লাল নীল সংসার পর্ব-২৩+২৪

0
226

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৩_

চারিদিকে অনেক অন্ধকার। কিন্তু,, কৃত্রিম আলোয় সেই অন্ধকার কেটে গেছে। রাস্তাগুলো মানুষের চলাচলে ব্যস্ত। গাড়ির হর্ন,, ধোয়া,, মানুষের আওয়াজ,, সব মিলিয়ে ভরে আছে চারিদিকে। আওয়াজে আওয়াজে চারপাশে ভরে গেছে।

ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে এলোমেলো ভাবে হাটছে আদনান। এতো কোলাহল তার কানে যেন যাচ্ছেই নাহ। নিজের ভাবনা যেন তাকে ঘিরে ধরে আছে। একটু আগের কাহিনি মনে পড়তেই শিরদাঁড়া বেয়ে কম্পন বয়ে যাচ্ছে তার। নিজেকে কেমন ছন্নছাড়া লাগছে।

আশেপাশে একবার চোখ বোলায় আদনান। আশেপাশের মানুষগুলো কত ব্যস্ত। এতো ব্যস্ত মানুষের মাঝে আজ নিজেকে সব থেকে বড় কাজহীন অলস মানুষ মনে হচ্ছে। এখানে প্রতিটাহ মানুষের তাড়া,, শুধু তারই যেন কোনো তাড়া নেই। আদনান পাশের একটা লেকের ধারে চলে যায়। জায়গা টাকে প্রেমিক প্রেমিকার মিলন মেলা মনে হচ্ছে। আদনান লেকের এক কোনায় পাড়ে বসে। ভাবতে থাকে কিছু সময় আগের ঘটনা!!!

#_Flashback_………
স্নেহার কথা মতো আদনান পার্কটির সামনে দাড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর একটা হোয়াইট কালারের গাড়ি পার্কটির সামনে এসে দাড়ায়। আদনান গাড়িটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে স্নেহা। আদনান স্নেহাকে দেখে হালকা হাসলেও,, হাসি টাহ আবার মিলিয়ে যায়। কারন,, স্নেহাকে দেখতে খুব শুকনো শুকনো লাগছে।

স্নেহা এগিয়ে এসে আদনানের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দেয়। কেন জানি,, আদনানের কাছে আজ স্নেহার হাসিটাহও মন মতো হচ্ছে নাহ। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেমন আছিস?”

আদনান হালকা গম্ভীরতা নিয়ে বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ! তুই?”

–” হুম! ভালো। অনেক ভালো আছি। চল একটু ভেতরে যাই।”

–” হুম! চল!”

দুইজনে ভেতরে চলে যায়। স্নেহা এগিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে। আদনানও এগিয়ে গিয়ে স্নেহার পাশে বসে। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোকে কিছু কথা বলার আছে আমার।”

আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ স্নেহার মুখে হাসি থাকলেও,, কেমন যেন এক গম্ভীরতা কাজ করছে তার মুখে। আদনান তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
–” হুম! বল!”

স্নেহা কিছু সময় চুপ করে থাকে। তার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান! জানিস,, একটা সুখবর আছে।”

–” কি সুখবর?”

স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

আদনান চমকে উঠে স্নেহার কথায়। মুহুর্তের মাঝেই যেন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিয়ে? তার বার্বিডলের বিয়ে ঠিক হয়েছে? এইটা সুখবর? হ্যা! সুখবরই তো,, স্নেহার কাছে তো অবশ্যই সুখবর। কিন্তু,, আদনান কি তাহলে তার বার্বিডলকে হারিয়ে ফেলার শেষ রাস্তায় চলে এসেছে? এইবার কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে তার বার্বিডল?

তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ফিরে যায় আদনান। কারন,, তার চোখ গুলো যে ছলছল করছে। ঝাপসা হয়ে আসছে সামনের সব কিছু। তার এই ছলছল চোখ যে,, স্নেহাকে সে দেখাতে চায় নাহ। চাই নাহ আদনান। স্নেহা সুখের সন্ধানে যাচ্ছে,, কি করে সেই রাস্তায় সে চোখের পানি ফেলবে? এতে যে স্নেহার কষ্ট লাগবে,, সৃষ্টি হবে অমঙ্গলের। যা আদনান কখনোই চায় না। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে স্নেহার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়াও! কার সাথে? আপনার হবু বরের নাম বলেন প্লিজ!”

স্নেহা আদনানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ!”

