#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৫
আফনান লারা
.
‘আচ্ছা শোনো!তুমি কখনও সমুদ্র দেখেছো?’
কুসুম পেছনে তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে বললো,’ঐ যে নদীর বাবা?’
‘নদীর বাবা?’
‘নানু বলতো,সমুদ্র আকারে অনেক বড় হয়।দেখতে নদীর মতন তবে আকারে বিশাল।তাই সে হলো নদীর বাবা।অবশ্য আমি কখনও দেখিনি।দেখার ইচ্ছে আছে।যেগুলো জীবনে দেখিনি সেগুলা দেখে শেষ করার ইচ্ছা আমার মধ্যে ভরপুর।তবে সময় শেষ হয়ে যায় তাও দেখা হয়না’
অর্ণব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,’কিসের সময় শেষ হয়?বয়স কত তোমার?বোকা কথা’
অর্ণবের বাবা হালকা কেশে রুম থেকে বের হলেন সেসময়ে।অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন।সে মাথা নাড়ালো।মা এখনও ঘুমে।
কুসুম গলায় হাত রেখে আয়নার কাছে এসে দেখছিল মনযোগ দিয়ে।তারপর কি মনে করে বইগুলো গুছিয়ে ছুটে অর্ণবের সামনে গিয়ে ধপ করে নিচে বসে পড়েছে সে।অর্ণব গালে হাত দিয়ে রেসাল্ট নিয়ে ভাবছিল।কুসুমকে ওমন ছুটে আসতে দেখে ভাবনা ফেলে বোঝার চেষ্টা করলো কি চাইছে।
‘সকালে তো পড়তে পারিনি।এখন পড়াবেন?’
অর্ণব কিছু না বলেই বইয়ের পাতা দুটো উল্টে জিজ্ঞেস করে শেষে বললো সকালে কি পড়িয়েছিল তা মুখস্থ বলতে।
কুসুম ঢোক গিলে হাতে গুনে গুনে এক থেকে পাঁচ বলেছে।অর্ণব ধমকিয়ে বললো সে এক থেকে দশ পর্যন্ত পড়িয়েছিল তাহলে সে মাত্র পাঁচ পর্যন্ত জানে কেন।কুসুম মুখটা ছোট করে মাথা নিচু করে ছিল।অর্ণব ওকে পাঁচ থেকে আবারও পড়ানো ধরেছে।
পড়ানোর ফাঁকে কুসুম বারবার ওকে দেখছিল।তাতে করে অর্ণব ভাবলো ওর হয়ত পড়াতে মনযোগ নেই।তাই রেগে কুসুমের কান খিঁচিয়ে ধরে ঝাড়ি দিয়ে বললো,’এমন করলে আর পড়াবোনা বলে দিলাম ‘
ধমক খেয়ে কুসুম আর মাথা তুলেনি।বইয়ের দিকে চেয়ে গটগট করে পড়ে যাচ্ছিল।এবার অর্ণব ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এই ত্যাড়াব্যাঁকা চুলগুলোকে সোজা করে টেনে ধরে দেখতে কেমন লাগে।বেশ অদ্ভুত চুলগুলো।আজ পর্যন্ত এমন ব্যাঁকা চুল আমি আর দেখিনি।তারপর ইচ্ছে করে গালটা কিছুক্ষণ টিপে ধরে ছেড়ে দেই।যে লাল রঙের আবির্ভাব ঘটবে সেটা অনেকক্ষণ ধরে দেখবো।এরপর মন চায় একবার তাকে কাছে টেনে দেখতে তখন তার কি অবস্থা হয় সেটা দেখার জন্য।
ইশ!কি ভাবি এগুলো!’
অর্ণব উঠে চলে গেলো হুট করে।তা দেখে কুসুম ভাবনায় পড়েছে সে আবার কি দোষ করেছে।দু মিনিট পর সে আবার ফেরত এসে বসলো ওর সামনে।কুসুম জিজ্ঞেস করেনি কোথায় গিয়েছিল কারণ সে দেখেছে অর্ণব দূরে ভেসিনের কাছে গিয়ে চোখে পানি দিয়েছিল।অর্ণব তার ভেজা চুলগুলোকে মাথায় লেপে দিয়ে বললো,’শুনাও এক থেকে এগারো’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে গড়গড় করে বলে গেলো।কিন্তু এক থেকে এগারোতে আসার আগে নয়ের আগে সাত বলেছে।অর্ণব সেটা ঠিক করে বুঝিয়ে আবারও পড়তে দিলো ওকে।
‘আচ্ছা শোনো!’
‘কি?’
‘ধরো আমি তোমার হাত ধরবো।কি করবে তখন? ‘
‘কেন ধরবেন?’
