লাল রং পর্ব-০৪

0
20

#লাল_রং
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ৪]

-‘আমি কাউকে কখনো চিরকুট দেইনা। তবে আপনাকে দিয়েছি। এর মানে অবশ্যই আপনি যা-তা কেউ নন। স্পেশাল কেউ। আপনাকে চিরকুট দেওয়ার কারণও আছে।’

অদ্রির ভ্রু কুঁচকে আসছে। ইঙ্গিত কোনদিকে যাচ্ছে কিছুটা হয়তো সে বুঝছে। তবে আদৌ কি তেমন কিছু? সে জিজ্ঞেস করল,
-‘কি কারণ?’
-‘সেটা আপনি নিজেই সময় হলে বুঝবেন, জানবেন।’

বলে আবারও হাসলো তন্ময়। এই পর্যায় হাসিটা দুর্বোধ্য ঠেকলো। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় প্রচন্ড চমৎকার হয়। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় তাকে জানান দিচ্ছে, গড়বড় আছে কোথাও। সে যা ভাবছে, তা-ও হতে পারে। অদ্রি দাঁড়িয়ে রইলো ভ্রু কুঁচকে, দ্বিধা নিয়ে।

রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে অদ্রিরা বাড়ি ফিরবে। ড্রইংরুমে বসে আছে তারা। বড়রা নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। তন্ময় অদ্রির সামনে বসা। তখনের তাদের মাঝের কথার পর, অদ্রি প্রচন্ড দ্বিধান্বিত। সে যেটা ভাবছে, তন্ময় কি সেটাই বোঝাতে চাইছে? নাকি স্রেফ মজা করে ওমন বলল? সে জানে না। মাথাটা ধরেছে প্রচুর। এতদিনের এত এত ভাবনা-চিন্তায় সে হাঁপিয়ে গিয়েছে। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। ক্লান্ত লাগছে খুব।

****
❝বৃষ্টি আমার প্রচন্ড অপছন্দের কিছুর মধ্যে একটি। এই অপছন্দীয় কিছুর মাঝে আপনিটা খুব পছন্দনীয় কিছু হয়ে দেখা দিলেন। আমার শান্ত-শিষ্ট হৃদয়ে অসহ্যরকমের, অসহনীয় তাণ্ডব শুরু করলেন। আমি জানি না এই অদ্ভুত, অসহনীয় অনুভূতিকে কি বলে আখ্যায়িত করবো। আচ্ছা, বৃষ্টিতে দেখা হলে কি প্রেম হয়?❞

নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরিতে কথাটা লিখে বসে রইলো অদ্রি। সেদিনের পর বে-শ অনেকদিন কেটেছে। অদ্রির মনে হচ্ছে ক্ষনিকের মোহতে সে আটকে গিয়েছিলো। তবে মোহ হলে এখনো পর্যন্ত কি তন্ময়কে তার মনে পরতো? হয়তো এটা মোহ নয়, তবে অদ্রি কনফিউজড্। তার সাথে হচ্ছেটা কি, সে এখনো বুঝছে না। নিজের অনুভূতির উপর এভাবে নিয়ন্ত্রণ সে কোনো কালেই হারায়নি। তার এখনো মনে আছে, একবার তার খুব পছন্দের আর আদুরে পোষা একটা বিড়ালকে মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। কারণ মা পশু-পাখি পোষা তেমন একটা পছন্দ করেন না। অদ্রির কথা ভেবে ক’দিন সহ্য করলেও পরে বের করে দেন। অদ্রি তখন স্তব্ধ হয়ে তার কাজ দেখেছিল। কাঁদেনি সে। একবারও না। প্রচন্ড খারাপ লেগেছিলো তখন, তবুও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম ছিল সে। তবে সেদিন রাতে তার জ্বর আসে খুব। যেখানে এমন একটা সময়ে সে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, এখন কেন পারছে না? দিনকে দিন অনুভূতিরা পাহাড় ডিঙোচ্ছে। সে যখনই সরে আসতে চাইছে, তখনই আবারও জড়িয়ে যাচ্ছে। অসহ্য লাগছে এসব। অদ্রি বিরক্ত নিজের উপর। প্রচন্ড বিরক্ত!