আদনান মলিন হাসে। তাহলে,, তার করা ভয় সত্যিই হয়ে গেলো। ইয়াশ পেয়ে গেলো তার বার্বিডল কে। নাহ! সমস্যা নেই। কারন,, তার কাছে আসলে তার বার্বিডল কখনো আরামে থাকবে নাহ,, কারন তার যে সেই যোগ্যতাই নেই,, নেই সেই সামর্থ। কিন্তু,, ইয়াশের সব সামর্থ আছে। কিন্তু,, মন টাহ যে মানছে নাহ। মনে হচ্ছে এক আকাশ সমান কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠছে। আদনান আবার বলে ওঠে,
–” ডেট ঠিক হয়েছে?”

–” হুম! আগামীকাল এইংগেজমেন্ট। ইয়াশ আবার দ্রুত কানাডায় চলে যাবে,, তাই বিয়ে তাড়াতাড়ি করবে। এইংগেজমেন্টের দুইদিন পর সংগীত মেহেন্দি,, পরের দিন গায়ে হলুদ,, তার পরের দিন বিয়ে,, পরের দিন রিসিপশন। তার দুইদিন পর হয়তো কানাডায় চলে যাবো।”

আদনান একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” কানাডায় চলে যাবি?”

স্নেহা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! কাগজ পত্র সব নাকি রেডি হয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে স্টাডি শেষ করবো। বিয়ের পর বউকে কি কেউ এখানে রেখে যায়? আমাকেই বা কেন রাখবে?”

আদনানের বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রচন্ড আকারে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে,, চোখ ফেটে জল আর বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসবে। কিন্তু,, সেইটাও এই মুহুর্তে যে সম্ভব নাহ। হেরে গেছে আদনান,, বাস্তবতার কাছে নিজের ভালোবাসাকে,, নিজের বার্বিডলকে অবশেষে সে হারিয়েই ফেললো। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান!”

–” হুম!”

–” আমি তো আমার বিয়ের পর চলে যাবো। অনেক দুরে চলে যাবো,, সেই সুদুর কানাডায়। আবার কবে আসবো,, জানি নাহ। আর আমার বিয়েও তো হয়ে গেলো বলেই। এই সপ্তাহের মাঝেই বিয়েটাহ হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই,, এই কয়দিন তুই আমাকে অনেক সময় দে।”

আদনান চমকে স্নেহার দিকে তাকায়। তারপর বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে,, এই কয়েকদিন তুই আমাকে অনেক সময় দে। আমার বিয়ের দিন পর্যন্ত,, প্লিজ! আমি তোর কাছে এই কয়টাহ দিন চেয়ে নিচ্ছি। তারপর তো আমি চলে যাবো,, আর তো এমন করে সময় চাইতে পারবো নাহ।”

–” কিন্তু,, আমি যে তোদের বাসায় যেতে চাই নাহ।”

স্নেহা দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আমি জানি আদনান! এই কয়েকটা দিনই তো। আমি তোর কাছে অনুরোধ করছি। প্লিজ! আমি চাই,, তুই এই কয়টাহ দিন আমার ছায়া হয়ে থাক। তারপর তো আর কখনো বলবো নাহ,, প্লিজ! আদনান!”

স্নেহার বিয়ে চোখের সামনে দেখতে হবে তাকে? সহ্য করবে কিভাবে আদনান? আদনানের মাথায় কোনো কাজই করছে নাহ। কিন্তু,, সে যদি এখন নাহ করে তার বার্বিডল যে বড্ড কষ্ট পাবে। আর সত্যিই তো,, এরপর তো আর তার বার্বিডল কে সে পাবে নাহ। এই কয়েকদিন তার কাছে থাকলে ক্ষতি কি? এই কয়েকটাহ দিনই তো আর সময় আছে তার কাছে। এই সময় টুকু সে নষ্ট কেন করবে? আদনান একটা নিশ্বাস নিয়ে স্নেহার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! তুই যা বলবি তাই হবে। আজ পর্যন্ত তোর কোনো কথা আমি নাহ শুনে থেকেছি? তাহলে আজ কেন থাকবো? আজও তোর সব কথা শুনবো। তুই যা বলবি তাই হবে। আমি তোর বিয়ে হওয়ার পর্যন্ত প্রতিটা সময় তোর সাথেই থাকবো। প্রমিজ!”