‘নাহ থাক।যা বলেছি ভুলে যাও।পড়ো পড়ো।’
কুসুম কপাল কুঁচকে শুরু করলো পড়া।এদিকে অর্ণবের আবার কেমন কেমন লাগছিল বলে সে আবারও উঠে চলে গেছে।কুসুম গলার মালাটায় হাত দিয়ে পড়ছে।সুন্দর কিছু কিনলে দশ বারো দিন ধরে সেটা ধরে বসে থাকে সে।এখন এই মালাটাকেও কারণে অকারণে ছুঁয়ে দেখবে সারাদিন।কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে কষ্ট হচ্ছে!
উনার হলোটা কি?এমন ব্যবহার করলেন কেন?আমার হাত ধরার কথা বললেন কি জন্যে?এরকম উদ্ভট প্রশ্ন তো উনি করেন না সচরাচর। হিহি!অসুখ আমার নাকি তার!’
অর্ণব দূর থেকে কুসুমকে মিটমিট করে হাসতে দেখেছিল।লজ্জায় এবার সে নিজে লাল হয়ে আছে।নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মেরে দেয়ালে কপাল ঠুকরাতে ধরতেই মা এসে বললেন,’কিরে?দেয়ালে কপাল পিঠছিস কেন?কি হলো তোর?শরীর খারাপ?’
‘না তো।কই?আমি তো তেলাপোকা দেখছিলাম’
‘কই তেলাপোকা? ‘
‘নেই?’
‘না’
‘তাহলে সত্যিই নেই!’
অর্ণব চলে গেলো তার রুমে।মা কুসুমের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন অর্ণবের কি হয়েছে, জানে কিনা।কুসুম ও একইভাবে চমকে বসে আছে।
অর্ণব তার মাথা থেকে উল্টো পাল্টা চিন্তা সরাতে ফেসবুকে ঢুকেছে আধ ঘন্টা হলো।কুসুম তার পড়া শেষে বই হাতে আগের মতন দরজার ফটক ধরে দাঁড়িয়েছিল।পড়া বলবে তাই।
অর্ণবকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে নিয়ে আস্তে করে বলেছে সে পড়া বলবে।অর্ণব ফোনে চোখ রেখে বললো পড়া বলে যেতে।
কুসুম ঠিকঠাক এক থেকে এগারো পর্যন্ত বলতে পেরেছে।অর্ণব খুশি হয়েছে তবে প্রকাশ করেনি।কুসুম যখন শুনলো তার গণনা ঠিক তখন সে আনন্দিত হয়ে চলে গেছে মাকে জানাতে।
রান্নাঘরে মা সেমাই বানাচ্ছিলেন।আসার সময় ঘরের কত কি নিয়ে এসেছিলেন।তিনি বেশ জানতেন ওদের নতুন সংসারে নুন পেলে চিনি পাওয়া যেতে মুশকিল হবে তাই অনেক অনেক সামগ্রী সাথে করে এনেছেন।
সেমাইয়ের সুগন্ধে পুরো ঘর মৌ মৌ করছে।কুসুম তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল।মা সেমাই নাড়তে নাড়তে বললেন,’হ্যাঁ রে কুসুম।আমার ছেলে আদর যত্ন করে তো?নাকি এখনও আগের মতন তোকে সহ্য করতে পারেনা?’
কুসুম হেসে বললো,’জানিনা।তবে আগের চেয়ে একটু বদল হয়েছে।এখন আমায় একটু হলেও সহ্য করেন।সবই তার দায়িত্ব কিনা!’
মা কথাটা শুনে কুসুমের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে ছিলেন।মেয়েটা নিজেও বুঝতে পেরেছে অর্ণব তাকে শুধু দায়িত্বের খাতিরে বিয়ে করে আজ এতটাদিন কাটাচ্ছে তার সাথে।তাহলে কি আমার ছেলেটা ওরে কখনওই ভালবাসবেনা?কতটা কষ্ট পেলে সে নিজ থেকে বলে এসব কিছুই দায়িত্ব। আজই ওর সাথে কথা বলা জরুরি।মেয়েটার মলিন মুখ আর দেখতে পারিনা আমি’
—
বাটি আনতে টেবিলের দিকে যাচ্ছিল কুসুম।তখন অর্ণব ও এদিকে আসছিল সেমাইর গন্ধ সুঁকে।
দরজা দিয়ে বের হতেই দুজনে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়ে গেলো।যাতে পড়ে না যায় সে জন্য অর্ণব এক হাতে ওকে ধরে ফেলেছিল আর অন্য হাতে দেয়াল।
মায়ের কণ্ঠ স্বর শুনে দুজনে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মা এসে জানতে চাইলেন কি হয়েছিল।দুজনে উত্তর না দিয়ে দুদিকে চলে গেলো মাকে গোলকধাঁধায় ফেলে।
—–
‘রবীন্দ্র সরোবরে আসলে অর্ণবের কথা খুব মনে পড়তো।আর এখন মৃদুল ভাইয়াকে বেশি মনে পড়ছে।ইশ কেন যে এলাম!বারবার ঐ লোকটার দাঁত বের করে হাসা আর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে।সেদিনটা কত সুন্দর করে দিয়েছিলেন।আমার চুলে বেলুনের সুতো লাগানো।
অল্প কিছু দিয়ে কত বড় ভালো লাগা মনে গেঁথে দিলেন আজ পর্যন্ত ভুলছিনা।সায়নীকে কতবার করে বলেছিলাম দেরি করবিনা।আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?একা ভালো লাগে এতো?ঘরে থেকে থেকে ইন্ট্রোভার্ট হয়ে গেছি।এখন একা বের হলে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়।কখন আসবে ধুর!’
