লীলাবালি পর্ব-৬১+৬২+৬৩

0
377

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬১
আফনান লারা
.
কুসুমের কাছে আসার পর অর্ণব ওর হাতে হাওয়াই মিঠাই ধরিয়ে দিয়ে বললো,’আমাকে খুঁজছিলে?’

‘নাহ।দেখছিলাম একটি সুন্দর দৃশ্য।এখানে অনেক সুন্দর সব কিছু’

‘হুম।চলো ফিরে যাই’

অর্ণব হাঁটা ধরেছে।কুসুম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে জুথির চলে যাওয়া দেখলো তারপর ওর ডাকে ছুটে চলে গেলো উল্টো দিকে।
—-
‘জুথি একবার দাঁড়াও।অন্যের উপর করা রাগ আমার উপর কেন দেখাচ্ছো?আজীবন কি আরেকজনের দোষের ভাগিদার আমাকেই হতে হবে?ফুলটা তো নিয়ে যাও অন্তত’

জুথি এবার থেমেছে।কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে একটিবারের জন্য ও তাকায়নি।মৃদুল ওর সামনে এসে ফুলটা ধরে বললো,’আমি ভালবাসি কথাটা বলবোনা।কারণ এটা বললেই যে দুনিয়ায় সব পাওয়া যায় সেটা আসলে মিথ্যে।
পাঁচ বছর আগে একজনকেও একই কথা বলেছিলাম কিন্তু দেখো!আজ নব থিয়েটারের সামনে তাকে দেখলাম স্বামীর হাত ধরে ঘুরছে।কোলে একটি ছেলে বাবু।আমি ওর ভাল থাকা মেনে নিয়েছি কারণ তাকে আমি ভালবাসতাম,সে ভাল থাকুক সেটা অবশ্যই চাই।কিন্তু রাগে ক্ষোভে আমি কখনও ওর স্বামীর কাছে গিয়ে বলার চেষ্টা করিনি সে মেয়েটা কত খারাপ!একটা ছেলের জীবন নষ্ট করে তাকে পথে পাগল বানিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল এই মেয়েটি।
তার উদ্দেশ্য ছিল একমাত্র বড়লোক কাউকে নিজের করে পাওয়া।আমার বাবার মহাখালীতে নিজস্ব দোতলা বাড়ি আছে।সে বাড়ি আমার নামে,মমকে গ্রামের বাড়ি করে দেওয়া।
সেটা অনামিকা জানতোনা।সে জানতো আমি মেসে থাকি তার মানে ঢাকায় আমার বাড়ি নেই, আমি ফকির।গ্রামে থাকা ছেলে।
অথচ বাবার সাথে মন কষাকষি হওয়াতে আমি ঢাকায় বাসা থাকার পরও মেসে থাকতাম।ওকে ইচ্ছে করেই সম্পত্তির কথা জানাইনি।
যাই হোক যার ভাগ্যে যার নাম থাকে আর কি।তোমায় একটা কথা বলি শোনো!অর্ণব এখন বিবাহিত,
তুমি সব জোড়া লাগাতে পারলেও, ও যে বিবাহিত সেই কথা চোখের নজরের বাহির করতে পারবেনা।এটা চিরন্তন সত্য।এটা তোমায় মেনে নিতে হবে তার স্ত্রী আছে।মুখে যা আসে তাই ওকে শুনিয়ে তুমি হয়ত রাগ ঝেড়েছো কিন্তু তাতে কি লাভ হয়েছে? এবার হিসাব করে দেখো।তুমি নিশ্চয় চাইবেনা কুসুম এই সত্য জেনে মন খারাপ করুক?
তোমার আজকের সিন ক্রিয়েটে কোনো লাভ হয়ত হয়নি তবে লস হয়েছে।আর সেটা হলো কুসুম সব শুনেছে।জানিনা তোমরা কি আলাপ করছিলে তবে মেয়েটা আড়ালে কাঁদছিল।তার কান্নার কারণ তোমাদের সম্পর্কের কথা সে আজ জেনেছে।
মেয়েটাকে হয়ত অর্ণব বুঝিয়ে নিতে পারবেনা সেটা আমি জানি।অর্ণব পাথর মনের মানুষ।যা করতে বলে তাই করে কেবল।সে কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা নিয়ে আসেনি দুনিয়ায়।
কাউকে বোঝাতে সে পারেনা।তোমাকেও বোঝাতে পারেনি তার সিচুয়েশনটা।তেমনই আজ কুসুমকেও বোঝাতে পারবেনা।যাই হোক, আমি যথাযথ চেষ্টা করবো কুসুম যেন ওকে কখনও ভুল না বোঝে, কারণ অর্ণব খারাপ না একদমই।সে অনেক ভাল মনের মানুষ।তার মধ্যে এমন একটা গুন আছে যেটা দেখে যে মেয়ে কোনোদিন প্রেম করেনি সে মেয়ে প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়েছে।’

