লাল রং পর্ব-০২

0
44

#লাল_রং
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ২]

সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে তন্ময়ের মা হাসিমুখে বললেন,
-‘নাহারা, আজকের দিনটা এতো ভালো কাটলো! কতদিন পর একসঙ্গে এতক্ষণ বসলাম। তোর বাড়িতে আসতে হবে আরো কয়েকবার। তন্ময় তো এখানেই ঢাকায় চাকরি নিয়েছে।’

অদ্রির মা হাসলেন,
-‘হ্যাঁ, অবশ্যই আসবি।’

দু’বান্ধবীর বেশ ক’বছরের গল্প শেষে যখন তন্ময়ের মা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তন্ময়ও উঠে দাঁড়াল। গেইট পেরোবার আগে অদ্রির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। তেমন কিছুই বলে না। নিরব হাসি আদান-প্রদানের এই পর্যায়ে অদ্রিও মুচকি হাসল।

****
পরের দিন অদ্রি ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখে মায়ের হাতে একটা বই। কৌতুহলী অদ্রি জিজ্ঞেস করে বসল,
-‘এটা কী মা?’
-‘চোখে দেখিস না? কি আর? বই।’

অদ্রি মুখ চুপসে তাকায়। বলে,
-‘সে তো আমিও দেখছি। কে দিল সেটা বলো। তুমি তো এসব ছুঁয়েও দেখো না।’

নাহারা এবার বললেন,
-‘তন্ময় দিয়ে গেছে। তোর জন্য। বলল, তুই নাকি ওকে বলেছিস তুই বই পড়তে ভালোবাসিস, আরো কতো কি!’

অদ্রি অবাক হয়ে বইয়ের মলাটের দিকে তাকায়। বইটা তার প্রিয় লেখকের। মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা উষ্ণ অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। তবে সেটাকে খুব সহজেই দমিয়ে নিজেকে সামলে নিল। বইটা নিতে গেলে নাহারা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন,
-‘তোর আক্কেল কবে হবে? এসব বলতে গেলি কেন ছেলেটাকে? শুধু শুধু এসব দিয়ে খরচা করলো।’

-‘আরে! তুমি কেন ক্ষেপে যাচ্ছো? আমি বলেছি নাকি দিতে? নিজে সেঁধে দিলে আমার দোষ?’

-‘বললি বলেই তো দিলো। একটু বোধ-জ্ঞানও আল্লাহ আমার মেয়েটাকে দেয় নাই। কি করবো আমি একে নিয়ে!’

উনি শত শত কথা বিড়বিড় করতে করতে নিজের কাজ করতে চলে গেলেন।

****
তন্ময় ঢাকায় থাকছে। চাকরির জগতে মানিয়ে নিতে গিয়ে ব্যস্ততার মাঝেও অদ্রির মুখ মনে পড়ে বারবার। ছিমছাম, সহজ-সরল মেয়েটা তার কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে। এতো কৌতুহল হওয়া উচিত নয়। তবুও তো হচ্ছে। ইশ! বাজে ব্যাপার-স্যাপার এগুলো।

এদিকে অদ্রিও ঠিকঠাক সব ভুলে থাকতে পারছে না। তন্ময়ের পাঠানো বইটা টেবিলে রাখা। পড়তে গিয়ে মনে হলো, একটা পাতা ভাঁজ করে রাখা বা ভেতরে কিছু রাখা। সেখানে একটা চিরকুটের মতো কিছু। অদ্রি তা হাতে নিলো। ভাঁজ খুলে দেখলো নীল রঙের কাগজটাতে গোটা গেটা অক্ষরে কিছু কথা লেখা,
-‘আন্টিকে মিথ্যে বলেছি। কারণটা না বলি। বইটা আপনাকে স্বেচ্ছায় দিয়েছি আমি। মনে হলো, বইয়ের প্লটটা পছন্দ হবে আপনার। আমার খুব পছন্দের বই এটা। যত্ন নিয়ে পড়বেন। শেষটা জানাবেন।’

ক’লাইনের চিরকুটটা অদ্রি সেকেন্ডেই পড়ে শেষ করল। চিরকুটটা হাতে নিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। ঠোঁট চেপে মুচকি হাসে। আচমকা হাসি থামিয়ে চমকে ওঠে। এতো বেশি প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হচ্ছে? তন্ময় তার মনে একটা জায়গা করে নিচ্ছে কি?