বিরক্ত হয়ে জুথি চেয়ার থেকে উঠে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।তখন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া চেনা মানুষের মুখ দেখেছে মনে হলো।তাই সে পেছনে তাকালো আবার।এটা মৃদুল ভাইয়া!
সঙ্গে তার পাঁচ ছয়টা বন্ধু।
‘আচ্ছা উনি কি আমায় দেখেননি?নাকি দেখেও না দেখার ভান ধরলেন।’
—
‘মৃদুল ওটা জুথি না?ঐ যে অর্ণবের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল?’
মৃদুল পেছনে তাকিয়ে জুথিকে দেখে বললো ‘নাহ এটা মৃন্ময়ী। মৃন্ময়ীরা পাগল হয়না,পাগল করে দেয়’
‘মানেহ্?’
‘তুই বুঝবিনা।যে পাগল হয়েছে সে বুঝবে’
মিরাজ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কে পাগল হয়েছে।মৃদুল জবাব দিলোনা।জুথির দিকে ফিরে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে।বাকি সবাইও বসেছে ওর সাথে।জুথি কোমড়ে হাত রেখে একটা ছোট ছেলের সাথে কথা বলছিল।ছেলেটার হাতে এক বালতি হলুদ গোলাপ ছিল।সে মনে হয় গোলাপ কিনবে বলে কথা বলছে।
মৃদুলের একটা বন্ধুর কথায় ওর মনযোগ হটে গেলো জুথির থেকে।
কিছুক্ষণ পর এসে সেই ছেলেটা একটা হলুদ গোলাপ মৃদুলের হাতে দিয়ে ছুটে চলে গেছে।মৃদুল বুঝতে পেরে ফুলটাকে নিজের কাছে রেখে দিলো।জুথি কোত্থাও নেই।অথচ এই ফুলটা রয়ে গেছে ওর কাছে।
‘আচ্ছা সে কি চায় দেখা করতে?’
এই ভাবনা মৃদুলকে টেনে ঐ খানটায় নিয়ে আনলেও সেখানে কোথাও জুথিকে সে পেলোনা।ফুলটাকে হাতে ঘুরিয়ে সে আবারও ফিরে আসলো আগের জায়গায়।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৬
আফনান লারা
.
অর্ণবের মায়ের বড়ই ইচ্ছে হলো ছাদে বসে সেমাই খাওয়ার।বিয়ে করে যখন নতুন নতুন তিনি এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে,তখন সময় পেলেই অর্ণবের বাবার সাথে ছাদে এসে বাদাম,বুট,চানাচুর কত কি খেতেন।আগের দিনগুলো খুব বেশি করে মনে পড়ে আজকাল। ছেলেগুলোকে বিয়ে দিয়ে তারা নিজেরা তাদেরকার সময়ের সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে পুনরায়।বাটি দুটো হাতে নিয়ে কুসুম,অর্ণবের চোখ এড়িয়ে তিনি ছাদের দিকে গেছেন।ওদের জানাননি কারণ মনে মনে লজ্জা লাগলো।যাবার পথে অর্ণবের বাবাকে একবার ডেকে গেছেন।
অর্ণব তার রুমে সেমাই খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিল।দোকান থেকে ফেরার পথে কিনেছিল এটা।অবশ্য এটা কালকের খবরের কাগজ।আজকেরটা দোকানদার দেয়নি, সে নাকি কাগজে কিসের কাটিং করবে।কুসুম সেমাই এক চামচের বেশি খেতে পারছেনা।মনে হয় গলা অবধি সব খাবার এসে আটকে আছে।যেকোনো সময়ে বমি এসে যাবে।বাটিটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে সে অর্ণবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো মাকে দেখেছে কিনা।অর্ণব বলেছে দেখেনি।
এরপর দুজনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ একসাথে দুজন মিলে নিচ তলার দিকে ছুটলো।সেখানে গিয়ে জানতে পারে বাবা মা সেখানে নেই।
এবার তারা নিশ্চিত হয় বাবা মা ছাদে গেছেন।অর্ণব সাত পাঁচ না ভেবে দৌড়ে ছাদের দিকে চলে গেলো।কুসুম ও ধীরে ধীরে ওদিকে যাচ্ছিল।ভয়ের কারণে জোরে ছোটেনি।