সব কথা শুনে জুথি ফুলটা নিয়ে চলে গেলো।
আর ফিরে তাকালোনা।যেতে যেতে ফুলের পাপড়ির মধ্যে একটা চিরকুট দেখে থেমে গেলো সে আরও একটিবার।হলুদ রঙের চিরকুটটাতে লেখা””””যদি পুরাতন স্মৃতি মুছে নতুন স্মৃতি জায়গা পায় তবে ফিরে এসো।মৃদুল হাওয়া যদি মনে লাগে তবে এসো।সেই হাওয়া অপেক্ষা করে থাকবে””””

সিনএনজিতে যখন অর্ণব আর কুসুম উঠেছিল তখন রাত হয়ে গেছে।কুসুমের বারবার চোখ লেগে আসছিল বলে এক পাশে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে ছিল।
অন্যসময়ে কুসুম নিজেই অর্ণবের কাঁধে মাথা রাখতো কিন্তু আজ রাখেনি বলে তার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত মনে হলো,পরে ভাবলো হয়ত লজ্জা পায়।তাই সে নিজেই ওর মাথা ধরে কাঁধে রখলো নিরবে।
কুসুম ততক্ষণে জেগে গিয়েছিল।তাই মাথা সোজা করে সরে বসেছে।

‘শরীর খারাপ করছে তোমার?’

‘নাহ’

‘তাহলে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেন?আজকের ঘোরাঘুরি ভাল লাগেনি?’

‘লেগেছে।বাসায় যাব,বাহিরে আর ভাল লাগেনা’

‘বাসায় যেতে দেরি আছে।পারলে ঘুমাও এখন’

‘ঘুম যে আসবেনা ‘

বাসায় ফিরতে এক ঘন্টার মতন সময় লেগেছে।এই সময়টাতে ভুলেও কুসুম ওর সঙ্গে এক শব্দ কথা বলেনি।অর্ণব ভেবেছে শরীর খারাপ বলে কথা বলছেনা হয়ত।বাসায় আসার পর থেকে বারান্দায় গিয়ে বসেছিল কুসুম।অর্ণব টুকটাক অনেক কাজ করেছে বাসার।কুসুমকে করতে বলেনি।
এরপর বাবার সাথে কথা বললো টিউমার নিয়ে।বাবা বললেন যত দ্রুত সম্ভব ওকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে।তারা সাগর আর মিশু ফিরলে দেখতে আসবে।
অর্ণব ফোন রেখে ওকে ডাকতে বারান্দায় এসে দেখে সে জবা ফুল গাছটার পাতা হাত দিয়ে ধরে দেখছিল।এগিয়ে এসে সে নিজেও কুসুমের পাশে বসে গেলো।এরপর ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,’চড়ুই পাখি খেলবে?’

‘নাহ’

‘কি হয়েছে বলো তো?ঘুমাবে?খাইয়ে দেবো?’

‘আমি নিজের হাতে খেয়ে নেবো।’

‘আমি খাওয়ালে কি সমস্যা? ‘

‘সমস্যা আমি নিজেই।আপনি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ কেন করছেন?’

‘হুম আমার দোষ নেই।আচ্ছা তাহলে আমিই ঘুমিয়ে পড়ি।তোমার ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও’

আর দেরি না করে সে তার কথা টা পূরণ ও করে ফেললো।লাইট অফ করে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।কুসুম অবাক হয়ে গেলো।সে ভেবেছে হয়ত নাটক করবে, কিন্তু না উনি তো সত্যি সত্যি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।সারাটা রাত না খেয়ে থাকবেন নাকি?
‘আমি তো তাও হাওয়াই মিঠাই খেয়ে পেট দমিয়েছি, উনি তো কিছুই খেলেন না।’

ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতেই ওর মনে হলো মাথা ঘুরে উঠেছে।দেয়ালে হাত রেখে আস্তে আস্তে অর্ণবের কাছে গেলো সে।ওকে ডেকে বললো খেতে আসতে।অর্ণব ওর কথা শুনেও না শুনার ভান ধরে ঘুমায়।
কুসুম ভাবলো হয়ত সে ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই পুরো বাসার সব লাইট বন্ধ করে সেও অর্ণবের এক পাশে এসে শুয়ে পড়েছে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছে কাল রাতের কথা।কি সুন্দর করে কাল মাথার উপর হাত দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।সেই হাতের ছোঁয়ায় কাল রাতের ঘুম অনেক ভাল হয়েছিল তার।
‘যদি আজও এমন করতেন!হয়ত করবেননা!কেনোই বা করবেন?তিনি তো আমায় ভালবাসেননা।তিনি তো মিননয়ি আপুকে ভালবাসতেন।আর আমি বুদ্ধু এতদিন তার ভালবাসা পাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলাম।আমার মতন একটা মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছেন এটাই বা কম কিসের?
কিন্তু একজনের মনে কষ্ট দিয়ে তিনি বিয়ের পিড়িতে বসেছেন জানলে আমি কখনওই কবুল বলতাম না।ইশ কেন জানলাম না আগে।যদি জানতাম তবে এটা হতে দিতাম না।এখন তারা দুজন কষ্ট পাচ্ছে সাথে আমিও।
মিননয়ি আপু তো মনে হয় আমার উপর রাগ হয়ে আছেন।তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি আমি।বুঝি এ কারণে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেন?আমার কারণে তারা দুজন কত কষ্ট পেলো।আমি তাদের সুখ ছিনিয়ে নিয়ে এখন নিজেও কষ্টে আছি।আসলে আমি তো একটিবারও বুঝতে পারিনি তিনি অন্য কাউকে পছন্দ করেন।বুঝতেও দেননি।অথচ এখন সব দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে যাচ্ছে।
বোঝা গেলো কেন উনি আমায় অপছন্দ করেন,কেন তিনি সবসময় দূরে দূরে থাকেন।আমাকে ভালোবাসার নজরে কেন দেখেননা তার সব উত্তর আজ আমি পেয়ে গেছি।কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছি। এগুলো যদি বিয়ের আগে জানতাম!! আজ কাউকেই কষ্ট পেতে হতোনা’

এতগুলো ভাবনা ভাববার সময় কুসুম খেয়াল করলো তার মাথার উপরে অর্ণবের হাতটা ধীরে ধীরে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে।তাই চমকে উঠে বসলো সে।চেয়ে দেখলো অর্ণব ঠিক কালকে রাতের মতন এখনও হাত দিয়ে রেখেছে।
গম্ভীর সুরে সে বললো,’ঘুমাননি তাহলে?খাবেন চলুন’

‘নাহ’

‘কেন??’

‘রাগ করেছি’

‘আমি কি করেছি?’

‘তুমি শুধু শুধু রাগ করেছো তাই আমি সত্যি সত্যি রাগ করেছি।হিসাব বরাবর ‘

‘চলুন খাবেন।রাগারাগি পরে হবে’

‘নাহ।আমার এখন ঘুমাতে ইচ্ছে হচ্ছে।খাব না কিছু।শুয়ে পড়ো তুমিও।আর তোমার যদি খেতে ইচ্ছে করে তো বলো আমি খাইয়ে দেবো ‘

কুসুম চট করে শুয়ে পড়লো।দুজনে আবারও চুপ।অর্ণব যে তার হাত নিয়েছিল কুসুমের মাথার পাশে, সে হাত দিয়ে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছে এখন।কুসুম চোখ বুজে রেখেছিল।
অর্ণবের গায়ের গন্ধটা খুব কাছ থেকে আসছে আজ।কুসুমের ঘুম কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে ঐ গন্ধ।বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে না পেরে উঠে বসলো সে।তারপর পেছনে তাকিয়ে বললো,”হাত বুলালে আমার ঘুম আসবেনা ‘

‘আমার ছোঁয়া পেতে মরিয়া হয়ে যেতে আর আজ আমাকেই ভাল লাগছেনা?’

অর্ণবের এই কথা কুসুমের বুকে গিয়ে লাগলো।এতটাই কষ্ট পেলো যে ঐ মূহুর্তে কান্না করে ফেলেছে ।
নিজেকে সেতুর মাঝখানে মনে হয়।এদিকে আজকে চোখে দেখা সত্যি আর অন্যদিকে যেটা এতদিন হয়ে আসছিল সেটা।
কোনো কিছুকে আপন করে নিতে পারছেনা সে।এসবের সাথে লড়তে না পেরে কেঁদে ফেললো শেষে।অর্ণব ওকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠে বসে আছে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।শেষে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,’কি হয়েছে তোমার বলবে?’

কুসুম চোখ মুছে চুপ করে রইলো। অর্ণব ওকে নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে ফিরলোনা।
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬২
আফনান লারা
.
‘আমি উঠে চলে যাব?ছাদে?শেয়ালের মাঝে?’

কুসুম এবার কান্না থামিয়েছে সাথে সাথে।এরপর অভিমানী সুরে বললো,’চলুন খাবেন।আর না না করবেন না’

কথাটা বলেই সে নেমে চলে গেলো বাহিরে। অর্ণব ওর চলে যাওয়া দেখছিল মশারির ভেতর বসে বসে।
‘মেয়েটা একেবারে অন্যরকম।মাঝে মাঝে এমন ব্যবহার করে তার ব্যবহারের কারণ জানা মুশকিল হয়ে যায়।কখনও কারণ খুঁজে পাই না আমি। সে আসলে কি চায়?’