****
ভার্সিটির সামনে পৌঁছে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিচ্ছিলো অদ্রি। তখন পাশে কেউ এসে দাঁড়ালো। অদ্রি তাকালো। রিমি দাঁড়িয়ে। তার বান্ধবী। অদ্রি হাসে তার দিকে তাকিয়ে। ভাড়া মিটিয়ে রিমিকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে এলো। ক্যান্টিনে বসলো। রিমি জিজ্ঞেস করল,
-‘কয়েকদিন আসলি না কেন?’
-‘এ্যামনি, ভালো লাগছিলো না।’

একটু থেমে অদ্রি আবারও বলল,
-‘শোন কিছু কথা বলার আছে। সিরিয়াস কিছু। একদম মজা নিবি না, খবরদার।’

রিমি ভ্রু কুঁচকায়। কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে,
-‘আচ্ছা। কি কথা?’

অদ্রি একে একে তন্ময়ের সকল কথা বলল রিমিকে। রিমি শুনলো। এরপর কিছুসময় চুপ থাকলো। অদ্রি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে। রিমি সময় নিয়ে বলল,
-‘তোর ওই তন্ময়কে নিয়ে ফিলিংস্ কি? আই মিন, ডু ইউ লাভ হিম?’

অদ্রি থমকায়। এই প্রশ্নটার ভয়ে এতদিন রিমিকে কিছুই বলতে চায়নি। আজ সাহস করে সব বললো যখন, এই প্রশ্নই শুনতে হলো। সে কি ভালোবাসে তন্ময়কে? তন্ময়ের প্রতি তার অনুভূতি কি আদেও ভালোবাসার? সে নিজেই জানে না৷ অদ্রি মাথা হাতে চেপে ছটফটে গলায় বলল,
-‘জানি না আমি। আমি কনফিউজড্। আমার তন্ময়ের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। তবে এটা কি স্রেফ ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা, আমি জানি না।’
-‘রিল্যাক্স। টাইম নে। ভাব আগে, তন্ময়ের সাথে কথা বলতে তোর ভালো লাগে। ওর সাথে টাইম স্পেন্ড করতে ভালো লাগে?’

অদ্রি সময় নিয়ে মাথা দোলায়,
-‘হ্যাঁ।’
-‘তাহলে তুই ভাব এখন। জাস্ট ইম্যাজিন, কখনো যদি তন্ময় তোর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, কি ফিল করবি? খুব খারাপ লাগবে, না ঠিক থাকবি?”

অদ্রি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। দ্বিধাগ্রস্থ চোখে চেয়ে আছে। রিমি বলল,
-‘বল?’

অদ্রি সময় নিয়ে জবাব দিল,
-‘খারাপ লাগবে। অনেক বেশিই খারাপ। রিমি, তাই বলে কি এটা কি ভালোবাসা নাকি? দেখ, ভুলভাল বলে দিস না, “হ্যাঁ, এটাই প্রেম। এটাই ভালোবাসা। তুই প্রেমে পড়েছিস।”
তুই আমার সাথে কথা বলা অফ করে দিলেও তো আমার খারাপ লাগবে, সেটাও কি ভালোবাসা নাকি?’

রিমি হেসে ফেলল। বলল,
-‘ভালোবাসা কি না সেটা বুঝতে তুই বরং একটু সময় নে। নিজের অনুভূতি নিয়ে কনফিউজড্ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক। নিজপেকে সময় দে, ভাব। তারপর তোর মন যা বলবে তা-ই। তন্ময়ের সাথেও এভাবে কথা চালিয়ে যা। সময় নে, বুঝতে পারবি এমনিতেই। আমি এর বেশি কিছু বলতেও পারবো না। এবার যা, ভাগ!’

অদ্রি রেগে তাকায়। রিমির মাথায় চাটি মেরে উঠে চলে আসে। ভারি অসভ্য মেয়েটা!

****
ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতেও অদ্রির মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরল—তন্ময়। সে কি অদ্রির কথা একটুও ভাবে না? না কি তন্ময়ের এই হাসি-খুশি, কৌতুকমাখা কথা-বার্তা সবার জন্যই এমন? সবার প্রতিই কি এমন মিষ্টি ব্যবহার তার? সবার প্রতিই এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক?

মাঝেমধ্যে মনে হয়, তন্ময়ের কথা ভাবা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু যতবারই সেটা চেষ্টা করে, ততবার যেন তন্ময়ের কথা আরও বেশি মনে পড়ে। অদ্রি বুঝলো, এইসব প্রেম ভালোবাসা একটা ফ্যাসাদ-ঝামেলা ব্যতিত কিছুই না। এসব এড়িয়ে চলা খু-উ-ব বেশিই ভালো।

সেইদিন সন্ধ্যার দিকে অদ্রির ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। অচেনা নম্বর থেকে,
-‘আজকের আকাশটা সুন্দর। তারা গুনতে গুনতে আপনার কথা মনে পড়লো। কেমন আছেন?

—তন্ময়।’

চলমান…..(প্রচার)