চিলেকোঠার দরজা খোলার পর তারা দেখতে পেলো বাবা মা এক কোণায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন আর সেমাই খাচ্ছেন।অর্ণব বুকে হাত রেখে ছাদটা দেখতে দেখতে এগোলো সামনে।বুকের ভেতরে ডিপডিপ করে।কোথাও শেয়াল দুটো নেই দেখে তারা দুজন অবাক হয়ে আছে।সুলতান শাহ ও এসেছিলেন ওদের দৌড় দেখে।এসে বললেন শেয়াল সন্ধ্যা হলে চলে আসে, বিকেলে আসেনা।
দুজনে এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।বাবা মাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তারা বাসায় ফিরে এসেছে।বাটিতে রাখা বাকি সেমাইটা গোগ্রাসে গিলছে অর্ণব।কুসুম পাশে বসে ওর খাওয়া দেখছিল।অর্ণব খুব সুন্দর করে খেতে জানে।এমন ভাবে খায় যেন সে অমৃত খাচ্ছে।শুধু সেমাই না,সব খাবারই তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে ওকে।
—-
আর কটাদিন পর জুথি চলে যাবে।এতদিন স্বাভাবিক ভাবে কেটে গেলেও যতই তারিখের নাম্বারে ক্রস পড়ছে ততই খারাপ লাগছে।
‘দুটো কথা ছোটাছুটি করে আপন মনে।একটা কথা হলো যেন না যাই আর আরেকটি কথা হলো যেন যাই।
এখানে থাকলে মৃদুল ভাইয়ার সাথে নির্ঘাত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে যেটা আমি চাইনা।এতদিন অর্ণবের স্মৃতি ভুলতে দূরে যেতে চাইতাম আর এখন মৃদুল ভাইয়ার সাথে যেন কোনো বন্ধন না তৈরি হয় সে ভয়ে পালাচ্ছি।
আমি এতদিন কঠোর থাকতে পারলেও কটাদিন পর কঠোর থাকা সম্ভব হবেনা আমার পক্ষে।যার কারণে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে আমায়।মৃদুল ভাইয়াকে বড় আঘাত দিতে চাইনা।এমনিতেও তিনি আঘাত পেয়েছিলেন ক’বছর আগে।পুরোনো ক্ষতে নতুনত্ব সৃষ্টি করতে চাইনা।’
ব্যাগের চেইন লাগিয়ে ওড়না খুঁজছে সে এবার।বাবার কাছে গিয়ে বলবে বাবা যেন মন খারাপ না করে।কয়েক বছর পর সে আবার ফিরে আসবে।ওড়নাটা খুঁজতে গিয়ে নজর গেলো বারান্দার দিকে।বিকেলের সেই হলুদ ফুলটা পড়ে আছে ওখানে।আচমকা ফুলটা ওখানে দেখে সে ছুটে এসে ওটা হাতে নিয়ে নিচে তাকালো।রোড সম্পূর্ণ ফাঁকা
তবে এই ফুলটা আসলো কই থেকে?
খোলা চুল গুলোকে কানের পেছনে গুজে দিয়ে জুথি ফুলটা নিয়ে পেছনে ফিরতেই মৃদুলের সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলো।কিন্তু ঐদিনের মতন চিৎকার করলোনা।শুধু ভয় পেয়ে চোখ বড় করে রেখেছে।
‘ফুল যখন দিলে লাল দিতে।গোলাপকে লাল রঙে মানায়।লাল গোলাপে গোলাপের আসল সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে যার কারণে মানুষ সাদা,হলুদ গোলাপ একটা কিনে আর লাল গোলাপ একশোটা কিনে।তুমি আমায় গোলাপ দিলে তো দিলে শেষে কিনা হলুদ গোলাপ দিলে?
কাউকে হলুদ গোলাপ দেওয়ার মানে জানো?তবে শুনো।হলুদ গোলাপ দেওয়া মানে ভাই বোন।আমার ব্যাক্তিগত মতামত।
প্রেমিকার একান্তই হলুদ রঙ পছন্দ হলে কখনওই কোনো প্রেমিক ভুলেও হলুদ গোলাপ দেবেনা তাকে।যদি দেয় তবে প্রেমিকার হলুদ রঙ পছন্দ হলে দেয়।
আমার হলুদ রঙ পছন্দ নয়।কেন দিলে তবে?’
কথাটা বলতে বলতে মৃদুল জুথির কাছে এগিয়ে গেলো।
জুথি ফুলটা সামনে ধরে বললো,’ঐ বাবুটার কাছে অন্য রঙের গোলাপ ছিলনা।আর সবসময় লালের দাপট চলবে তা তো হয়না।অন্য রঙ কম কিসের?’
‘কম না সেটা জানি।তবে আমার হলুদ পছন্দ না’
‘তো ফেলে দিতেন।এত টেম্পার হাই করে বসে আছেন কেন?ফুল দিয়ে মনে হয় অপরাধ করে ফেলেছি আমি’
মৃদুল জুথির গলা টিপতে গিয়ে নিজেকে সংযত করে বললো,’অনামিকা হলে গলা টিপে ধরতাম’
কথাটা বলে সে অন্যদিকে ফিরে গেছে।জুথি দুহাত ভাঁজ করে বললো,’তারপর সে কি করতো?’