কুুসুমের ফের ডাকে বিছানা ছাড়তে হলো তাকে।সে খাবার সাজিয়ে বসে আছে।অর্ণব নিজের হাত ধুয়ে এসে পাতে হাত রেখে বললো,’চলো আমি খাইয়ে দিই তোমায়’

‘আমার তো খিধে নেই।আপনাকে খাওয়াতে এত কিছু করলাম এই এত রাতে’

অর্ণব লোকমা সাজাতে সাজাতে বলেছে কথা যেন না বাড়ায়।নাহলে আগের ধমক কাজে লাগাবে।কুসুম যেন ভয়ই পেলোনা।টেবিল ছেড়ে সোজা চলে গেছে সামনের বারান্দাটাতে।
অর্ণবের এখন খুব রাগ হলো।এতটাই রাগ হলো যে সে খাবার রেখে চলে গেছে ঘুমাতে।কুসুম আড়ালে থেকে সব দেখছিল।ওর এমন রাগ সে আশা করেনি।ভেবেছে উপায় না পেয়ে খাবে কিন্তু এ তো দেখি পরিস্থিতি বুঝে রাগ দেখায়!

প্লেটটা নিয়ে এবার সে রুম এসে আলো জ্বালালো।অর্ণব মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েছে।কাছে এসে সে বললো,’আমার হাতে খাবেন?’

অর্ণব কথার উত্তর দিচ্ছেনা।কুসুম একটু এগিয়ে খাটের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললো,’মাফ করে দিন।আচ্ছা আমিও খাব আপনার সাথে’

কথাটা শুনেই অর্ণব এক লাফে উঠে বসে পড়েছে।মুখে হাসি ফুটিয়ে চেয়ে আছে কুসুমের দিকে।কুসুম হার মেনে ওর পাশে বসে লোকমা তুলে দিলো।
অর্ণবের ধমকে সে নিজেও খেলো ওর সাথে।
—–
পরেরদিন ভোরে কারোর ওঠা হয়নি।ভোরের বিন্দু সমেত যেসময়ে উধাও হয় সেসময়টা হলো সকাল আটটা।এ সময়ে কেউ বলবেনা এখন ভোর।
তো ঐ সময়টাতে কুসুমের চোখ খুলেছে।দুচোখে মাথার উপরের ছাদের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর বিছানায় হাত রেখে উঠলো সে।বারান্দার দিকে চেয়ে রোদের কড়া রঙ দেখে সে বুঝতে পারলো অনেক বেলা হয়ে গেছে।তাড়াহুড়ো করে উঠতে যেতে খেয়াল করলো অর্ণব ও ওঠেনি।উপুড় হয়ে গভীর নিদ্রায় সে।
ওকে আর জাগালো না কুসুম।আস্তে করে নেমে বের হয়ে গেছে রুম থেকে।কাছাকাছি আসার পর বুঝতে পারলো দরজায় কেউ ধাক্কাচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত।কলিংবেলে কেন চাপলো না সেটা ভাবতে ভাবতে কুসুম দরজা খুলে দিয়েছে।

‘সকাল হলো বুঝি তোমাদের?কলিংবেলটাক নষ্ট কইরা রাখছে!’

কুসুম মুখ মুছে শাড়ীর আঁচল ধরে বললো,’জানিনা আজ এত বেলা করে কেন ঘুমালাম।কোনো দরকার বুঝি জাহান?’

‘মিজুয়ানা নানি ডাকছে আপনারে।জলদি আসেন।আজ বাড়িত অনেক মেহমান আইবো’

জাহান ছুটে চলে গেলো।তারপর কি ভেবে অর্ধেক সিড়ি অবধি গিয়ে থেমে পেছনে তাকিয়ে বললো,’আপনারে কইছে নাস্তা এখানে এসে করে যাইতে।ভাইয়েরেও কইয়েন’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগিয়েছে।অর্ণবের সাড়া নেই।ওকে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে আসলোনা বলে কুসুম নিজের মত করে তৈরি হয়ে মৃদুলদের বাসায় গেলো।সেখানে মিজুয়ানা আন্টি জানালেন আজ মম আসবে।বিকেলে নাকি ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার কথা।খাবারের বিশাল আয়োজন করেছেন সুলতান শাহ।ওদের দুজনের দাওয়াত।সকালে একা একা নাস্তা করে সবাই।তাই ভাবলেন আজ ওদের সঙ্গে করবেন।
কুুসুম নিজে উনাদের সাথে খেয়ে অর্ণবের জন্য আলাদা করে নিয়ে এসেছে উপরে।সে তে এখনও ঘুমায়।
তাই খাবার ঢেকে রেখে বইখাতা নিয়ে কুসুম পড়তে বসেছে।
অর্ণব মাথা তুলে হাতের ঘড়িটা বালিশের তলা থেকে বের করে টাইমটা দেখার পর তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ধপাস করে বিছানা থেকে নেচে পড়ে গেছে।আওয়াজ পেয়ে কুসুম ছুটে আসলো ওখানে।এসে দেখলো অর্ণব কোমড়ে হাত রেখে বিছানাকে বকাবকি করতেছে।

‘পড়লেন কিভাবে?’