******
এরপর বেশ কয়েকদিন কাটলো। অদ্রি তন্ময়ের ভাবনা মাথা থেকে মোটেও বের করতে পারলো না। মন-মস্তিষ্কে কেমন জেঁকে বসেছে লোকটা। অদ্রির কেমন যেন লাগে আজকাল। অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা মনে আসে। বেশিরভাগই তন্ময়কে নিয়ে। সে উপলব্ধি করতে শুরু করলো, বৃষ্টির মাঝে দেখা সেই ছেলেটাকে তার আচমকাই ভালো লাগছে। খুব বেশি করে ভালো লাগছে। কেন? এমন কেন হচ্ছে? এমন কি হওয়ার কথা ছিলো? জানা নেই। উত্তর-টুত্তর কিচ্ছু জানা নেই তার। এতশত অসহনশীল অনুভূতির মাঝে মনে কিছু অযাচিত প্রশ্ন উঁকি দিলো। যার বেশির ভাগই এমন— ‘এটা কি আদেও ভালোবাসা? নাকি এট্রাকশন? ক্ষনিকের আকর্ষণ, যা সময় পেরোলে কেটে যাবে? মাত্র একদিনের পরিচয়ে কাউকে নিয়ে এতটা ভাবা, কেমন অদ্ভুদ না? এটা কি আদৌ ভালোবাসা? একদিনের পরিচয়ে আদৌ ভালোবাসা হয়? না নিশ্চয়ই। তবে হ্যাঁ, ভালোবাসা না হলেও, কিছু একটা হয়েছেই। অদ্ভুত রকমের কিছু। অসহনীয় কিছু। যা তার রাতের ঘুম কেড়েছে। তার মনে জেঁকে বসেছে। তবে এই অদ্ভুত কিছুটা কি, তা সে জানে না।

****
ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে ঘর থেকে বের হয় অদ্রি। দেরি হয়েছে বেশ। নাহারা তাকে দেখে বললো,
-‘খেয়ে যাবি না?’

অদ্রি তাড়াহুড়ো করে দরজার কাছে গিয়ে জুতো পড়তে পড়তে বলল,
-‘দেরী হয়ে গেছে মা। যাচ্ছি। খাবো না আর।’

বলে দৌড়ে বেড়িয়ে চলে যায় অদ্রি। নাহারা ডাকলেও থামে না ও। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামতে নামতে ধাক্কা লাগলো কারো সাথে,
-‘স্যরি, স্যরি, স্যরি—’

বলতে বলতে অদ্রি মাথা তোলে। সামনের লোকটাকে দেখে অবাক হয় ভীষণ। বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে বলে,
-‘তন্ময়,আপনি? এখানে যে?’

তন্ময় ধাক্কার জন্য রাগলো না মোটেও। বরং অদ্রির কথার প্রত্যুত্তরে হেসে বলল,
-‘হ্যাঁ। আপনাদের বাসাতেই এসেছিলাম।’
-‘আমাদের বাসায়? কেন?’

মুখ ফসকে কথাটা বলে অপ্রস্তুত হলো অদ্রি। তন্ময় হাসলো। মজার ছলে বলল,
-‘কেন, আসতে পারি না? আসলে কি আপনি খুব বিরক্ত হবেন?’

অদ্রি থতমত খেলো। নিজের অপ্রস্তুত ভাব ঢাকতে তড়িঘড়ি করে মাথা নাড়ালো,
-‘না না। তা কেন? বিরক্ত কেন হতে যাবো?”
-‘তাহলে কি খুশি হচ্ছেন?’

চকিতে তাকালো অদ্রি। ভ্রু কুঁচকে এলো। কথা বাড়াতে চাইলো না বলে বলল,
-‘আমার দেরী হচ্ছে। পরে কথা হবে। বাসায় মা-বাবা আছে। আপনি দেখা করুন। আমি যাচ্ছি।’

অদ্রি দৌড়ে চলে এলো নিচে। তন্ময় উপর থেকে তাকিয়ে দেখলো। হাসলো খানিকটা।

চলমান…..(প্রচার)