মৃদুল মুখটা আরেকটুখানি ঘুরিয়ে বললো,’বলতো “লাগছে” ‘
জুথি হেসে বললো,’ন্যাকা ছিল?’
‘প্রচুর’
‘আমি ন্যাকা না?’
‘তোমার মাঝে ন্যাকার “ন’ ও নেই।আর আমি কোনোদিন তোমার গলা টিপেও ধরবোনা।’
‘ধরে দেখেন, আমি কি বলি শুনেন একটু’
মৃদুল পেছনে ফিরে বললো,’তুমি মজা করতেছো?আমি এসেছি হলুদ ফুল দেওয়ার ইতিহাস জানতে আর সেখানে তুমি ফান করে যাচ্ছো’
‘ওকে সরি।নিতে হবেনা ফুল।রেখে দিলাম আমার কাছে’
‘এটা তোমার দেওয়াটা না।তোমার দেওয়া ফুলটা আমি মেসে আমার ব্যাগের ভেতর রেখে এসেছি।এটা আরেকটা ফুল, যেটা আমি কিনেছি’
‘এত কিছু করার কারণ? ‘
‘কারণ তোমার দেওয়া প্রথম উপহারটি আমি তুলে রাখতে চাই।আর ফুল নিয়ে তোমার সাথে কথা ছিল বলে অন্য একটা নিয়ে আসলাম স্যাম্পল হিসেবে।।।।সিম্পল! ‘
জুথি তার রুমে চলে এসেছে ফুলটা নিয়ে।দরজা বন্ধ ছিল ভেতর থেকে।নাহলে এতক্ষণ এত কথা বলা যেতোনা।পাশের রুমে বাবা।
মৃদুল রেলিং ধরে বললো,”ওড়না খাটের নিচে পড়ে আছে।বাই’
জুথি চোখ কপালে তুলে জলদি করে ওড়নাটা তুলে পরে নিয়েছে।তার মনেই ছিলনা সে এতক্ষণ ওড়না খুঁজছিল।জিভে কামড় দিয়ে বারান্দায় ফিরে এসে নিচে তাকিয়ে দেখলো মৃদুল দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে।
ওমন করে চেয়ে থেকে সে বললো,’জানো জুথি?আমার চোখজোড়া প্রচণ্ড ক্যারেক্টার লেস।এতটাই ক্যারেক্টারলেস যে, সে আগে ঠোঁট দেখছিল।ঠোঁটের মায়ায় বাকি সব দামি মনে হয়নি ।শুধু ঠোঁটটাই দামি লাগে তার কাছে।বুঝলে?’
জুথি রেগে- মেগে বললো,’স্টুপিড! ‘
—–
বাবা মা ছাদ থেকে সুলতান শাহর বাসায় গেছে।তিনি নাকি সন্ধ্যার আড্ডায় ডেকেছিল।
যাই হোক,তবে অর্ণব আর কুসুমকে ডাকেননি।অর্ণব রেসাল্ট পেয়ে মহাখুশি।সিজিপিএ ভালো এসেছে বলে খুশিতে ইচ্ছে করছে কনফারেন্স ডেকে সবাইকে জানিয়ে দিতে।মেসে থেকে এতবছর পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে তার কষ্ট সফলতা পেলো।
কুসুম ওকে ওমন হাসতে দেখে জানতে চাইলো।অর্ণব এতটাই আনন্দিত ছিল যে হুট করে ওর হাতটা ধরে বললো,’জানো! আমার রেসাল্ট অনেক ভাল হয়েছে’
কুসুম হা করে তাকিয়েছিল।অর্ণব ওর হাতটা ঝাঁকিয়ে আবার বললো,’চাকরি পেতে বেশি কষ্ট পোহাতে হবেনা।খুব ভাল চাকরি পাবো দেখো’
কুসুম এবার বুঝতে পেরে হাসিমুখে তাকিয়েছে।এতক্ষণ হাত ধরার কারণে অন্যদিকে মননিবেশ করতে পারছিলনা ঠিক।
আর এখন খুশির সংবাদে হাত ধরার কথাটাই ভুলে গেছে সে।এদিকে অর্ণব যখন বুঝেছে ভুলবশত সে কুসুমের হাত চেপে ছিল তখন হাত ছেড়ে দূরে সরে গেলো।
তখন রুম থেকে চলে যাবার সময় কুসুম কি ভেবে যেন থমকে গেছে।পেছনে না তাকিয়েই দরজার ফটকে হাত রেখে বললো,’জিজ্ঞেস করেছিলেন না?হাত ধরলে কি করবো?
হাত ধরলে কিছুই করতাম না।বরং আপনি করতেন।হাতের পশম দাঁড়িয়ে যেতো আপনার,ভাবমূর্তি!’
