লাস্ট হোপ পর্ব-০২

0
11

#লাস্ট_হোপ
#পর্ব২
#কলমে_সুমনা

রুমটা যেন এক মুহূর্তে জমে গেল। কেউ কথা বলছে না। কেউ নিশ্বাস নিচ্ছে কি না তাও বোঝা যাচ্ছে না।
ইরাদ একটু দ্বিধা নিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকাল। তার চোখে পরিষ্কার অস্বস্তি।
এমন একটা অচেনা পরিবেশে প্রথমবার আসার ভয়টা যেন তার বুকের এক কোণে চেপে বসল।
হঠাৎ করেই কণা কাশি দিয়ে পরিবেশটা নরম করার চেষ্টা করল…
তটিনী এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। হাতে একটা আর্ট পেপার, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, পড়নে হালকা আকাশি রঙের টপস। হাতের আর্ট পেপারটা এমনভাবে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছে যেন তা ছিঁড়ে ফেলতে চায়। মুখটা তীব্র রাগে লাল, চোখে কেমন একটা তীক্ষ্ণ বিদ্বেষ। পাশেই জোঁকের মতো আকড়ে বসে আছে আভা। ইরাদ কিছুক্ষণ তাকে পরখ করে ফারিয়াকে ডেকে বলল,
“উনি কি চারুকলার?”
ফারিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুই কিভাবে জানলি?”
ইরাদ মুচকি হেসে বলল,
“আপুকে দেখেই বুঝলাম। কিন্তু এই আভা মেয়েটা কি উনার বেস্ট ফ্রেন্ড?”
ফারিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“গতবছরেও উনাদের একসাথে দেখা যেত না। দুজনে প্রায় দুই মেরুর মানুষ ছিল বলতে পারিস। হুট করেই উনি একদম তটিনী আপুর লেজ হয়ে গেছে।”
ইরাদ জোরে জোরে হেসে বলল,
“তুই কালকে থেকে বাংলা বিভাগে ক্লাস করবি আর ঠিকঠাক উপমার ইউজ শিখবি।”
কণা ওদের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“শুধু হাসলে হবে ইরাদ? নিজের ভেতরের প্রতিভাকে কাজে লাগাতে চাও না? তুমি কি চাও তোমার সম্ভাবনাগুলো তোমার মধ্যে থেকেই নিঃশ্বেষ হয়ে যাক?”
ইরাদ মলিন হেসে বলল,
“আমার থেকে কিইবা শেখার আছে আপু?”
কণা ইরাদের কাঁধে একহাত রেখে ভরসা দিয়ে বলল,
“জীবন একটা বিদ্যাপীঠ। আর বিদ্যাপীঠের প্রারম্ভ হচ্ছে জন্ম আর সমাপ্তি হচ্ছে মৃত্যু। আর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্তটাই একজন ব্যক্তির গন্তব্য। এই গন্তব্যে প্রত্যেকটা মানুষেরই কিছু প্রাপ্তি থাকে। যারা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সেই প্রাপ্তি আর সম্ভাবনা গুলোকে কাজে লাগাতে পারে তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম আবার তাদের সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যায়। তুমি বলতে পারো মানুষের প্রকৃতির সাথে সাথে তার পরবর্তী প্রজন্মের উপরেও একটা দায়বদ্ধতা থাকে।”
ইরাদ একটু অস্বস্তি নিয়ে বললো,
“আমার আসলে ভাবার জন্য একটু সময় লাগবে।”
ফারিয়া ইরাদের হাত ধরে চাপ দিতেই আবার কণা বলল,
“যদি পৃথিবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাও তাহলে নিজের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাও। ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটু আলো দেখিয়ে যাও। জীবনের স্বার্থকতা কিন্তু এখানেই।”
ইরাদ চেয়ার থেকে উঠে দু পা এগিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
“আপু, নাট্যচক্রের ফর্মটা দিন।”
কণা মৃদু হেসে একটা ফর্ম নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“তোমার পুরো নাম?”
ফারিয়া সাথে সাথেই উত্তর দিল যেন দেরী করলেই ইরাদ মত পাল্টে নিবে।
“ওর নাম ইরাদ রহমান।
বাবা ইরশাদ রহমান আর মা আশালতা রহমান।”

ইরাদের বাবার নাম শুনতেই চমকে পেছনে তাকায় তটিনী। চোখে যেন আগুন ঝলসে উঠল, সে যেন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কণা আবার জিজ্ঞেস করল,
ইরাদ, তোমার ডিপার্টমেন্ট কোনটা?
ইরাদ মৃদু হেসে বলল,
“সাংবাদিকতা আপু।”

এই উত্তরটাও ফারিয়াই দিতে চেয়েছিল। হঠাৎ করেই রুমের আলোটা ঝাপসা হয়ে এল।
কাঁচের জানালায় যেন কেউ হাত দিয়ে টোকা দিল…
ফারিয়া একটু চমকে উঠল।
“তুই দেখলি?” ইরাদ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
“না, কি?”
“ওই জানালায় একটা ছায়া ছিল…”
সবাই অন্য দিকে ব্যস্ত থাকলেও, কেউ খেয়াল করল না—রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল এক অপরিচিত মুখ।

চলবে…