে। কিন্তু,, তাও মি. ইয়াশের আঙ্গুলের যোগ্যতাও তার এখনও হয় নি। তার উপর সে একটা বেকার ছেলে।
তাহলে কি তার বার্বিডলের জন্য রাজপুত্র চলে এসেছে? স্নেহাকে দেখে মনে হলো,, সেও অনেক খুশি ইয়াশ আসায়। নিজের প্রতি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আদনান। মুখমন্ডলে হাত বুলিয়ে ক্যাফেট এরিয়া থেকে বেরিয়ে আসে আদনান।
★
চারিদিকে এখন অন্ধকার হয়ে আছে। কিন্তু,, মানুষের তো আবার অন্ধকার পছন্দ নাহ। তাই নিজেদের বসবাসের জায়গায় আলো ঝলমলে দিয়ে পরিপূর্ণ করে নিয়েছে। রাতের রাস্তা ঘাট যেন বিভিন্ন আলো নিয়ে সেজে উঠে। মনে হয় আলোকসজ্জা রাতের গহনা।
শিশির সোজা সামনের একতলা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়িটাহ ছোয়াদের। শিশির অফিস শেষ করে সোজা এখানে চলে এসেছে। আজ ছোয়ার সাথে দেখা করবে, জানতে চাইবে এমন করার কারন, কথা বলবে তার সাথে। এই সময় অফিস ফেরত সব লোকজন চলাচল করে তাই মেইন রোড গুলো কোলাহলপূর্ণ হলেও,, এইদিক টাহ বেশ শান্ত।
ছোয়াদের বাড়ি টাহ মাঝারি এরিয়া নিয়ে বাউন্ডারি দেওয়া। সামনে একটা মাঝারি রকমেট গেট,, তারপরেই একতলা বাসা ছোয়াদের। কয়েকটাহ ফুল গাছও দেখতে পাচ্ছে শিশির। শিশির ফোন টাহ বের করে কল লিস্টে গিয়ে ছোয়ার নাম্বার টাহ বের করে। কল দেয় ছোয়াকে। কলটাহ রিসিভ করে ওপাশ থেকে ছোয়া বলে ওঠে,
–” হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন?”
শিশির চুপ করে আছে। আজ কতোগুলো দিন পর ছোয়ার কন্ঠ সে শুনতে পেয়েছে। শিশিরের বুকের ভেতর কেমন যেন ধুকধুক করছে ছোয়ার কন্ঠ শুনে। ছোয়ার কন্ঠ কিছুটাহ ভাঙা শোনা যাচ্ছে। ছোয়া কি কান্না করছিলো? ছোয়া আবার বলে ওঠে,
–” হ্যালো! শুনতে পাচ্ছেন? কথা বলছেন নাহ কেন? আর কথা নাহ বললে ফোন দিলেন কেন?”
শিশির একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি শিশির!”
ছোয়া স্তব্ধ হয়ে যায় শিশিরের কন্ঠ শুনে। যার কাছের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে, সে যে চারিদিক থেকে তাকে আকড়ে ধরছে। ছোয়ার আবারও কান্না দলা পাকিয়ে আসছে। গড়িয়ে পড়ছে অজস্র অশ্রুকণা। শিশির বলে ওঠে,
–” কি হলো? কথা বলছো নাহ যে?”
ছোয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে ওঠে,
–” আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?”
শিশির হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” পেয়েছি কোনো এক ভাবে। যাই হোক, ফোনে কথা বলতে ভালো লাগছো নাহ। বাসার বাইরে আসো। আমি তোমার অপেক্ষায় আছি।”
ছোয়া অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” মানে? আপনি আমার বাসার ঠিকানা কিভাবে জানলেন?”
–” সেইটা তোমাকে জানতে হবে নাহ। বাইরে আসো নাহলে আমি ভেতরে চলে আসবো।”
–” কি বলছেন আপনি এইসব? চলে যান।”
–” ওকে! আমি ভেতরে আসছি।”
–” এই নাহ! আম্মা কি মনে করবেন?”
–” তাহলে তুমি বাইরে আসো।”
–” আচ্ছা! আসছি।”
ছোয়া ফোন কেটে দেয়। শিশির তার বাসার বাইরে। কিন্তু,, শিশির তার বাসার ঠিকানা,, কন্টাক্ট নাম্বার কোথায় পেলো? কি কারনে এসেছে শিশির? এই কয়েকটা দিন নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাকে। এমন সময় শিশির তার বাসার সামনেও চলে এলো। এখন সে নিজেকে সামলিয়ে রাখবে কি করে? ভেবে পাচ্ছে নাহ ছোয়া।
চোখ টাহ ভালো ভাবে মুছে নেয় ছোয়া। শিশিরকে দেখাতে চায় নাহ তার অবস্থা। তারপর বাইরে বেরিয়ে আসে ছোয়া। শিশির তাদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছে। শিশিরকে দেখে ছোয়ার পা যেন থেমে যেতে চাইছে। কেন এসেছে সে? কি চায়? এই কয়েকদিন ছোয়ার নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আর আজ সে সামনেই চলে এলো? ছোয়া নিজেকে সামলাতে পারবে তো?
#_চলবে…………..🌹
{{ ভুল,, ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি। 🙃 }}