অর্ণব নিজের হাতে চেয়ে দেখলো সত্যিই তাই।কুসুমের থেকে জানতে চাইতো হাত ধরলে কি হবে।অথচ হাত ধরলে তার নিজের মাঝেই বদল শুরু হয়,কুুসুম তো স্বাভাবিক।
ভীতি তবে কার মাঝে!’
কুসুম চলে গেছে ওখান থেকে।প্রশ্নের উত্তর বের করতে গিয়ে বারবার উত্তরটা তার দিকেই তাক হয়।তার মানে কাছে গেলে সে ভয় পাবে,কুসুম পাবেনা।ঐ স্বপ্নটা??
এরকম সত্যি হচ্ছে কেনো।সেখানেও আমি ভয় পেয়েছিলাম আর আজও আমি!
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৭
আফনান লারা
.
‘বুঝলেন ভাই,শেয়ালের মাংসে এমন একটা উপাদান থাকে যেটা কিনা আপনার বাত ব্যাথাকে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দেবে।এই বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন আমার দাদাজান।তার ও বাত ব্যাথা ছিল।এমনটা করেই সেরেছে।আমি ভেবে দেখলাম শেয়াল তো কেনা যায়না,পালতেই হবে।তাই সাহসটা করেই নিলাম।এই শেয়াল গুলো আর কটা বছর পর রান্না করবো।আপনি খাবেন?দাওয়াত দিব নাহয়।আইসেন।জাহানকে বলবো ঘন করে ঝোল করতে।মোঘল মোঘল ব্যাপার আসবে।আহা!আমি গন্ধটা এখনই পাচ্ছি।বেশি করে জিরা দিতে বলবো।গন্ধটা আরও তাজা হবে।জিভে পানি এসে গেলো।স্বাদের সাথে স্বস্তি।’
অর্ণবের বাবা রঙ চায়ের কাপ হাতে চোখ কপালে তুলে সুলতান শাহের কথা শুনছিলেন।শেয়ালের মাংস খাওয়ার দাওয়াত পেয়ে হাত থেকে চায়ের কাপটাই নিচে রেখে দিয়েছেন।অর্ণবের মা ভেতরের রুমে মিজুয়ানার সাথে আলাপ করছিলেন।তাকে হুট করে ডাক দেওয়ায়ও কেমন দেখায়।এদিকে শেয়ালের মাংসের কথা শুনে তার নাওয়া- খাওয়া উঠে গেছে।দ্রুত এই জায়গা থেকে উঠে ভাগতে হবে।এই লোককে বিশ্বাস করা দায়।
না জানি চায়ের মধ্যেও উল্টো পাল্টা কিছু একটা মিশিয়েছে কিনা ঐ বাত ব্যাথার চক্করে’
সুলতান শাহ তার চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে শ্বাস নিলেন বড় করে তারপর মুচকি হেসে বললেন,’কি ভাই!ফ্লেভার পাচ্ছেন?আমি আবার তেজ পাতার ভক্ত।তবে আজ চায়ে তেজ পাতা না দিয়ে সেটার ফুল দিয়েছি।স্বাদটা অন্যরকম না?
জানেন এতে করে নাকি বাত ব্যাথার অনুপাত গড়ে কমে।সিওর না তবে শুনেছি মনে হয়।আমি শোনা কথায় বিশ্বাসী ‘
অর্ণবের বাবা কাশতে কাশতে বললেন,’বাকি সব ঠিক দিয়েছেন?মানে আদা,দারুচিনি,এলাচ?নাকি নতুনত্ব আছে সেসবেও?’
‘আরে বাস!!ধরতে পারলেন কি করে?আদার বদলে আদার খোসা জিরি জিরি করে কেটে দিয়েছি’
‘জিরিজিরি করে?তাও খোসা?তা খোসা দিলে কি হয়?’