স্নেহা হঠাৎ করেই আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনান হতভম্ব হয়ে আছে। আদনানেরও মন চাচ্ছে স্নেহাকে একটি বার জড়িয়ে ধরতে। জড়িয়ে ধরে বলতে চাচ্ছে তার মন যে,, সে স্নেহাকে ভালোবাসে। অনেক অনেক ভালোবাসে তার বার্বিরডল কে। হারাতে চায় নাহ সে। কিন্তু,, সে যে ব্যর্থ হয়ে গেছে। সে যে পারে নি স্নেহার যোগ্য হতে। সে একটা বেকার ছেলে।

কোনোদিক দিয়েই নিজেকে স্নেহার যোগ্য বলে মনে করতে পারে নাহ আদনান। নাহ পরিবারের দিক দিয়ে আর নাহ নিজের দিক দিয়ে। স্নেহা কি কখনো পারবে এসি ছেড়ে ফ্যানের বাতাস সহ্য করতে। যাদের কখনো লাইট অফ হয় নাহ,, কারেন্ট চলে গেলে আইপিএস ব্যবহার করে,, সে কি পারবে,, কারেন্ট চলে গেলে মোমের আলোয় থাকতে? জানে নাহ আদনান। শুধু এইটুকুই জানে,, সে হারিয়ে ফেলেছে তার বার্বিডলকে।

সরে আসে স্নেহা আদনানের কাছে। উল্টো দিকে ঘুরে নিজের চোখ মুছে নেয় স্নেহা। আদনান বুঝতে পারে,, কিন্তু কেন জানি জিজ্ঞেস করলো নাহ,, এই অশ্রুর কারন কি। হয়তো সেইটা আদনানের মাথায়ই আসছে নাহ। আদনানের মাথায় তোহ এখন একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,, হারিয়ে ফেলেছে তার বার্বিডলকে। এমন সময় স্নেহার ফোনে একটা কল আসতেই স্নেহা রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”
–”……………..”
–” কোথায়?”
–”…………………”
–” আচ্ছা! আসছি আমি।”

কল কেটে আদনানের দিকে তাকায় স্নেহা। আদনানকে কেমন যেন পাথরের মতো লাগছে তার কাছে। তবুও স্নেহা সেইদিকে নাহ যেয়ে বলে ওঠে,
–” বাসা থেকে ফোন আসছে,, আমাকে যেতে হবে। আমি গেলাম। আগামীকাল চলে আসবি কিন্তু।”

আদনান সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আসবো। সাবধানে যাস।”

স্নেহা আর একপলক আদনানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আদনান স্নেহার যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদনান। ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বেরিয়ে আসে পার্ক থেকে।

#_Present_………..
পাশের একটা হকারের প্যাপু আওয়াজে ধ্যান ভাঙে আদনানের। আদনান আশে পাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় আগের থেকে লোকজন কমে এসেছে। ফোন বের করে দেখে ১২ টাহ বাজতে যাচ্ছে। এতো সময় এখানে বসে ছিলো সে? মিসড কলে গিয়ে দেখে শিশিরের ২০ টাহ মিসড কল,, সাঝের ১৪ টাহ মিসড কল,, ছোয়ার ১২ টাহ মিসড কল উঠে আছে।

ইশশশ! বাসার সবাই মনে হয় অনেক চিন্তা করছে তার জন্য। আদনানের খারাপ লাগতে শুরু করে। আদনান কখনোই এতো রাতে বাইরে থাকে নি। তাছাড়া রাত ৯ টাহ অতিক্রম করলেই তার ভাই সব সময় চিন্তা করে,, কলও দেয়। আর আজ এতোবার কল দিলো কিন্তু আদনান ধরে নি। নিশ্চয় বাসার সবাই অনেক চিন্তা করছে। এমন সময় আবার কল বেজে উঠতেই আদনান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে শিশির আবার ফোন দিছে। আদনান ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

ওপাশ থেকে শিশির চিন্তিত + চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান! কোথায় তুই? কতবার কল দিচ্ছি,, কল কেন ধরছিস নাহ? ঠিক আছিস তুই?”

–” হুম! ভাইয়া আমি একদম ঠিক আছি।”

–” তুই কোথায়? এতো রাত পর্যন্ত বাইরে কি করছিস?”

–” ভাইয়া! আমি আসলে,, আসলে….”

–” কি আসলে আসলে করছিস? আচ্ছা! আগে বাসায় আই,, তারপর কথা হবে।”

–” আচ্ছা! আসছি।”

–” সাবধানে আসিস। আল্লাহ হাফিজ!”

–” আল্লাহ হাফিজ!”