‘এত সময় হলো তুমি আমায় উঠালেনা কেন?’

‘আপনি তো কাজের জন্য ঘুমাতে পারেননা তাই আর জাগাইনি।হাত মুখ ধুয়ে আসুন।মৃদুল ভাইয়ার মা খাবার দিয়েছেন আপনার জন্য’

‘ওহ!তুমি খেয়েছো?’

‘হুম’

‘জলদি তৈরি হয়ে নাও তাহলে।তোমাকে আজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে’

‘কেন?’

‘পরে জানাবো।এখন আর সময় নেই।এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।

কথা মতন তৈরি হয়ে হাসপাতালেও চলে এসেছে তারা দুজন।কুসুম এখন অবধি জানেনা তার আসলে কি হয়েছে।এসব ভাববার সময়কালীন হঠাৎ একটা নার্স এসে ওকে ধরে সিটে বসিয়ে দিলো।সে জিজ্ঞেস করেছে সুই ফোটাবে কিনা।নার্স যখন বললো ফুটাবে তখন সে নার্সকে রেখে এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া ধরতেই অর্ণবের সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলো।অর্ণব ওর হাত ধরে বললো ‘সুইয়ে কোনো ব্যাথা নেই।পিঁপড়ার কামড়ের মতন।চলো’

‘না আমি জানি।ঐ ব্যাথা মোটেও পিঁপড়া কামড়ানোর মতন নয়।আরও বেশি ব্যাথা’

‘আরেহ একই রকম।’

অর্ণব কুসুমকে জোর করে সিটে এনে বসিয়ে নার্সকে ইশারা করে কুসুমের পা ও তুলে দিলো সিটের উপর।তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে বললো,’তোমার ছোট্ট একটা অসুখ হয়েছে।শিগগির ভাল হয়ে যাবে।এই
সুই না ফোটালে ভাল হবেনা।’

‘ছোট্ট অসুখে আবার সুই লাগে নাকি?’

অর্ণব হঠাৎ হাত ছেড়ে দিয়েছে ওর।তারপর হেসে বললো,’সুই ফোটানো শেষ।চুপচাপ শুয়ে থাকো এবার’

‘ভাইয়া ইনজেকশানটা দেওয়া হয়েছে ব্যাথা কমানোর জন্য।হাতে ক্যানোলা লাগাতে হবে’

অর্ণব কপাল কুঁচকে তাকালো নার্সের দিকে।সুই ফুটিয়েছে কত কষ্ট করে,এখন আবার ক্যানোলা!’

কুসুম অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।ক্যানোলো কি জিনিস সে জানেনা তাই চুপ করে দেখছিল নার্সকে আর অর্ণবকে একসাথে।
চিৎকার চেঁচামেচির কোলাহলে তার হাতে ক্যানোলা লাগানোর পর্ব শেষ হলো।বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে সে এখন।অর্ণব ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারলো আজকের পর থেকে টাকার উপর টাকা খরচ হবে সব কিছুতেই।মোটা অংকের টাকা হাতে রাখতে পরামর্শ দিলেন তিনি।অর্ণবের কাছে সেটা চিন্তার বিষয় ছিলনা।তার কাছে একমাত্র চিন্তার হলো কুসুমকে সুস্থ জীবন উপহার দেওয়া।
যে মেয়েটা সুইয়ে এত ভয় পায় সে তো জানেওনা আজকের পর থেকে তাকে প্রতিদিন এই সুইয়ের খোঁচা খেতে হবে,আরও কত কষ্ট!
এই বয়সে কেন তার এমন একটা রোগ হতে গেলো!!
যাই হোক না কেন!শেষে যেন তাকে সুস্থ দেখি।

কুসুম কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে একটা সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।অর্ণব ছোটাছুটিতে মহাব্যস্ত।মৃদুল আর তমাল আজ কুসুমকে দেখতে এসেছিল
মৃদুলকে দেখে অর্ণব কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।
তার মুখের হাল এমন হলো ঠিক অনামিকা ধোকা দেওয়ার পর যেমন হয়েছিল তেমন।মনমরা।যেন এখনই ঢলে পড়বে।
অর্ণব হাসপাতালের কাজ ফেলে ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,’কিরে?মদ খেয়েছিস বুঝি?’

