লাল নীল সংসার পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0
338

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৯_ ( শেষ পর্ব )

মোমবাতির আলোয় ছেয়ে আছে পুরো রুম। ফুলের গন্ধে মাতেয়ারা,, পুষ্পসজ্জিত রুম,, বারান্দা,, আর সেই পুষ্পসজ্জিত বিছানায় বসে আছে গাঢ় লাল লেহেঙ্গা পরা এক হাত ঘোমটা টানা এক কন্যা।

সাঝ! হ্যা! আজ সাঝের বিয়ে হয়েছে আবিরের সাথে। আবির সাঝকে আর পরবর্তীতে কোনো ফলো করা করি করে নি। সোজা সাঝের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। সাঝের পরিবার থেকে আবিরকে খুব পছন্দ হয়েছে। তাই পারিবারিক ভাবেই মিলিত হয়ে জাঁকজমকপূর্ণ করে বিয়ে হয়েছে।

শিশির আর আদনানের বিয়েতে জাঁকজমকপূর্ণ নাহ হলেও সাঝের বিয়েতে যথেষ্ট অনুষ্ঠান করেছে। আবিরের পরিবারও সাঝকে খুব পছন্দ করেছে।

সাঝ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে সাঝের। কিন্তু,, এইটা যে নিয়ম। এইটা যে মেনে নিতে হবে। আসার সময় শিশির অনেক কান্না করেছে সাঝকে জড়িয়ে ধরে,, আদনানও কান্না করেছে। সাঝের মনটাহ অনেক খারাপ লাগছে।

এমন সময় দরজায় আওয়াজ হতেই কিছুটাহ কেপে উঠে সাঝ। আবির দরজা আটকিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। সোজা আলমারির দিকে চলে যায় আবির। একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।

সাঝ একটু উঁকি দিয়ে দেখতে থাকে আবিরের যাওয়া। কিছু সময় পর আবির বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে,, আবির বেরিয়ে আসলে সাঝ আবার কেঁপে উঠে। আবির টাওয়াল টাহ সাইডে সোফার উপর রেখে এগিয়ে আসে বিছানার দিকে।

সাঝের মনে হচ্ছে ভুমিকম্প হচ্ছে। গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে সাঝ। আবির বিছানার উপর বসে সাঝকে দেখতে থাকে হাত বাড়িয়ে সাঝের ঘোমটা ফেলে দেয় আবির। চোখ জুড়িয়ে আসে আবিরের। মনে হচ্ছে,, তার চোখ টাহ ঝলসে যাচ্ছে। এতো রুপ এই মেয়েটার?

সাঝ আস্তে আস্তে আবিরের দিকে তাকায়। কিন্তু,, বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে নাহ। চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবির সাঝের কপালে একটা পরশ একে দেয়,, কেপে উঠে সাঝ। সাঝের এই কম্পন আবিরও অনুভব করে। আবির মুখ বাড়িয়ে সাঝের বন্ধ চোখের পাতায়ও পরশ একে দেয়। সাঝ আবারও কেঁপে উঠে। মুচকি হাসে আবির।

সাঝ হালকা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আবির মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। লজ্জা লেগে উঠে সাঝের। আবির সাঝের লাজ রাঙা মুখ দেখতে খুব পছন্দ করে। অনেক অমায়িক দেখা যায় সাঝকে। পবিত্র পবিত্র লাগে। আবির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নামাজ পড়বে নাহ?”

সাঝ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালে আবির বলে ওঠে,
–” যাও,, এইসব খুলে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসো।”

–” ঠিক আছে!”

সাঝ ফ্রেশ হয়ে আসলে দুইজনে একসাথে নামাজ আদায় করে। আল্লাহর কাছে নিজেদের নতুন সংসারের জন্য দোয়া করে।

সাঝ দাড়িয়ে আছে। আবির এগিয়ে এসে সাঝের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সাঝের শিরদাঁড়া দিয়ে শিহরন বয়ে যায়। আবির সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু। আমি কখনো ভাবিই নি,, কাউকে এতো টাহ ভালোবাসবো,, তাকে এতো সহজে পেয়েও যাবো। হালাল ভাবে তার কাছে আসতে পারবো। আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান! যে তোমার মতো একজন স্ত্রীকে পেয়েছি। চলো নাহ,, শুরু করি আজ থেকে তোমার আমার সুখময় #_লাল_নীল_সংসার_।”

সাঝ মুচকি হেসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবিরও প্রশান্তির হাসি দিয়ে সাঝকে আগলে নেয়।