ফোন কেটে দেয় আদনান। একটা জোরে নিশ্বাস নেয় আদনান। চোখ বন্ধ করতেই স্নেহার মায়া ভরা মুখ টাহ ভেসে উঠে। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে আদনান। কষ্ট হচ্ছে আদনানের। চোখের কোনে জমে থাকা পানি টাহ আঙুল দিয়ে মুছে ফেলে আদনান। হাঁটা শুরু করে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির উদ্দেশ্যে।

#_রাত_১২_টা_৪৫_মিনিট_………
আদনান কলিং বেল বাজাতেই সাথে সাথে সাঝ দরজা খুলে দেয়। আদনান ঘরে ঢুকতেই দেখে সোফার উপর আজিজ রহমান,, আহিয়া রহমান,, শিশির,, ছোয়া,, সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। আদনানে খারাপ লেগে উঠে। বাবা- মায়ের প্রেশারের সমস্যা আছে,, ওনারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান। কিন্তু,, আজ তার জন্য জেগে রয়েছে।

আদনানের দিকে একপলক তাকিয়ে আজিজ রহমান নিজের রুমে চলে যান। সবাই ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আহিয়া রহমান আদনানের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” রাত করেছিস সমস্যা নেই। বড় হয়েছিস,, বন্ধু বান্ধব আছে। রাত হইতেই পারে। কিন্তু,, বাসায় এতো গুলা মানুষ তোর চিন্তা করবো,, এইডা কি তোর মাথা আসে নাই? নাকি ভুলে গেছিলি বাড়ির মানুষজনের কথা? তোর ভাই তোর চিন্তায় অসুস্থ পড়েছিলো,, প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো। নিজে তো ফোন করিসই নি,, বাসার সবাই করলো,, কিন্তু তুই রিসিভও করলি নাহ। এখনও নাহ খেয়ে আছে তোর ভাই। আমার মাথা ব্যাথা করতেছে। বউমা!”

ছোয়া বলে ওঠে,
–” জি! মা!”

–” এই ছেলে খেলে খেতে দাও। নাহলে তোমরা খেয়ে নাও। শিশির তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে এতো ঝামেলা নাহ নেওয়ায় ভালো।”

আহিয়া রহমান নিজের রুমে চলে যায়। আদনান মাথা নিচু করে রয়েছে। আসলেই,, আজ সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছে। শিশির আদনানের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” মায়ের কথায় কিছু মনে করিস নাহ সোনা। মা,, তো তাই এরকম ভাবে বলেছে। আসলে,, তুই যদি ফোন করতি তাহলে,, তো আর কেউ এতো টেনশন করতো নাহ,, আর কোনো সমস্যাও হতো নাহ। মায়ের চিন্তা তো বেশিই হয় বল? তাই মা বেশি কথা বলেছে। কিছু মনে করিস নাহ।”

আদনান মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমি কি মনে করবো ভাইয়া? আমার তো ভুল হয়েই গেছে। আসলে,, আমার বোঝা উচিত ছিলো,, কিন্তু আমার খেয়াল হয় নি। মাফ করে দাও প্লিজ! আমার জন্য তোমার প্রেশাড় বেড়ে গেছে,, কষ্ট হয়েছে তোমার। সরি ভাইয়া! আর কখনো এরকম করবো নাহ।”

শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আমি জানি তো,, আমার দুই ভাইবোন দুনিয়ার সব থেকে বেস্ট! তোকে এতো মাফ চাইতে হবে নাহ। যাহ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আই,, সবাই একসাথে খেয়ে নিবো। আমিও চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আসি।”

–” হুম!”

শিশির রুমে চলে যায়। আদনান ছোয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ছোয়া মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান ছোয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” সরি,, ভাবি!”

ছোয়া হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমাকে সরি বলতে হবে নাহ তোমার। আমি কি রাগ করছি? হুম? ভাগ্যিস,, কাহিনি টাহ ঘটিয়েছো তাই তোমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা আরও বেশি করে চোখে পড়লো।”

আদনান শান্তির একটা হাসি দেয়। ছোয়া আবার বলে ওঠে,
–” যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। মা- বাবা তো সন্ধ্যায় খেয়ে নেয় এখন। বাকি একজনেরও খাওয়া হয় নি। যাও আমি খাবার বাড়ছি।”

–” হুম! তুমি খাবার রেডি করো,, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

কথাটাহ বলে আদনান রুমে চলে যায়। ছোয়া সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝ! বোন তুমি প্লেট গুলো টেবিলে আনো, আমি খাবার গুলো একটু গরম করে নিয়ে আসি।”

–” ঠিক আছে! ভাবি!”