‘নাহ’

তমাল হাত ভাঁজ করে গাল ফুলিয়ে বললো,’খেয়েছে জিজ্ঞেস করতেছো ভাইয়া?অনেক খেয়েছে।পুরা বার খালি’

‘কিন্তু কেন?অনামিকা আবার কি করেছে?’

‘ভাইয়া এবার অন্য গ্রহের জায়গা পরিবর্তনে মৃদুল ভাইয়ার এই হাল।সেই গ্রহের নাম জানো??
জুপিটারের মতন।জ তে জুপিটার,জ তে জুথি।’

চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৩
আফনান লারা
.
‘আর ইউ সিরিয়াস মৃদুল?জুথি?মানে মৃন্ময়ী জুথি?’

মৃদুল মাথা চুলকে অন্যদিকে ফিরে ওয়ালের দিকে গম্ভীর ভাব নিয়ে চেয়ে আছে।অর্ণবের প্রশ্নের জবাব দেওয়া জরুরি মনে করলোনা।রাতে অতিরিক্ত মদ সেবন করায় মাথা ব্যাথা আর শরীর দূর্বল ফিলের কারণে তার এখন কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।অর্ণব পানির বোতল একটা কিনে এনে ওর সামনের চেয়ারে রেখে বসলো পাশে।তারপর হালকা হেসে বললো,’মৃন্ময়ী খারাপ না,ভালোই।তোর পছন্দ বরাবরই সুন্দর।কিন্তু জুথি এখন যে মনমানসিকতা বয়ে বিদেশ চলে গেলো তাতে কি তোর মনে হয় সে তোকে আপন করে নেবে?’

মৃদুল পানি খাচ্ছে চুপচাপ। তমাল ভেংচি মেরে কুসুমকে দেখতে চলে গেলো।
অর্ণব ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো,’তোর ভাগ্যে থাকলে ফিরে আসবে।চিন্তা করিস না।চাকরির পরীক্ষা দিতে নাম এবার।চাকরি না করলে করিম স্যার তার সুন্দরী মডার্ন মেয়ে তোর হাতে দেবেনা রে’

মৃদুল এবার অর্ণবের দিকে ফিরে বসলো।ওর চোখে চোখ রেখে বললো,’জানিস আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে জুথি আমায় ভালবাসে কিনা।কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পজিটিভ ইশারা করেনি।জাস্ট একবার জানতে চাই সে কি আমাকে ঘৃনা করে নাকি সত্যি তার ফিলিংস আছে আমার প্রতি’

‘কল করেছে একবারও?’

‘নাহ!ওর নাম্বার পাবো কই?সিঙ্গাপুরে ওর পরিবারের নাম্বার তো দেয়নি।কথাও বলতে পারছিনা’

‘ফেসবুকে নক দে’

‘তুই তো ওর খবর রাখিসনা।এক মাস হলো আইডি অফ করে রেখেছে।তাছাড়া আমাকে আগেই ব্লক করছিল।ফেক আইডি দিয়ে চেক করতাম।
এখন সব কনট্যাক্ট বন্ধ।আমি কি শুধু শুধু পাগল হইলাম?’

অর্ণব মৃদুলের মাথা মুছে দিয়ে বললো শান্ত হতে।জুথি নিশ্চয় ফোন দেবে ওকে।হয়ত ফেসবুকে নক দেবে’

‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’

‘তুই কবে থেকে এসবে পারমিশন নেওয়া শুরু করলি?’

‘মৃন্ময়ী যদি আমার হয় তোর খারাপ লাগবে না?’

‘মৃন্ময়ী ডিজার্ভ সামওয়ান বেটার দ্যান মি।আর আমার মনে হয় সে সেটা পেয়ে গেছে।তুই ওর যোগ্য।আমি জানি তুই ওকে অনেক ভাল রাখবি’
—–
সাদা পোশাকের নার্স দরজার কাছে ঘেঁষে ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল।ডাক্তার যা যা বলে দিচ্ছিল সেসব সে খাতায় নোট করছে।কুসুম শুয়ে শুয়ে দেখছিল সেটা।হাতের ব্যাথায় হাতটা যেমন আছে তেমনই রাখতে হচ্ছে।নড়াচড়া করা যাচ্ছেনা।নার্স সেসময়ে রুমের ভেতরে চলে এসে কাগজগুলো এক পাশে গুছিয়ে রেখে কুসুমের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।

কুসুম ওর হাসি দেখে বললো,’আচ্ছা আপনার নাম কি?’

‘ রামিসা’

‘ওহ।জানেন আমার কি হয়েছে?’

‘ব্রেইন টিউমার’

‘সেটা কি?’

‘মাথার অসুখ।ভাল হয়ে যাবে।টেনসন নিওনা কেমন?’

