#লাল_রং
#ফারহানা_চৌধুরী
#সূচনা_পর্ব
-‘এক্সকিউজ মি!’
অদ্রি বৃষ্টির জন্য আঁটকে গিয়েছিল। একটা ছাউনির নিচে সাময়িক আশ্রয় গেঁড়ে নিলেও, বৃষ্টি শেষ হতেই নিজ গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে সে। পথিমধ্যেই আচমকা পুরুষালী কন্ঠস্বরে তার পদযুগল থেমে গেল। দ্বিধায় ভুগল এই নিয়ে, তাকেই ডাকছে কিনা। আশে পাশে তাকিয়েও কাউকে না দেখতে পেয়ে সে পিছনে তাকালো। হ্যাঁ, তাকেই ডেকেছে। একটি সাদা শার্ট পরিহিত ছেলে। ঠিক ছেলে না, লোক। লোকটা তার দিকে এগিয়ে এলে অদ্রি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে এই লোককে চেনে না। লোকটি সোজা তার সামনে এসে দাড়ালো। নম্র-ভদ্র গলায় বলল,
-‘একটা হেল্প করতে পারবেন?’
অদ্রির কুঁচকানো ভ্রু আরো গুটিয়ে এলো। স্বভাবতই কিছুটা কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-‘কি হেল্প?’
লোকটি হাতের একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলো। একটা রঙিন, ছোট নোট কাগজ। অদ্রিকে সেটা দেখিয়ে বলল,
-‘এই এড্রেসটা কোথায় কাইন্ডলি বলতে পারবেন?’
অদ্রি গোঁটানো ভ্রু নিয়ে চেয়েই কাগজটা নিলো। এড্রেসটা পড়ে চরম আশ্চর্য হলো। তবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইল না বিশেষ। লোকটার দিকে তাকিয়ে, তাকে এড্রেসটা বলল। লোকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হেসে বলল,
-‘ধন্যবাদ।’
অদ্রি চুপ থাকলো। লোকটা চলে গেলে, সেদিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টির সীমানা অতিক্রম করে ফেললে অদ্রি চোখ সরায়। এরপর কাঁধের ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে সেলফোনটা বের করে কাউকে কল করলো। রিসিভ হতেই অদ্রি জিজ্ঞেস করল,
-‘আজকে যেন বাসায় কে আসছে?’
****
ভার্সিটি শেষ করে, টিউশনি পড়িয়ে সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরে অদ্রি। কলিংবেল বাজালে, কিছুক্ষণ পর নাহারা অর্থাৎ তার মা এসে দরজা খুলল। অদ্রিকে দেখেই কৃত্রিম রাগ ঝেড়ে বললেন,
-‘এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার? বললাম আজকে তাড়াতাড়ি ফিরতে। ওরা এসে বসে আছে অদ্রি।’
অদ্রি মায়ের রাগী মুখের দিকে চেয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
-‘দেরি হয়ে গেছে, মা। ইচ্ছে করে তো আর করিনি।’
বলেই ভিতরে এলো। ড্রইং-রুমের সোফায় একজন লোক বসে আছে। সাথে একজন ভদ্রমহিলা। অদ্রির বাবাও বসে আছেন। অদ্রি এগিয়ে এলো। সালাম দিলো সকলের উদ্দেশ্যে। সোফায় বসা ভদ্রমহিলাটির সাথে কথা বলতে বলতেই পাশে বসা লোকটার দিকে চোখ গেলো অদ্রির। লোকটা বড়বড় চোখ করে তার দিকেই তাকিয়ে। আচমকা বিস্ময় নিয়ে অদ্রির উদ্দেশ্যে বলে বসলো,
-‘আপনি!’
ভদ্রমহিলা ভ্রু কুঁচকালেন। ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘তন্ময়, চেনো তুমি অদ্রিকে?’
অদ্রি বুঝলো লোকটার নাম তন্ময়। এই সেই লোক, যে দুপুরে তার কাছে এড্রেস জানতে চেয়েছিলো। এবং এড্রেসটি ছিলো অদ্রিরই বাড়ির ঠিকানা। তন্ময় মিনমিন করে বলল,
-‘দুপুরে আসার সময় ওনার কাছেই বাড়ির এড্রেস জানতে চেয়েছিলাম।’
অদ্রির বাবা হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতেই বললেন,
-‘বাহ! আগেই দেখা হয়ে গেছে।’
তন্ময় অপ্রস্তুত হলো খুব। বিস্ময়ভাব কাটেনি তার তখনও। অদ্রি ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ তন্ময়ের মায়ের সঙ্গে কথা-বার্তার পর অদ্রি বলে,
-‘আন্টি, আপনারা বসেন। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। বাইরে থেকে এসেছি তো।’
ভদ্রমহিলা মাথা নাড়ালেন। মিষ্টি করে হেসে বললেন,
-‘আরে, দেখেছো! আমি একদমই খেয়াল করিনি। তুমি যাও, মা। হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খাওয়া-দাওয়া করো। আমরা তো আছিই। আরো কথা হবে। যাও তুমি।’
অদ্রি ভদ্রমহিলার আন্তরিকতায় হাসে। মাথা দুলিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
****
-‘আমায় বললেন না কেনো ঠিকানাটা আপনার বাসার ছিলো?’