ছোয়া আর সাঝ রান্নাঘরে চলে যায় খাবার গোছানোর তাগিদে। সবাই খেয়ে ঘুমোতে চলে যায়। সবাই হয়তো ঘুম! জেগে রয়েছে শুধু আদনান। আজ কি আর তার ঘুম আসবে? ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা যে এখন তাকে তিলে তিলে শেষ করে দেবে।!!!

#_চলবে………….🌹
#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৪_

পুরো বাড়িটাহ কে সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে। শুধু বাড়িকেই নাহ বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে,, সাথে বিভিন্ন প্রকার নেট,, ডিজাইনিং কাপড়,, ফুল দিয়েও ডেকোরেশন করা হয়েছে। বাড়ির ভেতর থেকে মিউজিক ভেসে আসছে। আশেপাশে মানুষের চলাচল রয়েছে,, মার্জিত ভাবে।

রাস্তা থেকে সোজা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে আদনান। আর বাড়িটাহ স্নেহাদের। আজ স্নেহা আর ইয়াশের এইংগেজমেন্ট। আজ স্নেহা ইয়াশের বাগদত্তা বলে পরিচয় পাবে। আর সেই সাথে আদনানের থেকে তার বার্বিডল হারিয়ে যাবে এক ধাপ। এক একটা দিন যাবে,, আর তার জীবন থেকে তার বার্বিডল হারিয়ে যাবে এক ধাপ করে করে।

আদনানের আসার একদমই ইচ্ছে ছিলো নাহ। কারই বা সহ্য হয় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য একজনের হতে দেখার। কিন্তু,, সে যে তার বার্বিডল কে কথা দিয়েছে। আর তাছাড়া স্নেহা আজও অনেকবার ফোন দিয়েছে তাকে। আদনান নাহ এসে কিভাবে পারবে? আর যাই হোক,, তার বার্বিডলকে কষ্ট দিতে পারবে নাহ।

আদনান আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে বাসার দিকে। গেটের ভেতরে আসতেই দেখে বেশির ভাগ মানুষ গার্ডেন এরিয়ায়। ওখানে স্টেজও করা হয়েছে আর আলোকসজ্জাও বেশি। তার মানেই এখানে তাদের এইংগেজমেন্টের অনুষ্ঠান করা হবে। আদনান সেইদিকে এগিয়ে যেতেই দেখে স্নেহা নেই,, কিন্তু ইয়াশ সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। ইয়াশ আজ পুরো ফর্মাল গেটাপে আছে। বেশ লাগছে ইয়াশকে।

এমন সময় সবাইকে তার দিকে তাকাতে দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায় আদনান। তার দিকে সবাই কেন তাকাবে? তারপর কি যেন মনে করে তাড়াতাড়ি পেছন ঘুরে ইয়াশ। আর সেইদিকেই তাকিয়ে থাকে। স্নেহা একটা হোয়াইট লেহেঙ্গা পরে এগিয়ে আসছে। চোখে গাঢ় কাজল,, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,, হালকা মেকাপ,, ডায়মন্ডের নেকলেস,, চুল মাঝ সিথি করে হোয়াইট স্টোনের টিকলি পরে চুল ছেড়ে দেওয়া,, চুলের এক পাশে কানে দুইটা হোয়াইট রোজ গুজে দেওয়া আছে,, হাতে হোয়াইট স্টোনের চুড়ি,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে স্নেহাকে। আদনান যেন স্নেহার এই রুপে ঝলসে যাচ্ছে।

সবাই স্নেহার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। স্নেহা সামনে তাকাতেই দেখে আদনান দাড়িয়ে আছে। আর আদনানের পাশে একটু পেছনেই ইয়াশ মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সামনে দুইজন ব্যাক্তি স্নেহার,, একজন অনুভুতি,, অন্যজন ভবিষ্যৎ। স্নেহা চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নেয়।

ইয়াশ এগিয়ে এসে স্নেহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। স্নেহা একপলক আদনানের দিকে তাকিয়ে ইয়াশের হাতের উপর হাত রাখে। আদনান চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকায়। তারপর আবার মাথা উঠিয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে স্নেহা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয় আদনান। আদনানের মুখে হাসি দেখে স্নেহার মুখেও অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠে।

স্নেহা আর ইয়াশ স্টেজে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। আদনান কিছুটাহ দুরে একটা চেয়ারে বসে ওদের দিকে দেখছে। কত সুন্দর লাগছে আজ স্নেহাকে। স্নেহা প্রায় আদনানের দিকে তাকাচ্ছে। স্নেহা নিজের কষ্ট টাহ নাহ পারছে কাউকে বলতে,, আর নাহ পারছে নিজে সহ্য করে থাকতে।