‘কিছু হয়না।দেখতে ভাল লাগে।আর আমরা তো রঙ চা ছাঁকি না।সোজা ঢেলে দিয়েছে কাপে।দেখুন দেখুন চায়ের কাপে নিচে তেজপাতা গাছের ফুল দেখা যায়।’
অর্ণবের বাবা কাপটা আর হাতে নিলেননা।উদ্ভট রঙ চা কয়েক চুমুক খেয়ে তার অবস্থা কেমন যেন হয়ে গেছে।হয়ত এসব উপকরণে তার ক্ষতি হতোনা তার পরেও নাম শুনেই গলা খুশখুশ করছে।কোনোমতে অর্ণবের মাকে ডাক দিয়ে তিনি বললেন তার একটা জরুরি কাজ মনে পরে গেছে।এটা বলেই চলে আসলেন দোতলায়।
‘আমার ছেলে এই লোকটার বাসায় কি করে থাকে?না জানি ওদের কি খাওয়াইছে’
চিন্তিত হয়ে তিনি আগে অর্ণবের কাছে গেলেন।সে তখন ফোন টিপছিল।বাবা তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন সুলতান শাহ কেমন মানুষ।
অর্ণব ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে চেয়ে বললো,’উনি হলেন জিওগ্রাফী চ্যানেল’
বাবা বুঝেছেন অর্ণব তার স্বভাবের সাথে পরিচিত তাই আবার নিজেদের রুমে ফিরে গেছেন ওর মাকে সবটা জানাতে।
কুসুম বই দেখে দেখে খাতায় আঁকিবুকি করছিল।অক্ষর গুলোকে রুপ দেওয়ার প্রচেষ্টা।
কিছুতেই তা হচ্ছিলনা।মেজাজ খারাপ হয় তাও কিছু করার নেই।অর্ণবকে ভুল সময়ে জ্বালাতে চায়না সে।বাবা মা নাকি কাল চলে যাবেন।গ্রামের বাড়ি ফাঁকা।সাগর ভাইয়া মিশু ভাবীকে নিয়ে কক্সবাজার যাবেন, বাড়ি ফাঁকা রাখতে চাননা তারা।
শীতকাল শেষ হয়ে গ্রীষ্মকালের শুরু।রোদ শেষ হতে হতে বিকাল অনেকক্ষণ থাকে।
এই তো কিছু সময় আগেই সূর্য ডুবেছে।রাতের অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে।হালকা শীত লাগায় বই খাতা নিয়ে বারান্দা ছেড়ে কুসুম একটু ভেতরে এসে বসেছে।দেখে দেখে “অ” লিখতে পেরে অনেক খুশি হলো ।কলি একবার অর্ণব লেখা শিখিয়েছিল তবে এখন সেটা ভুলে গেছে সে।নতুন করে আবার শিখতে হবে।অর্ণব ফোন রেখে আড়মোড়া ভেঙ্গে এদিকেই আসছিল।অনেকক্ষণ কুসুমকে না দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সে বুঝি ছাদে শেয়ালের খপ্পরে পড়েছে।
বাবা মা তাদের রুমে গল্প করছেন।অর্ণবকে একটা টিভি কিনে দেবেন সে ব্যাপারে একজন আরেকজনকে যুক্তি দিচ্ছেন নানা ধরণের।অর্ণব ওদিকে না গিয়ে কুসুমের কাছে গেলো।ওকে নিচে বসে অক্ষর লিখতে দেখে সে কিছুক্ষণ কোনো শব্দ না করেই দৃশ্যটা দেখছিল।
কুসুম জানতে পারেনি ও এখানে।সে নিজের মনমত বসে বসে লিখছে।
অ ঠিকঠাক করে লিখতে পেরে খুশি হয়ে উঠলো অর্ণবকে দেখাতে যাবে বলে, তখন সামনে ওকে দেখে আচমকা ভয় পেয়ে গেছিল সে।অর্ণব ওকে ভয় পেতে দেখে বললো,’কি লিখলে দেখি?’
কুসুম খাতাটা এগিয়ে ধরেছে।অ লেখা দেখে অর্ণব টিক দিয়ে বললো বাকিগুলো ও এমন করে লিখতে।কুসুম মাথা নাড়ালো কিন্তু তারপরই অর্ণব বই খাতা সব গুছিয়ে একপাশে রেখে বললো,’তবে এখন না।আগামীকাল। আজকে তোমার অনেক পড়া হয়েছে।মাথায় এত চাপ দেবেনা। যাও বিশ্রাম নাও’
‘বিশ্রাম মানে শুয়ে থাকবো?’
‘যেমনে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে হয় তোমার তেমনে নেও।জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে নিতে পারো অথবা বসে নিতে পারো,শুয়ে নিতে পারো’
অর্ণব যে মজা করেছে তা বুঝতে পেরে কুসুম হেসে ফেললো।
অর্ণব ও হাসতে চাইলো কিন্তু কুসুমের নাকের তলা থেকে রক্তের বয়ে আসা একটা ফোটা দেখে তার হাসি মুখের বাহিরে এসে আর ফোটেনি।কুসুম নাকে হাত দিয়ে রক্তের ফোটা টা নিয়ে দেখছে।অর্ণবের বুকের ভেতরটা কেমন খালি হয়ে গেছে মনে হলো তার নিজের কাছে।
হঠাৎ সব ভুলে কুুসুমের হাত ধরে চেয়ারে এনে বসিয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে ওর নাক মুছে দিলো চুপচাপ।কুসুম ও নিরব হয়ে ছিল।
অর্ণব রক্ত মুছে দিয়ে বললো,’রিপোর্ট কাল গিয়ে নিয়ে আসবো আমি।তুমি আর পড়োনা, গিয়ে শুয়ে থাকো।খাবে কিছু?’
সে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।অর্ণব টিস্যুটাকে ফেলে স্তব্ধ হয়ে আছে।কুসুম মাথা তুলে বললো,’আচ্ছা রক্ত কেন ঝরে?’