কথাটা বলে রামিসা চলে গেলো।কুসুম এবার ওঠার চেষ্টা করছে নিজে নিজে।।
অর্ণব যে কোথায় গেলো।অনেকক্ষণ তার মুখ দেখা হয়না।
‘আচ্ছা একা ফেলে চলে যাননি তো আবার?
নাহ!তা কেন করবেন।পানি খাবো!গলা শুকিয়ে এসেছে’

হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিলে থাকা পানির বোতলটা নিলো সে।ক্যানোলা লাগানো হাতে বোতলের ছিপি খুলে মুখে দেওয়া ধরতেই অর্ণব এসে ওর হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,’পানি খেতে পারবেনা।দেখছোনা তোমায় ঔষুধ দিয়েছে?এটা খোলা ছাড়া খেতে পারবেনা’

‘কিন্তু আমার তো তৃষ্টা পেয়েছে’

‘কিছু হবেনা তাতে।খাওয়া নিষেধ’

‘আপনি কই ছিলেন?’

‘মৃদুল এসেছিল।শুয়ে থাকো।উঠবেনা’

কথা শেষ করে অর্ণব চলে যাওয়া ধরতেই কুসুম ওর হাত ধরে ফেললো।গলার স্বর আস্তে করে বললো,’একটু বসবেন?আমার একা একা ভাল লাগেনা একটুও’

অর্ণব তাই করলো।এক পাশে বসে থাকলো।বিকাল হতে চললো কুসুমের শরীরে দেওয়া ঔষুধের কাজ এখনও লেগে আছে তাদের দাপটে।
কুসুম এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছিল।ও একবারও তাকালোনা দেখে মুখ ফিরিয়ে পাশের জানালাটার দিকে চেয়ে রইলো সে।অর্ণব এবার তাকিয়েছে।কুসুমের ওমন সুন্দর চেহারায় সারাদিনের উপোসের ছাপ যেন ছিঁটে আকারে পড়ে আছে।ঠোঁট শুকিয়ে গেছে পানি না খাওয়ায়।এমন বিষন্ন মুখ দেখে অর্ণবের ইচ্ছে করে সব যান্ত্রিকতা সরিয়ে ওকে নিয়ে একটা মনোমুগ্ধকর জায়গায় চলে যেতে।যেখানের বাতাস ওকে আবার আগের জীবন ফিরিয়ে দেবে।ওর কোনো অসুখ থাকবেনা সেখানে।
ইশ যদি ভাবনাটা সত্যি হয়ে যেতো!
কুসুম?’

‘হুম’

‘খিধে পেয়েছে?’

‘নাহ।তৃষ্ণা পেয়েছে।পানি খাওয়াবেন?’

‘সম্ভব হলে খাওয়াতাম।’

মৃদুল গালে হাত রেখে ফেসবুকের নিউজ ফিডে হাল চাষ করছিল।
তার আইডি তে সব কৃষি বিজ্ঞানী।ছাদে কৃষি কাজ করে আর সারাদিন ছবি ছাড়ে,কৃষি ব্লগার।
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই টমেটো ট্রি*
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই বেনগান ট্রি*
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই চিলি ট্রি*
মাঝে মাঝে তার নিজেকে কৃষক মনে হয়।
জুথির আইডি এই নিয়ে দশবার চেক করা শেষ।
‘মেয়েটা কি সত্যি সত্যি ভুলে গেলো?
এতটাও স্বার্থপর হয় কেউ?আমার ভালবাসা আর অর্ণবের ভালবাসা কি তার কাছে এক হয়ে গেলো?
আমাকে সে বোঝেনি এতদিন?
আসলে একজন ঠিক বলেছিল।
“যে প্রেমে একবার ছ্যাঁকা খায় সে এরপরে আরও একটা ছ্যাঁকা খায়।শতাধিক নিশ্চিত সত্য কথা! ‘দুবার বেকুব হতেই হয়’

হঠাৎ মেসেঞ্জারের মিষ্টি আওয়াজে মৃদুলের চোখ গেলো নোটিফিকেশান বারের দিকে।ওমা জুথির প্রোফাইলের মতন একদম সেম দেখতে একটা প্রোফাইল থেকে মেসেজ আসলো।
মৃদুল প্রথমে ভেবেছে এটা অন্য কেউ।কিন্তু মেসেজে গিয়ে দেখলো এটা জুথি।
জুথি লিখেছে-কেমন আছেন ভাইয়া?’

‘ভাইয়া?যাই হোক ওটা নিয়ে পরে ধরবো।আগে বলো তোমার আম্মুর কাছে পোঁছে গেছো?’

‘হুম।কেমম আছেন আপনি?’

‘যেমন রেখে গেছিলে সে অবস্থার অবনতি ঘটে আমি এখন পথিক।’

‘পথিক কি বাসার ঠিকানা ভুলে গেছে?’

‘গেছিল তবে এখন সে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।তুমি আসবে কবে?’