সবাই এগিয়ে আসে। সময় হয়ে গেছে আংটি বদলের। সবাই এগিয়ে আসছে মুখে হাসি নিয়ে। আদনানের চোখ ছলছল করে উঠছে। বার বার চোখের পলক ফেলে সামলাতে চেষ্টা করছে নিজের অশ্রু গুলোকে। স্নেহা করুন চোখে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে। ইয়াশের মা একটা ডায়মন্ড রিং ইয়াশের হাতে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ এইটা স্নেহাকে পরিয়ে দাও।”

ইয়াশ আংটি টাহ হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওকে মম!”

ইয়াশ স্নেহার হাত নিজের হাতের উপর তুলে নেয়। স্নেহা করুন চোখে আদনানের দিকে তাকায়। আদনান ছলছল চোখে একটা মুচকি হাসি দেয়। স্নেহা মাথা নিচু করে ফেলে। ইয়াশ স্নেহাকে আংটি পরিয়েই দিলো। আদনান চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে ঘুরে যায়। চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে আদনানের।


#_দুইদিন_পর_…….
শিশির নিজের রুমে বসে আছে। ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। ছোয়া রান্না সেরে এসেছে। খুব গরম লাগছে তার। তাই গোসল করবে ভাবছে। আলমারি থেকে শাড়ি বের করে নিয়ে বাথরুমে রেখে আসে। তারপর চুল গুলো একটু আচড়িয়ে নিলো। তারপর কি মনে করে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ঐ শুনো!”

শিশির ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলে ওঠে,
–” বলো!”

ছোয়া কিছুটাহ বিরক্ত হয়ে এগিয়ে এসে শিশিরের কাছের থেকে ল্যাপটপ নিয়ে নেয়। তারপর বলে ওঠে,
–” আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো।”

শিশির একটা মুচকি হাসি দিয়ে ছোয়াকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। ছোয়ার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
–” বলেন,, ম্যাম!”

ছোয়া একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর আবার গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে,
–” শিশির! আদনানের কি যেন হয়েছে। রুম থেকে বের হয় নাহ। ওর ঐযে ওর বান্ধবীর বিয়ে হচ্ছে,, ওখানে যাওয়ার জন্যই শুধু বের হয়। টিউশনি করতে যায়,, আর চুপচাপ থাকে। আদনান তো এমন ছিলো নাহ,, অনেক হাসি খুশি ছিলো। কিন্তু,, ওর মাঝে এখন সেই হাসি খুশি টাহ পাই নাহ। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেছিলাম,, বললো কিছু নাহ। কিন্তু,, আমার মনে হচ্ছে,, ওর কিছু হয়েছে।”

ছোয়ার কথা শুনে শিশির কিছুটাহ গম্ভীর হয়ে যায়। আদনানের ব্যাপার টাহ সেও খেয়াল করেছে। কিন্তু,, ছোয়ার মতো করে এতোটাহ বুঝে নি। একটা নিশ্বাস নিয়ে শিশির বলে ওঠে,
–” হয়তো,, বাইরে কোনো প্রবলেম হয়েছে। বড় হয়েছে তো,, এখন সব বলতে চায় নাহ। আর কয়েকটাহ দিন যাক,, আর একটু সময় দেই। দেখি কি হয়।”

–” আচ্ছা!”

ছোয়া উঠে যেতে গেলে শিশির আরও জোড়ে জড়িয়ে ধরে। ছোয়া কিছুটাহ কেঁপে উঠে হালকা কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” আরে কি করছো? ছাড়ো!”

শিশির ছোয়ার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাড়ির প্রতিটা মানুষের কত খেয়াল রাখেন ম্যাডাম। কিন্তু,, এইদিকে যে একটা মাসুম বর আছে,, তার খেয়াল কি থাকে আপনার?”

ছোয়া হালকা হাসে। লজ্জিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” যাহ!”