অর্ণব উত্তর জানেনা।কুসুমের বিনা পলক ফেলা চাহনি দেখে কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললো,”বাদ দাও।চলো শুয়ে শুয়ে ফোনে কার্টুন দেখবে’
কুসুম খুশি হয়ে বললো ঠিক আছে।ওকে ফোনে কার্টুন এনে দিয়ে দূরে গিয়ে বসে রইলো সে।
‘কি রোগ মেয়েটার?রক্ত ঝরা তো সাংগাতিক ব্যাপার।ডাক্তার তো ফোনই ধরেনা।এমন কেন হয় ওর সাথে?খুব ভয় করে।মাথায় যেন একটা বোঝা চেপে আছে।
কবে এর উত্তর পাবো,বোঝাটা নামবে।চিন্তা হয় অনেক।ঐ টুকুন মেয়েটার শরীরের এমন হাল হলোই বা কেন।ভাবতে পারছিনা।বুকে জ্বালা করে।রোগের কথা শুনলে মনে হয় খুব খারাপ কিছু।আর এখন রক্ত দেখে ভয়ে বারবার গলা শুকিয়ে আসছে।
দোয়া করছি যেন খারাপ কিছু না হয়।ভালোই ভালোই ছোটখাটো রোগ হোক যেটা ঔষুধে সেরে যাবে।বড় কিছু যেন না হয়।আজই রিপোর্ট নিয়ে আসা উচিত ছিল।কাল সকাল সকালই চলে যাব রিপোর্ট আনতে।আর ভালো লাগেনা। রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসা করাবো ওর।তারপর সে সুস্থ হয়ে আবার আগের মতন হেসে খেলে থাকবে।’
কুসুম নাকে হাত দিয়ে মনে করছিল অর্ণবের ছোঁয়ার কথা।
‘কি সুন্দর করে মুছে দিলেন তিনি।কত যত্ন করেন অথচ বাহিরে থেকে বোঝান তিনি আমায় পছন্দ করেননা।শরীরের সব অসুস্থতাকে বিলীন করে দিলো তার এই যত্নটি।ওনাকে হয়ত ভালভাবে এতদিন বুঝতে পারিনি।ভাবতাম কখনও আমার দিকে ফিরে তাকাবেননা,কিন্তু উনি যথেষ্ট দায়িত্ববান এবং যত্নশীল একজন মানুষ।আমার ভাগ্য অনেক ভালো যে উনার মতন একজনকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি।আর কিছুই চাইনা আমার।’
‘কুসুম!’
‘জ্বী??’
‘ঘুম আসে তোমার?মাথা ধরেছে?’
‘নাহ।ঠিক আছি’
কুসুম উঠে বসলো শোয়া থেকে, অর্ণব দরজার ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল।পরিস্থিতি এমন ভাবে বদলে যায়!
এতটাদিন অর্ণবের জায়গায় কুসুম দাঁড়িয়ে দেখতো ওকে।আর আজ অর্ণব দাঁড়িয়ে দেখছে কুসুমকে।
বিষয়টা খেয়াল করে কুসুমের মুখে হাসির রেখা ফুটেছে।অর্ণব বোঝেনি, এগিয়ে এসে ওর পাশে বসে চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
——
আয়নার সামনে তোয়ালে ঝুলে সবসময়।সেই তোয়ালেটা সরিয়ে জুথি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে।মৃদুলের ব্যাখ্যা শুনে আজ নিজের ঠোঁট নিজেই দেখছে এক রাশ মনযোগ নিয়ে।
আয়নায় নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দেখছিল সে সেসময়ে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে জুথি ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছে।বাবা এসে বললেন,’মৃদুল এসেছে।তোর খোঁজ খবর নিতে’
‘কি??কে এসেছে বললে?’
‘মৃদুল।আরে ঐ যে অর্ণবের বন্ধু।তোকে যে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল সে।।তোর খোঁজ নিতে এসেছে।অনেকদিন নাকি তোকে দেখেনা’
বাবার কথা শুনে জুথি কিছুই বুঝতে পারলোনা।শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো মৃদুল ভদ্র ছেলের মতন ওখানে বসে আছে।
বাবা কাছে এসে আবার বললেন,’ছেলেটা তোর কত খেয়াল রেখেছিল, তুই নাকি একটিবার ওর ফোন ও ধরিসনি।এটা একেবারে ঠিক করিসনি।এতটা কেয়ারলেস হলে চলে?অন্তত অকৃতজ্ঞ হওয়া শেখাইনি তোকে’
জুথি বেশ বুঝতে পেরেছে মৃদুল বাবাকে ঘোল খাইয়েছে।
বাবা তো আর জানেননা এই ভদ্র ছেলেটি দিনে দুবার বারান্দা টপকে তাদের বাড়িতে ঢুকে আর বের হয়’
মৃদুল মিটমিট করে হাসছে আর মাথা নাড়ছে বাবার কথার তালে তালে।
চলবে♥