‘আজ আসলাম সিঙ্গাপুর।এখন জিজ্ঞেস করছেন কবে আসবো?আমি আর আসছিনা।’

মৃদুল রাগ করে ডাটা অফ করে দিয়েছে।এরকম ঘাঁড়ত্যাড়া মেয়ে কেন ও??
একটু নরম মনের হতে পারেনা?এতটা তুচ্ছজ্ঞান কেন করে!।বেশ করেছে অর্ণব ওকে ছ্যাঁকা দিয়েছে!’

তমাল ওর পাশে বসে বললো,’বেশ করেছে অনামিকা তোমায় ছ্যাঁকা দিয়েছে’

‘ওর অবস্থা কেমন দেখছেন?’

ডাক্তার আসাদুজ্জামান কুসুমের হাতের ক্যানোলা খুলতে খুলতে বললেন,’আপনার ওয়াইফের তো অনেক আগে থেকে এই অসুখ!উনি রিভিল করলেন এই দিনে।আপনি জানেন আজ সকালে যে ঔষুধ আমরা প্রয়োগ করেছিলাম তার কোনো রিয়েকশানই তার শরীরে দেখা গেলোনা?’

অর্ণবের মাথায় যেন বাজ পড়লো।বুকের ভেতরে অনবরত ডিপডিপ করছে ভয়ে।তাও সাহস করে বললো,’তাহলে এখন?’

‘আমি আরও দুজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করবো এ ব্যাপারে।আজকের জন্য উনাকে বাসায় নিয়ে যান।
ঐ দুজন ডাক্তার আজ রাতেই ফিরবেন।তাদের সাথে আলাপ করে চিকিৎসা শুরু করবো।ততক্ষণ উনার বাড়িতে সেবা চালু রাখবেন।’

‘ঔষুধ শরীরে কাজ না করা তো ভাল লক্ষণ না।আমার ভয় করছে।খারাপ কিছু হবেনা তো?’

‘আগে জানতে হবে উনার এই অসুখটা কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।আমি আমার ধারণা মতে ভেবেছিলাম এক বছর হয়েছে কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল।এক বছর হলে আজকে যে ঔষুধ আমরা তার শরীরে দিয়েছিলাম সে ঔষুধে কাজ শুরু হয়ে যেতো অথচ এখন পর্যন্ত তার শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা গেলো না।’

‘পানি খেতে পারবে?’

‘হুম এখন পারবে।স্ট্রেস মুক্ত রাখবেন ওনাকে।এখন বাড়ি নিয়ে যান।আর আপনিও চিন্তা মুক্ত থাকুন।উনার সেবা করতে আপনাকে স্ট্রং থাকবে হবে।

উনাদের দুজনের কথা সব শুনে কুসুম বললো,’আমি কি মরে যাব?ঐ যে ডাক্তাররা বলে আর এক মাস বাঁচবে।আমি কতদিন বাঁচবো?’

‘কুসুম!আন্দাজে কথা বলবেনা।চুপ থাকো’
———
সিএনজিতে ওঠার পর থেকে অর্ণব বারবার পাঞ্জাবি টেনে ধরে বুকে ফু দিচ্ছিল।কপাল মুছতেছিল।কুসুম সব খেয়াল করেছে।
অর্ণব যখন অনেক টেনসন করে তখন তার গরম লাগে।গা বেয়ে ঘামে ভরে যায়।
কোনোকিছু বলতেও ভয় করে আজকাল।তাও সাহস জুগিয়ে ও বললো,’আমার কি কঠিন রোগ?’

‘তুমি রোগ নিয়ে আর একটা কথাও বলবেনা’

‘বাহ রে!আমার রোগ আর আমি বলবোনা?’

‘না বলবেনা।হুটহাট অলক্ষুণে কথা কেন বলবে তুমি?আমার একদম ভাল্লাগেনা এসব।সবসময় ভাল কিছু বলবে’

‘ভাল বললে যে সবসময় খারাপটাই হয়’

অর্ণব ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।কুসুমের বলা প্রতিটা কথা আজকাল অনেক দামি মনে ঠেকে।ইচ্ছে হয় রেকর্ড করে রাখতে।পরে মনকে বিশাল সান্ত্বনা দিয়ে বলে নাহ!কুুসুমের কিছু হবেনা, সে আজীবন বেঁচে থাকবে,পাশে থাকবে তার।
এরপরই একবার এক দুঃসংবাদে ফোন বের করে হাজার খানেক ফটো তুলে রাখতে ইচ্ছে হয়।হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়।বুক খালি খালি হয়ে আসে।অথচ মানুষটা এখনও সামনে!!চোখের পলক ফেলে,হাত নাড়ে,মুখ বাঁকায়,কপাল কুঁচকায়,রাগ করে!অভিমান দেখায়।এসব থেকে যাবে তো?’

চলবে♥