শিশির হালকা হেসে ছোয়ার ওষ্ঠ স্পর্শ করে। ছোয়া শিশিরকে সরিয়ে দিয়ে বাথরুমে চলে যায়। শিশিরও আটকায় নাহ ছোয়াকে। মুচকি হাসি দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে।


আদনান একভাবে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে। আজ স্নেহার সঙ্গীত মেহেন্দি অনুষ্ঠান। স্নেহার হাতে পার্লার থেকে আসা দুইজন মেয়ে মেহেন্দি দিয়ে দিচ্ছে আর এক পাশে কয়েকজন ছেলে মেয়ে নাচ করছে। সবাই নাচ দেখছে। কিন্তু,, আদনানের চোখ যে স্নেহাতেই সীমাবদ্ধ।

স্নেহাকে আজ বড্ড সুন্দর দেখাচ্ছে। পুরো বার্বিডলের মতো লাগছে। একটা ফুলানো সবুজ ঘাগরার সাথে লাল টপ,, কচিপাতা রং এর দোপাট্টা,, আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনার সাথে সামনে হালকা পাফ করে চুল ছেড়ে দেওয়া,, হালকা সাজ,, পরিপূর্ণ লাগছে স্নেহাকে।

স্নেহাও আদনানকে আড় চোখে দেখছে। ছেলেটার চোখের নিচে দিয়ে কালি পড়ে আছে। কি হয়েছে তার? সারা রাত কি ঘুমায় নি সে? আদনান স্নেহাকে যেন প্রান ভরে দেখে নিচ্ছে। কারন,, পরে দেখার সুযোগ যে আর সে পাবে নাহ। স্নেহার পাশে বসা একটি মেয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” জানিস,, আপু! আজ তোর মেহেনদির রং যতো গাঢ় হবে তোর বর তোকে ততো ভালোবাসবে।”

কথাটাহ আদনানের কানেও আসে। স্নেহা একপলক আদনানের দিকে তাকিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। আদনান ওখান থেকে উঠে ছাদের দিকে চলে যায়। বিষয়টি স্নেহা খেয়াল করে।

………………ছাদ টাহ খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে৷ টুরি বাল্ব,, বিভিন্ন রঙের কাপড়,, নেট দিয়ে সাজানো হয়েছে। আকাশে বেশ সুন্দর চাঁদও উঠেছে। অনেক মনোরম লাগছে চারিদিকে। আদনান রেলিং ধরে চারিদিকে দেখছে।

আর একটা দিন! তারপরেই স্নেহার বিয়ে হয়ে যাবে অন্য জায়গায়। অন্য একজনের অধিকারের হয়ে যাবে। হারিয়ে ফেলবে তার বার্বিডল কে। ইশশ! যদি আর একটু ভালো হতো নিজের অবস্থান,, তাহলে আর নিজের বার্বিডলকে এভাবে হারাতে হতো নাহ।

–” আদনান!”

কারোর ডাক শুনে পেছনে তাকায় আদনান৷ দেখে স্নেহা দাড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। মাশাআল্লাহ! এই চাঁদের আলো আর টুরি বাল্বের আলো স্নেহার মুখে খেলা করছে। দেখতে আরও মায়াবী লাগছে স্নেহাকে। আদনানের আফসোস হচ্ছে,, এই মায়া ভরা মুখ সে হারিয়ে ফেলবে। কি করে থাকবে সে? স্নেহা আদনানের দিকে এগিয়ে এসে মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আদনান!”

আদনানের ধ্যান ভাঙে স্নেহার কথা। একটা ঢুক গিলে নিজেকে সামলিয়ে নেয় আদনান। আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে কেন? মেহেনদি দেওয়া শেষ?”

স্নেহা বলে ওঠে,
–” হুম! শেষ! নিচে নাচ গান হচ্ছে,, ভালো লাগছে নাহ। তাই চলে আসলাম।”

–” কেন? ভালো লাগছে নাহ কেন?”

–” এমনি! তুই এখানে কেন চলে এলি?”

–” আসলে,, নিচে সাউন্ডে মাথা ব্যাথা করছে। তাই চলে এলাম।”

–” ওহ!”

–” হুম!”

আদনান কিছু সময় চুপ করে থেকে আবার বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”

–” হুম!”

–” বিয়ের পর তুই তো কানাডায় চলে যাবি। মনে রাখবি আমাকে? নাকি ভুলে যাবি?”

স্নেহা ছলছল চোখে আদনানের দিকে তাকায়। আলো আধারিতে আদনান বুঝতে পারে নাহ স্নেহার চোখ ছলছল করছে। বার বার পলক ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় স্নেহা। হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ভুলে কেন যাবো? তুই কি আমার কাছে ভুলে যাওয়ার মতো?”

আদনানের কেমন যেন কান্না পাচ্ছে। কিন্তু,, কান্না যে তার দ্বারা সম্ভব নাহ। বার বার ঢুক গিলে সামলিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। আদনানকে চুপ থাকতে দেখে স্নেহা বলে ওঠে,
–” আদনান!”