মায়ের কথায় তন্ময়কে ছাদ ঘুরিয়ে আনতে আসে অদ্রি। বৃষ্টির কারণে ছাদের অনেকাংশে পানিতে ভরে আছে। এই বৃষ্টি-বাদলা একটু হলেই সব পানিতে থইথই করে। কি একটা জ্বালা!
গায়ে পাতলা শাল রয়েছে অদ্রির। বৃষ্টির জন্য আবহাওয়া ঠান্ডা, হালকা ঠান্ডাও লাগছে এখন৷ ছাদে পা রাখতেই তন্ময়ের বলা উপরোক্ত কথায় তন্ময়ের দিকে তাকায় সে। হাসে খানিকটা। সেভাবেই বলে,
-‘বললে কি করতেন? আসতেন না?’
তন্ময় তার সোজা-সাপটা কথায় থতমত খেল। অপ্রস্তুত বোধ করে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
-‘তা না। যখন জানতেন বলতেই পারতেন। কারো বাড়ির ঠিকানা সেই বাড়ির লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলে, সেই মানুষ এতো স্বাভাবিকভাবে জবাব দিয়েও, কিছু জিজ্ঞেস না করে কিভাবে থাকে? এমন কি আদৌ কেউ করে?’
অদ্রি আবারও হাসলো,
-‘কেউ করে কি-না আমি জানি না। এমন অভিজ্ঞতা আমার একদমই নেই বলা চলে। তাই উত্তরটা দিতে পারলাম না।’
তন্ময় এবার প্রসঙ্গ পাল্টালো। অদ্রির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-‘কিসে পড়ছেন এখন?’
অদ্রি নিজের গায়ের শালটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে বলল,
-‘অনার্স থার্ড ইয়ার।’
তন্ময় অবাক হয়,
-‘বেশ ছোট তো আপনি আমার।’
অদ্রি হাসল,
-‘হ্যাঁ, কিছুটা ছোট তো বটেই।’
এরপর অকস্মাৎ দুজনেই চুপ করে গেল। কথা বলার কিছু আর নেই বোধহয়। কেউ কোনো কিছুই বলছে না। বেশ কিছুসময় এভাবে যাওয়ার পর, অদ্রি তন্ময়ের দিকে তাকালো। বলল,
-‘আমাদের দুজনের মায়েরা বন্ধু হন। যে-সে বন্ধু নয়, একদম বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে, আন-ফর্চুনেটলি এইটাই আমাদের প্রথম দেখা।’
-‘একটু শুদ্ধ করে দেই। ‘বন্ধু’ নয়, ‘বান্ধবী’ হবে।’
অদ্রি হেসে ফেলল,
-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। তা-ই।’
তন্ময় হেসে মাথা দোলালো। বলল,
-‘আচ্ছা। তো আপনার কথায় উত্তর দেই। শুনেছি আমার জন্মের কয়েক বছর পরই নাকি চট্টগ্রাম চলে যায় সবাই। তারপর এই অনেক বছর পর ঢাকায় আসা। এইজন্য রাস্তা-ঘাট চিনিই না বলতে গেলে।’
অদ্রি কৌতুহলী হলো,
-‘চট্টগ্রাম কেন?’
তন্ময় শ্বাস ফেললো,
-‘বাবার সরকারি চাকরি ছিলো। ট্রান্সফার হয় চট্টগ্রামে। এইজন্য।’
অদ্রি বোঝার মতো করে নাথা নাড়লো। অদ্রি আর তন্ময়ের মধ্যে এই প্রথম কথোপকথন হলেও, তন্ময়ের সহজ-সরল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার অদ্রির ভালো লাগল খুব। তার চোখে-মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি লক্ষণীয়। ছেলেটা মন্দ নয়। তার ভালোই লেগেছে। অদ্রি আড়ালে মুচকি হাসে।
চলমান…..(প্রচার)