#লাল_রং
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৩]
ভার্সিটির থেকে অদ্রি বাসায় এলো দুপুরে। টিউশনি ছিলো না আজ তার। মা তাকে দেখে বললেন,
-‘এসেছিস? হাত-মুখ ধুয়ে রেস্ট নে এখন একটু। বিকেলে আবার বের হতে হবে।’
অদ্রি সবে কাঁধের ব্যাগ রেখে সোফায় নাহারার পাশে বসেছিলো। সামনের টেবিলের থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তাতে চুমুক দিতে দিতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
-‘কোথায় যাবো আবার?’
-‘তন্ময়দের বাসায়।’
নাহারার কথায় চমকে গেলো অদ্রি। সদ্য মুখে নেওয়া পানি ছিটকে বের হলো মুখ থেকে। বিষম খেলো ও। কাশতে কাশতে নাক-কান জ্বলে উঠলো। নাহারা অদ্রির পিঠে-মাথায় হালকা চাপড় মেরে ঠিক করতে চাইলেন তাকে। সময় নিয়ে অদ্রি স্বাভাবিক হলো। টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিললো। হুট করে এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারলেন না নাহারা। অদ্রি বলল,
-‘কেন?’
নাহারা ভ্রু কুঁচকান,
-‘কি কেন?’’
-‘ওনাদের বাসায় কেন যাবো?’
-‘ওহ, তন্ময় এসেছিলো সকালে। দাওয়াত দিলো। বলল, ওর মাও অনেকবার করে বলেছে যেন আমরা যাই। তাই আরকি।’
অদ্রি মায়ের স-ব কথা শুনে-টুনে মাথা দোলালো। নাহারা আরো কিছুসময় তার সাথে কথা বলে উঠলেন সোফা থেকে। নিজের কাজে চলে গেলেন। মা যেতেই অদ্রি গা এলিয়ে দিলো সোফায়। কেমন যেন লাগছে। তন্ময়ের সাথে আবার দেখা হবে তার। অদ্রি চাচ্ছে না এমনটা হোক। সে চাচ্ছে না অনূভুতির গভীরতাটুকু বাড়ুক। সম্পর্ক গভীর হোক। সে সংশয়ে রয়েছে এখনো। তার মনে তন্ময়কে নিয়ে যেই ভাবনা, অনুভূতি এগুলো কি? ভালোবাসা নাকি স্রেফ ভ্রম, ক্ষনিকের মোহ? ভালোবাসার অনুভূতি কি এতই ঠুনকো যে; একদিনের দেখায়, কয়েকদিনের পরিচয়ে, এমন অনুভূতি হবে? এসব নিতান্তই মোহ। ইনফ্যাচুয়েশন। আর অদ্রি মোহ নিয়ে কোনো সম্পর্কেই জড়াতে চায় না। তাহলে অপরপক্ষ আর নিজেকে ঠকানো হবে না? আর অদ্রি নিজেকে ঠকাতে কখনোই চায় না। কক্ষনো না।
****
সন্ধ্যায় তন্ময়ের বাসায় পৌঁছালো তারা। কলিংবেল বাজালে দরজা খুললো তন্ময়। সাদা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পরিহিত তন্ময় অদ্রির দিকে একবার তাকিয়ে নাহারা আর অদ্রির বাবার দিকে তাকাল। সালাম দিয়ে তাদেরকে ভেতরে আসতে বলল। ভিতরে ঢুকলো তারা। মোটামুটি বড়, ছিমছাম গোছানো সুন্দর একটা ফ্ল্যাট। অদ্রির অদ্ভুতভাবে বেশ ভালো ফ্ল্যাটটা। তারা ভিতরে যেতেই তন্ময়ের বাবা-মা এলেন। অদ্রি সালাম দিলো তাদেরকে। ভালো-মন্দ কথা বার্তার পর তাদেরকে বসালেন।
বিভিন্ন গল্প-আড্ডায় হাসি তামাশায় বড়রা মেতে থাকলেও অদ্রি-তন্ময় এসবের মাঝে চুপচাপ আছে। কেউ কথা জিজ্ঞেস করলে, টুকটাক বলছে। অদ্রির অস্বস্তি হচ্ছে বড়দের কথার মাঝে। বিরক্তও লাগছে ঢের। নাইমুনা তন্ময়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘তুই অদ্রিকে বাকি ঘরটা-ছাদটা ঘুরিয়ে দেখা। মেয়েটা আমাদের মাঝে বসে আরো বিরক্ত হচ্ছে। তুই যা ঘুরিয়ে আন ওকে।’
তন্ময় অদ্রির দিকে একবার তাকিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। মাথা দুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আসুন।’
অদ্রি মাথা দোলালো। উঠে দাঁড়ালো। আশেপাশে ঘুরিয়ে একদম শেষে তন্ময় অদ্রিকে নিয়ে এলো তার ঘরের বারান্দায়। এখান থেকে বাইরের ভিউটা চমৎকার। অদ্রি বাইরের ক’টা ছবি তুলল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তারা। মোটামুটি রাত এখন। নিরবতার পর্দা ছিঁড়ে অদ্রিই প্রথমে বলল,
-‘বই কি আপনি পাঠিয়েছিলেন?’
তন্ময় তাকালো অদ্রির দিকে। রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
-‘আন্টি কার নাম বললো আপনাকে?’
প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন ঘুরে এলো, যা অদ্রির একদমই পছন্দ নয়। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
-‘আপনার।’
-‘তাহলে কে পাঠিয়েছে?’
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সেভাবেই জিজ্ঞেস করল,
-‘পাঠানোর কারণ? একটা মেয়েকে এভাবে একজন বই পাঠাবে ব্যাপারটা একটু কেমন না?’
-‘তা তো হ্যাঁ-ই। আচ্ছা, তো আমার মনে হয়ছিলো আপনি বই পছন্দ করেন। তাই এমনিতেই একটা বই পাঠিয়েছিলাম।’
-‘চিরকুটও কি আপনি যাকে-তাকে এমনিতেই পাঠান?’
এই পর্যায়ে এসে তন্ময় চুপ করলো। সময় নিয়ে হেসে বলল,
-‘আমি কাউকে কখনো চিরকুট দেইনা। তবে আপনাকে দিয়েছি। এর মানে অবশ্যই আপনি যা-তা কেউ নন। স্পেশাল কেউ। আপনাকে চিরকুট দেওয়ার কারণও আছে।’
চলমান……(প্রচার)