–” হুম!”

স্নেহা হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আমার তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তুই বিয়ে করবি কবে?”

আদনান তাচ্ছিল্যে হাসি দেয়। তারপর বলে ওঠে,
–” করবো একদিন। এখনো তো বেকার,, তার উপর ছাত্র। তোর বিয়ের হয়ে গেলে,, মাস্টার্সে ভর্তি হবো। স্টাডি শেষ করে,, একটা জব করবো। তারপর বিয়ে সাধী। ফ্যামিলির উপর ছেড়ে দিলাম। ওরা যা করবে তাই হবে।”

স্নেহা একটু হাসে। তারপর বলে ওঠে,
–” আদনান তোর মনে আছে,, আমি কেমন ফুচকা খেতাম আর তুই নাক শিটকোতি।”

–” এইগুলা কি ভুলা যায় কখনো?”

স্নেহা হালকা হাসে। আদনানের চোখ আবার ছলছল করে উঠে। তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ঘুরে যায়। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ঐদিকে কি দেখিস?”

আদনান নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আবার স্নেহার দিকে ঘুরে বলে ওঠে,
–” কিছু নাহ!”

–” ওহ!”

আদনান কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”

–” হুম!”

–” তোকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে,, আকাশ থেকে স্বর্গীয় পরি নেমে এসেছে। আমি কখনো,, জলপরি,, আকাশ থেকে নেমে আসা পরি দেখিনি। কিন্তু,, আজ মনে হচ্ছে,, এই ককটেল সুন্দরী কে দেখে সেই পরীর রুপের থেকে বেশি কিছু দেখে ফেলেছি।”

স্নেহা লজ্জা পায় আদনানের কথায়। কিন্তু,, স্নেহার অসম্ভব ভালো লাগছে আদনানের মুখে এইসব শুনে। এইগুলোয় তো তার সম্বল হয়ে থাকছে এখন। আদনান আরও কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” স্নেহা! এখন আমি বাসায় যাই?”

স্নেহা বলে ওঠে,
–” হ্যা! রাত হয়ে যাচ্ছে। চল তোকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।”

–” না না তোকে এগিয়ে দিতে হবে নাহ। তোকে বরং অনুষ্ঠানের জায়গায় রেখে আমি চলে যাবো।”

–” আচ্ছা! চল!”

দুইজনে একসাথে নেমে আসে ছাদ থেকে। আদনান স্নেহাকে অনুষ্ঠানের জায়গায় রেখে চলে যায়।

……………সবাই ঘুমিয়ে গেছে। শুধু আদনানের চোখে ঘুম নেই। ঘুম আসবে কিভাবে? এক একটা সময় যাচ্ছে,, তার বার্বিডল তার কাছের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। চোখের সামনে বার্বিডল কে অন্য একজনের হতে দেখার যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।

আদনান তাড়াতাড়ি উঠে বসে পড়ে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যেন তার। সবার সামনে হাসি খুশি থাকার নাটক আর ভেতরে ভেতরে গুমড়ে গুমড়ে মরতে হচ্ছে তাকে। উঠে বারান্দায় চলে যায় আদনান। বারান্দার গিরিল ঘেসে ফ্লোরে বসে পড়ে সে। হাটুকে মুখের কাছে এনে ফুপিয়ে কান্না করে উঠে আদনান।

আর সহ্য হচ্ছে নাহ তার। একটু নাহ কান্না করলে মরেই যাবে হয়তো। নিজেকে হালকা তো করতে হবে। ছেলে বলে কান্না করতে পারবে নাহ,, তাই কি হয়? তাই রাতের আধারে সবার আড়ালে একা একা গুমড়ে কান্না করছে আদনান।

এইদিকে……
বালিশে মুখ চেপে কান্না করে যাচ্ছে স্নেহা। এরপর আর এইভাবে কান্না করে নিজেকে হালকা করতে পারবে নাহ হয়তো। তাই এখন যতোটা পারছে কান্না করে হালকা হচ্ছে।

নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। আত্নহত্যা যদি হারাম নাহ হতো,, তাহলে হয়তো এইংগেজমেন্টের আগের দিনই হতো তার শেষ দিন। চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে স্নেহার। শব্দ করেও কান্না করতে পারছে নাহ স্নেহা। পাশে এক বোন ঘুমিয়ে আছে। তাই নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে স্নেহা!!!!

#_চলবে…………