ছোয়া মাত্র কাজ শেষ করে রুমে এসে দেখে স্নিগ্ধ শিশিরের বুকের উপর জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আর শিশির ঘুমন্ত ছেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসে ছোয়া। ছোয়া আগে বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

বিছানায় আসতেই শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। ছোয়াও মুচকি হাসে। ছোয়া স্নিগ্ধর শোয়ার জায়গা ঠিক করে দিয়ে স্নিগ্ধ কে শুইয়ে দেয় ঠিক করে। স্নিগ্ধর উপর হালকা করে কাথা মেলে দেয়।

ছোয়া উঠে যেতে গেলে শিশির ছোয়ার হাত টেনে ধরে। ছোয়া মুচকি হেসে শিশিরের দিকে তাকালে শিশির ইশারায় না করে যেতে। ছোয়া শিশিরের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে ওঠে,
–” লাইট অফ করে দিয়ে আসছি।”

শিশিরও ছোয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা!”

শিশির ছেড়ে দিলে ছোয়া গিয়ে লাইট অফ করে দেয়। শিশির ততোসময়ে শুয়ে পড়েছে বিছানায়। ছোয়া গিয়ে শিশিরের বুকে মাথা রাখতেই,, শিশির আগলে নেয় ছোয়াকে।


আদনান আদ্রিশাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পেরে উঠছে নাহ। কিছু সময় পর স্নেহা বারান্দা থেকে এগিয়ে এসে ফোনটাহ ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখে। তারপর আদনানের কাছের থেকে আদ্রিশাকে নিয়ে সামলাতে থাকে। আদনানের স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কার সাথে কথা বলছিলে?”

–” ইয়াশের সাথে।”

আদনান কিছুটাহ আক্ষেপের সুরে বলে ওঠে,
–” উফ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ ইয়াশের ওয়াইফের বেবি হওয়ার কথা ছিলো নাহ?”

–” হুম!”

–” কি অবস্থা?”

–” মেয়ে হয়েছে!”

–” আলহামদুলিল্লাহ!”

–” হুম!”

আদ্রিশা ঘুমিয়ে গেছে। স্নেহা আদ্রিশা কে ভালো করে শুইয়ে দেয়। আদনান গিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় এসে শুইয়ে স্নেহাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। স্নেহাও পরম যত্নে স্বামীর দিকে এগিয়ে যায়।


আজিজ রহমান আর আহিয়া রহমান বারান্দায় বসে আছে। দুইজনের দৃষ্টিই আকাশে উঠা চাঁদের দিকে নিবদ্ধ। বেশ লাগছে আজকের আকাশটাহ। আজিজ রহমান আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আহিয়া!”

–” হুম!”

–” এখন আমাদের সংসার পরিপূর্ণ কউ।”

–” হুম! আমাগো পোলা,, মাইয়া সব ভালো জায়গায় আছে। আমাগো ঘর ভরা নাতি নাতনি আছে। আর কি চাই আমাগো?”

আজিজ রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ঠিকি কইছো। শিশির ভালো জায়গায় চাকরি করে,, বউ – সন্তান দিয়ে পরিপূর্ণ হইছে। আমাগো আদনানও ভালো জায়গায় আছে,, বউ- সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করতেছে,, মাইয়াডা ডাক্তার হইছে,, কত বড় ঘরে ভালো পোলার সাথে বিয়ে হইছে। যেদিকে তাকায় খালি শান্তি আর শান্তি!”

–” আলহামদুলিল্লাহ! সারাজীবন যেন এমন সুখের সংসার থাকে আমার।”

–” আচ্ছা! আহিয়া! কউদি আমার পছন্দের রং কি?”

আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” লাল!”

–” হ! আর তোমার নীল! আমি একটা কথা ভাবছি বুঝলা?”

আহিয়া রহমান কিছুটাহ ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি?”

–” ওরা নাকি বাড়ি তুলবো। কয়েক মাসের ভেতর হাত দিবে বাড়ি করার জন্য। আমি একখান নাম গুছাই রাখছি বুঝলা! ঐযে বাড়ির সামনে নেমপ্লেট নাহ কি জানি দেয় নাহ। আমাগো বাড়ির নাম ঐডা দিবো।”

–” কি নাম দিবা?”

আজিজ রহমান মুচকি হেসে আহিয়া রহমানকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আকাশে উঠা চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” #_লাল_নীল_সংসার_ ”

……………….🌹সমাপ্ত🌹………………..